জন্মেজয় বলিলেন কহ মুনিবর।
তীর্থযাত্রা করিলেন কেন হলধর।।
কহেন বৈশম্পায়ন শুনহ রাজন।
তীর্থযাত্রা কথা কহি ইথে দেহ মন।।
নৈমিষকাননে শৌনকাদি মুনিগণ।
বসিয়া করেন মহাভারত শ্রবণ।।
শ্রীসূত গোস্বামী গ্রন্থ করেন পঠন।
মুনি ষাটি সহস্রেক করেন শ্রবণ।।
ব্যাসাসনে বসিয়া কথক সূত মুনি।
কহেন ভারত কথা বিজ্ঞ চূড়ামণি।।
এই কালে সেখানে গেলেন বলরাম।
মুনিগণ সাদরেতে করেন প্রণাম।।
মুনিগণ দিল তারে দিব্য কুশাসন।
পরস্পর হইল কুশল জিজ্ঞাসন।।
সূত মুনি বসিয়াছে আসন উপর।
রামে অভ্যর্থনা না করিল মুনিবর।।
মনে করে সর্ব্ব মুনি নিত্য মোরে সেবে।
সবায় প্রণাম করে আসি বলদেবে।।
বিশেষ আছি যে ব্যাস আসন উপর।
মম সমাদর যোগ্য নহে হলধর।।
এই বিবেচনা করি রহিল আসনে।
সমাদর না করিল রেবতীরমণে।।
বলরাম জানিয়া সূতের অহঙ্কার।
মনে মনে করিলেন এমত বিচার।।
কোন্ ছার সূত না করিল সন্বর্দ্ধনা।
মারিব উহারে দেখি রাখে কোনজনা।।
ওরে সূত নরাধম অতি নীচ জাতি।
এবে জানিলাম আমি তোমার প্রকৃতি।।
সমাদর আমারে না কর অহঙ্কারে।
মনে কর বসিয়াছ আসন উপরে।।
এখনি মারিব তোরে সবার সাক্ষাতে।
নিজ কর্ম্ম দোষেতে ঠেকিলি মম হাতে।।
সূত বলে শুন প্রভু বচন আমার।
অপরাধ করিনু কি অগ্রেতে তোমার।।
ব্যাসের আসনে আমি আছি যে বসিয়া।
কিমতে উঠিব আমি তোমারে দেখিয়া।।
ব্যাসাসনে থাকিয়া উঠিলে হয় দোষ।
এই হেতু মোরে নাথ না কর আক্রোশ।।
সূত যদি এতেক কহিলা হলধরে।
কম্পমান হইয়া উঠেন ক্রোধভরে।।
কাদন্বরী পানেতে পূর্নিত দুলোচন।
প্রভাতের ভানু যেন লোহিত বরণ।।
যুগল অধর কোপে কাঁপে থর থর।
কদম্ব কুসুম যেন হৈল কলেবর।।
বসিয়া ছিলেন রাম দেন এক লম্ফ।
দেখিয়া রামের কার্য্য সবাকার কম্প।।
প্রলয়ের মেঘ জিনি দারুণ গর্জ্জন।
ক্ষিতি টলমল করে কাপে নাগগণ।।
দিগ্ গজ কাতর হৈল সমুদ্র উথলে।
সকল পর্ব্বত নড়ে রাম কোপাললে।।
হলে আকর্ষিয়া সূতে আনিয়া নিকটে।
খড়গ দিয়া কাটেন মস্তক এক চোটে।।
দেখি হাহাকার করে যত দেবগণ।
কি হল বলিয়া সবে করয়ে রোদন।।
হায় হায় করিলেন তপস্বী সমাজ।
সবে বলে রাম না করিলে ভাল কাজ।।
ব্রক্ষ্মবধ তোমারে হইল মহাশয়।
করিলে দারুণ কর্ম্ম পাপে নাহি ভয়।।
পরম পন্ডিত সূত ধর্ম্মেতে তৎপর।
সকল পুরাণ পাঠে ব্যাসের সোসর।।
ব্যাক্ষ্মণ্য দিলেন ব্যাস দেখি জ্ঞানবান।
হেনজনে বধ কর অদ্ভূত বিধান।।
তোমারে না শোভে হেন কর্ম্ম দুরাচার।
ব্রক্ষ্মবধ কর রাম কি বলিব আর।।
সূতের কারণে মুনিগণ মনে দুঃখ।
লজ্জাতে মলিন রাম হন অধোমুখ।।
অন্তর্য্যামী ব্যাস পরাশরের নন্দন।
অকস্মাৎ আইলেন নৈমিষ কানন।।
তাঁরে দেখি শৌনকাদি মুনির সমাজ।
পাদ্য অর্ঘ্য আসনে পূজিল মুনিরাজ।।
রাম আসি প্রণমেন মুনির চরণে।
আশীর্ব্বাদ করিলেন মুনি শান্তমনে।।
দেখিয়া রামের কার্য্য ব্যাস তপোধন।
লাগিলেন কহিবারে করুণ বচন।।
সূত বধ করি রাম কি কার্য্য করিলা।
সূতের নিধনে রাম ব্রক্ষবধী হৈলা।।
অষ্টাদশ পুরাণ করিয়া আমি সার।
দিলাম সে সকলের পাঠে অধিকার।।
চৌদ্দ শাস্ত্র চারি বেদ আর যত শাখা।
ব্রাক্ষ্মণ সূতেরে আমি করিলাম দীক্ষা।।
আগম প্রভূতি আর আছে তন্ত্র যত।
আমার বরেতে সূত ছিল অবগত।।
অকারণে বধ রামকরিলা তাহারে।
ব্রক্ষ্মহত্যা মহাপাপ হইল তোমারে।।
রাম কন না জানিয়া হৈল দুষ্টাচার।
এ পাপ হইতে মোরে করহ উদ্ধার।।
ব্যাস কহিলেন যত তীর্থ পৃথিবীতে।
অনুক্রমে পার যদি ভ্রমণ করিতে।।
যতি হয়ে ব্রক্ষচর্য্য আরম্ভ করিয়া।
চান্দ্রায়ণ করি তীর্থ আইস ভ্রমিয়া।।
কর যজ্ঞ হোম আর ব্রাক্ষ্মণ-ভোজন।
নানা দান দিবে দ্বিজে অতিথি সেবন।।
ইত্যাদি কহিয়া ব্যাস গেলেন স্বস্থান।
তীর্থযাত্রা হেতু রাম করেন বিধান।।
সূতের তনয় ছিল নাম তার সৌতি।
ডাকিয়া আনেন তার রেবতীর পতি।।
কহিলেন কর পিতৃশ্রাদ্ধাদি তর্পণ।
শ্রাদ্ধ করি করাইল ব্রাক্ষণ-ভোজন।।
পুনঃ তারে বলদেব করিয়া আহববান।
পুরাণ পাঠের হেতু করেন বরণ।।
ব্যাসাসনে সৌতিরে বসান হলধর।
দেখি মুনিগণ হন সহর্ষ অন্তর।।
মুনিগণে বিদায় হইয়া হলপাণি।
চলিলেন তীর্থযাত্রা করিতে আপনি।।
বলেন বৈশাম্পায়ন শুনহ রাজন।
কহিব অপূর্ব্ব কথা অতি পুরাতন।।
কৌরব পান্ডবে পাশা খেলাইল যবে।
বলরাম তীর্থ হেতু চলিলেন তবে।।
জন্মেজয় কহিলেন কহ বিবরিয়া।
কোন কোন তীর্থে রাম গেলেন ভ্রমিয়া।।
মনেতে ভাবিয়া ব্যাসদেবের চরণ।
কাশীরাম দাসের পয়ার বিরচন।।
পূর্ববর্তী:
« ০১. সসৈন্যে যুধিষ্ঠিরের হ্রদ নিকটে গমন
« ০১. সসৈন্যে যুধিষ্ঠিরের হ্রদ নিকটে গমন
পরবর্তী:
০৩. বশিষ্ঠ তীর্থের বিবরণ কথন »
০৩. বশিষ্ঠ তীর্থের বিবরণ কথন »
Leave a Reply