গীতা কেন – ৩

তিন

মানুষের সহায়, বন্ধু কে? এই প্রসঙ্গে গীতা বলে, মানুষ নিজেই নিজের বন্ধু, নিজেই নিজের শত্রু (৬:৬) এর একটা অর্থ হতে পারে, নিজের পক্ষে যা হিতকর কিংবা যা ক্ষতিকর তা মানুষের নিজের অন্তরাত্মাই নিরূপণ করে। অর্থাৎ বাইরের কোনও প্রভাবে মানুষের মঙ্গল বা অমঙ্গল ঘটে না, ঘটে তার নিজের অন্তরের প্ররোচনাতেই। এর ফলে মানুষের জীবনে যা কিছু ভালমন্দ প্রভাব তার দায়িত্ব বাইরের কোনও ঘটনা বা প্রভাব বা ব্যক্তি নয়, তার পুরো দায়িত্ব মানুষের নিজের। পুরো সত্যি না হলেও কথাটা গুরুত্বপূর্ণ এবং মানুষকে তার নৈতিক দায়িত্ব সম্বন্ধে অবহিত রাখে এ কথাগুলি। সমবুদ্ধি সম্বন্ধে আগে যা বলা হয়েছে বারেবারেই তা উচ্চারিত হয়েছে। আবার সেই কথাই বলা হল: বন্ধু, মিত্র, উদাসীন, মধ্যস্থ [নিরপেক্ষ], দ্বেষের পাত্র, সাধু ও পাপিষ্ঠের প্রতি যে সমবুদ্ধি সে-ই বিশিষ্ট। (৬:৯) সাধারণ বুদ্ধিতেও এ কথার একটা ফাঁক চোখে পড়ে। বন্ধু, শত্রু, উদাসীন এদের প্রতি সমদৃষ্টি হওয়া শুধু যে সম্ভব তাই নয়, তা উচিতও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। যে দ্বেষের পাত্র, সে কী করে বন্ধু বা উদাসীনের সমান হয়? এই সমদৃষ্টি তো দৃষ্টির অভাব, অস্বচ্ছতা। অর্থাৎ দৃষ্টি যাতে মুক্ত যথার্থ না হয় তারই বিবরণ। এবং একেই বলা হচ্ছে বিশিষ্ট। মানে, সত্যকার মুক্তদৃষ্টির সাধনা যার করণীয়, তাকে চোখ বুজে সব সমান বলে মনে করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ যেন অন্ধতার সাধনা, দৃষ্টি হারাবার সাধনা।

পরে এক জায়গায় যোগীর চিত্ত সম্বন্ধে বলা হচ্ছে, যেখানে বাতাস নেই, সেখানে যেমন দীপশিখা স্থির থাকে [নড়ে না, চঞ্চল হয় না], তেমনি যে যোগী যোগসাধনায় লিপ্ত তার চিত্তও অবিচলিত, স্থির থাকে। (৬:১৯) যোগী মানেই, যে মানুষ একটিমাত্র লক্ষ্যে দৃষ্টি স্থির রেখে তারই সাধনা করে, তার চিত্ত ইতস্তত চঞ্চল হয় না, যেমন বায়ুবিহীন স্থানে প্রদীপের শিখা অচঞ্চল থাকে।

যোগ হল ষড়দর্শনের একটি প্রস্থান। এর সংজ্ঞা হল, ‘যোগশ্চিত্তকৃত্তিনিরোধ’: চিত্তবৃত্তিকে ইতস্তত চঞ্চল হতে না দিয়ে একটি লক্ষ্যে স্থির রাখাই হল যোগের সাধনা। যে সমাজে গীতা রচনা হচ্ছিল বা সংকলিত হচ্ছিল সেখানে যোগ একটি প্রধান দর্শনপ্রস্থান, তাই গীতায় যোগের এত প্রশংসা। একটি শ্লোকে বলা হচ্ছে: ‘নহি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দুর্গতিং তাত গচ্ছতি।’ কল্যাণকারীর কখনও দুর্গতি হয় না। একমাত্র উপযোগিতা হল এ শ্লোকটি মানুষকে মানুষের হিতব্রতে প্রেরণা জোগাবে। জোগাবে একটা আপাত মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে। শুধু একটি অর্থে শ্লোকটি পূর্ণ অর্থবহ, তা হল দুর্গতি আর যাই হোক কল্যাণকারী মানুষ তার নিজের চিত্তের গভীরে একটা নিশ্চিত শান্তি এবং পরোপকারের সুখ বহন করে, যার থেকে তাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারে না। মানুষের কল্যাণকর্মে প্রেরণা দেবার পক্ষে শ্লোকটির যথার্থ উপযোগিতা আছে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে যদি কেউ এটি বিশ্বাস করে, তা হলে তার ভ্রান্তি সে বুঝতেই পারবে। কল্যাণকারী মানুষ সর্বদাই যে দুর্গতি থেকে রক্ষা পায়, জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তা বলে না। বহু হিতব্রতী মানুষ রোগ, শোক, অভাবে ছিন্নভিন্ন হয়, অকালে মৃত্যুবরণ করে। এ সব কি দুর্গতি নয়? কিন্তু যেখানে দুর্গতি তাকে স্পর্শ করতে পারে না, সে হল তার অন্তরাত্মা— সেখানে হিতব্রতীর একটা অক্ষয় শান্তির মধ্যে বাইরের সব দুর্গতির বাইরে একটা নিশ্চল শান্তি পায়।

বলা বাহুল্য, এ ধরনের শ্লোক স্বভাবতই শোনা মাত্র শ্রোতার চিত্তহরণ করে। দুর্গতি কখনও হবে না— এমন একটা মানুষের চিরদিনের কাম্য অবস্থা। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে এ শ্লোকের অন্তর্নিহিত ফাঁকিটা ধরা পড়ে। কারণ, কল্যাণকারী সম্বন্ধে এখানে যে প্রতিশ্রুতি, বাস্তব তাকে স্বীকার করে না। তবু মিথ্যা আশ্বাস হলেও এ শ্লোকে সাধারণ মানুষ কল্যাণকারী হবার প্রেরণা পায়, এবং অন্তিম ফাঁকি সত্ত্বেও এখানে তার ঐকান্তিক মূল্য।

অন্য প্রসঙ্গে একবার বলা হয়েছে, সহস্রজন মধ্যে মানুষের একজনই সিদ্ধির জন্য চেষ্টা করে। সাধনায় যারা নিরত তাদের মধ্যে হয়তো একজন আমার তত্ত্বগত অস্তিত্ব কী তা জানে। (৭:৩) সিদ্ধি কী, স্পষ্ট করে না বললেও বোঝা যায়, কৃষ্ণকে তাঁর স্বরূপে জানা চেষ্টাই হল সিদ্ধি। চার ধরনের মানুষ আমার সেবা করে: সেই সুকৃতিমান মানুষরা হল, আর্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী আর জ্ঞানী। (৭:১৬) যে বিপন্ন, সে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমার শরণাপন্ন হয়। যার মনে প্রশ্ন আছে, সমাধানের জন্য সে আমার কাছে আসে। যার কোনও প্রয়োজন আছে তা মেটাবার জন্যও আমাকে তার প্রয়োজন। আর যে জ্ঞানী, তার জ্ঞানের উৎস ও পরিণাম আমিই, তাই সে আমার কাছে আসে। কিছু পরে শুনি, আমার সেই পরম ধাম হল যেখানে পৌঁছে মানুষ আর ফেরে না। (৮:২১) কৃষ্ণই পথ আর কৃষ্ণই পথের শেষ গন্তব্যস্থল। কৃষ্ণকে সব চেষ্টার সব সাধনার লক্ষ্যস্থল হিসেবে দেখানো হয়, যাতে বোঝা যায়, কৃষ্ণের বাইরে আরাধ্য কেউ নেই, কৃষ্ণপ্রাপ্তির সাধনার বাইরে আরাধনার আর কোনও পথ বা তার প্রয়োজন নেই। কারণ, কৃষ্ণই একমাত্র ও অন্তিম গন্তব্যস্থল।

পুণ্যবলে সে কোন স্বর্গে বাস করে তাও যেমন বলা নেই, ঠিক কীসে পুণ্য সঞ্চয় করা যায় সে কথাও স্পষ্ট করে কোথাও বলা নেই। তা ছাড়া এবং কীসেই বা সে পুণ্য ক্ষয় হয়, কতটা ক্ষয় হয় বা কতটা ক্ষয় হলে সে মর্তে ফিরে আসে তার কোনও নির্দেশ কোথাও দেওয়া নেই। কাজেই, কর্ম, কর্মফল, এবং তার ফলে স্বর্গবাস, পুণ্যক্ষয়ে মর্তে পুনরাগমন (কতদিনের জন্য?) এ সব কথা যথাসম্ভব অনিশ্চিত রয়ে গেছে। ঠিক এইটিই প্রয়োজন ছিল: সুনির্দিষ্ট কোনও হিসাব পেলে কর্মের কর্তা মানুষ তার ভাগ্য নিরূপণের ব্যাপারটি নিজেই কতকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু সমগ্র গীতায় এই আবছা অস্পষ্টতা থাকায় মানুষ অতিলৌকিক শক্তির মুখ্যত, কৃষ্ণের হাতে ক্রীড়নকের মতো হয়ে ওঠে: তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে তার কোনও ক্ষমতা থাকে না।

এর অল্প দূরেই আছে চার্বাকদের কথা, পাপপুণ্যের ফলে কোনও পরিণাম নেই।[৮] এরও পরে কাপালিকরা ছিলেন সক্রিয়বাদী। এঁদের মতে, প্রকৃতি হল উপাদান কারণ, শিব নিমিত্ত কারণ। ফলে কাপালিকরা অহেতুবাদী। কর্ম ও কর্মফলেরর কোনও আবশ্যিক ধারাবাহিক যুক্তি পরম্পরা বা চিন্তাগত বিবর্তনের আভাস নেই। তাই হঠাৎ বলা চলে পুণ্য ক্ষীণ হলে মর্তে অবতরণ করে আত্মা। ঠিক কেন, কী করে পুণ্য অর্জিত হয়, কিসে তা ক্ষীণ হয়, ক্ষীণপুণ্য মানুষ মর্তে কেন, কতদিন সচল থাকে তার কোনও নির্দেশ নেই। বলা বাহুল্য, এ জাতীয় অস্পষ্টতা সাধারণ মানুষের কাছে একান্তই গ্রহণীয়। কারও কাছে যখন কোনও নিয়মের হদিশ মেলে না তখন কর্ম সম্বন্ধে তেমন নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্বও বর্তায় না এবং অনেকটা যা হবার তাই হবে, কর্তার কোনও দায় নেই— এ রকম একটা বোধ জন্মায়। অতএব দেখা যাচ্ছে গীতায় কৃষ্ণই কেন্দ্রীয় চরিত্র, শেষ লক্ষ্য এবং একমাত্র আরাধ্য।

[৮. ‘নাস্তি সুকৃতদূষ্কৃতকর্মণাং ফলং বিরাকঃ’, চার্বাকদর্শন, উদ্ধৃত ড. দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রীর (ইং) চার্বাক ফিলজফি। প্রথম পুরোগামী প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৬৭, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ. ৩৯)]

কৃষ্ণ নিজেই বলছেন, আমি এই জগতের পিতা, মাতা, ধাতা এবং পিতামহ। জানবার বস্তু আমিই, আমি পবিত্র ওঙ্কার। ঋক, সাম ও যজুঃ। (৯:১৭) অর্থাৎ বেদের যা কেন্দ্রবস্তু তার সবের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে দিলেন। মনে রাখতে হবে গীতা মহাভারতের অন্তর্ভুক্ত যা বেদের অনেক পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এর আগের যুগে মানুষ বৈদিক ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রে অনুগত ছিল, তাই প্রকারান্তরে কৃষ্ণকে বেদের সঙ্গে এক করে দেখানো হল। এর ফলে কৃষ্ণতত্ত্বের কাছে বৈদিক ধর্ম গৌণ হয়ে গেল। এবং বৈদিক ধর্ম আর পৃথক রইল না, কৃষ্ণতত্ত্বেরই অন্তর্গত হয়ে গেল। বেদ ও কৃষ্ণতত্ত্ব এক ভাবে মিশে গেল। গীতা বৈদিক আর্যের গ্রহণীয় হল।

অপর একটি বহু-উদ্ধৃত শ্লোকার্ধ শোনা যায়: ‘ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশতি।’(৯:২১) অর্থাৎ মৃত্যুর পরে যারা স্বর্গলোকে বা অনুরূপ কোনও দেবলোকে বাস করে, তাদের সঞ্চিত পুণ্য ক্ষয় হয়ে গেলে তারা পুনরায় পৃথিবীতে প্রবেশ করে। এর মধ্যে বিস্তর ফাঁক আছে। কোন পুণ্য কতটা থাকলে কতদিনের জন্য কোন দেবলোকে প্রবেশ বা বাস করা যায়, তা কোথাও বলা নেই। কত পুণ্য থাকলে সেখানে কতদিন থাকা যায় তা-ও কোথাও নির্দেশ করা নেই। এবং দেবলোক বা স্বর্গে কী করে পুণ্যক্ষয় হয় কতদিনে, কেন ও কতটা— তাও বলা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, এ সব কোন দেবতা বা কোন শক্তি নিরূপণ করে তারও কোনও নির্দিষ্ট হদিশ পাওয়া যায় না। শুধু জানা গেল যে, সঞ্চিত পুণ্যে কোনও দেবলোক বা স্বর্গে বাস করা যায় কিছুকাল এবং তারই মধ্যে পুণ্য ক্ষীণ হয়ে এলে পুনরায় পৃথিবীতে বাস করতে আসতে হয়।

কৃষ্ণ মাঝে মাঝে খুব উদার কথাও বলেন। যেমন, যাঁরা ভক্তিভরে অন্য দেবতার আরাধনাও করেন, তাঁরাও না জেনে আমারই পূজা করেন, শুধু বিধিবর্জিত ভাবে। (৯:২৩) এর একটা অর্থ হল, ভক্তিভরে যে কোনও দেবতার পূজা করলে তা কৃষ্ণেরই পূজা হয়, শুধু তা হয় নিয়মবর্জিত ভাবে। নিয়ম কী, গীতা তা বলেনি, কাজেই কী ভাবে তাঁর আরাধনা করা বিধেয় তাও স্পষ্ট নয়। কিন্তু সে যুগে যখন ভারতবর্ষে বহিরাগত বহু ধর্ম, দেবতা, পূজাপদ্ধতি যুগপৎ বর্তমান ছিল তখন যে কোনও দেবতাকে ভক্তিভরে পূজা করলেই তা কৃষ্ণ আরাধনাই হয়, এ এক ধরনের সর্বধর্মসমন্বয় হল। সংশয় আছে যে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সুপরিকল্পিত ছক পাওয়া যায় না। অর্থাৎ মর্ত্যলোক ও পরলোকের মধ্যে আনাগোনাটা কোনও শক্তি বা দেবতা নির্ধারণ করে না। ফলে একটা প্রকাণ্ড অনিশ্চয়তার বাতাবরণের মধ্যেই মানুষের জন্মজন্মান্তরে চলাফেরা। একদিকে এতে যেমন স্পষ্টতার আশ্বাস, অন্য দিকে তেমনি অস্পষ্টতার এক স্বস্তি আছে।

মনে রাখতে হবে, তখন উত্তর ভারতে বহু পদ্ধতির পূজা চালু আছে বহু দেবতার উদ্দেশে। এগুলির মূল নৈবেদ্য ও বিভিন্ন বিচিত্র বিগ্রহ, পূজাপ্রণালী পৃথক। এ জন্যই কৃষ্ণকে বেছে নিতে হল লঘিষ্ঠ গুণিতকটিকে: ফল, ফুল ও জল, যা দরিদ্রতম পূজারিও সহজে আনতে পারে। না হলে বহু বিচিত্র পদ্ধতি ও উপকরণের আড়ম্বরে দরিদ্র সাধারণ মানুষ প্রবেশ পথ পায় না। এই তিন উপকরণ অতি সহজে পাওয়া যায়। ফলে পূজার বিস্তার সহজ ও ব্যাপক হয়।

একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, যে ভক্ত পত্রপুষ্প, ফল, জল আমাকে ভক্তিভরে অর্পণ করে সেই ভক্তিপূর্ণ উপহার আমি গ্রহণ করে ভোগ করি। (৯:২৬) এই মর্মের কথাই এর আগের শ্লোকে বলা হয়েছে। যা কর, যা খাও, যা হবন কর, যা দাও, যা তপস্যা কর, ভক্তিমান পূজকের ভক্তিভরে সমানীত সেই অর্ঘ্য আমি গ্রহণ করি। (৯:২৭) এই দু’টি শ্লোকেই দেখা যায়, যৎসামান্য নামমাত্র পূজানৈবেদ্য, কোনও পূজক যা ভক্তিভরে দেবতাকে অর্পণ করে, দেবতা তা সাগ্রহে গ্রহণ করেন। এখানে লক্ষণীয় এই যে, ভক্ত কাকে ভক্তি করেন, কার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য সংগ্রহ করে নিবেদন করছেন, সেই নৈবেদ্যের যৎসামান্যতা দেবতার গ্রহণে বাধ্য হয় না। অর্থাৎ এক ধরনের নিরুদ্দিষ্ট উপাসনা, তা সামান্য ফল ফুল পাতা জল দিয়েও যদি দেবতাকে অর্পণ করা হয়, কৃষ্ণ তাই সানন্দে স্বচ্ছন্দ মনে গ্রহণ করেন। এতে পূজাপদ্ধতির কোনও নির্দেশ নেই, নৈবেদ্যের আড়ম্বরের কোনও নির্দেশ নেই, সর্বপ্রকার ভক্তিপূর্ণ অর্ঘ্যই কৃষ্ণ সহজে গ্রহণ করেন। আবার স্মরণ করতে হয়, যখন উত্তর ভারতে নানাবিধ দেবতা নানা অর্ঘ্যে নানা পদ্ধতিতে নানাবিধ নৈবেদ্য— তা যত তুচ্ছই হোক না কেন— দেবতাকে সমর্পণ করা হচ্ছে, তখন এর প্রকাণ্ড সমাহার সাধারণ মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠছে। দেবতাই বা কোনটি স্বীকার্য, তাঁর আরাধনায় প্রকৃষ্ট নৈবেদ্য ঠিক কী, পূজার পদ্ধতি যা যথেষ্ট দীর্ঘায়িত বা সংক্ষিপ্ত, জটিল বা সাধারণ সহজ হোক না কেন, দেবতা তা ভক্তের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। এই বিচিত্র জটিল পূজা উপাসনা সাধারণ মানুষকে বিচলিত করছিল; তাই কৃষ্ণ একেবারে সংশয়ের মূলোচ্ছেদ করে সাধাণততম নৈবেদ্য গ্রাহ্য করবেন— ভক্তিভরে ভক্ত যদি তা নিবেদন করে— এমন আশ্বাস দিলেন। এতে সমাজের পূজাপদ্ধতিগত এবং নৈবেদ্যের উপকরণ নিয়ে বহুবিধ সংশয় অপসারিত হল। স্পষ্টই বোঝা যায়, সর্বজনগ্রাহ্য এক উপাসনা তার দীনতম নৈবেদ্য ও ক্ষীণতম আয়োজনকে কৃষ্ণের কাছে গ্রহণীয় করে তোলার জন্যে এই সব অতি সাধারণ উপাদান বস্তু ও পূজাপ্রণালীকে গ্রহণযোগ্য করলে তদানীন্তন উত্তর ভারতের ভক্তদের একটা প্রকাণ্ড জটিল সমস্যার সমাধান হল। কারণ বহুবিধ বিচিত্র প্রণালী ও উপাদানের মধ্যে নির্বাচন করবার দায়িত্ব থেকে ভক্ত নিষ্কৃতি পেল। বিচিত্র সব পূজাপদ্ধতিও কৃষ্ণ সমর্থিত বলে সম্পূর্ণ বৈধতা পেল।

অর্থাৎ পূজ্য দেবতাকেও যেমন বিশেষিত করা হল না, তেমনি পূজাপদ্ধতির বা নৈবেদ্যও নির্দেশ করা হল না। জপ-হোমের উপলক্ষ্যও যেমন সরাসরি বলা হল না তেমনই একেবারে নিশ্চিত স্বরে বলা হল যে, সবই অর্পণ করতে হবে কৃষ্ণকে এবং কৃষ্ণ তা গ্রহণ করবেন। অবশ্য না করলে, বহু দেবতা, বহুবিধ নৈবেদ্য ও পূজাপ্রণালী স্বীকার করতে হয়। কৃষ্ণের অভিপ্রায়, এ সবের পরিবর্তে একটি দেবতা, বহু নৈবেদ্য ও বহু পূজা প্রণালীকে এক করে তোলা। গীতায় তারই প্রয়াস। এ ছাড়াও জাপানি পণ্ডিত হাজিমে নাকামুরা বলেন, ‘সাংখ্যের সঙ্গে বেদান্ত-র একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বহু প্রাচীন কাল থেকেই।… সাংখ্য প্রস্থানের পণ্ডিতরা বলেন যে, যদিও অনেক কিছুই উপনিষদের নীতি হিসেবে শেখানো হত, সেগুলি পুরুষ এবং প্রস্থান সম্পর্কিত অথবা সাংখ্য যে বহুবিধ, প্রকারান্তরে তার উল্লেখ আছে, তারই প্রকাশ হচ্ছে তারই সমাহার।[৯] বৈশেষিক সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, এই দর্শনপ্রস্থানটিকে গ্রহণ করেছিল সমাজের সেই লোকেরা যাদের সংস্কৃতি এবং শিক্ষা নেই।[১০]

[৯. হাজিমে নাকামরা অভিনন্দন গ্রন্থ ‘দ্য হিস্টরিক্যাল অ্যাটিটুড অব দ ব্রহ্মসুত্ৰস’

১০. ‘The Vaisesika is embraced by people who are not of culture and learning’. তদেব, পৃ. ৩৭৭]

আবার, ‘ভগবদ্‌গীতা উপনিষদের চিন্তাভাবনা গ্রহণ করে সেগুলিকে কৃষ্ণ আরাধনার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছেন। এতে বিমূর্ত ব্রহ্মার সঙ্গে দেবতা ব্রহ্মার একত্ব এসে মিলেছে কৃষ্ণচেতনায়।’[১১]

[১১. ‘Bhagavadgita takes upainsadic ideas and blends them with the krisna cult, the imporsonal Brahman with the personal Brahman, making Brahman Krishna consciousness.’ AB Van Buitenan, ‘A Contribution to the Critical Edition of the Bhagavadagita.’ Journal of Studies on Ancient India, LXXXV, 1965]

গীতা রচনা হয় কুষাণ যুগে— তখন ভারতবর্ষে নানা ধর্ম, নানা জাতি, নানা নবাগত, বিদেশাগত দেবতার ও আরাধনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। স্বভাবতই সমাজে একটা আলোড়ন চলছে— কোন দেবতাকে কী পদ্ধতিতে, কী নৈবেদ্যসামগ্রী দিয়ে উপাসনা করলে তা যথাযথ দেবতার কাছে পৌঁছবে। এবং তা দেবতার কাছে গ্রাহ্য হবে। সব দেবতা, সব আরাধনা, নৈবেদ্য, জপ, হোমকেই কৃষ্ণ নিজের পায়ে টেনে নিলেন: যেন বলছেন, আমিই একমা দেবতা। এর বিকল্প হল, বহু পস্পরবিরুদ্ধ ধর্মপ্রস্থান। তখন সমাজে যে যার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ধর্মচারণ করত। হয়তো স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরের মধ্যে বিরোধ বা সংঘর্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হত। কৃষ্ণ সেটা চাননি তাই একই শ্রেণিতে সর্বপ্রকার পূজাপদ্ধতিকে সম ভাবে স্বীকার করলেন। এতে ঈর্ষাবিদ্বেষ আত্মপ্রকাশ করতে পারত এবং তখনকার উত্তর ভারতে যে বহু-রূপাশ্রিত ধর্মবাণী চলিত ছিল তাদের অনেকগুলি এই ধরনের সংঘর্ষে নিঃশেষ হয়ে যেত। কিন্তু কৃষ্ণের এই নীতিনির্দেশে তা হতে পারল না।

অবশ্য বহু শতাব্দী ধরে অন্য এক প্রক্রিয়া কার্যকর ছিল, কতকটা প্রকাশ্যে কতকটা বা গৌণ ভাবে। এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বিবাহ গোষ্ঠী সংমিশ্রণ দ্বারা নানা ছোট ছোট জাতি, উপজাতি গড়ে উঠল। কোনও কোনও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ধীরে ধীরে নিজের সত্তা লোপ পেল কিংবা অন্য এক গোষ্ঠীতে পরিণত হল; যেটা হল না তা হল, যুদ্ধবিগ্রহ। কিংবা ব্যাপক হিংসাশ্রয়ী ক্রিয়াকলাপের দ্বারা সমাজে মহতী বিনষ্টিও এল না। পূজ্য দেবতা হিসাবে কৃষ্ণ সকল গোষ্ঠীর সকল আরাধ্য দেবতাকে স্বীকার করলেন, সব পূজার নৈবেদ্যকে সমান মর্যাদা দিলেন। পূজাপদ্ধতি হিসেবেও সকল পদ্ধতিরই স্বীকৃত দিলেন। বিরোধ বা বিদ্বেষের অবকাশ চলে গেল। ধনীদরিদ্রের নৈবেদ্য ন্যূনতম আয়োজনে এক হয়ে গেল, তুচ্ছতম সামগ্ৰী ফল, ফুল, পাতা, জল এই সব দিয়ে ভক্তিভরে যে যাকেই নিবেদন করুক না কেন, সবই পৌঁছবে কৃষ্ণের কাছে। অনুচ্চারিত যে মহাবাণী সারা দেশের আকাশ বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগল তা হল, কৃষ্ণই একমাত্র দেবতা— শ্রেষ্ঠ দেবতা। দেবতাদের সারাৎসার, পরাৎপর। দেশ অবচেতনে খুঁজছিল এমনই একজন আরাধ্য দেবতা, কৃষ্ণ তাই জুগিয়ে দিলেন নিজের এ পরিচয়ে।

আগেও শুনেছি, ‘অন্য দেবতার ভক্ত যারা শ্রদ্ধাভরে উপাসনা করে, হে কৌন্তেয়, তারা সকলেই আমারই আরাধনা করে। তারা বিধিপূর্বক পূজা করে না বটে কিন্তু সে পূজা আমারই কাছে পৌঁছয়।’ একটু পরে বলা হচ্ছে, ‘সব যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু আমিই। তারা তত্ত্ব দিয়ে আমাকে জানে না বলে বিধিচ্যুত হয় বলে মনে করে।’ আরও পরে সুবিখ্যাত একটি শ্লোকে আছে, ‘আমাকে আশ্রয় করে যে সব পাপযোনি— নারী, বৈশ্য, শূদ্র— তারাও পরম গতি প্রাপ্ত হয়।’ (৯:৩২) এখানে ব্রাহ্মণ ও পুরুষ ছাড়া আর সকলকেই পাপযোনি বলা হল। নারী, বৈশ্য, শূদ্র এরাই পাপযোনি, এরাও আমাকে আশ্রয় করলে পরম গতি প্রাপ্ত হয়। এই পরম গতি স্বর্গ অথবা অন্য কোনও দেবলোকও হতে পারে। আবার লক্ষণীয়, মোক্ষও হতে পারে। তখনকার সমাজে পাপযোনি বলে গণিত হত, বৈশ্য, শূদ্র, নারী এবং/অথবা অন্যান্য নিম্নবর্গের মানুষ। বলা বাহুল্য, বৌদ্ধধর্মে এদের নিম্নবর্ণ বলে মানা হয়নি। অন্যান্য কিছু কিছু ধর্মেও নয়। তবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মেই এদের কোনও সদগতি ছিল না। অন্য কিছু কিছু ধর্মে ছিল, তাই কৃষ্ণ এদের জন্যে যেন পথ খুলে দিচ্ছেন: কৃষ্ণকে আশ্রয় করলে, হীনজন্মা মানুষেরও পরম গতি পাবার আশা আছে। তখনকার সমাজে এ একটা বড় পথ। কিন্তু যে সমাজে নারী পাপযোনি (কৃষ্ণের মা যশোদাও!), সেখানে শূদ্র তো বহুকাল ধরেই হীন। কিন্তু বৈশ্য? শাস্ত্রমতে বৈশ্য দ্বিজ; তার উপনয়ন হয় এবং তার যজ্ঞ করার অধিকার আছে। তা হলে সমাজ এমন একটা জায়গায় নেমেছে যেখানে ব্রাহ্মণ্য প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য দ্বিজ বৈশ্যকেও পাপযোনি বলে অভিহিত করা হল। এখানে অপাপযোনি শুদ্ধ রইল শুধু ব্রাহ্মণ সদ্বংশের পুরুষ। এবং বলা বাহুল্য, উক্ত পাপযোনিই সমাজে বিরাট অংশ। এখন এদের পাপযোনি বললে তাদের একটা গতি করার দায় থাকে। তাই কৃষ্ণ বলছেন, আমাকে অবলম্বন করলে আমি এদেরও পরম গতি করে দিই। এটা তাদের পক্ষে যতটা আশাপ্ৰদ, কৃষ্ণের পক্ষেও ততটাই। অর্থাৎ যেখানে সমাজে দেশিবিদেশি নানা দেবতার ভিড়, সেখানে কৃষ্ণ এই উক্তির দ্বারা একান্ত, একমাত্র মুক্তিদাতা দেবতা হলেন। গীতা রচনার এটি একটি মুখ্য উদ্দেশ্য।

নারী সম্বন্ধে এই মনোভাব পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সর্বত্র চিরকালই প্রচলিত ছিল। নারী বেদের যুগ থেকেই ঊনমানব; পুরুষ শ্রেয়স্তর, নারী হীন; পুরষের পদতলেই তার স্থান; এ কথার অন্যথা প্রায় কোথাওই নেই। এবং বেদের সময় থেকেই নারীকে অশুচি গণ্য করা হয়েছে। এ বোধ দীর্ঘকাল সমাজে বিরাজ করেছে। অর্থাৎ সেদিক থেকে কৃষ্ণ কোনও নতুন কথা বলছেন না। নতুন শুধু এই বৈশ্য-শূদ্রের মতো স্বভাব-অশুচি নারীকেও তিনি কৃপা করে তরিয়ে দেবেন। কৃষ্ণের মাও ছিলেন নারী; তাঁকেও এই তরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিতে কতকটা ঔদ্ধত্য মিশে থাকে।

অনেক আগে প্রথম অধ্যায়েই বলা হয়েছে এবং এ কথাগুলি অর্জুন বলেছেন: কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্মগুলি নষ্ট হয়ে যায়; ধর্ম নষ্ট হলে সমগ্র কুলটিকেই অধর্ম গ্রাস করে। আর অধর্ম যখন সমাজকে অভিভূত করে, হে কৃষ্ণ, তখন কুলস্ত্রীরা দূষিত হয়। এবং নারীরা দূষিত হলে বর্ণসঙ্কর (দু’টি বর্ণের মধ্যে অন্তর্বিবাহ) হয়, এবং বর্ণসঙ্কর কুল এবং কুলনাশকারীদেরও নরকে নিয়ে যায়। নারীরা, কুলস্ত্রীরা, দূষিত হলে বর্ণসঙ্কর হয়, এ কথা নানা গ্রন্থে নানা ভাবে বারবার উল্লিখিত আছে। গীতার যুগে রাজার শ্রেষ্ঠ আসন ও পূজাপ্রাপ্তির অধিকার, নারীর সর্বতো ভাবে অবনমন এবং বৈশ্য শূদ্রের মানবজাতির একেবারে নীচে অবস্থান। এগুলি সম্বন্ধে গ্রন্থের শেষে আলোচনা থাকবে। আপাতত সম্পূর্ণ অকারণে অযৌক্তিক ভাবে নারীকে একক ভাবে বর্ণসঙ্করের জন্য দায়ী করার মধ্যে সমাজে পরিব্যাপ্ত নারীবিদ্বেষ খুব স্পষ্ট ভাবেই লক্ষ করা যায়। এদের পিতৃপুরুষকে পিণ্ডে জল দেবার কেউ থাকে না। এ সব দোষে কুলধ্বংসকারী এবং বর্ণসঙ্করকারীদের ধ্বংস হয় চিরকালের কুলধর্মের ও জাতিধর্মের বিনাশ ঘটে। এমন ধর্মহীন মানুষদের চিরকালীন নরকে বাস করতে হয় বলে চিরকাল শুনে এসেছি। (১:৩৭–৪৩)

এর মধ্যে সামান্য একটু কথা থাকে। নারী ঊনমানব বলে সেই বেদের আমল থেকেই প্রতিপন্ন হয়ে আসছে, কিন্তু একটা প্রধান ব্যাপার চেপে যাওয়া হচ্ছে: নারীকে দূষিত হতে গেলে একটি পুরুষেরও প্রয়োজন। সে সম্বন্ধে গীতা একেবারেই নীরব, যেন একটি একক নারী নিজে নিজেই দূষিত হতে পারে। পুরুষের যেন কোনও ভূমিকাই থাকে না। এবং এই দূষণ থেকে কুলক্ষয় হয়। পিতৃপুরুষের পিণ্ড ও তর্পণের নাশ হয়। অর্থাৎ প্রয়াত কুলংকর পুরুষদের ক্ষুধাতৃষ্ণার প্রতিকার হয় না। তাঁরা ক্ষুধার্ত ও তৃষিতই থেকে যান। বর্তমানের প্রজন্ম কুলক্ষয় এবং নষ্টধর্মা হয়ে থাকে। এই এত বড় সর্বনাশের মূলে রইল নারী, পুরুষের সাহায্য বিনাই যে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানুষের ধর্মজীবন কলুষিত করতে পারে। গীতাকার এ সব কথা অর্জুনের মুখে বসিয়েছেন, যিনি বলতে চান যে, যুদ্ধ করলে যোদ্ধা(পুরুষ)দের মৃত্যু হলে বিধবা নারীরা অন্য পুরুষে আসক্ত হয়ে দূষিত হন এবং ধাপে ধাপে তা থেকে নরক, পিতৃকুলের পিগুলোপ ও অবশেষে বংশটি ধ্বংস হবে। যুদ্ধ না করার যুক্তি হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা শেষ হল নারীর অবনমনে কুলক্ষয় ও নরক পর্যন্ত অধঃপতনে।

ভক্ত ও কৃষ্ণের সম্পর্ক কী এ নিয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে যে, কৃষ্ণের কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। ‘সর্বভূতে আমি সমান, কেউ আমার দ্বেষের পাত্র বা প্রিয় পাত্র নয়। ভক্তিভরে যারা আমাকে ভজনা করে, তারা আমার মধ্যে এবং আমিও তাদের মধ্যে বিরাজ করি।’ (৯:২৯) পরের শ্লোকেই বলা হচ্ছে, ‘আমার ভক্তের কোনও বিনাশ নেই।’ (৯:৩১) কৃষ্ণের দ্বেষের পাত্র কেউ নেই, তাঁর ভক্তের বিনাশ নেই। প্রকারান্তরে বলা হল, ভক্ত তাঁর প্রিয়ই, এবং এ কথা নানা ভাবে আগে পরে বলা হয়েছে। কাজেই অর্জুনকে তিনি উপদেশ দিচ্ছেন, ‘আমাতে মনঃসংযোগ কর, আমার ভক্ত হও, যজনা কোরো আমাকেই, আমাকেই নমস্কার করো এমন ভাবে তোমার পূর্ণসত্তাকে আমাতে যুক্ত করলে [পরিণামে] আমাতেই এসে পৌঁছবে।’ (৯:৩৪) কৃষ্ণ মানুষের অন্তিম লক্ষ্য, গন্তব্যস্থল— কৃষ্ণলোকই সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ। অতএব সেখানে পৌঁছবার পথও কৃষ্ণ— কৃষ্ণভক্তি, কৃষ্ণ আরাধনা, কৃষ্ণতে সর্বতো ভাবে আত্মসমর্পণ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *