একদিন অপরাহ্নে – ১০

১০.

রফিক পড়াশোনা শেষ করে গ্রামে ফিরে যখন শুনল, আমজাদ ঢাকা থেকে এক মেম বিয়ে করে এনেছে তখন মাকে একদিন বলল, তক্বদিরকে বিশ্বাস করে ধৈর্য ধরে ছিলাম। আমার মন বলছে তনির সঙ্গে আল্লাহ আমার জোড়া করেছেন। তাই আমজাদ অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। তোমরা আর একবার চাচা-চাচির কাছে প্রস্তাব দাও। এবার আর না করতে পারবেন না।

জোবেদা বিবি একসময় কথাটা স্বামীকে বললেন।

জহির উদ্দিন বললেন, তুমিই ভাবির সঙ্গে দেখা করে কথাটা বলে দেখ কি বলে। রাজি থাকলে আমি বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলব।

ততদিনে তনির সঙ্গে গালিবের মন দেয়া নেয়া হয়েছে এবং তাদের বিয়ের কথাও একরকম পাকাপাকি হয়ে গেছে। তাই জোবেদা বিবি এতদিন পর যখন আবার বিয়ের প্রস্তাব দিলেন তখন মুনসুরা বেগম বুদ্ধি খাঁটিয়ে বললেন, কি আর বলব বোন, সবই তকদির। আমজাদ মেম বিয়ে করে আনার পর আমরা দুঃখ পেলেও কিছু করার নেই। তারপর পোস্ট মাস্টার গালিবের সঙ্গে তনির বিয়ের পাকা পাকি হওয়ার কথা বললেন।

জোবেদা বিবি আর কি বলবেন, বিদায় নিয়ে ফিরে এসে প্রথমে স্বামীকে জানালেন।

জহির উদ্দিন বললেন, হ্যাঁ, আমিও যেন ঐরকম কিছু শুনেছিলাম। এখন ছেলেকে জানিয়ে বলো, আমি তার জন্য মেয়ের খোঁজ করছি।

মায়ের মুখে কথাটা শুনে রফিক রায়হানের উপর খুব রেগে গেলেও কোনো উচ্চবাচ্য করল না। শুধু বলল, চাচা মেয়ের বিয়ে কেমন করে দেয় দেখব।

তারপর গালিবদের সব খবর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল, ওদেরকে এই গ্রাম থেকে যেমন করে তোক তাড়াতে হবে।

রফিকের বন্ধু ফজলু এস. এস. সি. পাস করে আর পড়েনি। রফিক কলেজে পড়র জন্য ঢাকায় চলে গেলে গ্রামের আজে বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে যায়। সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। রাতে চুরি চামারী করে, তাদের সঙ্গে মদ-তাড়ি খায়। তার বাবা সেকথা জেনে ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর কিছুদিন বন্ধুদের সঙ্গে মিশল না। কিন্তু ঘরে নতুন বৌ, তার সখ সাধ মেটাবার ও নিজের পকেট খরচ কোথায় পাবে? প্রথম দিকে মায়ের কাছ থেকে নিত। পরে মা যখন বলল, তুমি রুজী রোজগার করার চেষ্টা কর, আমি আর কতদিন তোকে টাকা পয়সা দেব। তোর বাবা বলছিল, নিজেদের জমি-জমার কাজও তো করতে পারিস।

ফজলু রেগে উঠ বলল, লেখাপড়া করেছি কামলার কাজ করার জন্য?

মা করিমা খাতুন বললেন, তা যদি না করিস, তা হলে অন্য কিছু রোজগার কর।

ফজলু একদিন চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বলল, আমার রুজী রোজগারের ব্যবস্থা না করে মা-বাবা আমার বিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাকে কামলাদের সঙ্গে জমিতে কাজ করতে বলছেন। আমি ওসব পারব না। আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিন।

চেয়ারম্যান তাকে নিজের চোরাকারবারে লাগিয়ে দিলেন। এখনও ফজলু সেই কাজ করছে।

রফিক একদিন ফজলুর সঙ্গে দেখা করে বলল, তুইতো জানিস আমি তনিকে ভালবাসি এবং তাকে বিয়ে করার জন্য মা-বাবাকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম তাও জানিস। কেন চাচা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সে কথাও তোকে বলেছি। এবারে ঢাকা থেকে এসে শুনলাম আমজাদ মেম বিয়ে করে এনেছে। তাই মাকে দিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠাই; কিন্তু ঐ বেটা পোস্ট মাস্টারের সঙ্গে নাকি বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। তা ছাড়া পোস্ট মাস্টারের ভাইয়ের সঙ্গেও নাকি আমজাদের বোন কণার বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। ঐ দুই বেটাকে কি করে এখান থেকে ভাগান যায় বলতো?

ফজলু জানে, চেয়ারম্যান পোস্ট মাস্টারের উপর ভীষণ ক্ষ্যাপা। তিনিও তাকে এখান থেকে তাড়াবার চেষ্টা করছেন। এসব কথা রফিককে বলা ঠিক হবে ভেবে বলল, তুই চিন্তা করিস না, আমি ওদেরকে তাড়াবার ব্যবস্থা করব।

কি ব্যবস্থা করবি বল না শুনি।

সে কথা শোনা তোর দরকার নেই। তুই তো জানিস আমি কি ধরনের ছেলে। এমন কিছু করব, যার ফলে মা ও দুই ভাই চাকরি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।

দেখিস, এমন কিছু করিস না, যাতে আমি না জড়িয়ে পড়ি।

আরে না, তোকে জড়াতে যাব কেন? তুই নিশ্চিন্ত মনে ঘরে যা, আমি এখন একটা কাজে যাব। কি করি না করি তিন চার দিনের মধ্যে জানতে পারবি।

রফিক চলে যাওয়ার পর ফজলু চিন্তা করল, পোস্ট মাস্টারকে মার্ডার করতে পারলে একদিকে যেমন রফিক তনিকে বিয়ে করতে পারবে, অন্যদিকে চেয়ারম্যান ও দারোগা সাহেব খুব খুশি হবেন। খুশি হয়ে চেয়ারম্যান তাকে মোটা বখশীষ দেবেন। কিভাবে কি করবে ফজলু দু’দিন চিন্তা ভাবনা করল।

তখন গ্রীষ্মকাল। বেলা তখন দুটো। রহিম চাচা সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ি গেছে। আজ ফেরার কথা থাকলেও ফেরেনি। গালিব একা কাজ করছে।

রায়হান কলেজ থেকে ফেরার পথে পোস্ট অফিসে ঢুকে বলল, কিরে, খেতে যাবি না?

গালিব বলল, তুই যা আমি জোহরের নামায পড়ে আসছি।

রায়হান তাড়াতাড়ি আসার কথা বলে বাসার পথ ধরল।

পোস্ট অফিস থেকে ওদের বাসার দূরত্ব আধা কিলোমিটার। ঐ আধা কিলোমিটারের অর্ধেকটা পথের দু’ধারে জঙ্গল। রায়হান যখন জঙ্গলের পথ ধরে আসছিল তখন ফজলু তার দু’জন সহযোগীকে নিয়ে তার ওপর হামলা চালাল। দুই সহযোগী রায়হানকে জাপটে ধরল আর ফজলু বড় ছুরি তার কাঁধে ও পিঠে দুই তিন বার মেরেছে এমন সময় গালিব সেখানে পৌঁছে গেল।

গালিব রায়হানকে নামায পড়ে আসার কথা বললেও বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় সে চলে যাওয়ার একটু পরে বাসায় আসছিল। দূর থেকে ঘটনাটা দেখে ছুটে এসে ফজলুকে ধরে কয়েকটা আছাড়া দিতে অজ্ঞান হয়ে গেছে দেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে বাকি দু’জনকে ধরতে যাওয়ার আগেই তারা রায়হানকে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলের ভেতরে দৌড়ে পালিয়ে গেল।

রায়হান দু’তিনটে ছুরির আঘাত পেলেও জ্ঞান হারায়নি। দু’হাতে ক্ষতস্থানে চেপে রেখে গালিবকে বলল, চিন্তা করিস না আমার গুরুতর কিছু হয়নি। আমি বাজারে ডাক্তারখানায় যাচ্ছি। তুই ওকে বাসায় নিয়ে গিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা কর। এখনি গ্রামের কাউকে কিছু জানাবার দরকার নেই।

গালিব বলল, তুই ডাক্তারখানায় গেলেই সবাই জেনে যাবে। তার চেয়ে ঘরে চল। একে ঘরে রেখে ডাক্তার নিয়ে আসব।

ডাক্তার সাহেব আগের যুগের এল. এফ. এম. পাস হলেও বেশ ভালই চিকিৎসা করেন। তিনি প্রথমে রায়হানের ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করে দেয়ার সময় বললেন, ছুরির ফলা বেশি গভীরে যায়নি। ভয়ের কোনো কারণ নেই। ওষুধ লিখে দিচ্ছি, খেলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবেন। ফজলুর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করে বললেন, একে তো চিনি। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, দু’জনের অবস্থা এরকম হল কি করে?

গালিব বলল, সে কথা পরে জানবেন। আমাকে চেনেন তো?

চিনব না কেন? আপনি তো পোস্ট মাস্টার। আপনার কত সুনাম।

একটা অনুরোধ করব রাখতে হবে।

বলুন। সাধ্যমতো চেষ্টা কর।

এদের দু’জনের অবস্থা যা দেখলেন এবং এদের চিকিৎসার কথা কাউকেই বলবেন না।

ডাক্তার সাহেব বিচক্ষণ লোক। বেশ অবাক হয়ে বললেন, কেন বলুন তো?

সে কথাও পরে জানতে পারবেন। এখন অনুরোধটা রাখবেন কিনা বলুন।

দেখুন, ফজলুকে মনে হয় আপনি চেনেন না। ও চেয়ারম্যানের লোক। চেয়ারম্যান জেনে গেলে আপনাদের বিপদ হতে পারে।

সেইজন্যে তো কাউকে জানাতে নিষেধ করলাম।

একে নিয়ে আপনারা কি করতে চান?

কিছুই করব না। জ্ঞান ফেরার পর ওর কাছ থেকে শুধু জানব, কার হুকুমে এ কাজ করেছে।

ও যদি মুখ না খোলে? আমার তো মনে হয় মেরে ফেললেও মুখ খুলবে না।

গালিব তার আইডি কার্ড দেখিয়ে বলল, কি করে মুখ খোলাতে হয়, তা আমাদের জানা আছে। আরও বলল, আমার এই পরিচয় এখানকার কেউ জানে না। এমন কি থানার দারোগা-পুলিশও নয়।

মনে হচ্ছে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে এসেছেন?

জি, ঠিক ধরেছেন। যেদিন রহস্যের উঘাটন করতে পারব, সেদিন সবাই আমার আসল পরিচয় জানতে পারবে।

ততক্ষণে ফজলুর জ্ঞান ফিরে এল। উঠে বসতে যেতে কোমরের ব্যথায় ঝাঁকিয়ে উঠে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে গালিবের দিকে তাকিয়ে রইল। সে জানে পোস্ট মাস্টার ও কলেজের প্রফেসার যমজ ভাই। গালিবকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছে, গালিব প্রতিদিন দুপুর দু’টার সময় বাসায় ভাত খেতে যায়। তাই আজ তার দু’জন সহযোগীকে নিয়ে জঙ্গলে লুকিয়েছিল। রায়হানকে আসতে দেখে পোস্ট মাস্টার মনে করে আক্রমণ করে। এখন জ্ঞান ফিরে আসার পর ভুলটা বুঝতে পারল।

গালিব ডাক্তার সাহেবকে বলল, ওর জ্ঞান ফিরেছে, আপনি এখন আসতে পারেন। ডাক্তার বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর গালিব ফজলুকে বলল, যা যা জিজ্ঞেস করব, তা যদি ঠিক ঠিক উত্তর দাও, তা হলে তোমাকে ছেড়ে দেব। নচেৎ তোমাকে কি করব তা আমি ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ভেব না, তোমাকে থানায় দেব। থানায় তোমাকে দেব না, কারণ দারোগা সাহেবকে আমি বিশ্বাস করি না। চেয়ারম্যানের কথায় অথবা তোমার কাছ থেকে টাকা খেয়ে ছেড়ে দেবেন। তারপর আরও অনেক কিছুর ভয় দেখাতে ফজলু বন্ধু রফিকের উপকার করার কথা ও চেয়ারম্যানের কাছে বখশীষ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলল, আপনার ভাইকে আপনি মনে করে আক্রমণ করি।

গালিব তার কথা টেপ করে নিল। তারপর চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু টাকা দিয়ে বলল, চেয়ারম্যানের দলে আর কাজ করো না। খেটে খুটে সত্তাবে উপার্জন করার চেষ্টা কর। যদি আমার কথামতো চল, তা হলে তোমার এই অপকর্মের কথা কাউকে বলব না। তা না হলে ঢাকার জেলে পাঠাবার ব্যবস্থা করব। মনে রেখ, ছুরির বাঁটে তোমার হাতের ছাপ আছে এবং তোমার সব কথা টেপ করে রেখেছি।

ফজলু কাঁদ কাঁদ গলায় বলল, চেয়ারম্যানের দল ছেড়ে দিলে উনি আমাকে ছাড়বেন না। লোকের দ্বারা আমাকে খুন করে ফেলবেন।

তুমি চেয়ারম্যানকে আমার কথা বলে দল ছাড়বে। তা হলে তোমাকে কিছু বললেও খুন করবে না। বরং আমাকে খুন করার চেষ্টা করবে। চেয়ারম্যান আমাকে যাই কিছু করুক না কেন তোমার কোনো ক্ষতি যেন না করে সে দিকে আমি লক্ষ্য রাখব।

ফজলুর সহযোগী দু’জন পালিয়ে গিয়ে ঘটনাটা চেয়ারম্যানকে জানাল।

চেয়ারম্যান রেগে উঠে বললেন, ফজলু একটা আস্ত গাধা। তা না হলে এরকম একটা কাজ আমাকে না জানিয়ে করতে গেল কেন? আর তোরাও তার সঙ্গে গিয়ে খুব অন্যায় করেছিস। যাক, যা হওয়ার হয়েছে। চুপ চাপ থাক, একথা কারও কাছে বলাবলি করবি না। দেখা যাক ওরা ফজলুকে নিয়ে কি করে। ব্যাটা ফজলু যদি আমার সম্পর্কে কিছু ফাঁস করে দেয়, তা হলে ওকেসহ ওদের দু’ভাইকে দুনিয়া থেকে সরাবার ব্যবস্থা করব। শোন, তোরা ফজলুর খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাবি।

চার পাঁচ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন ফজলু দেখা করল না তখন। রফিক তাদের ঘরে গেল। তাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, তোর কি হয়েছে?

ফজলু চুপে চুপে ঘটনাটা বলে বলল, ভাবছি এবার সম্ভাবে জীবন যাপন করব।

তুই আমার কথা ওদের কাছে বলেছিস না কি?

প্রথমে চেয়ারম্যানের কথা বলি। পরে তোর কথা বলতে বাধ্য করালো। কিছু মনে করিস না দোস্ত। ওদের দু’ভাইয়ের মতো মানুষ এ যুগে আছে কিনা জানি না। আমাকে একথা কারো কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। উনি কারও কাছে প্রকাশ করবেন না। বন্ধু বলে তোকে বললাম। তুই যেন আর কারও কাছে প্রকাশ করবি না। পোস্ট মাস্টার ফেরেশতা তুল্য লোক। আমার মনে হয় তোকে কিছু বলবেন না।

বন্ধুর প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে রফিক বলল, আমার কথা বলা তোর মোটেই উচিত হয়নি। তারপর বাড়ি ফিরে এল।

প্রতি শুক্রবার অপরাহ্নে তনির ছবি আঁকা দেখতে গালিব তাদের বাগানে আসে। আজও আসছিল। বাগানের গেটের কাছে এসে দেখল, বাগানের ভেতরে একটা জামগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রফিক একদৃষ্টে তনির দিকে তাকিয়ে আছে। গালিব গলা খাকারি দিতে রফিক চমকে উঠল।

সালাম দিয়ে গালিব বলল, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন কাছে গিয়ে দেখি তনি কি ছবি আঁকছে।

গালিবের গলা খাকারি শুনে রফিক চমকে উঠলেও খুব রেগে গিয়েছিল। তারপর তাকে সালাম দিতে ও তার কথা শুনে রাগ সামলে নিয়ে সংগত কণ্ঠে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এসময় আপনি এখানে কেন?

যদি বলি আপনি যে কারণে এখানে এসেছেন, আমিও ঐ একাই কারণে এসেছি।

রফিক আরও রেগে উঠে বলল, ও আমার চাচাতো বোন, এখানে আসার আমার অধিকার আছে।

আর আমি যদি বলি ও আমার বাগদত্তা, আমারও আসার অধিকার আছে।

রফিক রেগে গিয়ে কথা বলতে না পেরে অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

গালিব মৃদু হেসে বলল, আপনি শুধু শুধু আমার ওপর রাগ করছেন। জানেন না, বেশি রেগে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে? যাকগে, চলুন তনির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি এখানে আসার অধিকার কার বেশি। একথা বলার পরও তাকে একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার একটা হাত ধরে বলল, ঠিক আছে, তনি যদি আপনাকে সাপোর্ট করে, তা হলে কথা দিচ্ছি, আমি আর কখনও ওর সঙ্গে দেখা করব না।

রফিক রেগে গেলেও ফজলুর কথা মনে পড়তে ভয় পেয়েছে। তাই ভয়টা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য রাগের অভিনয় করছিল। গালিবের কথা শুনে ভাবল, ফজলুর কথাই ঠিক। সব কিছু জেনেও তার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকসান তো নিলেনই না, বর এখন যা ব্যবহার করছেন, তা এ যুগের ছেলের কাছ থেকে আশা করা যায় না।

তনি ছবি আঁকতে আঁকতে হঠাৎ তাদের দিকে দৃষ্টি পড়তে কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, আপনারা এখানে কি করছেন? তারপর গালিবের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনিই বা রফিক ভাইয়ের হাত ধরে আছেন কেন?

গালিব বলল, এসে দেখি উনি এখানে দাঁড়িয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তাই হাত ধরে বললাম চলুন তনির কাছে যাই। তারপর রফিককে উদ্দেশ্য করে বলল, তা হলে এখানেই ফয়সালা হয়ে যাক?

রফিক কিছু বলার আগে তনি বলল, কিসের ফয়সালা?

গালিব বলল, তোমার প্রতি কার অধিকার বেশি, ওনার না আমার? এ নিয়ে কথা হচ্ছিল।

বেশ কয়েকদিন আগে রফিক তনিকে মনের কথা জানিয়েছিল। শুনে তনি গালিবের সঙ্গে তার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেছে বলে বলেছিল, রফিক ভাই মনে কিছু না করে মাফ করে দিও। এখনও সে আশা ছাড়েনি জেনে তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, রফিক ভাই, তোমাকে সেদিন বলার পরও ………..।

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রফিক গালিবকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি তনির উপযুক্ত নই। আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছি, ক্ষমা করে দেবেন। কথা শেষ করে হন হন করে সেখান থেকে চলে গেল।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *