পাঠকবৃন্দের প্রতি
এ গ্রন্থ পাঠে পাঠকবৃন্দ যতই বিস্মিত এবং আহত হন না কেন, এ গ্রন্থ যে কোনও উপন্যাসের অধিক। অসাধারণ এবং অনন্য এক ব্যক্তির একটি আত্মপ্রতিকৃতি। এ আত্মপ্রতিকৃতি কেবল একটি মাত্র ব্যক্তির নয়, একজন মাত্র রুশোর নয়; একাধিক এবং বহুমাত্রিক এক রুশোর : যিনি যেমনি অশিক্ষিত, তেমনি স্বশিক্ষিত, যেমন একজন দার্শনিক, তেমনি একজন প্রেমিক, রাজনীতির ভাষায় গুপ্তচরও বটে, আবার অন্যতম সঙ্গীতজ্ঞ তুলনাহীন একজন ঔপন্যাসিক; এমন এক ব্যক্তি যার কাছে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের কোনও ইতিহাস বিশ্রুত ব্যক্তিত্বই তাদের চরিত্রের অতলে অনাবিষ্কৃত থাকেননি। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম সড়ক নির্মাতা রুশো।
রুশোর আত্মকথা বা ‘কনফেশনস্’ রুশোর দর্শনের অংশ নয়। তার দর্শন তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে লাভ করা যায়। রুশোর আত্মকথা হচ্ছে রুশোর অস্তিত্ব– তার দৈহিক এবং মানসিক অস্তিত্বের প্রকাশ এবং তার দর্শনের ভিত্তিভূমি। এই অস্তিত্বেই তার দর্শন। তার দর্শন তার অস্তিত্ব থেকে অবিচ্ছিন্ন। পাঠকদের একটিই মাত্র করণীয়। এই মানুষটিকে তার আপাদমস্তকে এবং মননে দেখা : তাকে দর্শন করা।
সরদার ফজলুল করিম
.
রুশোর জন্ম ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৭৮ খ্রস্টাব্দে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের ১১ বৎসর পূর্বে। রুশো ছিলেন সুইজারল্যান্ডের এক দরিদ্র ঘড়ি নির্মাতার পুত্র। তাঁর জীবনকালের পরিধি ছিল ৬৬ বছর। এ জীবনের বৈচিত্র্যে কোনও তুলনা ছিল না। এ জীবন যেমন ছিল মহৎ, তেমনি অ-মহৎ, যেমন ছিল উত্তম, তেমনি অধম। সাহিত্যের ইতিহাসেও রুশোর জীবন অনন্য, অনতিক্রমনীয়। কেবল তাই নয় স্বপ্নময়তার রূপকথার এমন অবিশ্বাস্য ব্যক্তি ছিলেন যে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব সমূহের মধ্যে গণতন্ত্র থেকে সর্বস্বতন্ত্র : সর্বতত্ত্বেরই কিছু না কিছু ঋণ রয়েছে এই জ্যা জ্যাক রুশোর কাছে।
Leave a Reply