০৪. অশ্বথামার শিবিরে প্রবেশ ও বৃষ্টদ্যুরাদি বধ

গিরিশ বলিল ইহা করিতে না পারি।
পুরী রক্ষা করি আমি হইয়া যে দ্বারী।
এ বর ছাড়িয়া মাগ যাহা লয় মন।
দ্রৌণী বলে অন্য বরে নাহি প্রয়োজন।
যদি কদাচিৎ এই বর নাহি দিবে।
বলিদান গ্রহণ করহ দেব তবে।
দিব্য অস্ত্র যুড়ি অগ্রে জ্বালিল অনল।
পুড়িয়া মরিতে যায় দ্রৌণি মহাবল।
বহুস্তব করিতে সে না করিল ত্রুটি।
নিবারিয়া বর মাগ বলিলা ধূর্জ্জটি।
দ্রৌণি বলে যদি বর দিবে ত্রিলোচন।
রুপায় করহ মম প্রতিজ্ঞা পূরণ।
স্তবে বশ শঙ্কর দিলেন সেই বর।
পুনরপি বলে দ্রোণি যুড়ি দুই কর।।
আর এক অনুগ্রহ কর শূলপাণি।
কৃপা করি দেহ মোরে তব খড়গখানি।।
খড়গ দিয় অন্তরে গেলেন পশুপতি।
কৃপেরে চাহিয়া বলে দ্রৌণি মহামতি।
দ্বার আশুলিয়া দোঁহে রহ এইখানে।
কাটিও তাহার ‍মাথা আসিবে যে জনে।।
খড়গ হস্তে শিবিরে পশিল বীরবর।
নিদ্রাগত ধৃষ্টদ্যৃন্ন খট্টার উপর।
পিতৃবৈরী পেয়ে বীর মহাকোপমনে।
হাসিয়া ধরিল তবে পাঞ্চাল নন্দন।
খড়েগ মুন্ড কাটি মোরে না কর নিধন।
যুদ্ধ করি কর বীর স্বকার্য্য সাধন।
দ্রৌণি বলে ব্রক্ষ্মবধী দুষ্ট দুরাচার।
পশুবৎ করি তোরে করিব সংহার।
এত শুনি ধৃস্টদ্যুন্ন কহে আরবার।
বিনা যুদ্ধে না মারিহ দ্রোণের কুমার।।
যুদ্ধেতে হইলে মৃত্যু স্বর্গেতে গমন।
এই কার্য্য কর বীর দ্রোণের নন্দন।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বচন গুণিয়া নাহি শুনে।
বজ্রমুষ্টি কীল তায় মারে ক্রোধমনে।
হস্তপদ উদরেতে করিল প্রবেশ।
পশুবৎ করিয়া ভাঙ্গিল মধ্যদেশ।
ভীম যেন কীচকেরে করিলে সংহার।
সেইমত করিলেন কুষ্মান্ড আকার।
একেশ্বর দ্রোণপুত্র মারে সবাকারে।
নিশাযোগে ঘোর রণ শিবির ভিতরে।
হাহাকার মহাশব্দ হয় ‍‌আচন্বিতে।
প্রাণভয়ে পলাইতে চাহে দ্বারপথে।
অসি হস্তে দুইজন রক্ষা করে দ্বার।
বাহির হইতে তারা করয়ে সংহার।।
বিপাকে পড়িয়া তারা না দেখে নিষ্কৃতি।
ঘোর রণ করে সবে দ্রৌণির সংহতি।।
দ্রোণপুত্র অম্বথামা রণেতে প্রচন্ড
কাটিল সকল সেনা করি খন্ড খন্ড।
দাবানল বন যেন করয়ে দাহন।
সেইমত কাটে সেনা দ্রোণের নন্দন।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র ছিল এক ঘরে।
এক ঠাঁই শুয়েছিল পঞ্চ সহোদরে।
হাত বুলাইয়া দেখে দ্রোণের নন্দন।
ভাবিল বুলাইয়া দেখে দ্রোণের নন্দন।
ভাবিল পান্ডব এই ভাই পঞ্চজন।
মুখে বস্ত্র বান্ধিয়া কাটিয়া পাড়ে শির।
একে একে পঞ্চমুন্ড কাটে দ্রৌণি বীর।
পঞ্চমুন্ড বসনে বান্ধিয়া দ্রোণসুত।
পান্ডবে শিখন্ডী ধনুর্ব্বাণ ণিল হাতে।
করয়ে দারুণ যুদ্ধ দ্রৌণির সহিতে।
বাণে বাণ নিবারয়ে দ্রোণের কুমার।
এইরূপে মহাযুদ্ধ করে মহামার।
তীক্ষ্ম অসি লয়ে বীর দ্রোণের কুমার।
মন্ডলী করিয়া যুঝে বীর অবতার।
ধরাধরি করি দোঁহে করে মহারণ।
মুন্ডে মুন্ডে বুকে বুকে চরণে চরণ।।
মল্লযুদ্ধ করি দোঁহে ক্ষিতিতলে পড়ি।
করিয়া অতুল যুদ্ধ যায় গড়াগড়ি।
কখন উপরে দ্রৌণি শিকন্ডী কখন।
দোঁহার প্রহারে দোঁহে অতি ক্রোধমন।
প্রাণপণে শিখন্ডী মারয়ে দ্রোণসুতে।
নাহি ফুটে অঙ্গে তার দৈববল হৈতে।।
বজ্রমুষ্ট্যাঘাত মারে শিখন্ডীর মাথে।
ভাঙ্গিল মস্তকখান বজ্রমুষ্ট্যাঘাতে।
এইমত শিকন্ডীকে করিয়া সংহার।
একজন অবশেষে না রাখিল আর।
পঞ্চমুন্ড লয়ে দ্রোণি চলে হরষিতে।
দোহাকার সঙ্গে আসি মিলিল দ্বারেতে।
দ্রোণি বলিলেন মম প্রতিজ্ঞা পূরণ।
পান্ডব প্রভৃতি আর নাহি একজন।
পঞ্চ পান্ডবের মুন্ড দেখহ সাক্ষাতে।
দুর্য্যোধন দিব, লয়ে চলহ ত্বরিতে।
রাজার নিকটে আসি বীর তিনজন।
দপূ করি কহে কথা দ্রোণের নন্দন।।
অবধানে কথা শুন রাজা দুর্য্যোধন।
মারিলাম তব শ্ত্রু পান্ডুর নন্দন।।
পাঞ্চাল বিরাট আদি যত বীর ছিল।
সকলে আমার হাতে আজি মারা গেল।
যে প্রতিজ্ঞা করিলাম সাক্ষাতে তোমার।
আজি আমি করিলাম পালন তাহার।
পঞ্চ পান্ডবের মুন্ড দেখহ সাক্ষাতে।
এক জন না রাখিনু পান্ডব সৈন্যেতে।।
এত শুনি হরষিত হৈল দুর্য্যোধন।
সাধু সাধু বলি রাজা বলিল বচন।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুন্যবান।।