৪৫. দ্রৌপদীর অপমানে ভীমের ক্রোধ

সভামধ্যে যাজ্ঞসেনী করেন ক্রন্দন।
কেশে ধরি দুঃশাসন টানে ঘনে ঘন।।
হাসিয়া দ্রৌপদী প্রতি বলে দুর্য্যোধন।
কেন অকারণে কৃষ্ণা করহ রোদন।।
তোর স্বামী যুধিষ্ঠির হারিলেক তোরে।
পুনঃ পুনঃ কিবা আর জিজ্ঞাস সবারে।।
অনুমানে বুঝি, তোর এই মনে লয়।
একা যুধিষ্ঠির তোর অধিকারী নয়।।
জানাউক চারি স্বামী সম্মুখে সবার।
তোমাপর ধর্ম্মের নাহিক অধিকার।।
মিথ্যাবাদী যুধিষ্ঠির, কহুক চারিজন।
এইক্ষণে হয় তবে তোমার মোচন।।
নতুবা কহুক নিজে ধর্ম্মের কুমার।
কৃষ্ণার উপরে মোর নাহি অধিকার।।
এত যদি বলিল নৃপতি দুর্য্যোধন।
ভাল ভাল বলিয়া কহিল সভাজন।।
শুনিবারে রাজগণ আছে কুতূহলে।
কি বলে ধর্ম্মের পুত্র, ভীম কিবা বলে।।
কিবা বলে ধনঞ্জয়, মাদ্রীর নন্দন।
পঞ্চজন-মুখ সবে করে নিরীক্ষণ।।
নিঃশব্দে নৃপতিগণ একৃদষ্টে চায়।
কহিতে লাগিল ভীম চাহিয়া সভায়।।
চন্দনে লেপিত ভুজ তুলি সভামাঝে।
কহিতে লাগিল যেন কেশরী গরজে।।
এই রাজা যুধিষ্ঠির পাণ্ডরের প্রতি।
পাণ্ডবগণের নাহি ইহা বিনা গতি।।
ইনি যদি নহিবেন পাণ্ডব-ঈশ্বর।
এতক্ষণ কভু বাঁচে কৌরব পামর।।
ওরে দুষ্টগণ, তব হেন লয় মতি।
এতেক সহিতে পারে কাহার শকতি।।
যুধিষ্ঠির মহারাজ হারিলা আপনা।
ঈশ্বর হইল দাস, দাসী কি গণনা।।
যুধিষ্ঠিরে জিত হৈয়ে জিনিলা সবারে।
কাহার শকতি ইহা খণ্ডিবারে পারে।।
আর কহি শুন দুষ্ট কৌরব সকল।
আমি জীতে তো সবার নাহিক মঙ্গল।।
যেইক্ষণে ধর্ম্মরাজে বসালি ভূতলে।
যেইক্ষণে ধরিলি দ্রুপদ-সুতা-চুলে।।
সেইক্ষণে আয়ুঃশেষ তোমা সবাকার।
কুটি কুটি করি সবে করিব সংহার।।
হের দেখ যমদণ্ড মোর দুই ভুজে।
শচীপতি না জীয়ে পড়িলে ইথি মাঝে।।
পর্ব্বত করি যে চূর্ণ, তোমা গণি কিসে।
নির্ম্মূল করিতে পারি চক্ষুর নিমিষে।।
ধর্ম্মপাশে বদ্ধ এই ধর্ম্মের নন্দন।
তেঁই মূঢ়মতিগণ জীয়ে এতক্ষণ।।
আর তাহে পুনঃ পুনঃ অর্জ্জুন নিবারে।
এখনি দেখাই যদি রাজা আজ্ঞা করে।।
সিংহ যেন ক্ষুদ্র মৃগে করয়ে সংহার।
বিনাশিব ধৃতরাষ্ট্রের শতেক কুমার।।
কহিত কহিতে ভীম ক্রোধে কম্পকায়।
নয়নে সঘনে অগ্নিকণা বাহিরায়।।
ভীষ্ম দ্রোণ বিদুরাদি মৃদু বলে বাণী।
সকল সম্ভবে তোমা, ক্ষম বীরমণি।।
ভারতের পুণ্যকথা অমৃত লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে, ভবসিন্ধু তরি।।