একদিন অপরাহ্নে – ৪

৪.

একদিন কণা কলেজ থেকে ফেরার সময় পোস্ট অফিসের কাছে এসেছে এমন সময় তাদের বাড়ির দিক থেকে গালিবকে আসতে দেখে সালাম বিনিময় করে বলল, নিশ্চয় চাচার কাছে এসেছিলেন?

গালিব বলল, ঠিক বলেছেন। তারপর বলল, আরও যদি কিছু জানতে চান, তা হলে অফিসের ভেতরে চলুন।

অফিসের ভেতরে এসে বাসার পর কণা বলল, আবার রাতের বেলা ভূতেরা ছাদে ইট ফেলতে শুরু করেছে না কি?

গালিব হেসে ফেলে বলল, মনে হয় আর কখনও ভূতেরা ছাদে ইট ফেলবে। না।

কণাও হেসে ফেলে বলল, ওমা, তাই নাকি? নিশ্চয় এর পিছনে কোনো কারণ আছে।

কেন, আপনি শোনেন নি, একদিন যখন রাতে ভূতেরা ছাদে ইট ফেলছিল তখন আমি আমার পাখি মারা বন্দুক দিয়ে গুলি করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছি? এই নিয়ে কত হৈ চৈ? পরের দিন থানা থেকে পুলিশ এসে আমার ঘর সার্চ করল।

কণা বলল, হ্যাঁ শুনেছি। চাচার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন শুনে মনে হল, আবার হয়তো ভুতেরা ছাদে ইট ফেলতে শুরু করেছে। চাচার কাছে এসেছিলেন কেন?

মক্তব মাদরাসা করার ব্যাপারে আলাপ করতে এসেছিলাম।

একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

গালিব মৃদু হেসে বলল, একটার অনেক বেশি প্রশ্নতো করেই ফেলেছেন। বলুন কি জানতে চান?

আগে আমার সঙ্গে বোকার মতো কথাবার্তা বলেছেন, আর আজ……. বলে কণা থেমে গেল।

গালিব আবার মৃদু হেসে বলল, আজ চালাকের মতো কথা বলছি কেন, এটাই জানতে চাচ্ছেন, তাই না?

জি। অথচ তনির সঙ্গে প্রথম থেকেই……. বলে কণা আবার থেমে গেল।

গালিব বলল, জানেন তো, মন মানুষকে চালিত করে। আমার মন যখন যার সঙ্গে যেরকম কথাবার্তা বা ব্যবহার করতে বলে সেই রকম করি। এতে যদি কিছু দোষ হয়ে থাকে, তবে ক্ষমা প্রার্থী বলে দু’হাত জোড়া করল।

কণা বলল, না-না, ক্ষমা চাওয়ার মতো অপরাধ আপনি করেন নি। আচ্ছা, আপনি নাকি সব পশুপাখির ডাক ডাকতে পারেন?

কার কাছে একথা শুনেছেন?

তনির কাছে। বলুন না পারেন কি না।

সব পশু পাখির ডাক না পারলে অনেকের পারি ।

কই যে কোন একটা পশু বা পাখির ডাক ডাকেন তো?

ভয় পাবেন না তো?

কেন ভয় পাব কেন? আপনি কি সিংহ বা বাঘের ডাক ডাকবেন নাকি?

যদি বলি তাই।

কই ডাকুন, ভয় পাব না।

গালিব বলল, দরজার দিকে তাকান।

কণা দরজার দিকে তাকান মাত্র গালিব সিংহের মতো গর্জন করে উঠল।

কণা ভয়ে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল।

গালিব হেসে ফেলে তার একটা হাত ধরে বসিয়ে বলল, আপনাকে আগেই সাবধান করেছি, তবু ভয় পেলেন?

কথা শেষ করে হাত ছেড়ে দিতে গেলে কণা তার হাত ধরে রেখে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, সত্যি, আপনার কোনো তুলনা নেই। সেদিন তনির মুখে আপনার বাঘের গর্জন করার কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি। তাই আজ……….. কথাটা আর শেষ করতে পারল না। ততক্ষণে ছেলে, বুড়ো, জোয়ান, মেয়ে, পুরুষ সিংহের গর্জন শুনে পোস্ট অফিসের বাইরে ভীড় করেছে। একজন বৃদ্ধ লোক তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, একটু আগে সিংহের গর্জন শুনে ভাবলাম, দশ বছর পর বুঝি সার্কাস দল আমাদের গ্রামে এসেছে।

কণা গালিবকে দেখিয়ে বলল, ইনি অনেক রকম পশু-পাখির ডাক ডাকতে পারেন শুনে আমি সিংহের ডাক ডাকতে বলি। উনিই সিংহের ডাক ডেকেছেন। এখন আপনারা চলে যান। তারপর গালিবকে বলল আসি পরে আপনার সঙ্গে দেখা করব। কথা শেষ করে লোকজনদের সাথে সেও চলে গেল।

পরের দিন কলেজে যাওয়ার সময় কণা তনিকে গতকাল গালিবের সিংহের গর্জন করার ঘটনা জানিয়ে জিজ্ঞেস করল, গালিব সাহেবকে তোর কি মনে হয়?

তনি বলল, আমার মনে হয় ওনার মধ্যে এক্সট্রা কিছু পার্টস আছে।

এক্সট্রা পার্টস বলতে কি বোঝাতে চাইছিস?

যাদু টাদু জনেন মনে হয়?

দূর, যাদু বলে দুনিয়াতে কিছু আছে না কি? দাদির কাছে শুনেছি আগের যুগে কেউ কেউ যাদু জানলেও বর্তমানে যাদু বলে কিছু নেই।

তা হলে জুয়েল আইচ টিভিতে যেসব যাদু দেখান সেগুলো কি?

কণা কিছু বলার আগে গালিবের গলা শুনতে পেল, সেগুলো হল ধাঁধা, হাত সাফাই ও কেমিক্যালের কারসাজি।

গালিবের কথা শুনে তনি ও কণা পিছন ফিরে তাকে দেখে খুব অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।

গালিব বলল, মনে হচ্ছে আমাকে দেখে খুব অবাক হয়েছেন। আপনাদের কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। চলুন, যেতে যেতে কথা বলি।

চলতে শুরু করে তনি বলল, নিশ্চয় পোস্ট অফিসের কাছ থেকে আমাদের পিছন পিছন আসছেন?

গালিব বলল, ঠিক বলেছেন। কি জানেন, আমি পোস্ট অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি আপনারা কিছুটা আগে আগে আসছেন।

তা হলে তো আমাদের সব কথাবার্তা শুনেছেন?

হ্যাঁ, শুনেছি।

কাজটা কি ঠিক করেছেন?

না, ঠিক করিনি।

নিজের গুণাগুণ শুনতে বুঝি খুব ভালো লাগছিল?

না, ভালো লাগেনি। আল্লাহ শ্রবণ শক্তি যখন দিয়েছেন তখন ভালো না লাগলেও শুনতে হল।

কণা বলল, আমরা যদি ব্যক্তিগত কোনো গোপন কথা বলতাম তখন কি করতেন?

তখন উপস্থিতি জানিয়ে দিতাম অথবা এতটা দূরত্ব বজায় রাখতাম যাতে আপনাদের কথা যেন শোনা না যায়।

তা প্রিন্সিপালের সঙ্গে এমন কি কাজ যে, অফিসের কাজ ফেলে যাচ্ছেন?

ওনার এক ছেলে ঢাকায় থাকেন। তিনি আর্জেন্ট টেলিগ্রাম করেছেন। সেটা দিতে যাচ্ছি।

কেন রহিম চাচাকে দিয়ে পাঠাতে পারতেন না।

তা পারতাম। উনি আজ অসুস্থ। তাই আমাকেই যেতে হচ্ছে।

তনি বলল, একটা অনুরোধ করব রাখবেন?

করেই দেখুন।

যে কোন একটা পাখির ডাক ডেকে শোনান।

তার আগে আমার একটা অনুরোধ আপনাদেরকে রাখতে হবে।

কণা বলল, অনুরোধটা ইসলামের পরিপন্থি না হলে আপত্তি নেই। তারপর তনির দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি বলিস?

তনি বলল, তোর সঙ্গে আমিও একমত।

গালিব বলল, আমাকে আপনাদের কি রকম মনে হয়?

কণা বলল, কি রকম বলতে কি জানতে চাইছেন?

তনি বলল, হ্যাঁ, কণা ঠিক কথা বলেছে। কি উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করেছেন, তা বললে ঠিক কথা বলব কি করে?

গালিব বলল, বিয়ের পাত্র হিসাবে জানতে চাইছি।

তনি ও কণা একে অপরের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে দু’জনেই হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে প্রথমে তনি বলল, আপনি বিদেশী ছেলে। কয়েক মাস হল এখানে এসেছেন। তা ছাড়া আপনার সঙ্গে মাত্র তিন চারবার দেখা সাক্ষাৎ। আপনার সম্পর্কে একরকম আমরা কিছুই জানি না। তবে যতটুকু জেনেছি, তাতে মন্দ কিছু পাই নি।

গালিব কণাকে বলল, আপনি কিছু বলুন।

কণা বলল, তনি যা বলেছে আমিও তাই বলব। তবে আর একটু বলতে পারি, মানুষকে মুগ্ধ করার ক্ষমতা আপনার আছে। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। হঠাৎ এরকম প্রশ্ন আমাদের কেন করলেন?

মেয়েরাই প্রকৃতপক্ষে ছেলেরা পাত্র হিসাবে কেমন বলতে পারে।

তা অবশ্য ঠিক। এবার একটা পাখির ডাক ডেকে শোনান।

ততক্ষণে তারা কলেজের কাছাকাছি চলে এসেছে। গালিব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, এখন বসন্ত কাল, কোকিলের ডাক নিশ্চয় ভালো লাগবে? আপনারা কলেজ বিল্ডিং-এর পাশে যে কাঁঠাল গাছ রয়েছে ঐ দিকে তাকান।

তনি ও কণা কাঁঠাল গাছের দিকে তাকাবার সঙ্গে সঙ্গে গালিব কু-হুঁ-কু-হুঁ করে কয়েকবার ডেকে থেমে গেল।

তনি ও কণার মনে হল কাঁঠালগাছের ডালে কোনো কোকিল ডাকছে। তারপর গালিবের দিকে তাকিয়ে তাকে দেখতে পেল না।

কণা বলল, কি ব্যাপার বলতো? গালিব সাহেব যেন মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেলেন?

তনি বলল, ঐ দেখ উনি প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকছেন।

কণা বলল, এত তাড়াতাড়ি ওখানে গেলেন কি করে?

তনি মৃদু হেসে বলল, আমরা যখন কাঁঠালগাছের দিকে তাকিয়েছিলাম তখন উনি কুহু-কুহু ডাকতে ডাকতে চলে গেলেন।

কণা বলল, একটা কথা ভেবে খুব অবাক হচ্ছি, উনি এখান থেকে তো কোকিলের ডাক ডাকতে শুরু করেন, অথচ আমার যেন মনে হল, কাঁঠালগাছে কোকিল ডাকছে।

তনি আবার মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়েছে। উনি আগে একবার এরকম করে আমাকে দেখিয়েছিলেন। এবার ক্লাসে যাই চল, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

আজ কলেজ কি কারণে যেন তিনটি ক্লাস হওয়ার পর ছুটি হয়ে গেল।

তনি ও কণা কলেজ থেকে বেরিয়ে গালিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি।

তনি বলল, কারণটা জানতে পারি?

গালিব বলল, একসঙ্গে এলাম, একসঙ্গে যাব তাই আর কি?

কণা বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আরও কারণ আছে।

গালিব বলল, আপনার অনুমান ঠিক।

তা হলে কারণটা বলে ফেলুন।

চলুন, যেতে যেতে বলছি বলে গালিব হাঁটতে শুরু করল।

ওরাও হাঁটতে শুরু করে তনি বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আপনি প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছিলেন? এবার কারণটা বলুন।

গালিব কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগল।

কণা বলল, কি হল, চুপ করে আছেন কেন? বলুন।

গালিব বলল, আপনাদের মায়েরা একই গ্রামের মেয়ে, ছোটবেলা থেকে সই পাতিয়েছিলেন এবং বলাবলি করতেন একই বাড়ির দু’ভাই-এর বৌ হলে জা হিসাবে আজীবন একসঙ্গে থাকতেন। সে আশা ওনাদের পূরণ না হলেও একই গ্রামের দুই পরিবারের বৌ হয়েছেন এবং এখনও ওনাদের সম্পর্ক বজায় আছে। সেকথা জেনে আপনারাও ছোটবেলা থেকে সই পাতিয়েছেন এবং ওনাদের মতো আপনারাও আশা করেন, আপনারা যেন একই বাড়ির বৌ হয়ে আজীবন একসঙ্গে থাকতে পারেন। তারপর জিজ্ঞেস করল, কথাটা কি আমি ঠিক বলেছি?

তনি ও কণা তার কথা শুনে এত অবাক হল যে? বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল।

গালিব মৃদু হেসে বলল, আমি ঠিক বলেছি কিনা বললেন না যে?

তনি জিজ্ঞেস করল, আমাদের পরিবারের ব্যক্তিগত কথা আপনি জানলেন কি করে?

তা হলে আমি ঠিক কথা বলেছি তাই না?

হ্যাঁ, বলেছেন; কিন্তু খুব অবাক হচ্ছি এসব আপনি জানলেন কি করে?

এত অবাক হচ্ছেন কেন? চলুন যেতে যেতে বলছি বলে গালিব আবার হাঁটতে শুরু করে কণাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমার মা আপনার মায়ের কাছে। থেকে শুনেছেন। আমি আবার ওনার কাছ থেকে শুনেছি।

কণা বলল, মা না হয় ওনাদের কথা বলেছেন; কিন্তু আমাদের মনের কথা মা তো জানে না,বলল কি করে?

আপনাদের মনের কথা আপনার মা বলেন নি, আমি অনুমান করে বলেছি।

তনি বলল, এসব কথা আমাদেরকে শোনানোর উদ্দেশ্য কি?

উদ্দেশ্য একটা আছে। আপনারা শুনতে চাইলে বলতে পারি।

বলুন।

আমি আপনাদের মনের আশা পূরণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

তনি ও কণা আবার দাঁড়িয়ে পড়ে একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর প্রথমে কণা বলল, কিভাবে পারবেন? আমার ভাইয়ের সঙ্গে তো তনির বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে।

গালিব বলল, পাকা কথা হয়ে থাকলেও হবে না।

আপনি বললেই হল। ওরা একে অপরকে পছন্দ করে। তা ছাড়া উভয় পরিবারের মুরুব্বীরা বিয়ের পাকা কথা বলে রেখেছেন।

কিন্তু আল্লাহ রাজি না থাকলে দুনিয়াশুদ্ধ লোক চাইলেও যে হবে না সে কথা নিশ্চয় বিশ্বাস করেন?

হা করি। কিন্তু আপনি কি করে বলছেন, একাজ হবে না?

সে কথা এখন বলতে পারব না। কিছুদিনের মধ্যে আপনারা এমনই জানতে পারবেন।

তনি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কণার ভাইয়া আমজাদকে ভালবাসে। কিন্তু আমজাদ তনি যে তাকে ভালবাসে সে কথা জানে না। তাকে সইমার মেয়ে হিসাবে বোনের মতো স্নেহের চোখে দেখে। আর সেটাকেই তনি ভালবাসা মনে করে। এখন গালিবের কথা শুনে রেগে উঠে বলল, আপনাকে এখনই বলতে হবে কেন আমাদের বিয়ে হবে না।

বললাম তো “এখন বলতে পারব না, কিছুদিনের মধ্যে আপনারা এমনই জানতে পারবেন।” কথা শেষ করে গালিব দ্রুত হেঁটে তাদের কাছ থেকে চলে গেল।

তনি তার ওপর আরও রেগে গিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।

তার মনে হল কিছু বলতে গেলে কেঁদে ফেলবে।

তার অবস্থা বুঝতে পেরে কণা রাগের সঙ্গে গালিবকে উদ্দেশ্য করে বলল, দাঁড়ান, কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছে কেন?

গালিব না শোনার ভান করে আরও দ্রুত হাঁটতে লাগল।

কণা জানে তনি ভাইয়াকে ভীষণ ভালবাসে। বলল, চল যাই। তারপর যেতে যেতে বলল, ওনার কথায় তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি এক তিল বিশ্বাস করিনি। ভাইয়া কত ধার্মিক তা তো জানিস। ধার্মিক ছেলেরা কখনও কাউকে বিট্টে করে না। তা ছাড়া মুরুব্বীরা কথাবার্তা পাকা করে রেখেছেন। ভাইয়ার মতো ছেলে কি মুরুব্বীদের কথা বরখেলাপ করতে পারবে?

তনি ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। চোখ মুছে বলল, কিন্তু মুরুব্বীদের কথা তো আমজাদ ভাই জানে না। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, গালিব সাহেবকে তুই কতটুকু চিনেছিস জানি না, কিন্তু আমি তাকে যতটুকু চিনেছি, তাতে মনে হচ্ছে, উনি কখনও মিথ্যা বা ফালতু কথা বলতে পারেন না।

কণা অবাক হয়ে বলল, তুই তা হলে নিজের ভালবাসার থেকে ওনার কথা বেশি বিশ্বাস করিস?

তনির চোখে আবার পানি এসে গেল। চোখ মুছে বলল, এখন আমার মাথা ঠিক নেই, তোর কথার জবাব দিতে পারব না।

কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রথমে তনিদের ঘর পড়ে। গ্রামে ঢোকার আগে পথটা দু’ভাগ হয়েছে ততক্ষণে তারা সেখানে পৌঁছে যেতে তনি বলল, কথাটা কাউকে বলবি না।

পাগল হয়েছিস, কাউকে বলতে যাব কেন? বললাম না, ওনার কথা এক তিল বিশ্বাস করিনি বলে কণা নিজের পথ ধরল। পোস্ট অফিসের পাশ দিয়ে আসার সময় দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখল, রহিম চাচা একা কাজ করছে, গালিব সাহেব নেই।

রহিম চাচা তাকে চিনে। দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবে মা?

কণা বলল, মাস্টার সাহেব কোথায়?

আমি অসুস্থ তাই উনি কলেজে প্রিন্সিপালের একটা আর্জেন্ট টেলিগ্রাম নিয়ে গেছেন। এখনও ফেরেননি।

ও বলে ঘরে যাওয়ার সময় ভাবল, মনে হয় বাসা থেকে খেয়ে অফিসে আসবে।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *