৪.৮ স্বর্গের সোপানশ্রেণী

২৮. স্বর্গের সোপানশ্রেণী

নতুন পাঠাগারের পরিকল্পনার একটি তালিকা নিজ কক্ষে বসে পড়ছিলেন হুমায়ূন। বিকেলে তালিকাটি তার স্থপতিরা দিয়ে গেছেন। বিকেলের ম্লান অথচ স্বচ্ছ আলো লাল পাথর আর দুধের মতো সাদা মার্বেল পাথরের প্রাসাদের গায়ে এসে পড়ছে। চারদিকে প্রবেশ দ্বারের গায়ে হুমায়ূনের প্রিয় ইরানী কবিদের পংক্তিমালা লেখা আছে। একদিন হুমায়ূন ভাবলেন তাঁর পূর্বসূরিদের দুর্বল সংগ্রহকে ছাড়িয়ে যাবে তাঁর পাঠাগারের সংগ্রহ। সেখানে থাকবে হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি একটি বাক্সে তাঁর বাবার জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিকথা সম্বলিত হলুদ মলাটের বই।

কাবুলে বাবর সুন্দর একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন এবং সেখানে বেশ কিছু সুন্দর বাগানও করেছেন। কিন্তু হিন্দুস্তানে কোনো স্থাপত্যকীর্তি রেখে যাওয়ার সময় তার হয়নি। হুমায়ূন সে সুযোগ পেয়ে খুশি। সাতচল্লিশ বছর বয়সে তিনি এখনও বেশ শক্তসামর্থ্য। তিনি একটি পাঠাগারের পরিকল্পনা করছেন। এটি হবে যমুনা নদীর তীরে। এ নিয়ে একটি স্থানও নির্ধারণ করেছেন তিনি। পাঠাগারের চারপাশে থাকবে বিভিন্ন ফলের গাছ যেমন লেবু, কমলা, ডালিম। আরও থাকবে বিভিন্ন সুগন্ধি ফুলের বাগান।

একইসঙ্গে তিনি আনন্দিত যে শের মন্ডলের ছাদে তিনি একটি পর্যবেক্ষক স্থাপন করেছেন। পুরানা কিল্লার উঠানে এই অষ্টভুজটি স্থাপন করেন শের শাহ, যার কাজ প্রায় শেষের পথে। হিন্দুস্তানের লোকজন এটাকে বলেন চৈত্রি। সাদা থাম দিয়ে এটি দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এখান থেকেই আকাশের তারাদের ভালো করে দেখা যায়। মহাকাশ দেখার জন্য তিনি এগুলো বিশেষভাবে তৈরি করেছেন। তৈমুরের নাতি উগলুকের লেখা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই জিজ-ই গোরকানির একটি কপিও তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। এতে নক্ষত্রের স্বর্গীয় স্থানের কথা উল্লেখ রয়েছে। নতুন রাজকীয় জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার জন্য সকলেই প্রস্তুত।

নক্ষত্রের তালিকা অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারির এই সন্ধ্যার আকাশে শুক্রগ্রহ দেখার এক বিশেষ সুযোগ থাকবে। জানালা দিয়ে হুমায়ূন দেখলেন সূর্য প্রায় ডুবে গেছে। প্রাসাদকক্ষ থেকে বের হয়ে বেশ কয়েকজন রাজকর্মচারীদের নিয়ে তিনি পর্যবেক্ষকের দিকে গেলেন। তিনি সেখানে কারো দ্বারা বিরক্ত হতে চান না। নিজের কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে ফুলের বাগানের ভেতর দিয়ে তিনি শের মণ্ডলের দিকে গেলেন। তারপর উঁচু এবং পাথরের সিঁড়ি বেয়ে এর ছাদে ওঠলেন। চৈত্রিতে তিনি দেখলেন রাজজ্যোতির্বিদরা সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন।

হুমায়ূন কদাচিৎ আকাশ দেখতে আসেন। সোনালি ও গোলাপী আকাশ অসাধারণ সম্মোহনী শক্তি এর। সেখানে সন্ধ্যা তাঁরা শুক্ৰগ্ৰহ অন্ধকার স্বর্গকে আরও সুন্দর করে তুলছে। হুমায়ুন বিমোহিত হয়ে দেখতে থাকলেন আকাশের নক্ষত্র।

পাশের রাজকীয় মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠের আওয়ার আসতে থাকলো। এতে হুমায়ুন তার পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত হলেন। তিনি আরও কিছুক্ষণ সেখানে থাকতেন কিন্তু দিনটি ছিল শুক্রবার। এই দিনে তিনি জনগণ ও সভাসদদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। শুক্রগ্রহ থেকে তার চোখের পলক সরিয়ে তিনি সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকলেন। মুয়াজ্জিন তাঁর আজান প্রায় শেষ করেছেন এবং তাঁকে দ্রুত ফিরে যেতে হবে…

কিন্তু যখনই তিনি সিঁড়িতে তাঁর প্রথম পা ফেললেন, তাঁর চামড়ার জুতোর মাথায় দীর্ঘ নীল রাজকীয় পোষাক আটকে গেল। তিনি সামনের শূন্যতার দিকে ঝুঁকে পড়লেন। তিনি হাত বের করলেন, তবে তাঁর হাতের কাছে কিছু ধরার ছিল না। তিনি মাথা নিচের দিকে দিয়ে পড়তে শুরু করলেন। তাঁর চোখের সামনে শুধু সিঁড়ি, শুধু সিঁড়ি বেয়ে উল্টো হয়ে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে একদম নিচের সিঁড়িতে এসে প্রচণ্ডভাবে লাগল তার মাথা। কিছু অংশ কেটে গেল। তারপর সবকিছু অন্ধকার, অনড় ও শান্ত।

*

প্রধান হাকিম কি এখানে এসেছেন?

তিনি আসছেন বৈরাম খান। পারস্য দেশীয়দের মতো উদ্বিগ্নতা নিয়ে অসুস্থ হুমায়ূনের স্নান আলোময় কক্ষ থেকে ধীর কণ্ঠে বললেন জওহর। অবশ্যই আমরা তাঁর জন্য এক্ষুণি পাঠিয়েছি, কিন্তু দুর্বাগ্যবশত তিনি এক আত্মীয়ের বিয়েতে এক সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আমার বার্তাবাহক এই খবর আনতেও সময় নিয়েছে। সে অবশ্য সেখানে যাবে। যা হোক, খবর এসেছে মাত্র একঘণ্টা আগে। তাঁকে পাওয়া গেছে এবং পুরানা কিল্লায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেনো সঠিক সময়ে এখানে আসেন, কারণ তাঁর দক্ষতা তাঁর খ্যাতির মতোই বিশাল…। বৈরাম খানের ঘোর ভাঙলো তিনি যখন বাহির থেকে কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর দরজা খুলে দেয়া হল কালো জামা পরিহিত এক দীর্ঘদেহী ব্যক্তির জন্য, তার কাঁধে একটি বড় চামড়ার থলে।

বৈরাম খান সামনের দিকে গেলেন। আমি খান-ই-জাহান। আমি বার্তাবাহককে আপনাকে খুঁজে আনার জন্য পাঠিয়েছিলাম। আপনি দিল্লির সবচেয়ে সম্মানিত হাকিম এবং আমাদের সর্বশেষ আশা। আমাদের নিজেদের চিকিৎসকরা কোনো কিছু করতে পারেননি। তবে তাঁদের একজন আপনার কথা আমাদের জানান। তিনি জানান আপনি একবার ইসলাম শাহকে রক্ষা করেছিলেন যখন তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যান।

হাকিম মাথা নাড়লেন।

আমি বিশ্বাস করি যে ইসলাম শাহের সেবা করার কারণে তাঁকে সরিয়ে ক্ষমতা নেয়ার জন্য এই চিকিৎসায় আপনি অমত করবেন না?

একজন ডাক্তারের দায়িত্ব হল জীবন বাঁচানো। হাকিম শয্যার দিকে একপলক তাকালেন যেখানে শুয়ে রয়েছেন হুমায়ূন। তাঁর মাথা বেশ ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করা, চোখদুটি বন্ধ এবং তিনি অনড়। মহারাজকে পরীক্ষা করার আগে আমাকে বিস্তারিত বলুন, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে এবং তিনি কীভাবে ছিলেন। আমার এই বিষয়গুলো অবশ্যই জানা উচিৎ।

বলার তেমন কিছু নেই। তিনদিন আগে তিনি একটি পাথরের সিঁড়ি থেকে পড়ে যান। একদম নিচের সিঁড়ির সাথে তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। সিঁড়ির পার্শ্বদিক ছিল শক্ত ও ধারালো। সভাসদরা তাঁকে রক্তাক্ত মাথায় উদ্ধার করেন এবং অজ্ঞান অবস্থায় প্রাসাদে নিয়ে আসেন। আমাদের হাকিমরা তাকে দেখেছেন এবং কপালের ডান পাশে গভীর আঘাতে ক্ষত খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মুখ ও ডান কান দিয়েও রক্ত ঝরছিল। তখন থেকে তিনি জ্ঞান ফিরে পেয়ে বারবার আবারও অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। কখনো হঠাৎ যদি তাঁর জ্ঞানও আসছে, তিনি কাউকেই চিনতে পারছেন না, নিজের পূত্র ও সম্রাজ্ঞিকেও চিনতে পারছেন না।

গভীর ভাবনার সঙ্গে মাথা নাড়লেন হাকিম। তারপর বিছানার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং শান্তভাবে বিছানা চাদর নাড়লেন। হুমায়ুন কোনো সাড়া দিলেন না। মাথা ঝুঁকিয়ে চিকিৎসক তাঁর হৃদস্পন্দন যাচাই করতে চাইলেন। তারপর তাঁর একটি চোখের পাতা তুললেন, এবং এরপর আরেকটি তুললেন। তাঁর মুখভঙ্গিতে এক ধরনের হতাশা ফুটে উঠল। তিনি হুমায়ূনের মাথা কয়েক ইঞ্চি উপরে টেনে তুললেন এবং তাঁর কপালের একাংশ দেখলেন, যা কাটা ও বিবর্ণ। হুমায়ূন অল্পক্ষণের জন্য জ্ঞান ফিরে পেলেন, তবে কোনো শব্দ করলেন না।

হাকিম তখনও তাঁর আঘাতস্থানটি দেখছিলেন। আকবর তখন নারীদের কক্ষ থেকে অসুস্থ পিতার কক্ষে ফিরলেন। সেখানে তিনি তাঁর মা হামিদাকে সান্তনা দিচ্ছিলেন। তিনি পিতাকে এভাবে অসহায় শুয়ে থাকতে দেখে বিমর্ষ হলেন। একইসঙ্গে তিনি আর দূরে থাকতে পারলেন না। আঘাত পাওয়ার পর বাহাত্তোর ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি হুমায়ূনের কাছাকাছি থেকে তাঁর আরোগ্য কামনা করছেন। তিনি হাকিমকে বললেন, দয়া করে, আপনি অবশ্যই তাঁকে সারিয়ে তুলবেন। আমার পিতার জীবন ফিরিয়ে দেবেন।

আমি চেষ্টা করব, তবে তাঁর জীবন আল্লাহর হাতে।

কাঁধ থেকে নামানো থলেটি খুলে ঔষদি লতার একটি তুড়া বের করলেন। এর তিক্ত গন্ধ চারদিক ছেয়ে গেল। আগুন জালানোর ব্যবস্থা করুন তিনি উপস্থিত রাজ কর্মচারিদের নির্দেশ দিলেন। এই লতাগুল্মগুলো গরম পানিতে সিদ্ধ করা দরকার যাতে এগুলোর রস পানিতে বের হয়। হুমায়ুনের শয্যার পাশেই কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাকিম একটি বড় পানি রাখার পাত্র জোগাড় করলেন। লতাগুল্মগুলো সেই পানির পাত্রে রাখলেন। এটা করার পর, তিনি চিকিৎসার জন্য একটি ছোট ধারালো চাকু বের করলেন। আমি চাচ্ছি তাঁর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ ঘটাতে, এতে তার মস্তিস্কের ওপর চাপ কমে যাবে এবং আমি মনে করি আঘাত সেরে উঠবে। কাউকে এই কাপটি ধরতে হবে।

আমি ধরব আকবর তাৎক্ষণিক বললেন। বিছানার কাপড়ের নিচ দিয়ে হুমায়ূনের ডান বাহু ধরলেন হাকিম। তিনি কাছে টেনে চাকু হাতে নিলেন। তিনি ধারালো চাকু দিয়ে কনুইয়ে একটু কেটে দিলেন তিনি। যখন রক্ত পড়া শুরু হলো একটি গোলাকার পাত্র দিয়ে সেই রক্ত জমা করতে লাগলেন আকবর। লাল রক্ত দেখে আশা জেগে উঠল হাকিমের মনে। এটা প্রমাণিত যে তার শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো এখনও সচল রয়েছে। তাঁর পিতা অনেক শক্তিশালী, তিনি ভাবলেন। ইতোমধ্যে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পাচ্ছেন তিনি। নিশ্চিতভাবে তিনি এই সংকট উৎরে যাবেন…

কিছুক্ষণ পর হাকিম বোলটি সরিয়ে নিতে আকবরকে বললেন। যে স্থানটি কাটা হয়েছে সেখানে একটি সাদা সুতি কাপড়ের টুকরো লাগিয়ে দিতেও বললেন। হুমায়ূন বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুরু করলেন। আকবর তার ঠোঁটের কাছে নিজের মাথা ঝুঁকালেন। তিনি কী বলছেন তা বুঝার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। আমি এখানে পিতা, আমি এখানে। তিনি বললেন। তার প্রত্যাশা হুমায়ূন হয়তো তার কথা শুনতে ও বুঝতে পারবেন। হঠাৎ তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং হুমায়ুনকে জড়িয়ে ধরলেন।

যুবরাজ আমাদের উচিৎ চিকিৎসার জন্য হাকিমকে ছেড়ে দেয়া নম্রভাবে আকবরের কাঁধে ধরে বললেন বৈরাম খান।

আপনি ঠিক বলেছেন। পিতার মুখের দিকে শেষবারের মতো এক পলক তাকিয়ে আকবর উঠে দাঁড়ালেন এবং অসুস্থ হুমায়ূনের চিকিৎসা কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন। যখন দরজা পেছন থেকে বন্ধ হয়ে গেল, তিনি দেখতে পারলেন না হাকিম ধীরলয়ে বৈরাম খান ও জওহরের দিকে মাথা নেড়েছেন।

*

মহারানী, এতো দ্রুত মহারাজের মৃত্যুতে আমরাও মর্মাহত। তবে আমার বিশেষ কোনো পছন্দ নেই। যদি আপনি আপনার সন্তানের জীবন প্রত্যাশা করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই আমার কথা শুনা প্রয়োজন…

হামিদা তাঁর ফ্যাকাশে, রঞ্জিত মুখ তুলে বৈরম খানের দিকে তাকালেন। তার চোখ দুটি কান্নায় লাল হয়ে আছে। মুখের নিচের অংশ হাত দিয়ে মুছলেন। কিন্তু আকবর বিপদে পড়তে পারেন বলে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তা হামিদাকে কিছুটা বিব্রত করল। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল যথেষ্ঠ ভারি। তিনি বললেন, তুমি কি বলতে চাচ্ছ বৈরাম খান?

হিন্দুস্তানে ক্ষমতায় আসার পর আল্লাহ আপনার স্বামীকে বেহেস্ত তুলে নিয়েছেন। যদিও বিতর্কহীনভাবে আকবর সিংহাসনের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী, কিন্তু রাজপুত্রের বয়স মাত্র ১৩ বছর। যদি আমরা সতর্ক না হই, উচ্চাকাঙ্খি লোকজন তাঁর কাছ থেকে সিংহাসন কেড়ে নিতে চাইবে। কামরান ও আসকারির সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে আপনার স্বামীর প্রতি অনুগত। তারপরও তারা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিতে পারে, যদিও আসকারি মারা গেছেন এবং কামরান অন্ধ ও মক্কায় রয়েছেন। আমরা আমাদের অনুগত রাজ্যের শাসকদের কথাও ভাবতে পারি। উদাহরণসরূপ মুলতানের সুলতান ধূর্ত আজাদ বেগের কথাই ধরুণ। আমরা হিন্দুস্তান জয়ের পর তিনি কেবল আনুগত্য দেখিয়েছেন। হয়তো আবার এই আনুগত্য প্রত্যাহার করতে পারেন। আর এই খবরটি হয়তো বাংলার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা সিকন্দর শাহকেও উৎসাহ যোগাতে পারে। তিনি আবারও শক্তি সামথ্য নিয়ে হামলা চালাতে আসবেন। এছাড়া গুজরাটের সুলতানের মতো আমাদের বহিঃশত্রুও রয়েছে…

বৈরাম খান, যথেষ্ট হয়েছে, হামিদা তাঁকে থামিয়ে দিলেন। আমার স্বামী আপনাকে পছন্দ করেছেন খান ই জাহান হিসেবে, কারণ তিনি আপনাকে বিশ্বাস করেছিলেন। আমিও আপনাকে বিশ্বাস করি- এবার বলুন আমাদের কী করা উচিৎ।

যেসব রাজ্য আমাদের প্রতি অনুগত থাকবে তাদের জড়ো করার জন্য আমরা কয়েক দিন মহারাজের মৃত্যুর খবর গোপন রাখব। এরমধ্যে আগ্রার আহমেদ খানের মতো লোকদের কাছে জানতে চাইবো। যখন আমাদের বিশ্বস্থ সমর্থকরা এখানে আসবেন তাঁদের লোকজন নিয়ে তখন আমরা রাজপূত্রের নামে মসজিদে কোনো ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে খুতবা পড়ব। আমি মনে করি জাহিদ বেগ খুব বেশি দূরে নন। আমি মহারাজের মৃত্যুতে তাঁকে আনতে পাঠিয়েছি। আমরা তাঁকে কাবুল ও খাইবার পথের বিভিন্ন অঞ্চল নিরাপদ রাখতে বলব।

কিন্তু আমার স্বামীর মৃত্যুকে কিভাবে আমরা গোপন রাখব?

দ্রুততা ও বিবেচনার মাধ্যমে কাজ করে। পুরানা কিল্লা ও শহরের বাইরের লোজন জানে যে মহারাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে মাত্র কয়েকজন, যেমন হাকিমরা, জওহর ও আপনার স্বামীর ব্যক্তিগত কর্মচারীরা শুধু জানেন যে তিনি মারা গেছেন। সকলেই বিষয়টি গোপন রাখবেন। বিভিন্ন রাজ্যে বার্তাবাহক পাঠানোর পর আমি ঘোষণা করে দেব কেউ যেনো দূর্গে প্রবেশ না করেন এবং বের না হন। আমি ঘোষণা করব যে পুরানা কিল্লায় এক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং শহরে যাতে তা ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কিন্তু আমার স্বামীতো প্রতিদিন পুরানা কিল্লার বেলকনি থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতেন। আমরা কী বলব লোকজন যখন তাঁকে আর দেখবে না?

আমরা এমন কাউকে নেবো যার উচ্চতা তাঁর মতো এবং তাঁকে রাজকীয় পোষাকে সাজাব। নদীর ওপার থেকে কেউই তাঁকে চিহ্নিত করতে পারবে না।

আকবর কী করবে পরবর্তী দিনগুলোতে?

তিনি হেরামের ভেতরে থাকবেন। আমি উনার জন্য অতিরিক্ত রক্ষী বাহিনী মজুত করার চেষ্টা করব- যারা আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক। আপনার কক্ষের চারপাশেও তারা থাকবে। তার প্রত্যেকটি খাবার, পানীয় সব কিছুই প্রথমে পরখ করে তারপর তাঁর কাছে পাঠানো হবে।

আপনি কি পরিস্থিতিতে ভয়াবহ বলে মনে করছেন?

হ্যাঁ, মহারানী, কোনো সন্দেহ নেই। মনে করেন কীভাবে ইসলাম শাহের বড় পূত্রকে এই দিল্লিতেই হত্যা করা হয়। মাত্র তিন বছর আগে গোপনে মায়ের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।

এবার আপনি যা বলবেন আমরা ঠিক তাই করব। এটাই আমার স্বামী চেয়েছেন।

*

সেই রাতে জ্যোৎস্না ও নক্ষত্র ভরা ছিল আকাশ। পুরানা কিল্লার দেয়ার ভেতরে একটি ছোট বাগানে দাঁড়িয়ে আছেন আকবর। মাত্র তিন মাস আগে বাগানটি করেছিলেন হুমায়ূন। তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বৈরম খান, জওহর ও আরো কয়েকজন বিশ্বস্থ রাজকর্মচারী। মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে সমাধিস্ত করার এই দৃশ্যটি শুধু তারাই দেখতে পারবেন। কোনো নারী সেখানে আসেননি। এমনটি খুব নিকটের যারা তারাও না। হামিদা আর গোলবদন উপর থেকে দেখছেন। সুগন্ধি জলে ধুয়া হয়েছে হুমায়ূনের শরীর। নরম একটি কাপড় দিয়ে মোড়ে দেয়া হয়েছে। তারপর কাঠের একটি বাক্সে রেখে বাগানের মাটিতে কবর দেয়া হয়েছে। একজন মোল্লা জানাজা পড়ালেন এবং হুমায়ূনের মাগফিরাত কামনা করলেন।

আকবর যখন ভাবলেন যে তিনি তাঁর পিতাকে আর দেখতে পারবেন না তখন তাঁর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো। তাঁর মনে উৎকণ্ঠাও ছেয়ে গেল। কয়েক দিন আগে তাঁর জীবন ছিল কতো সুখের ও নিরাপদ। কিন্তু এখন সব কিছুই বদলে গেছে। তাঁর চারিদিকে উদ্বেগ লক্ষ্য করছিলেন। যদিও তার মা ও বৈরাম খান খুব সামন্যই বলেছেন, তিনি তাঁদের মুখভঙ্গি ও কথা শুনে তাঁদের উদ্বেগ লক্ষ্য করেছেন। তবে তাঁদের এই উদ্বেগ তার জন্য নয়।

কিন্তু তিনি ভীত হলে চলবে না। তাঁর রক্ত তৈমুরের। অতীতে রয়েছেন তাঁর দাদা বাবর, তিনি এক নির্দয় সুযোগের কারণে তাঁর নিজের অধিকারের জিনিস হাতছাড়া করতে পারেন না। চোখ বন্ধ করে, আকবর নীরবে তাঁর মৃত পিতার কথা স্মরণ করতে লাগলেন। আমি আপনার কাছে অঙ্গিকার করছি যে আপনি এই সাধারণ সমাধিতে বেশি দিন শায়িত থাকবেন না, সর্বসাধারণের দৃষ্টির বাইরে। যেইমাত্র আমি দিল্লিতে এবং সামর্থ্যবান, আমি আপনার জন্য বিশ্ব যা এখনও দেখেনি সে রকম চমৎকার সমাধিসৌধ বানাবো। আমি নতুন মোগল সম্রাট আকবর হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে এই শপথ নিলাম… আমার শ্রদ্ধাভাজন পিতা, আপনি আমাকে শ্রেষ্ঠ (গ্রেট) উপাধি দিয়েছেন এবং আমি শ্রেষ্ঠই হবো। শুধুমাত্র আপনার স্মৃতিতেই নয়, আমার ভাগ্য নির্মাণের যে স্বপ্ন তাঁর কাছেও শ্ৰেষ্ঠ হবো আমি।

.

ঐতিহাসিক নোট

আমি সৌভাগ্যবান যে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট ও যোদ্ধা হুমায়ূনের গল্প যথেষ্ঠ তথ্যসমৃদ্ধ ছিল। তাঁর বাবা বাবরকে নিয়ে লেখা আমার আগের বই রাইডার্স ফ্রম দ্য নর্থ থেকে এটি বেশি সমৃদ্ধ। রোমাঞ্চকর যাত্রা, ট্রাজিডি, দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন বিজয় হুমায়ুন ও তার সৎবোন গুলবদনের জীবনকে জড়িয়ে আছে। মোগল সম্রাট হুমায়ূনের জীবনী হুমায়ূননামায় গোলাপদেহী রাজকুমারির প্রতি স্নেহের বৃত্তান্ত রয়েছে। হুমায়ূনের সভাসদ জওহর তাদকিরাত আল-ওয়াকিয়াত নামে তাঁর একটি জীবনী গ্রস্থ প্রণয়ন করেছিলেন। এছাড়া হুমায়ূন পুত্র আকবরের বন্ধু ও উপদেষ্টা আবুল ফজল আকবরনামা হুমায়ুনের শাসনামলের বিভিন্ন বৃত্তান্ত উল্লেখ করেন।

সুন্দর বর্ণনায়, অতিশয়োক্তির ফুলঝরিতে হুমায়ূনকে বীর, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আধ্যাত্বিক মহিমায় উজ্জল এবং কখনো কিছুটা খামখেয়ালি ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন বিভিন্ন বিষয় আকাশে নক্ষত্রে লেখা থাকে এবং পৃথিবীর শুরুতে সবকিছু চারটি মৌলিক জিনিস- বাতাস, পানি, মাটি ও আগুন ধারা নিয়ন্ত্রিত হতো। নির্দিষ্ট দিনে তিনি নির্দিষ্ট রঙের পোষাক পরতেন, মঙ্গলবার দুষ্কৃতিকারী কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করতেন। এই দিনটিতে প্রতিহিংসা ও ক্রোধের দিন হিসেবে দেখতেন তিনি। ওইদিন তিনি রাজকীয় লাল পোষাক পরতেন এবং মহাকাশে নক্ষত্রের গতিবিধি দেখার জন্য সভাসদদের নির্দেশ দিতেন। তাঁর প্রথম জীবনে আফিম সেবনের অভিজ্ঞতা ছিল যা তাকে পরবর্তীতে সতর্ক, গতিশীল ও আধ্যাত্বিক চিন্তা গ্রহণে সাহায্য করেছে।

মুল সামরিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ব্রাদার্স অ্যাট ওয়ার বইতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলার ঘোড়াব্যবসায়ী উচ্চাভিলাসী পুত্র শেরশাহ হুমায়ূনকে হিন্দুস্তানের বাইরে পাঠান। শেরশাহের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধের পর হুমায়ূনকে রক্ষা করেন তরুণ নিজাম। তিনি নিজামকে সিংহাসনে বসার অনুমতি দেন। হামিদাকে নিয়ে রাজস্তানের মরুভূমিতে হুমায়ূনের যুদ্ধ, নির্জন উমরকতে আকবরের জন্ম, পারস্যে আশ্রয়ের জন্য যাত্রা করেন- এসব সত্য। তবে হুমায়ুনের খুশি হওয়ার মতো বিষয় হলো তিনি শেষ পর্যন্ত হিন্দুস্তানে হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পান। হিন্দুস্তানের সিংহাসন লাভের মাত্র ছয় মাস পর তিনি মহাকাশ পর্যবেক্ষকের ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে মারা যান। সেখানে তিনি আকাশের প্রিয় নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ করতেন। এতে তাঁর বিধবা স্ত্রী হামিদা ও তরুণ আকবর হিন্দুস্তানের সাম্রাজ্য বাঁচানোয় জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন।

হুমায়ূনের সৎ ভাইদের বিশেষত (কামরান ও আসকারির) ষড়যন্ত্র মোকাবেলার বিষয়টিও ছিল তাঁর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সভাসদরা যখন বারবার বলছিলেন তাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য তখন হুমায়ুন তাঁর এই ভাইদের বিভিন্ন সময়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এদের ফাঁসির পক্ষে তারা অনেক যুক্তিও দেখিয়েছেন। হুমায়ূন হিন্দালের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি করেন, কারণ তিনি হামিদাকে বিয়ে করার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। হামিদার প্রতি হিন্দালেরও অনুরক্ততা ছিল বলে জানা গেছে। এদিকে, এক সময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে হুমায়ুন কামরানকে অন্ধ করে দেন। এবং হজ্জের জন্য মক্কায় পাঠান। যা হোক, আমি মাঝে মাঝে তার কাজগুলোকে বিবেচনা করে সহজবোধ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি এবং সময়সীমার কথা মাথায় রেখে কিছু ঘটনার বর্ণনা করা থেকে বিরত থেকেছি। মুল ইতিহাসের সঙ্গে সংগতি রেখে উপন্যাসিকের স্বাধিনতা বজায় রাখার চেষ্টাও আমি করেছি। এক্ষেত্রে আমি অনুসাঙ্গিক আরও কিছু ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি।

বইটিতে যেসব চরিত্র রয়েছে, হুমায়ুনের তিন সৎ ভাই, তার পূত্র আকবর, সৎ বোন গুলবদন, চাচি খানজাদা, আকবরের দুধভাই মাহাম আগা ও আদম খান, শেরশাহ, ইসলাম শাহ, সিকন্দর শাহ, পারস্যের শাহ তাহমাস, গুজরাটের বাহাদুর শাহ, সিন্দ এর হোসেইন, মারওয়ারের মেলদিও এবং বৈরাম খান। বৈসংহার, হুমায়ূনের দাদি, আহমেদ খান, কাসিম এবং বাবা যশেবালের মতো চরিত্রগুলো যৌগিক।

কয়েক বছরের বেশি সময় ধরে এই বইটি নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে আমি ঐতিহাসিকভাবে বর্ণিত অধিকাংশ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছি। এগুলো এখনও সেখানে বিদ্যমান আছে। সেগুলো শুধু ভারতেই নয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানেও রয়েছে। বিশেষত আমি মনে করতে পারছি লাল পাথরের প্রাসাদ, যমুনা নদীর তীরে দিল্লির শের মণ্ডল যেখান থেকে পড়ে হুমায়ূন মারা গেছেন। আমি এখনও কল্পনা করতে পারি, আধ্যাত্বিক নক্ষত্ৰ সন্ধানী পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিশালী এই সম্রাট সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। তিনি চিরতরের জন্য পড়ে গেলেন।

.

নুসাঙ্গি

অধ্যায় ১ ১৫৩০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন হুমায়ূন। ১৫০৮ সালে জন্ম গ্রহণের পর হুমায়ুন মাহামের কাছে পাঠানো হয়। কামরান, জন্মের পর তাঁকে গুলরুখের কাছে পাঠানো হয়। তবে তাঁর জন্মের তারিখ বাবরের স্মৃতিকথা বাবরনামায় উল্লেখ নেই। যতদূর জানা যায় তাঁর বয়স ছিল হুমায়ূনের বয়সের কাছাকছি।

১৫১৬ সালে জন্মের পর আসকারিকে গুলরুখের কাছে পাঠানো হয়। তার জন্মের তিন বছর পর ১৫১৯ সালে দিলদারের কাছে পাঠানো হয় হিন্দালকে। মাহাম বাবরকে দিলদারের সন্তান পালন করার জন্য চেয়েছিলেন এবং তিনি রাজিও হন। ঘটনাটি হিন্দালের জন্মেরও আগের।

অবশ্যই হুমায়ূন মুসলিমদের চন্দ্রভিত্তিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতেন। তবে আমি তারিখগুলোকে প্রচলিত সূর্য এবং পশ্চিমাদের ব্যবহৃত খ্রিস্টান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল রেখে করেছি।

 তৈমুর পশ্চিমাদের কাছে টাম্বারল্যান নামে পরিচিত হন। তৈমুর দ্য ল্যাম থেকে এই টাম্বারল্যান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দাঁড়ায় খোঁড়া তৈমুর। ব্রিটিশ নাট্যকার খ্রিস্টফার মারলো তাঁকে তাঁর একটি নাটকে তোলে ধরেন ঈশ্বরের বিচরণ হিসেবে।

খানজাদার অপহরণ এবং বাবরের মৃত্যুকে ঘিরে অদ্ভূত পরিস্থিতি রাইডার্স ফ্রম দ্য নর্থ এ উল্লেখ করা হয়েছে।

অধ্যায় ২ ১৫৩৫-৩৬ সালে হুমায়ূন গুজরাটে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।

অধ্যায় ৬ ১৫৩৯ সালের জুনে কৌসার যুদ্ধ সংগঠিত হয়। জওহর নিজামের গল্পটি বলে।

অধ্যায় ৮ কানাউজের যুদ্ধ সম্পন্ন হয় ১৫৪০ সালে।

অধ্যায় ৯ শেরশাহের কাছে কয়েকটি শর্ত দিয়ে হুমায়ূন ও কামরান উভয়েই পত্র লিখেন যা অগ্রাহ্য করেন শেরশাহ।

অধ্যায় ১০ গুলবদন লাহুর প্রত্যাবর্তনের বর্ণনা দেন। এটা যেনো পুনরুত্থানের দিন এবং লোকজন তাদের প্রিয় ও সুসজ্জিত প্রাসাদ ছেড়েছে।

অধ্যায় ১১ ১৫৪১ সালের ২১ আগস্ট মধ্যাহ্নে বিয়ে করেন হামিদা ও হুমায়ূন।

অধ্যায় ১৩ কয়েক বছর পর খানজাদা মারা যান এবং সে সময়ের বিভিন্ন বিষয় এই অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। ১৫৪২ সালের ১৫ অক্টোবর উমরখতে জন্ম গ্রহণ করেন আকবর।

অধ্যায় ১৪ কামরানের কাছে আকবরকে হস্তান্তর সম্পর্কীত বিভিন্ন বিষয় বর্ণিত হয়েছে।

অধ্যায় ১৫ গুলবদন দুরাচারি পর্বত উপজাতিদের নরখাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁদের বর্জ্যের পিশাচ বলে অভিহিত করেন। ১৫৪৩ সালে হুমায়ূন পারস্যের সীমান্তে পৌঁছান। হুমায়ূনকে সাদর সম্ভাষণ জানান শাহ তামাস্প। এককালের জাঁকজমকপূর্ণ শহর কাজবিন ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে যায়। কেস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে ইরানের উত্তরপশ্চিমে এই শহরটির অবস্থান ছিল। শাহ তামাস্প তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানান। এ নিয়ে জওহর ও গুলবদনের কাছে বর্ণনা পাওয়া যায়। কাজবিন শহরের কাছে যান হুমায়ূন। এই ভ্রমণটিকে বেশ সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের আগমনে ঢোল বাজানো হয়। শহর এবং গ্রামে লোকজনকে তাদের সবচেয়ে সুন্দর পোষাক পরার জন্য বলা হয়। লোকজন তাঁদের প্রবেশের পর উল্লাস ধ্বনী করতে থাকে। আবুল ফজল লিখেছেন, কহিনূর একটি মহামূল্যবান হীরা। এটা শাহ তামাস্পের কাছে ছিল। পরে সেটি হিন্দুস্তানে যায় এবং সম্রাট শাহজাহানের কাছে থাকে। পরবর্তীতে এটি ব্রিটেনের রাজকীয় অলংকারের অংশ হয়।

অধ্যায় ১৬ ১৫০১ সালে পারস্যে সাফায়েদ রাজত্বকালে শিয়া মুসলিমদের প্রসার ঘটে। ইসলামের প্রথম শতাব্দিতে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। মুলত হযরত মুহাম্মদের সুযোগ্য উত্তরাধীকারী কে হবেন- এ নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। শিয়ারা দাবি করে প্রথম খলিফা হযরত মুহাম্মদের চাচাতো ভাই ইমাম হাসান ও হোসেনের পিতা হযরত আলীকে করা উচিৎ। শিয়া শব্দের অর্থ দল এবং আলীর দল শব্দ থেকে এটি এসেছে। সুন্নি বলতে তাঁদের বুঝায় মুহাম্মদের সুন্নাহ যারা অনুসরণ করেন তাঁদের। পরবর্তীতে ইসলামের এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ষোড়শ শতাব্দিতে দূরত্বটা আরো একটু বাড়ে। তখন নামাজের রীতি নিয়েও পার্থক্য তৈরি হয়। হুমায়ূন কিছুটা শিয়াপন্থি হয়ে উঠেছিলেন।

অধ্যায় ১৭ কাবুলের ঐতিহাসিক দেয়াল ঘুরে দেখান কামরান যেখানে হুমায়ূনের কয়েকটি হামলার চিহ্ন আঁকা রয়েছে। একাধিকবার দুই ভাইয়ের মধ্যে শহরটি হাত বদল হয়।

অধ্যায় ২০ ১৫৪৫ সালের মে মাসে শেরশাহ মারা যান।

অধ্যায় ২১ ১৫৫১ সালে এক যুদ্ধে মারা যান হিন্দাল। এ নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে এতে।

অধ্যায় ২৩ জওহর কামরানকে অন্ধ করার বর্ণনা দেন। কামরানকে মক্কায় পাঠানো হয়। ১৫৫৭ সালে তিনি সৌদি আরবে মারা যান।

অধ্যায় ২৪ ১৫৫৩ সালের অক্টোবরে মারা যান ইসলাম শাহ।

অধ্যায় ২৬ ১৫৫৫ সালের জুনে শিরহিন্দের যুদ্ধ হয়। ১৫৫৫ সালের শেষের দিকে দিল্লিতে প্রবেশ করেন হুমায়ূন।

অধ্যায় ২৭ ১৫৫৯ সালে মারা যান সিকন্দর শাহ।

অধ্যায় ২৮ ১৫৫৬ সালের ২৪ জানুয়ারিতে মারা যান হুমায়ূন। দিল্লিতে এখনও তার মার্বেল পাথরের সমাধি রয়েছে। এটি একটি সুন্দর স্থাপত্যকীর্তি এবং অবশ্যই তাজমহলের আগের অন্যতম সমাধিক্ষেত্র।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *