৯. সঙ্করণ

নবম অধ্যায়—সঙ্করণ 

প্রথম অপত্য বংশধর এবং সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের বিভিন্নতা-বন্ধ্যাত্ব মাত্রাতে স্বতন্ত্র, সার্বজনীন নয়, ঘনিষ্ঠ আন্তঃপ্রজনন দ্বারা প্রভাবিত, গৃহপালনে অপসারিত-সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের নিয়মসমূহ—–বন্ধ্যাত্ব একটি বিশেষ জন্মগত গুণ নয়, বরং অন্য পার্থক্যের আনুষঙ্গিক, প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা পুঞ্জীভূত হয়—প্রথম অপত্য বংশধর এবং সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহ জীবনের পরিবর্তিত পরিবেশ ও সঙ্করতার প্রভাবসমূহের মধ্যে সমান্তরতা-দ্বিরূপতা এবং ত্রিরূপতা—সঙ্করায়ণের পর ভ্যারাইটিদের এবং তাদের বর্ণসঙ্করের বংশধরের জননক্ষমতা সার্বজনীন নয়-এদের জননক্ষমতা নিরপেক্ষভাবে সঙ্কর এবং বর্ণসঙ্করদের (মংগ্রেল) তুলনা—সারাংশ। 

প্রকৃতিবিদরা সাধারণভাবে মত প্রকাশ করেন যে আন্তঃসঙ্করিত হওয়ার পর প্রজাতিগুলি বন্ধ্যাত্বের বিশেষ গুণ অর্জন করে। এই মতটি প্রথমে অতিশয় বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, কারণ মুক্তভাবে সঙ্করিত হওয়ার ক্ষমতা থাকার জন্য একত্রে বসবাসকারী প্রজাতিগুলি কদাচিৎ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। বিষয়টি আমাদের কাছে প্রয়োজনীয়, আরও বিশেষভাবে যেহেতু প্রথম সঙ্করণের পর প্রজাতির বন্ধ্যাত্ব এবং তাদের সঙ্কর বংশধরের বন্ধ্যাত্ব পর্যায়ক্রমিক লাভজনক মাত্রার বন্ধ্যাত্বের সংরক্ষণের দ্বারা অর্জিত হয়ে থাকতে পারে না, এটি আমি দেখাবো। এটি পিতামাতা প্রজাতির জননতন্ত্রসমূহের পার্থক্যের একটি আপতিক ফল। 

বিষয়টি আলোচনা করবার সময় মৌলিকভাবে অনেকাংশে পৃথক দুই শ্রেণীর তথ্য সাধারণতঃ বিভ্রান্ত করে; যথা প্রথম সঙ্করণের পর প্রজাতির বন্ধ্যাত্ব এবং তাদের থেকে উৎপন্ন সঙ্করসমূহের বন্ধ্যাত্ব। 

বিশুদ্ধ প্রজাতির জননাঙ্গগুলি নিশ্চয় নিখুঁত অবস্থায় থাকে, তথাপি যখন আন্তঃসঙ্করিত হয় তখন এরা হয় কতিপয় বংশধর উৎপাদন করে অথবা কোন বংশধরের জন্ম দেয় না। বিপরীতক্রমে সঙ্করদের জননাঙ্গসমূহ ব্যবহারিক দিক থেকে অক্ষম, যেমন প্রাণী এবং উদ্ভিদদের উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের ক্ষেত্রে সেটি স্পষ্টভাবে দেখা যেতে পারে; যদিও অণুবীক্ষণ যন্ত্রে যতখানি দেখা যায় তা থেকে বিকাশমান অঙ্গগুলির গঠন যথাসম্ভব নিখুঁত বলেই মনে হয়। প্রথমতঃ ভ্ৰূণ-সৃষ্টিকারী দুটি যৌন উপাদান নিখুঁত হয়; দ্বিতীয়তঃ এরা হয় মোটেই বিকশিত হয় না অথবা অসম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণ বন্ধ্যাত্বের কারণটি যখন বিবেচনা করা হয়, তখন এই পার্থক্যটি গুরুত্বপূর্ণ। পার্থক্যটি সম্ভবতঃ উপেক্ষা করা হয়েছে, কারণ উভয় ক্ষেত্রেই বন্ধ্যাত্বকে আমাদের যুক্তিক্ষমতার আয়ত্তের বাইরে একটি বিশেষ জন্মগত গুণ হিসাবে দেখা হয়েছে। 

সাধারণ পিতামাতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে জ্ঞাত অথবা অনুমিত এমন আকাররা অর্থাৎ ভ্যারাইটিরা প্রথম সঙ্করিত হওয়ার পর জননক্ষমতা এবং এভাবে এদের বর্ণসঙ্কর বংশধরের জননক্ষমতা আমার তত্ত্বানুসারে প্রজাতির বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে সমগুরুত্বের; কারণ এটি ভ্যারাইটি এবং প্রজাতির মধ্যে একটি ব্যাপক ও স্পষ্ট পার্থক্য নির্ণয় করে বলে মনে হয়। 

বন্ধ্যাত্বের মাত্রাসমূহ : প্রথম, সঙ্করণের পর প্রজাতির বন্ধ্যাত্ব এবং এদের সঙ্কর বংশধরের বন্ধ্যাত্ব। দুইজন বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন এবং প্রশংসনীয় পর্যবেক্ষক কোয়েলরয়টার এবং গার্টনার-এর কয়েকটি স্মৃতিকথা ও গবেষণামূলক গ্রন্থ অনুশীলন করা প্রায় অসম্ভব। তাঁরা এই বিষয়ের ওপর সারাজীবন ধরে অনুশীলন করেছিলেন এবং বন্ধ্যাত্বের সাধারণত্ব সম্পর্কে তাঁরা বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেননি। কোয়েলরয়টার নিয়মটিকে সার্বজনীন করেছেন; এরপর তিনি জট খুলেছেন, কারণ দশটি ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসাবে বিবেচিত দুটি আকার তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, যারা উভয়েই জননক্ষমতাসম্পন্ন—তিনি দ্বিধাহীনভাবে এদের ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন। গার্টনারও সমভাবে নিয়মটিকে সার্বজনীন বলেছেন এবং তিনি কোয়েলরয়টারের উল্লিখিত দশটি ক্ষেত্রে সকলের উর্বরতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এইসব এবং অন্য অনেক ক্ষেত্রে গার্টনার বীজগুলি গণনা করতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে বন্ধ্যাত্বের কি পরিমাণ মাত্রা বজায় থাকে। দুটি প্রজাতির সঙ্করণের পর উৎপন্ন বীজের সর্বোচ্চ সংখ্যা ও এদের সঙ্কর বংশধরের দ্বারা উৎপন্ন বীজের সর্বোচ্চ সংখ্যা এবং এর সঙ্গে প্রাকৃতিক অবস্থায় বিশুদ্ধ পিতামাতা প্রজাতির উভয়েরই দ্বারা উৎপন্ন গড় সংখ্যা সবসময় তিনি তুলনা করেন। কিন্তু গুরুতর ভুলের কারণগুলি এখানেই নিহিত রয়েছে : সঙ্করিত হওয়ার জন্য একটি উদ্ভিদের জননশক্তি নষ্ট করতে হবে এবং সবচেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে যে গাছটিকে নিঃসঙ্গ করতে হবে, কারণ পতঙ্গদের দ্বারা অন্য উদ্ভিদের পরাগরেণু যেন এই উদ্ভিদে না পৌঁছায়। গার্টনার দ্বারা পরীক্ষিত সব উদ্ভিদদের টবে বসানো হয়েছিল এবং তাঁর বাড়ির একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। এইসব প্রক্রিয়া একটি উদ্ভিদের জননক্ষমতার পক্ষে প্রায়শই ক্ষতিকর, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই; কারণ গার্টনার এক কুড়ি গাছের তালিকা দিয়েছেন, যাদের জননক্ষমতা তিনি নষ্ট করেছিলেন এবং এদের নিজেদের পরাগরেণু দ্বারা নিষিক্ত করেছিলেন এবং (লেগুমিনোসি জাতীয় গোত্রগুলি ছাড়া, যেগুলিকে স্বকার্যে লাগানো কষ্টকর) এই কুড়িটি গাছের অর্ধেকের জননক্ষমতা কিছুমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অধিকন্তু, গার্টনার সাধারণ লাল এবং নীল পিমপারনেল (অ্যানাগ্যালিস আভেনসিস্ এবং সেরুলিয়া) -এর মত কয়েকটি আকারকে বারংবার সঙ্করিত করেছিলেন, যেগুলিকে দক্ষ বিজ্ঞানীরা ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন এবং যেহেতু তিনি দেখিয়েছিলেন যে এরা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ্যা, তাঁর বিশ্বাস মত আন্তঃসঙ্করিত হওয়ার পর অনেক প্রজাতি প্রকৃতই বন্ধ্যা হয় কিনা তাতে আমাদের সন্দেহ আছে। 

এটি নিশ্চিত যে একদিকে সঙ্করণের পর বিভিন্ন প্রজাতির বন্ধ্যাত্ব মাত্রায় এত ভিন্ন হয় ও অজ্ঞাতসারে মিলিয়ে যায় এবং অন্যদিকে, বিশুদ্ধ প্রজাতিদের জননক্ষমতা বিভিন্ন অবস্থার দ্বারা এত সহজভাবে প্রভাবিত হয় যে বাস্তবিকপক্ষে এটি বলা অতিশয় কষ্টকর যে কোথায় নিখুঁত জননক্ষমতা শেষ হয় এবং বন্ধ্যাত্ব আরম্ভ হয়। আমি মনে করি এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর নেই যে বর্তমানের দুইজন দক্ষ পর্যবেক্ষক যথা কোয়েলরয়টার এবং গার্টনার এই একই আকারদের কয়েকটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিপরীত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। কোন কোন সন্দেহজনক আকারকে প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা উচিত কিনা সে ব্যাপারে আমাদের শ্রেষ্ঠ উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের দ্বারা উত্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণটি তুলনা করা সবচেয়ে শিক্ষামূলক হয়, এভাবে দেখানো যেতে পারে যে বন্ধ্যাত্ব অথবা জননক্ষমতা প্রজাতি এবং ভ্যারাইটিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নির্ণয় করতে সমর্থ হয় না। এই উৎস থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণটি মিলিয়ে যায় এবং একই মাত্রায় সন্দেহজনক হয়, যেমন অন্য জৈবিক এবং গঠনগত পার্থক্য থেকে উদ্ভূত সাক্ষ্যপ্রমাণটি হয়। 

বংশপরম্পরায় সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে বলা যায়—ছয় অথবা সাত, এবং একটি ক্ষেত্রে দশ বংশ ধরে বিশুদ্ধ জনককে যে-কোনটির সঙ্গে মিলন থেকে সযত্নে রক্ষা করে যদিও গার্টনার সঙ্করকে পালন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, তথাপি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে এদের জননক্ষমতা কখনও বৃদ্ধি পায় না, এবং বিপুলভাবে ও আকস্মিকভাবে সাধারণত হ্রাস পায়। এই হ্রাস সম্পর্কে প্রথমে লক্ষ্য করা যেতে পারে যে যখন দেহগঠনে অথবা জৈবগঠনে কোন বিচ্যুতি উভয় পিতামাতার পক্ষে সাধারণ হয়, তখন এটি প্রায়শই বর্ধিত মাত্রায় বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়; এবং সঙ্কর উদ্ভিদগুলিতে উভয় যৌন উপাদান এরই মধ্যে কিছুমাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি অতি নিকট আন্তঃ প্রজননের মত একটি স্বতন্ত্র কারণের জন্য প্রায়শই এইসব ক্ষেত্রে এদের জননক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আমি অসংখ্য পরীক্ষা করেছি এবং অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করেছি, যার থেকে দেখা যায় একদিকে একটি ভিন্ন একক অথবা ভ্যারাইটির সঙ্গে একটি সঙ্করণ বংশধরের জীবনীশক্তি ও জননক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এগুলি থেকে এই সিদ্ধান্তের সঠিকতা সম্পর্কে আমি সন্দেহ পোষণ করি না। পরীক্ষাবিদরা কদাচিৎ বিরাট সংখ্যায় সঙ্কর উৎপাদন করে; এবং যেহেতু পিতামাতা প্রজাতি অথবা অন্য সম্পর্কযুক্ত সঙ্করগুলি সাধারণতঃ একই বাগানে জন্মায়, ফুল ফোটার মরশুমে পতঙ্গদের পরিদর্শনকে অবশ্যই বাধা দিতে হবে : এখন সঙ্করগুলি, যদি এদের এভাবে রাখা হয়, একই ফুলের পরাগরেণু দ্বারা প্রত্যেক বংশে সাধারণতঃ নিষিক্ত হবে; এবং সম্ভবতঃ এটি সঙ্কর উদ্ভবের দ্বারা ইতিমধ্যে হ্রাসপ্রাপ্ত এদের জননক্ষমতার পক্ষে ক্ষতিকর হবে। গার্টনারের উত্থাপিত একটি বক্তব্যের মাধ্যমে আমার বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে যদি এমনকি কম জননক্ষমতাসম্পন্ন সঙ্কররা একই প্রকারের সঙ্কর রেণু দ্বারা কৃত্রিমভাবে নিষিক্ত হয়, সুপটু কাজের খারাপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, এদের জননক্ষমতা কোন কোন সময় নিশ্চিতরূপে বৃদ্ধি পায় এবং বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখন কৃত্রিম নিষিক্তকরণের প্রক্রিয়াটিতে, অন্য একটি ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু যেমন ঘটনাচক্রে নিষিক্ত হবে এমন ফুলটির পরাগধানী থেকে গ্রহণ করা হয় (যেমন আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি); অতএব দুটি ফুলের মধ্যে একটি সঙ্করণ, যদিও সম্ভবতঃ একই গাছের হয়, এভাবে প্রভাবিত হবে। অধিকন্তু, যখনই জটিল পরীক্ষাগুলি চলে, গার্টনারের মত যত্নশীল পর্যবেক্ষকও তাঁর সঙ্করদের জননক্ষমতা নষ্ট করে থাকবেন এবং হয় একই উদ্ভিদের অথবা একই সঙ্কর প্রকৃতির অন্য উদ্ভিদের একটি ভিন্ন ফুল থেকে পরাগরেণু দ্বারা প্রত্যেক বংশে একটি সঙ্কর নিশ্চয় উৎপন্ন হয়ে থাকবে এবং এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বনিষিক্ত সঙ্করদের তুলনায় বংশপরম্পরায় কৃত্রিমভাবে নিষিক্ত সঙ্করদের জননক্ষমতা বৃদ্ধির এই অদ্ভুত ঘটনাটি আমার বিশ্বাস অনুসারে নিকট আন্তঃপ্রজনন পরিহারের মাধ্যমে ঘটে থাকতে পারে। 

এবার সম্মানীয় রেভারেন্ড ডব্লিউ. হার্বার্ট-এর মত তৃতীয় সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রজননকারীর দ্বারা প্রাপ্ত ফলগুলির দিকে লক্ষ্য করা যাক। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে এত স্থিরনিশ্চিত যে কতিপয় সঙ্কর নিখুঁতভাবে জননক্ষমতাসম্পন্ন, যেমন বিশুদ্ধ প্রজাতিদের ক্ষেত্রে হয়—যেমন কোয়েলরয়টার এবং গার্টনার বলেন যে স্বতন্ত্র প্রজাতিদের মধ্যে কিছুমাত্রার বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে প্রকৃতির একটি সার্বজনীন নিয়ম—তিনি গার্টনারের মত একই প্রজাতির কয়েকটির ওপর পরীক্ষা করেছিলেন। আমি মনে করি ফলগুলির পার্থক্য হার্বার্টের বাগান সম্বন্ধীয় বিপুল দক্ষতা ও নিজের হট-হাউস থাকার জন্য হতে পারে। তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যে আমি এখানে উদাহরণ হিসাবে শুধু একটি উল্লেখ করব। যথা ক্রিনাম রেভলিউটাম দ্বারা নিষিক্ত ক্রিনাম ক্যাপেন্সে-এর একটি শুঁটির প্রত্যেক ডিম্বক একটি গাছের জন্ম দিয়েছিল যা এর স্বাভাবিক জননক্ষমতার একটি ক্ষেত্রেও কখনও আমি দেখিনি। অতএব এখানে দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রথম অপত্য সঙ্করে নিখুঁত অথবা এমনকি সাধারণভাবে নিখুঁত আরও অধিক জননক্ষমতা আমরা লক্ষ্য করি। 

ক্রিনাম উদ্ভিদের এই বিষয়টি একটি প্রকৃত বিস্ময়কর ঘটনা উল্লেখ করতে আমাকে উৎসাহিত করে, যেমন লোবেলিয়া, ভার্বাসকুম এবং প্যাসিফ্লোরা নামক উদ্ভিদের কোন কোন প্রজাতির একক উদ্ভিদরা একটি ভিন্ন প্রজাতির পরাগরেণু দ্বারা সহজেই নিষিক্ত হতে পারে, কিন্তু একই গাছের পরাগরেণুর দ্বারা নয়, যদিও এই পরাগরেণু অন্য উদ্ভিদ এবং প্রজাতিকে নিষিক্ত করতে সমর্থ বলে প্রমাণ করা যেতে পারে। অধ্যাপক হিলডেব্র্যান্ড দ্বারা প্রদর্শিত হিপিয়াসট্রুম, করিড্যালিস নামক উদ্ভিদ গণে এবং মিঃ স্কট ও ফ্রিজ মুলার প্রদর্শিত বিভিন্ন অর্কিডের সমস্ত একক উদ্ভিদে এই অদ্ভুত ঘটনাটি লক্ষ্য করা যায়। অতএব কোন কোন প্রজাতির কোন কোন অস্বাভাবিক এককরা ও অন্য প্রজাতিগুলির সমস্ত এককরা একই এককীয় উদ্ভিদের পরাগরেণুর দ্বারা নিষিক্তকরণের তুলনায় প্রকৃতপক্ষে আরও সহজেই সঙ্করিত হতে পারে! একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, হিপিয়াসস আউলিকুম উদ্ভিদের একটি কন্দের চারটি ফুল হয়; হার্বার্ট এদের তিনটিকে এদের নিজস্ব পরাগ দ্বারা নিষিক্ত করেছিলেন এবং চতুর্থটি তিনটি ভিন্ন প্রজাতি থেকে উদ্ভূত একটি যৌগিক সঙ্করের পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হয়েছিল : ফলটি হয়েছিল এইরকম—” প্রথম তিনটি ফুলের ডিম্বাশয়দের বর্ধিত হওয়া শীঘ্রই বন্ধ হয়েছিল এবং কয়েকদিন পর এরা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছিল, পক্ষান্তরে সঙ্করটির পরাগ দ্বারা নিষিক্ত শুঁটিটি অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল ও ভালভাবে পরিপক্ক হয়েছিল এবং ভাল বীজ উৎপাদন করেছিল যা স্বাধীনভাবে অঙ্কুরিত হয়েছিল।” মিঃ হার্বার্ট কয়েক বছর ধরে একই পরীক্ষা করেছিলেন এবং সবসময় একই ফল পেয়েছিলেন। এইসব ঘটনা দেখায় যে একটি প্রজাতির কম অথবা বেশী জননক্ষমতা কোন্ কোন্ অল্প ও রহস্যময় কারণসমূহের ওপর কোন কোন সময় নির্ভর করে। 

উদ্যানবিদদের ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ, যদিও বৈজ্ঞানিক নিয়মানুসারে করা হয় না, লক্ষ্য করার যোগ্য। এটি সুবিদিত যে কি জটিল উপায়ে পেলারগোনিয়াম, ফুকসিয়া, ক্যালসিওল্যারিয়া, পেটুনিয়া, রোডোডেনড্রন ইত্যাদি উদ্ভিদ প্রজাতিরা সঙ্করিত হয়েছে, তথাপি এইসব সঙ্কর উদ্ভিদের অনেকেই স্বাধীনভাবে বীজ উৎপাদন করে। উদাহরণস্বরূপ, হার্বার্ট জোরের সঙ্গে বলেন যে সাধারণ স্বভাবে ব্যাপকভাবে ভিন্ন দুটি প্রজাতি ক্যালসিওলারিয়া ইন্টেগ্রিফলিয়া ও প্লান্টাজিনিয়া থেকে উদ্ভূত একটি সঙ্কর “নিখুঁতভাবে বংশবৃদ্ধি করে, যেমন চিলির পর্বতমালার একটি প্রাকৃতিক প্রজাতিতে হয়।” রোডোডেনড্রন উদ্ভিদের জটিল সঙ্করদের কয়েকটির জননক্ষমতার মাত্রা নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছি, এবং আমি নিশ্চিত হয়েছি যে এদের অনেকেই সম্পূর্ণরূপে উর্বর বা জননক্ষমতাসম্পন্ন। উদাহরণস্বরূপ, সি. নোবল আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি রোডোডেনড্রন পন্টিকাম এবং ক্যাটাওবিয়েনস উদ্ভিদ প্রজাতিদ্বয়ের মধ্য থেকে একটি সঙ্কর সৃষ্টি করেছেন, এবং এই সঙ্কর “কল্পনাতীতরকম স্বাধীনভাবে বীজ উৎপাদন করে।” যদি সঙ্করগুলি ভালভাবে ব্যবহৃত হয়, এদের জননক্ষমতা সর্বদা বংশপরম্পরায় কমে যেতে থাকে এবং এটাই হচ্ছে গার্টনারের বিশ্বাস, তাহলে এই তথ্যটি মালিদের পক্ষে অতিশয় ক্ষতিকারক হবে। উদ্যানবিদরা একই সঙ্করদের বিরাট বেড তৈরী করে এবং এগুলো ভালভাবে পালন করে, পতঙ্গদের দ্বারা কতিপয় একককে পরস্পরের সঙ্গে সঙ্করিত হতে দেওয়া হয় এবং এভাবে নিকট আন্তঃসঙ্করণের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধ করা হয়। কোন পরাগ সৃষ্টি না-করা সঙ্কর রোডোডেনড্রন উদ্ভিদের আরও বন্ধ্যা ধরনের ফুলগুলি পরীক্ষা করে যে-কেউ পতঙ্গ মাধ্যমের দক্ষতা সম্পর্কে সহজেই স্থিরনিশ্চিত হতে পারেন, কারণ তিনি অন্য ফুলগুলি থেকে আনীত প্রচুর পরাগরেণু এদের গর্ভমুণ্ডে লক্ষ্য করতে পারবেন। 

উদ্ভিদের তুলনায় প্রাণীদের ক্ষেত্রে সযত্ন পরীক্ষার চেষ্টা কমই করা হয়েছে। আমাদের শ্রেণীবিন্যাসকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, অর্থাৎ যদি উদ্ভিদদের গণগুলির মত প্রাণীদের গণগুলি পরস্পরের থেকে স্পষ্টতঃ ভিন্ন হয়, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে প্রাকৃতিক মানদণ্ডে আরও ব্যাপকভাবে ভিন্ন প্রাণীরা উদ্ভিদদের তুলনায় আরও সহজভাবে সঙ্করিত হতে পারে; কিন্তু আমি মনে করি সঙ্কররা নিজেরা আরও বন্ধ্যা হয়। তবে মনে রাখা উচিত যে আটক অবস্থায় কয়েকটি প্রাণী স্বাধীনভাবে সন্তান উৎপাদন করতে পারে, এর ভিত্তিতে কয়েকটি পরীক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে : উদাহরণস্বরূপ, ফিন্‌চ পাখিদের নয়টি ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে ক্যানারী পাখির সঙ্করণ ঘটানো হয়েছে, কিন্তু এদের একটিও আটকাবস্থায় স্বাধীনভাবে সন্তান উৎপাদন করে না বলে আমাদের আশা করার কোন অধিকার নেই যে ক্যানারী পাখি এবং এদের মধ্যে প্রথম অপত্য-সন্তানরা, অথবা এদের সঙ্কররা সম্পূর্ণরূপে উর্বর বা জননক্ষমতাসম্পন্ন। পুনরায়, আরও উর্বর সঙ্কর প্রাণীদের বংশপরম্পরায় উর্বরতা সম্পর্কে আমি শুধুমাত্র একটি উদাহরণ জানি যেখানে একই সঙ্করের দুটি গোত্র একই সময়ে পৃথক পিতামাতাদের থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যাতে করে নিকট আন্তঃপ্রজননের খারাপ প্রভাব দূর করা যায়। বিপরীতক্রমে, প্রত্যেক প্রজননকারীর বারংবার সতর্কবাণীর বিরুদ্ধে, ভাই ও বোনেরা প্রত্যেক বংশপরম্পরায় সাধারণত সঙ্করিত হয়েছে। এক্ষেত্রে এটা মোটেই আশ্চর্যজনক নয় যে সঙ্করদের সহজাত বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকবে। 

সম্পূর্ণরূপে উর্বর বা জননক্ষমতাসম্পন্ন সঙ্কর প্রাণীদের সুপরীক্ষিত ঘটনার কথা যদিও আমি খুব বেশী জানি না, তথাপি আমার বিশ্বাস করার কারণ আছে সারভিউলাস ভ্যাজিনালিস প্রাণীর সঙ্গে সারভিউলাস রিভেসি নামক প্রাণীর এবং ফ্যাসিয়ানুস কলচিকাস প্রাণীর সঙ্গে ফ্যাসিয়ানুস টর্কুয়াটাস নামক প্রাণীদের মধ্যে উদ্ভূত সঙ্কররা সম্পূর্ণরূপে উর্বরতাশক্তিসম্পন্ন। এম. কারেফাজেস বলেন যে দুটি মথের (বম্বিক্স সিনথিয়া এবং অ্যারিন্ডিয়া) মধ্যে উদ্ভূত সঙ্কররা আট বংশ ধরে জননক্ষমতাসম্পন্ন ছিল বলে প্যারিসে প্রমাণিত হয়েছিল। সম্প্রতি জোরের সঙ্গে বলা হয়েছে যে এরূপ দুটি ভিন্ন প্রজাতিকে, যেমন শশক এবং খরগোশকে, একত্রে যখন সঙ্করিত হতে দেওয়া হয়, তখন এরা বংশধরের জন্ম দেয়; এরা বেশীমাত্রায় জননক্ষমতাসম্পন্ন হয় যখন পিতামাতা প্রজাতির একটির সঙ্গে সঙ্করিত হয়। সাধারণ এবং চীনদেশীয় রাজহাঁস প্রজাতিরা এত ভিন্ন যে এদের ভিন্ন গণে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। এদের সঙ্কররা কোন একটি বিশুদ্ধ পিতা বা মাতার সঙ্গে এই দেশে প্রায়শই সঙ্করিত হয়েছে এবং শুধুমাত্র একটি উদাহরণে এরা পরস্পরের সঙ্গেও সঙ্করিত হয়েছে। মিঃ ইটন এটি করেছিলেন, যিনি একই পিতামাতার ভিন্ন শাবকদের থেকে দুটি সঙ্কর সৃষ্টি করেছিলেন; এবং এক বাসা থেকে এই দুটি পাখির কমপক্ষে আটটি সঙ্কর (বিশুদ্ধ হংসীর নাতি-নাতনী) সৃষ্টি করেছিলেন। তবে ভারতবর্ষে এইসব সঙ্কর রাজহংসীরা নিশ্চয় আরও বেশী উর্বর হয়, কারণ মিঃ ব্লিথ ও ক্যাপ্টেন হাটন নামে দুজন দক্ষ বিচারক আমাকে জানিয়েছেন যে এইসব সঙ্করিত রাজহংসীদের দলগুলিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাখা হয়েছে; এবং যেহেতু লাভের জন্য এদের এভাবে রাখা হয়েছে, সেখানে কোন বিশুদ্ধ পিতামাতা প্রজাতি রাখা হয়নি, সেহেতু এরা নিশ্চয় সম্পূর্ণরূপে অথবা অধিকমাত্রায় জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়। 

আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে, একত্রে সঙ্করিত হয় এমন বিভিন্ন জাত পুরোপুরি জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়; তথাপি অনেক ক্ষেত্রে এরা দুই অথবা ততোধিক বন্য প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই তথ্যটি থেকে আমরা নিশ্চয় সিদ্ধান্ত করবো যে হয় আদিম পিতামাতা প্রজাতি প্রথমে পুরোপুরি জননক্ষমতাসম্পন্ন সঙ্করদের সৃষ্টি করেছিল, অথবা পরবর্তী সময়ে গৃহপালনাধীনে পালিত সঙ্কররা পুরোপুরি জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়েছিল। এই পরের বিকল্পটি, যা প্যালাস সর্বপ্রথমে উপস্থাপন করেছিলেন, মনে হয় সবচেয়ে সম্ভবপর এবং প্রকৃতপক্ষে এ সম্বন্ধে কদাচিৎ সন্দেহ করা যেতে পারে। যেমন, এটি প্রায় নিশ্চিত যে আমাদের কুকুররা কতিপয় বন্য বংশ (স্টক) থেকে উদ্ভূত হয়েছে; তথাপি, সম্ভবতঃ দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন দেশজ গৃহপালিত কুকুর ছাড়া সকলে পুরোপুরি জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়; কতিপয় আদিম প্রজাতি সর্বপ্রথম একত্রে মুক্তভাবে সঙ্করিত হয়েছিল কিনা এবং সম্পূর্ণ উর্বর সঙ্কর উৎপাদন করেছিল কিনা সে ব্যাপারে আমার গভীর সন্দেহ আছে। এভাবে আবার আমি সম্প্রতি নিশ্চিত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছি যে ভারতীয় কুঁজওয়ালা এবং সাধারণ গোমহিষাদির সঙ্করিত বংশধররা পরস্পর সম্পূর্ণরূপে উর্বর হয়; এবং এদের প্রয়োজনীয় অস্থি সমাহারের পার্থক্য সম্পর্কে মিঃ রুটিমেয়ারের পর্যবেক্ষণ এবং এদের স্বভাব, কণ্ঠস্বর, জৈবিক গঠন ইত্যাদির পার্থক্য সম্পর্কে মিঃ রিথের পর্যবেক্ষণ থেকে, এই দুটি আকারকে ভাল এবং ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চয় বিবেচনা করা উচিত। শুয়োরের দুটি প্রধান জাতের ক্ষেত্রে এই বক্তব্যগুলি প্রয়োগ করা যেতে পারে। অতএব সঙ্করণের পর প্রজাতিদের সার্বজনীন বন্ধ্যাত্বে বিশ্বাসটি হয় আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে, অথবা অনপনেয় কোন বৈশিষ্ট্য হিসেবে নয় বরং গৃহপালনাধীনে অপসারিত হওয়ার একটি ক্ষমতা হিসেবে প্রাণীদের এই বন্ধ্যাত্বকে আমাদের দেখা উচিত। 

অবশেষে, প্রাণী এবং উদ্ভিদদের আন্তঃসঙ্করণ সম্পর্কে সব পরীক্ষিত তথ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্কর উভয়ের মধ্যেই কিছু পরিমাণ বন্ধ্যাত্ব থাকা একটি অতি সাধারণ নিয়ম; কিন্তু আমাদের বর্তমান জ্ঞানানুসারে, এটিকে সম্পূর্ণরূপে সার্বজনীন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের নিয়মাবলী 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের নিয়মগুলো নিয়ে আরও একটু বিশদভাবে আমরা এখন আলোচনা করবো। এটি লক্ষ্য করা আমাদের প্রধান বিষয় হবে যে এই নিয়মগুলো ইঙ্গিত করে কি করে না যে এদের একত্রে সঙ্করণ ও মিশ্রণের চরম বিভ্রান্তি প্রতিরোধ করার জন্য প্রজাতিরা বিশেষ গুণে গুণান্বিত হয়েছে। উদ্ভিদ সঙ্করণ সম্পর্কে গার্টনারের বিস্ময়কর গবেষণামূলক কাজ থেকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ প্রধানত গৃহীত হয়েছে। স্থিরনিশ্চিত হতে আমি অসুবিধা বোধ করেছি যে কতদূর পর্যন্ত এগুলি প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, এবং সঙ্কর প্রাণীদের সম্পর্কে আমাদের সীমিত জ্ঞানের কথা বিবেচনা করে আমি বিস্মিত হয়েছি যে কেমন করে একই নিয়ম সাধারণতঃ উভয় জগতে প্রয়োগ করা হয়। 

ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে যে প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্কর উভয় ক্ষেত্রেই উর্বরতার পরিমাণটি শূন্য থেকে নিখুঁত উর্বরতাতে উত্তরণ ঘটেছে। এটি আশ্চর্যজনক যে কতরকম অদ্ভুত উপায়ে এই ক্রমবিন্যাসসমূহ দেখানো যেতে পারে; এই তথ্যসমূহের কেবল সংক্ষিপ্ত রূপরেখা এখানে দেওয়া যেতে পারে। একটি গোত্রের একটি উদ্ভিদ থেকে পরাগরেণু যখন ভিন্ন গোত্রের একটি উদ্ভিদের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়, তখন অজৈব ধুলোর তুলনায় এটি আদৌ বেশী প্রভাব ফেলে না। বিভিন্ন প্রজাতির পরাগরেণু একই গণের কোন একটি প্রজাতির গর্ভমুণ্ডে প্রয়োগ করলে উৎপন্ন বীজের সংখ্যার মধ্যে নিখুঁত ক্রমবিন্যাসগত ধাপ লক্ষিত হয়, সম্পূর্ণ শূন্য জননক্ষমতা থেকে প্রায় সম্পূর্ণ অথবা এমনকি সম্পূর্ণ জননক্ষমতায় পৌঁছায়; এবং কোন কোন অস্বাভাবিক ক্ষেত্রে, উদ্ভিদদের নিজস্ব পরাগ দ্বারা উৎপাদিত জননক্ষমতার তুলনায় জননক্ষমতার আধিক্য আমরা লক্ষ্য করেছি। এরূপে সঙ্করদের ক্ষেত্রে, কয়েকটি উদ্ভিদ আছে যারা এমনকি বিশুদ্ধ পিতামাতাদের পরাগরেণু দ্বারা শুধুমাত্র একটি উর্বর বীজ কখনও উৎপাদন করেনি এবং সম্ভবতঃ কখনও উৎপাদন করবে না : তথাপি কতিপয় ক্ষেত্রে, বিশুদ্ধ পিতামাতা প্রজাতির একটির পরাগরেণু দ্বারা জননক্ষমতার প্রথম চিহ্ন আবিষ্কার করা যেতে পারে, যা অন্যভাবে সংঘটিত হওয়ার তুলনায় সঙ্করটির ফুল আগেই শুকিয়ে যায়; এবং ফুলটির আগেই শুকিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রাথমিক নিষেকের একটি চিহ্ন। এই ধরনের চূড়ান্ত মাত্রার বন্ধ্যাত্ব থেকে আমাদের স্ব-নির্বীজিত সঙ্কররা রয়েছে যারা সম্পূর্ণ জননক্ষমতাসম্পন্ন অধিক সংখ্যক বীজ উৎপাদন করে। 

যাদের মধ্যে সঙ্করণ ঘটানো ভীষণ কষ্টকর এবং যারা কদাচিৎ বংশধরের জন্ম দেয় এমন দুটি প্রজাতি থেকে উদ্ভূত সঙ্কররা সাধারণতঃ অতিশয় বন্ধ্যা হয়; কিন্তু একটি প্রথম অপত্য বংশধর সৃষ্টির অসুবিধা এবং এভাবে উদ্ভূত সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের মধ্যে সমান্তরালতা—দুই শ্রেণীর ঘটনা যা সাধারণতঃ একত্রে সংযুক্ত হয়েছে—কোন মতেই সঠিক নয়। অনেক ঘটনা আছে যেখানে দুটি বিশুদ্ধ প্রজাতি সহজেই সংযুক্ত হতে পারে, যেমন ভার্বেস্কাম গণে এবং অসংখ্য সঙ্কর বংশধর সৃষ্টি করে, তথাপি এই সঙ্কররা উল্লেখযোগ্যভাবে বন্ধ্যা হয়। অন্যদিকে কতিপয় প্রজাতি আছে যাদের কদাচিৎ সঙ্করিত করা যেতে পারে, অথবা অতি কষ্টে সঙ্করিত করা যায়, কিন্তু সর্বশেষে উৎপাদিত সঙ্কররা অতিশয় উর্বর হয়। এমনকি একই গণের সীমার মধ্যে, যেমন ডায়ানথাসে, এরকম দুটি বিরোধী ঘটনা ঘটে। 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের উভয়ের উর্বরতা বিশুদ্ধ প্রজাতির তুলনায় প্রতিকূল পরিবেশের দ্বারা আরও সহজেই প্রভাবিত হয়। কিন্তু প্রথম অগত্য বংশধরদের উর্বরতা এভাবে সহজাতভাবে পরিবর্তনশীল হয়; কারণ এটি মাত্রায় সবসময় সমান হয় না যখন একই দুটি প্রজাতি একই পরিবেশে সঙ্করিত হয়; এটি অংশত পরীক্ষার জন্য পছন্দকৃত এককদের জৈব সংগঠনের ওপর নির্ভর করে। সেরূপে এটি সঙ্করদের ক্ষেত্রেও হয়, কারণ এদের উর্বরতার মাত্রাটি একই ক্যাপসুলের বীজ থেকে উদ্ভূত এবং একই পরিবেশে প্রভাবিত কতিপয় এককে বিরাটভাবে ভিন্ন হতে প্রায়শই দেখা যায়। 

সুসম্বদ্ধ সম্পর্ক পদটির অর্থ হচ্ছে অবয়বে ও জৈবিক সংগঠনে প্রজাতিদের মধ্যে সাধারণ সাদৃশ্য। এখন এদের থেকে উৎপন্ন প্রথম অপত্য বংশধর এবং সঙ্করদের উর্বরতা বহুলাংশে এদের সুসম্বদ্ধ সম্পর্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি সঙ্করদের মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, যারা সিস্টেম্যাটিস্টদের দ্বারা ভিন্ন গোত্রে শ্রেণীভুক্ত প্রজাতিদের মধ্য থেকে কখনও উদ্ভূত হয়নি; এবং পক্ষান্তরে এটিও দেখা গেছে যে নিকট সম্পর্কীয় প্রজাতিরা সহজেই মিলিত হয়েছে। কিন্তু সুসম্বদ্ধ সম্পর্ক এবং সঙ্করণের সহজসাধ্যতার মধ্যে ঐক্য কোন মতেই কঠোর নয়। অতি নিকট সম্পর্কীয় প্রজাতিদের মধ্যে অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যারা মিলিত হবে না অথবা অতিশয় কষ্টকরভাবে মিলিত হবে; এবং বিপরীতক্রমে অতি ভিন্ন প্রজাতিরা অতি সহজেই মিলিত হয়। একই গোত্রে একটি গণ, যেমন ডায়ানথাস, থাকতে পারে, যেখানে অসংখ্য প্রজাতি সহজেই সঙ্করিত হতে পারে; সাইলেন-এর মত অন্য একটি গণে অতি নিকট সম্পর্কিত প্রজাতিদের মধ্যে একটি সঙ্কর সৃষ্টি করার ঐকান্তিক চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এমনকি একই গণের মধ্যে আমরা একই ভিন্নতার সাক্ষাৎ পাই, যেমন নিকোটিয়ানার অনেক প্রজাতি অন্য যে-কোন গণের প্রজাতিদের তুলনায় বহুলাংশে সঙ্করিত হয়েছে; কিন্তু গার্টনার লক্ষ্য করেছিলেন যে নিকোটিয়ানা অ্যাকুমিনাটা, যা বিশেষরূপে একটি ভিন্ন প্রজাতি নয়, নিষিক্ত হতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে অথবা নিকোটিয়ানার কমপক্ষে অন্য আটটি প্রজাতির দ্বারা নিষিক্ত হয়েছে। অনুরূপ অনেক ঘটনার কথাও বলা যায়। 

দুটি প্রজাতির সঙ্করণে বাধা দিতে কি প্রকার বা কত পরিমাণ পার্থক্য যথেষ্ট সে ব্যাপারে কেউ ইঙ্গিত দিতে সমর্থ নয়। এটি দেখা যেতে পারে যে স্বভাবে এবং সাধারণ আকৃতিতে অতিশয় ভিন্ন এবং ফুলের প্রত্যেক অংশে, এমনকি পরাগরেণুতে, ফলে ও বীজপত্রে সুচিহ্নিত পার্থক্য সমেত উদ্ভিদরা সঙ্করিত হতে পারে। বর্ষজীবী, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদরা, পর্ণমোচি ও চিরহরিৎ বৃক্ষরা, বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী, অতিশয় পৃথক জলবায়ুতে অভিযোজিত উদ্ভিদরা প্রায়শই সহজেই সঙ্করিত হতে পারে। 

দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্করায়ণের অর্থ হচ্ছে, ধরুন খোজা করা হয়নি এমন একটি ঘোড়ার সঙ্গে একটি স্ত্রী-গাধার প্রথম সঙ্করায়ণ এবং পুরুষ-গাধার সঙ্গে ঘোটকীর; তখন এই দুই প্রজাতিকে পারস্পরিকভাবে সঙ্করিত হয়েছে বলে বলা হয়। পারস্পরিক সঙ্করায়ণের ক্ষেত্রে প্রায়শই সম্ভবপর ব্যাপক পার্থক্য থাকে। এরূপ ঘটনাগুলি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরা প্রমাণ করে যে সঙ্করিত হওয়ার জন্য দুটি প্রজাতির সামর্থ্য এদের সুসংবদ্ধ সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, অর্থাৎ জননতন্ত্র ছাড়া অবয়বে অথবা জৈব সংগঠনে যে-কোন পার্থক্য। একই দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্করায়ণের ফলের বৈচিত্র্য বহুপূর্বে কোয়েলরয়টার লক্ষ্য করেছিলেন। উদাহরণ দেওয়া যাক : মিরাবিলিস লংগিফ্লোরা নামক উদ্ভিদের পরাগ দ্বারা মিরাবিলিস জলাপা নামক প্রজাতিকে সহজেই নিষিক্ত করা যেতে পারে এবং এরূপে সৃষ্ট সঙ্কররা যথেষ্ট উর্বর ক্ষমতাসম্পন্ন হয়, কিন্তু কোয়েলরয়টার পর পর আট বছর ধরে দুশোরও বেশী বার পারস্পরিকভাবে মিরাবিলিস জলাপা-র পরাগরেণুর সঙ্গে মিরাবিলিস লংগিফ্লোরাকে নিষিক্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অন্য কতিপয় চমৎকার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। থুরেট কোন কোন সমুদ্রআগাছা অথবা ফুকির ক্ষেত্রে একইপ্রকার ঘটনা লক্ষ্য করেছিলেন। অধিকন্তু, গার্টনার লক্ষ্য করেছিলেন যে পারস্পরিক সঙ্কর সৃষ্টির ক্ষমতার এই পার্থক্য কম মাত্রায় অতি সাধারণ। এমনকি নিকট সম্পর্কীয় আকারদের ক্ষেত্রেও তিনি এটি লক্ষ্য করেছিলেন, যাদের অনেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী শুধুমাত্র ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেন (যেমন ম্যাথিওলা অ্যানুয়া এবং জিলাব্রা)। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে পারস্পরিক সঙ্করণ থেকে উদ্ভূত সঙ্কররা, যদিও নিশ্চয় ঐ একই দুটি প্রজাতির সংমিশ্রণে সৃষ্ট, একটি প্রজাতি প্রথমে পিতা হিসেবে এবং পরে মাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যদিও বহিঃস্থ বৈশিষ্ট্যগুলিতে কদাচিৎ ভিন্ন হয়, তবুও এরা সাধারণতঃ জননক্ষমতায় অল্পমাত্রায় এবং মাঝেমাঝে উচ্চমাত্রায় ভিন্ন হয়। 

গার্টনারের গবেষণা থেকে আরও কয়েকটি অনন্য নিয়ম এখানে দেওয়া যেতে পারে। যেমন, কোন কোন প্রজাতির অন্য প্রজাতিদের সঙ্গে সঙ্করিত হওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে; সঙ্কর বংশধরে নিজেদের চেহারার ছাপ ফেলার ব্যাপারে একই গণের অন্য প্রজাতিদের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে; কিন্তু এই দুটি ক্ষমতা মোটেই অকাট্যরূপে একত্রে তাল রেখে চলে না। কোন কোন সঙ্কর রয়েছে, যারা তাদের দুই পিতামাতার মধ্যবর্তী একটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করার পরিবর্তে, সবসময় তাদের একটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ হয়; এবং এরূপ সঙ্কররা বহিরাকৃতিতে নিজেদের পিতামাতা প্রজাতির একটির সদৃশ হলেও, বিরল ঘটনা ছাড়া অতিশয় বন্ধ্যা হয়। অতএব আবার সঙ্করদের মধ্যে যারা সাধারণতঃ দেহগঠনে তাদের পিতামাতাদের মধ্যবর্তী হয়, অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক কোন কোন সময় এককদের জন্ম হয়, যারা তাদের পিতামাতাদের যে-কোন একটির সঙ্গে গভীরভাবে সদৃশ হয়; এবং এইসব সঙ্কররা প্রায় সবসময় বন্ধ্যা হয়, এমনকি যখন একই ক্যাপসুলের বীজ থেকে উদ্ভুত অন্য সঙ্করদের বিশেষ মাত্রার উর্বরতা ক্ষমতা থাকে তখনও। এইসব ঘটনা দেখায় একটি সঙ্করের উর্বরতা কেমন করে সম্পূর্ণরূপে যে-কোন বিশুদ্ধ পিতামাতার বহিরাকৃতিতে সদৃশতা নিরপেক্ষ হতে পারে। 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের জননক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারক এখানে প্রদত্ত কতিপয় নিয়ম পর্যালোচনা করে, আমরা দেখি যে যখন আকাররা, যাদের নিশ্চয়ই ভাল এবং স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, মিলিত হয়, তখন তাদের জননক্ষমতা শূন্য থেকে নিখুঁত জননক্ষমতায় ক্রমবিন্যস্ত হয়, অথবা এমনকি কোন কোন পরিবেশে অধিক উর্বরতাসম্পন্ন হয়; এদের জননক্ষমতা প্রতিকূল এবং অনুকূল পরিবেশে প্রভাবিত হওয়া ছাড়া, স্বভাবসিদ্ধভাবে পরিবর্তনশীল হয়; এই সঙ্করণ থেকে উদ্ভূত প্রথম অপত্য বংশধর এবং সঙ্করগুলিতে কোন মতেই একই মাত্রার হয় না; যে-কোন পিতামাতার বহিরাকৃতিতে সদৃশতার মাত্রার সঙ্গে সঙ্করদের উর্বরতা সম্পর্কিত হয় না; এবং অবশেষে, যে-কোন দুটি প্রজাতির মধ্যে প্রথম অপত্য বংশধর সৃষ্টি করার সহজসাধ্যতা পরস্পরের সঙ্গে সদৃশতার মাত্রা অথবা এদের সুসংবদ্ধ সম্পর্কের দ্বারা সবসময় নিয়ন্ত্রিত হয় না। পরের বক্তব্যটি একই দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্করণের পরিণামের পার্থক্যের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, কারণ যেহেতু একটি প্রজাতি অথবা অন্য একটি প্রজাতি পিতা অথবা মাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, মিলন ঘটানোর সহজসাধ্যতায় সাধারণতঃ কিছু-কিছু ও মাঝেমধ্যে সম্ভবপর ব্যাপক পার্থক্য থাকে। অধিকন্তু, পারস্পরিক সঙ্করায়ণ থেকে উদ্ভূত সঙ্কররা জননক্ষমতায় প্রায়শই ভিন্ন হয়। 

এখন এইসব জটিল এবং অনন্য নিয়ম কি ইঙ্গিত দেয় যে প্রকৃতিতে বিশৃঙ্খলা রোধ করতে প্রজাতিরা বন্ধ্যাত্বের গুণ দ্বারা গুণান্বিত হয়েছে? আমি তা মনে করি না। কারণ যখন বিভিন্ন প্রজাতি সঙ্করিত হয়, তখন বন্ধ্যাত্ব কেন মাত্রায় এত ভিন্ন হবে, কারণ আমরা নিশ্চয় অনুমান করবো যে সকলের একত্রে মিশ্রিত হওয়া প্রতিরোধ করা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ? একই প্রজাতির এককগুলিতে বন্ধ্যাত্বের মাত্রা স্বভাবসিদ্ধভাবে পরিবর্তনশীল হবে কেন? কেন কতিপয় প্রজাতি সহজেই সঙ্করিত হবে এবং তথাপি অতি বন্ধ্যা সঙ্কর সৃষ্টি করবে এবং অন্য প্রজাতিরা অতিশয় কষ্টকরভাবে সঙ্করিত হবে এবং তথাপি ভাল উর্বর সঙ্কর সৃষ্টি করবে? একই দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি পারস্পরিক সঙ্করণের ফলে প্রায়শই কেন এত পার্থক্য হবে? এমনকি জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে যে সঙ্করদের উদ্ভবের সুযোগ কেন দেওয়া হয়েছে? সঙ্কর সৃষ্টিতে প্রজাতিদের বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা এবং এরপর বন্ধ্যাত্বের ভিন্ন মাত্রা দ্বারা এদের আরও বংশবৃদ্ধি রোধ করা, যা এদের পিতামাতাদের মধ্যে প্রথম মিলনের সুবিধার সঙ্গে সঠিকভাবে সম্পর্কিত নয়, একটি অদ্ভুত বন্দোবস্ত। 

বিপরীতক্রমে, পূর্বোক্ত নিয়ম ও ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের উভয়েরই বন্ধ্যাত্ব এদের জননতন্ত্রে অজ্ঞাত পার্থক্যের ওপর নিছক আপতিক অথবা নির্ভরশীল; পার্থক্যগুলো এত অদ্ভুত ও সীমিত প্রকৃতির হয় যে একই দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্করায়ণে, একটির পুরুষ যৌন উপাদান অন্যটির স্ত্রী যৌন উপাদানের ওপর প্রায়শই মুক্তভাবে ক্রিয়াশীল হবে, কিন্তু বিপরীতদিকে নয়। একটি উদাহরণ দ্বারা আর একটু ভালভাবে ব্যাখ্যা করা বিধেয় হবে আমি এর দ্বারা কি বোঝাতে চাই যে বন্ধ্যাত্ব অন্য পার্থক্যগুলোর ওপর আপতিক হয় কিন্তু তা বিশেষ একটি জন্মগত গুণ নয়। অন্য একটি গাছের ওপর কোন গাছের কলমিত হওয়ার ক্ষমতাটি প্রাকৃতিক অবস্থায় এর কল্যাণের পক্ষে অপ্রয়োজনীয় বলে আমি সাময়িকভাবে ধরে নিচ্ছি যে কেউ মনে করবে না যে এই ক্ষমতাটি বিশেষ একটি জন্মগত গুণ, কিন্তু স্বীকার করবে যে এটি দুটি গাছের বৃদ্ধির নিয়মের পার্থক্যগুলোর ওপর আপতিক হয়। একটি বৃক্ষ তার বৃদ্ধির হারে, কাঠের কাঠিন্যে, প্রারসের প্রবাহ পর্যায়কালে অথবা প্রাণরসের স্বভাব ইত্যাদিতে পার্থক্যের জন্য অন্য বৃক্ষকে কেন গ্রহণ করবে না তার কারণ আমরা মাঝেমাঝে লক্ষ্য করি, কিন্তু অসংখ্য ক্ষেত্রে আমরা কোন কারণ দর্শাতে পারি না। দুটি উদ্ভিদের আকারে বিরাট বৈচিত্র্য, যেমন একটি কাষ্ঠময় ও অন্যটি বীরুৎ, একটি চিরসবুজ ও অন্যটি পর্ণমোচি এবং বিভিন্ন জলবায়ুতে অভিযোজন, দুটি উদ্ভিদের কলম করতে সবসময় বাধা হয় না। যেমন সঙ্করণে, তেমনি কলম করতেও ক্ষমতাটি সুসম্বদ্ধ সম্পর্কের দ্বারা সীমায়িত হয়, কারণ কেউই সম্পূর্ণ ভিন্ন গোত্রের বৃক্ষগুলিকে একত্রে কলম করতে সমর্থ হয়নি; এবং পক্ষান্তরে, নিকট সম্পর্কযুক্ত প্রজাতিরা এবং একই প্রজাতির ভ্যারাইটিদের সচরাচর তবে সর্বদা নয়, সহজেই কলম করা যেতে পারে। কিন্তু সঙ্করণের ক্ষমতাটির মত এই ক্ষমতাটি সুসম্বদ্ধ সম্পর্কের দ্বারা কোন মতেই সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত হয় না। যদিও একই গোত্রের অন্তর্গত অনেক ভিন্ন গণগুলোকে একত্রে কলম করা হয়েছে, অন্য ক্ষেত্রে একই গণের প্রজাতিরা পরস্পরকে গ্রহণ করে না। একই গণের একটি সদস্য আপেল গাছের তুলনায় ন্যাসপাতি গাছকে কুইন্‌স্‌ গাছের ওপর সহজেই কলম করা যেতে পারে। কুইন্স্ গাছ আবার ভিন্ন গণের অন্তর্গত। এমনকি ন্যাসপাতি গাছের বিভিন্ন ভ্যারাইটিরা কুইন্‌স্‌ গাছের থেকে বিভিন্ন মাত্রার সুবিধা গ্রহণ করে; সেরূপে পিচ এবং অ্যাপ্রিকটের বিভিন্ন ভ্যারাইটিরা প্লামের কোন কোন ভ্যারাইটিদের থেকে বিভিন্ন মাত্রার সুবিধা গ্রহণ করে। 

যেমন গার্টনার আবিষ্কার করেছিলেন যে সঙ্করণে একই দুটি প্রজাতির বিভিন্ন এককগুলোতে কোন কোন সময় একটি সহজাত পার্থক্য থাকে, সেইরকম স্যাগারেট বিশ্বাস করেন যে একত্রে কলমিত হতে একই দুটি প্রজাতির বিভিন্ন এককগুলোর ক্ষেত্রেও সেটি হয়। যেমন পারস্পরিক সঙ্করণে মিলন ঘটানোর সুবিধাটি প্রায় সমান হয় না, সেরূপে এটি কোন কোন সময় কলমের ক্ষেত্রেও হয়; যেমন, সাধারণ গুসবেরি গাছকে কুরান্ট গাছের ওপর কলম করা যেতে পারে না, বিপরীতে কুর‍্যান্ট গাছ গুসবেরি গাছের ওপর কলমিত হবে, যদিও কষ্টকরভাবে। 

আমরা দেখেছি যে অসম্পূর্ণ জননতন্ত্র সম্বলিত সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব সুসম্পূর্ণ জননতন্ত্র সম্বলিত দুটি বিশুদ্ধ প্রজাতির মিলনের বাধা থেকে একটি ভিন্ন বিষয়; তথাপি স্বতন্ত্র এই দুই শ্রেণীর ঘটনাসমূহ বহুলাংশে সমান্তরাল। কলম প্রক্রিয়ায় কোন কোন সময় অনুরূপ ঘটনা ঘটে; কারণ থোউইন আবিষ্কার করেছিলেন যে রোবিনিয়ার তিনটি প্রজাতি, যারা স্বাধীনভাবে বীজ উৎপাদন করে এবং যাদের একটি চতুর্থ প্রজাতির ওপর বিরাট অসুবিধা ছাড়াই কলম করা যেতে পারে, এরূপ কলমিত হওয়ার পর বন্ধ্যা হয়েছিল। বিপরীতক্রমে, সরবাস গণের কোন কোন প্রজাতি, অন্য প্রজাতিদের ওপর কলম করার পর তার নিজের দুগুণ ফল উৎপাদন করেছিল। হিপিয়াস্ট্রম, প্যাসিফ্লোরা ইত্যাদি উদ্ভিদের অসাধারণ ঘটনাসমূহ এই পরের বিষয়টি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এরা একই গাছের পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার তুলনায় একটি ভিন্ন প্রজাতির পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হলে আরও স্বাধীনভাবে বীজ উৎপাদন করে। 

এরূপে আমরা দেখি যে কলমিত স্টকগুলির শুধুমাত্র এঁটে থাকা এবং জননপ্রক্রিয়ায় পুরুষ ও স্ত্রী উপাদানগুলোর মিলনের মধ্যে যদিও একটি স্পষ্ট এবং বিরাট পার্থক্য রয়েছে, তথাপি দুটি ভিন্ন প্রজাতির কলমের এবং সঙ্করণের পরিণামের বিরাট মাত্রায় সমান্তরালতা রয়েছে। বৃক্ষদের পরস্পরের ওপর কলমিত হওয়ার অনায়াসসাধ্যতাকে নিয়ন্ত্রণকারী জটিল অদ্ভুত নিয়মগুলোকে এদের অঙ্গজতন্ত্রের অজ্ঞাত পার্থক্যের আনুষঙ্গিক হিসেবে যেমন আমরা লক্ষ্য করবো, সেরকম আমরা বিশ্বাস করি যে প্রথম সঙ্করণের সহজসাধ্যতা নিয়ন্ত্রণকারী আরও জটিল নিয়মগুলো এদের জননতন্ত্রের অজ্ঞাত পার্থক্যের আনুষঙ্গিক হয়। উভয় ক্ষেত্রে, এই পার্থক্যগুলো কিছু অংশে সুসম্বদ্ধ সম্পর্ককে অনুসরণ করে, যে পদটির দ্বারা জীবদের মধ্যে প্রত্যেক ধরনের অসদৃশতা এবং সদৃশতা প্রকাশ করার চেষ্টা হয়েছে। তথ্যগুলো কোন মতেই এটি ইঙ্গিত করে না যে বিভিন্ন প্রজাতিকে হয় কলম করতে অথবা সঙ্করিত করতে বিরাট অথবা কম মাত্রার প্রতিবন্ধকটি একটি বিশেষ জন্মগত গুণ; যদিও সঙ্করণের ক্ষেত্রে বাধাটি প্রজাতিক আকারদের সহিষ্ণুতা ও স্থায়িত্বের পক্ষে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কলমের ক্ষেত্রে এটি এদের উপকারের জন্য অপ্রয়োজনীয়। 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের উদ্ভব এবং কারণ 

একসময় এটি আমার কাছে সম্ভবপর বলে মনে হয়েছিল, যেমন অন্য অনেক ক্ষেত্রেও হয়েছিল, যে প্রথম অপত্য বংশধর এবং সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব ঈষৎ হ্রাসপ্রাপ্ত জননক্ষমতার প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অর্জিত হয়ে থাকবে, যা অন্য যে-কোন পরিবর্তনের মত, অন্য একটি ভ্যারাইটির সঙ্গে সঙ্করণের পর একটি ভ্যারাইটির কোন কোন এককে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভূত হয়েছিল। কারণ দুটি ভ্যারাইটি অথবা জায়মান প্রজাতির পক্ষে এটি স্পষ্টত লাভজনক হবে, যদি একই নীতি অনুসারে এদের মিশ্রণ থেকে দূরে রাখা যায়, যেমন যখন মানুষ একই সময়ে দুটি ভ্যারাইটিকে নির্বাচন করবে, তখন এটি প্রয়োজনীয় যে সে এদের পৃথক করে রাখবে। প্রথমতঃ, বলা যেতে পারে যে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাতিরা সঙ্করিত হলে প্রায়শই বন্ধ্যা হয়; এখন পারস্পরিকভাবে বন্ধ্যা হওয়া এরূপ পৃথকীকৃত প্রজাতিদের পক্ষে স্পষ্টতঃ কোন লাভ হবে না এবং ফলস্বরূপ এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকরী হতে পারত না; কিন্তু এটা বোধহয় বলা যেতে পারে যে, অন্য কোন সহযোদ্ধার দ্বারা একটি প্রজাতিকে বন্ধ্যা করা হলে অন্য প্রজাতির সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব একটি প্রয়োজনীয় সম্ভাবনা হিসেবে অনুসৃত হবে। দ্বিতীয়তঃ, এটি প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের যতখানি বিরোধী ততখানিই এটি বিশেষ সৃষ্টির বিরোধী। পারস্পরিক সঙ্করণে এক আকারের পুরুষ উপাদানটি দ্বিতীয় আকারের একটির ওপর সম্পূর্ণরূপে পুরুষত্বহীন হয়ে থাকবে, যখন অন্যদিকে একই সময়ে এই দ্বিতীয় আকারটির পুরুষ উপাদান প্রথম আকারকে স্বাধীনভাবে নিষিক্ত করতে সমর্থ হয়; কারণ জননতন্ত্রের এই অদ্ভুত অবস্থা যে-কোন প্রজাতির পক্ষে কদাচিৎ লাভজনক হয়ে থাকতে পারে। 

প্রজাতিদের পারস্পরিকভাবে বন্ধ্যা করে তুলতে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের কার্যকর সম্ভাবনা বিচার-বিবেচনা করার সময় অল্প গৌণতর উর্বরতা থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ্যাত্বে অনেক সংক্রমণগত ধাপের অবস্থানে সবচেয়ে বড় বাধা রয়েছে দেখা যাবে। এটি স্বীকার করা যেতে পারে যে পিতামাতা আকারের বা অন্য কোন ভ্যারাইটির সঙ্গে সঙ্করণের পর কিছুমাত্রায় বন্ধ্যা করা গেলে একটি জায়মান প্রজাতির পক্ষে তা লাভজনক হবে; কারণ এরূপে নূতন প্রজাতির সৃষ্টির প্রক্রিয়ার সঙ্গে এদের রক্তের মিশ্রণ ঘটাতে কিছু জারজ এবং হীনতর বংশধর জন্মাবে। কিন্তু যিনি সেই ধাপগুলো সম্বন্ধে ভাবতে চাইবেন যেগুলোর দ্বারা বন্ধ্যাত্বের এই প্রথম মাত্রাটি, যা অসংখ্য প্রজাতির ক্ষেত্রে সাধারণ, উচ্চমাত্রায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং এই উচ্চমাত্রাটি প্রজাতিদের ক্ষেত্রে সার্বজনীন হয়, যারা আবার গণ অথবা গোত্রে পৃথকভাবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে, তাঁর কাছে বিষয়টি অতি জটিল বলে মনে হবে। গভীরভাবে চিন্তার পর আমার মনে হয়েছে এটি প্রাকৃতিক নির গাধ্যমে কার্যকরী হয়ে থাকতে পারে না। যে-কোন দুটি প্রজাতির বিষয় ধরা যাক, যারা সঙ্করণের পর অল্প কতিপয় এবং বন্ধ্যা বংশধর সৃষ্টি করে; এখন, এমন কি আছে যা সেইসব এককদের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করত, যেগুলো অল্প উচ্চমাত্রায় পারস্পরিক অনুর্বরতার গুণ দ্বারা গুণান্বিত হয়েছে এবং যা এরূপে নিখুঁত বন্ধ্যাত্বের দিকে একটি ছোট ধাপের দ্বারা অগ্রসর হয়েছে? যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব তার ভূমিকা পালন করে থাকে, তাহলে এই প্রকার একটি অগ্রগতি অসংখ্য প্রজাতির ক্ষেত্রে অনবরত ঘটেছে, কারণ অসংখ্য প্রজাতি পারস্পরিকভাবে পুরোপুরি বন্ধ্যা হয়। বন্ধ্যা ক্লীব পতঙ্গদের ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস করার কারণ আছে যে এদের দৈহিক গঠন ও উর্বরতার রূপান্তরসমূহ প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয়েছে, এটি হয়েছে একই প্রজাতির অন্য সম্প্রদায়গুলোর তুলনায় এদের সম্প্রদায়টিতে এভাবে অপ্রত্যক্ষভাবে প্রদত্ত একটি সুবিধার দ্বারা; কিন্তু একটি সামাজিক সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া একটি একক প্রাণী যদি অন্য কোন ভ্যারাইটির সঙ্গে সঙ্করণের পর অল্পমাত্রায় বন্ধ্যা হয়, তাহলে এভাবে সে নিজে কোন সুবিধা লাভ করবে না অথবা একই ভ্যারাইটির অন্যান্য এককদের যে-কোন সুবিধা অপ্রত্যক্ষভাবে প্রদান করবে এবং এভাবে তাদের সংরক্ষণে পথ প্রদর্শন করবে। 

কিন্তু এ সম্বন্ধে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা অনাবশ্যক, কারণ উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে আমাদের হাতে চূড়ান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে সঙ্করিত প্রজাতিদের বন্ধ্যাত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়া নিশ্চয় অন্য কোন পদ্ধতির দ্বারা হয়। গার্টনার এবং কোয়েলরয়টার উভয়েই প্রমাণ করেছেন যে অসংখ্য প্রজাতি সম্বলিত গণগুলোতে, সঙ্করণের ফলে অল্পতর বীজ উৎপাদন করে এমন প্রজাতি থেকে কখনও একটিও বীজ উৎপাদন করে না এমন অন্য প্রজাতি পর্যন্ত একটি সারি সৃষ্টি করা যেতে পারে, কিন্তু তথাপি ভ্রূণ স্ফীত হওয়ার জন্য অন্য কোন প্রজাতির পরাগরেণু দ্বারা প্রভাবিত হয়। আরও বন্ধ্যা এককদের নির্বাচন করা এখানে স্পষ্টতঃ অসম্ভবপর হয়, যারা ইতিমধ্যে বীজ উৎপাদন বন্ধ করেছে; সুতরাং বন্ধ্যাত্বের এই সর্বোচ্চ অবস্থা, যখন ভ্রূণটি কেবল প্রভাবিত হয়, নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে থাকতে পারে না; এবং সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন ক্রমগুলো নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মসমূহ এত অভিন্ন হয় যে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে কারণটি, তা যাই হোক না কেন, সমস্ত ক্ষেত্রে একই অথবা প্রায় একই হয়। 

প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টিকারী পার্থক্যসমূহের সম্ভবপর ধরণ সম্পর্কে আমরা এখন একটু গভীরভাবে মনোনিবেশ করবো। প্রথম অপত্য বংশধরদের ক্ষেত্রে, একটি মিলন ঘটাতে ও বংশধর উৎপাদন করতে বিরাট বা অল্প বাধাটি আপাতভাবে কতিপয় ভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। পুরুষ উপাদানটির কোন সময় ডিম্বকে পৌঁছাতে নিশ্চয় একটি ভৌতিক কারণ থাকে, ডিম্বাশয়ে পরাগ নালিকাদের পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ গর্ভকেশর সম্বলিত একটি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে যেমন হয়। আরও লক্ষ্য করা গেছে যে একটি প্রজাতির পরাগ দূর-সম্পর্কিত প্রজাতিদের গর্ভমুণ্ডে যখন স্থাপন করা হয়, যদিও পরাগ নালিকারা বেরিয়ে থাকে, এরা গর্ভমুণ্ডের পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে না। আবার পুরুষ উপাদান স্ত্রী উপাদানের কাছে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু ভ্রূণকে বিকশিত করতে অসমর্থ হয়, যমন ফিউসি গণের উপর থুরেটের কতিপয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়েছে বলে মনে হয়। যেমন কোন কোন গাছকে অন্য গাছের ওপর কলম করা যেতে পারে না, সেইরকম এসব বিষয়ে এর বেশী ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। অবশেষে একটি ভ্রূণ বিকশিত এবং তারপর প্রাথমিক বয়সে নষ্ট হতে পারে। পরের বিকল্পটিতে যথোপযুক্তভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়নি; কিন্তু আমাকে জানানো মিঃ হিউইট-এর পর্যবেক্ষণসমূহ থেকে, মোরগ ও ফেজান্ট নামে এক ধরনের পাখির মধ্যে সঙ্করণ ঘটানোর ব্যাপারে যাঁর বিরাট অভিজ্ঞতা আছে, আমি বিশ্বাস করি যে ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থায় মৃত্যুই হচ্ছে প্রথম অপত্য বংশধরের বন্ধ্যাত্বের পৌনঃপুনিক কারণ। মোরগ-মুরগীর (গ্যালাসের) তিনটি প্রজাতি এবং এদের সঙ্করদের মধ্যে বিভিন্ন সঙ্করণগুলি থেকে উৎপন্ন প্রায় ৫০০ ডিম পরীক্ষার ফল মিঃ সলটার সম্প্রতি প্রদান করেছেন; এইসব ডিমগুলির অধিকাংশই নিষিক্ত হয়েছিল; এবং নিষিক্ত ডিমদের অধিকাংশের ভ্রূণগুলি হয় অংশত বেড়ে উঠেছিল এবং এরপর বিনষ্ট হয়েছিল, অথবা প্রায় পূর্ণাঙ্গ হয়েছিল, কিন্তু মুরগীছানারা খোলস ভাঙ্গতে অসমর্থ হয়েছিল। জন্মানো মুরগীছানাদের মধ্যে, চার-পঞ্চমাংশের বেশী প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে অথবা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে “কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়া, আপাতভাবে শুধুমাত্র বাঁচার অসমর্থতার দরুন মারা গিয়েছিল,” যাতে করে ৫০০ ডিমের মধ্যে মাত্র চারটি মুরগীছানা বেঁচেছিল। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, সঙ্করিত ভ্রূণ সম্ভবতঃ এভাবে ধ্বংস হয়; অন্ততঃ এটি জানা গেছে যে অতিশয় ভিন্ন প্রজাতিদের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সঙ্কররা কোন কোন সময় দুর্বল ও খর্ব হয় এবং প্রাথমিক বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়; যার সম্পর্কে ম্যাক্স উইচুরা সঙ্কর উইলোর কয়েকটি চমৎকার ঘটনার কথা সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন। এখানে লক্ষ্য করা যেতে পারে যে অপুংজনির (Parthenogenesis) কতিপয় ক্ষেত্রে, সিল্ক মথের ডিমদের মধ্যে অনিষিক্ত ভ্রণসমূহ বিকাশের প্রথম ধাপগুলো অতিক্রম করে এবং তারপর ভিন্ন প্রজাতিদের মধ্যে সঙ্করণের দ্বারা উৎপন্ন ভ্রূণদের মত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। আমি যতদিন এই বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত হইনি, ততদিন সঙ্কর ভ্রূণগুলোর প্রাথমিক বয়সে মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্বাস করতে অনিচ্ছুক ছিলাম; কারণ সঙ্কররা, একবার জন্মানোর পর, সাধারণত স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘজীবী হয়, যেমন আমরা সাধারণ খচ্চরদের ক্ষেত্রে দেখি। তবে সঙ্কররা জন্মানোর আগে এবং পরে বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে পতিত হয় : একটি দেশে যখন জন্মায় ও বাঁচে সেখানে এদের পিতামাতারাও বসবাস করে, বাঁচার জন্য এরা সাধারণতঃ উপযুক্ত জীবন-পরিবেশ পায়। কিন্তু একটি সঙ্কর তার মাতার স্বভাব ও জৈবিক গঠনের শুধুমাত্র অর্ধেকের অংশীদার হয়; যতদিন পর্যন্ত মাতার গর্ভে অথবা মাতার দ্বারা উৎপন্ন ডিমের অথবা বীজের মধ্যে এরা লালিত-পালিত হয়, ততদিন জন্মের আগে এরা কিছুমাত্রায় অনুপযুক্ত পরিবেশের প্রভাবাধীন হতে পারে এবং ফলস্বরূপ প্রাথমিক বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হতে বাধ্য হতে পারে; আরও বিশেষভাবে, সমস্ত নিতান্ত বাচ্চারা ক্ষতিকর অথবা অস্বাভাবিক জীবন-পরিবেশে স্পষ্টতঃ স্পর্শকাতর হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কারণটি সম্ভবতঃ গর্ভধারণের প্রাথমিক প্রক্রিয়ার অসম্পূর্ণতার ওপর নির্ভর করে, যার ফলে বরং নূতন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার তুলনায় ভ্রূণটি অসম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। 

সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব প্রসঙ্গে, যেখানে যৌন উপাদানসমূহ অসম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়, সেখানে বিষয়টি কিছু পরিমাণে ভিন্ন হয়। আমি একাধিকবার অসংখ্য তথ্যের দ্বারা দেখাতে চেষ্টা করেছি যে, যখন প্রাণী এবং উদ্ভিদরা তাদের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে অপসারিত হয়, তখন তাদের জননতন্ত্রের ভয়ানকভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; আসলে এটা হচ্ছে প্রাণীদের গৃহপালনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। এভাবে সুআবিষ্ট বন্ধ্যাত্ব এবং সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল আছে। উভয় ক্ষেত্রেই, বন্ধ্যাত্ব সাধারণ স্বাস্থ্য নিরপেক্ষ হয় এবং প্রায়শই বাড়তি আকার ও বিরাট বৈচিত্র্যময়তার সহযোগী হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বন্ধ্যাত্ব বিভিন্ন মাত্রায় ঘটে, উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষ উপাদানটি সবচেয়ে বেশী প্রবণতাযুক্ত হয়; কিন্তু কোন কোন সময় স্ত্রী উপাদানটি আরও বেশী প্রবণতাযুক্ত হয়। উভয়েতেই, প্রবণতাটি সুসম্বদ্ধ সম্পর্কের সঙ্গে কিছুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়, কারণ প্রাণী এবং উদ্ভিদদের সমগ্র গোষ্ঠীগুলো একই অস্বাভাবিক অবস্থার দ্বারা পুরুষত্বহীন হয় এবং প্রজাতিদের সমগ্র গোষ্ঠীগুলো বন্ধ্যা সঙ্কর সৃষ্টি করার প্রবণতাযুক্ত হয়। পক্ষান্তরে, একটি গোষ্ঠীর একটি প্রজাতি কোন কোন সময় জননক্ষমতা সুরক্ষার জন্য পরিবেশের বিরাট পরিবর্তন প্রতিরোধ করে এবং একটি গোষ্ঠীর কোন কোন প্রজাতি অস্বাভাবিক ধরনের জননক্ষমতাসম্পন্ন সঙ্করদের সৃষ্টি করে। পরীক্ষা না করা পর্যন্ত কেউ বলতে পারেন না আটক অবস্থায় কোন বিশেষ প্রাণী প্রজননক্ষম হবে কিনা অথবা কোন বিদেশী গাছ চাষ করলে স্বাধীনভাবে বীজ উৎপাদন করে কিনা; চেষ্টা না করা পর্যন্ত কেউ বলতে পারেন না একটি গণের যে-কোন দুটি প্রজাতি কমবেশী বন্ধ্যা সঙ্কর সৃষ্টি করবে কিনা। অবশেষে, জীবরা যখন তাদের পক্ষে স্বাভাবিক নয় এমন অবস্থায় কয়েক বংশ ধরে রক্ষিত হয়, তখন তাদের পরিবর্তনের সম্ভাবনা অত্যধিক, যা তাদের জননতন্ত্র অংশত বিশেষভাবে প্রভাবিত হওয়ার জন্য হয় বলে মনে হয়, যদিও বন্ধ্যাত্ব উদ্ভূত হওয়ার তুলনায় মাত্রায় অল্প হয়। সঙ্করদের ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটে, কারণ এদের বংশধররা বংশপরম্পরায় পরিবর্তিত হতে স্পষ্টতঃ প্রবণ হয়, যেমন সব পরীক্ষাবিদরা লক্ষ্য করেছেন। 

এভাবে আমরা লক্ষ্য করি যে যখন জীবদের নূতন ও অস্বাভাবিক পরিবেশে রাখা হয় এবং যখন দুটি প্রজাতির অস্বাভাবিক সঙ্করণের দ্বারা সঙ্করদের সৃষ্টি হয়, তখন সাধারণ স্বাস্থ্য নিরপেক্ষভাবে, জননতন্ত্র একইভাবে প্রভাবিত হয়। একটি ক্ষেত্রে জীবন-পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, যদিও অতিশয় অল্পমাত্রায় হয় যা আমরা অনুধাবন করতে পারি না; অন্যক্ষেত্রে, অথবা সঙ্করদের ক্ষেত্রে, বহিরাবস্থা একইরূপ রয়েছে, কিন্তু জৈব সংগঠনটি দুটি ভিন্ন অবয়ব ও জৈবগঠন দ্বারা নষ্ট হয়েছে, নিশ্চয়ই জননতন্ত্রও একটিতে মিশ্রিত হয়েছে। কারণ পরস্পরের সঙ্গে অথবা জীবন-পরিবেশের সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গ অথবা প্রত্যঙ্গগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক অথবা বিকাশ অথবা পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়ায় কোন বিশৃংখলা ব্যতিরেকে দুটি জৈব শরীর একটিতে সংযুক্ত হওয়া কদাচিৎ সম্ভবপর হয়। যখন সঙ্কররা পরস্পরের সঙ্গে প্রজনিত হতে সমর্থ হয়, তখন এরা বংশপরম্পরায় বংশধরে একই সংযুক্ত সংগঠন প্রেরণ করে, এবং এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে এদের বন্ধ্যাত্ব, যদিও কিছুমাত্রায় পরিবর্তনশীল হয়, হ্রাস পায় না; এমনকি এটি বৃদ্ধি পেতে প্রবণ হয়। এটিই হচ্ছে অতি নিকট আন্তঃপ্রজননের ফল যা আগে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দুটি জৈব দেহের একত্রে একটিতে মিশ্রিত হওয়ার দ্বারা সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের উপরোক্ত মতবাদটি ম্যাক্স উইচুরা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন। 

তবে এটি নিশ্চয় স্বীকার করতে হবে যে উপরোক্ত অথবা অন্য কোন মতবাদ অনুসারে সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় আমরা বুঝতে পারি না; উদাহরণস্বরূপ, পারস্পরিক সঙ্করণ থেকে উৎপন্ন সঙ্করদের অসমান জননক্ষমতা; অথবা সেইসব সঙ্করদের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বন্ধ্যাত্ব, যারা পিতামাতার যে-কোনটির সঙ্গে আকস্মিকভাবে অথবা অস্বাভাবিকভাবে সদৃশ হয়। অথবা আমি দাবী করি না যে পূর্বোক্ত বক্তব্যসমূহ বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করে, অস্বাভাবিক পরিবেশে রাখলে কেন একটি জীব বন্ধ্যা হয় এর কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যে সব বিষয় আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি তা হচ্ছে দুটি ক্ষেত্রে, কোন না কোন ভাবে সম্পর্কিত বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে সাধারণ পরিণাম—একটি ক্ষেত্রে, যেখানে জীবন—পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, অন্য ক্ষেত্রে দুটি দেহের একটি দেহে মিশ্রণের ফলে দেহগঠন নষ্ট হয়েছে। 

সম্বন্ধযুক্ত অথচ অতিশয় ভিন্ন শ্রেণীর ঘটনার ক্ষেত্রেও একইরূপ উপমা প্ৰযোজ্য। অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত এটি একটি পুরানো এবং প্রায় সার্বজনীন বিশ্বাস যে, যা আমি অন্যত্র দেখিয়েছি, জীবন-পরিবেশের অল্প পরিবর্তন সমস্ত জীবের ক্ষেত্রেই উপকারী হয়। আমরা লক্ষ্য করি যে কৃষক এবং বাগানবিদরা অন্য দেশের ও আবহাওয়ার বীজ, কাণ্ড ইত্যাদি বিনিময় করে। প্রাণীদের রোগমুক্তির পর স্বাস্থ্য উদ্ধারের সময় এদের জীবন-স্বভাবের যে-কোন পরিবর্তন অতিশয় উপকারী হয়। আবার, প্রাণী এবং উদ্ভিদদের উভয় ক্ষেত্রেই, স্পষ্টতর সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে অতি সামান্য ভিন্ন একই প্রজাতির এককদের মধ্যে একটি সঙ্করণ বংশধরকে প্রাণপ্রাচুর্য ও জননক্ষমতা প্রদান করে; এবং কয়েক বংশ ধরে নিকটতম আত্মীয়দের মধ্যে নিকট আন্তঃপ্রজনন, যদি এদের একই জীবন-পরিবেশে রাখা হয়, সবসময় আকারের হ্রাস, শরীরের দুর্বলতা অথবা বন্ধ্যাত্ব ঘটায়। 

অতএব মনে হয় যে, একদিকে, জীবন-পরিবেশের অল্প পরিবর্তন সমস্ত জীবের পক্ষে উপকারী হওয়া, এবং অন্যদিকে, সামান্য সঙ্করণ অর্থাৎ একই প্রজাতির পুরুষ এবং স্ত্রীদের মধ্যে সঙ্করণ, যেখানে প্রজাতিরা সামান্য ভিন্ন জীবন-পরিবেশে থাকে অথবা যারা সামান্য পরিবর্তিত হয়, বংশধরকে প্রাণপ্রাচুর্য ও উর্বরতাশক্তি প্রদান করে। কিন্তু, যেমন আমরা দেখেছি, প্রাকৃতিক অবস্থায় কোন একই রকম জীবন-পরিবেশে অভ্যস্ত জীবগুলিকে যখন আটক অবস্থার মত একটি বিশেষভাবে পরিবর্তিত পরিবেশে রাখা হয়, তখন এরা প্রায়শই কম-বেশী বন্ধ্যা হয়, এবং আমরা জানি যে ব্যাপকভাবে এবং বিশেষভাবে ভিন্ন আকারদের মধ্যে একটি সঙ্করণ সঙ্কর সৃষ্টি করে, যারা প্রায় সবসময় কিছুমাত্রায় বন্ধ্যা হয়। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস জন্মেছে যে এই যুগ্ম সমান্তরালতা কোন মতেই একটি দুর্ঘটনা অথবা অলীক ঘটনা নয়। তাঁর নিজের দেশে অংশত আটকাবস্থায় রক্ষিত হাতি এবং অসংখ্য প্রাণীরা সন্তান উৎপাদনে কেন অসমর্থ হয় তার ব্যাখ্যা দিতে যিনি সমর্থ, তিনি সঙ্করদের এত বন্ধ্যা হওয়ার প্রাথমিক কারণ ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবেন কেমন করে এটি হয় যে আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের কয়েকটির জাতসমূহ, যাদের নূতন অথচ একইরূপ নয় এমন পরিবেশে রাখা হয়েছে, সকলে জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়, এরা ভিন্ন প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হলেও প্রজাতিরা যদি আদিমাবস্থায় সঙ্করিত হত তাহলে এরা সম্ভবতঃ বন্ধ্যা হত। উপরের দুটি সমান্তরাল শ্রেণীর ঘটনা সম্ভবতঃ কোন সাধারণ এবং অজ্ঞাত বন্ড দ্বারা একত্রে যুক্ত হয়েছে, যা মূলত জীবনপদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত; মিঃ হার্বার্ট স্পেন্সারের মতানুসারে এই পদ্ধতিটি হচ্ছে যে জীবন বিভিন্ন শক্তির অনবরত ক্রিয়া এবং প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে অথবা সৃষ্ট হয়, যে শক্তিগুলি সমগ্র প্রকৃতিতে সর্বদা একটি ভারসাম্য অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে প্রবণ হয়; এবং এই প্রবণতা যখন কোন পরিবর্তন দ্বারা সামান্য পরিমাণে নষ্ট হয়, তখন জীবনীশক্তি লাভবান হয়। 

পারস্পরিক দ্বিরূপতা ও ত্রিরূপতা 

এই বিষয়টি এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে এবং সঙ্করণের ওপর এটি কিছু আলোকপাত করে কিনা দেখা যেতে পারে। স্বতন্ত্র অর্ডারের অন্তর্গত কতিপয় উদ্ভিদ দুটি আকার উপস্থিত করে, যারা প্রায় সমান সংখ্যায় অবস্থান করে এবং জননতন্ত্র ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে ভিন্ন নয়; একটি আকারের একটি লম্বা গর্ভকেশর থাকে এবং পুংকেশরগুলি ছোট হয়, অন্যটির একটি ছোট গর্ভকেশর থাকে এবং পুংকেশর লম্বা হয়; দুটি আকারের পরাগরেণুসমূহ বিভিন্ন আকারের হয়। ত্রিরূপক উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে তিনটি আকার থাকে, যারা এরূপে স্ত্রীকেশর ও পুংকেশরদের দৈর্ঘ্যে, পরাগরেনুদের আকারে এবং রং ও অন্য কিছু বিষয়ে ভিন্ন হয়; এবং তিনটি আকারের প্রত্যেকটিতে পুংকেশরদের দুটি দল থাকে বলে তিনটি আকারের পুংকেশরদের মোট ছয়টি দল থাকে এবং স্ত্রীকেশর তিন ধরনের হয়। এই অঙ্গসমূহ লম্বায় পারস্পরিকভাবে এত আনুপাতিক হয় যে আকারদের দুটিতে অর্ধেক পুংকেশর তৃতীয় আকারের গর্ভমুণ্ডের সঙ্গে একই তলে অবস্থিত থাকে। ইতিমধ্যে আমি দেখিয়েছি এবং ফলাফলটি অন্য পর্যবেক্ষক দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে যে এইসব উদ্ভিদের সম্পূর্ণ উর্বরতা পেতে হলে এটি প্রয়োজনীয় যে একটি আকারের গর্ভমুণ্ড অন্য আকারটির সম উচ্চতায় পুংকেশর থেকে প্রাপ্ত পরাগরেণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়া উচিত, যাতে করে দ্বিরূপক প্রজাতিদের ক্ষেত্রে দুই মিলন, যাকে বৈধ বলা যেতে পারে, সম্পূর্ণভাবে উর্বরতাশক্তিসম্পন্ন হয়; এবং দুটি, যাকে অবৈধ মিলন বলা যেতে পারে, কমবেশী অনুর্বর হয়। ত্রিরূপক প্রজাতিদের ক্ষেত্রে, ছয়টি মিলন বৈধ হয় অথবা সম্পূর্ণ রূপে উর্বরতাশক্তিসম্পন্ন হয় এবং বারোটি অবৈধ হয় অথবা কমবেশী অনুর্বর হয়। 

দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদগুলোকে লক্ষ্য করলে দেখা যেতে পারে যে যখন এরা অবৈধভাবে অর্থাৎ গর্ভকেশরের সঙ্গে সম উচ্চতায় নয় এমন পুংকেশর থেকে প্রাপ্ত পরাগ দ্বারা নিষিক্ত হয়, তখন অনুর্বরতাটি মাত্রায় ভিন্ন হয়, এমনকি নিরঙ্কুশ ও সম্পূর্ণ বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত; ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সঙ্করণের সময় যেমন ঘটে সে-রকম। যেমন পরের ঘটনাটিতে বন্ধ্যাত্বের মাত্রা কমবেশী অনুকূল জীবন-পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নির্ভর করে, তেমনি এটি অবৈধ মিলনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি। এটি সুবিদিত যে একটি ভিন্ন প্রজাতির পরাগরেণু যদি একটি ফুলের গর্ভমুণ্ডের ওপর স্থাপন করা হয়, এবং তার নিজস্ব পরাগরেণু পরে এক সময়ে, এমনকি বেশ কিছু সময় পরেও, একই গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়, তাহলে এর কর্মপ্রক্রিয়া এত শক্তিশালী হয় যে এটি বহিরাগত পরাগরেণুর প্রভাবকে সাধারণতঃ বিনাশ করে; একই প্রজাতির কতিপয় আকারের পরাগরেণুদের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়, কারণ যখন এদের উভয়কেই একই গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়, তখন বৈধ পরাগরেণু অবৈধ পরাগরেণুর চেয়ে অধিকতর প্রজননক্ষমতাবিশিষ্ট হয়। কয়েকটি ফুলকে একটি অদ্ভুতভাবে রঞ্জিত প্রকার থেকে পরাগরেণুর দ্বারা প্রথমে অবৈধভাবে এবং চব্বিশ ঘণ্টা পরে বৈধভাবে নিষিক্ত করে আমি নিশ্চিতভাবে এটি জানতে পেরেছিলাম। সমস্ত চারাগাছগুলো একইভাবে রঙ্গিন হয়েছিল, এবং এটি প্রমাণ করে যে চব্বিশ ঘণ্টা পরে প্রয়োগ করা হলেও বৈধ পরাগরেণুগুলো সামগ্রিকভাবে বিনষ্ট হয়েছিল অথবা আগে প্রযুক্ত অবৈধ পরাগরেণুর কর্মপ্রক্রিয়াকে বাধা দিয়েছিল। আবার একই দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্কর সৃষ্টি করার পরিণামে মাঝেমাঝে একটি বিরাট পার্থক্য হয়ে থাকে, যেভাবে ত্রিরূপক উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে একই জিনিস ঘটে; উদাহরণস্বরূপ, লিথ্রাম স্যালিক্যারিয়া নামক উদ্ভিদের মাঝামাঝি ধরনের গর্ভদণ্ড সমেত আকারটি হ্রস্ব গর্ভদণ্ড সমেত আকারের দীর্ঘতর পুংকেশরদের পরাগরেণু দ্বারা অতি সহজেই অবৈধভাবে নিষিক্ত হয়েছিল এবং অনেক বীজ উৎপাদন করেছিল; কিন্তু পরের আকারটি মধ্যগর্ভদণ্ড সমেত আকারটির দীর্ঘতর পুংকেশরগুলোর দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর একটিও বীজ উৎপাদন করেনি। 

এইসব ক্ষেত্র এবং অন্য কিছু ক্ষেত্রে, একই সন্দেহাতীত প্রজাতির আকাররা অবৈধভাবে মিলিত হলে দুটি ভিন্ন প্রজাতি সঙ্করণের পর যে-রকম ব্যবহার করে ঠিক সেইরকম ব্যবহার করে। কতিপয় অবৈধ মিলন থেকে উদ্ভূত অসংখ্য চারাগাছকে আমি চার বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিণামটি হচ্ছে যে, এইসব অবৈধ উদ্ভিদরা সম্পূর্ণরূপে উর্বরতাশক্তিসম্পন্ন নয়। দ্বিরূপক প্রজাতি থেকে লম্বা ও হ্রস্ব গর্ভদণ্ড সমেত অবৈধ উদ্ভিদদের উভয়ই, এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদগুলো থেকে তিনটি অবৈধ আকারের উদ্ভব ঘটানো সম্ভবপর হয়। এরপর এগুলোর একটি বৈধ উপায়ে মিলন ঘটানো যেতে পারে। যখন এটি করা হয়, কোন আপাত কারণ নেই কেন এরা বৈধভাবে নিষিক্ত এদের পিতামাতাদের মত এত সংখ্যক বীজ উৎপাদন করবে না। কিন্তু ঘটনাটি এরূপ নয়। এরা সকলেই বিভিন্ন মাত্রায় অনুর্বর; কয়েকটি এত সম্পূর্ণভাবে এবং নিরাময়-অসাধ্যভাবে বন্ধ্যা হয় যে এরা চার ঋতুতেও একটিও বীজ অথবা এমনকি বীজকোষ উৎপাদন করেনি। যখন এরা পরস্পরের সঙ্গে বৈধভাবে মিলিত হয়, তখন পরস্পরের সঙ্গে সঙ্করিত সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে এইসব অবৈধ উদ্ভিদের বন্ধ্যাত্বকে সঠিকভাবে তুলনা করা যেতে পারে। বিপরীতক্রমে, একটি সঙ্কর বিশুদ্ধ পিতামাতা প্রজাতির যে-কোনটির সঙ্গে যখন সঙ্করিত হয়, বন্ধ্যাত্ব সাধারণভাবে হ্রাস পায়—এবং অতএব এটি এরূপ হয় যখন একটি অবৈধ গাছ একটি বৈধ গাছের দ্বারা নিষিক্ত হয়। একই উপায়ে যেমন সঙ্করগুলির বন্ধ্যাত্ব দুটি পিতামাতা প্রজাতির মধ্যে প্রথম অপত্য বংশধর তৈরীর অসুবিধাটির সঙ্গে সবসময় সমান্তরালভাবে চলে না, সেইরূপে কোন কোন অবৈধ উদ্ভিদের বন্ধ্যাত্ব অস্বাভাবিকভাবে বিরাট ছিল, অন্যথায়, মিলনের বন্ধ্যাত্ব, যার থেকে এরা উদ্ভূত হয়েছিল, কোন মতেই বিরাট ছিল না। একই বীজকোষ থেকে উদ্ভূত সঙ্করদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের মাত্রাটি যেমন স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তনশীল, সেভাবে এটি অবৈধ উদ্ভিদদের ক্ষেত্রেও স্পষ্টভাবে হয়। অবশেষে, অনেক সঙ্কর প্রচুর ও স্থায়ী ফুল উৎপাদন করে, অন্যদিকে, অন্য ও আরও বন্ধ্যা সঙ্কররা অল্প ফুল উৎপাদন করে এবং দুর্বল ও অত্যন্ত হ্রস্ব হয়; বিভিন্ন দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদের অবৈধ বংশধরের ক্ষেত্রে একইরূপ ঘটনা ঘটে। 

বৈধ উদ্ভিদ এবং সঙ্করদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যে ও ব্যবহারে সব মিলিয়ে প্রভূত অভিন্নতা রয়েছে। এটা বললে আদৌ অতিরঞ্জন হয় না যে অবৈধ উদ্ভিদরা সঙ্কর উদ্ভিদ, যারা কোন কোন আকারের অবৈধ মিলনের দ্বারা একই প্রজতির সীমার মধ্যে উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে সুপরিচিত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে একটি অবৈধ মিলন থেকে সাধারণ সঙ্করা উদ্ভূত হয়। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে ভিন্ন প্রজাতিদের মধ্যে প্রথম অবৈধ মিলন এবং প্রথম অপত্য বংশধরদের মধ্যে সর্ব বিষয়ে নিবিড় সদৃশতা রয়েছে। এটি বোধহয় একটি উদাহরণ দ্বারা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়; আমরা মনে করতে পারি যে একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ত্রিরূপক লিগ্রাম স্যালিকেরিয়া নামক উদ্ভিদের লম্বা গর্ভদণ্ড সম্বলিত আকারের দুটি স্পষ্টচিহ্নিত ভ্যারাইটি (এবং এরূপ ঘটে) লক্ষ্য করেছিলেন, এবং এরা বিশেষভাবে ভিন্ন ছিল কিনা তা তিনি সঙ্করণ পরীক্ষার দ্বারা নির্ধারণ করতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করবেন যে এরা উপযুক্ত সংখ্যার বীজের শুধুমাত্র এক-পঞ্চমাংশ উৎপাদন করেছিল এবং উপরোক্ত অন্য সব… সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দুটি স্বতন্ত্র প্রজাতির মত ব্যবহার করেছিল। কিন্তু আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য, তাঁর অনুমিত সঙ্করিত বীজ থেকে উদ্ভিদদের উৎপাদন করলে তিনি লক্ষ্য করবেন যে চারাগাছগুলো অত্যন্ত হ্রস্ব এবং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ্যা হয়েছিল এবং অন্য সমস্ত বিষয়ে এরা সাধারণ সঙ্করদের মত ব্যবহার করেছিল। তিনি তখন বলবেন যে তিনি সাধারণ মতবাদ অনুসারে প্রকৃতপক্ষে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর দুটি ভ্যারাইটি পৃথিবীর যে-কোন প্রজাতির মত ভাল এবং স্বতন্ত্র প্রজাতি; কিন্তু তিনি সম্পূর্ণরূপে ভুল করবেন। 

দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদ সম্পর্কে এখানে প্রদত্ত তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এরা আমাদের দেখায় যে, প্রথমতঃ, হ্রাসপ্রাপ্ত উর্বরতার শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষা, প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের উভয় ক্ষেত্রেই, প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যের নিরাপদ মান হয় না; দ্বিতীয়তঃ, যেহেতু আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে কোন অজ্ঞাত বন্ড রয়েছে যা অবৈধ সন্তানের অনুর্বরতার সঙ্গে অবৈধ মিলনের অনুর্বরতাকে সংযুক্ত করে এবং প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের ক্ষেত্রে একই মত পোষণ করতে আমরা বাধ্য হই; তৃতীয়তঃ, যেহেতু আমরা দেখি যে, এবং এটি আমার নিকট বিশেষ গুরুত্বের বলে মনে হয়, একই প্রজাতির দুই অথবা তিনটি আকার অবস্থান করতে পারে এবং বহিঃপরিবেশ সাপেক্ষে হয় দেহগঠনে অথবা জৈব সংগঠনে কোন বিষয়েই ভিন্ন হতে পারে না, এবং তথাপি কোন প্রকারে মিলন ঘটার পর বন্ধ্যা হয়। কারণ আমরা নিশ্চয় স্মরণ করব যে এটি হচ্ছে একই আকারের এককদের যৌন উপাদানসমূহের মিলন। উদাহরণস্বরূপ, দুটি লম্বা গর্ভদণ্ড সম্বলিত আকারের, যার ফল হচ্ছে বন্ধ্যাত্ব; অন্যদিকে এটি হচ্ছে উর্বর দুটি ভিন্ন আকারের যৌন উপাদানের মিলন। অতএব প্রথম দর্শনে ঘটনাটি মনে হয় একই প্রজাতির এককদের সাধারণ মিলনে এবং ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সঙ্করণে যা ঘটে ঠিক তার উল্টোটি। তবে প্রকৃতই এটি এরূপ হয় কিনা তাতে সন্দেহ আছে; কিন্তু এই অস্পষ্ট বিষয়টি আমি বিস্তৃত করব না। 

আমরা দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদদের বিষয় বিবেচনা করে যতদূর সম্ভব সিদ্ধান্ত করতে পারি যে সঙ্করণের পর ভিন্ন প্রজাতিদের বন্ধ্যাত্ব এবং এদের সঙ্কর বংশধরের বন্ধ্যাত্ব শুধুমাত্র এদের যৌন উপাদানের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, এবং এদের অবয়ব অথবা সাধারণ জৈব গঠনের কোন পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে না। পারস্পরিক সঙ্করণগুলো আলোচনা করলে আমরা একই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, যেখানে একটি দ্বিতীয় প্রজাতির স্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রজাতির পুরুষ মিলিত হতে পারে না অথবা কষ্টকরভাবে মিলিত হতে পারে, অন্যদিকে বিপরীত সঙ্করণ সহজেই কার্যকর করা যেতে পারে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক গার্টনার এরূপে সিদ্ধান্ত করেছিলেন যে প্রজাতিরা যখন সঙ্করিত হয়, তখন জননতন্ত্রের পার্থক্যের জন্য তারা বন্ধ্যা হয়। 

সঙ্করায়ণের পর ভ্যারাইটিদের এবং তাদের 
বর্ণসঙ্করের বংশধরের জননক্ষমতা সার্বজনীন নয় 

জোরালো যুক্তি সহকারে এটি বলা যেতে পারে যে প্রজাতি এবং ভ্যারাইটিদের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে, কারণ শেষোক্তরা বহিরাকৃতিতে যতই ভিন্ন হোক না কেন, সহজেই সঙ্করিত হয় এবং নিখুঁত জননক্ষমতাসম্পন্ন বংশধর উৎপাদন করে। কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া, যা এখন বলা হবে, আমি সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করি যে এটাই হচ্ছে নিয়ম। কিন্তু বিষয়টি দুর্বোধ্য, কারণ প্রাকৃতিক অবস্থায় উৎপন্ন ভ্যারাইটিদের লক্ষ্য করলে, বর্তমানে ভ্যারাইটি হিসেবে চিহ্নিত দুটি আকার কোন মাত্রায় একত্রে বন্ধ্যা হলে তৎক্ষণাৎ অধিকাংশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী এদের প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ নীল এবং লাল পিমপারনেল নামক উদ্ভিদ, অধিকাংশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী যাদের ভ্যারাইটি হিসেবে বিবেচনা করেছেন, সঙ্করণের পর সম্পূর্ণরূপে বন্ধ্যা হয় বলে গার্টনার উল্লেখ করেছেন, এবং তিনি পরবর্তী সময়ে এদের অসন্দেহজনক প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করেন। যদি আমরা এরূপে: একটি চক্রের মধ্যে বিতর্ক করি, তাহলে প্রকৃতিতে উৎপন্ন সমস্ত ভ্যারাইটিদের জননক্ষমতা নিশ্চয় স্বীকার করে নিতে হবে। 

গৃহপালনাধীনে উৎপাদিত অথবা উৎপাদিত হয়েছে বলে মনে হয় এমন ভ্যারাইটিদের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি, তখনও আমরা কিছু সন্দেহের মধ্যে পড়ি। কারণ যখন বলা হয় যে দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন স্থানীয় গৃহপালিত কুকুর ইউরোপীয় কুকুরের সঙ্গে সহজেই মিলিত হয় না, তখন প্রত্যেকের কাছে ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, এবং সম্ভবতঃ তা সত্য, যে এরা আদিম ভিন্ন প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, এত সংখ্যক গৃহপালিত জাতের নিখুঁত জননক্ষমতা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ঐ জাতগুলো আকৃতিতে পরস্পরের থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়, যেমন হয় পায়রা এবং বাঁধাকপির ক্ষেত্রে; আরও বিশেষভাবে যখন আমরা বলি এখন কতকগুলো প্রজাতি রয়েছে যারা পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ হলেও যখন আন্তঃসঙ্করিত হয় তখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ্যা হয়। তবে গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের জননক্ষমতা কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। প্রথম ক্ষেত্রে, এটি লক্ষ্য করা যেতে পারে যে দুটি প্রজাতির মধ্যে বাইরের পার্থক্যের পরিমাণটি তাদের পারস্পরিক বন্ধ্যাত্বের নিশ্চিত নির্দেশক হয় না, এভাবে ভ্যারাইটিদের ক্ষেত্রে সমরূপ পার্থক্য সঠিক নির্দেশক হবে না। এটি নিশ্চিত যে প্রজাতিদের ক্ষেত্রে কারণটি শুধুমাত্র এদের যৌন সংক্রান্ত দেহবিন্যাসের পার্থক্যসমূহে নিহিত রয়েছে। গৃহপালিত প্রাণী এবং চাষযোগ্য উদ্ভিদদের নিয়ন্ত্রণকারী পরিবর্তনশীল পরিবেশ পারস্পরিক বন্ধ্যাত্ব ঘটাতে জননতন্ত্রকে রূপান্তরের দিকে এত অল্প প্রবণ করে তোলে যে প্যালাসের প্রত্যক্ষভাবে বিপরীত তত্ত্বটিকে স্বীকার করতে আমাদের যথেষ্ট ভাল যুক্তি থাকে। তাঁর তত্ত্বটি হচ্ছে যে এরূপ পরিবেশ এই প্রবণতাকে সাধারণত অপসারিত করে; এভাবে প্রজাতিদের গৃহপালিত বংশধররা, যারা প্রাকৃতিক অবস্থায় সঞ্চরণের পর সম্ভবতঃ কিছুমাত্রায় বন্ধ্যা হয়ে থাকে, একত্রে নিখুঁতভাবে জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়। উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে, চাষ বা কৃষি যা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিদের বন্ধ্যাত্বের দিকে প্রবণ করে তোলে এবং যাদের সম্বন্ধে কয়েকটি সুপরীক্ষিত ঘটনার কথা ইতিমধ্যে উল্লিখিত হয়েছে, কোন কোন প্রজাতিকে বিপরীতভাবে প্রভাবিত করে। কারণ এরা নিজেরাই পুরষত্বহীন হয়েছে অথচ নিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা বজায় রেখেছে এবং অন্য প্রজাতিদের দ্বারা নিষিক্ত হয়েছে। দীর্ঘকাল গৃহপালনের মধ্য দিয়ে যদি বন্ধ্যাত্ব অপসারণের প্যালাসীয় তত্ত্ব স্বীকার করতে হয়, এবং এটি কদাচিৎ নাকচ করা যেতে পারে, তাহলে এটি সর্বাধিক অসম্ভবপর যে দীর্ঘকাল ধরে চলা সদৃশ অবস্থা এভাবে এই প্রবণতাকে উদ্দীপ্ত করবে; যদিও একটি অদ্ভুত জৈব সংগঠন সম্বলিত প্রজাতিদের কোন কোন ক্ষেত্রে মাঝেমাঝে এরূপ বন্ধ্যাত্ব ঘটে থাকতে পারে। আমার বিশ্বাস অনুসারে, আমরা এভাবে বুঝতে পারি যে কেন গৃহপালিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে ভ্যারাইটিরা উৎপন্ন হয় না যারা পারস্পরিকভাবে বন্ধ্যা হয়, এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কেন শুধুমাত্র অল্প কতিপয় ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের সম্বন্ধে এখনই বলা হবে। 

বর্তমান বিষয়ের প্রকৃত বাধাটি এই নয় যে গৃহপালিত ভ্যারাইটিরা কেন সঙ্করণের পর পারস্পরিকভাবে অনুর্বর হয়, কিন্তু কেন এটি সাধারণত কেবল প্রাকৃতিক ভ্যারাইটিদের ক্ষেত্রে ঘটে, যারা ইতিমধ্যে প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীভুক্ত হতে যথেষ্ট মাত্রায় স্থায়ীরূপে রূপান্তরিত হয়েছে। কারণটি আমরা সঠিকভাবে জানি না; অথবা এটা কি আশ্চর্যজনক নয় যে জননতন্ত্রের স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আমরা কত গভীরভাবে অনভিজ্ঞ! কিন্তু আমরা দেখতে পারি যে গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের তুলনায় প্রজাতিরা অসংখ্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে অস্তিত্বের সংগ্রামের জন্য আরও অনুরূপ পরিবেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রভাবিত হয়ে থাকে, এবং পরিণামে এটি একটি ব্যাপক পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। কারণ স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অপসারণ করে আটক অবস্থায় রাখলে, কেমন করে সাধারণভাবে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদরা বন্ধ্যা হয় তা আমরা জানি, এবং সবসময় প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের জননসংক্রান্ত কার্যাবলী সম্ভবতঃ একই উপায়ে একটি অস্বাভাবিক সঙ্করণের প্রভাবে সংবেদনশীল হয়। অন্যদিকে, গৃহপালিত উৎপাদনগুলো, যারা তাদের জীবন-পরিবেশের পরিবর্তনে প্রাথমিক অবস্থায় অতিশয় সংবেদনশীল ছিল না এবং যারা অহ্রাসপ্রাপ্ত জননক্ষমতা নিয়ে পরিবেশের অনবরত পরিবর্তনকে বর্তমানে সাধারণত প্রতিরোধ করতে পারে, তারা ভ্যারাইটিদের সৃষ্টি করতে পারবে বলে আশা করা যেতে পারে, অন্য ভ্যারাইটিদের সঙ্গে সঙ্করণের দ্বারা যাদের জননতন্ত্রের অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, এই ভ্যারাইটিরা একইরূপে উদ্ভূত হয়ে থাকবে। 

আমি এখনও পর্যন্ত বলিনি যে একই প্রজাতির ভ্যারাইটিরা আন্তঃসঙ্করণের পর অনিবার্যরূপে জননক্ষমতাসম্পন্ন হয়। কিন্তু নিম্নোক্ত কতিপয় ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কিছু পরিমাণ সাক্ষ্য বিলোপ করা অসম্ভব ব্যাপার। এগুলো আমি সংক্ষেপে বর্ণনা করব। সাক্ষ্যটি অন্ততঃ সেরকম যেমন আমরা অসংখ্য প্রজাতির বন্ধ্যাত্বে বিশ্বাস করি। সাক্ষ্যটি বিরোধী প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে, যাঁরা অন্য সমস্ত ক্ষেত্রে, প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যের প্রধানতম বিচারের মান হিসেবে উর্বরতা ও বন্ধ্যাত্বকে বিবেচনা করেন। গার্টনার তাঁর বাগানে কয়েক বছর ধরে হলুদ রঙের বীজ সমেত হ্রস্ব ভ্যারাইটির ভুট্টা এবং লাল রঙের বীজ সমেত লম্বা ভ্যারাইটির ভুট্টা গাছ পরস্পরের নিকট চাষ করেছিলেন, এবং এইসব উদ্ভিদদের পৃথক লিঙ্গ থাকলেও এরা কখনও স্বাভাবিকভাবে সঙ্করিত হয়নি; তিনি তখন অন্য প্রকারের পরাগরেণুর দ্বারা এক প্রকারের তেরোটি ফুলকে নিষিক্ত করেছিলেন; গাছের একটি মাত্র শীষ বীজ উৎপাদন করেছিল এবং এই শীষটি শুধুমাত্র পাঁচটি বীজ উৎপাদন করেছিল। যেহেতু এই উদ্ভিদদের ভিন্ন লিঙ্গ থাকে তাই এক্ষেত্রে কৌশলটি ক্ষতিকর হয়নি। আমার ধারণা কেউ সন্দেহ করে না যে ভুট্টার এই ভ্যারাইটিরা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি; এটি লক্ষ্য করা প্রয়োজনীয় যে এরূপে উদ্ভূত সঙ্কর উদ্ভিদরা নিজেরাই সম্পূর্ণ জননক্ষমতাসম্পন্ন ছিল, যাতে করে এমনকি গার্টনারও দুটি ভ্যারাইটিকে বিশেষভাবে ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করতে সাহস করেননি। 

গিরউ ডে বুজারেইনগুয়েস লাউ উদ্ভিদের তিনটি ভ্যারাইটিকে সঙ্করিত করেছিলেন, যাদের ভুট্টার মত পৃথক লিঙ্গ থাকে, এবং তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে এদের পারস্পরিক নিষেক অত সহজ নয়, কারণ এদের পার্থক্যগুলো বিরাট। এই পরীক্ষাগুলি কতখানি বিশ্বাসযোগ্য তা আমি জানি না; পরীক্ষিত আকারগুলিকে ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন সাগেরেট, যিনি অনুর্বরতা সম্বন্ধে পরীক্ষার দ্বারা মূলত তাঁর শ্রেণীবিভাগ করেছেন এবং নৌডিন-ও একই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। 

নিচের ঘটনাটি আরও বেশী উল্লেখযোগ্য, এবং প্রথমে মনে হয় অবিশ্বাস্য; কিন্তু এত ভাল পর্যবেক্ষক ও এত বিরোধী একজন সাক্ষী গার্টনার দ্বারা অনেক বছর ধরে ভারবাসকাম নামক গণের নয়টি উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর আশ্চর্য সংখ্যক পরীক্ষার এটি হচ্ছে কার্যফল : যথা, একই প্রজাতির পীত এবং শ্বেত ভ্যারাইটিরা সঙ্করণের পর ঐ প্রজাতির একইরূপ রঙ্গিন ভ্যারাইটিদের তুলনায় কম বীজ উৎপাদন করে। অধিকন্তু তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে যখন একটি প্রজাতির পীত এবং শ্বেত ভ্যারাইটিদের সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতির পীত এবং শ্বেত ভ্যারাইটির সঙ্করণ ঘটানো হয়, তখন ভিন্ন রং সম্বলিতদের তুলনায় একই রঙের ফুলগুলির সঙ্করণ দ্বারা আরও বেশী বীজ উৎপাদিত হয়। মিঃ স্কট-ও ভারবাসকাম নামক উদ্ভিদের ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের ওপর পরীক্ষা করেছিলেন এবং স্বতন্ত্র প্রজাতির সঙ্করণের ওপর গার্টনারের কার্যফলের সত্যতা নিরূপণে অসমর্থ হলেও তিনি আবিষ্কার করেন যে একইরূপ রঙের ভ্যারাইটিদের তুলনায় ৮৬ : ১০০ অনুপাতে একই প্রজাতির বিসদৃশ রঙের ভ্যারাইটিরা অল্প বীজ উৎপাদন করে। অথচ এই ভ্যারাইটিরা এদের ফুলের রং ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে ভিন্ন নয়, এবং অন্যের বীজ থেকে কোন কোন সময় একটি ভ্যারাইটির উদ্ভব ঘটানো যেতে পারে। 

কোয়েলরয়টার, যাঁর নিখুঁততা সম্পর্কে পরবর্তীকালের প্রত্যেক পর্যবেক্ষক স্বীকার করেন, উল্লেখযোগ্য বিষয়টি প্রমাণ করেছেন যে সাধারণ তামাকের একটি বিশেষ ভ্যারাইটি একটি ব্যাপকভাবে ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে সঙ্করিত হলে অন্য ভ্যারাইটিদের তুলনায় বেশী উর্বর হয়। তিনি পাঁচটি আকারের ওপর পরীক্ষা করেছিলেন, যেগুলো সাধারণতঃ ভ্যারাইটি হিসেবে গণ্য হয়, এবং যেগুলোকে তিনি পারস্পরিক সঙ্করণ প্রক্রিয়া দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে এদের বর্ণসঙ্কর বংশধররা সম্পূর্ণরূপে উর্বর ছিল। কিন্তু এই পাঁচটি ভ্যারাইটির মধ্যে একটি যখন পিতা অথবা মাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং নিকোটিয়ানা গুটিনোসা নামক উদ্ভিদ প্রজাতির সঙ্গে সঙ্করিত হয়, তখন সবসময় সঙ্করদের উৎপাদন করে, যারা এত বন্ধ্যা হয় না যেমন নিকোটিয়ানা গুটিনোসার সঙ্গে অন্য চারটি ভ্যারাইটির সঙ্করণের ফলে উদ্ভূত সঙ্করদের ক্ষেত্রে হয়। অতএব এই একটি ভ্যারাইটির জননতন্ত্র কোন উপায়ে এবং কোন মাত্রায় রূপান্তরিত হয়ে থাকবে। 

এইসব তথ্য থেকে এখন আর এটি সমর্থন করা যেতে পারে না যে সঙ্করণের পর ভ্যারাইটিরা অনিবার্যরূপে সম্পূর্ণ উর্বর হয়। প্রাকৃতিক অবস্থায় ভ্যারাইটিদের অনুর্বরতা নির্ণয়ে বিরাট অসুবিধার জন্য একটি অনুমিত ভ্যারাইটি যদি কোনমাত্রায় অনুর্বর বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে প্রায় সার্বজনীনভাবে একটি প্রজাতিতে শ্রেণীভুক্ত করা হবে; মানুষ শুধুমাত্র তার গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের বহিঃস্থ বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতি মনোযোগ দেয় এবং এরকম ভ্যারাইটিরা দীর্ঘদিন ধরে একইরূপ জীবন-পরিবেশে রক্ষিত হয় না; এইসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে সঙ্করিত হলে ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের মধ্যে জননক্ষমতা কোন মৌলিক পার্থক্য সৃষ্টি করে না। সঙ্করিত প্রজাতিদের সাধারণ বন্ধ্যাত্বটি একটি বিশেষ অর্জিত গুণ অথবা জন্মগত গুণ হিসেবে নয়, বরং এদের যৌন উপাদানসমূহের একটি অজ্ঞাত প্রকৃতির পরিবর্তনের ওপর আনুষঙ্গিক হিসাবে নিরাপদে দেখা যেতে পারে। 

জননক্ষমতা নিরপেক্ষভাবে সঙ্কর ও বর্ণসঙ্করদের তুলনা 

জননক্ষমতার প্রশ্নটি ছাড়াই, সঙ্করণের পর প্রজাতি ও ভ্যারাইটির বংশধরদের অন্য কতিপয় বিষয় তুলনা করা যেতে পারে। যিনি প্রজাতি ও ভ্যারাইটিদের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্যসূচক দাঁড়ি টানার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, সেই গার্টনার প্রজাতিদের সুপরিচিত সঙ্কর বংশধর এবং ভ্যারাইটিদের সুপরিচিত বর্ণসঙ্করের মধ্যে অল্প কয়েকটি অথচ সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় পার্থক্য লক্ষ্য করেছিলেন। এবং অন্যদিকে, এরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একইরূপ হয়। 

আমি অতি সংক্ষেপে এই বিষয়টি এখানে আলোচনা করব। সবচেয়ে স্পষ্ট পার্থক্যটি হচ্ছে যে প্রথম বংশে বর্ণসঙ্কররা সঙ্করদের তুলনায় বেশী পরিবর্তনশীল; কিন্তু গার্টনার স্বীকার করেন যে দীর্ঘদিন ধরে কর্ষিত প্রজাতির সঙ্কররা প্রথম বংশে প্রায়শই পরিবর্তনশীল হয়; এবং এ বিষয়ে আমি নিজে আশ্চর্যজনক উদাহরণ দেখেছি। গার্টনার আরও স্বীকার করেন যে অতিশয় ভিন্ন প্রজাতিদের সঙ্করদের তুলনায় নিকট সম্পর্কযুক্ত প্রজাতিদের সঙ্কররা আরও বেশী পরিবর্তনশীল; এবং এটি দেখায় যে পরিবর্তনশীলতার মাত্রার পার্থক্য ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে যায়। বর্ণসঙ্কর এবং আরও উর্বর সঙ্করদের যখন কয়েক বংশ ধরে বংশবৃদ্ধি করা হয়, তখন উভয় ক্ষেত্রেই বংশধরের অতি মাত্রার পরিবর্তনশীলতা ক্ষতিকর; কিন্তু সঙ্কর এবং বর্ণসঙ্কর উভয়দেরই একই বৈশিষ্ট্য দীর্ঘদিন বজায় রাখার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমিক বংশে বর্ণসঙ্করদের পরিবর্তনশীলতা সঙ্করদের তুলনায় সম্ভবতঃ বেশী। 

সঙ্করদের তুলনায় বর্ণসঙ্করদের এই বেশী পরিবর্তনশীলতা মোটেই বিস্ময়কর নয় কারণ বর্ণসঙ্করদের পিতামাতা হচ্ছে ভ্যারাইটিরা এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহপালিত ভ্যারাইটিরা (প্রাকৃতিক ভ্যারাইটিদের ওপর কম পরীক্ষা করা হয়েছে), এবং এটি ইঙ্গিত দেয় যে এই পরিবর্তনশীলতা বর্তমান কালের, যা প্রায়শই চলতে থাকবে এবং সঙ্কর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভূত জিনিসটিকে বৃদ্ধি করবে। পরবর্তী বংশসমূহের তুলনায় প্রথম বংশে সঙ্করদের সামান্য পরিবর্তনশীলতা হচ্ছে একটি অদ্ভুত ঘটনা এবং যা মনোযোগ দেওয়ার যোগ্য। কারণ সাধারণ পরিবর্তনশীলতার কারণগুলোর মধ্যে একটিতেই এটি পরিলক্ষিত হয়, যথা পরিবর্তিত জীবন-পরিবেশে স্পষ্টতঃ সংবেদনশীল জননতন্ত্রটি পিতামাতা আকারের সর্ববিষয়ে অত্যন্ত সদৃশ বংশধর উৎপাদন করতে এই অবস্থাসমূহে নিজের কাজটি সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হয়। এখন দেখা গেল যে প্রথম বংশের সঙ্কররা প্রজাতিদের থেকে উদ্ভূত হয়েছে (দীর্ঘদিন ধরে কর্ষিতগুলো ছাড়া), ঐ প্রজাতিদের জননতন্ত্র কোন প্রকারেই প্রভাবিত হয়নি এবং এরা পরিবর্তনশীল নয়; কিন্তু সঙ্করদের নিজেদের জননতন্ত্রসমূহ ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং এদের বংশধররা অতিশয় পরিবর্তনশীল। 

কিন্তু বর্ণসঙ্কর ও সঙ্করদের তুলনাতেই এখন আমরা আবার ফিরে যাই : গার্টনার বলেন যে পিতামাতা আকারের যে-কোনটিতে ফিরে যেতে সঙ্করদের তুলনায় বর্ণসঙ্কররা বেশী প্রবণ হয়, কিন্তু যদি এটি সত্য হয়, তাহলে এটি শুধুমাত্র পার্থক্যের মাত্রায় হয়। অধিকন্তু, গার্টনার স্পষ্টভাবে বলেন যে দীর্ঘদিন ধরে কর্ষিত উদ্ভিদদের সঙ্কররা প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের সঙ্করদের তুলনায় প্রত্যাবর্তনে আরও বেশী প্রবণ হয়, এবং সম্ভবতঃ বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দ্বারা পরীক্ষালব্ধ ফলের দ্বারা এই অনন্য পার্থক্যটি ব্যাখ্যা করা যায় : সঙ্কররা কখনও তাদের পিতামাতা আকারে প্রত্যাবর্তন করে কিনা সে ব্যাপারে ম্যাক্স উইচুরা সন্দেহ প্রকাশ করেন, এবং এজন্য তিনি উইলোর অকর্ষিত প্রজাতিদের ওপর পরীক্ষা করেছিলেন; পক্ষান্তরে, নউডিন সঙ্করের প্রত্যাবর্তনে প্রায় সার্বজনীন প্রবণতার ওপর প্রভূত জোর দিয়েছেন এবং তিনি প্রধানতঃ কর্ষিত গাছগুলোর ওপর পরীক্ষা করেছিলেন। গার্টনার আরও বলেন যে এরা পরস্পরের ভাবে ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত হলেও যে-কোন দুটি যখন প্রজাতি তৃতীয় একটি প্রজাতির সঙ্গে সঙ্করিত হলে, সঙ্কররা পরস্পরের থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়; অন্যথায় একটি প্রজাতির দুটি ভিন্ন ভ্যারাইটি অন্য প্রজাতির সঙ্গে সঙ্করিত হলে, সঙ্কররা ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় না। কিন্তু যতদূর আমি জানি এই সিদ্ধান্তটি একটিমাত্র পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে গ্রহণ করা হয়েছে; এবং এটি কোয়েলরয়টার দ্বারা পরীক্ষালব্ধ ফলের প্রত্যক্ষভাবে বিরোধী। 

এগুলো শুধুই অনাবশ্যক পার্থক্য যা গার্টনার সঙ্কর এবং বর্ণসঙ্কর উদ্ভিদদের মধ্যে আছে বলে নির্দেশ করেছেন। পক্ষান্তরে, স্ব স্ব পিতামাতাদের সঙ্গে বর্ণসঙ্কর এবং সঙ্করদের, আরও বিশেষভাবে প্রায় সম্পর্কিত প্রজাতিদের থেকে উদ্ভূত সঙ্করদের সদৃশতার মাত্রা ও প্রকৃতি গার্টনারের মতানুসারে একই নিয়ম অনুসরণ করে। দুটি প্রজাতি যখন সঙ্করিত হয়, তখন সঙ্করটিকে নিজের সদৃশ করে জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে কোন কোন সময় একটির প্রবল ক্ষমতা থাকে। আমি বিশ্বাস করি উদ্ভিদদের ভ্যারাইটিদের ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটে; এবং প্রাণীদের ক্ষেত্রে, অন্য ভ্যারাইটির ওপর একটি ভ্যারাইটির নিশ্চয় প্রবল ক্ষমতা থাকে। পারস্পরিক সঙ্করণ থেকে উদ্ভূত সঙ্কর উদ্ভিদরা সাধারণত ঘনিষ্ঠভাবে পরস্পরের সদৃশ হয়; এবং একটি পারস্পরিক সঙ্করণ থেকে উদ্ভূত বর্ণসঙ্কর উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এটি এরূপ হয়। যে-কোন পিতামাতার সঙ্গে বংশপরম্পরায় বারংবার সঙ্করণের দ্বারা যে-কোন বিশুদ্ধ পিতামাতা, আকারে সঙ্কর এবং বর্ণসঙ্করদের উভয়কেই রূপান্তরিত করা যেতে পারে। 

এইসব মন্তব্য বা অভিমত প্রাণীদের ক্ষেত্রেও বাহ্যত প্রযোজ্য। কিন্তু বিষয়টি এখানে অতিশয় জটিল, অংশত গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য; কিন্তু আরও বিশেষভাবে অন্যটির তুলনায় একটি লিঙ্গে সদৃশতাকে বংশগতভাবে প্রেরণের প্রবল ক্ষমতার জন্য, যখন একটি প্রজাতি অন্য একটির সঙ্গে এবং একটি ভ্যারাইটি অন্য ভ্যারাইটির সঙ্গে সঙ্করিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমি মনে করি সেইসব বিশেষজ্ঞরা সঠিক যাঁরা বলেন যে ঘোড়ার তুলনায় গাধার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরণ করার ক্ষমতা বেশী থাকে, যার ফলে ঘোড়ার তুলনায় খচ্চর ও হিন্নিরা গাধার সঙ্গে বেশী সদৃশ হয়; এবং বৈশিষ্ট্য বংশগতভাবে প্রেরণের প্রবল ক্ষমতা স্ত্রী-গাধার তুলনায় পুরুষ-গাধার বেশী হয়, যাতে করে ঘোটকী ও পুরুষ-গাধার বংশধর খচ্চর, স্ত্রী-গাধা ও স্ট্যালিঅন-এর বংশধর হিন্নির তুলনায় আরও বেশী করে গাধার মত হয়। 

অনুমিত ঘটনার ওপর অনেক বিশেষজ্ঞ বিশেষ জোর দিয়েছেন, যেমন এটি শুধুমাত্র বর্ণসঙ্করদের ক্ষেত্রে হয় যেখানে বংশধরটি বৈশিষ্ট্যে পিতামাতার যে-কোনটির মধ্যবর্তী হয় না, বরং যে-কোনটির অতি সদৃশ হয়; কিন্তু এটি সঙ্করদের ক্ষেত্রেও কোন কোন সময় ঘটে, যদিও আমি বর্ণসঙ্করদের তুলনায় এদের কম গুরুত্ব দিচ্ছি। পিতামাতার সদৃশ হওয়া সঙ্কর প্রাণীদের সম্পর্কে আমার সংগৃহীত ঘটনাগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সাদৃশ্যগুলি এদের প্রকৃতিতে প্রায় বিকৃত বৈশিষ্ট্যগুলোতে সীমাবদ্ধ, এবং যেগুলো হঠাৎ আবির্ভূত হয়, যেমন ধবলতা, ত্বককৃষ্ণতা, লেজ ও শিঙের অভাব, অথবা হাত ও পায়ের অতিরিক্ত আঙ্গুল; এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে যেগুলো সম্পর্কিত নয়। যে-কোন পিতামাতার নিখুঁত বৈশিষ্ট্যে হঠাৎ প্রত্যাবর্তনের প্রবণতা বর্ণসঙ্করদের ক্ষেত্রেও ঘটার আরও বেশী সম্ভাবনা থাকবে, যে বর্ণসঙ্কররা সঙ্করদের তুলনায় বৈশিষ্ট্যে অর্ধ-বিকৃত ও হঠাৎ-উদ্ভূত ভ্যারাইটিদের থেকে উদ্ভূত হয়েছে, অন্যদিকে সঙ্কররা মন্থরভাবে ও স্বাভাবিকভাবে প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ডঃ প্রসপার লুকাসের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত, যিনি প্রাণীদের ক্ষেত্রে অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে পিতামাতাদের সঙ্গে শিশুটির সদৃশতার নিয়মগুলো একই, একই ভ্যারাইটির অথবা ভিন্ন ভ্যারাইটিদের অথবা ভিন্ন প্রজাতির এককদের মিলনের ক্ষেত্রে, দুটি পিতামাতা পরস্পরের থেকে কম বা বেশী ভিন্ন হোক বা না হোক। 

জননক্ষমতা ও বন্ধ্যাত্বের প্রশ্নটি ছাড়া, অন্য সব ক্ষেত্রে সঙ্করিত প্রজাতি এবং ভ্যারাইটিদের বংশধরে একটি সাধারণ ও ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে বলে মনে হয়। বিশেষভাবে সৃষ্ট প্রজাতিদের এবং গৌণ নিয়মসমূহের দ্বারা উৎপন্ন ভ্যারাইটিদের লক্ষ্য করলে এই মিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটি এই মতবাদটির সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ যে প্রজাতি এবং ভ্যারাইটিদের মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নেই। 

সারাংশ 

প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীভুক্ত হতে যথেষ্ট পরিমাণ ভিন্ন আকারদের মধ্যে প্রথম অপত্য বংশধর এবং এদের সঙ্কররা সাধারণভাবে বন্ধ্যা হয়, কিন্তু সার্বজনীনভাবে নয়। বন্ধ্যাত্ব সবরকম মাত্রায় হয় এবং প্রায়শই এত সামান্য পরিমাণে হয় যে অতিশয় যত্নবান পরীক্ষাবিদরা এই পরীক্ষার দ্বারা আকারদের কোন শ্রেণীতে শ্রেণীভুক্ত করতে একেবারে বিপরীত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। একই প্রজাতির এককগুলোতে বন্ধ্যাত্ব স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তনশীল, এবং অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টত প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত। বন্ধ্যাত্বের মাত্রাটি সঠিক সুসম্বদ্ধ সম্পর্ক অনুসরণ করে না, বরং কয়েকটি অদ্ভুত ও জটিল নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি একই দুটি প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সঙ্করণে সাধারণভাবে এবং কোন কোন সময় ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়। এটি এই সঙ্করণ থেকে উদ্ভূত সঙ্করসমূহেও প্রথম অপত্য বংশধরে সবসময় সমান মাত্রায় হয় না। 

কলম করা যায় এমন বৃক্ষদের মত, একই উপায়ে একটি প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটির অন্যটিকে গ্রহণ করার সামর্থ্যটি এদের অঙ্গজতন্ত্রসমূহের সাধারণত একটি অজ্ঞাত প্রকৃতির পার্থক্যের আনুষঙ্গিক হয়; এভাবে সঙ্করণে, একটি প্রজাতি অন্য প্রজাতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কম অথবা বেশী অনায়াসসাধ্যতা এদের জননতন্ত্রসমূহের অজ্ঞাত পার্থক্যের আনুষঙ্গিক হয়। আমাদের অরণ্যসমূহে জোড় কলম বাঁধা প্রতিরোধ করার জন্য বৃক্ষদের বিভিন্ন ও অনুরূপ মাত্রার বাধার বিশেষভাবে জন্মগত গুণ রয়েছে, এই ভাবনার তুলনায় চিন্তা করার অন্য কোন যুক্তি নেই যে এদের সঙ্করণ এবং স্বাভাবিক মিশ্রণ প্রতিরোধ করতে প্রজাতিদের বিভিন্ন মাত্রার বন্ধ্যাত্বের বিশেষ জন্মগত গুণ রয়েছে। 

প্রথম অপত্য বংশধরের ও এদের সঙ্কর বংশধরের বন্ধ্যাত্বটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। প্রথম অপত্য বংশধরের ক্ষেত্রে এটি কতকগুলো অবস্থার ওপর নির্ভর করে; কতিপয় উদাহরণে মূলতঃ ভ্রূণের কম বয়সে মৃত্যুর ওপর নির্ভর করে। সঙ্করদের ক্ষেত্রে, এটি দুটি ভিন্ন আকারের মিশ্রণের দ্বারা বিশৃংখলিত সমগ্র সংগঠনের ওপর আপাতভাবে নির্ভর কবে; জীবনের নূতন এবং অস্বাভাবিক পরিবেশে বিশুদ্ধ প্রজাতিকে পুনঃ পুনঃ প্রভাবিত করার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। পরের ব্যাপারটি যিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন তিনি সঙ্করদের বন্ধ্যাত্ব ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবেন। অন্য ধরনের সমান্তরতা দ্বারা এই মতটি দৃঢ়ভাবে সমর্থিত হয়। যথা, প্রথমতঃ, জীবন-পরিবেশের সামান্য পরিবর্তন সব জীবের প্রাণপ্রাচুর্য ও জননক্ষমতা বৃদ্ধি করে; দ্বিতীয়তঃ, সামান্য ভিন্ন পরিবেশে প্রভাবিত আকারদের সঙ্করণ তাদের বংশধরের আকার, জীবনীশক্তি ও জননক্ষমতার অনুকূল। দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদদের অবৈধ মিলন এবং এদের অবৈধ বংশধরের বন্ধ্যাত্বের সম্বন্ধে প্রাপ্ত তথ্যগুলো থেকে মনে হয় যে সব ক্ষেত্রেই কোন অজ্ঞাত বন্ড এদের বংশধরের জননক্ষমতার মাত্রাটির সঙ্গে প্রথম মিলনগুলির জননক্ষমতার মাত্রাটিকে সংযুক্ত করে। দ্বিরূপতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো এবং পারস্পরিক সঙ্করণগুলোর কার্যফল বিবেচনা করলে স্পষ্টত এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে সঙ্করিত প্রজাতিদের বন্ধ্যাত্বের প্রাথমিক কারণটি এদের যৌন উপাদানগুলোর ভিন্নতার উপর নির্ভর করে। কিন্তু ভিন্ন প্রজাতিদের ক্ষেত্রে, কেন যৌন উপাদানগুলো এত সাধারণভাবে কম অথবা বেশী রূপান্তরিত হবে, যা এদের পারস্পরিকভাবে অনুর্বর করে, তা আমরা জানি না; তবে সম্ভবত এটি প্রজাতিদের কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উপর নির্ভর করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রায় একইরূপ জীবন-পরিবেশে প্রভাবিত হয়েছে। 

এটি বিস্ময়কর নয় যে যে-কোন দুটি প্রজাতির সঙ্করণের বাধাটি এবং এদের সঙ্কর বংশধরের বন্ধ্যাত্বটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুরূপ হবে, এমনকি যদি ভিন্ন কারণের জন্যও হয়: কারণ দুটিই সঙ্করিত প্রজাতিদের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। অথবা এটি বিস্ময়কর নয় যে একটি প্রথম সঙ্করণ ঘটানোর সহজসাধ্যতা এবং এরূপে উৎপন্ন সঙ্করদের জননক্ষমতা ও একত্রে কলমিত হওয়ার ক্ষমতাটি—যদিও শেষোক্ত ক্ষমতাটি স্পষ্টতঃ ব্যাপকভাবে ভিন্ন অবস্থার ওপর নির্ভর করে—সকলে পরীক্ষাধীন আকারদের সুসম্বদ্ধ সম্পর্কের সঙ্গে কিছুদূর পর্যন্ত সমান্তরালভাবে চলবে, কারণ সুসম্বদ্ধতার সম্পর্কটি সমস্ত ধরনের সদৃশতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। 

ভ্যারাইটি বলে খ্যাত অথবা প্রভূত সাদৃশ্যের জন্য ভ্যারাইটি বলে বিবেচিত আকারদের মধ্যে প্রথম অপত্য বংশধররা এবং এদের বর্ণসঙ্কর বংশধররা সর্বদা না-হলেও সাধারণত উর্বর হয়। অথবা প্রায় সার্বজনীন এবং নিখুঁত উর্বরতা বিস্ময়কর নয় কি, যখন স্মরণ করা হয় যে প্রাকৃতিক অবস্থায় ভ্যারাইটিদের সম্পর্কে একটি চক্রের মধ্যে তর্কবিতর্ক করতে আমরা কতখানি বাধ্য; এবং আমরা যখন স্মরণ করি যে বিরাট সংখ্যক ভ্যারাইটিরা শুধু বহিরাকৃতির ভিন্নতার নির্বাচন দ্বারা গৃহপালনাধীনে উৎপন্ন হয়েছে, এবং এরা দীর্ঘদিন ধরে একইরূপ জীবন-পরিবেশে প্রভাবিত হয়নি। এটি আরও বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত যে দীর্ঘস্থায়ী গৃহপালন বন্ধ্যাত্ব অপসারণ করতে প্রবণ হয়, অতএব এই একই গুণ আবিষ্ট করানোর ব্যাপারে তাদের অল্প সম্ভাবনা থাকে। জননক্ষমতার প্রশ্নটি ছাড়া, অন্য সব ক্ষেত্রে, সঙ্কর এবং বর্ণসঙ্করদের ক্ষেত্রে, ঘনিষ্ঠতম সাধারণ সাদৃশ্য থাকে, যেমন এদের পরিবর্তনশীলতায়, বারংবার সঙ্করণের দ্বারা পরস্পরকে বিশোষণ করার ব্যাপারে এদের ক্ষমতায়, উভয় পিতামাতা আকারের বৈশিষ্ট্যগুলির বংশানুস্মৃতিতে। অবশেষে, যদিও প্রথম অপত্য বংশধর ও সঙ্করদের বন্ধ্যাত্বের বিশেষ কারণ সম্পর্কে যেমন আমরা অনভিজ্ঞ, তেমনি আমরা অনভিজ্ঞ প্রাকৃতিক অবস্থা থেকে অপসারিত প্রাণী এবং উদ্ভিদরা কেন বন্ধ্যা হয় সে ব্যাপারেও, তথাপি এই অধ্যায়ে বর্ণিত তথ্যসমূহ প্রজাতিরা আদিম অবস্থায় ভ্যারাইটি হিসেবে অবস্থান করত এই বিশ্বাসের বিরোধী নয় বলেই মনে হয় আমার। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *