৩৮. কর্ণের পুনর্ব্বার যুদ্ধ ও পলায়ন

রণমধ্যে অশ্বত্থামা নিরস্ত্র হইল।
দেখিয়া সূর্য্যের পুত্র ক্রোধেতে ধাইল।।
বিজয় নামেতে ধনু ভৃগুপতি দত্ত।
আকর্ণ পূরিয়া ধায় যেন গজ মত্ত।।
হাসিয়া অর্জ্জুন বীর ছাড়িয়া দ্রৌণিরে।
সম্মুখে দেখিয়া কর্ণে কহিছেন তারে।।
ক্রোধে কয় ধনঞ্জয় চক্ষু রক্তবর্ণ।
হে রাধেয় মুঢ়মতি সূতপুত্র কর্ণ।।
সতত কহিস্ করি মহা অহঙ্কার।
পৃথিবীতে বীর নাহি সমান আমার।।
তাহার পরীক্ষা আজি করিব এক্ষণে।
সাক্ষাতে দেখুক আজি কুরুবীরগণে।।
সভামধ্যে বসি যত কৈলে অহঙ্কার।
ক্ষত্র হয়ে প্রাণে তাহা সহিবে কাহার।।
দ্রৌপদীর অপমান যতেক করিলি।
তার প্রতিশোধ পাবি এই কথা বলি।।
ধর্ম্মপাশে বন্দী আছিলাম সেইকালে।
সকল সহিনু কষ্ট যতেক করিলে।।
অগ্নিসম অঙ্গমাজে দহিছে সে ক্লেশ।
অরণ্যের মহাকষ্ট, অজ্ঞাত বিশেষ।।
আজি তোরে দিব আমি সমুচিত ফল।
সাক্ষাতে দেখুক আজি কৌরব সকল।।
এত শুনি কহে তবে কর্ণ মহাবীর।
নাহিক সম্ভ্রম কিছু, নির্ভয় শরীর।।
যে কহিলে ধনঞ্জয় কর শীঘ্রগতি।
যত পরাক্রম তোর, যতেক শকতি।।
পাশাকালে দ্রৌপদীর যত অপমান।
মনে মনে আজি তাহা অন্তরেই জান।।
দ্রোণ স্থানে ইন্দ্র-স্থানে সে অস্ত্র পাইলি।
যে পার করহ শীঘ্র, এই তোরে বলি।।
ইন্দ্রাদি সঙ্গে কির যদি আসিস্ রণে।
বাহুড়িয়া যাবি হেন না করিস্ মনে।।
ইহা শুনি হাসি হাসি বলে ধনঞ্জয়।
লজ্জা যার থাকে, সে কি হেন কথা কয়।।
এইক্ষণে পূর্ণ নাহি হইতে প্রহর।
বিদ্যমানে কাটিলাম তোর সহোদর।।
ভঙ্গ দিয়া পলাইলি লইয়া জীবন।
কোন্ মুখে কহ হেন এ দর্প বচন।।
যাহা কহ, নহ শক্য করিতে যে কাজ।
রণমাঝ কহিতে না ভাব তুমি লাজ।।
এত বলি ধনঞ্জয় যুড়িলেন বাণ।
কর্ণোপরি মারিলেন বজ্রের সমান।।
অস্ত্রে অস্ত্রে নিবারিল কর্ণ মহাবল।
কুলেতে নিবৃত্ত যেন হয় সিন্ধুজল।।
তবে দিব্য পঞ্চ বাণ মারিল অর্জ্জুন।
ফেলিল কর্ণের কাটি ধনুকের গুণ।।
আর গুণ চড়াইল সংগ্রামে নিপুণ।
সে গুণ কাটিয়া তবে ফেলেন অর্জ্জুন।।
গুণ চড়াইতে কাটিলেন ধনঞ্জয়।
ধনু ছাড়ি শক্তি নিল সূর্য্যের তনয়।।
এড়িলেন শক্তিগোটা, সূর্য্য সম জ্বলে।
মহাশব্দ করি আসে গগন মণ্ডলে।।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণে পার্থ করি খণ্ড খণ্ড।
দুই বাণে কাটিলেন সারথির মুণ্ড।।
কাটিলেন মত্ত হস্তিধ্বজ শোভাধার।
দেখিয়া কৌরব-সৈন্য করে হাহাকার।।
কর্ণের সহায় ছিল বহু রথিগণ।
অর্জ্জুনে বেড়িয়া করে বাণ বরিষণ।।
কাটিয়া সকল বাণ পার্থ মহাবল।
মুহূর্ত্তেকে মারিলেন সহায় সকল।।
দিব্য বাণ এড়িলেন অর্জ্জুন প্রচণ্ড।
কর্ণের কবচ কাটি করে খণ্ড খণ্ড।।
আঘাতে ব্যথিত হয়ে তবে অঙ্গনাথ।
চিন্তিয়া দেখিল আর অস্ত্র নাহি সাথ।।
বিশেষে অর্জ্জুন-বাণে শরীর পীড়িল।
রণ ত্যজি কর্ণবীর পৃষ্ঠভঙ্গ দিল।।