১৪. জীবদের পারস্পরিক কুটুম্ব-সম্পর্ক : অঙ্গসংস্থান : ভ্রূণবিদ্যা : অঙ্কুর অঙ্গসমূহ

চতুর্দশ অধ্যায় —জীবদের পারস্পরিক কুটুম্ব-সম্পর্ক : অঙ্গসংস্থান : ভ্রূণবিদ্যা : অঙ্কুর অঙ্গসমূহ 

শ্রেণীবিভাগ, গোষ্ঠীদের অধীন গোষ্ঠীসমূহ—প্রাকৃতিক সিস্টেম—রূপান্তরের সঙ্গে উদ্ভব তত্ত্বটি অনুসারে ব্যাখ্যাত শ্রেণীবিভাগের নিয়ম ও বাধা—ভ্যারাইটিদের শ্রেণীবিভাগ—বংশধারা সর্বদা শ্রেণীবিভাগে প্রয়োগ করা হয়—অনুরূপ অথবা অভিযোজক বৈশিষ্ট্য—কুটুম্ব সম্পর্ক, সাধারণ, জটিল ও বিকিরণকর-বিলুপ্তি গোষ্ঠীদের পৃথক করে এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ করে—অঙ্গসংস্থান, একই শ্রেণীর সদস্যদের মধ্যে, একই এককের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে ভ্রূণবিদ্যার নিয়ম -প্রাথমিক বয়সে বাধা হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়া এবং অনুরূপ বয়সে বংশগতভাবে প্রাপ্ত হওয়া পরিবর্তনের দ্বারা ব্যাখ্যাত নিয়ম—অঙ্কুর অঙ্গসমূহ; এগুলির উদ্ভবের ব্যাখ্যা—সারাংশ 

শ্রেণীবিভাগ 

পৃথিবীর ইতিহাসের বহু অতীত যুগ থেকে জীবদের অধঃক্রমানুসারে পরস্পরের সদৃশ হতে দেখা গেছে, যাতে এদেরকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অধীনে গোষ্ঠীসমূহে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে। নক্ষত্রপুঞ্জের নক্ষত্রদের গোষ্ঠী গঠনের মতো এই শ্রেণীবিভাগ নিয়ম-বহির্ভূত হয় না। যদি একটি গোষ্ঠী কেবল স্থলে এবং অন্যটি কেবল জলে বসবাসের জন্যে অভিযোজিত হয়ে থাকে, তখন গোষ্ঠীদের এই অবস্থার কোন সরল তাৎপর্য অবশ্যই থাকবে। একটি মাংস খায় অন্যটি উদ্ভিদ খায়, এবং এভাবে চলে, কিন্তু বিষয়টি অতিশয় ভিন্ন হয়; কারণ এটি সুবিদিত যে এমন কি একই উপগোষ্ঠীর সাধারণ সদস্যদেরও ভিন্ন স্বভাব থাকে। পরিবৃত্তি ও প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি যে প্রত্যেক দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, অধিক ব্যাপ্ত এবং সাধারণ অর্থাৎ প্রত্যেক শ্রেণীর বৃহত্তর গণগুলির অন্তর্গত প্রভাবশালী প্রজাতিরাই সবচেয়ে বেশী পরিবর্তিত হয়। এভাবে উৎপন্ন ভ্যারাইটি ও জায়মান প্রজাতিরা অবশেষে নূতন ও ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে এবং বংশানুসৃতির নিয়ম অনুযায়ী এরা অন্য নূতন ও প্রাধান্য বিস্তারকারী প্রজাতি উৎপন্ন করার প্রবণতাযুক্ত হয়। ফলস্বরূপ, বর্তমানে বিরাট এবং যাদের মধ্যে সাধারণতঃ অনেক প্রভাবশালী প্রজাতি থাকে এমন গোষ্ঠীরা আকারে বৃদ্ধি পেতে চেষ্টা করে। আমি আরও দেখাতে চেষ্টা করেছি যে প্রকৃতির বিভিন্ন এবং অনেক অঞ্চল অধিকার করতে চেষ্টারত প্রত্যেক প্রজাতির পরিবর্তনশীল বংশধররা অনবরত বৈশিষ্ট্যে বিচিত্র হতে চেষ্টা করে। আকারদের বিপুল বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণের দ্বারা এই শেষোক্ত সিদ্ধান্তটি সমর্থিত হয়েছে, ঐ আকাররা যে-কোন ছোট অঞ্চলে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় এবং ভিন্ন পরিবেশে অভ্যস্তকরণের কতিপয় ঘটনার দ্বারা এটি আরও সমর্থিত হয়েছে। 

আমি এ-ও দেখাতে চেষ্টা করেছি যে পূর্ববর্তী, কম অপসারী, কম উন্নত আকারদের স্থানচ্যুত করতে সংখ্যায় বর্ধনশীল এবং বৈশিষ্ট্যে বিচিত্রগামী আকারদের তীব্র প্রবণতা রয়েছে। আগের ব্যাখ্যামতো এইসব পদ্ধতিগুলোর প্রক্রিয়া ব্যাখ্যাকারী চিত্রটি লক্ষ্য করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করছি আমি; এবং তাঁরা দেখবেন যে অবশ্যম্ভাবী ফলটি হচ্ছে—একটি জনক থেকে উদ্ভূত রূপান্তরিত বংশধররা কোন গোষ্ঠীর অধীনে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভেঙেছে। চিত্রটিতে সর্বোচ্চ রেখার ওপর প্রত্যেক অক্ষর কতিপয় প্রজাতি সম্বলিত একটি গণকে সূচিত করতে পারে, এবং এই ওপরের রেখা বরাবর সব গণরা একত্রে একটি শ্রেণী সৃষ্টি করে, কারণ সকলে একটি আদিম পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং ফলস্বরূপ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়েছে। এই একই পদ্ধতি অনুযায়ী বামদিকের তিনটি গণের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে এবং একটি উপ-গোত্র সৃষ্টি করে, যা দক্ষিণদিকের দুটি গণ সম্বলিত উপ-গোত্র থেকে ভিন্ন হয় এবং যেটি বংশধারার পঞ্চম ধাপে একটি সাধারণ পিতা থেকে অপসৃত হয়েছে। এই পাঁচটি গণও অতিশয় সমগুণসম্পন্ন, যদিও উপ—গোত্রগুলোতে গোষ্ঠীবদ্ধ হলে যতটা সমগুণসম্পন্ন হয় তার চেয়ে কম, এরা দক্ষিণদিকের আরও দূরে তিনটি গণ সম্বলিত গোত্র থেকে ভিন্ন একটি গোত্র সৃষ্টি করে, যা পূর্বে কোন এক সময়ে অপসৃত হয়েছে। এবং (A) থেকে উদ্ভূত এইসব গণরা (I) থেকে উদ্ভূত গণগুলোর থেকে ভিন্ন একটি অর্ডার সৃষ্টি করে। অতএব গণগুলোতে গোষ্ঠীবদ্ধ একটিমাত্র জনক থেকে উদ্ভূত অনেক প্রজাতি আমরা দেখি। এবং এভাবে এটি বিরাট শ্রেণীর অধীনে গণ, উপ-গোত্র, গোত্র এবং অর্ডারসমূহে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে। গোষ্ঠীদের অধীন গোষ্ঠীসমূহে জীবদের স্বাভাবিক অধীনতার বিস্ময়কর ঘটনাটি, যা সুপরিচিত হওয়ার দরুন সব সময় আমাদের চমৎকৃত করে না, আমার বিচারে এভাবে ব্যাখ্যাত হয়। সন্দেহ নেই যে অন্য সমস্ত বস্তুর মত জীবদের অনেক উপায়ে হয় একটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা কৃত্রিমভাবে অথবা অনেক বৈশিষ্ট্য দ্বারা স্বাভাবিকভাবে শ্রেণীবিভক্ত করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে খনিজ ও মৌলিক পদার্থগুলোকে এরূপে বিন্যস্ত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিশ্চয় বংশধারার পর্যায়ক্রমের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই, এবং গোষ্ঠীগুলোতে এদের আবদ্ধতার জন্য বর্তমানে কোন কারণ দেওয়া যেতে পারে না। কিন্তু জীবদের ক্ষেত্রে ঘটনাটি ভিন্ন হয়, এবং ওপরে প্রদত্ত মতটি গোষ্ঠীর অধীনে গোষ্ঠীতে এদের স্বাভাবিক বিন্যাসের সঙ্গে সঙ্গ তিপূর্ণ। অন্য কোন ব্যাখ্যা কখনও দেওয়ার চেষ্টা হয়নি। 

আমরা দেখেছি যে প্রকৃতিবিদরা প্রজাতি, গণ ও গোত্রগুলিকে প্রত্যেক বিভাগে বিন্যস্ত করতে চেষ্টা করেন, যাকে বলা হয় প্রাকৃতিক সিস্টেম। কিন্তু এই সিস্টেমের অর্থ কি? যে—সব জীবন্ত বস্তু সবচেয়ে সদৃশ তাদের বিন্যস্ত করার জন্য এবং যারা সবচেয়ে অসদৃশ তাদের পৃথক করার জন্য কোন কোন বিশেষজ্ঞ এটিকে একটি নকশা বা রূপরেখা হিসেবে মনে করেন, অথবা যত সংক্ষেপে সম্ভব সাধারণ প্রস্তাবসমূহকে ঘোষণা বা ব্যক্ত করার একটি কৃত্রিম পদ্ধতি হিসেবে দেখেন। অর্থাৎ, উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত স্তন্যপায়ীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করতে একটি বাক্যের দ্বারা, সমস্ত মাংসাশী প্রাণীদের পক্ষে সাধারণ অন্য একটি দ্বারা, এবং কুকুর গণের পক্ষে সাধারণগুলোর জন্য অন্য একটি দ্বারা এবং তারপর একটিমাত্র বাক্য যুক্ত করে প্রত্যেক প্রকার কুকুরের পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয়। এই সিস্টেমের উদ্ভাবনীক্ষমতা এবং উপযোগিতা তর্কাতীত। কিন্তু অনেক প্রকৃতিবিদ মনে করেন প্রাকৃতিক সিস্টেমের দ্বারা আরও কিছু অর্থ বোঝায়, তাঁরা বিশ্বাস করেন এটি সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনাকে প্রকাশ করে; কিন্তু যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে বলা হয় যে দেশ ও কালে অথবা উভয়েই কিংবা সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা বলতে ঠিক কী বোঝায়, ততক্ষণ এটি আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারে কিছু যুক্ত করে বলে আমার মনে হয় না। অভিব্যক্তিগুলোর মধ্যে বিখ্যাতটি হচ্ছে লিনিয়াসের, যা প্রায় অব্যক্ত আকারে ব্যক্ত হয়, সেই বিখ্যাত অভিব্যক্তিটি হচ্ছে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো গণ সৃষ্টি করে না, বরং গণই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদান করে। এটির অর্থ মনে হয় এই যে শুধুমাত্র সদৃশতার তুলনায় আমাদের শ্রেণীবিভাগে আরও গভীর কোন সম্পর্ক নিহিত আছে। আমি মনে করি যে এটি হচ্ছে ঘটনা, এবং জীবদের মধ্যে গভীর সাদৃশ্যের একটি জ্ঞাত কারণ অর্থাৎ বংশসম্প্রদায়ই হচ্ছে সেই সম্পর্ক যা, রূপান্তরের বিভিন্ন মাত্রার দ্বারা পরিলক্ষিত হলেও, আমাদের শ্রেণীবিভাগগুলোর দ্বারা আমাদের কাছে অংশত প্রকাশিত হয়। 

শ্রেণীবিভাগে অনুসৃত নীতিসমূহ এবং প্রতিবন্ধকসমূহ এখন আমাদের বিবেচনা করা উচিত। এই প্রতিবন্ধকসমূহ এই মতবাদের জন্য হয় যে শ্রেণীবিভাগ হয় সৃষ্টির কোন অজ্ঞাত পরিকল্পনা প্রদান করে, অথবা পরস্পরের সঙ্গে অতিশয় সদৃশ আকারদের একত্রে রাখার জন্য এবং সাধারণ বক্তব্য বা প্রস্তাবগুলোকে ব্যক্ত করার জন্য একটি সরল রূপরেখা দেয়। এটি মনে করা যেতে পারত (এবং প্রাচীনকালে এমনটাই চিন্তা করা হত) যে দেহগঠনের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো জীবনের স্বভাবসমূহ নির্ধারণ করেছিল সেগুলো এবং প্রকৃতির মানদণ্ডে প্রত্যেক জীবের সাধারণ অবস্থান শ্রেণীবিভাগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর চেয়ে কোন কিছুই বেশী ভ্রান্ত হতে পারে না। একটি নেংটি ইদুরের সঙ্গে একটি শ্রিউ-র, একটি ডুগং—এর সঙ্গে একটি তিমির, একটি তিমির সঙ্গে একটি মাছের বহিরাকৃতিতে সদৃশতায় কেউ কোন গুরুত্ব আরোপ করে না। যদিও জীবের সমগ্র জীবনের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এইসব সাদৃশ্য শুধুমাত্র “অভিযোজিত অথবা সাদৃশ্যভিত্তিক” বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়, তবুও এইসব সাদৃশ্য সম্পর্কে আমরা পুনরায় আলোচনা করব। এমনকি একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে যে বিশেষ স্বভাবসমূহের সঙ্গে জীবের কোন অঙ্গ যত কম সম্পর্কিত হয়, শ্রেণীবিভাগে সেটি তত বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন ডুগং (স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক প্রাণী) সম্পর্কে বলার সময় ওয়েন বলেন, “জনন সংক্রান্ত অঙ্গসমূহ একটি প্রাণীর খাদ্য ও স্বভাবের সঙ্গে অতিশয় পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত, এগুলো এদের প্রকৃত সম্বন্ধ সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে বলে আমি সর্বদা বিবেচনা করেছি। শুধুমাত্র একটি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যই অভিযোজিত হওয়ায় এইসব অঙ্গগুলো রূপান্তরিত হয়েছে, এটিতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।” উদ্ভিদদের সম্পর্কে এটি লক্ষণীয় যে উদ্ভিদদের বর্ধনশীল অঙ্গগুলি কম গুরুত্বের হয়, যাদের ওপর এদের পুষ্টি ও জীবন নির্ভর করে; পক্ষান্তরে, বীজ ও ভ্রূণের মত এদের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত জনন-অঙ্গগুলো অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হয়। এরূপে আবার, প্রক্রিয়াগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগে আলোচনা করার সময় আমরা দেখেছি যে এগুলো শ্রেণীবিভাগে প্রায়শই অতিশয় উপকারী হয়। আত্মীয়তাযুক্ত সমগ্র গোষ্ঠীগুলোতে এদের অপরিবর্তনীয়তা বা স্থায়িত্বের ওপর এটি নির্ভর করে; এবং এদের অপরিবর্তনীয়তা প্রধানত যে-কোন অল্প বিচ্যুতির ওপর নির্ভর করে প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা সংরক্ষিত ও সঞ্চিত হয় না। প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবলমাত্র কার্যোপযোগী বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ক্রিয়া করে। 

একটি অঙ্গের শুধুমাত্র শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব এর শ্রেণীবিভাগযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করে না, এটি এই বিষয়টির দ্বারা প্রায় প্রমাণিত হয়েছে যে (যেমন আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে) সম্বন্ধযুক্ত গোষ্ঠীগুলোতে, যেখানে একই অঙ্গের একই শারীরবৃত্তীয় মূল্য রয়েছে, এর শ্রেণীবিভাগমূলক মূল্যটি অতিশয় ভিন্ন। এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগ না দিলে কোন প্রকৃতিবিদ কোন গোষ্ঠীর ওপর কাজ করতে পারেন না; এবং প্রায় প্রত্যেক বিশেষজ্ঞের গবেষণামূলক লেখার এটি সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃত হয়েছে। রবার্ট ব্রাউনের মত শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে, যিনি প্রোটিয়েসি গোত্রের কোন কোন অঙ্গ সম্বন্ধে বর্ণনা দেওয়ার সময় বলেন যে “এদের সব অঙ্গের মতো, শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রত্যেক প্রাকৃতিক গোত্রেই, এদের গণগত গুরুত্ব অতিশয় অসমান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভবত সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়েছে।” আবার অন্য একটি লেখায় তিনি বলেন ক্যারেসি গোত্রের গণসমূহ “এক অথবা একাধিক ডিম্বাশয় থাকা, অ্যালরুমেনের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি, ইমব্রিজেট অথবা ভালভিউনার মুকুলপত্র বিন্যাসের জন্য ভিন্ন হয়। এইসব বৈশিষ্ট্যের যে-কোন একটি গণগত গুরুত্বের চেয়ে প্রায়শই আরও অধিক হয়, যদিও এখানে এমনকি সকলকে একত্র করলেও এরা নেস্টিস গণের থেকে কনারাস গণকে পৃথক করতে যথেষ্ট নয় বলে মনে হয়।” কীটপতঙ্গদের সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেওয়া থাক : হাইমেনপটেরার একটি বিরাট বিভাগে, ওয়েস্টউডের বক্তব্য অনুযায়ী, অ্যান্টেনাগুলো গঠনে অতিশয় অপরিবর্তনীয় হয়; অন্য একটি বিভাগে এরা অতিশয় ভিন্ন হয়, এবং পার্থক্যসমূহ শ্রেণীবিভাগে সম্পূর্ণ নগণ্য মূল্যের হয়; তথাপি কেউ বলবেন না যে একই অর্ডারের এই দুটি বিভাগের অ্যান্টেনাগুলোর অসমান শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব আছে। একই জীবগোষ্ঠীর মধ্যে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের শ্রেণীবিভাগের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। 

আবার কেউই বলবেন না যে অঙ্কুর অথবা ক্ষয়িষ্ণু অঙ্গগুলো শারীরবৃত্তীয় অথবা অত্যাবশ্যক গুরুত্বের হয়; তথাপি, সন্দোহতীতভাবে এই অবস্থায় অঙ্গসমূহ শ্রেণীবিভাগে প্রায়শই অতিশয় মূল্যবান হয়। কেউ বিতর্ক করবে না যে তরুণ রোমন্থক প্রাণীদের ওপরের চোয়ালের অঙ্কুর দাঁত এবং পায়ের কোন কোন অঙ্কুর হাড় রুমিন্যান্ট (রোমন্থক প্রাণী) ও প্যাকির্ডাম (হাতি, গণ্ডার ইত্যাদি) প্রাণীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ দেখাতে অতিশয় উপযোগী হয়। রবার্ট ব্রাউন বিষয়টি সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে অঙ্কুর পুষ্পিকাদের অবস্থান ঘাসেদের শ্রেণীবিভাগে অতিশয় মূল্যবান হয়। 

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে উদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, সেগুলোর অতি তুচ্ছ শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব রয়েছে বলে বিবেচনা করা উচিত হবে কিন্তু যেগুলো সমগ্র গোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণে তাতিশয় কার্যোপযোগী হিসেবে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নাসারন্ধ্র থেকে মুখ পর্যন্ত একটি মুক্ত প্রবেশদ্বার আছে কি নেই, ওয়েনের মতানুসারে, তা শুধুমাত্র একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা মাছ ও সরীসৃপদের সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে—মাসুপিয়ালদের নিচের চোয়ালের কোণটির বাঁক—কীটপতঙ্গের ডানাগুলো ভাঁজ হওয়ার পদ্ধতি—কোন কোন শৈবালের কেবলমাত্র রং-ঘাসেদের ফুলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে শুধুমাত্র রোমের উপস্থিতি—মেরুদণ্ডী প্রাণীদের লোম ও পালকের মত ত্বকের আবরণীর প্রকৃতি। অর্নিথোরিনকাসের শরীর যদি লোমের পরিবর্তে পালক দ্বারা আবৃত হত, তাহলে এই বিস্ময়কর জীবটির সঙ্গে পাখিদের সম্বন্ধের মাত্রা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যকারী হিসেবে এই বহিঃস্থ এবং তুচ্ছ বৈশিষ্ট্যটি প্রকৃতিবিদদের দ্বারা বিবেচিত হতে পারত। 

শ্রেণীবিভাগের জন্য তুচ্ছ বৈশিষ্ট্যগুলোর গুরুত্ব প্রধানত কমবেশী গুরুত্বপূর্ণ অনেক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে বৈশিষ্ট্যদের সমষ্টির মূল্য অতিশয় কার্যকরী হয়। অতএব, যেমন প্রায়শই বলা হয়েছে, অতিশয় শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব এবং প্রায় সার্বজনীন প্রভাব, উভয়েরই কতিপয় বৈশিষ্ট্যে একটি প্রজাতি তার মিত্রদের থেকে ভিন্ন হতে পারে, তথাপি একে কোথায় শ্রেণীভুক্ত করা উচিত তা আমাদের সংশয়ান্বিত করে। অতএব এটি লক্ষ্য করা গেছে যে যে-কোন একটি একক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা কোন শ্রেণীবিভাগ যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, তা সর্বদা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গই অপরিবীয় নয়। একত্রে বৈশিষ্ট্যসমষ্টির গুরুত্ব, এমনকি যখন একটিও গুরুত্বপূর্ণ হয় না, লিনিয়াস প্রদত্ত বাণীটিকেই শুধুমাত্র ব্যাখ্যা করে। লিনিয়াসের বাণীটি হচ্ছে যে বৈশিষ্ট্যগুলো গণ সৃষ্টি করে না, বরং গণই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদান করে; কারণ এটি সাদৃশ্যের অনেক তুচ্ছ বিষয়ের, যা এত অল্প যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায় না, উপলব্ধির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে হয়। ম্যালফিঘিয়েসি গোত্রের অন্তর্গত কোন কোন উদ্ভিদে ত্রুটিহীন ও অধঃপতিত বা অবনমিত ফুল থাকে; শেষোক্তটি সম্পর্কে এ. ডে জুসিউ মন্তব্য করেছেন যে “প্রজাতি, গণ, গোত্র, শ্রেণীর পক্ষে উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশই অন্তর্হিত হয় এবং এভাবে আমাদের শ্রেণীবিভাগকে উপহাস করে।” কয়েক বছর ধরে যখন অ্যাসপিকাপা নামক উদ্ভিদ ফ্রান্সে উৎপন্ন হচ্ছিল, তখন শুধুমাত্র অধঃপতিত বা অবনমিত ফুলগুলো অর্ডারটির উপযুক্ত টাইপ থেকে গঠনের অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কয়েকটিতে বিস্ময়করভাবে তিন্ন হয়েছে; তা সত্ত্বেও জুসিউর পর্যবেক্ষণের মতো এম. রিচার্ড-ও বিচক্ষণতার সঙ্গে বলেছিলেন যে এই গণটিকে এখনও ম্যালফিঘিয়েসি গোত্রের মধ্যে রাখা উচিত। এই ঘটনাটি আমাদের শ্রেণীবিভাগের অন্তর্নিহিত প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করে। 

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, প্রকৃতিবিদরা যখন কাজ করেন, বৈশিষ্ট্যগুলো শারীরবৃত্তীয় মূল্য সম্পর্কে তাঁরা অসুবিধা বোধ করেন না, ঐ বৈশিষ্ট্যগুলোকে তাঁরা একটি গোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে অথবা একটি বিশেষ প্রজাতিতে বণ্টন করার জন্য ব্যবহার করেন। যদি তাঁরা আকারদের অধিকাংশে প্রায় সমরূপ ও সাধারণ এবং অন্যগুলোতে সাধারণ নয় এমন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন, তাহলে তাঁরা এটিকে অতি মূল্যবান হিসেবে ব্যবহার করেন : যদি এটি কম সংখ্যার আকারে সাধারণ হয়, তাহলে তাঁরা এটিকে কম মূল্যবান হিসেবে ব্যবহার করেন। কয়েকজন প্রকৃতিবিদ এই পদ্ধতিকে সত্য বলে ভাবাধে স্বীকার করেছেন; এবং দক্ষ উদ্ভিদবিদ সেন্ট হিলারের তুলনায় আর কেউ স্পষ্টভাবে এটি স্বীকার করেননি। যদি কতিপয় তুচ্ছ বৈশিষ্ট্যকে সবসময় জোট হিসেবে দেখা যায়, যদিও এদের মধ্যে আপাতভাবে কোন সম্বন্ধ আবিষ্কার করা যেতে পারে না, তাহলে এদের ওপর বিশেষ মূল্য স্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু প্রাণীদের অধিকাংশ গোষ্ঠীতে প্রধান প্রধান অঙ্গসমূহ, যেমন রক্ত চলাচলের অঙ্গ অথবা একে বায়ুপূর্ণ করার অঙ্গ অথবা জাতটির বংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী অঙ্গ প্রায় একরূপ হয়, তাহলে এরা শ্রেণীবিভাগে বিশেষ কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয়; কিন্তু কতিপয় অঙ্গে এইসব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান অঙ্গ সম্পূর্ণ হীনতর মূল্যের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এরূপে যেমন ক্রিজ মুলার সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে বর্মী প্রাণীদের (ক্রাস্ট্রেসিয়ান) একই গোষ্ঠীর সিপ্রিতিনা নামক গণে একটি হৃদপিণ্ড আছে, আবার সাইপ্রিস ও সাইথেরিয়া নামক দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত গণে এইরূপ কোন অঙ্গ নেই; সিপ্রিডিনা নামক গণের একটি প্রজাতিতে অতি উন্নত কানকো আছে, আবার অন্য একটি প্রজাতিতে এটি নেই। 

আমরা লক্ষ্য করতে পারি কেন ভ্রূণ থেকে উদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলো বয়স্কদের থেকে উদ্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে সমান গুরুত্বসম্পন্ন হবে; কারণ একটি প্রাকৃতিক শ্রেণীবিভাগ সমস্ত বয়সকেই অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু সাধারণভাবে এটি স্পষ্ট নয় যে বয়স্কদের দেহগঠন প্রাকৃতিক মানদণ্ডে পূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, তার তুলনায় ভ্রূণদের গঠন এই উদ্দেশ্যের জন্য কেন আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। তথাপি মিলনে এডওয়ার্ড এবং আগাসি-র মতো বিখ্যাত প্রকৃতিবিদরা দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে ভ্রূণগত বৈশিষ্ট্যগুলিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; এবং এই তত্ত্ব সত্য হিসেবে সাধারণভাবে স্বীকৃত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, লার্ভার অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য বর্জন না করে এদের গুরুত্ব কোন কোন সময় অতিরঞ্জিত করা হয়েছে; এটি দেখানোর জন্য ফ্রিজ মুলার এইসব বৈশিষ্ট্যের সাহায্য নিয়ে শুধুমাত্র বর্মী প্রাণীদের বিরাট শ্রেণীকে বিন্যস্ত করেছিলেন এবং বিন্যাসটি প্রাকৃতিক বিন্যাস হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু সন্দেহ করার কোন কারণ থাকতে পারে না যে লার্ভা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বাদে অন্যান্য ভ্রূণগত বৈশিষ্ট্য কেবলমাত্র প্রাণীদের ক্ষেত্রেই নয়, উদ্ভিদদের ক্ষেত্রেও শ্রেণীবিভাগের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। এভাবে সপুষ্পক উদ্ভিদদের প্রধান প্রধান বিভাগ ভ্রূণের পার্থক্যের ওপর, বীজপত্রের সংখ্যা ও অবস্থানের ওপর, এবং ভ্রূণমুকুল ও ভ্রূণমূল বা বীজমূলের বিকাশ পদ্ধতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখব কেন এইসব বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক সিস্টেমের বিন্যাস বংশগত হওয়া সত্ত্বেও শ্রেণীবিভাগে এত মূল্যবান হয়। 

আমাদের শ্রেণীবিভাগসমূহ নিকট সম্পর্কের শৃংখলগুলো দ্বারা প্রায়শই প্রভাবিত হয়। সব পাখিদের পক্ষে সাধারণ কতিপয় বৈশিষ্ট্যকে সংজ্ঞায়িত করার তুলনায় কোন কিছুই সহজতর নয়; কিন্তু বর্মী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এরূপ কোন সংজ্ঞা এখনও পর্যন্ত অসম্ভব বলে দেখা গেছে। শ্রেণীর দুটি বিপরীত প্রান্তে এমন অনেক বর্মী প্রাণী আছে, যাদের প্রায় কোনও বৈশিষ্ট্যই সাধারণ নয়; তথাপি উভয় প্রান্তের প্রজাতিগুলোকে, যারা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং এই পরবর্তীরা আবার অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তারা আবার অন্যদের সঙ্গে—এদেরকে আর্টিকুলাটার অন্য কোন শ্রেণীতে নয়, বরং এই শ্রেণীটিতেই দ্ব্যর্থহীনভাবে অন্তর্ভুক্ত বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। 

ভৌগোলিক বিস্তার, যদিও সম্ভবত যুক্তিসঙ্গতভাবে নয়, শ্রেণীবিভাগে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, বিশেষত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত আকারদের অতিশয় বিরাট গোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে। টেম্মিঙ্ক পাখিদের কোন-কোন গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এরূপ পদ্ধতির উপযোগিতা, এমনকি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং কয়েকজন পতঙ্গ ও উদ্ভিদ-বিজ্ঞানীও এটি অনুসরণ করেছেন। 

শেষতঃ, প্রজাতিদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর, যেমন অর্ডার, উপ-অর্ডার, গোত্র, উপ-গোত্র এবং গণগুলোর তুলনামূলক মূল্য সম্পর্কে, আমার অন্ততঃ বর্তমানে মনে হয় যে এরা প্রায় বিধিবহির্ভূত হয়। সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মধ্যে কয়েকজন, যেমন মিঃ বেনথাম এবং অন্যরা বিধিবহির্ভূত মূল্যের ওপর অত্যধিক জোর দিয়েছেন। উদ্ভিদ ও পতঙ্গদের ক্ষেত্রে অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন ব্যবহারিক প্রকৃতিবিদরা একটি গোষ্ঠীকে প্রথমে শুধু একটি গণ হিসেবে গণ্য করেছেন, পরে একে উপ-গোত্র অথবা গোত্রে উন্নীত করেছেন; এবং এটি করা হয়েছে, প্রথমে উপেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ গঠনগত পার্থক্যসমূহ অধিকতর গবেষণায় আবিষ্কৃত হওয়ার জন্য নয়, বরং এই কারণে যে পার্থক্যের অল্প ভিন্ন গ্রেড-সহ অসংখ্য সম্পর্কিত প্রজাতিরা পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হয়েছে। 

শ্রেণীবিভাগের পূর্বের সমস্ত নিয়ম, সাহায্য এবং প্রতিবন্ধকগুলোকে এই মতানুসারে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে প্রাকৃতিক সিস্টেম রূপান্তরের সঙ্গে উদ্ভবের তত্ত্বটির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়; অর্থাৎ যে-কোন দুটি অথবা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে যে-সব বৈশিষ্ট্য প্রকৃত সৌসাদৃশ্য প্রদর্শন করে বলে প্রকৃতিবিদরা মনে করেন সেগুলো এক সাধারণ পিতামাতা থেকে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছে, সমস্ত প্রকৃত শ্রেণীবিভাগ বংশানুক্রমিক হয়; বংশ—সম্প্রদায় (কমিউনিটি অফ ডিসেন্ট) হচ্ছে একটি লুকানো বন্ড যাকে সৃষ্টির কোন অজ্ঞাত পরিকল্পনার জন্য অথবা সাধারণ প্রকল্পদের উদ্ভাবনের জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র কমবেশী সদৃশ বস্তুগুলোকে একত্রে রাখা এবং পৃথক করার জন্য প্রকৃতিবিদরা অচেতনভাবে খুঁজছেন। 

কিন্তু আমি এর কি অর্থ করেছি তা আরও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করব। আমি বিশ্বাস করি যে পরস্পরের সঙ্গে উপযুক্ত পদমর্যাদায় ও সম্পর্কে, প্রত্যেক শ্রেণীর গোষ্ঠীদের বিন্যাস প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক হওয়ার জন্য নিশ্চয় বংশানুক্রমিক হবে, কিন্তু কয়েকটি শাখায় অথবা গোষ্ঠীতে পার্থক্যের পরিমাণটি, যদিও এদের সাধারণ জনকের সঙ্গে রক্তসম্পর্কে কিছুমাত্রায় সম্বন্ধযুক্ত, রূপান্তরের বিভিন্ন মাত্রার জন্য বিরাটভাবে পৃথক হতে পারে; এবং এটি বিভিন্ন গণ, গোত্র, খণ্ড অথবা অর্ডারগুলোতে শ্রেণীভুক্ত আকারদের দ্বারা প্রকাশিত হয়। এর অর্থ কি তা পাঠক ভালভাবে বুঝতে পারবেন, যদি তিনি কষ্ট করে চতুর্থ অধ্যায়ে প্রদত্ত চিত্রটির দিকে লক্ষ্য করেন। ধরুন আমরা মনে করি যে A থেকে L পর্যন্ত অক্ষরগুলো সিলুরিয়ান যুগে অবস্থিত সম্বন্ধযুক্ত গণকে সূচিত করে, এবং আরও আগের কোন কোন আকার থেকে এরা উদ্ভূত হয়েছিল। এইসব গণের (A, F এবং I) তিনটির একটি প্রজাতি বর্তমানকাল পর্যন্ত রূপান্তরিত বংশধরদের বংশগতভাবে প্রেরণ করেছে, যারা সর্বোচ্চ সমান্তরাল রেখার ওপর পনেরটি গণ দ্বারা (a^14 থেকে Z^14) সূচিত হয়েছে। এখন একটি একক প্রজাতি থেকে উদ্ভূত সমস্ত রূপান্তরিত বংশধররা রক্তে অথবা বংশে একই মাত্রায় সম্পর্কিত হয়, রূপক অর্থে এদের জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো ইত্যাদি ভাইবোন বলা যেতে পারে; তথাপি এরা পরস্পরের থেকে ব্যাপকভাবে এবং বিভিন্ন মাত্রায় ভিন্ন হয়। A থেকে উদ্ভূত আকাররা, যা এখন দুটি অথবা তিনটি গোত্রে ভেঙেছে, I থেকে উদ্ভূত আকারদের, যা আবার দুটি গোত্রে ভেঙেছে, সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র বা ভিন্ন অর্ডার সৃষ্টি করে। অথবা A থেকে উদ্ভূত বর্তমানের প্রজাতিদের A পিতামাতা-সহ একই গণে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে না; অথবা I থেকে উদ্ভূত বর্তমানের প্রজাতিদের I পিতামাতার সঙ্গে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে না। কিন্তু বর্তমানের গণ F^14 অল্পরূপে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে; এবং তখন এটি পিতামাতা গণ F-এর সঙ্গে শ্রেণীভুক্ত হবে; যেমন এখনও জীবিত কতিপয় জীব সিলুরিয়ান গণের অন্তর্ভুক্ত। অতএব এইসব জীবদের মধ্যে পার্থক্যের তুলনামূলক মূল্যটি ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়েছে, যেগুলো সকলে পরস্পরের সঙ্গে রক্তসম্পর্কে একই মাত্রায় সম্পর্কযুক্ত হয়। তা সত্ত্বেও এদের বংশানুক্রমিক বিন্যাস, কেবল বর্তমান সময়ে নয়, বরং উদ্ভবের প্রত্যেক ধারাবাহিক যুগেও সত্য হয়। A থেকে উদ্ভূত সমস্ত বংশধররা তাদের সাধারণ পিতামাতা থেকে কিছু সাধারণ জিনিস বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়ে থাকবে, যেমন I থেকে উদ্ভূত সমস্ত বংশধররা প্রাপ্ত হয়; প্রত্যেক পর্যায়ক্রমিক ধাপে, বংশধরদের প্রত্যেক অধীন শাখার ক্ষেত্রেও এরূপ হবে। তবে, যদি আমরা মনে করি যে A অথবা I থেকে উদ্ভূত যে-কোন বংশধর এত বেশীভাবে রূপান্তরিত হয়েছে যে এটি পিতৃমাতৃত্বের সমস্ত চিহ্ন হারিয়ে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সিস্টেমে এর স্থান বিলুপ্ত হবে, যেমন বর্তমানের অল্প কয়েকটি জীবের ক্ষেত্রে ঘটেছে। F গণ থেকে সমস্ত বংশধররা, এর বংশধারার সমগ্র রেখা বরাবর, অল্প রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়, এবং এরা একটি গণ সৃষ্টি করে। কিন্তু এই গণ অতিশয় বিচ্ছিন্ন হলেও এর উপযুক্ত মধ্যবর্তী স্থান অধিকার করে থাকবে। একটি সমতল পৃষ্ঠের ওপর এখানে প্রদত্ত চিত্রটির মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্ব অতিশয় সরল হয়। শাখাদের সমস্ত দিকে বিকীর্ণ হওয়া উচিত। যদি গোষ্ঠীগুলোর নাম একটি রৈখিক শ্রেণীতে সরলভাবে লিখিত হত, তাহলে প্রতিনিধিত্ব তখনও কম প্রাকৃতিক হয়ে থাকবে; এবং একটি সমতল পৃষ্ঠে একটি শ্রেণীতে সম্বন্ধগুলো সূচিত করা কোনমতেই সম্ভবপর নয়, যেগুলোকে আমরা প্রকৃতিতে একই গোষ্ঠীর জীবদের মধ্যে আবিষ্কার করি। এভাবে প্রাকৃতিক সিস্টেমটি একটি বংশতালিকার মতোই বিন্যাসে বংশানুক্রমিক হয় : রূপান্তরিত হওয়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর রূপান্তরের পরিমাণটি এদের বিভিন্ন সুপরিচিত গণ, উপগোত্র, গোত্র, খণ্ড, অর্ডার এবং শ্রেণীগুলোতে শ্রেণীভুক্ত করার দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। 

ভাষার বিষয়ে আলোচনা করা শ্রেণীবিভাগের এই মতটি ব্যাখ্যা করার জন্য কার্যকরী হতে পারে। মানবজাতির একটি নিখুঁত বংশতালিকা আমাদের হাতে থাকলে, মানুষের জাতিসত্তাগুলোর একটি বংশতালিকা সংক্রান্ত বিন্যাস সমগ্র পৃথিবীতে বর্তমানে কথিত বিভিন্ন ভাষার সর্বোত্তম শ্রেণীবিভাগ করতে সমর্থ হত; এবং যদি সমস্ত বিলুপ্ত ভাষা এবং সব মধ্যবর্তী ও ধীরে ধীরে পরিবর্তনশীল কথ্যভাষাগুলো এর অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে এরূপ একটি বিন্যাস সম্ভবপর হবে। তথাপি কোন কোন প্রাচীন ভাষা অতি অল্প পরিবর্তিত হয়েছিল এবং কয়েকটি নূতন ভাষার জন্ম দিয়েছিল, অন্যদিকে অন্য ভাষাগুলি বিস্তার, বিচ্ছিন্নতা এবং যুগ্মভাবে উদ্ভূত কতিপয় জাতিসত্তার সভ্যতার অবস্থার জন্য অধিক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়েছিল, এবং এরূপে অনেক নূতন কথ্যভাষা ও ভাষার জন্ম দিয়েছিল। একই স্টকের ভাষাগুলির মধ্যে পার্থক্যের বিভিন্ন পরিমাণ গোষ্ঠীদের অধীনে গোষ্ঠীদের দ্বারা প্রকাশিত হয়ে থাকবে; কিন্তু উপযুক্ত অথবা এমনকি শুধুমাত্র সম্ভবপর বিন্যাসটি তখনও বংশানুক্রমিকই থাকবে; এবং এটি প্রকৃতই স্বাভাবিক হবে, যেহেতু এটি নিকটতম সম্বন্ধগুলোর দ্বারা যাবতীয় বিলুপ্ত এবং সাম্প্রতিক, সমস্ত ভাষাগুলোকে একত্রে সংযুক্ত করবে এবং সন্তানাদি ও প্রত্যেক বাকশক্তির উদ্ভব ঘটাবে। 

এই মতবাদটি সঠিক কিনা জানতে, ভ্যারাইটিদের শ্রেণীবিভাগের দিকে আমরা একবার তাকাব, যারা একটি একক প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে জানা যায় অথবা বিশ্বাস করা হয়। এগুলোকে প্রজাতিদের অধীনে গোষ্ঠীবদ্ধ করা হয় এবং উপ-প্রকারদেরকে ভ্যারাইটিদের অধীনে, যেমন পার্থক্যের অন্য কয়েকটি ধাপসমেত গৃহপালিত পায়রার ক্ষেত্রে করা হয়। প্রজাতিদের শ্রেণীবিভাগে প্রায় একই নিয়ম অনুসৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা একটি কৃত্রিম সিস্টেমের পরিবর্তে একটি প্রাকৃতিক সিস্টেমে ভ্যারাইটিদের বিন্যস্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন; উদাহরণস্বরূপ, আনারসের দুটি ভ্যারাইটিকে একত্রে শ্রেণীভুক্ত করতে আমরা সতর্কিত হই, কারণ এদের ফলটি প্রায়শই একইরূপ হয়, যদিও এটি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গ নয়; সুইডিশ এবং সাধারণ শালগমকে কেউ একত্রে রাখে না, যদিও এদের ভক্ষণযোগ্য এবং মোটা কাণ্ডগুলো একান্তই সদৃশ। সবচেয়ে অপরিবর্তনীয় যে-কোন অংশই ভ্যারাইটিদের শ্রেণীবিভাগে ব্যবহৃত হয় : এরূপে বিখ্যাত কৃষিবিদ মার্শাল বলেন যে গো-মহিষাদির ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্যে শিংগুলো অতিশয় উপকারী হয়, কারণ শরীরের আয়তন অথবা রং ইত্যাদির তুলনায় এরা কম পরিবর্তনশীল; অন্যদিকে ভেড়াদের ক্ষেত্রে শিংগুলো কম কার্যোপযোগী হয়, কারণ এরা কম অপরিবর্তনশীল। ভ্যারাইটিদের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি যে আমাদের একটি প্রকৃত বংশতালিকা থাকলে একটি বংশানুক্রমিক শ্রেণীবিভাগ সার্বজনীনভাবে গ্রাহ্য হত; এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এটি চেষ্টাও করা হয়েছে। কারণ অধিক অথবা কম রূপান্তর হোক বা না-ই হোক, আমরা নিশ্চিতভাবে অনুভব করতাম যে বংশগতির পদ্ধতিটি অধিকাংশ বিষয়ে সম্পর্কযুক্ত আকারগুলোকে একত্রে রাখবে। লোটন পায়রাদের ক্ষেত্রে, উপ-ভ্যারাইটিদের কয়েকটি চঞ্চুর দৈর্ঘ্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন হয়, তথাপি ডি ডিগবাজি খাওয়ার সাধারণ স্বভাবের জন্য এদের সকলকে একত্রে রাখা হয়েছে; কিন্তু হ্রস্র মুখওয়ালা জাতটি প্রায় অথবা সম্পূর্ণভাবে এই স্বভাবটি হারিয়ে ফেলেছে; তা সত্ত্বেও, এই বিষয়টি সম্পর্কে কোন চিন্তা না করে এইসব লোটন পায়রাদের একই গোষ্ঠীতে রাখা হয়েছে, কারণ এরা রক্তসম্পর্কিত হয় এবং অন্য কয়েকটি বিষয়ে সদৃশ হয়। 

প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেক প্রকৃতিবিদ তাঁর শ্রেণীবিভাগে বংশধারার বিষয়টি এনেছেন; কারণ তিনি তার নিম্নতম ধাপে প্রজাতিদের দুটি লিঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করেন, এবং প্রত্যেক প্রকৃতিবিদ জানেন যে কত গুরুতরভাবে এগুলো কোন-কোন সময় অতিশয় প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলিতে ভিন্ন হয়। কোন কোন সিরিপেডদের বয়স্ক পুরুষে এবং উভয় লিঙ্গে কিছু সাধারণ হয় এর সম্বন্ধে কদাচিৎ একটি একক ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে, এবং তথাপি কেউই এদের পৃথক করার কল্পনাও করতে পারে না। যে মুহূর্তে তিনটি অর্কিড আকার যথা মোনাক্যানথাস, মিয়ানখাস এবং ক্যাটাসেটাম, যাদের তিনটি স্বতন্ত্র গণ হিসাবে পূর্বে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছিল, কোন কোন সময় একই গাছের ওপর জন্মায় বলে জানা গিয়েছিল, সেই মুহূর্তেই এদের ভ্যারাইটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল; এবং এখন আমি দেখাতে সমর্থ হয়েছি যে এরা একই প্রজাতির পুরুষ, স্ত্রী এবং উভলিঙ্গ ভ্যারাইটি। প্রকৃতিবিদরা একই এককের বিভিন্ন শূককীট (লার্ভা) অবস্থাগুলোকে সুপরিচিত স্টিনস্ট্রাপের জনুঃক্রমটিকে, পরস্পরের থেকে এবং বয়স্কদের থেকে যতই ভিন্ন হোক না কেন, একটি প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। বিকটাকৃতি এবং ভ্যারাইটিদেরকে তাদের পিতামাতা আকারের সঙ্গে আংশিক সাদৃশ্যের জন্য নয় বরং যেহেতু তারা এটির থেকে উদ্ভূত হয়েছে এজন্য তাঁরা অন্তর্ভুক্ত করেন। 

যেহেতু একই প্রজাতির এককগুলোকে একত্রে শ্রেণীভুক্ত করতে বংশধারা সার্বজনীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যদিও পুরুষ ও স্ত্রী এবং শূককীটরা কোন কোন সময় অতিশয় ভিন্ন হয়; এবং যেহেতু এটি ভ্যারাইটিদের শ্রেণীবিভাগ করতে ব্যবহৃত হয়েছে, যারা কোন কোন সময় অনির্দিষ্ট পরিমাণে এবং কোন কোন সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে রূপান্তরিত হয়েছে, সেহেতু বংশের এই একই উপাদানটি গণের অধীনে প্রজাতিকে, উচ্চতর গোষ্ঠীগুলোর অধীনে গণগুলোকে এবং সকলকে সুপরিচিত প্রাকৃতিক সিস্টেমে গোষ্ঠীবদ্ধ করতে অচেতনভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে না কি? আমি মনে করি এটি অচেতনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এভাবে আমি শুধুমাত্র কয়েকটি নিয়ম ও নির্দেশিকা বুঝতে পারি, যেগুলোকে আমাদের শ্রেষ্ঠ সিস্টেম্যাটিস্টরা অনুসরণ করেছেন। আমাদের কোন লিখিত বংশতালিকা নেই বলে যে—কোন প্রকার সাদৃশ্যের দ্বারা আমরা বংশ-সম্প্রদায় চিহ্নিত করতে বাধ্য হই। অতএব প্রত্যেক প্রজাতির সম্প্রতি প্রভাবিত হওয়া জীবন-পরিবেশের সাপেক্ষে অল্প রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকার ঐ সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা পছন্দ করি। এই মতানুসারে অঙ্কুর দেহগঠনগুলো জীবের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় ভাল অথবা আরও ভাল হয়। একটি বৈশিষ্ট্য যতই তুচ্ছ হোক আমরা তা অগ্রাহ্য করতে পারি না—চোয়ালের কোণের বাঁক হোক, একটি পতঙ্গের ডানা ভাঁজের পদ্ধতি হোক, চামড়াটি লোম অথবা পালকে ঢাকা হোক বা না-হোক যদি এটি বিশেষত অতি ভিন্ন স্বভাব সম্বলিত অনেক এবং বিভিন্ন প্রজাতিদের মধ্যে দেখা যায়, তাহলে এটি বিশেষভাবে উচ্চ মূল্যের হয়; কারণ বিভিন্ন স্বভাব সম্বলিত এত বেশী আকারগুলোতে এর উপস্থিতি শুধুমাত্র একটি সাধারণ পিতামাতা থেকে বংশগতির দ্বারা প্রাপ্ত, এটি আমরা বুঝতে পারি। দেহকাঠামোর একটি বিষয় সম্পর্কে এক্ষেত্রে আমরা ভুল করতে পারি, কিন্তু যখন যতই তুচ্ছ হোক না কেন কতিপয় বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন স্বভাব সম্বলিত একটি বিরাট গোষ্ঠীতে দেখা যায়, তখন বংশধারার তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বংশানুক্রমিকভাবে প্রাপ্ত হয়েছে; এবং আমরা জানি যে শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে এরূপ পুঞ্জীভূত বৈশিষ্ট্যগুলোর বিশেষ মূল্য আছে। 

আমরা বুঝতে পারি কেন একটি প্রজাতি অথবা প্রজাতিদের একটি গোষ্ঠী তাদের আত্মীয়দের থেকে সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে কয়েকটিতে ভিন্ন হতে পারে, এবং তবুও এদেরই সঙ্গে শ্রেণীভুক্ত হয়। এটি নিরাপদভাবেই করা যেতে পারে এবং প্রায়শ‍ই করা হয়—যতক্ষণ পর্যন্ত বৈশিষ্ট্যগুলির যথেষ্ট সংখ্যা, সেগুলি যতই অপ্রয়োজনীয় হোক না কেন, বংশসম্প্রদায়ের লুক্কায়িত বন্ডটিকে অভিব্যক্ত করে। ধরা যাক যে-কোন দুটি আকারের মধ্যে একটিও সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই, তথাপি যদি এইসব প্রান্তিক আকাররা মধ্যবর্তী গোষ্ঠীদের একটি শৃঙ্খল দ্বারা একত্রে সংযুক্ত হয়, তাহলে আমরা তখন এদের বংশসম্প্রদায় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত করতে পারি; এবং তখন আমরা এদের একই শ্রেণীতে স্থাপন করি। যেহেতু আমরা লক্ষ্য করি যে উচ্চ শারীরবৃত্তীয় গুরুত্বের অঙ্গগুলি, যেগুলি অতিশয় বিচিত্র জীবন—পরিবেশে জীবনকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়, সাধারণতঃ সবচেয়ে অপরিবর্তনশীল হয়, সেহেতু আমরা এদের বিশেষ মূল্য দিই; কিন্তু অন্য একটি গোষ্ঠীর অথবা একটি গোষ্ঠীর একটি ভাগে যদি এইসব একই অঙ্গগুলিকে অতিশয় ভিন্ন হতে দেখা যায়, আমরা তখন শ্রেণীবিভাগে এদের কম মূল্য দিই। আমরা এখন দেখব কেন ভ্রূণগত বৈশিষ্টগুলি শ্রেণীবিভাগে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়। বিরাট গণগুলিকে ভাগ করতে ভৌগোলিক বিস্তার কোন কোন সময় উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে, কারণ যে-কোন স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী একই গণের সমস্ত প্রজাতিরা খুব সম্ভবত একই পিতামাতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। 

সমবৃত্তিমূলক সাদৃশ্য—ওপরের মতগুলি অনুসারে আমরা প্রকৃত সম্বন্ধ এবং অনুরূপ অথবা অভিযোজিত সাদৃশ্যগুলির মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় পার্থক্যটি বুঝতে পারি। লামার্ক সর্বপ্রথম এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে আহ্বান জানান এবং ম্যাকলি ও অন্যরা দক্ষতার সঙ্গে তাঁকে অনুসরণ করেন। ডুগং এবং তিমিদের মধ্যে শরীরের আয়তনে এবং পাখনার পুরোভাগের অঙ্গগুলোতে, এবং স্তন্যপায়ীদের এই দুটি অর্ডার এবং মাছেদের মধ্যে সাদৃশ্যগুলো সমবৃত্তিমূলক হয়। এরূপে ভিন্ন অর্ডারের অন্তর্ভুক্ত একটি নেংটি ইঁদুর এবং একটি শ্রিউ ইঁদুর (সোরেক্স)-এর মধ্যে সদৃশতাটিও সমবৃত্তিমূলক হয়, এবং মিঃ মিভার্ট জোরের সঙ্গে বলেন যে ইঁদুর এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি ছোট মার্সুপিয়াল প্রাণীর (অ্যানটেচিনাস) মধ্যে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। আমার মনে হয় এইসব শেষোক্ত সদৃশতাগুলো শত্রুদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকা সহ ঝোপজঙ্গলের মধ্যে সক্রিয়ভাবে গমনাগমনের জন্য অভিযোজনের দ্বারা হয় বলেও বিবেচনা করা যেতে পারে 

কীটপতঙ্গদের ক্ষেত্রে এরূপ অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে; এভাবে লিনিয়াস বহিরাকৃতির দ্বারা প্রতারিত হয়ে একটি হোমোপটেরাস পতঙ্গকে মথ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এমনকি আমাদের গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের ক্ষেত্রে একই ধরনের কিছু ঘটনা আমরা দেখি, যেমন চাইনিজ এবং সাধারণ শূকরের এর উন্নত জাতগুলোর একইরূপ শারীরিক আকারের ক্ষেত্রে এইরূপ হয়, যারা আবার ভিন্ন প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে; এবং সাধারণ ও বিশেষভাবে ভিন্ন সুইডিশ শালগমের মোটা কাণ্ডের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দ্বারা বর্ণিত প্রাণীদের মধ্যে সাদৃশ্যের তুলনায় গ্রেহাউন্ড এবং ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মধ্যে সাদৃশ্যগুলো কদাচিৎ আরও অবাস্তব হয়। 

শ্রেণীবিভাগের জন্য বৈশিষ্ট্যদের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা আছে এই মতবাদ অনুসারে, যতক্ষণ এটি বংশধারা প্রকাশ করে, আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি কেন সমবৃত্তিমূলক অথবা অভিযোজিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো, জীবের কল্যাণের জন্য অতিশয় প্রয়োজনীয় হলেও, সিস্টেম্যাটিস্টদের নিকট প্রায় মূল্যহীন হয়। কারণ দুটি পৃথক বংশধারার অন্তর্গত প্রাণীরা সদৃশ পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে থাকতে পারে, এবং এভাবে বহিরাকৃতিতে সদৃশ হয়েছে, কিন্তু এরূপ সদৃশতাগুলো এদের রক্তসম্পর্ক প্রকাশ করবে না বরং গোপন রাখতে প্রবণ হবে। এভাবেও আমরা আপাত ধাঁধাটি বুঝতে পারি যে এই একই বৈশিষ্ট্যগুলো সমবৃত্তিমূলক হয় যখন একটি গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনা করা হয়, কিন্তু এগুলো প্রকৃত সম্বন্ধ প্রকাশ করে যখন একই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে তুলনা করা হয়; এরূপে, শরীরের আয়তন ও পাখনার মতো অঙ্গসমূহ শুধু সমবৃত্তিমূলক হয় যখন মাছেদের সঙ্গে তিমিদের তুলনা করা হয়, উভয় শ্রেণীতেই অভিযোজনটি হচ্ছে জলে সাঁতার কাটার জন্য; কিন্তু তিমি গোত্রের কিছু সদস্যের মধ্যে শরীরের আয়তন ও পাখনার মতো অঙ্গগুলো প্রকৃত সম্বন্ধ প্রদর্শনকারী বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদান করে; কারণ সমগ্র গোত্রে এই অঙ্গগুলো এত সদৃশ হয় যে, আমরা সন্দেহ করতে পারি না যে এরা একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সেরূপ মাছেদের ক্ষেত্রেও হয়। 

সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবদের একই প্রকার কার্যের জন্য অভিযোজিত হওয়া একক অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গদের মধ্যে বিস্ময়কর সাদৃশ্যের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিক সিস্টেমে ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন প্রাণীরা, যেমন কুকুর এবং টাশমেনীয় নেকড়ের অথবা থাইলেসিনাস-এর চোয়ালের নিবিড় সাদৃশ্যের ভাল উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু এই সাদৃশ্যটি সাধারণ আকৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকে, যেমন ছেদন-দাঁতের অভিক্ষিপ্ততায় এবং পেষক-দাঁতের কর্তনের আকারে, কারণ দাঁতগুলো প্রকৃতই অতিশয় ভিন্ন হয় : এরূপে কুকুরদের ওপরের চোয়ালের প্রত্যেক ধারে চারটি পুরঃপেষক-দাঁত এবং কেবল দুটি পেষক-দাঁত থাকে; অন্যদিকে থাইলেসিয়ানদের তিনটি পুরঃপেষক-দাঁত এবং চারটি পেষক-দাঁত থাকে। দুটি প্রাণীর পেষক-দাঁতগুলো আপেক্ষিক আকারে ও গঠনে অতিশয় ভিন্ন হয়। বয়স্ক দাঁত ওঠার আগে ব্যাপকভাবে ভিন্ন দুধদাঁত ওঠে। যে-কেউ নিশ্চয় অস্বীকার করতে পারেন যে উভয় ক্ষেত্রেই দাঁতগুলো মাংস কর্তন করার জন্য পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অভিযোজিত হয়েছে; কিন্তু এটি যদি একটি ক্ষেত্রে স্বীকার করা হয়, তাহলে অন্য ক্ষেত্রে কেন এটি অস্বীকার করা হবে তা আমার বুদ্ধির অগম্য। আমি দেখে সন্তুষ্ট হয়েছি যে অধ্যাপক ফ্লাওয়ার-এর মতো অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞও এই একই সিদ্ধান্তে এসেছেন। 

ইলেকট্রিক অঙ্গ সম্বলিত ব্যাপকভাবে ভিন্ন মাছেদের—আলোকদায়ী অঙ্গ সম্বলিত ব্যাপকভাবে ভিন্ন কীটপতঙ্গদের—এবং আঠালো ডিস্ক-সহ পরাগস্তূপ সম্বলিত অর্কিড ও অ্যাসক্লেপিয়াড নামক উদ্ভিদদের—আগের একটি অধ্যায়ে প্রদত্ত সমবৃত্তিমূলক সাদৃশ্যের অসাধারণ ঘটনাসমূহ এই একই বিষয়ের অন্তর্গত। কিন্তু এইসব ঘটনা এত বিস্ময়কর যে এগুলি আমাদের তত্ত্বের পক্ষে প্রতিবন্ধক ও আপত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে, অঙ্গগুলির বৃদ্ধি ও বিকাশে এবং সাধারণত এদের পরিণত অবয়বে কিছু মৌলিক পার্থক্য আবিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু প্রাপ্ত পরিণাম একই হয়, যদিও ওপরে ওপরে বিশেষভাবে একই উপায়ে পদ্ধতিগুলি মূলত ভিন্ন হয়। সমবৃত্তিমূলক পরিবৃত্তি পদটিতে আগে আরোপিত পদ্ধতিটি এইসব ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ ভূমিকা পালন করেছে; অর্থাৎ, একই শ্রেণীর সদস্যরা, যদিও কেবল দূরসম্পর্কীয়, তাদের জৈব সংগঠনে এত সাধারণ কিছু বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়েছে যে তারা একইরকম রোমাঞ্চকর কারণের জন্য একইভাবে পরিবর্তিত হতে বাধ্য হয়; এবং একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এদের প্রত্যক্ষ বংশানুসৃতি ব্যতিরেকে, পরস্পরের সঙ্গে আশ্চর্যরূপে সদৃশ অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গদের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করতে এটি স্পষ্টতঃ সাহায্য করবে। 

যেহেতু প্রায়শই একইরূপ পরিবেশে, যথা জল, স্থল, বায়ুতে বসবাস করার জন্য স্বতন্ত্র শ্রেণীগুলোর অন্তর্ভুক্ত প্রজাতিরা পর্যায়ক্রমিক অল্প রূপান্তর দ্বারা প্রায়শই অভিযোজিত হয়েছে, তাই এর থেকে আমরা বোধহয় বুঝতে পারি স্বতন্ত্র শ্রেণীদের উপগোষ্ঠীগুলির মধ্যে কোন কোন সময় পরিলক্ষিত একটি সংখ্যাগত সমান্তরালতা কেমন করে হয়। এই প্রকৃতির সমান্তরালতায় মুগ্ধ হয়ে কয়েকটি শ্রেণীর গোষ্ঠীদের মূল্য বিধিবহির্ভূতভাবে উঠিয়ে এবং নামিয়ে (আমাদের সমস্ত অভিজ্ঞতা দেখায় যে এদের মূল্য তখন পর্যন্ত বিধিবহির্ভূত হয়) একজন প্রকৃতিবিদ সমান্তরালতাকে সহজে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে পারতেন; এবং এরূপে সম্পর্ক পঞ্চক, চতুর্থক এবং ত্রয়ীমূলক শ্রেণীবিভাগ সৃষ্টি হয়েছে। 

 অন্য অনেক বিচিত্র ধরনের ঘটনা আছে যেখানে ঘনিষ্ঠ বহিঃসাদৃশ্য জীবনের একইরূপ স্বভাবে অভ্যস্ত হওয়ার ওপর নির্ভর করে না, বরং আত্মরক্ষার্থে অর্জিত হয়েছে। আমি বিস্ময়কর পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করতে পারি, যার দ্বারা যেমন মিঃ বেস্ প্রথম বর্ণনা দিয়েছিলেন যে কোন কোন প্রজাপতিরা অন্য এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতিদের অনুকরণ করে। এই দক্ষ পর্যবেক্ষক দেখিয়েছেন যে দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন জেলায় ইথোমিয়া নামক প্রজাপতিরা চাকচিক্যময় ঝাঁকে বা পালে অবস্থান করে, লেপ্টালিস নামে অন্য একটি প্রজাপতিদের একই ঝাঁকে মিশে থাকতে দেখা যায়; শেষোক্তটি তাদের রঙের বর্ণবৈচিত্র্যে ও ডোরা দাগে এবং এমনকি ডানার আকৃতিতে ইথোমিয়ার সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ হয় যে মিঃ বে এগার বছর ধরে সংগ্রহের সময় দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণতর হওয়া সত্ত্বেও অনবরত প্রতারিত হয়েছিলেন। যখন অনুকরণকারী এবং অনুকৃত উভয়কেই ধরা হয়েছিল এবং তুলনা করা হয়েছিল, তখন এরা মূল দেহগঠনে অতিশয় ভিন্ন হয় বলে দেখা গেছে এবং এরা কেবল স্বতন্ত্র গণগুলোর অন্তর্ভুক্ত তাই নয় বরং স্বতন্ত্র গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। একটি বা দুটি উদাহরণে যদি এই অনুকরণ সংঘটিত হত, তাহলে অদ্ভুত সমাপতন হিসাবে এটিকে নিশ্চয় উপেক্ষা করা যেত। কিন্তু যদি আমরা একটি জেলা থেকে অগ্রসর হই যেখানে একটি লেপ্টালিস প্রজাপতি একটি ইথোমিয়া প্রজাপতিকে অনুকরণ করে, তাহলে একই দুটি গণের অন্তর্গত অন্য অনুকরণকারী এবং অনুকৃত প্রজাতি পাওয়া যেতে পারে যাদের সদৃশতা আরও গভীর হয়। সবশুদ্ধ কমপক্ষে দশটি গণ তালিকাভুক্ত হয়েছে যাদের প্রজাতিরা অন্য প্রজাতিদের অনুকরণ করে। অনুকরণকারী ও অনুকৃতরা সর্বদা একই অঞ্চলে বসবাস করে; আমরা এমন কোন উদাহরণ দেখি না যেখানে একটি অনুকরণকারী একটি অনুকৃত থেকে বহু দূরে বসবাস করে। অনুকরণকারীরা প্রায়শই বিরল পতঙ্গ হয়, অনুকৃতরা প্রত্যেক ক্ষেত্রে সংখ্যায় প্রচুর হয়। একই জেলায় যেখানে লেপ্টালিসের (এক ধরনের প্রজাপতি) একটি প্রজাতি একটি ইথোমিয়াকে (আর এক ধরনের প্রজাপতি) বিপুলভাবে অনুকরণ করে, সেখানে কোন কোন সময় অন্য লেপিডপটেরা পতঙ্গরা থাকে, যারা একই ইথোমিয়াকে অনুকরণ করে : এরূপে, একই জায়গায়, তিনটি গণের প্রজাপতিদের এবং এমনকি একটি মথও দেখা যায়, যারা সকলে একটি চতুর্থ গণের অন্তর্গত প্রজাপতিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ হয়। এটি বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় যে লেপ্টালিস-এর অনুকরণকারী আকার এবং অনুকৃত আকারদের অনেককেই ক্রমিক ধাপ দ্বারা দেখানো যেতে পারে যে এরা একই প্রজাতির ভ্যারাইটি, অন্যদিকে অন্য আকাররা সন্দেহাতীতভাবে ভিন্ন প্রজাতির হয়। কিন্তু প্রশ্ন করা যেতে পারে কেন কোন কোন আকারদের অনুকরণকারী এবং অন্যদের অনুকৃত বলা হয়েছে? মিঃ বেট্স্ এটি দেখিয়ে এই প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দিয়েছেন যে অনুকৃত আকাররা যাদের অন্তর্ভুক্ত হয় এমন গোষ্ঠীটির স্বাভাবিক অবয়ব বজায় রাখে, অন্যদিকে অনুকরণকারীরা তাদের অবয়ব বদল করে এবং এদের নিকটতম আত্মীয়দের সদৃশ হয় না। 

এরপর আমাদের আরও অনুসন্ধান করতে হয় কি কি কারণে কোন কোন প্রজাপতি এবং মথরা প্রায়শই অন্য এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন আকারের সজ্জা ধারণ করে। প্রকৃতিবিদরা এতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হন যে কেন প্রকৃতি কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে? মিঃ বেট্স্ এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সংখ্যায় প্রচুর অনুকৃত আকাররা নিশ্চয় সর্বদা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়, অন্যথায় এরা এইরূপ ঝাঁকে অবস্থান করতে পারত না; এবং অনেক উদাহরণ সংগ্রহ করা হয়েছে যা দেখায় যে পাখিরা এদের পছন্দ করে না এবং পতঙ্গভুক অন্য প্রাণীরাও পছন্দ করে না। বিপরীতক্রমে, একই জেলায় বসবাসকারী অনুকরণকারী আকাররা তুলনামূলকভাবে বিরল হয় এবং বিরল গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়; সুতরাং এরা নিশ্চয় স্বাভাবিকভাবে কিছু অসুবিধা ভোগ করবে, কারণ অন্যথায় সমস্ত প্রজাপতির পাড়া ডিমের জন্য, এরা তিন অথবা চার বংশের মধ্যে সমগ্র দেশ পূর্ণ করে দেবে। এখন যদি এইসব নির্যাতিত এবং বিরল গোষ্ঠীদের একটি সদস্য একটি সুরক্ষিত প্রজাতির মত সজ্জা ধারণ করত যাতে এটি একজন পতঙ্গবিদের তীক্ষ্ণ চোখকে প্রতারিত করতে পারে, তাহলে এরা প্রায়শই শিকারী পাখি ও পতঙ্গদের প্রতারণা করবে এবং এরূপে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। মিঃ বেট্স্ প্রক্রিয়াটিকে প্রকৃতই লক্ষ্য করেছিলেন বলা যেতে পারে, যার সাহায্যে অনুকরণকারীরা এত সহজেই অনুকৃতদের সদৃশ হয়; কারণ তিনি দেখেছিলেন যে লেপ্টালিস—এর আকারদের কয়েকটি চূড়ান্ত মাত্রায় পরিবর্তিত হয়েছিল, যারা অসংখ্য অন্য প্রজাপতিদের অনুকরণ করে। একটি জেলায় কয়েকটি ভ্যারাইটি অবস্থান করেছিল এবং এদের মধ্যে কেবল একটি একই জেলায় সাধারণ ইথোমিয়ার সঙ্গে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয়েছিল। অন্য একটি জেলায় দুটি অথবা তিনটি ভ্যারাইটি ছিল, এদের মধ্যে একটি অতিশয় সাধারণ ছিল এবং এটি ইথোমিয়ার অন্য একটি আকারকে ভীষণভাবে অনুকরণ করত। এইসব তথ্য থেকে মিঃ বে সিদ্ধান্ত করেন যে লেপ্টালিস প্রজাতি প্রথমে পরিবর্তিত হয়; এবং যখন একটি ভ্যারাইটি একই জেলায় বসবাসকারী সাধারণ যে-কোন একটি প্রজাপতির সঙ্গে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয়, তখন একটি প্রচুর পরিমাণে জন্মানো এবং কম নির্যাতিত আকারের সঙ্গে এর সদৃশতার জন্য এই ভ্যারাইটির শিকারী পাখি ও পতঙ্গদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ভাল সম্ভাবনা থাকে এবং ফলস্বরূপ এরা সংরক্ষিত হয়—”বংশানুক্রমিকভাবে কম মাত্রায় সদৃশতাসমূহ অপসারিত হয়েছে এবং কেবল অন্যরা বংশবৃদ্ধি করেছে।” অতএব এখানে আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচনের সুন্দর উদাহরণ দেখি। 

মালয় দ্বীপপুঞ্জের লেপিডপটেরা এবং অন্য কতিপয় পতঙ্গদের অনুকরণের সমতুল আশ্চর্যজনক ঘটনার বিবরণ মিঃ ওয়ালেস এবং ট্রিমেন দিয়েছেন। মিঃ ওয়ালেস পাখিদের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু বৃহত্তর চতুষ্পদদের সম্বন্ধে একটিও উদাহরণ আমাদের কাছে নেই। অন্য প্রাণীদের তুলনায় পতঙ্গদের ক্ষেত্রে বেশী পরিমাণ অনুকরণ ঘটে এদের ছোট আকারের জন্য; পতঙ্গরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, শুধু তারাই পারে যাদের হুল আছে, এবং আমি এই ধরনের একটিও উদাহরণ কখনও শুনিনি, যারা অন্যকে অনুকরণ করে, যদিও এরা অনুকৃত হয়; এদের শিকার করে এমন বৃহত্তর প্রাণীদের হাত থেকে উড্ডয়নের সাহায্যে কীটপতঙ্গরা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে না; আলংকারিক অর্থে বললে, অতিশয় দুর্বল জীবদের মতো, এরা কৌশল এবং অনুকরণের পথ গ্রহণ করে। 

এটি লক্ষ্য করা উচিত যে রঙের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ভিন্ন আকারদের মধ্যে অনুকরণ প্রক্রিয়াটি সম্ভবত কখনও ঘটে না। কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে ইতিমধ্যে কিছুমাত্রায় সদৃশ প্রজাতিদের ক্ষেত্রে, ঘনিষ্ঠ সদৃশতাটি উপকারী হলে উক্ত প্রক্রিয়ার দ্বারা সহজেই অর্জিত হতে পারে; এবং যদি অনুকৃত আকাররা যে-কোন মাধ্যম মারফৎ পরবর্তী সময়ে এবং ক্রমশ রূপান্তরিত হয়, তাহলে অনুকরণকারী আকারটি একই পথের পথিক হবে এবং এরূপ যে—কোন পরিমাণ পর্যন্ত পরিবর্তিত হবে, যাতে এটি এর অন্তর্গত গোত্রটির অন্য সদস্যদের মতো নয় এমন আকৃতি অথবা রং ধারণ করতে পারে। তবে এ বিষয়ে কিছু বাধা রয়েছে; কারণ কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি মনে করার প্রয়োজন আছে যে কতিপয় ভিন্ন গোষ্ঠীর অন্তর্গত আদিম সদস্যরা বর্তমান অবস্থান থেকে অপসৃত হওয়ার আগে আত্মরক্ষার জন্য যথেষ্ট মাত্রায় অন্য একটি এবং সংরক্ষিত গোষ্ঠীর একটি সদস্যের সঙ্গে আকস্মিকভাবে সদৃশ হয়েছিল; এটি পরবর্তী সময়ে নিখুঁত সদৃশতা অর্জনের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে। 

জীবদের সংযুক্তকারী সম্বন্ধের প্রকৃতি—যেহেতু বৃহত্তর গণগুলোর অন্তর্গত প্রভাবশালী প্রজাতিদের রূপান্তরিত বংশধররা তুলনামূলক সুবিধাগুলোকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হতে প্রবণ হয়, যে সুবিধাগুলো এদের অন্তর্গত গোষ্ঠীগুলিকে বিরাট এবং এদের পিতামাতাদের প্রভাবশালী করেছিল, সেহেতু এরা অর্থাৎ বংশধররা প্রায় নিশ্চিতরূপে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয় এবং প্রকৃতিমণ্ডলের আরও বেশী বেশী অঞ্চল দখল করে। প্রত্যেক শ্রেণীর মধ্যে বৃহত্তর এবং আরও প্রভাবশালী গোষ্ঠীরা এরূপে আয়তনে বৃদ্ধি পেতে প্রবণ হয় এবং পরবর্তী সময়ে এরা অনেক ছোট এবং দুর্বলতর গোষ্ঠীকে স্থানচ্যুত করে। এরূপে আমরা ঘটনাটির কারণ নির্ধারণ করতে পারি যে সাম্প্রতিক ও বিলুপ্ত সমস্ত জীব কতিপয় বিরাট অর্ডারের অধীনে এবং আরও ছোট শ্রেণীর অধীনে অন্তর্ভুক্ত হয়। উচ্চতর গোষ্ঠীদের সংখ্যায় এত অল্প হওয়া এবং সমগ্র পৃথিবীতে এত ব্যাপকভাবে এদের বিস্তৃত হওয়ার ঘটনাটি বিস্ময়কর হয়ে ওঠে এই পরিপ্রেক্ষিতে যে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার কোন নূতন শ্রেণীর অন্তর্গত একটি পতঙ্গ কেও যুক্ত করেনি; এবং ডঃ হুকারের কাছে থেকে আমি শুনেছি যে উদ্ভিদরাজ্যে এটি ছোট আকারের দুটি অথবা তিনটি গোত্র যোগ করেছে। 

ভূতাত্ত্বিক পর্যায়ক্রম নামক অধ্যায়ে আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি যে প্রত্যেক গোষ্ঠী রূপান্তরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সময় বৈশিষ্ট্যে অধিকতর অপসৃত হয়েছে, কেমন করে এটি হয় যে আরও প্রাচীন জীবন-আকাররা বর্তমান গোষ্ঠীদের মধ্যে কিছুমাত্রায় মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায়শই উপস্থিত করে। প্রাচীন ও মধ্যবর্তী আকারদের অল্প কয়েকটি বর্তমান কাল পর্যন্ত অল্প রূপান্তরিত বংশধরদের বংশগতভাবে প্রেরণ করেছে বলে এগুলো সুপরিচিত সংযোজক অথবা ভ্রষ্ট প্রজাতি সৃষ্টি করে। একটি আকার যত বেশী ভ্রষ্ট হয়, সংযোজক আকারদের সংখ্যা নিশ্চয় ততই বিপুল হবে, পরের আকাররা ধ্বংস এবং সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়ে থাকবে। এবং বিচ্যুত বা ভ্রষ্ট গোষ্ঠীদের সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হওয়ার কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে, কারণ এরূপ প্রজাতিদের সংখ্যা অতিশয় অল্প হয়; এবং এরূপ প্রজাতিরা সাধারণতঃ পরস্পরের থেকে অতিশয় ভিন্ন হয়, যার অর্থ পুনরায় বিলুপ্তি। উদাহরণস্বরূপ, অর্নিথোরিনকাস ও লেপিডোসাইরেন নামক গণগুলো কম বিচ্যুত হয়ে থাকবে না যদি বর্তমানে শুধু একটি অথবা দুই অথবা তিনটি প্রজাতি দ্বারা প্রতিনিধিত্বের বদলে প্রত্যেকে এক ডজন প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করত। আমি মনে করি আমরা বিচ্যুত বা ভ্রষ্ট গোষ্ঠীদের এই আকার হিসেবে লক্ষ্য করে এই বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে পারি, যে আকারদের দক্ষ প্রতিযোগীরা পরাজিত করেছে এবং তার সঙ্গে অল্প সংখ্যক সদস্যরা অস্বাভাবিক অনুকূল পরিবেশে তখনও সংরক্ষিত হয়েছে। 

মিঃ ওয়াটারহাউস মন্তব্য করেছেন যে, যখন প্রাণীদের একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত একটি সদস্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্বন্ধ প্রদর্শন করে, তখন এই সম্বন্ধটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ হয় এবং বিশেষ হয় না; এরূপে, মিঃ ওয়াটারহাউসের মতানুসারে, সমস্ত রোডেন্টদের মধ্যে বিজকাছা-রা মাসুপিয়ালদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশী সম্পর্কিত হয়; কিন্তু যে বিষয়ে এটি এই অর্ডারটির কাছাকাছি হয়, এর সম্পর্কগুলো সাধারণ হয়, অর্থাৎ অন্যের তুলনায় যে-কোন একটি মাসুপিয়াল প্রজাতির বেশী নয়। যেহেতু সম্বন্ধের এইসব বিষয় প্রকৃত বলে এবং শুধুমাত্র অভিযোজিত নয় বলে বিশ্বাস করা হয়, সেহেতু একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বংশানুসৃতি সম্বন্ধে আমাদের মতানুসারে এরা নিশ্চয় সেরকম হবে। অতএব আমরা নিশ্চয় মনে করব যে হয় বিজকাছা-সহ সমস্ত রোডেন্টরা কোন প্রাচীন মার্সুপিয়াল থেকে শাখায় বিভক্ত হয়েছিল, যা বর্তমান সমস্ত মাসুপিয়ালদের সম্পর্কে বৈশিষ্ট্যে কমবেশী স্বাভাবিকভাবে মধ্যবর্তী হয়ে থাকবে; অথবা রোডেন্ট এবং মাসুপিয়ালরা উভয়েই একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং উভয় গোষ্ঠী তখন থেকে ভিন্ন দিকে রূপান্তরিত হয়েছিল। উভয় মতানুসারে, আমরা নিশ্চয় মনে করব যে অন্য রোডেন্টদের তুলনায় বিজকাছা-রা তাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্যের বেশীরভাগই বংশানুসৃতির দ্বারা বজায় রেখেছে; এবং অতএব এটি বর্তমান মাসুপিয়ালদের যে-কোন একটর সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত হবে না, কিন্তু এদের সাধারণ পূর্বপুরুষের অথবা গোষ্ঠীটির কোন আদিম সদস্যের বৈশিষ্ট্যটি অংশত বজায় রেখে সমস্ত অথবা প্রায় সমস্ত মাসুপিয়ালদের সঙ্গে অপ্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত হবে। বিপরীতক্রমে, মিঃ ওয়াটারহাউসের মতানুযায়ী, সমস্ত মাসুপিয়ালদের মধ্যে ফ্যাসকোলোমিস শুধু একটি প্রজাতির সঙ্গে নয় বরং রোডেন্টদের সাধারণ অর্ডারটির সঙ্গে প্রায় সদৃশ হয়। তবে, এক্ষেত্রে গভীরভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে যে সদৃশতাটি শুধুমাত্র সমবৃত্তিমূলক হয়, কারণ ফ্যাসকোলোমিস-রা একটি রোডেন্ট-এর স্বভাবমতো স্বভাবে অভিযোজিত হয়েছে। বড় ডি ক্যান্ডোলে উদ্ভিদদের ভিন্ন গোত্রদের সম্বন্ধসমূহের সাধারণ প্রকৃতির ক্ষেত্রে প্রায় একইরকম ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। 

একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত প্রজাতিদের বৈশিষ্ট্যে ক্রমিক অপসরণশীলতা ও সংখ্যাবৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে কোন কোন সাধারণ বৈশিষ্ট্যের বংশানুসৃতির দ্বারা বজায় রাখা পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা অতিশয় জটিল এবং বিচ্ছুরিত সম্বন্ধসমূহকে বুঝতে পারি, যার দ্বারা একই গোত্রের অথবা উচ্চতর গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যরা একত্রে সংযুক্ত হয়েছে। বিলুপ্তির দ্বারা বর্তমানে ভিন্ন গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত একটি সমগ্র গোত্রের সাধারণ পূর্বপুরুষটি, বিভিন্ন মাত্রায় এবং উপায়ে রূপান্তরিত বৈশিষ্ট্যসমূহের কয়েকটিকে সমস্ত প্রজাতিদের মধ্যে বংশগতভাবে প্রেরণ করে থাকবে; এবং অনেক পূর্বপুরুষের মাধ্যমে পুঞ্জীভূত হয়ে সম্বন্ধগুলি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে চক্রাকার রেখার দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে সম্পর্কিত হবে (প্রায়শই উল্লিখিত চিত্রটিতে দেখা যেতে পারে)। যেহেতু যে-কোন প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত গোত্রের অসংখ্য জাতিত্বের মধ্যে রক্তসম্পর্কটি এমনকি একটি বংশতালিকার সাহায্যে দেখানো অতিশয় কষ্টকর হয় এবং এর সাহায্য ব্যতিরেকে প্রায় অসম্ভব হয়, আমরা প্রতিবন্ধকটি সম্পর্কে ধারণা করতে পারি, কোন চিত্রের সাহায্য ছাড়া, একই বিরাট প্রাকৃতিক শ্রেণীর অনেক বর্তমান ও বিলুপ্ত সদস্যদের মধ্যে লক্ষিত বিভিন্ন সম্বন্ধ বর্ণনা করতে প্রকৃতিবিদরা কি অপরিমেয় বাধার সম্মুখীন হন। 

আমরা চতুর্থ অধ্যায়ে দেখেছি, প্রত্যেক শ্রেণীর কতিপয় গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবধান ব্যাপক করতে এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে বিলুপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এভাবে আমরা সমগ্র শ্রেণীর পরস্পরের থেকে ভিন্নতার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারি, উদাহরণস্বরূপ অন্য সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের থেকে পাখিদের—এই বিশ্বাস দ্বারা যে অনেক প্রাচীন জীবন—আকার সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে পাখিদের আদিম পূর্বপুরুষরা অন্য এবং সেইসময় কম পৃথকীকৃত মেরুদণ্ডী শ্রেণীর আদিম পূর্বপুরুষদের সঙ্গে পূর্বে সংযুক্ত ছিল। সেইসব জীবন-অারদের কম বিলুপ্তি ঘটেছে, যারা ব্যাট্রাচিয়ানদের সঙ্গে মাছেদের একদা সংযুক্ত করেছিল। কোন কোন সমগ্র শ্রেণীর মধ্যে, যেমন বর্মী প্রাণীদের (ক্রাস্টেসিয়া) মধ্যে আরও কম বিলুপ্তি ঘটেছে, কারণ এখানে বিস্ময়কর বিচিত্র আকাররা একটি দীর্ঘ এবং শুধুমাত্র অংশত বিচ্ছিন্ন শৃংখল দ্বারা এখনও একত্রে সংযুক্ত রয়েছে। বিলুপ্তি কেবলমাত্র গোষ্ঠীদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে, এটি কোন মতেই এদের সৃষ্টি করেনি; কারণ এই পৃথিবীতে কখনও বসবাসকারী প্রত্যেক আকার যদি হঠাৎ পুনরাবির্ভূত হত, তাহলে তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার মতো সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অসম্ভব হলেও, একটি প্রাকৃতিক শ্রেণীবিভাগ, অথবা অন্তত একটি প্রাকৃতিক বিন্যাস সম্ভবপর হবে। চিত্রের দিকে তাকালে আমরা এটি দেখতে পাব—A থেকে L পর্যন্ত অক্ষরগুলো এগারটি সিলুরিয়ান গণকে সূচিত করতে পারে, যাদের মধ্যে কয়েকটি, প্রতি শাখায় ও উপশাখায় প্রত্যেক সংযোজক এখনও জীবন্ত-সহ রূপান্তরিত বংশধরদের বিরাট গোষ্ঠীদের সৃষ্টি করেছে এবং সংযোজকগুলো বর্তমান ভ্যারাইটিদের মধ্যে সংযোজকদের থেকে বেশী নয়। এ ক্ষেত্রে সংজ্ঞা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভবপর হবে, যার দ্বারা কতিপয় গোষ্ঠীর কয়েকটি সদস্যকে তাদের আরও মধ্যবর্তী পিতামাতা এবং বংশধরদের থেকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তথাপি চিত্রটির বিন্যাস এখনও খাটবে এবং প্রাকৃতিক হবে; কারণ বংশানুসুতির পদ্ধতি অনুযায়ী, উদাহরণস্বরূপ A থেকে উদ্ভূত সমস্ত আকারগুলোতে কিছু সাধারণ রয়ে থাকবে। একটি বৃক্ষে আমরা এই অথবা ঐ শাখাটিকে চিহ্নিত করতে পারি, যদিও প্রকৃত সন্ধিস্থলে দুটি যুক্ত হয় এবং একত্রে মিশ্রিত হয়। যেমন আমি বলেছি, আমরা কয়েকটি গোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারিনি, বড় অথবা ছোট হোক, প্রত্যেক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যদের অধিকাংশই ধারণকারী টাইপ অথবা আকারদের বেছে নিতে পারতাম এবং এভাবে এদের মধ্যে পার্থক্যের মূল্যের একটি সাধারণ ধারণা প্রদান করতে পারতাম। এটির দ্বারা আমরা তাড়িত হব, যদি আমরা একটি শ্রেণীর সমস্ত আকারদের সংগ্রহ করতে কৃতকার্য হতাম, যারা সমস্ত কালে ও দেশে বেঁচে ছিল। নিশ্চিতভাবে বলা যায় আমরা এত নিখুঁত একটি নমুনা সংগ্রহ করতে কখনও সমর্থ হব না, তা সত্ত্বেও, কোন কোন শ্রেণীতে আমরা এইদিকে অগ্রসর হচ্ছি; এবং মিলনে এডওয়ার্ড সম্প্রতি একটি চমৎকার প্রবন্ধে টাইপদের দিকে লক্ষ্য করা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন, যাতে করে এরূপ টাইপগুলো অন্তর্গত হয় এমন গোষ্ঠীদেরকে আমরা পৃথক করতে এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারি কি না তা বোঝা যেতে পারে। 

শেষত, আমরা দেখেছি যে প্রাকৃতিক নির্বাচন যা অস্তিত্বের সংগ্রাম থেকে উদ্ভূত হয় এবং যা যে-কোন একটি পিতামাতা প্রজাতি থেকে উদ্ভূত বংশধরদের বৈশিষ্ট্যের অপসারণশীলতা এবং বিলুপ্তি প্রায় অনিবার্যরূপে ঘটায়, তা সমস্ত জীবের সম্বন্ধগুলির বিরাট এবং সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে, যথা এদের গোষ্ঠীর অধীনে গোষ্ঠীর অধীনতা। আমরা একটি প্রজাতির মধ্যে উভয় লিঙ্গের এবং সমস্ত বয়সের এককদেরকে শ্রেণীভুক্ত করতে বংশ-উপাদান ব্যবহার করি, যদিও এদের অল্প কতিপয় বৈশিষ্ট্য সাধারণ হয়ে থাকতে পারে; আমরা স্বীকৃত ভ্যারাইটিদের শ্রেণীভুক্ত করতে বংশ ব্যবহার করি, এরা এদের পিতামাতা থেকে যতই পৃথক হোক না কেন; এবং আমি বিশ্বাস করি যে বংশের এই উপাদানটি হচ্ছে সংযুক্তির লুক্কায়িত বন্ড, যা প্রকৃতিবিদরা প্রাকৃতিক সিস্টেম পদটির মধ্যে সন্ধান করেছেন। গণ, গোত্র, অর্ডার ইত্যাদি পদগুলোর দ্বারা প্রকাশিত পার্থক্যের ধাপগুলো-সহ প্রাকৃতিক সিস্টেমে এর নিখুঁত ও বংশানুক্রমিক বিন্যাসের ধারণা অনুসারে, নিয়মগুলো আমরা বুঝতে পারি, যেগুলো আমাদের শ্রেণীবিভাগে অনুসৃত হতে বাধ্য হয়। আমরা বুঝতে পারি কেন অন্যদের তুলনায় কোন কোন সদৃশতাকে বেশী মূল্য দিই; কেন আমরা তুচ্ছ শারীরবৃত্তীয় গুরুত্বসম্পন্ন অন্যদের অথবা অঙ্কুর এবং অকেজো অঙ্গগুলোকে ব্যবহার করি; একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর সম্পর্ক বার করতে কেন আমরা সমবৃত্তি এবং অভিযোজনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলোকে তৎক্ষণাৎ বাতিল করি এবং তথাপি একই গোষ্ঠীর সীমার মধ্যে এইসব একই বৈশিষ্ট্যদের ব্যবহার করি। আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই কেমন করে এটি হয় যে সমস্ত জীবিত এবং বিলুপ্ত আকারদের কতিপয় বিরাট শ্রেণীর মধ্যে একত্রে গোষ্ঠীবদ্ধ করা যেতে পারে, এবং প্রত্যেক শ্রেণীর কয়েকটি সদস্য সম্বন্ধসমূহের সবচেয়ে জটিল বিচ্ছুরিত রশ্মিগুলো দ্বারা একত্রে সংযুক্ত হয়েছে। আমরা কখনও যে-কোন একটি শ্রেণীর সদস্যদের মধ্যে সম্বন্ধের জটিল জট খুলতে পারব না; কিন্তু যখন আমাদের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে এবং সৃষ্টির কোন অজ্ঞাত পরিকল্পনা আমরা গ্রাহ্য করি না, তখন আমরা নিশ্চিত হওয়ার আশা করতে পারি, তবে ধীর গতিতে। 

অধ্যাপক হেকেল তাঁর ‘জেনারেলে মরফোলজি’ এবং অন্যান্য গবেষণামূলক গ্রন্থে, যাকে তিনি ফাইলোজেনি বা সমস্ত জীবের বংশরেখা বলেছেন, এই প্রসঙ্গে তাঁর বিরাট জ্ঞান ও সামর্থ্যকে উজাড় করে দিয়েছেন। কতিপয় শ্রেণীকে চিহ্নিত করার জন্য তিনি ভ্রূণসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রধানত বিশ্বাস করেছেন, কিন্তু সমসংস্থ ও অঙ্কুর অঙ্গগুলোর এবং পর্যায়—ক্রমিক যুগগুলোর, যখন জীবনের বিভিন্ন আকার আমাদের ভূতাত্ত্বিক গঠনস্তরে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, সাহায্য গ্রহণ করেছেন। তিনি এভাবে দুঃসাহসিকভাবে প্রথমে শুরু করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে কেমন করে ভবিষ্যতের শ্রেণীবিভাগ করতে হবে। 

অঙ্গসংস্থান 

আমরা দেখেছি যে জীবনের স্বভাবসমূহ ছাড়াই একই শ্রেণীর সদস্যরা তাদের জৈবিক সংগঠনের সাধারণ পরিকাঠামোয় পরস্পরের সঙ্গে সদৃশ হয়। এই সাদৃশ্য ‘টাইপের অভিন্নতা’ পদটির দ্বারা প্রায়শই বোঝানো হয় অথবা এই কথা বলার দ্বারা যে শ্রেণীটির বিভিন্ন প্রজাতির কতিপয় অঙ্গ এবং প্রত্যঙ্গ সমসংস্থ হয়। সমগ্র বিষয়টি অঙ্গসংস্থানের সাধারণ পদটির অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি প্রাকৃতিক ইতিহাসের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বিভাগগুলোর একটি এবং বলা যেতে পারে যে এটি এর অপরিহার্য অংশ। আঁকড়ে ধরার জন্য মানুষের হাত, গর্ত খোঁড়ার জন্য ইঁদুরের পা, ঘোড়ার পা, শুশুক জাতীয় জলচর প্রাণীর (পরপয়েস) ডানার মত দাঁত, বাদুড়ের ডানা – সকলে একই প্যাটার্নে সৃষ্ট হওয়া উচিত এবং এদের একই আপেক্ষিক অবস্থানে একইরূপ হাড় থাকা উচিত, এগুলোর তুলনায় বেশী অদ্ভুত আর কি হতে পারে। কতকগুলি চিত্তাকর্ষক উদাহরণের সাহায্যে, এটি কত অদ্ভুত তা বোঝা যায়। সমতলভূমিকে আঁকড়ে ধরার জন্য সুন্দরভাবে অভিযোজিত ক্যাঙ্গারুর পিছনের পায়ের পাতা—গাছের ডাল আঁকড়ে ধরার জন্য সমভাবে সুন্দররূপে অভিযোজিত গাছে আরোহণকারী এবং পাতা ভক্ষণকারী কোয়ালাদের (এক ধরনের প্রাণী) পিছনের পায়ের পাতা—মাটিতে বসবাসকারী পতঙ্গ ভক্ষণকারী ধেড়ে ইঁদুরদের (ব্যান্ডিকোট) পিছনের পায়ের পাতা—অস্ট্রেলিয়ার অন্য কোন মাসুপিয়ালদের পিছনের পায়ের পাতা—সকলেরই একই অসাধারণ টাইপ অনুযায়ী গঠিত হওয়া উচিত, যথা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অঙ্কের হাড়গুলো অতিশয় নরম হয় এবং একই চামড়ার নিচে ঢাকা থাকে, যাতে দুটি নখ সমেত এদের একটি পদাঙ্গুলির মতো দেখতে হয়। প্যাটার্নটির এরূপ সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এটি স্পষ্ট যে এইসব প্রাণীদের পিছনের পায়ের পাতা সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকার ওপোসামদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও চমকপ্রদ, যারা সাধারণভাবে গঠিত পায়ের পাতা সম্বলিত অস্ট্রেলিয়ার আত্মীয়দের কয়েকটির জীবনের স্বভাব প্রায় অনুসরণ করে। অধ্যাপক ফ্লাওয়ার, যাঁর কাছ থেকে এসব বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে, উপসংহারে মন্তব্য করেন : “ঘটনাটির একটি ব্যাখ্যার কাছাকাছি যাওয়া ছাড়াই আমরা এই অনুরূপতাকে একটি টাইপ বলতে পারি”; এবং তারপর তিনি যোগ করেন, “কিন্তু একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বংশগতির প্রকৃত সম্পর্ক সম্পর্কে জোরের সঙ্গে ইঙ্গিত করা যায় না।” 

সমসংস্থ অঙ্গগুলির আপেক্ষিক অবস্থান অথবা সংযোগের ওপর জিওফ্রয় সেন্ট হিলারে অতিশয় গুরুত্ব আরোপ করেছেন; আকার ও আয়তনে যে-কোন সীমা পর্যন্ত এরা ভিন্ন হতে পারে এবং তা সত্ত্বেও একই অপরিবর্তনীয় অর্ডারে একত্রে সংযুক্ত হয়ে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাহুর ও পুরোবাহুর অথবা উরু ও পায়ের হাড়গুলো পরস্পর স্থান বিনিময় করে এমন আমরা কখনও দেখিনি। অতএব ব্যাপকভাবে ভিন্ন প্রাণীদের সমসংস্থ হাড়গুলোর একই নাম দেওয়া যেতে পারে। কীটপতঙ্গদের মুখের গঠনে একই নিয়ম আমরা দেখি: একটি স্ফিংক্স-মথের অতিশয় লম্বা পেঁচালো হুল, একটি ছারপোকা অথবা মৌমাছির অদ্ভুতভাবে ভাঁজ-করা হুল এবং একটি বিটল-এর বিরাট চোয়ালের তুলনায়-আরও ভিন্ন কি হতে পারে? তা সত্ত্বেও এত ব্যাপকভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত এইসব অঙ্গ একটি উপরের ঠোঁটের, চোয়ালের এবং ম্যাক্সিলার দুই জোড়ায় বহুসংখ্যক রূপান্তরের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। বর্মী প্রাণীদের মুখ ও অঙ্গগুলোর গঠনে একই নিয়ম কার্যকরী হয়। উদ্ভিদদের ফুলের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়। 

উপযোগিতার দ্বারা অথবা চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের তত্ত্বটি দ্বারা একই শ্রেণীর সদস্যদের প্যাটার্নের এই সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টার তুলনায় কোন কিছুই আরও নৈরাশ্যজনক হতে পারে না। অধ্যাপক ওয়েন তাঁর চমৎকার প্রবন্ধ “অঙ্গসমূহের প্রকৃতি”-তে প্রচেষ্টাটির নৈরাশ্য দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকার করেছেন। প্রত্যেক জীবের স্বাধীন সৃষ্টির সাধারণ ধারণা অনুযায়ী আমরা শুধু বলতে পারি যে এটি এরূপ হয় এবং একটি একইরকম পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেক বিরাট শ্রেণীর সব প্রাণী ও উদ্ভিদদের স্রষ্টা অনুগ্রহ করে সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয়। 

পর্যায়ক্রমিক অল্প রূপান্তরগুলোর নির্বাচনের তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যাখ্যাটি বহুলাংশে সরল হয়—–প্রত্যেক রূপান্তর কোন-না-কোন ভাবে রূপান্তরিত আকারের পক্ষে উপকারী হয়, কিন্তু জৈব সংগঠনের অন্য অঙ্গগুলোও পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা প্রায়শই প্রভাবিত হয়। এই প্রকৃতির এই পরিবর্তনগুলোতে মূল প্যাটার্ন পরিবর্তন করার জন্য অথবা অঙ্গদের স্থান পরিবর্তন করার জন্য অল্প প্রবণতা থাকবে অথবা কোন প্রবণতাই থাকবে না। একটি অঙ্গের হাড়গুলো পাখনার মতো ব্যবহারের জন্য একই সময়ে পুরু ঝিল্লিতে আবৃত হয়ে যে—কোন মাত্রায় হ্রাস পেতে পারে এবং চেপ্টা হতে পারে; অথবা একটি লিপ্ত হাত একটি ডানা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্যে এর সব হাড় অথবা কোন কোন হাড় এদের সংযোগকারী ঝিল্লিটির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে-কোন মাত্রা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে; তথাপি এইসব রূপান্তর হাড়গুলোর কাঠামো অথবা অঙ্গগুলোর আপেক্ষিক সংযোগ পরিবর্তন করার প্রবণতাযুক্ত হবে না। যদি আমরা কল্পনা করি যে সমস্ত স্তন্যপায়ী, পাখি এবং সরীসৃপদের একটি আদিম পুর্বপুরুষের—যাকে আর্কেটাইপ বলা যেতে পারে—অঙ্গসমূহ বর্তমানের সাধারণ প্যাটার্ন অনুযায়ী গঠিত হত, তা যে-কোন উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়ে থাকুক না কেন, তাহলে আমরা তৎক্ষণাৎ সমগ্র শ্রেণীর অঙ্গগুলির সমসংস্থ গঠনের সরল তাৎপর্য অনুভব করতে পারতাম। এরূপে কীটপতঙ্গদের মুখগুলোর ক্ষেত্রে, আমাদের শুধু কল্পনা করতে হয় যে এদের সাধারণ পূর্বপুরুষের একটি উপরের ঠোঁট, চোয়াল (ম্যান্ডিবল ) এবং দুই জোড়া ম্যাক্সিলিয়া ছিল, এসব অঙ্গ সম্ভবত আকারে অতিশয় সরল হয়; এবং তখন প্রাকৃতিক নির্বাচন কীটপতঙ্গদের মুখগুলোর গঠনে এবং কার্যে অসংখ্য বৈচিত্র্যের জন্যে দায়ী হবে। তা সত্ত্বেও, এটি কল্পনাসাধ্য যে একটি অঙ্গের সাধারণ প্যাটার্নটি হ্রাসপ্রাপ্তির দ্বারা এবং অবশেষে কোন অঙ্গের সম্পূর্ণ লুপ্ত হওয়ার দ্বারা, অন্য অঙ্গদের একীকরণ দ্বারা এবং অন্যদের দ্বিগুণন অথবা বহুগুণনের দ্বারা অবশেষে লুপ্ত হওয়ার জন্য অতিশয় অস্পষ্ট হয়ে থাকতে পারে—আমরা জানি পরিবর্তনগুলো সম্ভবপর সীমার মধ্যে হয়। বিলুপ্ত বিশাল সামুদ্রিক লিজার্ড-এর দাঁড়গুলোর এবং কোন কোন চোষক বর্মী প্রাণীর মুখগুলোর সাধারণ প্যাটার্ন সম্ভবত এরূপেই অংশত অস্পষ্ট হয়েছে। 

আমাদের বিষয়টির অন্য একটি সমভাবে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা রয়েছে, যেমন অনুক্রমিক সমসংস্থসমূহ অথবা একই এককের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গগুলোর তুলনা, এবং একই শ্রেণীর ভিন্ন সদস্যদের একই অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গগুলোর তুলনা নয়। অধিকাংশ শারীরবৃত্তবিদ বিশ্বাস করেন যে করোটির হাড়গুলো সমসংস্থ হয়—অর্থাৎ কশেরুকার যে-কোন সংখ্যার মৌলিক প্রত্যঙ্গগুলোর সঙ্গে সংখ্যায় এবং আপেক্ষিক সংযোগে অনুরূপ হয়। সমস্ত উচ্চতর মেরুদণ্ডী শ্রেণীর অগ্রবর্তী এবং পশ্চাদ্বর্তী অঙ্গগুলো সমসংস্থ হয়। বর্মী প্রাণীদের বিস্ময়করভাবে জটিল চোয়াল ও পাগুলোর ক্ষেত্রেও এরূপ হয়। প্রায় প্রত্যেকের কাছে এটি সুপরিচিত যে একটি ফুলে বৃত্যংশ, দল, পুংকেশর এবং স্ত্রীকেশরদের আপেক্ষিক অবস্থান এবং এদের আভ্যন্তরীণ গঠন এই মতবাদের সাহায্যে বোধগম্য হয় যে এরা সর্পিলভাবে বিন্যস্ত রূপান্তরিত পাতা দ্বারা তৈরী। বিকৃতাঙ্গ উদ্ভিদগুলোতে, প্রায়শই একটি অঙ্গের অন্য অঙ্গে রূপান্তরের সম্ভাবনার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য আমরা পেয়ে পেয়ে থাকি; এবং ফুলগুলোর ও বর্মী প্রাণীদের এবং অন্য অনেক প্রাণীদের বিকাশের প্রাথমিক অথবা ভ্রূণগত দশা চলাকালীন সময়ে আমরা স্পষ্টত দেখি যে অঙ্গগুলি প্রথমে প্রায় একইরূপ হয়, কিন্তু পূর্ণতাপ্রাপ্ত হওয়ার পর অতিশয় ভিন্ন হয়। 

সৃষ্টির সাধারণ মতানুযায়ী ক্রমিক সমসংস্থর ঘটনাসমূহ ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। বাহ্যত প্রতীয়মান কশেরুকাকে সূচিত করে কেন মস্তিষ্ক এরূপ অসংখ্য এবং অসাধারণ আকারের হাড়ের খণ্ড দ্বারা তৈরী একটি বাক্সে আবদ্ধ থাকবে। ওয়েনের বক্তব্য অনুযায়ী, স্তন্যপায়ীদের গর্ভবিমোচন ক্রিয়ায় ভিন্ন খণ্ডগুলোর উৎপাদন থেকে অর্জিত সুবিধার দ্বারা কোন মতেই পাখি ও সরীসৃপদের করোটির একই গঠন ব্যাখ্যা করা যাবে না। কেন একটি বাদুড়ের ডানা এবং পা সৃষ্টি করতে সদৃশ হাড়গুলো সৃষ্টি হয়ে থাকবে, যেগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যথা উড্ডয়ন ও চলন? অনেক প্রত্যঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট অতিশয় জটিল মুখ সমেত একটি বর্মী প্রাণীর ফলস্বরূপ সর্বদা অল্পসংখ্যক পা কেন থাকবে? অথবা বিপরীতক্রমে, অনেক পা সম্বলিত বর্মী প্রাণীদের কেন সরলতর মুখ থাকে? কেন প্ৰত্যেক ফুলে—যদিও পৃথক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অভিযোজিত-বৃত্যংশ, দল, পুংকেশর এবং স্ত্রীকেশরগুলো সকলে একই প্যাটার্নে সৃষ্ট হয়েছে? 

প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বানুযায়ী, এইসব প্রশ্নের উত্তর কিছু পরিমাণে আমরা দিতে পারি। এখানে আমাদের বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই যে কেমন করে কোন কোন প্রাণীর শরীর অসংখ্য খণ্ডে প্রথমে বিভক্ত হয়েছিল, অথবা কেমন করে এরা অনুরূপ অঙ্গদের সঙ্গে বাম এবং দক্ষিণ দিকে বিভক্ত হয়েছিল, কারণ এইসব প্রশ্ন পরীক্ষার অসাধ্য। তবে এটি সম্ভবপর যে কোন কোন ক্রমিক দেহগঠন হচ্ছে বিভাজন দ্বারা কোষগুলোর সংখ্যাবৃদ্ধির ফল, যার ফলে এইসব কোষ থেকে বিকশিত প্রত্যঙ্গদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। আমাদের উদ্দেশ্যের জন্য এটি মনে রাখা যথেষ্ট হবে যে একই অঙ্গ অথবা প্রত্যঙ্গের অনির্দিষ্ট পুনারাবৃত্তি হচ্ছে ওয়েনের বক্তব্য অনুযায়ী সমস্ত নিম্ন অথবা অল্প বিশিষ্ট আকারদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য; সুতরাং মেরুদণ্ডীদের অজ্ঞাত পূর্বপুরুষ অনেক কশেরুকার অধিকারী ছিল; আর্টিকুলাটার অজ্ঞাত পূর্বপুরুষ অসংখ্য খণ্ডের অধিকারী ছিল; এবং সপুষ্পক উদ্ভিদদের অজ্ঞাত পূর্বপুরুষ এক অথবা একাধিক সর্পিলে বিন্যস্ত অনেক পাতার অধিকারী ছিল। আমরা আগেই দেখেছি যে অসংখ্যবার পুনরাবৃত্ত প্রত্যঙ্গরা শুধু সংখ্যায় নয়, বরং আকারেও রূপান্তরিত হতে স্পষ্টতঃ বাধ্য হয়। ফলস্বরূপ, বেশ কিছু সংখ্যায় উপস্থিত এবং অতিশয় পরিবর্তনীয় এরূপ প্রত্যঙ্গ রা অতিশয় ভিন্ন উদ্দেশ্যে অভিযোজিত হওয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে উপাদানগুলো উৎপাদন করবে; তথাপি এরা বংশগতির শক্তির মাধ্যমে এদের আদিম অথবা মৌলিক সাদৃশ্যের সরল চিহ্নগুলো সাধারণভাবে বজায় রাখবে। এরা কিছু পরিমাণে এই সাদৃশ্য বজায় রাখবে, যেহেতু পরিবর্তনসমূহ প্রথম থেকে সদৃশ হওয়ার প্রবণতাযুক্ত হবে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এদের পরবর্তী রূপান্তরের জন্য ভিত্তি প্রদান করবে; প্রত্যঙ্গরা বৃদ্ধির প্রথম অবস্থায় এেকইরূপ হয় এবং প্রায় একই অবস্থায় অবস্থান করে থাকে। এরূপ প্রত্যঙ্গরা কমবেশী রূপান্তরিত হোক বা না হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের সাধারণ উৎপত্তি সম্পূর্ণরূপে থাকে, ততক্ষণ এগুলি অনুক্রমিকভাবে সমসংস্থ হবে। 

ভিন্ন প্রজাতির প্রত্যঙ্গদের সমসংস্থ বলে দেখানো গেলেও, কম্বোজ প্রাণীদের বিরাট শ্রেণীতে শুধু অল্প কয়েকটি ক্রমিক সমসংস্থ চিহ্নিত করা যেতে পারে, যেমন চিটনদের ভাল্ভগুলো; অর্থাৎ আমরা কদাচিৎ বলতে সমর্থ হই যে একই এককের একটি প্রত্যঙ্গ অন্য প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সমসংস্থ হয়, এবং আমরা এই বিষয়টি বুঝতে পারি; কারণ কম্বোজ প্রাণীদের মধ্যে, এমনকি শ্রেণীটির সর্বনিম্ন সদস্যটিতেও, আমরা যে-কোন একটি প্রত্যঙ্গের এত অনির্দিষ্ট পুনরাবৃত্তি দেখি না যেমন আমরা প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের অন্য বিরাট শ্রেণীগুলোতে দেখি। 

প্রথমে যেমন মনে হয় তার তুলনায় কিন্তু অঙ্গসংস্থান আরও বেশী জটিল, যেমন মিঃ ই. রে ল্যাঙ্কেস্টার একটি অসাধারণ গবেষণামূলক প্রবন্ধে সম্প্রতি সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন, যিনি কোন কোন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বর্ণনা করেছেন, যেগুলোকে প্রকৃতিবিদরা সমসংস্থ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন; উত্তরকালীন রূপান্তরের সঙ্গে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভবের জন্য পরস্পরের সঙ্গে সদৃশ হওয়া ভিন্ন প্রাণীদের গঠনগুলোকে তিনি সমসত্ত্ব বা সমরূপ (হোমোজিনিয়াস) বলার প্রস্তাব করেছেন এবং এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না এমন সাদৃশ্যকে আপাত সাদৃশ্য (হোমোপ্লাস্টিক) বলার প্রস্তাব করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বিশ্বাস করেন যে পাখি ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ডগুলো সামগ্রিকভাবে সমরূপ (হোমোজিনিয়াস)—অর্থাৎ একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে; কিন্তু দু ধরনের হৃৎপিণ্ডের চারটি গহ্বর সমসত্ত্ব বা সমরূপ (হোমোপ্লাস্টিক) হয়—অর্থাৎ স্বাধীনভাবে উদ্ভূত হয়েছে। মিঃ ল্যাঙ্কেস্টার শরীরের বাম ও দক্ষিণদিকের প্রত্যঙ্গদের এবং একই এককীয় প্রাণীর পর্যায়ক্রমিক খণ্ডগুলোতে গভীর সাদৃশ্য প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন; এবং অনেক প্রত্যঙ্গ রয়েছে যাদের সাধারণভাবে সমরূপ বলা হয়, একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভিন্ন প্রজাতিদের উদ্ভবের সঙ্গে যা কোন সম্পর্ক বহন করে না। সমসত্ত্ব (হোমোপ্লাস্টিক) গঠনগুলো সেইগুলোর সঙ্গে একই হয়, যেগুলোকে আমি অনুরূপ রূপান্তর অথবা সাদৃশ্য হিসেবে শ্রেণীবিভাগ করেছি, যদিও অতিশয় অসম্পূর্ণভাবে। এদের সৃষ্টি ভিন্ন জীবদের অথবা অনুরূপ উপায়ে রূপান্তরিত একই জীবের ভিন্ন প্রত্যঙ্গগুলোতে অংশত আরোপ করা যেতে পারে; এবং একই সাধারণ উদ্দেশ্য অথবা প্রক্রিয়ার জন্য সংরক্ষিত হয়েছে এমন সদৃশ রূপান্তরগুলোতে অংশত—যার অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। 

প্রকৃতিবিদরা বলে থাকেন যে করোটি রূপান্তরিত কশেরুকা থেকে উদ্ভূত হয়েছে কাঁকড়াদের চোয়াল রূপান্তরিত হয়েছে পা থেকে; ফুলের পুংকেশর ও স্ত্রীকেশর রূপান্তরিত পাতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক হাক্সলের বক্তব্য অনুযায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি বলা আরও সঠিক হবে যে করোটি এবং কশেরুকা, চোয়াল এবং পা ইত্যাদি বর্তমানে যেমন আছে সেগুলি একটি থেকে অন্যটিতে নয় বরং কোন সাধারণ এবং সরলতর উপাদান থেকে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ প্রকৃতিবিদ আলংকারিক অর্থেই এরূপ ভাষা ব্যবহার করেন; তাঁরা এই অর্থ করেন না যে উদ্ভবের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সময় যে-কোন প্রকারের আদিম অঙ্গগুলো—একটি ক্ষেত্রে কশেরুকা এবং অন্য ক্ষেত্রে পা, করোটি অথবা চোয়ালে প্রকৃতই রূপান্তরিত হয়েছে। তথাপি এদের আকৃতিগত রূপ এত স্পষ্ট যে প্রকৃতিবিদরা সরল তাৎপর্যমূলক ভাষা প্রয়োগ কদাচিৎ পরিহার করতে পারেন। এখানে উল্লিখিত মতবাদগুলো অনুসারে এরূপ ভাষা আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে; এবং উদাহরণস্বরূপ, অসংখ্য বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে এমন একটি কাঁকড়ার চোয়ালের চমৎকার ঘটনাটি অংশতঃ ব্যাখ্যা করা হয়েছে—যদি এরা প্রকৃত তথাপি অতিশয় সরল পা থেকে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এরা বংশগতির মাধ্যমে অসংখ্য বৈশিষ্ট্য সম্ভবত বজায় রাখবে। 

ক্রমবিকাশ ও ভ্রূণবিদ্যা। ইতিহাসের সমস্ত দিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে এটি একটি। কীটপতঙ্গদের রূপান্তরসমূহ, যার সম্বন্ধে প্রত্যেকেই অবহিত, কয়েকটি দশার দ্বারা সাধারণতঃ কার্যকরী হয়; কিন্তু রূপান্তরগুলো আসলে অসংখ্য এবং ক্রমিক হয়, যদিও অব্যক্ত থাকে। যেমন স্যার জে. লুবক দেখিয়েছেন কোন একটি একদিবসজীবী পতঙ্গ (ক্লোয়েন) তার বৃদ্ধির সময় কুড়িবারের অধিক পালক ত্যাগ করে এবং প্রত্যেকবার কিছু পরিমাণে পরিবর্তিত হয়; এবং এক্ষেত্রে আমরা দেখি যে রূপান্তর প্রক্রিয়াটি একটি প্রাথমিক এবং ক্রমিক উপায়ে সংঘটিত হয়েছে। অনেক পতঙ্গ এবং কোন কোন বর্মী প্রাণী আমাদের দেখায় যে বিকাশের সময় গঠনের কি চমৎকার পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে এরূপ পরিবর্তনগুলো নিম্নতর প্রাণীদের কয়েকটির তথাকথিত জনুঃক্রমের (alternate genera—tions) সময় সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, এটি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা যে একটি সূক্ষ্ম শাখান্বিত কোরাল (corallines), যার শরীর পালপি (polypi) দ্বারা গঠিত এবং যারা নিমজ্জিত পাথরে আটকে থাকে, প্রথমে কোরকোদ্‌গম দ্বারা এবং পরে অনুপস্থ (transverse) বিভাজনের দ্বারা একগুচ্ছ বিরাট ভাসন্ত জেলিমাছ উৎপাদন করবে এবং এরা ডিম উৎপাদন করবে যার থেকে সাঁতারু অ্যানিম্যালকিউলদের সৃষ্টি হবে, যারা নিজেরা নিমজ্জিত পাথরে আটকে থাকবে এবং শাখায় বিন্যস্ত প্রবালে বিকশিত হবে; এবং এরূপে সীমাহীন চক্রে ঘটনাটি ঘটে থাকবে। জনুঃক্রম পদ্ধতি এবং সাধারণ রূপান্তরের মধ্যে একান্ত প্রয়োজনীয় অভিন্নতার বিশ্বাসটি ওয়াগনারের আবিষ্কারের দ্বারা শক্তিশালী হয়েছে। তাঁর আবিষ্কারটি হচ্ছে যে সের্সিডোমিয়া নামক একটি মাছির লার্ভা অথবা শূক অযৌনভাবে অন্য লার্ভাদের সৃষ্টি করে এবং অন্য লার্ভারা, যারা অবশেষে পরিণত স্ত্রী ও পুরুষে বিকশিত হয়, ডিমগুলো দ্বারা সাধারণভাবে নিজেদের বংশবিস্তার করে। 

এটি লক্ষণীয় হতে পারে যে যখন ওয়াগনারের বিস্ময়কর আবিষ্কারটি প্রথম ঘোষিত হয়, তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে কেমন করে এটি বিচার করা সম্ভবপর যে এই মাছির শূককীট (লার্ভারা) অযৌন জননের ক্ষমতা অর্জন করেছে। যতদিন পর্যন্ত ঘটনাটি অদ্বিতীয় ছিল, কোন উত্তর দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যে গ্রিম দেখিয়েছেন যে চিরোনোমাস নামক অন্য একটি মাছি একইভাবে স্বতঃপ্রজনিত হয়, এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি এই অর্ডারটিতে প্রায়শই ঘটে। এটি চিরোনোমাসের পুত্তলি এবং লার্ভা নয়, যার এই ক্ষমতা আছে; এবং গ্রিম আরও দেখিয়েছেন যে এই ঘটনাটি কিছু পরিমাণে “কোক্কিডির অপুংজনির (পার্থেনোজেনেসিস) সঙ্গে সেসিডোমিয়ার অপুংজনিকে সংযুক্ত করে।” অপুংজনি শব্দটির অর্থ হল এই যে কোক্কিডির পরিণত স্ত্রীরা পুরুষদের সঙ্গে যৌনমিলন ছাড়াই উর্বর ডিম উৎপাদন করতে সমর্থ হয়। কয়েকটি শ্রেণীর অন্তর্গত কোন কোন প্রাণীদের অস্বাভাবিক প্রাথমিক বয়সে সাধারণ জননক্ষমতা থাকে বলে জানা গেছে; এবং ক্রমিক ধাপ দ্বারা প্রাথমিক এবং আরও প্রাথমিক বয়সে অপুংজনি উৎপাদন ত্বরান্বিত করার বিষয়টি শুধু আমরা জানি, চিরোনোমাস নামক মাছিটি প্রায় সঠিকভাবে মধ্যবর্তী একটি ধাপ আমাদের দেখায়, যেটি হচ্ছে পিউপা-এবং আমরা বোধহয় সেসিডোমিয়ার আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে পারি। 

ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে একই এককের বিভিন্ন অঙ্গ, যেগুলি প্রাথমিক ভ্রূণাবস্থায় যথাযথভাবে সদৃশ হয়, পরিণত বয়সে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় এবং ব্যাপকভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন করে। এভাবে আবার এটি প্রদর্শিত হয়েছে যে একই শ্রেণীর অন্তর্গত অতিশয় ভিন্ন প্রজাতিদের ভ্রূণগুলো সাধারণত নিবিড়ভাবে সদৃশ হয়, কিন্তু পূর্ণ বিকশিত হওয়ার পর বিপুলভাবে অসদৃশ হয়। পরের ঘটনাটির সবচেয়ে ভাল প্রমাণ হচ্ছে ভন বেয়ার-এর একটি মন্তব্য। মন্তব্যটি হচ্ছে, “স্তন্যপায়ী পাখি, লিজার্ড এবং সাপ, সম্ভবত চেলোনিয়াদের ভ্রূণগুলো এদের প্রাথমিক অবস্থায় সামগ্রিকভাবে এবং এদের প্রত্যঙ্গগুলোর বিকাশের পদ্ধতিতে পরস্পরের সঙ্গে প্রায় একইরকম হয়, যাতে করে আমরা শুধুমাত্র এদের আয়তন দ্বারা ভ্রূণগুলোকে পৃথক করতে পারি। আমার কাছে স্পিরিটে সংরক্ষিত দুটি ছোট ভ্রূণ আছে, যাদের নাম আমি লাগাতে ভুলে গেছি এবং বর্তমানে এরা কোন শ্রেণীর অন্তর্গত তা আমি বলতে অসমর্থ। এরা লিজার্ড অথবা ছোট পাখি কিংবা অতিশয় শিশু স্তন্যপায়ী হতে পারে, এইসব প্রাণীদের মাথা এবং ধড়ের গঠনপদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে একইপ্রকার হয়। তবে এইসব ভ্রূণে প্রান্তসীমাগুলি এখনও অনুপস্থিত। কিন্তু তথাপি যদি এরা এদের বিকাশের আদিমতম দশায় অবস্থিত থাকত তাহলে আমরা কিছু শিখতাম না, কারণ লিজার্ড ও স্তন্যপায়ীদের পায়ের পাতা, পাখির ডানা ও পা, মানুষের হাত ও পায়ের পাতার তুলনায় কম নয়, সকলে একই মৌলিক আকার থেকে উদ্ভূত হয়।” অধিকাংশ বর্মী প্রাণীদের লার্ভারা বিকাশের অনুরূপ দশায় পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সদৃশ হয়, পূর্ণবয়স্করা যতই ভিন্ন হোক; এবং আরও অনেক প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এটি এরূপ হয়। ভ্রূণসংক্রান্ত সদৃশতার নিয়মের চিহ্ন মাঝেমাঝে পূর্ণবয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয় : এরূপে একই গণের এবং সম্বন্ধীয় গণগুলোর পাখিরাও তাদের অপরিণত পালকসমূহের ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে প্রায়শই সদৃশ হয়, যেমন আমরা থ্রাস গোষ্ঠীর বাচ্চাদের বিন্দুখচিত পালকসমূহে দেখি। বিড়াল ট্রাইবে, পূর্ণবয়স্ক প্রায় সমস্ত প্রজাতির শরীরে ডোরা দাগ অথবা রৈখিক তিলক-চিহ্ন থাকে; সিংহ ও পুমার বাচ্চাদের ডোরা দাগ অথবা তিলক-চিহ্নগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে। উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি না-হলেও মাঝেমাঝে এটি দেখি; এরূপে ইউলেক্স অথবা ফার্জের এবং ফাইলোডযুক্ত অ্যাকাসিয়া গণের প্রথম পাতাগুলো লেগুমিনসি গোত্রের সাধারণ পাতাদের মত পক্ষল অথবা খণ্ডিত হয়। 

দেহগঠনের বিষয়ে এদের জীবন-পরিবেশের সঙ্গে কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই, যেখানে একই শ্রেণীর ব্যাপকভাবে ভিন্ন প্রাণীদের ভ্রূণগুলো পরস্পরের সদৃশ হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা মনে করতে পারি না যে মেরুদণ্ডীদের ভ্রূণগুলোতে ফুলকা শিটদের নিকটে ধমনীগুলোর লুপের মত অদ্ভুত কুণ্ডলীগুলো সদৃশ অবস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হয়—শাবক স্তন্যপায়ীর যা তার মাতার গর্ভে পুষ্ট হয়, পাখির ডিমে যা একটি পাখির বাসায় পালিত হয়, জলের নিচে একটি ব্যাঙের ডিমে। একজন মানুষের হাতে একরূপ হাড়, একটি বাদুড়ের ডানা এবং একটি পরপয়েসের (শুশুক জাতীয় প্রাণী) পাখনা যেভাবে একইরূপ জীবন—পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, সেই সংক্রান্ত আমাদের বিশ্বাসের তুলনায় এরূপ একটি সম্পর্কে বিশ্বাস করার আমাদের আর অন্য কোন কারণ থাকে না। কেউ কল্পনা করে না যে একটি সিংহশাব কর ডোরা দাগ অথবা বাচ্চা কৃষ্ণপাখির শরীরে তিলকচিহ্ন এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে কোনভাবে উপকারী হয়। 

তবে একটি প্রাণীর ভ্রূণগত জীবনের যে-কোন সময় সক্রিয় থাকার সময় ঘটনাটি ভিন্ন হয় এবং এর নিজের জন্য যথোচিত ব্যবস্থা নেয়। সক্রিয়তার সময়কাল জীবনের প্রথম দিকে অথবা শেষের দিকে আসতে পারে; কিন্তু যখন এটি আসে, তখন জীবন-পরিবেশে লার্ভার অভিযোজন পরিণত প্রাণীদের মত নিখুঁত ও সুন্দর হয়। কত গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে এটি কাজ করে তা সম্প্রতি স্যার জে. লুবক তাঁর বক্তব্যে সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে জীবন-স্বভাব অনুসারে অতিশয় ভিন্ন অর্ডারের অন্তর্গত কোন কোন পতঙ্গদের লার্ভার মধ্যে বিপুল সাদৃশ্য রয়েছে এবং একই অর্ডারের অন্তর্গত অন্য পতঙ্গদের অসাদৃশ্য রয়েছে। এরূপ অভিযোজনের জন্য সম্বন্ধযুক্ত প্রাণীদের লার্ভার সাদৃশ্য কোন কোন সময় অত্যন্ত অস্পষ্ট হয়; বিশেষভাবে যখন বিকাশের বিভিন্ন দশার সময় একটি শ্রমবিভাজন ঘটে থাকে, 

যেমন যখন একই লার্ভার একটি দশায় খাবারের সন্ধান করতে হয় এবং অন্য দশায় আটকানোর স্থান খুঁজতে হয়। সম্বন্ধযুক্ত প্রজাতি বা প্রজাতি-গোষ্ঠীর লার্ভাদের পরিণতদের তুলনায় পরস্পরের থেকে আরও ভিন্ন হওয়ার অনেক ঘটনা দেওয়া যেতে পারে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে, লার্ভারা সক্রিয় হলেও, তখনও কমবেশী নিবিড়ভাবে ভ্রূণগত সাধারণ সাদৃশ্য মেনে চলে। সিরিপেড প্রাণীরা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ উপস্থিত করে; এমনকি সুবিখ্যাত কুভিয়ের-ও উপলব্ধি করেননি যে বার্নাঞ্চলটি বর্মী প্রাণী ছিল : কিন্তু লার্ভার দিকে ক্ষণিক দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায় যে এটি অভ্রান্ত। এভাবে আবার সিরিপেড প্রাণীদের পদহীন বা অনড় ও পদসম্বলিত বা সচল দুটি প্রধান বিভাগের প্রাণীরা বাইরের আকৃতিতে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হলেও এদের লার্ভাদের সমস্ত দশায় পৃথক করা যায় না। 

বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রূণটি উন্নততর সংগঠনে উন্নীত হয়; আমি এই অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করি, যদিও আমি জানি যে সংগঠনটি উচ্চতর না নিম্নতর তার অর্থ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু কেউ হয়ত বিতর্ক করবেন না যে প্রজাপতি শুঁয়োপোকার থেকে উচ্চতর। তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে, পরিণত প্রাণীকে লার্ভার তুলনায় নিম্নতর হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, যেমন কোন কোন পরজীবী বর্মী প্রাণীদের ক্ষেত্রে করা হয়। আবার সিরিপেডদের বিষয় উল্লেখ করতে হয় : প্রথম দশায় লার্ভাদের তিনজোড়া চলনাঙ্গ, একটি সরল চোখ এবং একটি হুলাকৃতি মুখ থাকে, যার দ্বারা এরা বহুলাংশে খাদ্যগ্রহণ করে, কারণ আকারে এরা অতিশয় বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় দশায়, যাকে প্রজাপতির শুঁয়োপোকা দশা বলে, এদের চমৎকারভাবে তৈরী ছয়জোড়া সঞ্চরণশীল পা, বিস্ময়কর একজোড়া পুঞ্জাক্ষি এবং অতিশয় জটিল অ্যান্টেনা থাকে; কিন্তু এদের বন্ধ ও অসম্পূর্ণ মুখ থাকে এবং খেতে পারে না : এই দশায় এদের কার্যপ্রক্রিয়াটি হচ্ছে সুবিকশিত ইন্দ্রিয় দ্বারা একটি উপযুক্ত স্থান অনুসন্ধান করা এবং সাঁতার কাটার সক্রিয় ক্ষমতা দ্বারা ঐ স্থানে পৌঁছানো, যেখানে এরা আটকিয়ে যায় এবং তারপর সর্বশেষ রূপান্তর প্রক্রিয়া শেষ করে। এটি সম্পূর্ণ হলে, এদের জীবন স্থায়ী হয় : এদের পাগুলি তখন ধারক-অঙ্গে রূপান্তরিত হয়; আবার এরা সুগঠিত মুখপ্রাপ্ত হয়; কিন্তু এদের কোন অ্যান্টেনা থাকে না, এবং এদের দুটি চোখ তখন একটি ক্ষুদ্র, একক, সরল চক্ষুবিন্দুতে পুনরায় রূপান্তরিত হয়। এই সর্বশেষ ও সম্পূর্ণ দশায়, এদের লার্ভাবস্থার তুলনায় হয় আরও উচ্চতর অথবা আরও নিম্নতর সংগঠনের জীব হিসেবে সিরিপেডদের বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু কোন কোন গণে লার্ভারা সাধারণ অবয়ব সম্বলিত উভয়লিঙ্গে এবং যাকে আমি সম্পূরক পুরুষ বলি তাতে বিকশিত হয়, এবং পরেরটিতে বিকাশ নিশ্চয় পশ্চাদ্‌গামী হয়েছে, কারণ পুরুষটি হয় শুধুমাত্র একটি থলি যা অল্প সময় বাঁচে এবং যার জননাঙ্গ ছাড়া মুখ, পাকস্থলী এবং অন্য প্রধান অঙ্গগুলো থাকে 

ভ্রূণ ও পরিণতদের মধ্যে দেহগঠনের একটি পার্থক্য দেখতে আমরা এত অভ্যস্ত যে বৃদ্ধির কোন আনুষঙ্গিক উপায় হিসেবে এই পার্থক্যকে দেখতে আমরা প্রলুব্ধ হই। কিন্তু কোন কারণ নেই যে কেন, উদাহরণস্বরূপ একটি বাদুড়ের ডানা, একটি শুশুক প্রাণীর পাখনা যে মুহূর্তে যে-কোন অংশ দৃষ্ট হয়, উপযুক্ত অনুপাতে এদের সমস্ত প্রত্যঙ্গের সঙ্গে খুলে যায় না। প্রাণীদের কোন কোন সামগ্রিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এবং অন্য গোষ্ঠীর কোন কোন সদস্যদের ক্ষেত্রে এটাই ঘটনা এবং ভ্রূণ কোন পর্যায়ে পরিণতের থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় না : এরূপে ওয়েন কাটল মাছ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “এখানে কোন রূপান্তর নেই, শিরসম্বন্ধীয় বৈশিষ্ট্য ভ্রূণাঙ্গগুলো সম্পূর্ণ হওয়ার বহু পূর্বে পরিসৃষ্ট হয়।” উপযুক্ত আকার সমেত স্থলজ শম্বুক এবং স্বাদুজলের বর্মী প্রাণীদের জন্ম হয়, অথচ একই দুটি বিরাট শ্রেণীর সামুদ্রিক সদস্যরা এদের বিকাশের সময় প্রভূত এবং বিপুল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। মাকড়সারা কদাচিৎ রূপান্তরিত হয়। অধিকাংশ কীটপতঙ্গের লার্ভারা কীটের মত দশা অতিক্রম করে, এরা বিচিত্র জীবনস্বভাবে সক্রিয় এবং অভিযোজিত হোক আর না-ই হোক, অথবা উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য পাক বা না-ই পাক, অথবা এদের পিতামাতা দ্বারা খাওয়ালেও নিষ্ক্রিয় হোক বা না-ই হোক; কিন্তু অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে, যেমন অ্যাফিসদের ক্ষেত্রে হয়, অধ্যপক হাক্সলি দ্বারা অঙ্কিত এই পতঙ্গের বিকাশের চিত্রগুলোর দিকে তাকালে কীট—আকারের দশার কোন চিহ্ন প্রায়ই দেখি না আমরা। 

কোন কোন সময় প্রাথমিক বিকাশমান দশাগুলি যথেষ্ট হয় না। এই প্রসঙ্গে ফ্রিজ মুলার চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন যে চিংড়ির মত কোন কোন বর্মী প্রাণী (পেনোইয়াসদের স্বগোত্রীয়) প্রথমে সরল নউপ্লিয়াস আকারে আবির্ভূত হয়, এবং দুই অথবা ততোধিক জোয়িয়া দশা এবং তারপর মাইসিস দশা অতিক্রম করে শেষে পরিণত দেহগঠন প্রাপ্ত হয় : এখন সমগ্র বিরাট ম্যালাসট্রেকান অর্ডারে, যাতে এইসব বর্মী প্রাণীরা অন্তর্ভুক্ত, অন্য কোন সদস্য নউপ্লিয়াস আকারে প্রথম বিকশিত হয় বলে এখনও জানা যায়নি, যদিও অনেকে জোয়িয়া আকারে আবির্ভূত হয়; তা সত্ত্বেও মুলার এই বিশ্বাসের কারণ হিসেবে বলেছেন যে বিকাশের কোন অবস্থা যদি দমিত না হয়ে থাকে, তাহলে এইসব বর্মী প্রাণীরা নাওপিলি হিসেবে প্রথমে আবির্ভূত হয়ে থাকবে। 

এখন কেমন করে আমরা ভ্রূণবিদ্যার এইসব বিষয় ব্যাখ্যা করব—যথা ভ্রূণ এবং পরিণতর মধ্যে দেহগঠনে অতি সাধারণ অথচ সার্বজনীন নয় এমন পার্থক্য; একই একক ভ্রূণের বিভিন্ন অংশ, যা বৃদ্ধির প্রাথমিক বয়সে সদৃশ হয়ে অবশেষে অতিশয় অসদৃশ হয় এবং বিচিত্র উদ্দেশ্য সাধন করে; একই শ্রেণীর সবচেয়ে ভিন্ন প্রজাতির ভ্রূণ ও লার্ভাদের মধ্যে সাধারণ অথচ অপরিবর্তনীয় নয় এমন সাদৃশ্য; ডিম অথবা গর্ভের মধ্যে যখন থাকে, তখন ভ্রূণরা প্রায়শই তাদের গঠন বজায় রাখে, যেগুলো হয় জীবনের ঐ বয়সে অথবা পরবর্তী বয়সে এদের কোন উপকারে লাগে না; বিপরীতক্রমে, লার্ভারা, যাদের নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে হয়, চারপাশের পরিবেশে নিখুঁতভাবে অভিযোজিত হয়; শেষে যাতে এরা বিকশিত হয় এমন পরিণত প্রাণীর তুলনায় সংগঠনগত মাত্রায় কোন কোন লার্ভাদের উচ্চতর পর্যায়ে অবস্থানের বিষয়টি? আমি বিশ্বাস করি এখানে এইসব বিষয় ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। 

অতি প্রাথমিক বয়সে ভ্রূণের অঙ্গবিকৃতিগুলো লক্ষ্য করলে সাধারণভাবে মনে হয় যে অল্প পরিবর্তন অথবা এককীয় পার্থক্যগুলো অনিবার্যভাবে প্রাথমিক বয়সে আবির্ভূত হয়। এ বিষয়ে আমাদের সাক্ষ্যপ্রমাণ অল্প আছে, কিন্তু যেটুকু আছে তা নিশ্চয়ই পথের ইঙ্গিত দেয়; কারণ এটি সুবিদিত যে গোমহিষাদি, ঘোড়া এবং শখের বিভিন্ন প্রাণীদের প্রজননকারীরা জন্মের পর কিছুদিন পর্যন্ত তাদের শাবক প্রাণীদের দোষ অথবা গুণ কি হবে তা নিশ্চিতরূপে বলতে পারে না। আমাদের শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা এটি স্পষ্টভাবে দেখি; আমরা বলতে পারি না একটি শিশু লম্বা অথবা বেঁটে হবে কিনা অথবা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কি হবে। প্রশ্নটি এই নয় যে জীবনের কোন পর্যায়ে প্রত্যেক পরিবর্তন ঘটে থাকতে পারে, বরং প্রশ্নটি হল জীবনের কোন্ পর্যায়ে প্রভাবগুলো প্রদর্শিত হয়। জন্মদান প্রক্রিয়ার আগে একজন অথবা উভয় পিতামাতার ওপর কারণটি কার্যকরী হয়ে থাকতে পারে এবং আমি বিশ্বাস করি এটি প্রায়শই কার্যকরী হয়। এটি লক্ষ্য করার বিষয় যে একটি অতিশয় শিশু-প্রাণী যতদিন পর্যন্ত তার মাতার গর্ভে অথবা ডিমের মধ্যে থাকে অথবা যতদিন পর্যন্ত এটি তার পিতামাতার দ্বারা লালিতপালিত এবং রক্ষিত হয়, ততদিন ঐ শিশু-প্রাণীর ক্ষেত্রে এর কোন গুরুত্ব নেই যে এর অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যগুলো জীবনের পূর্ব অথবা পরের পর্যায়ে অর্জিত হয়েছে কিনা উদাহরণস্বরূপ, একটি পাখির ক্ষেত্রে এর কোন তাৎপর্য নেই, যারা অতিশয় বাঁকা চঞ্চুর দ্বারা খাবার খায়, যতদিন পর্যন্ত এদের পিতামাতারা এদের যাওয়ায় ততদিন পর্যন্ত শিশু পাখীদের এই আকারের চঞ্চু থাকুক অথবা না থাকুক 

প্রথম অধ্যায়ে আমি উল্লেখ করেছি যে একটি পরিবর্তন পিতামাতার যে বয়সে প্রথম আবির্ভূত হয়, সেটি বংশধরের অনুরূপ বয়সে পুনরাবির্ভূত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত হয়। কোন কোন পরিবর্তন শুধু অনুরূপ বয়সেই আবির্ভূত হতে পারে; যেমন, রেশম মথের শূয়াপোকার, রেশমগুটির অথবা প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গের, অথবা গোমহিষাদির পূর্ণ বিকশিত শিঙের বৈশিষ্ট্যসমূহ। কিন্তু আমাদের দেখা পরিবর্তনগুলো হয় প্রাথমিক অথবা পরবর্তী বয়সে প্রথম আবির্ভূত হয়ে থাকবে, এরূপে এর বংশধর ও পিতামাতার অনুরূপ বয়সে পুনরাবির্ভূত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত হবে। আমি এই অর্থ করতে চাই না যে এটি সবসময় অপরিহার্য। পরিবর্তনের কয়েকটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ আমি দিতে পারি, (বৃহৎ অর্থে ব্যবহার করে) যা পিতামাতার তুলনায় শিশুর মধ্যে গোড়ার বয়সে আবির্ভূত হয়েছে। 

এই দুটো পদ্ধতি, যথা অল্প পরিবৃত্তি সাধারণতঃ জীবনের অতিশয় প্রাথমিক বয়সে আবির্ভূত হয় না এবং অনুরূপ প্রাথমিক বয়সে বংশগতরূপে আবির্ভূত হয় না, আমার বিশ্বাস মতো ভ্রূণবিদ্যায় বিশেষভাবে উল্লিখিত সমস্ত প্রধান বিষয়ের ব্যাখ্যা করে। কিন্তু আমাদের গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের কতিপয় অনুরূপ ঘটনার দিকে আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। কুকুরদের সম্পর্কে লিখেছেন এমন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন যে অতিশয় ভিন্ন হলেও গ্রেহাউন্ড এবং বুলডগ হচ্ছে একই বন্য স্টক থেকে উদ্ভুত প্রকৃতই নিকট সম্বন্ধীয় ভ্যারাইটি; অতএব আমি জানতে উদ্‌গ্রীব ছিলাম এদের শাবকরা পরস্পরের থেকে কি পরিমাণ ভিন্ন হয়। প্রজননকারীরা আমাকে বলেছেন যে এরা এদের পিতামাতাদের মতো ততখানিই ভিন্ন হয়, এবং নিজের চোখে দেখেও এটাই যে প্রকৃত ঘটনা তা মনে হয়েছিল; কিন্তু পরিণত কুকুর এবং তাদের ছ’দিন বয়সী শাবকদের প্রকৃতই পরিমাপ করে আমি দেখেছিলাম যে শাবকরা পূর্ণ আনুপাতিক পার্থক্য অর্জন করেনি। এরপর আমাকে বলা হয়েছিল যে গৃহপালনাধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে সৃষ্ট দুটি জাত মালবাহী ও ঘোড়দৌড়ের ঘোড়াদের শাবকরা পরিণত প্রাণীদের মতই ভিন্ন হয়। কিন্তু গর্দভ শাবকদের এবং ঘোড়দীড় ও বিরাট মালবাহী ঘোড়াদের তিনদিন বয়সের শাবকদের যত্নসহকারে পরিমাপ করে আমি আবিষ্কার করি যে এটি মোটেই ঘটে না। 

যেহেতু আমাদের নিকট চূড়ান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে পায়রার জাতসমূহ একটি একক বন্য প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে, সেহেতু ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার বারো ঘণ্টার মধ্যে আমি এদের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য তুলনা করেছিলাম; এবং বন্য পিতামাতা প্রজাতির, পাউটার, লঞ্চা, রান্ট, গোলা, ড্রাগন, গিরাবাজ এবং লোটনদের ঠোঁটের অনুপাত, মুখের বিস্তার, নাসারন্ধ্রও চোখের পাতার দৈর্ঘ্য, পায়ের পাতার আকার-আয়তন এবং পায়ের দৈর্ঘ্য যত্নসহকারে পরিমান করেছিলাম আমি। এখন এইসব পাখিরা, যখন পরিণত বয়সের হয়, তখন ঠোঁটের দৈর্ঘ্যে ও আকারে এবং অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে এত অস্বাভাবিকভাবে ভিন্ন হয় যে প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া গেলে এদেরকে ভিন্ন গণ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হত। কিন্তু যখন এইসব জাতের অল্পদিনের শাবকদের একটি সারিতে রাখা হয়েছিল, যদিও অধিকাংশগুলিকেই পৃথক করা যেতে পারত, তখন পূর্ণবয়স্ক পাখিদের তুলনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোতে আনুপাতিক পার্থক্যসমূহ তুলনামূলকভাবে কম হয়েছিল। পার্থক্যের কয়েকটি বিশেষ বিষয়, যেমন মুখের বিস্তার, শিশুদের মধ্যে কদাচিৎ আবিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু এই নিয়মের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিল, কারণ হ্রস্বমুখওয়ালা লোটনদের শাবকটি বন্য পাহাড়ী পায়রার এবং অন্য জাতের শাবকদের থেকে পরিণত বয়সের মতো যথাযথভাবে প্রায় একই অনুপাতে ভিন্ন ছিল। 

এই বিষয়গুলো উপরের দুটি নিয়মের দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পশুপাখি-প্রেমিকরা -দের কুকুর, ঘোড়া, পায়রা ইত্যাদি প্রজননের জন্য তখনই নির্বাচন করে যখন এরা পূর্ণ—বয়স্ক হয়; যদি পরিণত প্রাণীরা এর অধিকারী হয়, তখন আকাঙ্ক্ষিত গুণগুলো জীবনের প্রাথমিক বয়সে অথবা পরবর্তী সময়ে আহৃত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তারা উদাসীন হয়। এইমাত্র প্রদত্ত বিষয়গুলো, আরও বিশেষভাবে পায়রাদের বিষয়গুলো দেখায় যে বৈশিষ্ট্যমূলক পার্থক্যসমূহ, যা মানুষের নির্বাচনের দ্বারা সঞ্চিত হয়েছে এবং যা এদের জাতেদের মূল্যবান করে তোলে, জীবনের অতি প্রাথমিক বয়সে সাধারণত আবির্ভূত হয় না এবং অনুরূপ প্রাথমিক বয়সে বংশগতভাবে প্রেরিত হয় না। কিন্তু হ্রস্বমুখওয়ালা লোটন পায়রার ঘটনাটি, যা তার বারো ঘণ্টা বয়সে উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকারী হয়েছিল, প্রমাণ করে যে এটি সার্বজনীন নিয়ম নয়; কারণ এখানে বৈশিষ্ট্যমূলক পার্থক্যগুলো নিশ্চয় হয় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রাথমিক বয়সে আবির্ভূত হবে, অথবা যদি এটি এরূপ না হয়, পার্থক্যগুলো নিশ্চয় অনুরূপ বয়সে অথবা পূর্ণতর বয়সে বংশগতভাবে প্রেরিত হবে। 

প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের ক্ষেত্রে এই দুটি নিয়ম এখন প্রয়োগ করা যাক। কোন আদিম আকার থেকে উদ্ভূত এবং ভিন্ন স্বভাবের জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা রূপান্তরিত পাখিদের একটি গোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যাক। কয়েকটি প্রজাতির ক্ষেত্রে অসংখ্য অল্প ক্রমিক রূপান্তর অতি প্রাথমিক বয়সে আবির্ভূত না হওয়ার জন্য এবং অনুরূপ বয়সে আনুবংশিকহওয়ার জন্য, তরুণটি অল্প রূপান্তরিত হয়ে থাকবে এবং বয়স্কদের তুলনায় তখনও পরস্পরের সঙ্গে এরা নিবিড়ভাবে সদৃশ হবে—যেমন আমরা পায়রার জাতগুলোর ক্ষেত্রে দেখেছি। আমরা এই অভিমত ব্যাপকভাবে ভিন্ন গঠনগুলির ক্ষেত্রে এবং সমগ্র শ্রেণীগুলোর ক্ষেত্রেও প্রসারিত করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অতি আদিম পূর্বপুরুষে একদা পা হিসেবে ব্যবহৃত হত এমন পুরোপদ দীর্ঘদিন ধরে রূপান্তরের মাধ্যমে একটি বংশধরে হাত হিসেবে, অন্য বংশধরে দাঁড় হিসেবে এবং অন্য একটিতে ডানা হিসেবে অভিযোজিত হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু উপরের দুটি নিয়ম অনুযায়ী পুরোপদগুলো এইসব আকারদের ভ্রূণগুলিতে অধিক রূপান্তরিত হবে না, যদিও প্রত্যেক আকারে পরিণত বয়সে বিপুলভাবে ভিন্ন হবে। যে-কোন প্রজাতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে অথবা অন্য অংশগুলিকে রূপান্তরিত করতে দীর্ঘসময় কার্যকরী ব্যবহার অথবা অব্যবহারের প্রভাব যাই হোক না কেন, এটি প্রধানত অথবা শুধুমাত্র একে প্রভাবিত করে থাকবে যখন এটি পরিণত বয়সের হয়, যখন বাঁচার জন্য নিজের সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে সে বাধ্য হয়; এবং এরূপে উৎপন্ন প্রভাবসমূহ প্রায় পরিণত অনুরূপ বয়সে বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়ে থাকবে। এরূপে তরুণটি রূপান্তরিত হবে না, অথবা অংশদের বর্ধিত ব্যবহার অথবা অব্যবহারের প্রভাবের মাধ্যমে অল্পমাত্রায় রূপান্তরিত হবে। 

কয়েকটি প্রাণীর ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনগুলো জীবনের অতি অল্প বয়সে আবির্ভূত হয়ে থাকতে পারে, অথবা এদের প্রথম আবির্ভূত হওয়া বয়সের তুলনায় আরও প্রাথমিক বয়সে ধাপগুলো বংশগতভাবে প্রেরিত হয়ে থাকতে পারে। এইসব ঘটনার যে-কোন একটির ক্ষেত্রে, তরুণ অথবা ভ্রূণটি পরিণত পিতামাতা আকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সদৃশ হবে, যেমন হ্রস্বমুখ সম্বলিত লোটন পায়রাদের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি। কাটল মাছ, স্থলচর শামুক, স্বাদুজলের খোলকী প্রাণী, মাকড়সা এবং পতঙ্গদের বিরাট শ্রেণীর কোন কোন সদস্যদের মতো কোন কোন সমগ্র গোষ্ঠীর অথবা শুধু কোন কোন উপ-গোষ্ঠীর বিকাশের এটাই ব নিয়ম। এইসব গোষ্ঠীর তরুণদের কোন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম না করার প্রধান কারণটি প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি যে এটি নিম্নোক্ত অনিশ্চিত সম্ভাবনাগুলো অনুসরণ করবে; যথা, নিজের প্রয়োজন অতি অল্প বয়সে তরুণটিকে নিজেকেই মেটাতে হয় এবং পিতামাতাদের মতো একই জীবনস্বভাব অনুসরণ করতে হয়; কারণ এক্ষেত্রে, এদের বাঁচার জন্য এটি অপরিহার্য যে এরা এদের পিতামাতাদের মতো একইভাবে রূপান্তরিত হবে। অ ার, অনেক স্থলজ এবং স্বাদুজলের প্রাণীরা কোনরূপ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় না, অথচ একই গোষ্ঠীর সামুদ্রিক সদস্যরা বিভিন্ন রূপান্তরক্রিয়া অতিক্রম করে, এই চমকপ্রদ ঘটনাটি প্রসঙ্গে ফ্রিজ মুলার বলেছেন যে সমুদ্রের তুলনায় একটি প্রাণীর স্থলে অথবা স্বাদুজলে মন্থরভাবে রূপান্তরিত হওয়া এবং অভিযোজিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি কোন লার্ভা দশা অতিক্রম না করার দ্বারা বিপুলভাবে সরলীকৃত হবে; কারণ এটি সম্ভবপর নয় যে এরূপ নূতন এবং বিপুলভাবে পরিবর্তিত জীবনস্বভাবের জন্য লার্ভা ও পরিণত দশা উভয়ের জন্য ভালভাবে উপযোগী স্থানগুলো অন্য জীব দ্বারা প্রাথমিক এবং আরও প্রাথমিক বয়সে পরিণত আকারের ক্রমিক অর্জন প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং পূর্ববর্তী রূপান্তর-প্রক্রিয়ার সমস্ত চিত্রগুলো অবশেষে লুপ্ত হবে। 

পক্ষান্তরে, পিতামাতা আকারের জীবনস্বভাব থেকে অল্প ভিন্ন জীবনস্বভাব অনুসরণ করা একটি প্রাণীর অল্পবয়স্ক বাচ্চার পক্ষে যদি লাভজনক হয়, এবং ফলস্বরূপ অল্প ভিন্ন প্ল্যানে যদি সৃষ্ট হয়, অথবা পিতামাতাদের থেকে ইতিমধ্যে ভিন্ন একটি লার্ভার আরও পরিবর্তিত হওয়া যদি লাভজনক হয়, তখন অনুরূপ বয়সগুলোতে বংশানুসৃতির নিয়মানুযায়ী, অল্পবয়স্ক অথবা লার্ভারা যে-কোন মাত্রায় তাদের পিতামাতার থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা আরও এবং আরও অধিক ভিন্ন হবে। লার্ভার পার্থক্যগুলো তার বিকাশের পর্যায়ক্রমিক দশাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হবে, অতএব প্রথম দশার লার্ভাটি দ্বিতীয় দশার লার্ভার থেকে অতিশয় ভিন্ন হবে, যেমন অনেক প্রাণীদের ক্ষেত্রে হয়। স্থান অথবা স্বভাব অনুযায়ী বয়স্করা অভিযোজিত হবে, যখন চলন অথবা ইন্দ্রিয়ের অঙ্গগুলি অকেজো হবে এবং এক্ষেত্রে রূপান্তর-প্রক্রিয়াটি প্রতীপগতিসম্পন্ন হবে। 

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি জীবনের পরিবর্তিত স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, অনুরূপ বয়সে বংশানুসৃতির সঙ্গে একত্রে, তরুণদের দেহগঠনের পরিবর্তনগুলোর দ্বারা কেমন করে প্রাণীরা তাদের পরিণত পূর্বপূরুষদের আদিম অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিকাশের ধাপসমূহ অতিক্রম করতে পারে। আমাদের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা এখন দৃঢ়প্রত্যয়শীল যে পতঙ্গদের লার্ভা ও পুত্তলির বিভিন্ন দশা অভিযোজনের মাধ্যমে এভাবে অর্জিত হয়েছে, এবং কোন প্রাচীন আকার থেকে বংশানুসৃতির মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। বিকাশের কতিপয় অস্বাভাবিক দশা অতিক্রম করে এমন একটি বিটল অর্থাৎ সিটারিসের বিচিত্র ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় কেমন করে এটি ঘটবে। ছয়টি পা, দুটি লম্বা শুঁড় এবং চারটি চোখ সম্বলিত একটি সক্রিয়, ক্ষুদ্র পতঙ্গ হিসেবে এম. ফরবেস প্রথম লার্ভা আকারটির বর্ণনা দিয়েছেন। মৌমাছিদের বাসায় ডিম থেকে এইসব লার্ভার জন্ম হয়। পুরুষ—মৌমাছিরা যখন বসন্তকালে তাদের গর্ত থেকে বের হয়, যা এরা এদের স্ত্রীদের আগে করে, তখন লার্ভারা তাদের ওপর লাফিয়ে ওঠে এবং পরে স্ত্রীদের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে ওঠে যখন স্ত্রীরা পুরুষদের সঙ্গে মিলিত হয়। যে মুহূর্তে কোষগুলিতে সঞ্চিত মধুর ওপর স্ত্রী-মৌমাছিরা ডিম পাড়ে, সেই মুহূর্তেই সিটারিসের লার্ভারা ডিমগুলোর ওপর লাফিয়ে ওঠে এবং এদের গিলে খায়। তারপর এরা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয় : এদের চোখগুলো লুপ্ত হয়, পা ও শুঁড়গুলো অঙ্কুরাবস্থায় পরিবর্তিত হয়; এবং এরা মধু খায়; অতএব এরা তখন পতঙ্গদের সাধারণ লার্ভার সঙ্গে অতিশয় সদৃশ হয়; পরিশেষে এরা আরও রূপান্তরিত হয় এবং সর্বশেষে একটি নিখুঁত বিটল-এ রূপান্তরিত হয়। এখন সিটারিসটির রূপান্তরের মতোই কোন রূপান্তরযোগ্য পতঙ্গ যদি পতঙ্গদের একটি সমগ্র নূতন শ্রেণীর পূর্বপুরুষ হত, তাহলে নূতন শ্রেণীটির বিকাশের ধারাটি আমাদের বর্তমান পতঙ্গদের বিকাশের ধারার থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হত; এবং প্রথম লার্ভা-দশাটি যে-কোন বয়স্ক ও প্রাচীন আকারের পূর্ববর্তী অবস্থাকে নিশ্চয় সূচিত করত না। 

পক্ষান্তরে এটি একান্তই সম্ভবপর যে অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে ভ্রূণগত অথবা লার্ভা—দশাগুলো বয়স্ক অবস্থায় সমগ্র গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষের অবস্থাকে কমবেশী সম্পূর্ণভাবে আমাদের দেখায়। বর্মী প্রাণীদের বিরাট শ্রেণীর পরস্পরের থেকে বিস্ময়করভাবে ভিন্ন আকাররা, যেমন চোষক পরজীবীরা, সিরিপেডরা, এন্টোমসট্রাকা, এবং এমনকি ম্যালাকসট্রাকারা নউপ্লিয়াস আকারে লার্ভা হিসেবে প্রথম আবির্ভূত হয়; এবং যেহেতু এইসব লার্ভারা সমুদ্রে বাস করে ও খাবার খায়, এবং জীবনের কোন বিশেষ স্বভাবে অভিযোজিত হয় না, এবং ফ্রিজ মুলার প্রদত্ত অন্যান্য কারণ অনুযায়ী, এটি সম্ভবপর যে কোন সুদূর অতীত যুগে নউপ্লিয়াসের সদৃশ একটি ভিন্ন বয়স্ক প্রাণী ছিল এবং পরবর্তী সময়ে কয়েকটি অপসারী বংশধারায় উপরোক্ত বিরাট বর্মী প্রাণীর গোষ্ঠীদের উদ্ভব হয়েছিল। এরূপে আবার স্তন্যপায়ী, পাখি, মাছ এবং সরীসৃপদের ভ্রূণ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞাত তথ্য থেকে এটি সম্ভবপর যে এইসব প্রাণীরা হচ্ছে কোন প্রাচীন পূর্বপুরুষের রূপান্তরিত বংশধর, বয়স্ক অবস্থায় ঐ পূর্বপুরুষের ফুলকা, পটকা, চারটি পাখনার মতো অঙ্গ এবং লম্বা লেজ ছিল, যেগুলির প্রতিটিই একটি জলচর জীবনের পক্ষে উপযোগী ছিল। 

অতীত ও বর্তমান পৃথিবীতে বসবাসকারী বিলুপ্ত এবং সাম্প্রতিক সমস্ত জীবদের যেহেতু কতিপয় বিরাট শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা যেতে পারে, এবং যেহেতু প্রত্যেক শ্রেণীর সকলে আমাদের তত্ত্বানুযায়ী সূক্ষ্ম ক্রমবিন্যাসগত ধাপ দ্বারা একত্রে সংযুক্ত হয়েছে, সেহেতু আমাদের সংগ্রহসমূহ নিখুঁত হয়ে থাকলে সম্ভবপর সর্বোত্তম বিন্যাসটি বংশানুক্রমিক হবে। বংশধারাটি হচ্ছে সংযুক্তির লুকানো বন্ধন, যা প্রকৃতিবিদরা প্রাকৃতিক সিস্টেম পদটির মধ্যে সন্ধান করেন। এই মতবাদ অনুসারে, আমরা বুঝতে পারি কেমন করে এটি হয় যে অধিকাংশ প্রকৃতিবিদের চোখে, ভ্রূণের গঠনটি পরিণতদের তুলনায় শ্রেণীবিভাগের জন্য এমনকি আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়। প্রাণীদের দুই বা ততোধিক গোষ্ঠীতে এদের পরিণত অবস্থায় গঠনে এবং পরস্পরের থেকে যতই পৃথক হোক না কেন, যদি এরা প্রায় একইরকম ভ্রূণগত দশা অতিক্রম করে, তাহলে আমরা নিশ্চিতরূপে মনে করতে পারি যে এরা সকলে একটি পিতামাতা আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং সেইজন্য নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়েছে। এরূপে ভ্রূণগত গঠনসম্প্রদায় বংশসম্প্রদায় প্রকাশ করে; কিন্তু ভ্রূণগত বিকাশের বৈসাদৃশ্য অসাম্প্রদায়িক বংশ প্রমাণ করে না, কারণ দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটির বিকাশগত দশাগুলি দমিত হয়ে থাকতে পারে অথবা নূতন জীবনস্বভাবে অভিযোজনের মাধ্যমে এমন বিপুলভাবে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে যে এদের আর চেনা যেতে পারে না। এমনকি গোষ্ঠীগুলোতে, যেখানে পরিণতরা চূড়ান্তমাত্রায় রূপান্তরিত হয়েছে, লার্ভাদের গঠনগুলো দ্বারা একই সঙ্গে উদ্ভবের ঘটনাটি প্রায়শই প্রকাশিত হয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেখেছি যে যদিও বহিরাকৃতিতে শামুক-মাছের এত সদৃশ সিরিপেডদেরকে খোলকী প্রাণীদের বিরাট শ্রেণীর অন্তর্গত এদের লাভাদের দ্বারা তৎক্ষণাৎ জানা যায়। ভ্রূণটি কমবেশী সরলভাবে গোষ্ঠীটির আদিম এবং কম রূপান্তরিত পূর্বপুরুষের গঠনটি আমাদের দেখায় বলে আমরা লক্ষ্য করতে পারি আদিম ও লুপ্ত আকাররা তাদের বয়স্ক অবস্থায় একই শ্রেণীর বর্তমানের প্রজাতিদের ভ্রূণগুলির প্রায়শই এত সদৃশ হয় কেন। আগাসি মনে করেন যে এটি প্রকৃতির একটি সার্বজনীন নিয়ম; এবং নিয়মটির সত্যতা প্রমাণিত হবে বলে আমরা আশা করতে পারি। তবে এটি শুধুমাত্র সেইসব ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হতে পারে, যেখানে গোষ্ঠীটির পূর্বপুরুষের আদিম অবস্থা হয় বৃদ্ধির একটি নিতান্ত প্রাথমিক বয়সে উদ্ভূত ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলির দ্বারা, অথবা এদের প্রথম আবির্ভাবের বয়সের তুলনায় আরও কম বয়সে এইসব পরিবর্তনগুলোর বংশানুসৃতির দ্বারা সামগ্রিকভাবে বিলুপ্ত হয়নি। এটাও মনে রাখা উচিত যে এটি সত্য হতে পারে, কিন্তু তথাপি, আদিমযুগের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড না থাকার জন্য, দীর্ঘসময় জুড়ে অথবা চিরকালের জন্য ব্যাখ্যার অযোগ্য হিসেবে রয়ে থাকতে পারে। নিয়মটি সেইসব ক্ষেত্রে খাটবে না যেখানে একটি আদিম আকার জীবনের কোন বিশেষ দিকে তার লার্ভা অবস্থায় অভিযোজিত হয়েছিল এবং বংশধরদের একটি সমগ্র গোষ্ঠীতে একই লার্ভাবস্থা বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছিল; কারণ এরূপ লার্ভারা তাদের বয়স্ক বা পরিণত অবস্থায় কোন আদিমতর আকারের সদৃশ হবে না। 

এভাবে আমার মনে হয় ভ্রূণবিদ্যার প্রধান প্রধান বিষয়গুলো, যা গুরুত্বের দিক দিয়ে অদ্বিতীয়, কোন এক আদিম পূর্বপুরুষ থেকে অনেক বংশধরের পরিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা হয়েছে—যেগুলো জীবনের কোন আদি বয়সে আবির্ভূত হয়নি এবং অনুরূপ বয়সে বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়েছে। একই বিরাট শ্রেণীর সমস্ত সদস্যদের পূর্বপুরুষের হয় এর বয়স্ক অথবা লার্ভা অবস্থার কমবেশী অস্পষ্ট একটি ছবি হিসেবে যখন আমরা ভ্রূণটিকে লক্ষ্য করি, তখন ভ্রূণবিদ্যা ভীষণভাবে কৌতূহল উদ্রেক করে। 

অঙ্কুর, ক্ষয়িষ্ণু এবং অকালজাত অঙ্গসমূহ 

এই অদ্ভুত অবস্থার অপ্রয়োজনীয়তার সরল ছাপ সমেত অঙ্গ অথবা প্রত্যঙ্গগুলো সমগ্র প্রকৃতিতে অতিশয় সাধারণ হয়, অথবা এমনকি সার্বজনীনও হয়। উচ্চতর প্রাণীদের এমন একটিরও নাম করা সম্ভব হবে না, যেখানে কোন অংশ অথবা অন্য প্রত্যঙ্গ অঙ্কুর অবস্থায় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষরা অঙ্কুর স্তনগ্রন্থির অধিকারী হয়; সাপেদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের একটি অংশ অঙ্কুর অবস্থায় থাকে, পাখিদের ‘জারজ ডানা’কে অঙ্কুর হাতপায়ের অঙ্কুর আঙ্গুল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, এবং কতিপয় প্রজাতির সমগ্র ডানাটি এত অঙ্কুরাবস্থায় থাকে যে এটি উড্ডয়নে ব্যবহৃত হতে পারে না। ভ্রূণ তিমি মাছেদের দাঁতের উপস্থিতির তুলনায় বিস্ময়কর আর কিহতে পারে, যারা বেশি বড় হওয়ার পর তাদের একটিও দাঁত থাকে না, অথবা না-জন্মানো বাছুরের ওপরের চোয়ালের দাঁতগুলো কখনও মাড়ি কেটে ওঠে না। 

অঙ্কুর বা অপরিপুষ্ট অঙ্গগুলো এদের উৎপত্তি এবং উদ্দেশ্য বিভিন্ন উপায়ে সরলভাবে প্রকাশ করে। নিকট সম্বন্ধযুক্ত প্রজাতিদের অথবা এমনকি একইরূপ প্রজাতিদের অন্তর্গত বিল পোকা আছে, যাদের হয় পূর্ণ আকারের ও নিখুঁত ডানা অথবা ঝিল্লির শুধুমাত্র অঙ্কুর থাকে, যেগুলো একত্রে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত ডানা-ঢাকনার মধ্যে থাকে না; এবং এসব ক্ষেত্রে সন্দেহ করা অসম্ভব হয় যে অঙ্কুরগুলো ডানাকেই সূচিত করে। অঙ্কুর অঙ্গগুলো কোন কোন সময় তাদের ক্ষমতা বজায় রাখে : পুরুষ স্তন্যপায়ীদের স্তনগ্রন্থির ক্ষেত্রে মাঝেমাঝে এটি ঘটে, যা কোন কোন সময় অতিশয় বর্ধিত হয় এবং দুধ নিঃসরণ করে বলে জানা গেছে। এরূপে বস (Bos) গণে একাধিক বাঁটওয়ালা স্তনে নিয়মমাফিক সুবর্ধিত চারটি এবং দুটি অঙ্কুর বাঁট থাকে; কিন্তু শেষোক্তটি আমাদের গৃহপালিত গরুদের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় ভালভাবে বর্ধিত হয় এবং দুধ উৎপাদন করে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, পাপড়িগুলি একই প্রজাতির এককদের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় অঙ্কুর অবস্থায় থাকে এবং কোন কোন সময় অতিশয় বর্ধিত হয়। পৃথক যৌন অঙ্গ সমেত কোন কোন উদ্ভিদে কোয়েলরয়টার লক্ষ্য করেছিলেন যে সুবিকশিত গর্ভকেশর সম্বলিত একটি উভলিঙ্গ প্রজাতির সঙ্গে একটি অঙ্কুর গর্ভকেশর সমেত পুরুষ ফুল সম্বলিত প্রজাতির সঙ্করণ ঘটানোর পর সঙ্কর বংশধরের অঙ্কুর অঙ্গটি আকারে অতিশয় বৃদ্ধি পেয়েছিল; এবং এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে অঙ্কুর এবং নিখুঁত গর্ভকেশর স্বভাবে মূলতঃ একই হয়। একটি প্রাণী পরিপূর্ণ অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গের অধিকারী হতে পারে, এবং তথাপি একটি অর্থে এরা অঙ্কুরাবস্থার হতে পারে, কারণ এরা অপ্রয়োজনীয় হয়। এভাবে মিঃ জি. এইচ. লিউস-এর বক্তব্য অনুসারে, সাধারণ স্যালামান্ডা অথবা জলজ গোসাপের ব্যাঙাচির “ফুলকা থাকে এবং এরা জলে অবস্থান করে; কিন্তু উচ্চ পর্বতে বসবাসকারী স্যালামান্ডা আট্রা নামক প্রজাতি পূর্ণ আকারের বাচ্চার জন্ম দেয়। এই প্রাণীটি কখনও জলে বাস করে না। তথাপি যদি আমরা গর্ভিণী স্ত্রীর দেহ কাটি, তাহলে এর দেহের ভিতরে সূক্ষ পালক সম্বলিত ফুলকা সমেত ব্যাঙাচিদের দেখি, এবং জলে ছেড়ে দেওয়া হলে এরা জলজ গোসাপের ব্যাঙাচিদের মত এধার-ওধার সাঁতার কাটে। স্পষ্টত এই জলজ জীবের প্রাণীটির ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই, অথবা এর ভ্রূণগত অবস্থায় কোন অভিযোজন নেই; এর শুধু পূর্বপুরুষীয় অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এটি এর পুর্বপুরুষদের বিকাশের একটি দশার পুনরাবৃত্তি করে।” 

দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি অঙ্গ একটি উদ্দেশ্যে এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে অঙ্কুর অথবা সম্পূর্ণ অকালজাত হতে পারে, এবং অন্য উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণরূপে দক্ষ হতে পারে। এরূপে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে গর্ভকেশরের কাজ হচ্ছে ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বকগুলোতে পরাগনালিকাগুলোকে পৌঁছাতে সাহায্য করা। গর্ভদণ্ডের ওপর গর্ভমুণ্ড দ্বারা গর্ভকেশর তৈরী হয়; কিন্তু কোন কোন কম্পোজিটি উদ্ভিদে, উর্বর হতে না পারা পুরুষ পুষ্পিকাগুলোর একটি অঙ্কুর গর্ভকেশর থাকে কারণ এর কোন গর্ভমুণ্ড নেই, কিন্তু গর্ভদণ্ডটি অতিশয় বিকশিত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে এটি রোমে আবৃত হয়, যা পার্শ্ববর্তী ও যুগ্ম পরাগাধার থেকে পরাগরেণু গ্রহণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আবার, একটি অঙ্গ তার উপযুক্ত উদ্দেশ্যের জন্য অঙ্কুর অবস্থায় থাকতে পারে এবং ভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে : কোন কোন মাছে, ভেসে থাকার সঠিক কাজের জন্য পটকাটি অঙ্কুরাবস্থার হয়, কিন্তু এটি জায়মান নিশ্বাসপ্রশ্বাস অঙ্গ অথবা ফুসফুসে রূপান্তরিত হয়েছে। এরূপ অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। 

এরা যত অল্পই বিকশিত হোক না কেন, যতক্ষণ না কারণ হিসেবে আমরা মনে করি যে এরা পূর্বে অতিশয় বিকশিত হয়েছিল, ততক্ষণ প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোকে অঙ্কুর হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। এরা একটি জায়মান অবস্থায় থাকতে পারে এবং আরও বিকশিত হতে পারে। পক্ষান্তরে অঙ্কুর অঙ্গগুলো হয় সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হয়, যেমন দাঁতগুলো কখনও মাড়ি কেটে বার হয় না, অথবা প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়, যেমন একটি উটপাখির ডানাগুলো শুধুমাত্র পাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এই অবস্থার অঙ্গগুলো যখন কম বিকশিত ছিল তখন বর্তমানের তুলনায় এমনকি কম ব্যবহৃত হয়েছে, সেহেতু এরা পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্বে সৃষ্ট হয়ে থাকতে পারে না, প্রাকৃতিক নির্বাচন শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় রূপান্তরসমূহের সংরক্ষণের দ্বারা কাজ করে। এরা অংশত বংশানুসৃতির ক্ষমতার দ্বারা বজায় থেকেছে এবং এরা একটি পূর্বাবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। তবে, অঙ্কুর এবং জায়মান অঙ্গগুলোকে পৃথক করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার, কারণ একটি অংশ আরও বিকাশক্ষম হয় কিনা এই উপমার দ্বারাই শুধু আমরা বিচার করতে পারি, যেক্ষেত্রে একে শুধুমাত্র জায়মান বলা যেতে পারে। এই অবস্থায় অঙ্গগুলো সব সময় কিছু পরিমাণে বিরল হবে; কারণ এভাবে প্রাপ্ত জীবগুলো আরও নিখুঁত অবস্থায় একই অঙ্গ সমেত তাদের উত্তরাধিকারীদের দ্বারা সাধারণভাবে স্থানচ্যুত হবে এবং ফলস্বরূপ বহুপূর্বে বিলুপ্ত হবে। পেঙ্গুইনের ডানা অতিশয় প্রয়োজনীয়, যা পাখনা হিসাবে ব্যবহৃত হয়; অতএব এটি ডানাটির জায়মান অবস্থা সূচিত করতে পারে। এই বক্তব্যটি যে আমি বিশ্বাস করি এমন নয় : এটি সম্ভবত একটি হ্রাসপ্রাপ্ত অঙ্গ, যা নূতন কাজের জন্য রূপান্তরিত হয়েছে : অন্যদিকে অ্যাপটেরিক্স-এর ডানাটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং এটি প্রকৃতই অঙ্কুর অঙ্গ। ওয়েন লেপিডোসাইরেন-এর সরল সূত্রবৎ প্রত্যঙ্গগুলোকে “অঙ্গগুলোর প্রারম্ভ, যা উচ্চতর মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে কার্যপ্রক্রিয়ার দিক থেকে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে “ হিসেবে বিবেচনা করেন; কিন্তু সম্প্রতি ডঃ গুনথার-এর মতানুসারে, এরা সম্ভবত অবশিষ্টাংশ, যা একটি পাখনার স্থায়ী অক্ষ দ্বারা তৈরী, যার পার্শ্ববর্তী শাখা ও প্রশাখাগুলো অকালজাত। অর্নিথোরিনকাস-এর স্তনগ্রন্থিগুলোকে গরুর বাঁটের তুলনায় একটি জায়মান অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কোন কোন সিরিপেডদের ওভিজেরাস ফ্রেনাটি হচ্ছে জায়মান ফুলকা, যা ভ্রূণকোষ আটকে থাকে না এবং স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়। 

একই প্রজাতির এককদের অঙ্কুর অঙ্গগুলো তাদের বিকাশের মাত্রায় এবং অন্য বিষয়ে পরিবর্তিত হতে প্রবণ হয়। মাঝেমাঝে হ্রাস পাওয়া নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতির, একই অঙ্গের ক্ষেত্রে মাত্রাটি অতিশয় ভিন্ন হয়। এই ঘটনাটি একই গোত্রের অন্তর্গত স্ত্রী-মথের ডানার ক্ষেত্রে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা গেছে। অঙ্কুর অঙ্গগুলি সম্পূর্ণরূপে অকালজাত হতে পারে; এবং এটি ইঙ্গিত দেয় যে কোন কোন প্রাণী অথবা উদ্ভিদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত থাকে। এই বিষয়টি এদের আবিষ্কার করতে আমাদের প্ররোচিত করে এবং যা বিকৃতাঙ্গ এককগুলোতে মাঝেমাঝে দেখা যায়। এরূপে অধিকাংশ স্ট্রকুলারিয়েসি নামক উদ্ভিদ গোত্রে পঞ্চম পুংকেশরটি সম্পূর্ণরূপে অকালজাত হয়; তথাপি আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে একটি পঞ্চম পুংকেশর একসময় অবস্থিত ছিল, কারণ এর একটি অঙ্কুর গোত্রটির অনেক প্রজাতিতে দেখতে পাওয়া যায় এবং এই অঙ্কুরটি মাঝেমাঝে নিখুঁতভাবে বিকশিত হয়, যেমন এটি সাধারণ স্ন্যাপড্রাগন উদ্ভিদে কোন কোন সময় দেখা যেতে পারে। একই শ্রেণীর বিভিন্ন সদস্যদের সমসংস্থ যে-কোন অঙ্গ আবিষ্কার করতে অঙ্কুর অঙ্গগুলির আবিষ্কারের তুলনায় কোন কিছুই আরও সাধারণ হয় না, অথবা প্রত্যঙ্গদের সম্পর্ক ভালভাবে বুঝতে আরও প্রয়োজনীয় হয় না। এটি ঘোড়া, মহিষ এবং গণ্ডারদের পায়ের হাড়ের ওয়েন—প্রদত্ত ছবিগুলোতে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, তিমি ও রোমন্থক প্রাণীদের দাঁতের মতো অঙ্কুর অঙ্গ ভ্রূণে প্রায়শই আবিষ্কার করা যেতে পারে, কিন্তু পরে এরা সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়। আমি বিশ্বাস করি যে এটি একটি সার্বজনীন নিয়ম যে একটি অঙ্কুর অঙ্গ বয়স্কটির তুলনায় সংলগ্ন অঙ্গের ভ্রূণে আপেক্ষিকভাবে বৃহত্তর আকারের হয়; অতএব এই কম বয়সে অঙ্গটি কম অঙ্কুরাবস্থার হয়, অথবা এমনকি কোন কোন মাত্রার অঙ্কুর বলে মনে করা যেতে পারে না। অতএব বয়স্কদের অঙ্কুর অঙ্গগুলো এদের ভ্রূণগত অবস্থা বজায় রেখেছে বলে প্রায়শই বলা হয়। 

অঙ্কুর অঙ্গগুলির প্রসঙ্গে প্রধান প্রধান বিষয়গুলো আমি এখন উল্লেখ করেছি। এগুলো ভেবেচিন্তে দেখলে প্রত্যেকে নিশ্চয় আশ্চর্যান্বিত হবে; কারণ একই যুক্তিবিচার ক্ষমতা, যা আমাদের বলে যে অধিকাংশ অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গ কোন কোন উদ্দেশ্যের জন্য সূক্ষ্মভাবে অভিযোজিত হয়েছে, সমান সরলতায় আমাদের জানায় যে এইসব অঙ্কুর অথবা ক্ষয়িষ্ণু অঙ্গগুলি অসম্পূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় হয়। প্রাকৃতিক ইতিহাসের গ্রন্থগুলিতে অঙ্কুর অঙ্গগুলি “সামঞ্জস্যের জন্য” অথবা “প্রাকৃতিক পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ করার” জন্য সৃষ্টি হয়েছে বলে সাধারণভাবে ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু এটি কোন ব্যাখ্যা নয়, বিষয়টির পুনরুক্তি মাত্র। অথবা এটি নিজেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এভাবে অজগর জাতীয় বৃহদাকার সাপ বোয়া কনসট্রিক্টর-এর পিছনের প্রত্যঙ্গের এবং শ্রোণীর একটি অঙ্কুর অঙ্গ থাকে, এবং যদি বলা হয় যে এই হাড়গুলি “প্রাকৃতিক পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ করতে” বজায় রয়েছে, তাহলে অধ্যাপক ভাইসম্যানের প্রশ্ন অনুযায়ী কেন অন্য সাপরা এটি বজায় রাখে না, যাদের এইসব একই হাড়গুলোর চিহ্নও থাকে না? একজন জ্যোতির্বিদের চিন্তা কি এই হবে যিনি বলেন যে উপগ্রহরা “সামঞ্জস্যের জন্য” তাদের গ্রহগুলোর চারদিকে উপবৃত্তাকারে ঘোরে, কারণ গ্রহরা এভাবে সূর্যের চারদিকে ঘোরে? একজন বিখ্যাত শারীরতত্ত্ববিদ এটি কল্পনা করে অঙ্কুর অঙ্গদের উপস্থিতি বিচার করেন যে এগুলি অতিরিক্ত বস্তু অথবা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বস্তুগুলিকে বের করার কাজে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু আমরা কি মনে করতে পারি যে ক্ষুদ্র প্যাপিলা, যা প্রায়শই পুরুষফুলের গর্ভকেশর সূচিত করে এবং যা শুধু কোষকলা দ্বারা তৈরী, তা এরূপে কাজ করতে পারে? আমরা কি মনে করতে পারি অঙ্কুর দাঁতগুলো, যারা পরবর্তী সময়ে বিশোষিত হয়, লাইম ফসফেটের মতো এত মূল্যবান বস্তু অপসারণ করে দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভ্রূণ-বাছুরের পক্ষে উপকারী হয়? যখন একজন মানুষের আঙ্গুলগুলো ব্যবচ্ছেদ করা হয়, কাটা জায়গায় অসম্পূর্ণ নখ বের হতে দেখা যায়, এবং আমি তখন বিশ্বাস করতে পারতাম যে নখদের অদৃশ্যপ্রায় চিহ্নগুলো শক্ত বস্তু নিঃসরণের জন্য বিকশিত হয়, যেমন বৃহদাকার শুশুকদের পাখনার ওপর অঙ্কুর নখগুলো এই একই উদ্দেশ্যের জন্য বিকশিত হয়েছে। 

রূপান্তরের সঙ্গে উদ্ভবের তত্ত্বটি অনুসারে, অঙ্কুর অঙ্গগুলির উৎপত্তি তুলনামূলকভাবে সরল এবং এদের অসম্পূর্ণ বিকাশের নিয়মগুলো আমরা বহুলাংশে বুঝতে পারি। আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলোর ক্ষেত্রে অদ্ভুত অঙ্গসমূহের অসংখ্য ঘটনার কথা আমাদের জানা আছে—যেমন লেজহীন জাতের লেজের কাটা অংশ—ভেড়াদের কানহীন জাতের একটি কানের অদৃশ্য প্রায় চিহ্ন—গোমহিষাদির শিংহীন জাতগুলোর ক্ষুদ্র ঝোলা শিঙের পুনরাবির্ভাব, ইওয়াটের মতানুসারে, বিশেষত শাবক প্রাণীদের ক্ষেত্রে—এবং ফুলকপির সমগ্র ফুলের ক্ষেত্রে। বিকৃতাঙ্গদের বিভিন্ন অঙ্গের অঙ্কুরদের আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি; অঙ্কুরগুলোকে উৎপাদন করা যেতে পারে এটা দেখানোর তুলনায় এইসব ঘটনার কোনটি প্রাকৃতিক অবস্থায় অঙ্কুর অঙ্গগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে কোন আলোকপাত করে কিনা, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে; কারণ সাক্ষ্যপ্রমাণাদি স্পষ্টভাবে দেখায় যে প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের আকস্মিক ও বিরাট পরিবর্তন হয় না। কিন্তু আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান করে আমরা জানতে পারি যে প্রত্যঙ্গদের অব্যবহার এদের আকার হ্রাস করে এবং ফলটি বংশগতভাবে প্রেরিত হয়। 

এটি সম্ভবপর বলে মনে হয় যে অব্যবহারই অঙ্গগুলোকে অঙ্কুর করার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নেয়। এটি মন্থরভাবে একটি প্রত্যঙ্গকে আরও বেশী বেশী করে সম্পূর্ণভাবে হ্রাস করতে প্রথমে চেষ্টা করবে, যতদিন না এটি অবশেষে অঙ্কুর অঙ্গে পরিণত হয়—যেমন অন্ধকার গুহায় বসবাসকারী প্রাণীদের চোখগুলোর ক্ষেত্রে এবং মহাসামুদ্রিক দ্বীপসমূহে বসবাসকারী পাখিদের ডানাগুলোর ক্ষেত্রে হয়, যাদের শিকারী প্রাণীরা কদাচিৎ ওড়াতে পারে, এবং অবশেষে এরা ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আবার, কোন কোন পরিবেশে উপকারী একটি অঙ্গ অন্য পরিবেশে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যেমন ছোট ও মুক্ত দ্বীপগুলোতে বসবাসকারী বিটলদের ডানাগুলোর ক্ষেত্রে হয়; এবং এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন অঙ্গটিকে হ্রাস পেতে সাহায্য করবে, যতদিন পর্যন্ত না এটি অক্ষত ও অঙ্কুর হয়। 

গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়ার যে-কোন পরিবর্তন, যা ছোট ছোট ধাপের দ্বারা কার্যকরী হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষমতার মধ্যে থাকে, যাতে করে জীবনের পরিবর্তিত স্বভাবগুলোর মাধ্যমে একটি উদ্দেশ্যে অপ্রয়োজনীয় অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কোন অঙ্গ রূপান্তরিত হতে পারে এবং অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। একটি অঙ্গ তার আগের কার্যপ্রক্রিয়াকে হয়তো বজায় রাখতেও পারত। প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাহায্যে প্রথমে সৃষ্ট অঙ্গরা, যখন অপ্রয়োজনীয় হয়, পরিবর্তনশীল হতে পারে, কারণ প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা এদের রূপান্তরগুলোকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে না। প্রাকৃতিক অবস্থায় আমরা যা দেখি তাতে এই সবগুলো এদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। অধিকন্তু, জীবনের যে-কোন বয়সে অব্যবহার অথবা নির্বাচন একটি অঙ্গকে হ্রাস করুক বা না করুক, জীবটি প্রাপ্তবয়স্ক হলেই সাধারণত এটি কার্যকরী হবে এবং সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, অনুরূপ বয়সে বংশানুসৃতির নিয়মটি একই পরিণত বয়সে তার হ্রাসপ্রাপ্ত অবস্থাকে পুনরায় উদ্ভব ঘটাতে চেষ্টা করবে, কিন্তু কদাচিৎ ভ্রূণকে প্রভাবিত করবে। এভাবে সংলগ্ন প্রত্যঙ্গদের আপেক্ষিকভাবে ভ্রূণে অঙ্কুর অঙ্গদের বড় আকারটি সম্পর্কে আমরা ধারণা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পরিণতবয়স্ক প্রাণীর হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলি স্বভাবের কোন কোন পরিবর্তনের জন্য অনেক বংশ জুড়ে কমভাবে ব্যবহৃত হয়, অথবা যদি অঙ্গ অথবা গ্রন্থি প্রক্রিয়াগতভাবে কমভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে এটি এই প্রাণীর বয়স্ক বংশধরদের মধ্যে আকারে হ্রাস পাবে, কিন্তু এটি ভ্রূণে তার বিকাশের প্রাথমিক মান প্ৰায় বজায় রাখবে। 

তবে এক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধক আছে। কোন অঙ্গের ব্যবহার বন্ধের পর এবং ফলস্বরূপ অতিশয় হ্রাস পাওয়ার পর, কোন চিহ্ন না রেখে কেমন করে এটি আকারে আরও হ্রাস পেতে পারে এবং কেমন করে অবশেষে সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হতে পারে? অঙ্গটি একবার নিষ্ক্রিয় হওয়ার পর অব্যবহার আরও প্রভাব সৃষ্টি করে থাকতে পারে, এটি প্রায় অসম্ভব। কিছু অতিরিক্ত ব্যাখ্যা এখানে প্রয়োজন, যা আমি দিতে পারছি না। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রমাণ করা যেত যে জীবের প্রত্যেক প্রত্যঙ্গ আকারে বৃদ্ধির তুলনায় হ্রাস পাওয়ার দিকে বিরাট পরিমাণে পরিবর্তিত হতে প্রবণ হয়, তাহলে আমরা বুঝতে সক্ষম হতাম যে কেমন করে অপ্রয়োজনীয় হওয়া একটি অঙ্গ অব্যবহারের প্রভাব ব্যতিরেকে অঙ্কুর হয়ে থাকবে এবং অবশেষে সামগ্রিকভাবে দমিত হবে; কারণ হ্রাসমান আকারের দিকে পরিবর্তন প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা আর নিয়ন্ত্রিত হবে না। পূর্ববর্তী একটি অধ্যায়ে ব্যাখ্যাত ক্রমবৃদ্ধির সঞ্চয়ের নিয়মটি একটি প্রত্যঙ্গকে অঙ্কুর করতে সম্ভবত ভূমিকা পালন করবে, ঐ নিয়ম অনুযায়ী যে—কোন প্রত্যঙ্গ সৃষ্টিকারী বস্তুরা, যদি অধিকারীর পক্ষে প্রয়োজনীয় না হয়, যতদূর সম্ভব রক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এই নিয়মটি হ্রাস-প্রক্রিয়ার আগের ধাপগুলোতে যতদূর সম্ভব সীমাবদ্ধ থাকবে; কারণ আমরা অনুমান করতে পারি না যে, উদাহরণস্বরূপ, একটি পুরুষফুলে স্ত্রীফুলের গর্ভকেশর প্রতিনিধিত্বকারী শুধু কোষীয় কলার দ্বারা সৃষ্ট একটি ক্ষুদ্র প্যাপিলা, পুষ্টিকর খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য আরও হ্রাস পেতে অথবা বিশোষিত হতে পারে। 

শেষত, যেহেতু এদের বর্তমান অপ্রয়োজনীয় অবস্থায় যে-কোন ধাপ দ্বারা হ্রাসপ্রাপ্ত অঙ্কুর অঙ্গগুলো আগের একটি অবস্থার প্রমাণ হিসেবে অবস্থান করে এবং শুধুমাত্র বংশানুসৃতির ক্ষমতার মাধ্যমে বজায় থাকে, সেহেতু শ্রেণীবিন্যাসের বংশগত মতবাদ অনুসারে আমরা বুঝতে পারি শ্রেণীবিন্যাসকারীরা কেন প্রাকৃতিক সিস্টেমের উপযুক্ত স্থানে জীবগুলোকে স্থাপন করে অঙ্কুর অঙ্গগুলো উচ্চ শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনের অঙ্গগুলোর তুলনায় আরও উপকারী হয় অথবা কোন কোন সময় আরও বেশী উপকারী হয় বলে প্রায়শই লক্ষ্য করেন। অঙ্কুর অঙ্গগুলোকে একটি শব্দের অক্ষরগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যে শব্দে তখনও বানান বজায় থাকে, কিন্তু উচ্চারণে অপ্রয়োজনীয় হয়, কিন্তু যা এর উৎপত্তির রহস্য উদ্ঘাটনের সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রূপান্তরের সঙ্গে উদ্ভবের মতবাদ অনুসারে, আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে কোন অদ্ভুত অবস্থা উপস্থিত করার বদলে, যেমনটা সৃষ্টির পুরানো তত্ত্বানুযায়ী ঘটে থাকে, একটি অঙ্কুর, অসম্পূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় অবস্থার অথবা সম্পূর্ণ অকালজাত অবস্থার অঙ্গগুলোর উপস্থিতিকে এখানে ব্যাখ্যাত মতবাদগুলো অনুসারে প্রত্যাশা করা যেতে পারে। 

সারাংশ 

এই অধ্যায়ে আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি যে সমগ্র সময় জুড়ে জীবগুলো গোষ্ঠীদের অধীনে গোষ্ঠীতে বিন্যস্ত; আন্তঃসম্পর্কের প্রকৃতি যার দ্বারা সমস্ত জীবিত ও বিলুপ্ত জীবগুলো আত্মীয়তার জটিল, অভিসারী, ঘোরালো পথ দ্বারা কতিপয় বিশাল শ্রেণীতে সংযুক্ত হয়েছে; এদের শ্রেণীবিভাগগুলোতে প্রকৃতিবিদদের দ্বারা অনুসৃত নিয়ম ও সম্মুখস্থ প্রতিবন্ধকসমূহ; চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর মূল্য আরোপ, যদি স্থায়ী ও প্রভাবশালী হয়, উচ্চ অথবা তুচ্ছ গুরুত্বের অথবা যেমন অঙ্কুর অঙ্গগুলোর মতো কোন গুরুত্বের হোক বা না হোক; অনুরূপ অথবা অভিযোজিত বৈশিষ্ট্যে এবং প্রকৃত কুটুম্ব-সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যে আরোপিত মূল্যের ব্যাপক বিরোধিতা; এবং অন্য নিয়মগুলো। স্বাভাবিকভাবে সবগুলো বোঝা যায় যদি আমরা সম্বন্ধযুক্ত আকারদের সাধারণ পিতৃমাতৃত্ব, এর সঙ্গে পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এদের রূপান্তর, তার সঙ্গে বিলুপ্তি ও বৈশিষ্ট্যের ভিন্নমুখীতা স্বীকার করি। শ্রেণীবিন্যাসের এই মতবাদ বিবেচনা করে এটি মনে রাখা উচিত হবে যে বংশগত উপাদানটি লিঙ্গ, বয়স, দ্বিরূপক আকার এবং একই প্রজাতির স্বীকৃত ভ্যারাইটিদেরকে একত্রে শ্রেণীভুক্ত করতে সার্বজনীনভাবে ব্যবহৃ হয়েছে, গঠনে এরা পরস্পরের থেকে যতই ভিন্ন হোক না কেন। বংশধারার এই উপাদানটির ব্যবহারকে আমরা যদি প্রসারিত করি—যা অবশ্যই জীবদের সাদৃশ্যের একটি জ্ঞাত কারণ-তাহলে প্রাকৃতিক সিস্টেমের অর্থ কি তা আমরা বুঝতে পারব, ভ্যারাইটি, প্রজাতি, গণ, গোত্র, অর্ডার এবং শ্রেণী পদগুলির দ্বারা চিহ্নিত অর্জিত পার্থক্যের ক্রমগুলির সঙ্গে এর প্রচেষ্টাকৃত বিন্যাসে এটি বংশানুক্রমিক হয়। 

রূপান্তরের সঙ্গে উদ্ভবের এই একই মতানুসারে, অঙ্গসংস্থানের অধিকাংশ বৃহৎ বিষয়গুলো বোধগম্য হয়—যে উদ্দেশ্যেই প্রয়োগ হোক, একই শ্রেণীর ভিন্ন প্রজাতির সমসংস্থ অঙ্গগুলোতে প্রদর্শিত একই প্যাটার্ন আমরা লক্ষ্য করি কিনা; অথবা প্রত্যেক এককীয় প্ৰাণী ও উদ্ভিদে ধারাবাহিক ও পার্শ্বীয় সমসংস্থ অঙ্গগুলোতে একই প্যাটার্ন আমরা লক্ষ্য করি কিনা। 

জীবনের অতি প্রাথমিক বয়সে প্রয়োজনানুগভাবে অথবা সার্বজনীনভাবে আবির্ভূত না হওয়া এবং অনুরূপ বয়সে বংশগতভাবে প্রেরিত হওয়া পর্যায়ক্রমিক অল্প পরিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী, ভ্রূণবিদ্যার প্রধান প্রধান বিষয়গুলো আমরা বুঝতে পারি; যথা, এককীয় ভ্রূণটির সমসংস্থ প্রত্যঙ্গদের নিবিড় সাদৃশ্য, এবং পরিণত হওয়ার পর গঠনে ও কার্যপ্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়; এবং সম্বন্ধযুক্ত অথচ ভিন্ন প্রজাতির সমসংস্থ অঙ্গ অথবা প্রত্যঙ্গদের সাদৃশ্য, যদিও বয়স্ক অবস্থায় যতদূর সম্ভব ভিন্ন স্বভাবের জন্য অভিযোজিত হয়। লার্ভারা হচ্ছে সক্রিয় ভ্রূণ, যা একটি অনুরূপ প্রাথমিক বয়সে এদের রূপান্তরসমূহের বংশানুসৃতির সঙ্গে এদের জীবন-স্বভাব সম্পর্কে বিরাট অথবা কম মাত্রায় বিশেষভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। এইসব একই নিয়ম অনুযায়ী এবং এটা মনে রেখে যে যখন হয় অব্যবহারের ফলে অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অঙ্গগুলো আকারে হ্রাস পায়, এটি জীবনের সাধারণত সেই সময়ে হবে যখন জীবকে তার নিজের প্রয়োজন মেটাতে হয়, এবং এটা মনে রেখে যে বংশগতির ক্ষমতা কত শক্তিশালী—অঙ্কুর অঙ্গগুলির উদয় প্রত্যাশা করা যেতে পারে। শ্রেণীবিন্যাসে ভ্রূণ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য এবং অঙ্কুর অঙ্গগুলির গুরুত্ব তখনই বোধগম্য হয়, যখন এই মত প্রকাশ করা হয় যে প্রাকৃতিক বিন্যাস বংশানুক্রমিক। 

অবশেষে, এই অধ্যায়ে আলোচিত কয়েকটি বিষয় সম্ভবত ঘোষণা করে যে এই পৃথিবীতে বসবাসকারী অসংখ্য প্রজাতি, গণ এবং গোত্রগুলোর প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব শ্রেণী অথবা গোষ্ঠীর সাধারণ পিতামাতাদের থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং উদ্ভবের গতিপথে সকলে রূপান্তরিত হয়েছে। দ্বিধাহীনভাবে আমার এই মত গ্রহণ করা উচিত, এমনকি যদি এটি অন্য তথ্য অথবা যুক্তি দ্বারা সমর্থিত না হয় তাহলেও। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *