গীতা কেন – ১০

দশ

সার্বিক ভাবে না হলেও বিস্তৃত ভাবে বিশ্বরূপদর্শন অংশটিকে কখনও কখনও উত্তম কাব্যাংশ বলা হয়, তাই এর সাহিত্যিক দিকটা একটু বিচার করা যেতে পারে। অর্জুন দেখলেন প্রাণিকুল, দেবতা, উপদেবতা সকলেই স্বেচ্ছায় কৃষ্ণের মুখগহ্বরে প্রবেশ করছে— এর মধ্যে অলৌকিকতা আছে এবং এ অংশের উদ্দেশ্য হল, কৃষ্ণের বাইরে কোনও শক্তিই নেই। কৃষ্ণের আকৃতি-প্রকৃতি অতিলৌকিক পরিসর ও আয়তনের বর্ণনা করা হয়েছে। এ বর্ণনায় উপমা, রূপক, অনুপ্রাসই প্রধান, প্রকৃত কবিত্ব নেই বললেই চলে। অলংকারগুলির মধ্যে অনুপ্রাস মধ্যম স্থানেরও নীচে। এর চেয়ে নিকৃষ্ট হল যমক যা গীতায় নেই বললেই চলে। আছে কিছু কিছু উপমা; রূপকও প্রায় নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বেশি আছে অতিশয়োক্তি যার সাহিত্যবিচারে উঁচু দরের তো নয়ই, বরং বর্ণনার সুরটাকে নীচে নামিয়ে দেয়। অর্জুনকে নানা রকম নিকৃষ্ট অলংকারের বর্ণচ্ছটায় চিন্তারিক্ত ও বিহ্বল করাই এ সবের উদ্দেশ্য। সব কিছুকে অতিশয়োক্তির দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। আকাশে যদি সহস্র সূর্য যুগপৎ উদিত হয়, তা হলে যে প্রচণ্ড জ্যোতির ছটা দেখা যেত, কৃষ্ণকে ঘিরে সেই জ্যোতি। তাঁর হাত পা চোখ মুখ সবই অতিশয়িত বৃহৎ, স্বাভাবিক আয়তন বা পরিসরকে ছাড়িয়ে বহুধা বিস্তৃত। যে কোনও মানুষেরই দেখলে চমৎকৃতি জাগবে, এবং সেটাই উদ্দিষ্ট— দর্শককে তাক লাগিয়ে দেওয়া। এবং সেই উদ্দেশ্য সর্বতো ভাবে সার্থক হয়েছে; অর্জুনের স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি অন্তর্হিত হয়েছে, সম্পূর্ণ নতুন এক মোহে আবিষ্ট হয়ে তিনি যা দেখছেন, তাতেই অভিভূত হচ্ছেন।

কবিত্ব কখনও শুধু অযুক্তির উপর নির্ভর করে না, তার চমৎকৃতি আসে উপলব্ধির গভীরতা থেকে। এখানে পাঠক বা শ্রোতা দেখলেন, কৃষ্ণের সব কিছু সাধারণ মানুষের তুলনায় বহু বহু গুণে বৃহৎ কিন্তু কোনও অর্থেই মহৎ নয়। মানুষকে তা বিভ্রান্ত করে। বিস্মিত করে কিন্তু মুগ্ধ করে না। এর মুগ্ধ করাই এবং জীবনকে অন্য এক মাত্রার সংযোগে দেখানোই তো কাব্যের মুখ্য কৃত্য। নিবিড় কাব্যের থেকে গীতায় যথেষ্ট দৈন্য রয়ে গেছে। গীতার সপক্ষে শুধু বলা যায় যে, সে কাব্য হতে চায়নি, ধর্মগ্রন্থ হতে চেয়েছে এবং সমাজে সংহতি আনতে চেয়েছে। এ সংহতির মুখ্য প্রবক্তা কৃষ্ণ, এ সংহতির আয়োজনই গীতার বক্তব্য।

সাধারণ মানুষের তুলনায় কৃষ্ণ আয়তনে অনেক বড়। কিন্তু রাক্ষসও তো আকারে প্রকারে বড়, তবু তাতে কোনও মহত্ত্ব নেই। অনেক বাহু, অনেক উদর, অনেক মুখ এ কল্পনাই উদ্ভট, হাস্যকর। বিমোহিত পাঠক বা শ্রোতা অত্যুক্তির আড়ম্বরে স্তম্ভিত হলেও, সত্যকার আবেগ, যাতে সৌন্দর্যবোধ তৃপ্ত হয়, তা নেই বলেই এতে চমক আছে প্রচুর, কিন্তু সৌন্দর্যবোধ তৃপ্ত হয় না। বরং, এক ধরনের বীভৎসা জাগানো এ বর্ণনা এক ধরনের বিস্ময়াবিষ্ট মোহ সৃষ্টি করে। সুস্থ মানুষের এ মোহ স্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণ পরে স্বচ্ছদৃষ্টিতে সব কিছু যথাযথ দেখতে পায়। এর পরে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মানসিকতা কেটে যায়। অর্জুনের কাছে ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম— বর্ণধর্ম ও মানবধর্মের বিরোধে যে গীতার শুরু এবং যার নিষ্পত্তি হচ্ছিল না কৃষ্ণের কোনও যুক্তিতেই, বিশ্বরূপদর্শনে আবিষ্টতায় তা অন্তর্হিত হলেই তিনি মানবধর্মের পরিবর্তে বর্ণধর্মকে আশ্রয় করলেন এবং সেই অবস্থানেই কৃষ্ণের ইষ্টসিদ্ধি হল।

মনে রাখতে হবে, প্রথমেই কৃষ্ণ বলেছেন, স্বাভাবিক ইন্দ্রিয় দিয়ে তিনি কৃষ্ণের প্রকৃত রূপটি দেখতে পাবেন না বলে, তাঁকে বিশেষ ইন্দ্রিয় দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে অর্জুন কৃষ্ণকে বিশেষ রূপে দেখতে পাচ্ছেন। বিশেষত কৃষ্ণ দেবতার মতো নন, মানুষের মতোও নন। গীতাকার বলতে চেয়েছেন, এই বিশেষ রূপটির যা প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল, প্রথমত সমগ্র সৃষ্টি কৃষ্ণের মুখগহ্বরে প্রবেশ করছে যেন কতকটা বাধ্য হয়েই। যেমন করে পতঙ্গ বহ্নিমুখে প্রবেশ করে। অর্থাৎ সমস্ত দেবতা, উপদেবতা ও অন্যান্য প্রাণিকুল কৃষ্ণের মধ্যেই বিরাজ করে। এতে কৃষ্ণের সার্বভৌমত্ব প্রকাশিত হল। অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ যাদের ভিন্ন রূপে ও অবস্থানে দেখে দৃষ্টিবরপ্রাপ্ত অর্জুন দেখলেন, বিশ্বসৃষ্টির সকল অংশই কৃষ্ণের অভ্যন্তরে বিরাজ করে। এর মধ্যে হিংস্র, বিষাক্ত জীবও যেমন আছে, তেমনই শান্তিপূর্ণ, বরদ, সুখদ দেবতা ও উপদেবতাও আছেন। অর্থাৎ ভালমন্দ মিলিয়ে সমগ্র বিশ্বচরাচরই তাঁর মধ্যে সুসংহত ভাবে বিরাজ করে। মানুষ তা দেখলে বা জানলে বিমূঢ় বিস্ময়ে অভিভূত বোধ করে। দ্বিতীয় যে কারণে সে মন্ত্রমুগ্ধ বোধ করে তা হল, সব কিছু বৃহৎ, স্বাভাবিক আকৃতির চেয়ে অতিশয়িত, কাজেই তার মাহাত্ম্যও বেশি, অতএব এ বিস্ময়ের পিছনে অলৌকিকতা আছে, নতুবা এত বিস্ময়কর ব্যাপার সম্ভব হয় কী করে?

এ সব সত্ত্বেও বিশ্বরূপদর্শনের মধ্যে যথার্থ কবিত্ব খুবই কম। অপ্রাকৃত বস্তুর বহুগুণিত বর্ণনা, অত্যুক্তির মধ্যে বিস্ময় থাকতে পারে কিন্তু তা অনুভূতি বা কল্পনার জগৎকে একটুও আন্দোলিত করে না। সাধারণ মানুষ অতিরঞ্জিত বর্ণনায় এত অভিভূত হয় যে, সেটাকেই কবিত্ব বলে মনে করে। তা ছাড়া কৃষ্ণ সম্বন্ধে একটা পূর্বনির্মিত সম্ভ্রমপূর্ণ পূজার ভাব তো নির্মিত হয়েই ছিল, তাই অলৌকিক বর্ণনায় তা আরও গাঢ়তর হল। কিন্তু এতে যথার্থ কবিত্বের সংশ্লেষ নেই, ফলে কতকটা বালখিল্যমোহন একটি তথাকথিত কাব্যাংশ সৃষ্ট হয়। অপ্রাকৃত ও অত্যুক্তি বাদ দিলে এর মধ্যে কবিত্ব বিশেষ কিছু থাকে না। যে উপমা, রূপক অত্যুক্তি গীতার আলংকারিক বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে মাঝে মাঝে কবিত্বের রূপও যেন দেখা দেয়। যেমন বিশ্বরূপদর্শনে আছে কৃষ্ণের ঔজ্জ্বল্য, যেন আকাশে যুগপৎ সহস্র সূর্যের আবির্ভাবে যে প্রখর জ্যোতির প্রসার। এই অত্যুক্তির মধ্যে একটা গৌরবের চিত্র পাওয়া যায়। একটি সূর্যই প্রচণ্ড উজ্জ্বল; সহস্র সূর্য— যুগপৎ উদিত— এটা যে কোনও মানুষের কল্পনাশক্তিকে প্রতিহত করে। ফলে, কৃষ্ণ হয়ে ওঠেন আকাশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষ্কের সহস্রগুণ উজ্জ্বল। কৃষ্ণের শ্রেষ্ঠত্ব নানা ভাবেই প্রতিষ্ঠা করে গীতা— এটিও তেমনই একটি কৌশল এবং এর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু এমন দু’-একটি উদাহরণে প্রতিপন্ন হয় না যে, গীতার কাব্যত্ব অলংকারকে ছাড়িয়ে উঠে যথার্থ কবিতায় উন্নীত হতে পেরেছে।

তবে বিশ্বরূপদর্শন অংশটি এত প্রাধান্য পেল কেন? কারণ, সমগ্র গীতার ভরকেন্দ্ৰ এইখানেই: গীতার শুরু হয়েছিল যুদ্ধে অর্জুনের আপত্তি, বর্ণধর্মকে লঙ্ঘন করে মানবধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে যুদ্ধে প্রবল, দুর্জয় অনীহা দিয়ে। কৃষ্ণের প্রবর্তিত এই জাদুবিদ্যার প্রদর্শনীর কাছে তা হার মানল। যুক্তি দিয়ে যুক্তি খণ্ডন করা যায় কিন্তু অলৌকিকের সামনে মননশীল মানুষ পরাহত। কারণ, তার অলৌকিকতার কোনও অস্ত্র নেই।

প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে অবলীলায় সঞ্চরণ করা গীতায় কৃষ্ণের সংলাপের একটি বৈশিষ্ট্য, কোসম্বী বলেন, ‘এই পিচ্ছল সুবিধাবাদ সমস্ত গ্রন্থটিরই চরিত্র।’[২৪] দশ সর্গ ধরে যুক্তির একটা বাতাবরণ ছিল, কিন্তু অর্জুন সে সব শুনেছেন মাত্র, সায় দেননি, মেনে নেননি। মানবধর্মের যে একটা সু-উচ্চ মাহাত্ম্য আছে, তাকে নস্যাৎ করা সহজও নয়, কৃষ্ণ তাতে সিদ্ধকাম হনওনি। কিন্তু এইখানে মানবিক মূল্যবোধ অবদমিত হল অলৌকিক জাদুর কাছে। সমগ্র বিশ্বচরাচর কেন কৃষ্ণের মুখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে? কারণ কৃষ্ণের বাইরে কিছুই নেই। অতএব কৃষ্ণ সার্বভৌম সর্বেসর্বা। অর্জুনের কাছে কৃষ্ণ আত্মপরিচয় দিয়েছেন, ‘কাল্যোহম লোকক্ষয়কৃৎ’ তিনি পৃথিবী ধ্বংস করবেন, কারণ, তিনি পৃথিবীর ধ্বংসকর্তা। এমন ব্যক্তির নির্দেশ লঙ্ঘন করা মর্ত-মানুষ অর্জুনের পক্ষে অসাধ্য। কৃষ্ণের লোকাতীত সত্তাকে বোঝাবার জন্য অপরিসীম অতিশয়োক্তি তাঁকে মানুষ, দেবতা ও উপদেবতাদের চেয়ে দুরধিগম্য উচ্চতার তুঙ্গে স্থাপন করে প্রকারান্তরে অলঙ্ঘ্য করে ফেলা হল।

[২৪. ‘The slippery opportunes charactizes the whole book.’ Myth and Reality, p. 13]

কেন? না হলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয় না, কুরুকুল ধ্বংস হয় না। সেটাই গীতার কৃষ্ণের একটা করণীয় ছিল। তখনও সমাজে বেদোক্ত যজ্ঞাদি মধ্যে মধ্যে সমাজে অনুষ্ঠিত হত।

এ ছাড়া তখন বেদান্ত, ন্যায়, বৈশেষিক, যোগ, সাংখ্য ও পূর্বমীমাংসা— এই ছ’টি ব্রাহ্মণ্যদর্শন, বৌদ্ধ, জৈন আজীবিক ও বার্হস্পত্য দর্শনের প্রাদুর্ভাব ছিল সারা উত্তর ভারতে। এই ধর্মনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যেই গীতার উদ্ভব। গীতা যেহেতু মহাভারতের উদ্যোক্তাপর্বে যুদ্ধে উদ্যত দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাঘাতকারী সুদীর্ঘ কথোকথন, সহসা কৃষ্ণ ও অর্জুনের এই সংলাপ মহাকাব্যের মধ্যে প্রবেশ করেছে বলে বোঝা যায়, তাই গীতার উদ্দেশ্য অর্জুনকে যুদ্ধ করতে সম্মত করাবার জন্য কৃষ্ণের প্রয়োজন ‘যুক্তি’ পরম্পরা নয়— অন্য কিছু। কী? দেখা গেছে, কৃষ্ণের সর্ব দেবতার উপরে স্থান নির্ণয় করা। এ ছাড়া কৃষ্ণের আরাধনাকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রতিপন্ন করা। এর জন্য বলা হয়েছে, যারা যে ভাবে আমার পূজা করে, তা-ই আমি গ্রহণ করি। বলা হয়েছে ফুল, ফল, পাতা ও জল দিয়েই কৃষ্ণপূজা হতে পারে। তখনকার প্রচলিত পূজাপদ্ধতি অনেক বেশি সামগ্রী নির্ভর ছিল, দরিদ্রের পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল, তাই একে যথাসম্ভব নিরাভরণ করে দেওয়া হল। আরও বলা হয়েছে, যারা সমাজে অশুচি বলে পরিগণিত অর্থাৎ দেবতার পূজায় যারা অনধিকারী, সেই নারী, বৈশ্য, শূদ্র এদেরও আমি শুচি বলে গ্রহণ করি। আরও শুনি, পৃথিবীতে যারা অন্য কোনও দেবতাকে অন্য উপাচারে অন্য পদ্ধতিতে আরাধনা করে, সে-সবই গ্রহণ করি; তা হলে নৈবেদ্যের সামান্যতা, জাতিনিরপেক্ষ উপাসনার অধিকার— এত ভাবে উপাসনাকে সার্বজনীন, সহজ ও সাধারণ করে তোলা গীতার অন্যতম উদ্দেশ্য। এর আর একটি উদ্দেশ্য হল, ভিন্নপ্রকার ধর্মাচরণে অভ্যস্ত আগন্তুক জনগোষ্ঠীর পক্ষেও উপাসনাকে সহজে অনুষ্ঠান করবার সহজ পন্থাটি বলে দেওয়া। সে সময়ে উত্তর ভারতে ও বহিরাগত বৃহৎ বিচিত্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও ধর্মীয় আচরণে নানা ছোটবড় দেবতার আবির্ভাব ও উপাসনা প্রবর্তিত হচ্ছিল। সেই পরিবেশে একটিমাত্র দেবতাকে সর্বপ্রধান করে তোলার জন্য যা যা আবশ্যক— উপকরণবাহুল্য থেকে মুক্তি, সাধকের নির্দিষ্ট জাতিকুল, এমনকী বিশেষ পৌরাণিক উপাখ্যানের নায়ক হওয়া, এ সবের বহির্ভূত কৃষ্ণের এবং তাঁর পূজার যে প্রাদুর্ভাব ঘটানো গীতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তা প্রায় সম্পূর্ণ ভাবেই সিদ্ধ হয়েছে। গীতার আদি, মধ্য, অন্ত কৃষ্ণ; গীতার মাহাত্ম্যে এ কথা স্পষ্ট বোঝা যায়। হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘গীতার দার্শনিক চিন্তা’ প্রবন্ধে বলেন, ‘মনে হয় গীতার মূল প্রাতিপাদ্য হল অবতার রূপে শ্রীকৃষ্ণের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। মহাভারতে বা ভাগবতে যে শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর সঙ্গে গীতায় শ্রীকৃষ্ণের পার্থক্য এই যে, মানুষ শ্ৰীকৃষ্ণ কিংবা ভগবৎরূপী শ্রীকৃষ্ণ থেকে সর্বতিগ এক দেবতার প্রতিষ্ঠা, যিনি সর্বপ্রকার মানুষের একান্ত আরাধ্য হবার যোগ্য। কারণ, তিনি অধিযজ্ঞ অর্থাৎ ব্রহ্মের মর্ত্য প্রকাশ। এই কাজটি গীতা সুষ্ঠু ভাবে সিদ্ধ করেছে।’

গীতায় যে কৃষ্ণে মহিমার প্রতিষ্ঠা, সেই কৃষ্ণ নানা রূপে নানা অবতারে দেড় হাজার বছর ধরে নানা ভাবে পল্লবিত হয়ে আজ ভারতবর্ষে এবং এ দেশের বাইরেও প্রধান দেবতা এবং প্রধান উপাসনাপদ্ধতি হয়ে বিরাজ করছেন। কৃষ্ণকে মহত্তম ও ব্রহ্মস্বরূপ করে তোলার জন্য বিশ্বরূপদর্শনই সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল। এতে শুধু যে অতিশয়োক্তির ছড়াছড়ি আছে তা নয়, আছে এক ধরনের চমৎকৃতি যা বীভৎসারই সগোত্র— একটি মানুষের মুখের মধ্যে পৃথিবীর তাবৎ দেব-যক্ষ-কিন্নর-গন্ধর্ব ঢুকে যাচ্ছে, এর মধ্যে একটা বীভৎসা তো নিহিত আছেই। কিন্তু সুদীর্ঘ অত্যুক্তির দ্বারা সেই মোহ নির্মিত হয়েছে। ফলে সকল জীব, দেবতা, দানব যাঁর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং এ সকলকে যিনি অনায়াসে আত্মসাৎ করতে পারেন, সে কৃষ্ণ যে মহত্তম বৃহত্তম, সে নিয়ে আর কোনও সংশয় থাকে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *