১২. অর্জ্জুনের শিবিরে আগমন ও অভিমন্যু-নিধন-বাক্য শ্রবণ

মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
সমরেতে অভিমন্যু হইল নিধন।।
সংসপ্তকে থাকিয়া করেন পার্থ রণ।
উৎপাত অনেক দেখি করেন চিন্তন।।
করুণ ডাকিয়া কাক ধ্বজে আসি পড়ে।
শক্তিহীন সমরে, গাণ্ডীব গুণ ছিঁড়ে।।
বামচক্ষু স্পন্দে, ঘন ঘন বাম কর।
উড়ু উড়ু করে প্রাণ, রণে নাহি ডর।।
কৃষ্ণে চাহি ধনঞ্জয় বলেন তখন।
অবধানে শুন কৃষ্ণ আমার বচন।।
আজি কেন মম মন হয় উচাটন।
অবশ্য কারণ আছে দেব নারায়ণ।।
নাহি জানি কি করেন রাজা যুধিষ্ঠির।
হাহাকার করে শুন সব মহাবীর।।
হায় অভিমন্যু বলি কান্দে যোদ্ধাগণ।
সমরে হইল বুঝি তাহার নিধন।।
প্রাণ স্থির নহে মম জানাই তোমারে।
না জানি কি হৈল আজি সমর ভিতরে।।
কুরুসৈন্যে কোলাহল জয়শব্দ শুনি।
বাজিছে বিবিধ বাদ্য জয় জয় ধ্বনি।।
রথ চালাইয়া দেহ অতি শীঘ্রতর।
রাজারে দেখিলে সুস্থ হইবে অন্তর।।

শ্রীকৃষ্ণ বলেন সখে না চিন্ত অরিষ্ট।
যোদ্ধা অভিমন্যু দেখ সবাকার শ্রেষ্ঠ।।
বালক বলিয়া শত্রু না বধিবে রণে।
দ্রোণ আদি করিয়া যতেক বীরগণে।।
তবে যদি অভিমন্যু বধে দুর্য্যোধন।
তার সম পাপী তবে নহে অন্যজন।।
অন্তর্য্যামী নারায়ণ জানেন সকলি।
পড়িয়াছে অভিমন্যু সমরের স্থলী।।
এতেক বলিয়া কৃষ্ণ প্রবোধে অর্জ্জুনে।
রথ চালাইয়া দেন পবনগমনে।।
শিবির নিকটে উত্তরিয়া ধনঞ্জয়।
বিপরীত দেখিলেন অমঙ্গলময়।।
অন্ধকার করি বসে আছেন সভায়।
শোকাকুল সর্ব্বজন দেখিল তথায়।।

অর্জ্জুন বলেন, কৃষ্ণ দেখি বিপরীত।
মোরে দেখি লোক কেন হয় অতি ভীত।।
আজি যোদ্ধাগণ কেন শোকাকুল মন।
ভূমিতে বসেছে সবে ত্যজিয়া আসন।।
এই সব দেখি মম স্থির নহে প্রাণ।
কিসের কারণে কৃষ্ণ বলহ বিধান।।
এতেক বলিয়া গেল শিবির ভিতর।
দেখিলেন রোদন করিছে নৃপবর।।
অধোমুখ করি বসিয়াছে যোদ্ধাগণ।
একে একে পার্থ করিলেন নিরীক্ষণ।।
অভিমন্যু নাহি দেখি উচাটন মন।
জিজ্ঞাসেন ডাকিয়া ভীমেরে সেইক্ষণ।।
কোথা গেল অভিমন্যু কহ বৃকোদর।
তারে না দেখিয়া মম বিদরে অন্তর।।
এতেক শুনিয়া ভীম উত্তর না দিল।
অধোমুখ হয়ে ভীম নিঃশব্দে রহিল।।
উত্তর না পেয়ে পার্থ শোকেতে আকুল।
নয়নের জলে ভিজে অঙ্গের দুকূল।।
নকুল আকুল আর সহদেব শোকে।
অশ্রুধারে বহে ধারা বসি অধোমুখে।।
রোদন করিয়া ভীম কহিল তখন।
কেমনে কহিব অভিমন্যুর মরণ।।
করিয়া অন্যায় যুদ্ধ দুষ্ট দুর্য্যোধন।
সপ্তরথী বেড়ি পুত্রে করিল নিধন।।
ব্যূহদ্বার রুদ্ধ কৈল সিন্ধুর নন্দন।
ব্যূহ প্রবেশিতে না পারিল কোনজন।।
এতেক শুনিয়া ধনঞ্জয় মহাবীর।
হইলেন অভিমন্যু শোকেতে অস্থির।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।