সাঁকোটা দুলছে

সাঁকোটা দুলছে

মনে পড়ে সেই সুপুরি গাছের সারি
তার পাশে মৃদু জ্যোৎস্না মাখানো গ্রাম
মাটির দেয়ালে গাঁথা আমাদের বাড়ি
ছোট ছোট সুখে সিদ্ধ মনস্কাম।

পড়শি নদীটি ধনুকের মতো বাঁকা
ঊরু ডোবা জলে সারাদিন খুনশুটি
বাঁশের সাঁকোটি শিশু শিল্পীর আঁকা
হেলানো বটের ডালে দোল খায় ছুটি।

এপারে ওপারে ঢিল ছুঁড়ে ডাকাডাকি
ওদিকের গ্রামে রোদ্দুর কিছু বেশি
ছায়া ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় কটি পাখি
ভরা নৌকায় গান গায় ভিন দেশি।

আমার বন্ধু আজানের সুরে জাগে
আমার দুচোখে তখনো স্বপ্নলতা
ভোরের কুসুম ওপারে ফুটেছে আগে
এপারে শিশির পতনের নীরবতা।

আমার বন্ধু বহু ঝগড়ার সাথী
কথায় কথায় এই ভাব এই আড়ি
মার কাছে গিয়ে পাশাপাশি হাত পাতি
গাব গাছে উঠে সে-হাতেই কাড়াকাড়ি।

আমার বন্ধু দুনিয়াদারির রাজা
মিথ্যে কথায় জগৎ সভায় সেরা
দোষ না করেও পিঠ পেতে নেয় সাজা
আমি দেখি তার সহাস্য মুখে ফেরা।

আমাদের ছুটি মন-বদলের খেলা
আমাদের ছুটি অরণ্যে খোঁজাখুঁজি
আমাদের ছুটি হাসি কান্নার বেলা
আমাদের ছুটি ইঙ্গিতে বোঝাবুঝি।

খেলায় খেলায় জীবন পৃষ্ঠা ওড়ে
খেলায় খেলায় ইতিহাস দেয় উঁকি
এদিকে ওদিকে পৃথিবীর পিঠ পোড়ে
কত না মানুষ ভুরু কুঁচকিয়ে সুখী।

বন্ধু হারালে দুনিয়াটা খাঁ খাঁ করে
ভেঙে যায় গ্রাম, নদীও শুকনো ধূ ধূ
খেলার বয়েস পেরোলেও একা ঘরে
বার বার দেখি বন্ধুরই মুখ শুধু।

সাঁকোটির কথা মনে আছে, আনোয়ার?
এত কিছু গেল, সাঁকোটি এখনো আছে
এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার
সাঁকোটা দুলছে, এই আমি তোর কাছে।