ক্রন্দসী প্রিয়া – ৮

আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনেক আগের থেকে ছিল। সাহেবদের গাড়িতেই ড্রাইভিং শিখি। সে খবর সাহেব জানতেন। মাঝে মাঝে ড্রাইভার যখন অনুপস্থিত থাকত তখন প্রয়োজন মতো আমি গাড়ি চালাতাম। একদিন ড্রাইভার অসুস্থ থাকায় টেণ্ডারের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে আমি একা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসে নিউমার্কেটের এক নাম্বার গেটে গাড়ি পাক করার সময় সেলিনা, জরিনা, জোবেদা ও আরো দুজন মেয়েকে তাদের গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখলাম। পাশে জায়গা খালি দেখে সেখানে পার্ক করার সময় ইচ্ছে করে তাদের গাড়ির সঙ্গে আস্তে করে ঠেকিয়ে দিলাম। ফলে একটু শব্দ হল এবং তাদের গাড়িটা একটু নড়ে উঠল।

জরিনা ও জোবেদা একসঙ্গে গর্জন করে উঠল, ননসেন্স, গাড়ি পার্ক করতে পারেন না তো ড্রাইভিং করেন কেন? তারপর ড্রাইভিং সিটে আমাকে দেখতে পেয়ে দুজনেই জিব কেটে বলল, মাফ করবেন, আমরা আপনাকে দেখে বলিনি।

বললাম, আমি লাটসাহেব নাকি যে, আপনারা অন্যায়কারীর কাছে মাফ চাচ্ছেন। তাছাড়া লাটসাহেব হোক আর জজসাহেবই হোক, অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। মুখে আরও কিছু বর্ষণ করে যত খুশি শাস্তি দিন, সহ্য করব; কিন্তু আপনারা সকলে মিলে যদি হাত দিয়ে দেন, ত লে বাঁচব কিনা সন্দেহ।

জরিনা ও জোবেদা হাসতে হাসতে দুজনে গাড়ির ভিতর হাত বাড়িয়েছে আমাকে ধরে নামাবার জন্য।

আমি বললাম, রাস্তার লোকজন কিছু হয়েছে মনে করে ছুটে আসবে। তখন আবার কেলেংকারী হয়ে যাবে। তারচেয়ে আপনারা সরুন, আমি নামছি।

তারা সরে যেতে গাড়ি থেকে নেমে দুহাত জোড় করে বললাম, আমার কৃত অন্যায়ের জন্য সকলের কাছে মাফ চাইছি। আশা করি, আপনারা নিজগুণে এই অধমকে মাফ করে দেবেন।

আমার কাণ্ড দেখে তারা সবাই হাসতে লাগল।

হঠাৎ জোবেদা বলল, আপনি অধম হলে উত্তম কে?

আমি সেলিনার দিকে চেয়ে বললাম, যিনি ভালভাবে গাড়ি পার্ক করতে পারেন। তারপর বললাম, কাদেরকে ঘায়েল করার জন্য শিকারীদের আগমন?

অন্য একটা মেয়ে বলল, আজকাল মনের মত শিকার পাওয়া যায় না।

বললাম, সে জন্য শিকারীকে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। শিকার ঠিকই আছে, নেই শুধু দক্ষ শিকারী। যারা অল্প দক্ষতা নিয়ে শিকার করে, পরবর্তী জীবনে তারা অশেষ দুঃখ ভোগ করে।

ঐ মেয়েটি আবার বলল, সেলিনা কিন্তু দক্ষ শিকারী।

সেটার প্রমাণ আপনারা এখনও পাননি। তাছাড়া কোনো কোনো সময় দক্ষ শিকারীর টীপও ফসকে যায়। যেমন রবীনহুড। তিনি সে যুগে অদ্বিতীয় তীরন্দাজ ছিলেন; কিন্তু কোনো এক প্রতিযোগিতায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। তারপর বললাম, চলুন কিছু জলযোগ করা যাক।

সেলিনা এতক্ষণ চুপচাপ সবকিছু লক্ষ্য করছিল। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কোথায় গিয়েছিলে?

জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটিতে।

হাঁটতে হাঁটতে সেলিনা বলল, তুমি ড্রাইভিং জান, আমাকে বলনি কেন?

দরকার হয়নি। হলে নিশ্চয় জানাতাম।

আমরা সকলে নভেল ড্রিংকে গিয়ে বসলাম। সেলিনা আমার সামনের চেয়ারে বসল। আমি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললাম, যে যার পছন্দমত অর্ডার দিন।

প্রথমে সেলিনা দুটো ফান্টার অর্ডার দিল। ওরাও সবাই তা দিতে বলল।

আমি সেলিনাকে বললাম, ওরা হয়তো অন্য কিছু খেত, তুমি ফান্টার অর্ডার দিতে অন্য কিছু খেতে লজ্জা বোধ করছে।

আমার কথা জরিনা শুনতে পেয়ে বলল, আমরা এখান থেকে খেয়ে বেরুবার পর আপনার সঙ্গে দেখা।

জোবেদা জিজ্ঞেস করল, আপনি গাড়ি ধীরে না জোরে চালাতে ভালবাসেন?

সব সময় আমি স্মার্টনেস পছন্দ করি। স্লোর মধ্যে যেন জীবন খুঁজে পাই না।

জলযোগ শেষ করে বিল মিটিয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দোকানে গেলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *