ত্বায়িফে রাসূল (সাঃ) (الرَّسُوْلُ ﷺ فِيْ الطَّائِفِ):
নবুওয়তের দশম বছর শাওয়াল মাসে[1] (৬১৯ খ্রীষ্টাব্দে মে মাসের শেষের দিকে কিংবা জুন মাসের প্রথম দিকে) নাবী কারীম (ﷺ) ত্বায়িফ গমন করেছিলেন। ত্বায়িফ মক্কা থেকে আনুমানিক ষাট মাইল দূরত্বে অবস্থিত। যাতায়াতের এ দূরত্ব তিনি অতিক্রম করেছিলেন পদব্রজে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মুক্ত করা ক্রীতদাস যায়দ বিন হারিসাহ (রাঃ)। পথ চলাকালে পথিমধ্যে যে কাবিলাহ বা গোত্রের নিকট তিনি উপস্থিত হতেন তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন। কিন্তু তাঁর এ আহবানে তাদের পক্ষ থেকে কেউ সাড়া দেয় নি।
ত্বায়িফ গমন করে সাক্বীফ গোত্রের তিন নেতার সঙ্গে, যারা সকলেই সহোদর ছিলেন, তিনি সাক্ষাৎ করেন। তাঁর নাম ছিল যথাক্রমে আবদে ইয়ালাইল, মাসউদ ও হাবীব। ভ্রাতৃত্রয়ের পিতার নাম ছিল ‘আমর বিন ওমাইর সাক্বাফী। তাঁদের সঙ্গে (সাক্ষাতের পর মহানাবী (ﷺ) আল্লাহ তা‘আলার অনুগত হয়ে চলা এবং ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তাঁদের নিকট দাওয়াত পেশ করেন। তদুত্তরে একজন বলেন যে, সে কাবার পর্দা (আবরণ) ফেড়ে দেখাক যদি আল্লাহ তাকে রাসূল করেছেন।[2] দ্বিতীয়জন বললেন, ‘নাবী করার জন্য আল্লাহ কি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেও পান নি? তৃতীয়জন বললেন, ‘তোমার সঙ্গে আমি কোন ক্রমেই কথা বলবনা। প্রকৃতই যদি তুমি নাবী হও তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য বিপজ্জনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হও তবে তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা সমীচীন নয়।’ তাঁদের এহেন আচরণ ও কথাবার্তায় তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হলেন এবং সেখান থেকে যাবার প্রাক্কালে শুধু বললেন, ‘তোমরা যা করলে এবং বললে তা গোপনেই রাখ।’
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ত্বায়িফে দশদিন অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু সকলের উত্তর একই ‘তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও।’ ফলে ভগ্ন হৃদয়ে তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। প্রত্যাবর্তনের পথে যখন তিনি পা বাড়ালেন তখন তাঁকে উত্যক্ত অপমানিত ও কষ্ট প্রদানের জন্য শিশু কিশোর ও যুবকদেরকে তাঁর পিছনে লেলিয়ে দেয়া হল। ইত্যবসরে পথের দু’পাশ ভিড় জমে গেল। তারা হাত তালি, অশ্রাব্য অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাঁকে গাল মন্দ দিতে ও পাথর ছুঁড়ে আঘাত করতে থাকল। আঘাতের ফলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পায়ের গোড়ালিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে পাদুকাদ্বয় রক্তাক্ত হয়ে গেল।
ত্বায়িফের হতভাগ্য কিশোর ও যুবকেরা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করছিল তখন যায়দ বিন হারিসাহই তাঁকে (ﷺ) রক্ষার জন্য ঢালের মতো কাজ করছিলেন। ফলে তাঁর মাথার কয়েকটি স্থানে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন। এভাবে অমানবিক যুলম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পথ চলতে থাকেন এবং দুরাচার ত্বায়িফবাসীগণ তাদের এ অত্যাচার অব্যাহত রাখে। আঘাতে আঘাতে জর্জ্জরিত রুধিরাক্ত কলেবরে পথ চলতে গিয়ে নাবী কারীম (ﷺ) খুবই ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত এক আঙ্গুর উদ্যানে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হন। বাগানটি ছিল রাবী’আহর পুত্র উতবাহ ও শায়বাহর। তিনি বাগানে প্রবেশ করলে দূরাচার ত্বায়িফবাসীগণ গৃহাভিমুখে ফিরে যায়।
এ বাগানটি ত্বায়িফ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত। বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নাবী কারীম (ﷺ) আঙ্গুর গাছের ছায়ায় এক দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার ফলে কিছুটা সুস্থতা লাভের পর নাবী কারীম (ﷺ) আল্লাহ তা‘আলার দরবারে হাত তুলে দু‘আ করলেন। তাঁর এ দু‘আ ‘দুর্বলদের দু‘আ’ নামে সুপ্রসিদ্ধ। তাঁর দু‘আর এক একটি কথা থেকে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, ত্বায়িফবাসীগণের দুর্ব্যবহারে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ এবং তারা ঈমান না আনার কারণে তিনি কতটা ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি দু‘আ করলেন,
(اللهم إِلَيْكَ أَشْكُوْ ضَعْفَ قُوَّتِىْ، وَقِلَّةَ حِيْلَتِىْ، وَهَوَانِيْ عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِيْنَ، وَأَنْتَ رَبِّيْ، إِلٰى مَنْ تَكِلُنِىْ؟ إِلٰى بَعِيْدٍ يَتَجَهَّمُنِى؟ أَمْ إِلٰى عَدُوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِيْ؟ إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أُبَالِيْ، وَلٰكِنْ عَافِيْتُكَ هِيْ أَوْسَعُ لِيْ، أَعُوْذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الَّذِيْ أَشْرَقْتَ لَهُ الظُّلُمَات، وَصَلُحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مِنْ أَنْ تُنَزِّلَ بِيْ غَضَبُكَ، أَوْ يَحِلُّ عَلَيَّ سَخَطُكَ، لَكَ الْعُتْبٰى حَتّٰى تَرْضٰى، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ).
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার শক্তির দুর্বলতা, অসহায়ত্ব আর মানুষের নিকট স্বীয় মূল্যহীনতার অভিযোগ প্রকাশ করছি। ওহে দয়াময় দয়ালু,তুমি দুর্বলদের প্রতিপালক, তুমি আমারও প্রতিপালক, তুমি আমাকে কার নিকট অর্পণ করছো, যে আমার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করবে, নাকি তুমি আমাকে এমন শত্রুর নিকট ন্যস্ত করছো যাকে তুমি আমার যাবতীয় বিষয়ের মালিক করেছ। যদি তুমি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট না হও তবে আমার কোন আফসোস নেই, তবে তোমার ক্ষমা আমার জন্য সম্প্রসারিত করো। আমি তোমার সেই নূরের আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদ্দ্বারা অন্ধকার দূরীভূত হয়ে চতুর্দিক আলোয় উদ্ভাষিত হয়। দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয়াদি তোমার উপর ন্যস্ত। তুমি আমাকে অভিসম্পাত করবে কিংবা ধমক দিবে, তার থেকে তোমার সন্তুষ্টি আমার কাম্য। তোমার শক্তি ব্যতিরেকে অন্য কোন শক্তি নেই”।
এ দিকে রাবী’আহর পুত্রগণ যখন মহানাবী (ﷺ)-কে এমন এক দুরবস্থার মধ্যে নিপতিত অবস্থায় দেখতে পেল তখন তাদের মধ্যে গোত্রীয় চেতনা জাগ্রত হয়ে উঠল। আদাস নামক তাদের এক খ্রীষ্টান ক্রীতদাসের হাতে এক গোছা আঙ্গুর তারা নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট পাঠিয়ে দিল। সেই ক্রীতদাসটি যখন আঙ্গুলের গোছাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে তুলে দিতে চাইল তিনি তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে হাত বাড়িয়ে তা গ্রহণ করলেন এবং খেতে আরম্ভ করলেন।
আদাস বলল, ‘এমন কথা তো এ অঞ্চলের লোকদের মুখে কখনো শুনিনি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তুমি কোথায় থাক? তোমার ধর্ম কী?
সে বলল, ‘আমি খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং নিনওয়ার বাসিন্দা।’
নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, ‘ভাল, তাহলে সৎ ব্যক্তি ইউনুস বিন মাত্তার গ্রামে তুমি বাস কর, তাই না?
সে বলল, ‘আপনি ইউনুস বিন মাত্তাকে কিভাবে চিনলেন?’
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তিনি আমার ভাই। তিনি নাবী ছিলেন এবং আমিও নাবী’’। এ কথা শুনে আদাস নাবী কারীম (ﷺ)-এর দিকে ঝুঁকে পড়ল এবং তাঁর মাথা ও হাত-পায়ে চুমু দিল।
এ ব্যাপারে দেখে রাবী’আহ পুত্রদ্বয় নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘দেখ, দেখ, ঐ ব্যক্তি দেখছি শেষ পর্যন্ত আমাদের ক্রীতদাসকেও বিগড়িয়ে দিল।’
এর পর আদাস যখন তাদের নিকট ফিরে গেল তখন ভ্রাতৃদ্বয় তাকে বলল, ‘বলত দেখি ব্যাপারটি কী? ঐ ভদ্রলোক দেখছি তোমাকেও বিগড়িয়ে দিল।’
সে বলল, ‘হে আমার মনিব! এ ধরাধামে তাঁর চেয়ে উত্তম মানুষ আর কেউই নেই। তিনি আমাকে এমন এক কথা বলেছেন যা নাবী রাসূল ছাড়া অন্য কেউই জানে না।’
তারা দুজন বলল, ‘দেখ আদ্দাস, ঐ ব্যক্তি যেন তোমাকে তোমার ধর্ম থেকে ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তোমার ধর্ম তার ধর্ম থেকে উত্তম।’
কিছুক্ষণ অবস্থানের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাগান থেকে বের হয়ে মক্কার পথে যাত্রা করেন। তার মিশনের বিফলতাজনিত চিন্তা ও দৈহিক যন্ত্রনার দাপটে হৃদয় মন ছিল অত্যন্ত ভারাক্রান্ত ও বিশ্রান্ত। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি যখন ‘কারনে মানাযেল’ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন আল্লাহ রাববুল আলামীনের আদেশে জিবরাঈল (আঃ) সেখানে আগমন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতামন্ডলী। আল্লাহর তরফ থেকে তাঁরা এ অভিপ্রায় নিয়ে এসেছিলেন যে, নাবী (ﷺ) যদি ইচ্ছা করেন তা হলে তারা দু’পাহাড়কে একত্রিত করে দূরাচার মক্কাবাসীকে পিশে মারবেন।
এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বুখারী শরীফে আয়িশাহ সিদ্দীকাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তিনি একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার জীবনে কি এমন কোনদিন এসেছে যা উহুদের দিন চাইতেও কঠিন ছিল?
তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ’’, তোমার সম্প্রদায়ের নিকট থেকে আমাকে যে যে দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে তার মধ্যে সব চাইতে কঠিন ছিল ঐ দিনটি যে দিন আমি ঘাঁটিতে বিচলিত ছিলাম, যখন আমি নিজেকে আবদে ইয়ালাইল বিন আবদে কুলালের পুত্রদের নিকট পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথায় কর্ণপাত না করায় দুশ্চিন্তা ও ব্যথায় পরিশ্রান্ত হয়ে আমি নিজ পথে গমন করি। এভাবে চলতে চলতে ‘কারনে সায়ালেবে’ যখন এসে পৌঁছি তখন আমার চেতনা ফিরে আসে।
এ সময় আমার মনে কিছুটা স্বস্তিবোধের সৃষ্টি হয়। সেখানে আমি আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি যে, একখন্ড মেঘ আমাকে ছায়া দান করছে; ব্যাপারটি আরও ভালভাবে নিরীক্ষণ করলে বুঝতে পারি যে, এতে জিবরাঈল (আঃ) রয়েছেন। তিনি আমাকে আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যা বলেছে এবং আপনার প্রতি যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই শুনেছেন এবং দেখেছেন। এখন তিনি পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফিরিশতাগণকে আপনার খেদমতে প্রেরণ করেছেন। আপনি তাঁদের কে যা ইচ্ছা নির্দেশ প্রদান করুন। এরপর পর্বতের ফিরিশতা আমাকে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! কথা এটাই, আপনি যদি চান যে এদেরকে আমি দু’পাহাড় একত্রিত করে পিষে মারি তাহলে তাই হবে।[3] নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, ‘না, বরং আমার আশা, মহান আল্লাহ এদের পৃষ্ঠদেশ হতে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন যারা একমাত্র তাঁর ইবাদত করবে এবং অন্য কাউকেও তাঁর অংশীদার ভাববে না।[4]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ উত্তরে তাঁর অসাধারণ মানবত্ব প্রেমে সমুজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমাশীল অনুপম চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। সাত আসমানের উপর হতে আগত এই গায়েবী মদদের প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরিশতাগণ যখন তাঁর খেদমতে উপস্থিত হন তখন তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্র যেন আরও মহিমান্বিত হয়ে ওঠে। নিজের দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে তিনি সুস্থির চিত্তে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে থাকেন। এভাবে তাঁর মানসাকাশ থেকে চিন্তা ভাবনার মেঘ দূরীভূত হয়ে যায়।
তারপর তিনি মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার পথে ওয়াদীয়ে নাখলায় অবস্থান করেন। এখানে দুটো জায়গা বসবাসের উপযোগী ছিল। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আসসাইলুল কবীর এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যায়মা। কেননা, সেখানে পানি ছিল কিছুটা সহজলভ্য এবং জায়গা দুটো ছিল শস্য শ্যামল। কিন্তু তিনি (ﷺ) এ দুটো জায়গার মধ্যে কোথায় অবস্থান করেছিলেন কোন সূত্র থেকেই তার সন্ধান পাওয়া যায় নি।
ওয়াদী নাখলায় তিনি যখন কয়েক দিনের জন্য অবস্থান করেছিলেন সে সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট জিনদের একটি দলকে প্রেরণ করেন যার উল্লেখ কুরআন মাজীদের দুটো জায়গায় এসেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সূরাহ আল-আহক্বাফে এবং অন্যটি সূরাহ জিনে। সূরাহ আহক্বাফের আয়াতগুলো হচ্ছে,
(وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْا أَنصِتُوْا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلٰى قَوْمِهِم مُّنذِرِيْنَ قَالُوْا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْ إِلَى الْحَقِّ وَإِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ يَا قَوْمَنَا أَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَآمِنُوْا بِهِ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ) [الأحقاف:29: 31]
‘‘স্মরণ কর, যখন জিন্নদের একটি দলকে তোমার প্রতি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যারা কুরআন শুনছিল। তারা যখন সে স্থানে উপস্থিত হল, তখন তারা পরস্পরে বলল- চুপ করে শুন। পড়া যখন শেষ হল তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে। ৩০. (ফিরে গিয়ে) তারা বলল- হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা একটি কিতাব (এর পাঠ) শুনেছি যা মূসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে, তা পূর্বেকার কিতাবগুলোর সত্যতা প্রতিপন্ন করে, সত্যের দিকে আর সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে। ৩১. হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আন, আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন আর তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব থেকে রক্ষা করবেন।’ (আল-আহক্বাফ ৪৬ : ২৯-৩১)
قُلْ أُوْحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوْا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآناً عَجَباً (1) يَهْدِيْ إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَداً (2) وَأَنَّهُ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلا وَلَداً (3) وَأَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ سَفِيْهُنَا عَلَى اللهِ شَطَطاً (4) وَأَنَّا ظَنَنَّا أَنْ لَنْ تَقُوْلَ الْأِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى اللهِ كَذِباً (5) وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْأِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِنَ الْجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقاً (6) وَأَنَّهُمْ ظَنُّوْا كَمَا ظَنَنْتُمْ أَنْ لَنْ يَبْعَثَ اللَّهُ أَحَداً (7) وَأَنَّا لَمَسْنَا السَّمَاءَ فَوَجَدْنَاهَا مُلِئَتْ حَرَساً شَدِيْداً وَشُهُباً (8) وَأَنَّا كُنَّا نَقْعُدُ مِنْهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمْعِ فَمَنْ يَسْتَمِعِ الْآنَ يَجِدْ لَهُ شِهَاباً رَصَداً (9) وَأَنَّا لا نَدْرِيْ أَشَرٌّ أُرِيْدَ بِمَنْ فِي الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَداً (10) وَأَنَّا مِنَّا الصَّالِحُوْنَ وَمِنَّا دُوْنَ ذٰلِكَ كُنَّا طَرَائِقَ قِدَداً (11) وَأَنَّا ظَنَنَّا أَنْ لَنْ نُعْجِزَ اللهَ فِي الْأَرْضِ وَلَنْ نُعْجِزَهُ هَرَباً (12) وَأَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدَى آمَنَّا بِهِ فَمَنْ يُؤْمِنْ بِرَبِّهِ فَلا يَخَافُ بَخْساً وَلا رَهَقاً (13) وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُوْنَ وَمِنَّا الْقَاسِطُوْنَ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُوْلَئِكَ تَحَرَّوْا رَشَداً (14) وَأَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَباً (15) [ الجن: 1: 15].
‘১. বল, ‘আমার কাছে ওয়াহী করা হয়েছে যে, জিন্নদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কুরআন) শুনেছে তারপর তারা বলেছে ‘আমরা এক অতি আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি ২. যা সত্য-সঠিক পথ প্রদর্শন করে, যার কারণে আমরা তাতে ঈমান এনেছি, আমরা কক্ষনো কাউকে আমাদের প্রতিপালকের অংশীদার গণ্য করব না। ৩. আর আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা অতি উচ্চ, তিনি গ্রহণ করেননি কোন স্ত্রী আর কোন সন্তান। ৪. আর আমাদের মধ্যেকার নির্বোধেরা তাঁর সম্পর্কে সীমাতিরিক্ত কথাবার্তা বলত। ৫. আর আমরা ধারণা করতাম যে, মানুষ ও জ্বিন আল্লাহ সম্পর্কে কক্ষনো মিথ্যে কথা বলবে না। ৬. কতিপয় মানুষ কিছু জ্বিনের আশ্রয় নিত, এর দ্বারা তারা জ্বিনদের গর্ব অহঙ্কার বাড়িয়ে দিয়েছে। ৭. (জ্বিনেরা বলেছিল) তোমরা (জ্বিনেরা) যেমন ধারণা করতে তেমনি মানুষেরা ধারণা করত যে, (মৃত্যুর পর) আল্লাহ কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না। ৮. আর আমরা আকাশের খবর নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম কঠোর প্রহরী বেষ্টিত ও জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডে পরিপূর্ণ। ৯. আমরা (আগে) সংবাদ শুনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে তার উপর নিক্ষেপের জন্য সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডকে লুকিয়ে থাকতে দেখে। ১০. আমরা জানি না (এই পরিবর্তিত অবস্থার মাধ্যমে) পৃথিবীবাসীর অকল্যাণই চাওয়া হচ্ছে, না তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাতে চান। ১১. আর আমাদের কিছু সংখ্যক সৎকর্মশীল, আর কতিপয় এমন নয়, আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত। ১২. আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারব না, আর পালিয়েও তাঁকে অপারগ করতে পারব না। ১৩. আমরা যখন হিদায়াতের বাণী শুনতে পেলাম, তখন তার উপর ঈমান আনলাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর ঈমান আনে তার কোন ক্ষতি বা যুল্মের ভয় থাকবে না। ১৪. আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পণকারী আর কিছু সংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সঠিক পথ বেছে নিয়েছে। ১৫. আর যারা অন্যায়কারী তারা জাহান্নামের ইন্ধন।’ (আল-জিন ৭২ : ১-১৫)
এ ঘটনা প্রসঙ্গে অবতীর্ণ এ আয়াতসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে মহানাবী (ﷺ) জিনদের আগমনের কথা জানতেন না। আল্লাহ রাববুল আলামীন এ আয়াতের মাধ্যমে তাঁকে জিনদের আগমনের কথা অবহিত করেন এবং তখন তিনি তা জানতে পারেন। এ থেকে এও বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এটাই ছিল জিনদের প্রথম আগমন। বিভিন্ন হাদীস সূত্রে জানা যায় যে, এর পর থেকে নাবী কারীম (ﷺ)-এর দরবারে তাদের গমনাগমন চলতে থাকে।
জিনদের আগমন ও ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি ছিল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে দ্বিতীয় সাহায্যমূলক ঘটনা যে সাহায্য তিনি করেছিলেন তাঁর অদৃশ্য ভান্ডার থেকে অদৃশ্য বাহিনী দ্বারা। এ ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই অবগতি ছিল না। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত যে সকল আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তাতে নাবী কারীম (ﷺ)-এর দাওয়াতের কামিয়াবির সুসংবাদ রয়েছে। অধিকন্তু, এটাও পরিস্কার হয়ে গিয়েছে যে, বিশ্বের কোন শক্তি তাঁর দাওয়াতের কার্যকারিতার পথে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে না। অতএব ইরশাদ হয়েছে,
(وَمَن لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِن دُوْنِهِ أَولِيَاء أُوْلَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ) [الأحقاف:32]،
‘‘আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দিবে না, দুনিয়াতে সে আল্লাহকে ব্যর্থ করতে পারবে না, আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে নেই তার কোন সাহায্যকারী, পৃষ্ঠপোষক। তারা আছে সুস্পষ্ট গুমরাহীতে।’ (আল-আহক্বাফ ৪৬ : ৩২)
(وَأَنَّا ظَنَنَّا أَن لَّن نُّعجِزَ اللهَ فِي الأَرْضِ وَلَن نُّعْجِزَهُ هَرَبًا) [الجن:12].
‘‘আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারব না, আর পালিয়েও তাঁকে অপারগ করতে পারব না।’ (আল-জিন ৭২: ১২)
এ সাহায্য ও সুসংবাদের মাধ্যমে তাঁকে তাঁর যত প্রকারের চিন্তা-ভাবনা, দুঃখ-কষ্ট এবং নৈরাশ্য, ত্বায়িফবাসীদের গালি-গালাজ, চাটিমারা ও প্রস্তর নিক্ষেপের কালো মেঘ সব কিছুই মন থেকে মুছে গেল। তিনি সংকল্পবদ্ধ হলেন তাঁকে মক্কায় ফিরে যেতেই হবে এবং নতুনভাবে ইসলামের দাওয়াত ও নবুওয়াতের তাবলীগ পূর্ণোদ্যমে আরম্ভ করতে হবে। এটা ছিল ঐ সময়ের কথা যখন যায়দ বিন হারিসাহ (রাঃ) তাঁকে বলেছিলেন, ‘মক্কাবাসীগণ অর্থাৎ কুরাইশগণ যে অবস্থায় আপনাকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছে সে অবস্থায় কিভাবে আপনি মক্কা প্রত্যাবর্তন করবেন?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘হে যায়দ! তুমি যে অবস্থা দেখছ এর একটা সুরাহা অবশ্যই হবে এবং আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই এ থেকে পরিত্রাণের একটি পথ বের করে দেবেন। তাঁর মনোনীত দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং নিজ নাবী (ﷺ)-কে জয়ী করবেন।
নাবী কারীম (ﷺ) শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে যাত্রা করলেন এবং মক্কার নিকটবর্তী হেরা পর্বতের পাদদেশে অবস্থান করলেন। তারপর খুযা’আহ গোত্রের একজন লোক মারফত আখনাস বিন শারীক্বের নিকট সংবাদ পাঠালেন যে তিনি যেন নাবী কারীম (ﷺ)-কে আশ্রয় প্রদান করেন। কিন্তু আখনাস এই বলে আপত্তি করলেন যে, কুরাইশরা হচ্ছেন তাঁর মিত্র। কাজেই তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আশ্রয় প্রদান তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
এরপর তিনি সুহায়েল বিন ‘আমর এর নিকট ঐ একই অনুরোধ বার্তা প্রেরণ করলেন। কিন্তু তিনিও এ কথা বলে আপত্তি জানালেন যে, বণী আমেরের আশ্রয় দেয়া বনু কা’বের জন্য (সঙ্গত) হয় না। অতঃপর নাবী সাঃ মুত্ব’ঈম বিন আদির নিকট বার্তা প্রেরণ করলেন। মুত্ব’ঈম বললেন, হাঁ, অতঃপর অস্ত্র সজ্জিত হয়ে নিজ পুত্রগণ এবং সম্প্রদায়কে ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ক্বাবা’হ ঘরের নিকটে একত্রিত হয়ে যাও, কেননা আমি মুহাম্মাদ সাঃ-কে আশ্রয় দিয়ে দিয়েছি। অতঃপর মুত্বঈম নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট খবর পাঠালেন মক্কায় আগমনের জন্য। তিনি খবর পেয়ে যায়িদ বিন হারিসাহকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় আগমন করে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন। এরপর মুত্ব’ঈম বিন আদী আগমন করে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন। এরপর মুত্ব’ঈম বিন আদী আপন বাহনের উপর দৌড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যে, ‘হে কুরাইশগণ, আমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আশ্রয় প্রদান করেছি, কেউ যেন তাঁকে আর অনর্থক হয়রান না করে।’
এ দিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোজা হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে তা চুম্বন করেন। তারপর দু’রাকায়াত সালাত আদায় করেন এবং অস্ত্রসজ্জিত মুত্ব’ঈম বিন আদী ও তাঁর লোকজন পরিবেষ্টিত হয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। বলা হয়, এ সময় আবূ জাহল মুত্ব’ঈমকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আশ্রয় দিয়েছ না মুসলিমগণের অনুসারী হয়ে গিয়েছ?’ উত্তরে মুত্ব’ঈম বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে আশ্রয় দিয়েছি।’ এর উত্তরে আবূ জাহল বলেছিল, ‘তুমি যাঁকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম’’।[5]
মুত্ব’ঈম বিন আদির সৌজন্য ও সহৃদয়তার কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনও ভুলেন নি। যখন বদরের যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের একটি দল বন্দী হয়ে আসে এবং কোন বন্দীর মুক্তির জন্য জুবায়ের বিন মুত্ব’ঈম নাবীজী (ﷺ)-এর দরবারে আগমন করেন তখন তিনি বললেন,
(لَوْ كَانَ الْمُطْعِمُ بْنُ عَدِىٍّ حَيًّا ثُمَّ كَلَّمَنِىْ فِيْ هٰؤُلَاءِ النَّتْنٰى لَتَرَكْتُهُمْ لَهُ)
অর্থঃ যদি মুত্ব’ঈম বিন আদী জীবিত থাকত এবং এই দুর্গন্ধময় মানুষগুলোর জন্য সুপারিশ করত তাহলে তাঁর খাতিরে ওদেরকে ছেড়ে দিতাম।[6]
[1] মাওলানা নাজীব আবাদী ‘তারীখে ইসলাম ১ম খন্ড ১২২ পৃষ্ঠায় এটি বিশ্লেষণ করেছেন এবং এটাই আমার নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য।
[2] একটি পরিভাষার সঙ্গে এ উক্তির মিল রয়েছে ‘তুমি যদি নাবী হও তবে আল্লাহ আমাকে ধ্বংস করুন।’’ এ উক্তির তাৎপর্য হচ্ছে দৃঢ়তার সঙ্গে একথা প্রকাশ করা যে তোমার নাবী হওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়, যেমনটি সম্ভব নয় কাবার পর্দা ফাড়ার জন্য হাত বাড়ানো।
[3] এ স্থলে সহীহুল বুখারী আখশাবাইন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা হচ্ছে মক্কার দুটি প্রসিদ্ধ পাহাড় কুরাইশ এবং কাইকায়ান। এ পাহাড় দুটি যথাক্রমে কাবা শরীফের দক্ষিণ ও উত্তরে পাশে মুখোমুখী অবস্থিত। সে সময় সাধারণ আবাসিক এলাকা ঐ দু’পাহাড়ের মধ্যেই অবস্থিত ছিল।
[4] সহীহুল বুখারী কিতাবু বাদইল খালকে ১ম খন্ড ৪৫৮ পৃঃ, মুসলিম শরীফ, বাবু মালাকেয়ান নাবীউ (সাঃ) মিন আয়াত মুমরিকীনা আল মুনাফেকীন ২য় খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা।
[5] ত্বায়িফ গমনের বিস্তারিত বর্ণনা ইবেন হিশাম ১ম খন্ড ৪১৯ পৃঃ যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৪৬-৪৭ পৃঃ মুখতাসারুস সীরাহ, শাইখ আবদুল্লাহ ১৪১-১২৪ পৃঃ এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধ তফসীর গ্রন্থসমূহে হতে নেয়া হয়েছে।
[6] বুখারী ২য় খন্ড ৫৭৩ পৃঃ।