১০. যুধিষ্ঠিরের বিলাপ

ভীমের বচন শুনি, শোকে ধর্ম্ম নৃপমণি,
কান্দিছেন বিলাপ করিয়া।
হাহাকার ঘন মুখে, চাপড় মারিয়া বুকে,
পর্ব্বতে পড়েন লোটাইয়া।।
হায় পার্থ মহাবল, পাণ্ডবের বুদ্ধি বল,
পর্ব্বতে পড়িলা কি কারণে।
স্বর্গপুরে আরোহণ, না হইল বিচক্ষণ,
প্রাণ দিব তোমার বিহনে।।
ত্রিভুবন কৈলে জয়, মহাবীর ধনঞ্জয়,
নররূপে বিষ্ণু অবতার।
অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী, কৌরববাহিনী জিনি
মোরে দিলা রাজ্য অধিকার।।
রাজসূয় যজ্ঞকালে, জিনি নিজ বাহুবলে,
করিলা উত্তর দিক জয়।
শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা নিয়া, সুরাসুর পুরী গিয়া,
নিমন্ত্রিয়া আনিলা সবায়।।
স্বর্গে যত দেবগণ, হইয়া সাদর মন,
দিল অস্ত্র মন্ত্রের সহিত।
তাহাতে সর্ব্বত্র জয়, করিলে শত্রুর ক্ষয়,
তব তুল্য নাহি পৃথিবীতে।

প্রবেশি কাননে, দেব পঞ্চাননে,
তুষিলা বাহুযুদ্ধেতে।
মারিলা অজস্র, কিরাত সহস্র,
একা তুমি কাননেতে।।
অমর সোসর, জিনিলে শঙ্কর,
ম্লেচ্ছ কিরাতের দেশ।
হৈয়া হৃষ্টচিত্ত, অস্ত্র পাশুপত,
দিলা প্রভু ব্যোমকেশ।।
কালকেয় আদি, যত সুরবাদী,
হেলায় করিলা নাশ।
যত দেবচয়, করিলা অভয়,
পূরাইয়া অভিলাষ।।
তাহে দেব অস্ত্র, পাইলা সমস্ত,
তোমার অজেয় নাই।
আর ধনুঃশর, দিলা বৈশ্বানর,
খাণ্ডব দহিলে ভাই।।
জিনি দেবগণ, দৈত্য অগণন,
অগ্নিরে সন্তোষ কৈলে।
ছাড়ি যাও তুমি, কিসে জীব আমি,
প্রাণ দিব শোকানলে।।
প্রাণাধিক বীর, ত্যজিলে শরীর,
নন্দীঘোষ গিরিবরে।
আমি পুনর্ব্বার, না দেখিব আর,
পড়িনু শোকসাগরে।।
ভারত সমরে, কর্ণ মহাবীরে,
বিনাশিলে ভীষ্ম দ্রোণে।
যাহার সহায়, যার ভরসায়,
প্রবল কৌরবগণে।।
তুমি মম প্রাণ, বীরের প্রধান,
সব শূণ্য তোমা বিনে।
মহাবীর তুমি, ঘন ডাকি আমি,
উত্তর না দেহ কেনে।।
নিদ্রা যাহ সুখে, আমি মরি শোকে,
উঠিয়া উত্তর দেহ।
কুরুগণে জিনি, লহ রাজধানী,
তাহার যুকতি কহ।।
রাজা ভূমে পড়ি, যান গড়াগড়ি,
না বান্ধেন কেশপাশ।
ভারত সঙ্গীত, শ্রবণে অমৃত,
বিরচিল কাশীদাস।।