ক্রন্দসী প্রিয়া – ১১

১১

বিয়ের প্রায় পাঁচ ছয় মাস পর থেকে সেলিনা মাঝে মাঝে শহরের বড় বড় হোটেলে রুম ভাড়া করে ফোনে আমাকে হোটেলের নাম ও রুম নাম্বার দিয়ে যেতে বলত। আমি যদি বলতাম, কি দরকার ছিল এত টাকা খরচ করার, বাসায় তো কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। সেলিনা উত্তর দিত আমার প্রিয়তম খামখেয়ালি, তাই আমিও খামখেয়ালিনি হয়েছি। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর এমন দিত যে, আমাকে হার মানতে হত। কিন্তু হেরে গিয়েও খুব আনন্দ পেতাম।

হঠাৎ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপামনি কি আমাদের ব্যাপারটা কিছুই জানেন না?

আমি বললাম, না, তবে বিয়ের আগে তাকে একটা গল্প বলে তার মতামত জানতে চেয়েছিলাম। গল্পটা বলিছি শোন।

একটা পত্রিকায় একজন লেখক একটা গল্প লিখেছিলেন। গল্পের শেষ না করে পাঠকদের মাঝে প্রশ্ন করে বলেছিলেন, যে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারলে তাকে লেখক পাঁচশত টাকা পুরস্কার দেবেন। তোমার আপামনি বলল, আগে গল্পটা শোনা যাক, তারপর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে। আমি বলতে শুরু করলাম

এক ধনীর দুলালী দোকানের একজন গরীব কর্মাচারীর প্রেমে পড়ে যায়। একথা যখন মেয়েটা ছেলেটাকে জানায়, তখন ছেলেটা তাকে কোনো পাত্তাই দিল না। মেয়েটা কিন্তু নাছোড় বান্দা। পরে ছেলেটাও মেয়েটার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ছেলেটার দিক থেকে দুটো বড় বাধা ছিল! প্রথমতঃ সে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। সে গরিব না হলেও বড়লোক নয় এবং সে তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে নিজের পরিচয় দিয়ে তার প্রেমের পরীক্ষা নিল। আর মনে করল, মেয়েটা নিশ্চয় তার সত্য পরিচয় পেয়ে আপনা থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্ত মেয়েটা তার পরিচয় শুনে বলল, তুমি যেই হও না কেন, আমি তোমাকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর, তবে আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।

লেখক এবার গল্প শেষ করে প্রশ্ন করেছেন, আপনারই বলুন, ছেলেটার কি করা উচিত?

গল্পটা শুনে তোমার আপামনি বলল, দূর, ঐ সব আবার সত্য হয়। লেখকরা সব মাতাল। মদ খেয়ে মাতলামি করেছে।

আমি বললাম, তা না হয় লেখক মাতলামি করেছে, কিন্তু সত্যি সত্যিই কেউ যদি এই রকম পজিশনে পড়ে? তাহলে তার কি করা উচিত তুমি বল।

তোমার আপামনি বলল, ঐ ধরণের মেয়েরা কোনোদিন ভালো হয় না। তাছাড়া কোথাকার কে মেয়ে, সে আত্মহত্যা করুক বা আর যাই করুক, ছেলেটার তাকে বিয়ে করা উচিত নয়।

আমি বললাম, তোমার উত্তরটা আমি পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দেব। এখন বুঝতে পারছ, একজন মেয়ে হয়েও স্বামীর ভাগ দিতে হবে বলে তোমার আপামনি ঐ মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে মেরে ফেলতে চাইল। তারপর সেলিনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার আপামনি তো যাহোক একটা উত্তর দিল, এখন তুমি বলতো, এটার সঠিক উত্তর কি হবে?

 সেলিনা কান্নাজড়িত স্বরে বলল, আমার ঘটনাটাই এর সঠিক উত্তর। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না। আমাকে কোনোদিন আর এধরনের প্রশ্ন কর না? তুমি আমাকে এত বেশি প্রশ্ন কর কেন? ভয় হয় যদি প্রশ্নের উত্তর তোমার মনের মত না হয়, তাহলে হয়তো তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবে।

ঠিক আছে সখি ঠিক আছে, তোমাকে আর কোনোদিন প্রশ্ন করব না। কিন্তু বলতে পার এত পানি তোমার চোখে……. বলে চুপ করে গেলাম।

থামলে কেন? বল না।

বাক্যটা পুরো বললে তোমাকে প্রশ্ন করা হয়ে যাবে যে?

সেলিনা হেসে ফেলে বলল, সত্যি, আমি ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই, এত প্রশ্ন তোমার মনে আসে কোথা থেকে?

আমাকে প্রশ্ন করতে নিষেধ করে এখন থেকে তাহলে তুমি প্রশ্ন করতে শুরু করলে?

এই কথায় দুজনেই হেসে উঠলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *