১১. দুর্য্যোধনের মস্তকে ভীমের পদাঘাত

ইন্দ্র যেন গিরিভেদ করে বজ্রাঘাতে।
ঊরুভঙ্গে কুরুবীর পড়িল তেমতে।।
কুরুপতি ঊরুযুগ দেখিয়া নয়নে।
কামের অধীন হয়ে ভজে নারীগণে।।
হেন ঊরুভঙ্গ হয়ে পড়ে কুরুপতি।
দুরু দুরু শব্দেতে কাঁপয়ে বসুমতি।।
অন্যায় সমরেতে পড়িল কুরুসুত।
উৎপাত হইল তবে দেখিতে অদ্ভূত।।
বিপরীত বাত বহে নির্ঘাত সদৃশ।
শিবাগণ কান্দে রক্তবৃষ্টি অসদৃশ।।
দুর্য্যোধনে চাহি ভীম বলিল বচন।
শুন ওহে কুরুপতি মূঢ় দুর্য্যোধন।।
যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদীর কৈলে ‍অপমান।
তার ফল ভুঞ্জ এবে শুন রে অজ্ঞান।।
হেঁটমাথা করি আছে কুরু মহামতি।
ভীম বামপদে শিরে মারিলেক লাথি।।
কৃপার সাগর যুধিষ্ঠির সাধুজন।
অশেষ বিলাপ করি ভীমসেনে কন।।
ওরে ভীম কি করিলি কর্ম্ম বিগর্হিত।
এত অপমান করা অতি অনুচিত।।
সমস্ত পৃথিবীপতি রাজা দুর্য্যোধন।
জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র রাজার নন্দন।।
কেন তারে চরণ হানিলে কুলাধাম।
কুরুনাথে মারিলে করিয়া অনিয়ম।।
সসাগরা পৃথিবীর রাজচক্রবর্ত্তী।
তাহার এমন কেন করিলে দুর্গতি।।
মৃগমদ চন্দন সুগন্ধ সুবাসিত।
পদ্মমালা শিরে শোভে কাঞ্চন রচিত।।
ভাস্কর মুকুট মণি দিনকর প্রায়।
দুর্য্যোধন শিরোমণি ধরণী লোটায়।।
ওরে দুষ্ট ভীমসেন বড় দুরাচার।
কেমনে করিলি বাম চরণে প্রহার।।
কৃপাশীল যুধিষ্ঠির করিল ক্রন্দন।
দেখিয়া বিস্মিত হয় যত সভাজন।।
আপনি মরিলে ভাই, বান্ধবে মারিলে।।
নিজ কর্ম্মদোষে ভাই রাজ্য হারাইলে।
সসাগরা পৃথিবীর ছিলা অধিকারী।।
ভূমিতলে পড়িয়াছ রথ পরিহরি।
ইন্দ্রের সমান তব প্রচন্ড প্রতাপ।।
সিংহাসন ছাড়ি ভূমে এই বড় তাপ।
মহারাজগণ নাহি পান দরশন।।
রাজ্যেশ্বর হয়ে এবে ভূতলে শয়ন।
সহস্রেক বিদ্যাধরী তব সেবা করে।।
মোহন পুরুষ তুমি সংসার ভিতরে।
এবে তুমি লোটাহ পড়িয়া ভূমিতলে।।
পৃথিবী শাসিলে ভাই নিজ বাহুবলে।
মাগিলাম পঞ্চগ্রাম কৃষ্ণে পাঠাইয়া।।
পাপিষ্ঠ শকুনি বাক্যে না দিলে ছাড়িয়া।
ভাই হয়ে চন্ডাল হইলে মহারাজ।।
এতেক করিয়া ভাই কি করিলে কাজ।
রাজার ক্রন্দন দেখি সকল সমাজ।।
পঞ্চালক সোম আর যত মহারাজ।
কান্দয়ে সকল লোক যুধিষ্ঠির সনে।।
ভূমে গড়াগড়ি যান রাজা দুর্য্যোধনে।
কান্দিলেন যুধিষ্ঠির শোকে মনোদুঃখে।।
জানুপরে শির দিয়া কাঁদে অধোমুখে।
ভ্রাতৃবধ তাপে ধৈর্য্য ধরা নাহি যায়।।
ভাই ভাই বলি রাজা কাঁদে উভরায়।
রাজপাট সিংহাসন সকল ত্যজিয়।।
ভূমেতে লোটাও ভাই জ্ঞান হারাইয়া।
কুবুদ্ধি শুনিয়া ভাই না শুনিলে বোল।।
গুরুবাক্য না শুনিয়া যমে দিলে কোল।
রাজার লক্ষণ ভাই আছিল তোমাতে।।
তোমা হেন সত্যবাদী নাহি অবনীতে।
সমর সাগর ঘোর দেখি লাগে ভয়।।
একাকী করিলে রণ তুমি মহাশয়।
তব যশ ঘুষিবেক এ তিন ভূবনে।।
পুত্রশোক ধৃতরাষ্ট্র সহিবে কেমনে।
কি বলিয়া প্রবোধিব গান্ধার জননী।।
কি বলিয়া অশ্বাসিব যতেক রমণী।
এতেক বিলাপ করে ধর্ম্ম নরপতি।।
যুধিষ্ঠিরে প্রবোধেন আপনি শ্রীপতি।
কি কারণে ক্রন্দন করহ গুণনিধি।।
এই দুর্য্যোধন রাজা দুষ্টের জলধি।
সে কালে এ দুষ্ট না ধরিল কার বোল।।
এখন সে মহাতাপে মৃত্যু দিল কোল।
একবস্ত্র রজঃস্বলা দ্রুপদকুমারী।।
সভামধ্যে আনে তারে উপহাস করি।
জতুগৃহে পোড়াইল তোমা পঞ্চজনে।।
ভীমে বিষ দিল দুষ্ট নিধন কারণে।
অনেক পাপেতে রিপু গেল রসাতল।।
হেন ছারে বল ধর্ম্ম ভাই মহাবল।