১০. যুধিষ্ঠিররাদির হস্তিনায় প্রত্যাগমন ও তপোবনে ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, কুন্তী এবং সঞ্জয়ের যজ্ঞাগ্নিতে মৃত্যু

মুনি বলে গুন জন্মেজয় নরনাথ
এইরূপে হইল সে রজনী প্রভাত।।
যুধিষ্ঠির প্রতি কন ব্যাস তপোধন।
হস্তিনানগরে রাজা করহ গমন।।
না ভাবিহ শোক দুঃখ হৃষ্টচিত্ত হৈয়া।
ভ্রাতৃসঙ্গে রাজ্যের পালন কর গিয়া।।
ধৃতরাষ্ট্র কুন্তী আর গান্ধারী সঞ্জয়।
সবারে বিদায় করে মুনি মহাশয়।।
প্রদক্ষিণ করি সবে মুনিরে বন্দিল।
সন্তুষ্ট হইয়া মুনি নিজ স্থানে গেল।।
তবে ধর্ম্ম নরপতি সঙ্গে ভ্রাতৃগণ।
ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর বন্দেন চরণ।।
আশীর্ব্বাদ কৈল দোঁহে প্রসন্ন বদন।
ওহে তাত নিজ রাজ্যে করহ গমন।।
কুরুকুলে তোমা বিনা কেহ নাহি আর।
তুমি পিন্ড দিবে আশা আছে সবাকার।।
ভুবনে অপূর্ব্ব তাত তোমার চরিত্র।
তোমা হৈতে কুরুকুল হইবে পবিত্র।।
দুঃখ না ভাবিহ তাত থাক হৃষ্টমনে।
রাজ্য দেশ পাল গিয়া ভাই পঞ্চজনে।।
পঞ্চ ভাই বন্দিলেক মায়ের চরণে।
ছাড়িয়ো যাইতে কিন্তু নাহি লয় মনে।।
আশীর্ব্বাদ করি কুন্তী তনয় সকলে।
সহদেব নকুলেরে লইলেম কোলে।।
দ্রৌপদীরে চাহি কুন্তী বলয়ে বচন।
এই দুই পুত্রে তুমি করিবা যতন।।
লক্ষ্মী অবতার তুমি সতী পতিব্রতা।
মহিমাতে তুমি হৈলা জগতে পূজিতা।।
তব কীর্ত্তি ঘুষিবেক যাবৎ ধরনী।
এত বলি আশীর্ব্বাদ কৈল সুবদনী।।
প্রণমিয়া পঞ্চ ভাই পাঞ্চালী সহিত।
সুভদ্রো উত্তরা আর রাজা পরীক্ষিত।।
সকলে মেলানি করি আরোহিয়া রথে।
মলিন বদনে চলিলেন পঞ্চ ভ্রাতে।।
বহু সৈন্যগণ সঙ্গে বিবিধ বাজন।
সুগন্ধি সহিত বয় মন্দ সমীরন।।
জাহ্নবী সলিলে স্মান করিয়া তর্পন।
চলেন হস্তিনাপুরে পান্ডুর নন্দন।।
নানা বাদ্য বাজে, নাচে গায় বিদ্যাধরী।
পঞ্চভাই প্রবেশ করেন নিজ পুরী।।
পাত্র মিত্র ভ্রাতৃ সঙ্গে করে রাজ কাজ।
পুত্রবৎ পালন করেন ধর্ম্মরাজ।।
অনুক্ষণ ধর্ম্ম বিনা অন্য নাহি মনে।
সর্ব্বদা করেন রাজা অন্ধের ভাবনে।।
জননী আমার কুন্তী গান্ধারী জননী।
সঞ্জয় সহিত বনে অন্ধ নৃপমণি।।
অনাথের নাথ প্রায় বনে চারিজন।
নাহি জানি কোন কর্ম্ম হইবে এখন।।
এই মত ধর্ম্ম ভাবে দিবস রজনী।
দৈবযোগে আইলা নারদ মহামুনি।।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া প্রণমেন পঞ্চজন।
করযোড়ে দাঁড়াইল বিষন্ন বদন।।
বসিতে করিল আজ্ঞা মুনি মহাশয়।
নিকটে বসেন পঞ্চ পান্ডুর তনয়।।
প্রণমিয়া পঞ্চ ভাই পাঞ্চালী সহিত।
সুভদ্রা উত্তরা আর রাজা পরীক্ষিত।।
করযোড়ে কহিলেন শুন মুনিবর।
জনক জননী মম অরন্য ভিতর।।
অনাথের সদৃশ নিবসে ঘোর বনে।
এই গতি হৈল আমা ‍পুত্র বিদ্যমানে।।
মুনি বলিলেন নৃপ শুন সাবধানে।
ধৃতরাষ্ট্র রাজা যজ্ঞ কৈল একদিনে।।
অগ্নির নির্ব্বাণ নাহি করিল রাজন।
সেই অগ্নি লাগিয়া দহিল তপোবন।।
ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী সঞ্জয় তব মাতা।
চারিজনে যোগাসনে আছিলেন তথা।।
অগ্নি দেখি অন্তর নহিল চারিজন।
সেই সে অগ্নিতে সবে হইল দাহন।।
নিজ কৃত অগ্নিতে পুড়িল অন্ধরাজ।
শ্রাদ্ধ আদি কর রাজা নাহি কর ব্যাজ।।
এত শুনি পঞ্চ ভাই লোটায় ধরণী।
হাহাকার করিয়া কান্দিল নৃপমগ্নি।।
দ্রৌপদী প্রভৃতি পুরে কান্দে সর্ব্বজন।
বহু অনুতাপ করি করিল রোদন।।
তবে যুধিষ্ঠির রাজা আনি দ্বিজগনে।
শ্রাদ্ধকর্ম্ম সমাপিয়া তুষিলেন ধনে।।
ব্যাসের রচিত দিব্য ভারত পুরান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুন্যবান।।

আশ্রমিক পর্ব্ব সমাপ্ত।