কার্ল মার্কসের মূল বিশ্বাস

কার্ল মার্কসের মূল বিশ্বাস

কার্ল মার্ক্সের প্রস্তাবিত মূল রাজনৈতিক বিশ্বাসে এখন আমাদের চোখ ফেরাতে দিন। একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে কার্ল মার্কসই আধুনিক সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদের প্রবক্তা। তবে তিনি নিছকই সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব প্রচারে আগ্রহী ছিলেন না। মার্ক্সের বহু আগেই কিন্তু সমাজতন্ত্রের কথা অন্যরা বলেছেন। মার্কস বরং এটা প্রমাণ করতেই আরো বেশি আগ্রহী যে সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক। তাঁর ক্রুসেড যতটা পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে ছিল, ঠিক ততটাই ছিল তাঁর কথিত ‘কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী’ বা ‘ইউটোপিয়ান সোশ্যালিস্ট’দের বিরুদ্ধে। পুঁজিপতি ও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী- উভয়কেই মার্কস অপছন্দ করতেন। মার্কসকে নিয়ে কোনো আলোচনা করতে হলে সবার আগে মাথায় রাখা দরকার যে সমাজতন্ত্রের বৈজ্ঞানিক চারিত্র্যের উপর তিনি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মার্কস তাঁর জীবনে যেসব নীতি প্রচার করেছেন সেসব নীতিকথারই একমাত্র লক্ষ্য ছিল এটা প্রতিষ্ঠা করা যে, তাঁর উদ্ভাবিত সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক এবং ইউটোপিয় বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীদের প্রচারিত সমাজতন্ত্রের মতো কাল্পনিক নয়।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বলতে কার্ল মার্কস বুঝিয়েছেন যে তাঁর উদ্ভাবিত সমাজস্ত্র অপ্রতিরোধ্য এবং অনিবার্য এবং সমাজ সেই লক্ষ্যেই অগ্রসর হচ্ছে এবং অন্য কিছুই আর এই অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। নিজের এই নীতিকে প্রমাণের জন্যই মূলত মার্কস পরিশ্রম করতেন। মার্ক্সের এই যুক্তি নিচের ভাবনাসমূহের উপর নির্ভরশীল ছিল। সেগুলো ছিল :

১. দর্শনের মূল লক্ষ্য পৃথিবীকে বদলানো বা পুনর্গঠন করা এবং পৃথিবী উদ্ভবের কারণকে ব্যখ্যা করা নয়,

২. ইতিহাসের গতিপথকে গঠনকারী শক্তিগুলো মূলত অর্থনৈতিক নানা কারণ।

৩. সমাজ মূলত দু’টো শ্রেণিতে বিভক্ত, মালিক ও শ্রমিক।

৪. এই দুই শ্রেণির ভেতর সবসময়ই একটি শ্রেণিদ্বন্দ্ব চলছে।

৫. শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের হাতে সবসময়ই বঞ্চিত হয় আর মালিকপক্ষ বরবারই উদ্বৃত্ত মূল্য অবৈধভাবে আত্মসাৎ করে যা শ্রমিকদের শ্রমের ফলাফল।

৬. উৎপাদন যন্ত্রসমূহের জাতীয়করণ বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে পারে।

৭. এই বঞ্চনাই শ্রমিকদের আরো আরো বেশি দারিদ্র্য ও নিঃস্বকরণের পথে টেনে নিয়ে যায়।

৮. শ্রমিকদের ভেতর এই বাড়তে থাকা দারিদ্র্যই তাদের ভেতর একটি বিপ্লবী চেতনার জন্ম দেয় এবং শ্রেণিদ্বন্দ্বকে শ্রেণিসংগ্রামে রূপ দেয়।

৯. যেহেতু শ্রমিকরা মালিকদের থেকে সংখ্যায় অনেক বেশি হয় বা সংখ্যায় ছাড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা রাষ্ট্রকে দখল করে নিজেদের আইন প্রতিষ্ঠায় বাধ্য হয় যাকে তারা ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ বলে।

১০. এই কারণগুলো অপ্রতিরোধ্য এবং এজন্যই সমাজতন্ত্র অপরিহার্য।

আশা করি, আমি মার্কসের বক্তব্যের মূল চুম্বক দিকগুলো ধরতে পেরেছি যা মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের মূল ভিত্তি গঠন করেছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *