৩. বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে গিয়েছিল

আমার বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে গিয়েছিল। জুয়েলার হরনাথ চন্দ্রের আচরণ তো ভারি অদ্ভুত! ইন্দ্রজিৎ একসময় ওঁরে অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিল এবং হত মাসে উনি পরমেশের কাছে খোঁজ নিতে এসেছিলেন ইন্দ্রজিৎ কলকাতা ফিরেছে কি না। অথচ এ সব কথা বেমালুম চেপে গেলেন কর্নেলের কাছে?

দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকায় ইন্দ্রজিতের ছবি দেখে তাকে শংকর হাজরা বলে শনাক্ত করা একটা অদ্ভুত মিথ্যা। আরও রহস্যময় শেখ জুবাইর আল সাবাকে হরনাথের সত্যগোপন।

এদিকে ইন্দ্রজিতও আমাকে মিথ্যা বলেছিল। তার জ্যাঠামশাইয়ের ছেলেমেয়ে আছে এবং তারা নাকি বাইরে থাকে! অথচ তার জ্যাঠামশাই চিরকুমার।

ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ি কর্নেলের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন নিজের দফতরে। কর্নেলের সঙ্গে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে উত্তেজিতভাবে বললাম-এখনই পাকড়াও করা দরকার। শেখ সাহেবকেও ওঁর মুখোশ ফাস করে দিন।

কর্নেল চোখ বুজে চুরুট টানছিলেন। শুধু বললেন–হুঁ।

–হুঁ কী বলছেন? লোকটার কী স্পর্ধা, আপনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে এসেছিল!

খাপ্পা হয়ে বললাম–কী খালি হুঁ হুঁ করছেন? হরনাথ চন্দ্র শেখসায়েবের সঙ্গে প্রতারণা করছে বুঝতে পারছেন না?

কর্নেল হাসলেন। তা পারছি ডার্লিং। তবে হরনাথ চন্দ্র আমার সুপরিচিত। সেটাই যত সমস্যা।

–হরনাথই ইন্দ্রজিৎকে লোক দিয়ে খুন করিয়েছে। ইন্দ্রজিতের ঘর থেকে মুক্তোগুলো হতিয়েছে।

–লে লুলু!

অবাক হয়ে বললাম–তার মানে?

-তুমি ত্রৈলোক্যনাথের উপন্যাস পড়নি জয়ন্ত? এক আমীর সন্ধ্যাবেলা তার বউয়ের উদ্দেশে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, লে লুলু! অমনি লুলু নামে একটা ভূত আমীরের বউ নিয়ে ভোগে গিয়েছিল। আমাদের এই শেখসায়েবও একজন আমীর লোক। তাঁর মুখে লুল্লু না হলেও লুলু শুনেছি। লুলু মানে অবশ্য মুক্তো। এক্ষেত্রেও যেন একটা ভূতুড়ে রহস্যের আঁচ পাচ্ছি।

কর্নেল নীলাদ্রি সরকার তাঁর বিখ্যাত অট্টহাসি হাসলেন। ষষ্ঠীচরণ যথারীতি পর্দার ফাঁকে মুখ বাড়াল। কর্নেল তার দিকে হঠাৎ চোখ কটমটিয়ে বললেন–জয়ন্তের এবেলা লাঞ্চের নেমন্তন্ন।

আজ্ঞে বাবামশাই! সব রেডি! বলে ষষ্ঠীচরণ অদৃশ্য হল। বললাম–হরনাথ চন্দ্রকে মুখোমুখি জোচ্চোর না বলা পর্যন্ত আপনার লাঞ্চ আমার হজম হবে না বস্।

কর্নেল আস্তে বললেন–অরিজিৎকে বলেছি হরনাথবাবুকে খুঁজে বের করতে।

–খুঁজে বের করার কী আছে? তার দোকান আছে। বাড়ি আছে। শেখসায়েবের হোটেলের ঠিকানাও নিশ্চয় আপনার কাছে আছে। তা ছাড়া আপনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ হালদারমশাইয়ের কাছে ওঁদের পাঠিয়েছেন। হালদারমশাইকে আবার টেলিফোনে–আমার কথা থেমে গেল ডোরবেলের টুং টাং বাজনায়। কর্নেল হাঁকলেন-ষষ্ঠী!

ষষ্ঠী যাকে নিয়ে এল, সে সুপর্ণা ওরফে মিমির মতোই আরেক বিষাদপ্রতিমা। কিন্তু মিমির চেয়ে স্মার্ট, ফর্সা এবং রূপসী। বোঝা যাচ্ছিল, সাজগোজ করে প্রসাধিত লাবণ্য নিয়েই সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। হঠাৎ কোনও আকস্মিক ঘটনায় বিচলিত হয়ে এই বৃদ্ধ রহস্যভেদীর কাছে ছুটে এসেছে। এমন তো অনেকেই আসে। নিশ্চয় কোনও অন্য কেস নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে আমাকে অবাক করে ভাঙা গলায় বলে উঠল–মিমি আপনার ঠিকানা দিল কর্নেল সরকার। আমি আপনার সাহায্য চাই।

কর্নেল বললেন বসুন। তারপর আপনার নাম বলুন।

 যুবতী সোফায় আলতোভাবে বসে রুমালে চোখ মুছে বলল–আমার নাম বনানী সেন। শ্যামপুকুর এরিয়ায় থাকি। মিমি আমার সঙ্গে সেন্ট পলসে পড়ত। সেই থেকে ওঁর সঙ্গে চেনাজানা।

বুঝেছি। আপনি কী ব্যাপারে আমার সাহায্য চান।

বনানী আস্তে বলল–আমাকে তুমি বলুন।

 –বেশ। বলো।

–আমি ইন্দ্রের ব্যাপারে আপনার কাছে এসেছি। বনানী কথাটা বলার পর একটু চুপ করে থাকল। তারপর শ্বাস ছেড়ে ফের বলল–আগাগোড়া ব্যাকগ্রাউন্ডটা খুলে বলা দরকার। গতরাতে ইন্দ্র আমাকে মহাজাতিসদনে ম্যাজিক শোতে নিয়ে গিয়েছিল। শো শেষ হওয়ার পর ভিড়ে ওকে হারিয়ে ফেললাম। অনেক খুঁজে রাগ করে বাড়ি ফিরে গেলাম। ভেবেছিলাম সকালে ইন্দ্র রিং করবে কিংবা আমাদের বাড়িতে চলে আসবে। দশটা সাড়ে দশটা অব্দি অপেক্ষা করে ওর কোনও সাড়া পেলাম না। তারপর মিমিকে রিং করলাম। ওর জ্যাঠামশাই বদরাগী লোক। সাড়া দিয়ে বললেন, ইন্দ্র মরেছে। অদ্ভুত মানুষ! মিমিকেও ডেকে দিলেন না। ফোন রেখে দিলেন। কর্নেল ঘড়ি দেখে বললেন, তারপর তুমি চলে এলে মিমিদের বাড়িতে?

বনানী রুমালে চোখ মুছে বলল হ্যাঁ। এসেই শুনলাম।

 –হ্যাঁ। ইন্দ্রের সঙ্গে তোমার এমোশনাল সম্পর্ক ছিল?

–এ মাসেই আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনের কথা ছিল। গালফ থেকেও চিঠি লিখেছিল। গালফ ওয়র শুরু হওয়ার পরে। ও লিখেছিল, যেভাবেই হোক কলকাতা ফিরে যাবে।

-তুমি দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকা পড়ো?

 বনানী অবাক চোখে তাকল কেন?

–পড়ো না?

–না। আমার বাবা রিটায়ার্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার। উনি ইংলিশ পেপার রাখেন বাড়িতে। আমি চোখ বুলোই। খুঁটিয়ে কিছু পড়ি না।

–তুমি কী করো?

–একটা ট্রেডিং এজেন্সিতে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ডেটা রিসার্চ সেকশনে কাজ করি। কম্পিউটার ট্রেনিং নিয়েছিলাম।

–ইন্দ্রজিতের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হয়েছিল?

 –গত বছর মিমিদের বাড়িতে প্রথম আলাপ। তারপর…

বনানী দ্রুত বলল–ইন্দ্র আমাদের অফিসেও যেত। কলকাতা এলে তো যেতই, তা ছাড়া আমাদের কোম্পানির সঙ্গে ওর ট্রেড রিলেশন হয়ে গিয়েছিল। আমিই ওকে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। গালফ এরিয়ায় কোম্পানির কারবার আছে। কর্নেল আবার ঘড়ি দেখে বললেন তুমি আমার কাছে কী সাহায্য চাও?

–ইন্দ্র সুইসাইড করল কেন? এটা আমার কাছে অবাক লাগছে।

–মিমি বলল সুইসাইড করেছে?

-হ্যাঁ। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। ইন্দ্রের আচরণে তেমন কোনও আভাস পাইনি।

–গত রাতে ইন্দ্র ওভাবে ভিড়ে হারিয়ে গেল বলছ। তারপর রাতেই তোমার খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল ওর। কিন্তু নেয়নি। এই আচরণ অস্বাভাবিক নয়?

বনানী কর্নেলের দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পরে বলল হ্যাঁ। আমার এটা ভাবা উচিত ছিল।

–ম্যাজিক শো দেখতে ইন্দ্র কি তোমাকে প্রোপোজ করেছিল?

না। আমিই প্রোপেজ করেছিলাম।

 –তুমি শংকর হাজরা নামে কাকেও চেনো?

 বনানী চমকে উঠল।–শংকর হাজরা? বলে সে একটু ইতস্তত করল। মুখ নামিয়ে নখ খুঁটতে খুঁটতে বলল ফের–ইন্দ্র একদিন বলেছিল, বোম্বে থেকে গাফে যেতে পাসপোর্ট পাচ্ছিল না। তাই অন্যের নামের একটা পাসপোর্ট ম্যানেজ করেছিল। লোকটা তারই মতো দেখতে। শংকর হাজরা নামটা আমার মনে পড়ছে।

ইন্দ্র গালফে কোথায় থাকত?

বাহারিন স্টেটে। থাকত মানামা নামে একটা জায়গায়। স্টেট ক্যাপিট্যাল। ওখানে আমাদের কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ আছে।

–তোমাদের কোম্পানির কলকাতা অফিসের ঠিকানা কী?

 বনানী পার্স থেকে একটা কার্ড বের করে কর্নেলকে দিল। কর্নেল টেবিলে রেখে বললেন।

–তুমি জুয়েলার হরনাথ চন্দ্রকে চেনো?

না তো। কেন?

ইন্দ্রের কাছে কিছু শোননি?

না।

কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন–ইন্দ্র কেন সুইসাইড করল তা জানতে তোমার আগ্রহ কেন?

বনানী শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ভাঙা গলায় বলল–আমার বিশ্বাস, ইন্দ্র সুইসাইড করেনি। ওর জ্যাঠামশাই ওকে প্রপার্টির শেয়ার দিচ্ছিলেন না। ইন্দ্র আমাকে বলেছিল এসব কথা। ওর জ্যাঠামশাইই মধুকে বা কোনও গুণ্ডাকে দিয়ে ওকে মার্ডার করিয়েছেন। ভদ্রলোক খুব বদরাগী। তা ছাড়া ইন্দ্রের কাছে শুনেছি, ছেলেবেলায় ইন্দ্র আর ওর মাকে উনি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে। দিয়েছিলেন।

কর্নেল বললেন আমার তাড়া আছে। তুমি এস। আমি দেখি কী করতে পারি।

বনানী উঠে দাঁড়িয়ে বলল কর্নেল সরকার। মিমির কাছে আপনার পরিচয় পেয়েছি। যদি কিছু মনে না করেন, এই মিস্ট্রি সলভ করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য খরচ করতে রাজি আছি।

কর্নেল বললেন। দরকার হবে না। আমি ডিটেকটিভ নই। কাজেই ফি নিই না। তবে তোমাকে বলা উচিত, এই কেসে আমি ইন্টারেস্টেড। দরকার মতো তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

বনানী বেরিয়ে যাওয়ার পর বললাম প্রেম এমন সাংঘাতিক হয়, প্রথম দেখলাম। যেন প্রতিহিংসাপরায়ণ বাঘিনী! বাক্স!

–লে লুল্লু!

 হেসে ফেললাম। আবার ত্রৈলোক্যনাথের ভূতটাকে লেলিয়ে দিচ্ছেন কেন?

কর্নেল কার্ডটা তুলে আমাকে দিয়ে বললেন লুলু এবং লুলুভূত এই কেসে একাকার হয়ে গেছে ডার্লিং।

কার্ডটা দেখে বললাম–আশ্চর্য তো! বনানী সেন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট। মহাবীর ট্রেডিং এজেন্সির এই ডেটা রিসার্চ সেকশনটা দেখছি পার্ল উইংয়ের।

–হুঁ। গালফ এরিয়ায় প্রাকৃতিক মুক্তো প্রচুর মেলে। বছরে কত প্রোডাকশন হয়, বাজার দরের ওঠানামা, রফতানি ইত্যাদি ব্যাপারে এই এজেন্সি মনে হচ্ছে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করে। কর্নেল চুরুট ঘষটে নিভিয়ে অ্যাশট্রেতে রাখলেন। ফের বললেন–মানুষের এই স্বভাব জয়ন্ত। তোমাকে বরাবর বলে আসছি, আমরা জানি না যে আমরা কী জানি। বনানী জানে না যে সে কী জানে। যাই হোক, লাঞ্চ সেরে নিই। ষষ্ঠী! আমরা খাব।

ডাইনিং থেকে ষষ্ঠীচরণের সাড়া এল সব রেডি বাবামশাই।

ঠিক তখনই আবার ডোরবেল বাজল। কর্নেল বিরক্ত হয়ে হাঁকলেন ষষ্ঠী।

তারপর দেখলাম হন্তদন্ত শেখ জুবাইর আল সাবা ঘরে ঢুকে ধপাস করে সোফায় বসে মাতৃভাষায় কয়েকটা শব্দ সগর্জনে আওড়ালেন। কর্নেল ইংরেজিতে বললেন কী ব্যাপার শেখ সাহেব?

শেখ সায়েব ইংরেজিতে বললেন–সাংঘাতিক ঘটনা! মিঃ চন্দ্রকে দুটো লোক জোর করে তারই গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আর আপনার ওই গোয়েন্দা লোকটি বদ্ধ পাগল। গাড়িটার পেছনে দৌড়ে বেপাত্তা হয়ে গেলেন!

বলেন কী! কোথায়!

শেখসায়ের হাঁসফাস করে বললেন গোয়েন্দা লোকটিকে সব বলে আমরা রাস্তায় নেমেছি। উনিও বিদায় দিতে নেমেছেন। মিঃ চন্দ্র গাড়িতে উঠে স্টিয়ারিংয়ে বসেছেন। আমি গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা ডাকু গাড়ির দরজা খুলে মিঃ চন্দ্রের গলায় ফায়ার আর্মসের নল ঠেকিয়ে সরে বসতে বলল। তারপর নিজে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি স্টার্ট দিল। আরেকটা ডাকু পিছনের সিটে উঠে বসল। তারপর গাড়িটা জোরে বেরিয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা। আমি হতভম্ব। গোয়েন্দা লোকটি বোকার মতো পেছনে দৌড়ে গেলেন! রাস্তার। লোকেরা কেউ কিছু বুঝতেই পারল না। আজব দেশ বটে! আমি চুপচাপ কেটে পড়লাম। একটা ট্যাক্সি পাওয়াও যায় না। গিশ! কারিব! ক।

আপনি কি পায়ে হেঁটে এলেন তা হলে?

 শেখসায়েব দু-হাত নেড়ে বললেন–লা লা! না, না ট্যাক্সি পেলাম। বেশি টাকা দিলাম। কিন্তু এখন কী ভয়ঙ্কর ঘটনা দেখুন তা হলে! আমার দেশ হলে এতক্ষণ কতগুলো গর্দান পড়ে যেত!

কর্নেল টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। শেখসায়েবের ফোঁস ফোঁস শ্বাসের শব্দে ঘরে ঝড়ে বয়ে যাচ্ছিল। আরবের মরুঝড় সাইমুম বলা চলে।

শেখসায়েবকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আশ্বস্ত করে কর্নেল হোটেলে পাঠিয়ে দিলেন। উনি উঠেছেন চৌরঙ্গি এলাকার অভিজাত হোটেল কন্টিনেন্টালে। সুইট নম্বর এবং স্বদেশের ঠিকানালেখা কার্ড রেখে গিয়েছিলেন আরব মুক্তো-ব্যবসায়ী। হাবভাবে বোঝা যাচ্ছিল, হারানো মুক্তো উদ্ধারের চেয়ে এদেশে কয়েকটি গান ফেলতে পারলেই যেন উনি খুশি।

লাঞ্চ খেতে বসে কর্নেলকে কয়েকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে কোনও জবাব পেলাম না। অবশ্য কর্নেল বরাবর পরামর্শ দিয়ে থাকেন–খাওয়ার সময় কথা বলা মোটেও উচিত নয়। প্রথম কারণ, খাদ্যের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় কারণ, খাদ্য শ্বাসনালীতে আটকে যেতে পারে।

ড্রয়িংরুমে ফিরে উনি ইজিচেয়ারে বসলেন এবং চুরুট ধরিয়ে যথারীতি চোখ বুজলেন। আমি সোফায় পা ছড়িয়ে আধশোওয়া ভঙ্গিতে সিগারেট ধরালাম।

বঙ্গীয় সনাতন আচার অনুসারে ভাতঘুমের প্রতি আমার আসক্তি আছে। কেটে গেল টেলিফোনের বিরক্তিকর শব্দে। চোখ খুলে দেখলাম কর্নেল ফোন তুললেন।..বলছি।..হুঁ, তুমি ঠিকই ধরেছিলে।…বলো কী! হুইস্কিতে…দ্যাটস রাইট। …কী নাম বললে? কুঞ্জনাথ?…সত্তাই? ওঁর রিঅ্যাকশন কী?..উঁ..উঁ.বুঝতে পারছি…আঁ? হাঃ হাঃ হাঃ! হালদারমশাই…ঠিক আছে। রাখছি।

টেলিফোন রেখে কর্নেল আমার দিকে ঘুরলেন। বললেন–অরিজিৎকে জোর লড়িয়ে দিয়েছি। পোস্ট মর্টেমের প্রাইমারি রিপোর্টে জানা গেছে, ইন্দ্রজিৎ যে হুইস্কি খাচ্ছিল, তাতে নার্কোটিক্স্ মেশানো ছিল। কিন্তু খুনী বেশি সময় নিতে চায়নি। তাই ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে। তারপর মাফলারের ফঁসে শ্বাস আটকে ওকে মেরে ঝুলিয়ে দেয়। শুধু একটা খটকা থেকে যাচ্ছে। একজনের পক্ষে ইন্দ্রজিতের বডি ওভাবে ঝোলানো সম্ভব হতে পারে না, যদি না খুনী কোনও দৈত্যদানব হয়। কাজেই কমপক্ষে তার একজন সহকারি ছিল।

বললাম–ফোনে কুঞ্জনাথ বলছিলেন। কে সে?

–জুয়েলার চন্দ্র ব্রাদার্সের দ্বিতীয় পার্টনার। হরনাথবাবুর ছোটভাই। কিন্তু সভাই। কর্নেল হাসলেন। নিভে যাওয়া চুরুট জ্বেলে ফের বললেন–হালদারমশাই কিডন্যাপারদের তাড়া করে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউয়ের মোড়ে গাড়ির বনেটের ওপর ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। পড়ে গিয়ে সামান্য চোট খেয়েছেন। তারপর বউবাজারে চন্দ্র ব্রাদার্সের দোকানে ছুটে যান। সেখানে কুঞ্জনাথবাবুকে সব বলেন। তারপর দুজনে থানায় যান।

–তাহলে দেখা যাচ্ছে, শেখসায়েব আর হরনাথবাবুকে কারা ফলো করে এসেছিল। কিন্তু হরনাথবাবুকে কিডন্যাপ করল কেন?

–তুমিই একটু ভেবেচিন্তে বলো। এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতেও পারো।

আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম–হরনাথবাবু যে ভাড়াটে খুনী দিয়ে ইন্দ্রজিৎকে খুন করে মুক্তো হাতিয়েছেন, সে-ই হরনাথবাবুকে কিডন্যাপ করেছে। মুক্তো-আদায়ের লোভে।

কর্নেল চোখ বুজে দুলতে দুলতে বললেন–হুঁ। এ-ও একটা পয়েন্ট।

উৎসাহে চাঙ্গা হয়ে বললাম কিন্তু কর্নেল, খুনীর একজন সহকারী থাকার কথা বললেন। সেই লোকটা মধু নয় তো?

কর্নেল একই সুরে বললেন–এ-ও একটা পয়েন্ট।

পুলিশকে বলুন মধুকে অ্যারেস্ট করে জেরা করুক।

–পুলিশ যা করবে, তা তাদের নিজের পদ্ধতি। আমি পুলিশকে হুকুম দেবার কে? তুমি বরং হোটেল কন্টিনেন্টালে শেখসায়েবকে রিং করো। উনি ফিরেই রিং করবেন বলেছেন। করছেন না কেন জানা দরকার।

কর্নেল শেখসায়েবের কার্ড দিলেন। ডায়াল করে সাড়া পেলাম। কোমল এবং প্রেমিকাসুলভ কণ্ঠস্বর। বললাম–প্লিজ পুট মি টু স্যুইট নাম্বার টু জিরো ওয়ান।

–ইওর নেম প্লিজ!

জয়ন্ত চৌধুরি ক্রস দা ডেইলি সত্যসেবক পত্রিকা।

–প্লিজ হোল্ড অন!

একটু পরেই শেখ সায়েবের গর্জন ভেসে এল কিশ। কারি। কলব (নিশ্চয় কদর্য গালাগালি)!

–শেখ জুবাইর আল সাবা! আমি জয়ন্ত চৌধুরি বলছি। কর্নেল নীলাদ্রি সরকার আপনার জন্য উদ্বিগ্ন।

কর্নেল সরকারকে বলুন আমি নিরাপদে পৌঁছেছি। এদেশের ডাকুরা আমার কাছে খরগোশের বাচ্চা।

–আপনার রিং করে জানানোর কথা ছিল…

ভুলে গিয়েছিলাম। দুঃখিত।

 কর্নেল সরকারের সঙ্গে কথা বলুন।

দরকার হলে বলব। এখন আমি ব্যস্ত। সেই প্রাইভেট ডিটেকটিভের সঙ্গে আলোচনা করছি। ধন্যবাদ। শেখসায়েব ফোন রেখে দিলেন। অদ্ভুত লোক তো! তবে হাসি পেল, হালদারমশাই ওঁর সুইটে হাজির হয়েছেন এবং নিশ্চয় গুরুগম্ভীর আলোচনা চলেছে।

কর্নেল বললেন–হাসছ কেন জয়ন্ত?

–হালদারমশাই শেখ সায়েবের ডেরায় গিয়ে জুটেছেন। আবার কী কেলেংকারি ঘটে যাবে কে জানে!

–আপাতত তেমন কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। শেখ সায়েবের কোনও বিপদ ঘটারও চান্স নেই।

–কেন নেই?

–হ্যারানো মুক্তো উনি যতক্ষণ না ফিরে পাচ্ছেন, ততক্ষণ উনি নিরাপদ। তা ছাড়া উনি এ ব্যাপারে পুলিশকে এড়িয়ে চলেছেন। কাজেই ওঁকে নিয়ে কারও কোনও ঝক্কি নেই।

উনি আপনার কাছে এসেছিলেন খুনীরা এটা টের পেয়ে গেছে।

–তাতে কী? কেস তো নিয়েছেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ হালদারমশাই। খুনী যে-ই হোক, সে হালদারমশাইকে তত পরোয়া করে না। করলে ওঁর এজেন্সির কাছে ওঁর চোখের সামনে হরনাথ চন্দ্রকে কিডন্যাপ করার সাহস পেত না।

কর্নেল ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়ালেন। আপনমনে বললেন–সময় বড় দ্রুতগামী। বলে ভেতরে চলে গেলেন।

একটু পরে পোশাক বদলে বেরিয়ে এলেন। চলো জয়ন্ত! বেরুনো যাক।

গোয়েন্দাগিরিতে?

কর্নেল হাসলেন। নাহ্। পরমেশবাবুর বাড়িতে একটা দুর্লভ প্রজাতির অর্কিড লক্ষ্য করেছি। বেচারা আধমরা অবস্থায় পাথরের ফাঁকে পড়ে আছে। একটা ফোয়ারার গায়ে পাথরের ক্ষুদে কৃত্রিম পাহাড় ছিল একসময়। এখন আগাছায় ঢাকা পড়েছে। বেচারাকে উদ্ধার করা উচিত।

এবারও শর্টকাটে অলিগলি ঘুরে সেই বাড়ির সামনে পৌঁছুলাম। গেট আগের মতোই ভেতর থেকে তালাবন্ধ। হর্ন শুনে মধু এসে তালা খুলে দিল। লোকটা কেমন যেন নির্বিকার। প্রত্নভাস্কর্যের মতো।

আমাদের গাড়ি পার্টিকোর তলায় পৌঁছলে মধু ফিরে এল। বলল কর্তামশাই আমার ওপর খাপ্পা হয়ে আছেন। দিদিমণির পেটে কথা থাকে না। খিড়কির দরজা খোলা থাকার কথা ওঁকে কেন বলিনি সেই জন্য আমাকে পুলিশে দেবেন বলে শাসাচ্ছেন। ওঁকে একটু বুঝিয়ে বলবেন যেন স্যার!

হলঘরের সিঁড়ির মাথায় মিমিকে দেখা গেল। চেহারায় এখন অনেকটা শান্ত ভাব। ঘটনাটা সামলে উঠেছে এতক্ষণে। ম্লান হেসে বলল–আসুন কর্নেলসায়েব। জানালা থেকে আপনাদের দেখতে পেয়ে…

কর্নেল বললেন–তোমার জ্যাঠামশাই নাকি মধুর ওপর খাপ্পা?

–আমার ওপরও। এতক্ষণ ধরে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করেছি। আসুন।

মধু বলল–আমি নীচেই থাকছি দিদিমণি!

মিমি আমাদের ওপরে নিয়ে গেল। সেই ঘরের চওড়া ব্যালকনিতে একটা হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন পরমেশ। কর্নেলকে দেখে উত্তেজিতভাবে বললেন মেঘ না চাইতেই জল! ওই হারামজাদা নেমকহারাম মধুটাকে পুলিশের হাতে তুলে দেব ভাবছিলাম। ডিসিশন নিতে পারছিলাম না। আপনি এসে ভালই হয়েছে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার শুনুন।

মিমি দ্রুত দুটো হাল্কা বেতের চেয়ার এনে দিল। আমরা বসলাম। কর্নেল বললেন–খিড়কির দরজা যে রাত্রে খোলা ছিল, সকালেই মিমি আমাদের বলেছে। আসলে আপনাকে বলে অকারণে উদ্বিগ্ন করতে চায়নি ওরা। তা ছাড়া যা হবার হয়ে গেছে। এখন ও নিয়ে আর মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।

–পুলিশকে এটা জানানো উচিত তা হলে।

–আমিই সময়মতো জানাব। ভাববেন না।

মিমি! কর্নেলসায়েবের জন্য কফি।

 কর্নেল হাত তুলে বললেন–একটু পরে। আপাতত যেজন্য এসেছি, বলি। আপনার বাগানের ফোয়ারার ধারে একটা অর্কিড পেয়েছি। আপনি তো জানেন আমি অর্কিডলোভী!

পরমেশ হাসবার চেষ্টা করে বললেন–আমিও তা-ই ছিলাম। এখন সবই অতীতের মিথ্যা স্মৃতি। আপনি স্বচ্ছন্দে ওটা নিয়ে যেতে পারেন। মিমি, কর্নেলসায়েবকে নিয়ে যা।

উঠে আসার সময় লক্ষ্য করলাম পরমেশের মুখে বিকৃতি ফুটে উঠেছে। জীবনের সবকিছুর ওপর এই অভিজাত মানুষটি যেন বীতস্পৃহ।

ঘাস-আর ঝোপঝাড়ের ভেতর একফালি পায়ে চলা পথ। একটু এগিয়ে বাঁদিকে চৌকো ভোবা, সেটা একসময় সুইমিং পুল ছিল। বর্মী বাঁশের ঝাড় পেরিয়ে গিয়ে পোড়ো ফোয়ারা দেখতে পেলাম। গোলাকার বিরাট চৌবাচ্চার তলায় জল শুকিয়ে কাদা আর শ্যাওলা জমে আছে। মধ্যিখানে ফুট দশ-বারো উঁচু টুকরো কালো পাথরের ঢিবি। পাথরের ফাঁকে ঝোপঝাড় উলুঘাস গজিয়েছে। কর্নেল চৌবাচ্চা ডিঙিয়ে ঢিবিতে গেলেন। তারপর পাথরের ফাঁক থেকে বিবর্ণ একটা অর্কিড উপড়ে তুললেন। বললেন–অর্কিডের প্রাণশক্তি। কাজেই শিগগির এটা রঙ ফিরে পাবে। আশাকরি, এপ্রিলেই ফুল ফোঁটাতে পারব।

মিমি অবাক চোখে দেখছিল। বলল–আমি কিন্তু ওটা লক্ষ্যই করিনি।

কর্নেল এসে বললেন–চলো! খিড়কির দরজাটা একটু দেখে যাই। ঝোপঝাড়ের ভেতর পায়ে চলা পথটা বেঁকে গেছে। আবর্জনার দুর্গন্ধ নাকে এসে ঝাঁপটা দিল। নাকে রুমাল গুঁজে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কর্নেলকে মিমি নিয়ে গেল দরজাটার দিকে।

ভাবছিলাম, এই জঙ্গল এরা সাফ করে না কেন? চোর ডাকাত দিনদুপুরে দিব্যি এখানে গা ঢাকা দিয়ে ওত পেতে থাকতে পারে। মধু লোকটাকে দেখে। কুঁড়ের রাজা মনে হয়। কিন্তু মিমির তো এ সব ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিত।

ঝোপের ফাঁকে দেখা যাচ্ছিল কর্নেল খিড়কির দরজা খুলছেন। তারপর ওদিকে অদৃশ্য হলেন। মিমিও আমার মতো নাকে আঁচল গুঁজে দরজার কাছে। দাঁড়িয়ে রইল।

আলো কমে এসেছে। আমার বাঁদিকে একটা করবী ঝোপ আগাছার ব্যুহ থেকে মাথা তুলে কষ্টে দাঁড়িয়ে আছে। করবীটি কি ফুল ফোঁটাতে পারে? হয় তো এই পরিবেশ আমাকে এ ধরনের চিন্তা এনে দিচ্ছিল। পুরনো আমলের বর্ণাঢ্য এবং সাজানোগোছানো ফুলবাগিচা, ফোয়ারা; সুইমিং পুল (হয় তো টেনিস লনও ছিল) এইসব দৃশ্য কল্পনা করছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল করবীঝোপের তলায় দলাপাকানো একটা কাগজ পড়ে আছে। কাগজটা বেরঙা হলে গ্রাহ্য করতাম না। কিন্তু বহুবছর ধরে এক রহস্যভেদীর সঙ্গগুণ বা সঙ্গদোষে আমার মধ্যেও গোয়েন্দাগিরির প্রবণতা জন্মে গেছে। এগিয়ে গিয়ে কাগজটা কুড়িয়ে নিলাম। ছোট্ট একটা চিরকুট মাত্র। খুলে দেখি লেখা আছে :

রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আসছি। লক্ষ্য রাখবে। পার্টি টাকা নিয়ে আসবে। যা চেয়েছ, তা-ই পাবে। আশাকরি আমাকে অবিশ্বাস করবে না। তবে কমিশন পাঁচ পার্সেন্টের কম নয়। রিস্ক আছে।

তলায় ইংরেজিতে ইনিশিয়ালটা খুব অস্পষ্ট। চটপট চিরকুটটা পকেটে ঢোকালাম। কর্নেল এবং মিমি কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছিলেন। উত্তেজনায় আমার শরীর কাঁপছে। ইন্দ্রজিৎ এই চিঠির ফাঁদে পড়েই প্রাণ হারিয়েছে তা স্পষ্ট। কিন্তু চিঠিটা এখানে কে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলল বোঝা যাচ্ছে না।

কর্নেল আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। তোমাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে। জয়ন্ত! আড়ষ্ট হেসে বললাম–বিশ্রি দুর্গন্ধ!

মিমি বলল–হ্যাঁ। পেছনে কর্পোরেশনের ময়লার গাদা। আমারও এদিকটায় এসে গা গুলোয়। তাই আসি না।

আমরা দোতলায় সেই চওড়া ব্যালকনিতে ফিরে গেলাম। হুইল চেয়ারে বসে পরমেশ কী একটা বই পড়ছিলেন। একটা হাত দিয়ে বইয়ের পাতা ওল্টানো অভ্যাস করেছেন। বুজিয়ে রেখে বললেন–কোনও কু পেলেন। কর্নেলসায়েব?

কর্নেল সহাস্যে অর্কিডটা দেখিয়ে বললেন–এটাই আমার ক্লু!

 পরমেশ অবাক চোখে তাকালেন। তার মানে?

–আপনার অতীত জীবনকে চিনিয়ে দেয়। একজন প্রকৃতিপ্রেমীর জীবনকে।

পরমেশ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললেন সব মিথ্যা হয়ে গেছে। মিমি! এবার কফি নিয়ে আয়!

মিমি চলে গেল। কর্নেল ক্যাকটাস নিয়ে বকবকানি শুরু করলেন পরমেশের সঙ্গে। আলো কমে ধূসরতা ঘনিয়েছে এতক্ষণে। হঠাৎ নীচে মধুকে বাগানের দিকে দৌড়তে দেখলাম। সে চেঁচাচ্ছিল–চোর! চোর! চোর!

পরমেশ প্রায় গর্জন করলেন মিমি! আমার বন্দুক নিয়ে আয়! খিড়কির ওধারে বস্তিতে শোরগোল উঠল। বোঝা গেল চোর ওই দরজা খুলেই ওদিকে পালাচ্ছে। কর্নেল বাইনোকুলারে ওদিকটা দেখতে থাকলেন। রহস্যময় বলতে হবে। কেউ বাগানের ঝোপে লুকিয়ে ছিল এতক্ষণ। কে কে? কী উদ্দেশ্যে ওখানে লুকিয়ে ছিল?