মৃত্যু থমকে গেছে ছন্দের সামনে

মৃত্যু থমকে গেছে ছন্দের সামনে

হামবুর্গ শহরের অদুরে অটোবানে সংঘর্ষ হল দুটি গাড়ির
একটি গাড়ি থেকে ছিটকে, লণ্ডভণ্ড হয়ে সাত হাত দূরে গিয়ে পড়ল
উড়িষ্যার একটি নারী
গাঢ় নীল রঙের শাড়িতে রক্ত, প্রতিমার মতন ভুরু-আঁকা, স্বর্ণময় মুখখানি
ড়ুবে গেছে ঘাসে
আকাশ তখন বর্ষণ করছে অন্ধকার, মাটিতে তৈলাক্ত আগুন
নিস্পন্দ শরীরে শুধু ছটফট করছে দুটি পা
উড়িষ্যার রমণীটির বিলীয়মান চেতনার রেশ রয়ে গেছে দুটি পায়ে

ময়ূরভঞ্জের এক বাগানে খেলা করত এক কিশোরী
পুকুর থেকে উঠে এসে জল ছাপ দিতে দিতে সে চলে যেত বাথরুমে
ঐ পায়ে
কর্ণের কবচকুণ্ডলের মন তার পায়েও সহজাত ঘুঙুর
ভোরে ফুল তুলতে এসে তরুণ সূর্যকে সে দেখাত তার অঙ্গ বিভঙ্গ
তার আঙুলে লীলাকমল, ফুরিত ওষ্ঠাধরে লোধ্র-লাস্য
একদিন সে কোনারকের সুরসুন্দরী হয়ে উঠে এল মঞ্চে
তারপর মঞ্চ তার পৃথিবী
তার পায়ের ছন্দে রচিত হল মন্ত্র
তার কোমরের খাঁজে সাপের মতন জড়িয়ে রইল সুর
তার দুই স্তনের মাঝখানে দোলে ত্রিতাল

উড়িষ্যার সেই মেয়েটি জার্মানির অট্টহাসময় জীবন থেকে
একটি জ্বলন্ত উল্কার মন ছিটকে পড়ল রাস্তায়
এখনো একটু একটু কাঁপছে তার দুটি পা
সদ্যোজাত বাছুরের থুতনির মতন তার গোড়ালি
কোজাগরী রাতের লক্ষ্মীর মতন তার পদতল
অসংখ্য চুম্বনযোগ্য পদপল্লব যেন রাঙা ভাঙা চাঁদ জড়ানো
সূর্যাস্তের প্রথম ঝলকের মতন তার চোখের রং
তার দুটি পা, তার দুটি পা
মৃত্যু থমকে গেছে ছন্দের সামনে এসে…

ওঠো, কন্যা, ওঠো!