জরৎকারু ও অস্তিকা

জরৎকারু ও অস্তিকা

যাযাবর বংশের সকলেই অতিবৃদ্ধ হয়েছেন। দ্বিতীয় পুরুষ বা সন্তান বলতে বংশের মধ্যে মাত্র একজন, জরৎকারু। কিন্তু জরৎকারুও বৃদ্ধ হতে চলেছেন। আজ পর্যন্ত বিবাহ ক’রে গৃহী হলেন না। অতিবৃদ্ধ পিতৃসমাজের এই এক দুঃখ।

যাযাবর বংশের গৌরব জরৎকারু কঠোর ব্রতপরায়ণ তপস্বী। পরমপ্রতাপ রাজা জনমেজয় তাঁকে ভক্তিনম্র শিরে অভিবাদন করেন। তপস্যা ও ব্রত ছাড়া সংসারে ও সমাজে আর কোন কর্তব্য গ্রহণ করতে চান না জরৎকারু। রাজা জনমেজয় সংকল্প ঘোষণা ক’রে রেখেছেন, যদি ঋষি জরৎকারু কোনদিন গৃহিজীবন গ্রহণ ক’রে পুত্রলাভ করেন, তবে জরৎকারুর সেই পুত্রকে তিনি তাঁর মন্ত্রগুরুরূপে সম্মানিত করবেন।

কিন্তু এই গৌরব ও সম্মান সত্ত্বেও যাযাবর পিতৃসমাজের মন বিষণ্ণ হয়ে আছে। জরা বা বার্ধক্যের জন্য নয়; বংশলোপের আশঙ্কায়। একমাত্র বংশধর জরৎকারু ব্রহ্মচর্যে ব্রতী হয়ে আছে, এই হলো তাঁদের দুঃখের কারণ। জরৎকারুর তপোবন ও বিদ্যার জন্য তাঁরা গৌরব অনুভব করেন ঠিকই, কিন্তু যখন চিন্তা করেন যে, জরৎকারুর পরে যাযাবর কুলের প্রতিনিধিরূপে পৃথিবীতে কেউ থাকবে না, তখনই তাঁদের মনের শান্তি নষ্ট হয়। পিতৃসমাজের মনে এমন আক্ষেপও মাঝে মাঝে জাগে, এই প্রভূত তপোবলের গৌরব ক্ষুণ্ণ ক’রেও যদি জরৎকারু এক সংসারসঙ্গিনী নিয়ে গৃহী হতো, সন্তানের পিতা হতো, তাও শ্রেয় ছিল। জরৎকারুর উগ্র তপস্যা শুদ্ধতা সংযম ও তীর্থ-পরিক্রমার পুণ্য এসবের জন্য হয়তো পৃথিবীতে যাযাবর বংশের নাম থাকবে, কিন্তু যাযাবর বংশ আর থাকবে না। পিতৃপুরুষের বিদেহী সত্তাকে তৃষ্ণার জল দিয়ে তর্পণ করতে কেউ থাকবে না। দুঃখ না হয়ে পারে না।

পিতৃসমাজের দুঃখের কারণ একদিন শুনতে পেলেন জরৎকারু। তাঁরা জরৎকারুকে বললেন—আমাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে, তোমার গৌরব নিয়ে আমরা সুখে মরব, কিন্তু শান্তি নিয়ে মরতে পারব না। তোমার ব্রহ্মব্রতের জন্য আমাদের বংশ লুপ্ত হতে চলেছে।

জরৎকারুর মত তপস্বীর কঠিন মনে তবু বিন্দুপরিমাণ সমবেদনাও জাগে না। পিতৃসমাজ বলেন—তোমার কাছে অনুগ্রহ বা সমবেদনার প্রার্থী আমরা নই। তোমার কর্তব্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বংশরক্ষার জন্য যখন আমাদের সমাজে দ্বিতীয় আর কেউ নেই, শুধু তুমি আছ, তখন এই কর্তব্য পালনের দায় একান্তভাবে তোমারই। সমাজের প্রতি, পিতৃপুরুষের প্রতি কর্তব্য অবহেলা ক’রে তপস্বী হওয়ার অধিকার তোমার নেই। তুমি নিজে কর্তব্যবাদী বিবেকবান ও বিদ্বান; তুমি জান আমরা যা বলছি, তা তোমারই ধর্মসঙ্গত নীতি।

জরৎকারু কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন—আপনারা ঠিকই বলেছেন। আপনাদের দ্বিতীয় পুরুষ যখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই, তখন বংশধারা রক্ষার কর্তব্য একান্তভাবে আমারই ধর্ম। কিন্তু আমি যেভাবে আমার জীবন গঠন করেছি, তাতে আমার পক্ষে গৃহিজীবন যাপন করা সম্ভব নয়। পতি হওয়া বা পিতা হওয়ার আগ্রহ বোধ হয় আমার শেষ হয়ে গিয়েছে। সংসার অন্বেষণ ক’রে কোন নারীকে জীবনে আহ্বান করবার রীতিনীতিও আমি ভুলে গিয়েছি। আমি বিষয় উপার্জনের পদ্ধতিও জানি না।

পিতৃসমাজ বলেন—কিন্তু উপায় কি? যে ভাবেই হোক, তোমাকে বংশরক্ষার কর্তব্য গ্রহণ করতেই হবে।

জরৎকারু বলেন—আমি একটি প্রতিশ্রুতি আপনাদের দিতে পারি। আমারই সমনাম্নী কোন নারী যদি স্বেচ্ছায় আমার জীবনে এসে শুধু পুত্রবতী হতে চায়, তবে আমি তার ইচ্ছা পূর্ণ করব, নিজের ইচ্ছা নয়; কারণ ইচ্ছাহীন হয়েছে আমার জীবন। আমার মনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই, সে-মনে সম্ভোগের তিলমাত্র বাসনা নেই।

অতিবৃদ্ধ পিতৃসমাজ হৃষ্টচিত্তে বলেন—তোমার কাছ থেকে এই আশ্বাসও যথেষ্ট। তুমি ভার্যা গ্রহণে সম্মত আছ, এই সত্য থেকেই আমরা শান্তিতে মরতে পারব। মরবার আগে আমরা প্রার্থনা ক’রে যাব, এমন নারী তোমার জীবনে সুলভ্য হোক, যে নারী স্বেচ্ছায় এসে তোমার সাহচর্যে পুত্রবতী হবে।

ব্রহ্মচারী জরৎকারু, যিনি শুধু আকাশের বায়ুকে ভোজ্যরূপে গ্রহণ ক’রে শরীর ক্ষীণ ক’রে ফেলেছেন, তিনিও প্রবীণ জীবনে দারগ্রহণ করতে সম্মত হয়েছেন, জনসমাজে এবং দেশ ও দেশান্তরে এ সংবাদ রটিত হয়ে গেল। রাজা জনমেজয় শুনে সুখী হলেন।

শ্রদ্ধেয়রূপে সর্বজনবরেণ্যরূপে যিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, তাঁর পক্ষে কিন্তু বরমাল্য লাভ করবার কোন লক্ষণ বা ঘটনা দেখা দিল না। নিঃসম্পদ এক তপস্যাপরায়ণের সংসারভাগিনী হওয়ার আগ্রহ হবে, এমন কন্যা দুর্লভ বৈকি।

কিন্তু আশ্চর্য, দেশান্তরে এক রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে এই সংবাদ একজনের বিষণ্ণ মনের চিন্তায় প্রবল এক আগ্রহের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে, নাগরাজা বাসুকির মনে।

নাগরাজ বাসুকিও কুলক্ষয়ের আশঙ্কায় বিষণ্ণ হয়ে আছেন। শুধু তাঁর পুরুষপরম্পরা বংশধারার ক্ষয় নয়, তার চেয়েও ভয়ানক এক ক্ষয়ের আশঙ্কা। সমগ্র নাগ জাতিকে ধ্বংস করবার জন্য রাজা জনমেজয় তাঁর নিষ্ঠুর পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ক’রে ফেলেছেন। পরাক্রান্ত জনমেজয়ের বৈরিতা ও আক্রমণের সম্মুখে দুর্বল নাগসমাজ আত্মরক্ষা করতে পারে, এমন উপায় আজও আবিষ্কার ক’রে উঠতে পারেননি বাসুকি। নাগপ্রধানেরা একে একে এসে সকল রকম প্রয়াস ও পন্থার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন, সূক্ষ্ম কূট ও প্রচ্ছন্ন, কিন্তু কোনটিকেই জাতিরক্ষার উপযোগী পন্থা বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না বাসুকি। বিশ্বাস হয় না, পরাক্রান্ত জনমেজয়ের শক্তিকে এই সব সূক্ষ্ম কূট বা প্রচ্ছন্ন কোন আঘাত দিয়ে পরাভূত করা সম্ভব হবে।

জাতিরক্ষার জন্য এই চিন্তার মধ্যে বাসুকি আজ কেন যেন বার বার জরৎকারুর কথা স্মরণ করছিলেন। জনমেজয়ের শ্রদ্ধাস্পদ জরৎকারু, যে জরৎকারুর পুত্রকে ভবিষ্যতের মন্ত্রগুরুরূপে নির্বাচিত ক’রে রেখেছেন জনমেজয়, সেই জরৎকারু পরিণত বয়সে ব্রহ্মব্রতের রীতি ক্ষুণ্ণ ক’রে বিবাহের সংকল্প করেছেন। স্বজাতিকে ধ্বংস থেকে রক্ষা, আর জরৎকারুর বিবাহের সংকল্প, দুই ভিন্ন বিষয় ও ভিন্ন প্রশ্ন, দুই ভিন্ন ঘটনা ও ভিন্ন সমস্যা। তবু এই দুই প্রশ্নকে এক ক’রে নিয়ে চিন্তা করছিলেন বাসুকি। মনে হয় বাসুকির, জনমেজয়ের নিষ্ঠুর পরিকল্পনার আঘাত থেকে জাতিকে রক্ষা করবার উপায় আছে।

বার বার মনে পড়ে বাসুকির, তাঁর ভগিনী অস্তিকার কৌলেয় নামও যে জরৎকারু। যা খুঁজছিলেন তারই ইঙ্গিত চিন্তার মধ্যে একটু স্পষ্ট হয়ে উঠতেই আবার বিষণ্ণ হয়ে ওঠেন বাসুকি। বড় কঠিন এই পথ, বড় কঠোর তাঁরও অন্তরের এই পরিকল্পনা। কিন্তু না, শত ধিক্, কী নিষ্ঠুর এই কল্পনা! এক তরুণীর জীবনকে উৎকোচরূপে বিলিয়ে দিয়ে জাতিকে বাঁচাতে হবে, এমন চিন্তা মুখ খুলে প্রকাশ করতেও মনের মধ্যে শক্তি খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাসুকি। কিন্তু উপায় নেই, বলতেই হবে।

হঠাৎ কক্ষান্তর থেকে বাসুকির সম্মুখে এসে দাঁড়ায় অস্তিকা, বাসুকির ভগিনী। চমকে উঠলেন বাসুকি। যে নির্মম পরিকল্পনার সঙ্গে মনের গোপনে আলাপ করছিলেন বাসুকি, অস্তিকা কি তাই শুনতে পেয়েছে?

বাসুকির ভগিনী অস্তিকা আজও অনূঢ়া, কিন্তু এই কারণে বাসুকির বা অস্তিকার মনে কোন দুশ্চিন্তা নেই। সে কেমন সুপুরুষ, এমন রূপান্বিতা ও সুযৌবনা তরুণীর বরমাল্য কণ্ঠে ধারণ করতে যার আগ্রহ হবে না? কত কান্তিমান যশস্বী ও গুণাধার কুমার এই অস্তিকার পাণিপ্রার্থনার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছে, কিন্তু কুমারী অস্তিকার মনে তার জন্য কোন উৎসাহ নেই; আনন্দও নেই। দেশান্তরে গিয়ে রাজমহিষী হয়ে জীবন যাপন করবার পথ মুক্ত হয়েই রয়েছে, ইচ্ছা করলে স্বয়ংবরা হয়ে আজও সেই পথে চলে যেতে পারে অস্তিকা। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে মনে হয় অস্তিকার, জনমেজয়ের আক্রমণে তারই ভ্রাতৃসমাজ অচিরে ধ্বংস হয়ে যাবে। শান্তি হারায় সুন্দরী অস্তিকার মন। আসন্ন বিনাশের আশঙ্কায় বেদনাপন্ন জাতি ও সমাজের কথা ভাবতে গিয়ে নিজের জীবনের জন্য কোন আনন্দের উৎসব কল্পনা করতেও ভাল লাগে না। নাগজাতির সঙ্কট, তার পিতৃকুলের সঙ্কট, এর মধ্যে তার কি কোন কর্তব্য নেই?

আজ এতদিন পরে যেন এক কর্তব্যের সন্ধান পেয়েছে অস্তিকা। সেই কথা জানাবার জন্য ভ্রাতা বাসুকির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।

অস্তিকা বলে—মহাতপা জরৎকারু পিতৃসমাজের অনুরোধে কুলরক্ষার জন্য পত্নী গ্রহণের সংকল্প করেছেন, একথা আপনি শুনেছেন, ভ্রাতা।

বাসুকি—হ্যাঁ শুনেছি।

অস্তিকা—জরৎকারুর পুত্রকে রাজা জনমেজয় ভবিষ্যতে মন্ত্রগুরুরূপে গ্রহণ করবেন, একথাও আপনি নিশ্চয় শুনেছেন।

—হ্যাঁ।

—জরৎকারুকে যদি আমি স্বামিরূপে বরণ করি, তবে?

বাসুকি বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠেন—তবে কি?

—আপনি কূটনীতিক ও বিজ্ঞ, আপনি চিন্তা ক’রে দেখুন, জনমেজয়ের আক্রমণ থেকে নাগজাতিকে রক্ষা করবার উপায় হতে পারে, যদি মহাতপা জরৎকারুকে স্বামিরূপে গ্রহণ করি।

হ্যাঁ, নিশ্চয় উপায় হতে পারে। বাসুকির মন যে এই বিশ্বাসের জন্যই আশা দুরাশা ও হতাশার দ্বন্দ্ব সহ্য করছে। ভবিষ্যতের যে জরৎকারুপুত্রকে জনমেজয় মন্ত্রগুরুরূপে নির্বাচিত ক’রে রেখেছেন সেই জরৎকারুপুত্র যদি বাসুকির ভাগিনেয় হয়, তবে উপায় হতে পারে। অস্তিকার ক্রোড়ে লালিত সেই জরৎকারুপুত্র তার নিজের মাতৃকুল ধ্বংসের পরিকল্পনায় কখনই জনমেজয়কে সমর্থন করবে না; বরং, এবং অবশ্য, একমাত্র সে-ই জনমেজয়কে নিবৃত্ত করতে পারে। হ্যাঁ, উপায় হতে পারে।

তবু বাসুকির কণ্ঠস্বর বেদনায় উদাস হয়ে যায়—আমার চিন্তা অপচিন্তা বা দুশ্চিন্তার কথা ছেড়ে দাও ভগিনী অস্তিকা, তুমি নিজের উপর এতটা নির্মম হয়ো না।

অস্তিকা—কিসের নির্মমতা?

বাসুকি—জরৎকারু নিতান্ত দরিদ্র প্রায়বৃদ্ধ ও সংসারবিমুখ এক তপস্বী। তোমার মত সুযৌবনা রূপান্বিতা ও সুখলালিতা নারীর পক্ষে এহেন ব্যক্তি কখনই বরণীয় হতে পারে না।

অস্তিকা বাধা দিয়ে বলে—জাতিকে সমূহ বিনাশ হতে রক্ষা করবার কোন উপায় যখন আর নেই, তখন আমার মত নারীর পক্ষে যা সাধ্য, আমি তাই করতে চাই। আপনার সম্মতি আছে কিনা বলুন?

বাসুকি—আছে। এই একটিমাত্র উপায় আছে। এবং এতক্ষণ ধ’রে অনেক কুণ্ঠা সত্ত্বেও এই উপায়ের কথা চিন্তা করছিলাম, ভগিনী অস্তিকা। আশীর্বাদ করি, তুমি যেন…।

অস্তিকা—প্রার্থনা করুন, নাগজাতি যেন রক্ষা পায়।

বনপথে একা যেতে যেতে হঠাৎ নাগরাজ বাসুকিকে দেখতে পেয়ে আদৌ বিস্মিত হননি জরৎকারু, কিন্তু নাগরাজের উচ্চারিত অভ্যর্থনার বাণী শুনে একটু বিস্মিত হলেন, এবং নাগরাজের অনুরোধ শুনে আরও বেশি বিস্মিত হলেন।

জরৎকারু বলেন—শুনে সুখী হলাম, আপনার ভগিনী আমারই সমনাম্নী। কিন্তু আমার মত বিষয়সম্পদহীন বয়োবৃদ্ধ পুরুষের জীবনে অযাচিত উপহারের মত এক কুমারী তরুণীর জীবন আত্মসমর্পণ করতে চাইছে, শুনে বিস্ময় হয় নাগরাজ।

বাসুকি—বিস্ময় হলেও বিশ্বাস করুন ঋষি, আমার ভগিনী অস্তিকা স্বেচ্ছায় আপনার মত তপস্বীকে পতিরূপে বরণ করবার জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছে।

জরৎকারু—আমার কিন্তু ভার্যা পোষণের উপযোগী বিষয়সম্পদ অর্জনের কোন সামর্থ্য নেই।

বাসুকি—জানি, সে দায় আমি নিলাম।

জরৎকারু—আমি কিন্তু সম্ভোগসুখের জন্য আদৌ স্পৃহাশীল নই।

বাসুকি—জানি, সে তো আপনার জীবনের আদর্শ।

জরৎকারু—মাত্র পিতৃসমাজের কাছে প্রতিশ্রুত সত্যরক্ষার জন্য আমি কুলরক্ষার সংকল্প গ্রহণ করেছি।

বাসুকি—জানি, সে তো আপনার কর্তব্য।

জরৎকারু—তবু আশঙ্কা হয় নাগরাজ। এভাবে পত্নী গ্রহণ করলে একটা দীনতা স্বীকার করতে হবে। আমার কুলরক্ষার ব্রতে সহায়িকা হয়ে যে-নারী আমার কাছে আসতে চাইছে, সে-নারী আমার প্রতি তার আচরণে প্রিয়তা ও সম্মান রক্ষা করতে পারবে কি?

বাসুকি—আমি আশ্বাস দিতে পারি ঋষি, আমার ভগিনীর আচরণে আপনি কোন অপ্রিয়তার প্রমাণ পাবেন না।

জরৎকারু—আমি নিজেকে জানি বলেই একটি কথা জানিয়ে রাখি। আপনার ভগিনীর আচরণ যেদিন আমার কাছে অপ্রিয় বোধ হবে, সেদিনই আমি চলে যাব, এবং ফিরে আসব না।

বাসুকি—আপনার এই অধিকারও স্বীকার করি ঋষি।

বিবাহ হয়ে গেল। তপস্বী জরৎকারু ও রাজকুমারী অস্তিকার বিবাহ। এই বিবাহে বরমাল্য বিনিময়ের সঙ্গে হৃদয় বিনিময়ের কোন প্রশ্ন ছিল না। লগ্ন যতই মধুর হোক, কোন আনন্দ শঙ্খে শঙ্খে ধ্বনিত হবার কথা ছিল না। মাঙ্গলিক বেদিকা আলিম্পনে রঞ্জিত হলেও অন্তরনিলয় অনুরাগে রঞ্জিত ছিল না। একজনের উদ্দেশ্য পিতৃকুল রক্ষা, আর একজনের উদ্দেশ্য ভ্রাতৃকুল রক্ষা, তারই জন্য এই বিবাহ। সমাজনীতির মর্যাদা রক্ষা করবার জন্য এক তপস্বী তাঁর ব্রহ্মব্রত ক্ষুণ্ণ ক’রে এক সুযৌবনা নারীকে গ্রহণ করলেন। রাজনীতির উদ্দেশ্য সিদ্ধ করবার জন্য এক তরুণী রাজকুমারী এক বয়োবৃদ্ধ তপস্বীকে গ্রহণ করলেন।

নাগপ্রাসাদের অভ্যন্তরে রমণীয় এক পুষ্পাকুল উদ্যান, সৌরভবিধুর বায়ু আর বিহগের কলকূজন। তারই মধ্যে এক সুশোভন নিকেতনে জরৎকারু ও অস্তিকার অভিনব দাম্পত্যের জীবন আশ্রয় লাভ ক’রে।

করতল কঠোর ক’রে অক্ষিসলিলের ধারা আগেই মুছে ফেলে এই ঘটনাকে বরণ করবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল অস্তিকা। জানে অস্তিকা, এই দাম্পত্যে হৃদয়ের স্থান নেই। এক বয়ঃপ্রবীণ তপস্বীর সাহচর্য বরণ ক’রে তাকে শুধু পুত্রবতী হতে হবে। এ ছাড়া এই দাম্পত্যের আর কোন তাৎপর্য নেই।

জরৎকারুও জানেন, তাঁর কর্তব্য কি, সংকল্প কি? যাযাবর পিতৃসমাজের কাছে প্রদত্ত তাঁর প্রতিশ্রুতি শুধু রক্ষা করতে হবে। অস্তিকা নামে এই নাগরাজ-ভগিনী শুধু পুত্রবতী হবে; এক তরুণীর জীবনে মাত্র এইটুকু পরিণতি সফল করবার প্রয়াস ছাড়া আর কোন অভীপ্সা তাঁর নেই। সংকল্প অনুসারে এই বিবাহিতা জীবনকে যেভাবে গ্রহণ করা উচিত, জরৎকারু ঠিক সেইভাবেই গ্রহণ করলেন। কুলরক্ষার আগ্রহ ছাড়া তাঁর মনে আর কোন আগ্রহ নেই।

মমতা এখানে নিষিদ্ধ, অনুরাগ অপ্রার্থিত, হৃদয়ের বিনিময় অবৈধ। স্পৃহাহীন সম্ভোগ, কামনাহীন মিলন। জরৎকারুর প্রয়োজন শুধু অস্তিকার এই নারীশরীর, নারীত্ব নয়। বিবাহের পর জরৎকারু নিরন্তর এবং প্রতি মুহূর্ত অস্তিকাকে বক্ষোলগ্ন করতে চান, বক্ষোলগ্ন ক’রে রাখেন।

অস্তিকার মনে হয়, এক বিরাট পাষাণের বিগ্রহ যেন তাকে বক্ষে ধারণ ক’রে রয়েছে, যে বক্ষে আগ্রহের কোন স্পন্দন নেই। জরৎকারুর এই কঠোর আলিঙ্গনে অস্তিকার অধর শীতাহত কমলপত্রের মত শিহরিত হয়। কিন্তু কোন আবেগের স্পর্শে নয়; দুঃসহ এক দুঃখের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ যেন স্ফূরিত হতে চেষ্টা ক’রেও স্তব্ধ হয়ে যায়।

কি অদ্ভুত মিলন নিরন্তর অন্বেষণ করছেন স্বামী! ঋষির স্পৃহাহীন ও উদাসীন নিঃশ্বাসে যেন শুধু অন্ধ শোণিতের আগ্রহ!

দুঃসহ বোধ হলেও একটি আশা অন্তরে ধ’রে রেখেছে অস্তিকা, একদিন না একদিন জরৎকারুর এই কামনাহীন পৌরুষের অবসান হবে। মাঝে মাঝে আরও সুন্দর সুস্বপ্ন দেখে নিজেকে সান্ত্বনা দান করে অস্তিকা। কামনা নেই ঋষির আচরণে, কিন্তু একদিন কামনা দেখা দেবে এই ঋষির নিঃশ্বাসে; এবং সেই কামনাও মমতায় সুরভিত হয়ে প্রেমে পরিণত হবে। জরৎকারুর জীবনে পতিধর্মের আবির্ভাব হবে। অস্তিকার দেহের স্পর্শকে সহধর্মিণীর স্পর্শ বলে অনুভব করবার মত হৃদয় লাভ করবেন জরৎকারু।

জরৎকারুকে পতির সম্মান দিয়ে আপন ক’রে নেবার আশা রাখে অস্তিকা। সুযোগ পায় না, তবু সুযোগের অন্বেষণ ক’রে। নিতান্ত শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার আহ্বান ছাড়া জরৎকারুর কাছ থেকে কোন সহব্রতের আহ্বান আসে না, তবু অস্তিকার অন্তরাত্মা প্রতীক্ষায় থাকে। জরৎকারু যদিও কোনদিন বলেন না, তবু তাঁর পাদ্য-অর্ঘ্যের আয়োজন ক’রে রাখে অস্তিকা।

এই দাম্পত্যে প্রেম নেই, না থাকুক, তার জন্য দুঃখ করতে চায় না অস্তিকা। এই ঋষির নিঃশ্বাসে শুধু যদি একটুকু কামনাময় আগ্রহের উত্তাপ থাকত! মধ্যনিশীথের তন্দ্রার মধ্যে নীরবে কেঁদে ওঠে অস্তিকার হৃদয়ের প্রার্থনা।—চাই না প্রেম, শুধু চাই এক বিন্দু কামনার স্পর্শ। বল ঋষি, একবার ঐ রবহীন হাস্যহীন ও বিহ্বলতাশূন্য শিলাবৎ অধর স্পন্দিত ক’রে তোমারই বিবাহিতা নারীর কানের কাছে শুধু বলে দাও, ভাল লাগে এই নারীর দেহের স্পর্শ।

নিজের ইচ্ছায় আহূত শোভাহীন ভাগ্যকে নতুন ক’রে সাজিয়ে তুলতে চেষ্টা ক’রে অস্তিকা। মাত্র কুরক্ষার জন্য সংস্কারচারিণী নারীর মন বুঝতে পারে, এই জীবন পত্নীর জীবন নয়। তবু ভবিষ্যতের জন্য আশা ধ’রে রাখে অস্তিকা। জরৎকারুর এই উত্তাপহীন তৃষ্ণা, আগ্রহহীন লালসা ও আকুলতাহীন সম্ভোগের প্রতিজ্ঞা মেঘাবৃত দিনের অন্ধকারের মত একদিন মিথ্যা হয়ে যাবে, কামনায় কমনীয় হবে জরৎকারুর কঠোর পতিত্ব।

সেদিন তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, পশ্চিম আকাশে রক্তিম আলোকের অবশেষটুকুও ছিল না। অস্তিকার মনে পড়ে, স্বামী এখন সন্ধ্যা-বন্দনায় বসবেন। কোথায় আসন ক’রে দিতে হবে, কি উপকরণ সংগ্রহ ক’রে রাখতে হবে, সেই কথাই ভাবছিল অস্তিকা।

জরৎকারু হঠাৎ উপস্থিত হয়ে অস্তিকার হাত ধরলেন। অস্তিকার অন্তর এক অস্পষ্ট শঙ্কায় শিহরিত হতে থাকে। পরমুহূর্তে শঙ্কিতা অস্তিকার প্রাণ যেন নীরবে আতর্নাদ ক’রে ওঠে। মূক উন্মাদের মত অকস্মাৎ অস্তিকাকে বাহুবন্ধে আবদ্ধ ক’রেছেন জরৎকারু। অক্ষণে, অবিন্যস্ত কুসুমমাল্য আরও বিস্রস্ত ক’রে অরচিত শয্যায় উপবেশন করলেন জরৎকারু।

কোনদিন যা করেনি অস্তিকা, আজ বাধ্য হয়ে তাই করতে হলো। মৃদু প্রত্যাখ্যানে জরৎকারুর বাহুবন্ধন ছিন্ন ক’রে উঠে দাঁড়ায় অস্তিকা। নম্র স্বরে প্রতিবাদ করে অস্তিকা—আপনি ভুল করছেন ঋষি, এখন আপনার সন্ধ্যা—বন্দনার সময়।

জরৎকারু কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকেন। ধীরে ধীরে তাঁর মুখে যেন এক অপমানের জ্বালা দীপ্ত হয়ে ফুটে ওঠে।

জরৎকারু বলেন—একথা স্মরণ করিয়ে দিতে তোমার এত আগ্রহ কেন?

অস্তিকা—আমি আপনার স্ত্রী, আপনাকে কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেবার আগ্রহ আমারই তো থাকবে ঋষি।

—তোমাকে সে অধিকার আমি দিইনি।

—তবে আমার অধিকার কি?

—শুধু আমার আচরণের সাহায্য করা, বাধা দিয়ে আমাকে অপমান করা নয়।

—ক্ষমা করবেন ঋষি, অস্তিকার দেহ-মন আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্যই প্রস্তুত হয়ে আছে। আপনার নিত্যদিনের ধর্মাচরণে সাহায্য করবার জন্যই আপনাকে সন্ধ্যা-বন্দনার কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। আপনাকে অপ্রিয় মনে করি না ঋষি, আপনি প্রিয় বলেই এইটুকু বাধা দিয়ে ফেলেছি। বলুন, কি অন্যায় করেছে আপনার পত্নী অস্তিকা?

—কোন ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন নয় অস্তিকা। মহাতপা জরৎকারুকে আজ তোমার কাছ থেকে কর্তব্যের যে উপদেশ শুনতে হলো, সে উপদেশ তার জীবনে তিরস্কারের আঘাত ছাড়া আর কিছু নয়। আমারই ভুলে আমাকে এই তিরস্কার করবার সুযোগ তুমি পেয়েছ। তপস্বী জরৎকারুর জীবনে এই প্রথম তিরস্কারের আঘাত। কিন্তু এই ভুলকে আর প্রশ্রয় দিতে পারি না, আমি যাই।

আর্তনাদ ক’রে ওঠে অস্তিকা—ঋষি!

জরৎকারু—বৃথা আমাকে ডাকছ।

অস্তিকার দৃষ্টি বেদনায় সজল হয়ে ওঠে—আপনার পত্নী, আপনার সহচরী জীবনসঙ্গিনী, আপনার ধর্মভাগিনী অস্তিকা আপনাকে ডাকছে, আপনি যাবেন না ঋষি।

জরৎকারু—এত বড় সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি আমি তোমাকে দিইনি অস্তিকা, আমার জীবনে এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তবু ধন্যবাদ দান করি তোমাকে, তুমি আমাকে আমার এক ভুলের গ্লানি স্মরণ করিয়ে দিয়েছ।

চলে যাচ্ছিলেন জরৎকারু। অস্তিকা কিছুক্ষণ পলকহীন দৃষ্টি তুলে সেই নির্মম অন্তর্ধানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার নারীত্ব কোন মূল্য পেল না, তার পত্নীত্ব কোন মর্যাদা পেল না। যাক, জেনে শুনে ও স্বেচ্ছায় এই অদ্ভুত এক নিয়তির কাছেই তো আত্মসমর্পণ ক’রেছিল অস্তিকা।

হঠাৎ মনে পড়ে অস্তিকার, তারই জীবনের এক প্রতিজ্ঞা ও পরীক্ষাকে ব্যর্থ ক’রে দিয়ে যেন সদর্পে চলে যাচ্ছে এক মমতাহীন পৌরুষ। ইচ্ছাহীন পৌরুষের ঐ ঋষিকে এভাবে চলে যেতে দিলে রক্ষা পাবে না নাগজাতির জীবন, রক্ষা পাবে না অস্তিকার পিতৃকুলের কল্যাণ।

লুণ্ঠিত লতিকার মত অস্তিকার কোমল মূর্তি হঠাৎ অদ্ভুত এক আবেগে আহতা নাগিনীর মত চঞ্চল হয়ে ওঠে। মোহ নয়, মমতা নয়, শুধু এক কর্তব্যের অঙ্গীকার চঞ্চল হয়ে উঠেছে। অস্তিকাও তার কর্তব্যের কথা স্মরণ ক’রে, তার প্রতিশ্রুতি ও সংকল্পের কথা। ত্বরিতপদে ছুটে এসে অস্তিকা জরৎকারুর পথরোধ ক’রে দাঁড়ায়। জরৎকারুর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক দেয়—ঋষি!

লজ্জানম্রা নারীর দৃষ্টি নিয়ে নয়, পতিপ্রেমিকা সহজীবনপ্রার্থিনী ভার্যার সেবাকুল দৃষ্টি নিয়ে নয়, যৌবনস্পৃহাও বিবৃত ক’রে নয়, শুধু অসংবৃত নারীদেহ যেন শুধু এক পুরুষদেহের সংসর্গ বরণ করবার জন্য জরৎকারুর সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

অস্তিকা বলে—আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছেন, ঋষি।

জরৎকারু—প্রতিশ্রুতি! কার কাছে?

অস্তিকা—আমার কাছে নয়, আপনার পিতৃসমাজের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে প্রতিশ্রুতি সফল না হওয়া পর্যন্ত অস্তিকার আলিঙ্গনের মধ্যে আপনাকে থাকতে হবে।

সন্ধ্যাদীপের আলোকে সেই মূর্তির দিকে তাকিয়ে জরৎকারু তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করলেন; অস্তিকার হাত ধরলেন।

জরৎকারু কবে চলে গিয়েছেন, কখন চলে গিয়েছেন, কেন চলে গেলেন, নাগরাজ বাসুকি কিছুই জানতে পারেননি। একদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে জাগ্রত নাগপ্রাসাদের এক কক্ষে বসে দূতমুখে যখন সংবাদ শুনলেন, অস্তিকার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জরৎকারু চলে গিয়েছেন, তখন কিছুক্ষণের মত স্তব্ধ হয়ে রইলেন বাসুকি। মনে হলো, জনমেজয়ের আঘাত আসবার আগেই নাগপ্রাসাদ যেন নিজের লজ্জায় অপমানে ও ব্যর্থতায় চূর্ণ হয়ে গিয়েছে।

অস্তিকা কই? বাসুকি উঠলেন। প্রাসাদের অলিন্দ ও চত্বর পার হয়ে, উপবনবীথিকার ভিতর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে এক নিকেতনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন বাসুকি। দগ্ধ ও নির্বাপিত সন্ধ্যাদীপের আধার তখন মসিময় হয়ে পড়েছিল, আর সেই নির্বাপিত ও মসিময় প্রদীপের পথে নিঃশব্দে বসেছিল অস্তিকা।

বাসুকি ব্যস্তভাবে প্রশ্ন করেন—জরৎকারু কেন চলে গেলেন অস্তিকা?

অস্তিকা—আমার ভুলে।

হতাশায় আক্ষেপ ক’রে ওঠেন বাসুকি—সব ব্যর্থ ক’রে দিলে ভগিনী অস্তিকা!

অস্তিকা—না ভ্রাতা, সবই সার্থক হয়েছে।

বাসুকির চক্ষু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে—সার্থক? একথার অর্থ?

অস্তিকা—তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা ক’রেছেন, আমিও আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা ক’রেছি। জরৎকারুর সন্তানের মা হওয়ার দায় আমার জীবনে এসে গিয়েছে, আশীর্বাদ কর।

হর্ষে ও আনন্দে বাসুকির চিত্ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। অস্তিকাকে আশীর্বাদ ক’রে বাসুকি বলেন—নাগজাতিকে ধ্বংস থেকে তুমিই রক্ষা করলে ভগিনী অস্তিকা, তোমার এই গৌরব অক্ষয় হবে।

আনন্দিতচিত্ত বাসুকি চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে অস্তিকাও তার অবসন্ন দেহভার তুলে উঠে দাঁড়ায়। যেন এই সার্থকতা ও গৌরবকে ভাল ক’রে দেখবার জন্যই চারিদিক তাকায়।

বোধ হয়, তার নিজেরই জীবনের চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেখল অস্তিকা। দেখতে পায়, স্বামিহীন এক সংসারের নিকেতনে আজীবন শূন্যতার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে তার জীবন। আর, নির্বাপিত সন্ধ্যাদীপের আধারে ঐ যে মসিময় অবলেপ, ঐ তো তার অপমানিত নারীত্বের শ্মশানধূমলেখা! শুধু অপমান, শুধু ব্যর্থতা ও অগৌরব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *