৯. কর্নেলের কথা শুনে

কর্নেলের কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম। বলেন কী! ইরাকের গোপন রাসায়নিক অস্ত্রকারখানার ম্যাপ চুরি করে এনেছিল ইন্দ্রজিৎ?

কর্নেল বললেন–সাবধান জয়ন্ত! অ্যাকসিডেন্ট করে ফেলো না। মাথা ঠাণ্ডা রাখো।

–ঠাণ্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করছি, আপনি কি সেই ম্যাপ উদ্ধার করে ফেলেছেন?

নাহ্। খুঁজছি।

–কিন্তু আপনি কেমন করে জানলেন শেখসায়েবের মুক্তো আসলে একটা গোপন ম্যাপ?

–অঙ্ক কষে জেনেছি।

বুঝিয়ে বলুন। নৈলে কিন্তু সত্যি অ্যাকসিডেন্ট করে ফেলব। কর্নেল হাসলেন। বাহারিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভাল। সত্যিই সে-দেশের কোনও রত্নব্যবসায়ীর রত্ন চুরি করে কেউ ভারতে পালিয়ে এলে স্বাভাবিকভাবেই মামলাটা উঠত সরকারি পর্যায়ে। শেখসায়েব শাসক পরিবারের লোক। কাজেই তিনি নালিশ তুললে ভারত সরকার সি বি আইকে লড়িয়ে দিতেন। এটাই স্বাভাবিক পদ্ধতি। কিন্তু তা না করে তিনি গোপনে প্রসাদজির সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তারপর যেই সন্দেহ হল প্রসাদজি তার গোপন সত্য যেভাবে হোক টের পেয়েছেন, অমনি তিনি প্রসাদজির শত্রু হরনাথের শরণাপন্ন হলেন। শেখসায়েব প্রাইভেট আই অর্থাৎ বেসরকারি গোয়েন্দার সাহায্য চেয়েছিলেন। হরনাথ তাকে আমার কাছে নিয়ে এলেন। তখনই আমার খটকা লেগেছিল, শেখসায়েব এই অস্বাভাবিক পদ্ধতি কেন বেছে নিয়েছেন? এটা হল প্রথম পয়েন্ট। এবার দ্বিতীয় পয়েন্ট ইন্দ্রজিতের অদৃশ্য কালিতে লেখা চিঠি। এই হল আমার অঙ্ক।

–শেখসায়েব ম্যাপটা তাদের মিত্র মার্কিনজোটের হাতে তুলে দেননি কেন?

–তুমি সাংবাদিক হয়েও বুঝতে পারছ না অসুবিধাটা কোথায় ছিল? তোমার মনে পড়ছে না ইরাক আচমকা কুয়েত দখল করেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে এলাকার খুদে আরব রাষ্ট্র থেকে ধনী আরবরা দলেদলে ইউরোপ-আমেরিকায় পালাতে শুরু করেছিলেন?

–হ্যাঁ। পালানোর প্রচণ্ড হিড়িক পড়েছিল বটে।

–শেখসায়েব রাতারাতি ফ্রান্সে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমাকে উনি বলেছেন, মার্কিনজোটের হাতে ইরাক পরাজিত হওয়ার পর দেশে ফেরেন। তারপর নাকি আবিষ্কার করেন, ওঁর তথাকথিত দশ লক্ষ ডলার দামের মুক্তো নেই।

কিন্তু কর্নেল, একটা ম্যাপ সঙ্গে নিয়ে পালানোর মতো সময় কি পাননি। শেখসায়েব?

–শেখসায়েবের একটা কথা আমার মনে আছে। মুক্তোগুলো নাকি সেদিনই এক সায়েব খদ্দেরের কিনতে আসার কথা ছিল। তাই ওগুলো দোকানেই ছিল। হঠাৎ গুজব রটে যায়, ইরাকি প্লেন মানামা আক্রমণ করতে আসছে। মানামার মানুষজন পালাতে শুরু করে। দৃশ্যটা তুমি কল্পনা করতে পারো। যুদ্ধের বিভীষিকার মুখোমুখি অনেকেরই মাথার ঠিক থাকে না। আমি যৌবনে সৈমিক ছিলাম। দেখেছি, যুদ্ধের সময় বহু সৈনিকও আতঙ্কে উন্মাদের মতো আচরণ করে। কাজেই শেখসায়েব ম্যাপের কথা ভুলে প্রাণ নিয়ে পালাতে ব্যস্ত হবেন, এটা অস্বাভাবিক নয়।

–তা হলে বোঝা যাচ্ছে ইন্দ্রজিৎ সেই সুযোগে ম্যাপটা চুরি করেছিল।

কর্নেল হঠাৎ বললেন–চন্দ্র জুয়েলার্স হয়ে চলো। খোঁজ নেওয়া দরকার, কুঞ্জবাবু কোনও খবর দিয়েছেন কি না।

কিছুক্ষণ পর চন্দ্র জুয়েলার্সের দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করালাম। নিচের তলায় শোরুম এবং দোকান। ওপর তলায় অফিস। কর্নেল আমাকে অপেক্ষা করতে বলে দোকানে ঢুকলেন। তারপর দেখলাম এক ভদ্রলোক ওঁকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে অদৃশ্য হলেন। ফুটপাতে দুজন শক্তসমর্থ গড়নের লোক দাঁড়িয়ে খৈনি খাচ্ছিল। দেখেই বুঝলাম সাদা পোশাকের পুলিশ গার্ড দিচ্ছে। তারা আমার গাড়ির দিকে সন্দেহাকুল দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ পর কর্নেল বেরিয়ে এলেন। গাড়িতে উঠে বললেনকুঞ্জবাবু নিরাপদে চোরডিহা পৌঁছেছেন। ট্রাঙ্ককল করেছিলেন কিছুক্ষণ আগে। কবে ফিরবেন ঠিক নেই।

–হালদার মশাইয়ের কোনও খবর দেননি কুঞ্জবাবু?

 কর্নেল গম্ভীর মুখে বললেন–না, আমার ভয় হচ্ছে, হালদারমশাই এবারও কোনও বিভ্রাট বাধিয়ে বিপদে পড়েছেন কি না। বড় হঠকারী স্বভাবের মানুষ।

–কুঞ্জবাবু বলেননি ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না?

বলেছেন দেখা হয়নি। সে জন্যই চিন্তা হচ্ছে।

কর্নেলের আপার্টমেন্টে ফিরে দেখি ডঃ সুন্দরম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। মুখে প্রগাঢ় উদ্বেগের ছাপ। বললেন–অসময়ে আবার আপনাকে বিব্রত করায় দুঃখিত কর্নেল সরকার। কিন্তু আমাকে ছুটে আসতেই হল।

কর্নেল বললেন কী হয়েছে ডঃ সুন্দরম?

–অফিসে ফিরে শুনলাম বনানী হঠাৎ ছুটি নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু সেজন্য আমার ছুটে আসার কারণ ছিল না। প্রসাদজি আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, তার প্রাইভেট সেক্রেটারি যোগীন্দ্র শর্মাকে পুলিশ খুঁজতে এসেছিল। শর্মা নাকি গতকাল বোম্বে গেছেন। কেন পুলিশ তাকে খুঁজছে প্রসাদজি বুঝতে পারছেন না। তাই জিজ্ঞেস করলেন আমি এ বিষয়ে কিছু জানি কি না।

–আপনি কী বললেন?

–আমি বললাম, পুলিশ শর্মাজিকে কেন খুঁজছে আমি জানি না। তখন প্রসাদজি আমাকে চার্জ করলেন, আমি ওই পুলিশকে তার পিছনে লাগিয়েছি। কি না? ওঁকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, শর্মাজির সঙ্গে সমার কোনও শত্রুতা থাকার কারণ নেই। কিন্তু ওঁর সন্দেহ ঘোচাতে পারলাম না উনি বললেন, শর্মাজি না ফেরা পর্যন্ত আমি যেন ডেটা রিসার্চ সেকশনে না ঢুকি।

তারপর?

–আমাকে অফিস থেকে চলে যেতে বললেন। শর্মাজি ফিরে আসার পর আমাকে দরকার হলে ডেকে পাঠাবেন। খুবই অপমানজনক ব্যাপার। ডি আর সেকশনে আমার ব্রিফকেস ছিল। আমার সঙ্গে গিয়ে শুধু ব্রিফকেসটা নিতে দিলেন। ড্রয়ারে ব্যক্তিগত কাগজপত্র ছিল। সেগুলো কিছুই নিতে দিলেন না। ডঃ সুন্দরম রুমালে মুখ মুছে ফের বললেন ইন্দ্রজিতের কোড নাম্বারটা কম্পিউটারে অ্যানালিসিসের সুযোগ পেলাম না। এটাই আমার প্রচণ্ড ক্ষতি। সেই এজেন্টের নাম-ঠিকানা অজানা থেকে গেল। আমার পাওনাকড়ির সুরাহা কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না।

কর্নেল চোখ বুজে দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে কথা শুনছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম–প্রসাদজির এজেন্সির কম্পিউটারে যে এই কোড নাম্বারের ডেটা ফিড করানো আছে তা কীভাবে বুঝলেন ডঃ সুন্দরম?

ডঃ সুন্দরম বিষণ্ণমুখে বললেন–এজেন্সির একটা মাদার কম্পিউটার আছে। তার সাহায্যে যে কোনও কোড নাম্বারের ডেটা অ্যানালিসিস করা যায়। তবে বলা দরকার, মহাবীর ট্রেডিং এজেন্সির সঙ্গে যে সব এজেন্সির সম্পর্ক আছে, শুধু তাদের সম্পর্কেই তথ্য পাওয়া যায়। ইন্দ্রজিৎ জানত, সে যে কোড নাম্বার দিচ্ছে, প্রসাদজির এজেন্সির মাদার কম্পিউটার থেকে তার ডেটা পাওয়া যাবে। তা না হলে এই কোড নাম্বার সে দেবে কেন? যাই হোক, আমি কর্নেল সরকারকে জানাতে এসেছি, কলকাতার সেই এজেন্সির নামঠিকানা আপনার কথামতো আপাতত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কর্নেল চোখ খুলে ঘড়ি দেখলেন। তারপর বললেন–নামঠিকানা আমার আর দরকার হবে না ডঃ সুন্দরম।

ডঃ সুন্দরম একটু ইতস্তত করে বললেন–আপনি কি কোনও সূত্রে তার নামঠিকানা জানতে পেরেছেন?

নাহ্। শুধু এটুকু বলতে পারি, ওটা আমার আর দরকার নেই।

 ডঃ সুন্দরম উঠে দাঁড়িয়ে বললেন-বনানী আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু সে কেন হঠাৎ অফিস থেকে ছুটি নিতে গেল বুঝতে পারছি না। আচ্ছা কর্নেল সরকার, আপনার সঙ্গে আজ বনানী যোগাযোগ করেনি?

কর্নেল দাড়ি নেড়ে ফের বললেন-নাহ্।

উদ্বিগ্নমুখে ডঃ সুন্দরম বেরিয়ে গেলেন। বললাম কর্নেল। আপনি ডঃ সুন্দরমের সহযোগিতা দরকার বলেছিলেন। কিন্তু এখন মনে হল, বেচারাকে আপনি পাত্তা দিতে চান না।

–আমার আর ওঁর সহযোগিতার দরকার হবে না। বলে কর্নেল হাঁকলেন– ষষ্ঠী! খিদে পেয়েছে।…খাওয়ার পর কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে কর্নেল বললেন– চলো, বেরুনো যাক।

জিজ্ঞেস করলাম–আবার কোথায় বেরুবেন?

–মিমিদের বাড়ি। তবে তোমার গাড়িতে নয়। ট্যাক্সি করে যাব।

–গাড়ি থাকতে ট্যাক্সি করে কেন?

–গৌর অফিস থেকে ফিরে তোমার গাড়ি দেখে জানুক, আমি মিমিদের বাড়িতে আছি, এটা আমি চাই না। তাছাড়া সে অফিস থেকে ফেরার আগেই মিমিদের বাড়ি আমার যাওয়া দরকার। সওয়া তিনটে বাজে। উঠে পড়ো।

ট্যাক্সি করে মিমিদের বাড়ি পৌঁছুতে দেরি হল না। কর্নেল মধুকে ডাকার আগেই সে দৌড়ে এসে গেটের তালা খুলে দিল। তারপর চাপা গলায় বলল– কর্তামশাইয়ের কাছে দুপুরবেলা এক সায়েব এসেছিলেন। কী সব কথাবার্তা হল বুঝতে পারিনি। কিন্তু সায়েব চলে যাওয়ার পর কর্তামশাই মিমিদিকে খুব বকাবকি করছিলেন।

কর্নেল বললেন–আর কোনও খবর আছে?

মধু চাপা গলায় বলল–আপনি তো জানেন কাল সন্ধ্যাবেলায় আবার চোর ঢুকেছিল। বস্তির একটা লোক আজ আমাকে চুপিচুপি বলেছে, চোর পালানোর সময় তাকে সে চিনতে পেরেছে। পাড়ারই একটা ছেলে স্যার! আমার খুব অবাক লাগছে। মিমিদির সঙ্গে তার ভাব আছে। তবে কর্তামশাইয়ের ভয়ে সে বাড়ি ঢুকতে পারে না এই যা।

–তুমি গৌরের কথা বলছ কি?

মধু অবাক হল।–আপনি চেনেন ওকে? পাড়ার নামকরা গুণ্ডা গৌর। ভাল বংশের ছেলে। লেখাপড়াও জানে। কিন্তু পাজির পাঝাড়া। আমার মনে হচ্ছে, কর্তামশাইয়ের ভয়ে চুপিচুপি সন্ধ্যাবেলা গৌর বাড়ি ঢোকে। মিমিদির সঙ্গে বাগানে ঝোপঝাড়ের আড়ালে বসে ভাব-ভালবাসার কথা বলতে আসে। অ্যাদ্দিন আমার চোখে পড়েনি। ইন্দ্রদাদাবাবু খুন হওয়ার পর নজর রাখছি বলেই চোখে পড়েছে।

কর্নেল বললেন–তুমি মিমিকে কি বলেছ যে, চোরকে তুমি চিনতে পেরেছ?

মধু ভয় পাওয়া মুখে বলল–ওরে বাবা! মিমিদি গৌরকে বলে দিলে সে আমার পেছনে লাগবে। গৌর ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে স্যার!

মধু আমাদের দোতলায় নিয়ে গেল। মিমিকে দেখতে পেলাম না কোথাও। পরমেশ কর্নেলকে দেখে গম্ভীর মুখে বললেন–আপনার কথাই ভাবছিলাম। আপনার আসার কথা সন্ধ্যা ছটায়। আগে এসে ভালই করেছেন। বসুন, সব বলছি।

আমরা বসলাম। কর্নেল বললেন–মধুর কাছে শুনলাম একজন সায়েব এসেছিলেন! কী ব্যাপার?

পরমেশ উত্তেজিত ভাবে বললেন–ভারি অদ্ভুত ব্যাপার! সায়েবের নাম রবার্ট স্টিলার। সে এসে বলল, ইন্দ্রজিতের সঙ্গে গালফ এরিয়ায় তার খুব চেনাজানা ছিল। যুদ্ধের হিড়িকে ইন্দ্রজিৎ পালিয়ে আসার আগে স্টিলারকে নাকি বলেছিল, মার্চের শেষাশেষি যেভাবে হোক, সে কলকাতায় ফিরবে। এই বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিল। স্টিলার যদি কলকাতা যায়, তার সঙ্গে এই ঠিকানায় যেন যোগাযোগ করে। তাই সে এসেছে। তখন আমি ইন্দ্রজিতের খুন হওয়ার কথা বললাম। সরল বিশ্বাসেই বললাম। শোনার পর লোকটা প্রথমে খুব পস্তাল। তারপর হঠাৎ চাপা গলায় বলল, ইন্দ্রজিৎ গালফ থেকে প্রচুর জুয়েলস পাচার করে আনবে বলেছিল। সেগুলো পুলিশের হাতে পড়েছে কি না। যদি না পড়ে থাকে, সেগুলো কিনবে। আমি চটে গিয়েছিলাম কথাটা শুনে। সোজা বলে দিলাম, আমি এ সব খবর রাখি না। আপনি আসতে পারেন। ব্যাটাচ্ছেলে উঠতে চায় না। আমাকে টাকাকড়ির লোভ দেখাতে শুরু করল। তখন আমি ওকে ধমক দিয়ে বললাম, এখনই চলে না গেলে পুলিশে খবর দেব। সেইসময় মিমি ফোপরদালালি করে বলে উঠল, ইন্দ্রজিতের জুয়েলস এই বাড়িতেই কোথাও লুকানো আছে। খুঁজে বের করে সায়েবকে বেচে দেওয়া উচিত। নইলে আবার কী বিপদ হতে পারে।

পরমেশের ফর্সামুখ টকটকে লাল হয়ে উঠেছিল। কর্নেল একটু হেসে বললেন–কথাটা মিমি বাংলায় না ইংরেজিতে বলেছিল?

বাংলায়। সাহেব হয়তো বুঝতে পারেনি। তবে মুখ দেখে মনে হল সন্দেহ জেগেছে। সে মিমির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করল। আমি ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম। সায়েব নির্লজ্জের মতো হাসতে হাসতে চলে গেল।

কর্নেল জিজ্ঞেস করলেন-সায়েব কোথায় উঠেছে বলেনি?

পরমেশ মাথা নাড়লেন। আমি জিজ্ঞেস করিনি কিছু। লোকটাকে দেখেই আমার অপছন্দ হয়েছিল। তাছাড়া ইন্দ্রজিতের সঙ্গে যার চেনাজানা, সে কেমন মানুষ তা বুঝতে দেরি হয় না।

মিমি কোথায়?

–কে জানে! রাগ করে কোথায় বসে আছে নির্বোধ মেয়ে!

 –ওকে ডাকুন!

পরমেশ গলা চড়িয়ে ডাকলেন।–মিমি! এখানে আয়। কর্নেল সায়েব এসেছেন।

মিমি বারান্দায় ছিল। দরজায় এসে দাঁড়াল। ম্রিয়মান চেহারা। কর্নেল বললেন–ভেতরে এস মিমি! তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে।

মিমি ঘরে ঢুকে অভ্যস্ত ভঙ্গিতে খাটের বাজু ধরে দাঁড়াল। তারপর আস্তে বলল-জ্যাঠামশাই আমাকে ভুল বুঝছেন। কিন্তু আমি কিছু ভুল বলিনি। আমার ধারণা, চোরাই জুয়েলস ইন্দ্রদা এ বাড়িতেই লুকিয়ে রেখেছিল। এখনও তা কোথাও লুকোনো আছে।….

মিমির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টে তাকিয়ে কর্নেল বললেন–তোমার কেন মনে হচ্ছে চোরাই মুক্তো এখনও এ বাড়িতে কোথাও লুকোনো আছে?

মিমি আস্তে বলল–গৌরদা আমাকে বলেছে।

পরমেশ রুষ্ট মুখে বললেন–সায়েব চলে যাওয়ার পর মধুকে নিয়ে তোকে তন্নতন্ন করে খুঁজতে বললাম। কৈ? কোথায় চোরাই মুক্তো? পেলি খুঁজে? ওই বখাটে ছেলেটার কথা বিশ্বাস করি না।

মিমি চুপ করে থাকল।

কর্নেল বললেন মিমি! গৌর কবে তোমাকে এ কথা বলেছে?

–আজ সকালে।

 কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন–আচ্ছা মিমি! তুমি কি জানো সন্ধ্যাবেলায় এ বাড়িতে যে চোর ঢোকে, সে আর কেউ নয়–গৌর? পরমেশ চমকে উঠলেন–বলেন কী!

মিমি কেমন চোখে তাকিয়ে রইল। আমার মনে হল ওর দৃষ্টিটা বড় রহস্যময়।

কর্নেল বললেন–হ্যাঁ। গৌর পর-পর দুদিন সন্ধ্যাবেলায় এ বাড়িতে ঢুকেছিল।

পরমেশ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলেলেন-বুঝেছি। ইন্দ্রের চোরাই মাল হাতানোর জন্যই ঢুকেছিল হারামজাদা। ওসব ছেলেছোকরাকে আমি বাড়িতে ঢুকতে দিই না। দেখা যাচ্ছে, আমি ঠিক ডিসিশন নিয়েছিলাম।

–পরমেশবাবু! চোরাই মুক্তোর খোঁজে সন্ধ্যাবেলায় গৌরের চুপিচুপি এ বাড়িতে ঢোকাটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সত্যিই তেমন উদ্দেশ্য থাকলে সে গভীর রাতে হানা দিত। কর্নেল চুরুট ধরিয়ে একটু হাসলেন। আসলে আমাকে ধোঁকায় ফেলার জন্য গৌর কারও হুকুম তামিল করেছে। সকালে মিমিকে যে এ বাড়িতে এখনও চোরাই মুক্তো থাকার কথা বলেছে, তাও একটা চালাকি। গৌর বা তার মালিক জানে মিমি কথাটা আপনাকে বলবে। আপনি আমাকে বলবেন। মিমিও বলবে। এতে আমি বিভ্রান্ত হব। কিন্তু না। আমাকে বিভ্রান্ত করা অত সহজ নয়। অন্তত বরাবর বিভ্রান্ত রাখা সহজ নয়।

আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। বললাম–তাহলে এ বাড়িতে। জিনিসটা লুকোনো নেই বলতে চান?

নাহ্।

–কিন্তু আপনি বরাবর বলে আসছেন জিনিসটা এখনও এ বাড়িতে কোথাও আছে?

–স্বীকার করছি আমি সত্যি বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। এ বাড়িতে আজ ঢোকার সময় বিভ্রান্তি ঘুচে গেছে।

–মধুর কথা শুনে নিশ্চয়?

কর্নেল চোখ কটমটিয়ে আমার দিকে তাকালেন। পরমেশ জিজ্ঞেস করলেন মধুর কথায় মানে? কী বলেছে মধু?

কর্নেল হাসলেন।–বস্তির কে নাকি ওকে বলেছে গৌরকে পালাতে দেখেছিল। ছেড়ে দিন। বলে উনি মিমির দিকে তাকালেন। মিমি, তোমার কাছে যা জানতে এসেছি, এবার বলি। আশা করি সঠিক জবাব দেবে।

মিমিকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল। সে মুখ নামিয়ে বলল–বলুন।

কর্নেল পকেট থেকে একটা ভাঁজকরা কাগজ বের করলেন। দেখলাম আমার কুড়িয়ে পাওয়া সেই চিঠিটা। সেটা দেখিয়ে বললেন–তুমিই এটা সেদিন আমার চোখে পড়ার মতো জায়গায় ফেলে রেখেছিলে। তাই না?

মিক্তি আস্তে মাথাটা দোলাল। পরমেশ বললেন কী ওটা?

 কর্নেল ওঁকে চিঠিটা দেখতে দিয়ে বললেন মিমি! এটা কোথায় পেয়েছিলে?

মিমি বলল–ইন্দ্রদার বালিশের তলায়।

–বালিশ তুলেছিলে কেন?

 –এমনি।

নাহ্। তখন বালিশ তুলে দেখার মতো তোমার মনের অবস্থা ছিল না। কেউ কি তোমাকে বলেছিল কিছু খুঁজে দেখতে? বলো মিমি! এটা আমার জানা খুব দরকার।

মিমি একটু ইতস্তত করে বলল–গৌরদা বলেছিল ইন্দ্রদার কাছে একটা বেনামি চিঠি আছে। সেটা খুঁজে বের করে ওকে যেন দিই। কিন্তু আমি ওকে দিইনি। জ্যাঠামশাইয়ের কাছে আপনার পরিচয় পাওয়ার পর ওটা যাতে আপনার হাতে যায়–

বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন–তুমি সরাসরি আমার হাতে দিতে পারতে।

 মিমি বিব্রতভাবে বলল–আমি ভয়ে আপনাকে দিতে পারিনি।

–কিসের ভয়?

–তখনও আমি আপনাকে ভালো করে চিনতাম না। ভেবেছিলাম আপনি পুলিশকে বলে আমাকে জড়াবেন। গৌরদার কথাটা পুলিশকে বলতে আমি বাধ্য হব। গৌরদা রেগে যাবে। এ সব কারণে ওভাবে ঝোপের নীচে রেখেছিলাম।

–আমার সঙ্গে বাগানে যাওয়ার সময়?

–হ্যাঁ, খিড়কির দিকে যাওয়ার পথের ধারে চুপিচুপি ফেলে দিয়েছিলাম।

পরমেশ চিঠিটা কর্নেলকে ফেরত দিয়ে বললেন–ভাইটাল কু। খুনির হাতের লেখা। তার চেয়ে বড় কথা, হারামজাদা গৌরও এর সঙ্গে জড়িত। ওকে এখনই পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিন কর্নেলসায়েব!

কর্নেল ঘড়ি দেখে বললেন–পুলিস ওর দিকে নজর রেখেছে। আমি উঠি পরমেশবাবু।

পরমেশ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন কফি না খেয়ে চলে যাবেন কী! মিমি! কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন না। একটু তাড়া আছে। একটা কথা। রবার্ট স্টিলার তার নেমকার্ড দিয়ে যাননি?

পরমেশ গম্ভীর মুখে বললেন–দিয়েছিল। আমি ফেলে দিয়েছিলাম। মিমি! খুঁজে দ্যাখ তো এখানেই কোথাও পড়ে আছে।

মিমি কার্ডটা অনেক খুঁজে কুড়িয়ে আনল। একটু তফাতে আলমারির তলায় পড়ে ছিল সেটা। কর্নেল কার্ডটা নিয়ে বেরিয়ে এলেন। মিমি ঘরেই দাঁড়িয়ে রইল। ওর মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। গৌর ওর প্রেমিক। সেই প্রেমিকের প্রতি এবার সম্ভবত ভয় জেগেছে।

নীচে হলঘরের দরজায় মধু দাঁড়িয়ে ছিল। কর্নেল তাকে বললেন–মধু! আমরা খিড়কির দরজা দিয়ে বেরুব। এস। ওদিকটা খুলে দেবে।

মধু অবাক হয়ে বলল–ওদিকে নোংরা আছে স্যার!

–তা হোক। এস।

 খিড়কির দরজার বাইরে আবর্জনার গাদা। তারপর বস্তি এলাকা। আঁকাবাঁকা সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে মোটামুটি চওড়া রাস্তায় পৌঁছলাম। ততক্ষণে রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। এন্টালি মার্কেটের সামনে কর্নেল বললেন চলো ট্রামেই ফেরা যাক। বাসে চাপা এখন অসম্ভব। ট্যাক্সিও পাওয়ার আশা কম।

কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরলে ষষ্ঠীচরণ বলল–এক্ষুণি একটা ফোং এয়েছিল বাবামশাই! কী যেন নাম বললেন। পেটে আসছে, মুখে আসছে না। তবে আবার ফোং করবেন বলেছেন।

ষষ্ঠী ফোনকে ফোং বলে। কর্নেল কপট হুঙ্কার দিয়ে বললেন কফি!

সে ভেতরে চলে গেল। কর্নেল তার ইজিচেয়ারে বসে চোখ বুজে দাড়িতে হাত বুলোতে থাকলেন। বললাম–রবার্ট স্টিলার কোথায় উঠেছেন জেনে আসা উচিত ছিল, কর্নেল!

কর্নেল বললেন কার্ডে লিখে দিয়ে গেছেন। প্রসাদজির চেনাজানা হওয়াই স্বাভাবিক। তা ছাড়া হোটেল কন্টিনেন্টালেই উঠেছেন। কফি খেয়ে ব্রেন চাঙ্গা করা যাক। তারপর ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করতে যাব।

কথাটা শুনে অস্বস্তি হচ্ছিল। রবার্ট স্টিলার নিশ্চয় ইউরোপের কোনও দেশের গুপ্তচর। গুপ্তচরেরা খুব সাংঘাতিক লোক হয়।

তার সঙ্গে এভাবে সন্ধ্যায় দেখা করতে যাওয়া কি উচিত হচ্ছে কর্নেলের?

প্রশ্নটা তুলতে যাচ্ছি, ফোন বাজল। কর্নেল ফোন তুলে সাড়া দিয়ে বললেন–হ্যাঁ বলুন যতীনবাবু।…একটু বেরিয়েছিলাম।…তাই বুঝি?… হ্যাঁ। ভাল করেছেন। আচ্ছা, রাখছি। সাবধানে থাকবেন।

 জিজ্ঞেস করলাম–যতীনবাবুর ফোন?

–হ্যাঁ, বনানীর অফিসের এক ভদ্রলোক দেখা করতে গিয়েছিলেন। যতীনবাবু দরজার ফাঁক দিয়ে কথা বলেছেন। ভেতরে ঢোকাননি।

নাম বলেননি ভদ্রলোক?

 কর্নেল হাসলেন। নাম না বললেও অনুমান করছি ডঃ সুন্দরম বনানীর খোঁজে গিয়েছিলেন।

বনানী ফরাক্কা গেছে বলেছেন নাকি যতীনবাবু?

 –হ্যাঁ। ডঃ সুন্দরম ফরাক্কায় ছুটে যেতেও পারেন। যা না। ক্ষতি কী?

বনানীকে ওঁর খুব দরকার বলছিলেন তখন। কী দরকার আমার মাথায় আসছে না।

ষষ্ঠীচরণ কফি আনল। কর্নেল চুপচাপ কফিতে মন দিলেন। কফি শেষ করে চুরুট ধরিয়ে উনি উঠে দাঁড়ালেন।এবার তোমার গাড়িতে যাব ডার্লিং! বলে একটু হাসলেন।–তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তির কারণ নেই জয়ন্ত। হোটেল কন্টিনেন্টালে পুলিশ নজর রেখেছে গত দুদিন থেকে। উঠে পড়ো!…

হোটেল কন্টিনেন্টালের উল্টোদিকে একটা পার্ক। পার্কের শেষপ্রান্তে গাড়ি দাঁড় করাতে বললেন কর্নেল। কিন্তু গাড়ি থেকে নামলেন না। হোটেলের সামনে প্রশস্ত লন উজ্জ্বল আলোয় ঝকমক করছে। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লনটা। কর্নেল বাইনোকুলারে সেদিকটা দেখে নিয়ে বললেন–গাড়ি এখানে লক করে রাখো। আমরা হোটেলের সামনে ফুটপাতে ওই গাছটার ছায়ায় দাঁড়াব।

বেরিয়ে গাড়ি লক করে বললাম–রবার্ট স্টিলারের সঙ্গে দেখা করবেন না?

–এস তো!

 ঝাঁকড়া গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম দুজনে। কর্নেলের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিলাম না। উনি লনের দিকে তাকিয়ে আছেন। মাঝেমাঝে প্রাইভেটকার বা ট্যাক্সি চেপে সায়েবসুবো এবং দিশিবিলিতি মেমসায়েব কিংবা শাড়িপরা মহিলারা যাতায়াত করছেন কিছুক্ষণ পরে একটা সাদা মারুতি হোটেলের লনে ঢুকল। তারপর সেই গাড়ি থেকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা বেরুলেন। তারা ডাইনে ঘুরে হোটেলের সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই ভীষণ চমকে উঠলাম।–এ কী কর্নেল!

কর্নেল আস্তে বললেন–হ্যাঁ। বনানীকে আমিও দেখার আশা করিনি। অবশ্য আমার সন্দেহ ছিল, ও সত্যিই আমার কথামতো ফরাক্কা যাবে কি না।

–ওর সঙ্গের দাড়িওলা লোকটি কে?

কর্নেল দ্রুত বাইনোকুলার তুলে চোখে রাখলেন। কিন্তু ততক্ষণে বনানী ও তার সঙ্গী ভেতরে ঢুকে গেছে। বাইনোকুলার নামিয়ে কর্নেল ব্যস্তভাবে বললেন–তুমি অপেক্ষা করো। আমি দেখি এখানে কোনও দোকানে টেলিফোন করা যায় কি না। ওই ওষুধের দোকানটায় নিশ্চয় টেলিফোন আছে। লক্ষ্য রেখো চেনা কেউ ঢুকছে বা বেরুচ্ছে কি না।

কর্নেল হন্তদন্ত রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকের ওষুধের দোকানে গিয়ে ঢুকলেন।

চেনা কোনও লোককে আর হোটেলের লনে দেখতে পেলাম না। মিনিট কয়েক পরে কর্নেল ফিরে এসে বললেন কুইক জয়ন্ত! এখান থেকে সোজা শ্যামপুকুরে যতীনবাবুর বাড়ি যাব।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কাকে ফোন করলেন?

–ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়িকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। পেলাম না। পরে কোথাও থেকে চেষ্টা করব।

–কী ব্যাপার?

ব্যাপার পরে। এখন যতীনবাবুর বাড়ি। সোজা রাস্তায় জ্যামে পড়বে। বরং ডাইনের ওই গলি রাস্তা দিয়ে চলো। তারপর আমি শর্টকাট বাতলাব। কলকাতার নাড়িনক্ষত্র আমার জানা।

যতীনবাবুর বাড়ি পৌঁছতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে গেল। গাড়ি আগের জায়গায় পার্ক করে রেখে বেরুলাম। কর্নেল ব্যস্তভাবে হাঁটছিলেন। দোতলায় যতীনবাবুর ফ্ল্যাটে বোতাম টেপার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দরজা ফাঁক হল এবং যতীনবাবু আমাদের দেখে তখনকার মতো চমকে উঠলেন।

কর্নেল বললেন–আপনি আমাকে ফোন করার পর বনানী এসেছিল? যতীনবাবু দরজা পুরো খুলে বললেন–না তো। আসুন!

ভেতরে ঢুকে কর্নেল বললেন–আপনার এবং আপনার মেয়ের মঙ্গলের জন্য একটা অনুরোধ করছি।

বলুন!

বনানীর ঘরটা আমি একবার দেখতে চাই। এখন কোনও প্রশ্ন করবেন না প্লিজ! হাতে সময় নেই। যতীনবাবু উদ্বিগ্নমুখে বললেন–আসুন।

বাঁদিকে একটা ঘরের দরজার পর্দা তুলে যতীনবাবু বললেন–এ কী ব্যাপার? তালা আঁটা কেন?

কর্নেল হাসলেন।–আপনি মেয়েকে সত্যি ভয় পান এবং এড়িয়ে চলেন। তাই হয় তো লক্ষ্য করেননি। এ ঘরে গত সোমবার মানে ইন্দ্রজিৎ খুন হওয়ার পরদিন থেকে তালা আঁটা থাকে। আজ দুপুরে ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা সরে-সরে যাচ্ছিল। তখন আমার তালাটা চোখে পড়ছিল। যাই হোক, আমার কাছে মাস্টার কি আছে। তালা খুলতে অসুবিধে হবে না। কিন্তু তার আগে বলুন, এ ঘরের দেয়ালে মরুভূমির কোনও ছবি আছে কি?

–আছে দেখেছি। ইন্দ্রজিৎ দিয়ে গিয়েছিল।

কর্নেল পকেট থেকে একটা চাবির গোছা বের করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তালাটা খুলে ফেললেন। তারপর ঘরে ঢুকে গেলেন। যতীনবাবুও ঢুকলেন। আমি দরজার ফাঁকে উঁকি দিলাম। দেখলাম, কর্নেল দেয়াল থেকে একটা মাঝারি সাইজের ফ্রেমে বাঁধানো মরুভূমির ছবি খুলে নিলেন। তারপর বললেন–এটা নিয়ে যাচ্ছি। বনানী এসে জিজ্ঞেস করলে বলবেন, আমি নিয়ে গেছি।

যতীনবাবু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কর্নেল ছবিটা বগলদাবা করে বেরুলেন। রাস্তায় নেমে বললেন–কুইক জয়ন্ত! যে-কোনও মুহূর্তে ওরা এসে পড়তে পারে।…