১২. একটু ঘুম এসে গিয়েছিল

১২.

আমরা কতোক্ষণ বসেছিলাম জানি না। আমার মনে হয় একটু ঘুম এসে গিয়েছিল। হঠাৎ মামা সোজা হয়ে বসে বলল, “কেউ একজন আসছে।”

আমিও সোজা হয়ে বসলাম। মানুষের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে তার মানে একজন নয় একজনের বেশি মানুষ আসছে। মানুষ একা একা কথা বলে না।

মামা ফিসফিস করে বলল, “হাত দুটো পিছনে রেখে চুপচাপ বসে থাক। দেখে যেন মনে হয় তোর হাত দুটো এখনো বাঁধা।”

আমি তাড়াতাড়ি আমার দড়িটা লুকিয়ে ফেললাম। তারপর হাত দুটো পিছনে নিয়ে বসে পড়লাম। মুখে হতাশ একটা ভঙ্গী করে মাথাটা এক পাশে কাত করে রাখলাম। মামাও তার দড়িটা পিছনে সরিয়ে হাত দুটো পিছনে নিয়ে রাখল। এক হাতে পিস্তলটা ধরে রেখেছে। মামাও চোখে মুখে খুব একটা হতাশ ভাব ফুটিয়ে রাখল।

আমরা শুনতে পেলাম দরজার বাইরের আলমারিটা ঠেলে সরানো হচ্ছে তারপর দরজা খুলছে। তারপর দুইজন মানুষ ভিতরে ঢুকলো। দুইজন বিদেশি। আমাদের দুইজনের দিকে একবার দেখল, তারপর একটু সরে গিয়ে নিজেদের ভেতর নিচু গলায় কথা বলতে লাগল। আমি স্পষ্ট ক্রসফায়ার শব্দটা শুনতে পেলাম।

মামা খুব ধীরে ধীরে মাথাটা একটু তুলে খুবই ক্লান্ত গলায় ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের নিয়ে তোমাদের পরিকল্পনাটি কী?”

একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল, “শাট আপ।”

মামা আস্তে আস্তে মাথা তুলে বলল, “তার মানে আমাদের নিয়ে তোমাদের কোনো পরিকল্পনা নাই?”

মানুষটা আবার খেঁকিয়ে উঠল, “আই সেইড শাট আপ।”

মামা মোটেও হাল ছেড়ে দিল না। খুবই নরম গলায় ইংরেজিও বলল, “তোমাদের যেহেতু কোনো পরিকল্পনা নেই, তাহলে আমাদের পরিকল্পনাটাই কাজে লাগাই। কী বল?”

মানুষ দুটো কেমন জানি চমকে উঠল। মামা তখন পিছন থেকে তার হাতটা বের করে সামলে নিয়ে আসে। তার হাতে চকচকে কালো একটা পিস্তল।

মানুষ দুটো কী করবে বুঝতে পারে না, তাদের মুখ পুরোপুরি হা হয়ে থাকে। একজন ফাঁসাসে গলায় বলল, “ইউ ইউ ইউ” কিন্তু কথা শেষ করতে পারল না।

মামা বলল, “তোমরা একটু খানি তেড়েবেড়ি করলে আমি গুলি করে দেব। আমার কথা বুঝেছ?”

মানুষ দুটি মাথা নাড়ল, মামা বলল, “শুধু মাথা নাড়লে হবে না, মুখে বল, বুঝেছি স্যার। স্যার এর উপর জোর।”

মানুষ দুটি বলল, “বুঝেছি স্যার।” স্যার এর উপর জোর।

মামা এবারে উঠে দাঁড়াল, তারপর বলল, “দুইজন দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াও। হাত উপরে তুলে।”

মানুষ দুইজন হাত উপরে তুলে ঘুরে দাঁড়াল।

 মামা তখন বলল, “টোপন, যা এদের সার্চ কর।”

আমি ইতস্তত করে বললাম, “কেমন করে সার্চ করতে হয় আমি জানি না।”

“প্রথমে পকেটে যা আছে সব বের করে নিয়ে আয়। তারপর শরীরে হাত বুলিয়ে দেখ কোথাও কোনো অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে কিনা। যা।”

আমি তখন পকেটে হাত দিয়ে মানি ব্যাগ, চাবির রিং, টেলিফোন, কাগজপত্র সবকিছু বের করে নিয়ে এলাম। বগলের তলায়, পেটে, পিঠে হাত দিয়ে দেখলাম সেখানে কোনো অস্ত্র লুকানো আছে কি না। কিছু লুকানো নেই।

মামা তখন আবার পিছনে সরে গিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসল। আমিও গিয়ে মামার পাশে বসলাম। মামা পিস্তলটা তাদের দিকে তাক করে রেখে বলল, “এবারে বল দেখি তোমরা কারা। এখানে কেন এসেছ? তোমাদের মতলবটা কী? আমাকে কেন ধরে এনেছ? আমার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, এই বাচ্চা ছেলেটাকে কেন ধরে এনেছ?”

মানুষগুলো কোনো কথা বলল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

মামা ধমক দিয়ে বলল, “কী হলো? কথা বল না কেন?”

মানুষগুলো তবু কোনো কথা বলল না। মামা বলল, “আমি বুঝতে পারছি উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। আমরা চোর, চুরি করতে এসেছি। এইসব কথা বলা কঠিন, কাজটা করে ফেলা সহজ।” মামা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, “তোমরা কী প্রফেশনাল চোর? কোথাও চুরি করা শিখেছ?”

এবারে একজন কথা বলল, অস্পষ্ট স্বরে বলল, “আমরা ইঞ্জিনিয়ার।”

 “কিসের ইঞ্জিনিয়ার?”

“নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। আর আমার পার্টনার মেটালার্জির ইঞ্জিনিয়ার।”

মামা হা হা করে হাসল, বলল, “ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে কী শেখানো হয় কীভাবে অন্যদেশে গিয়ে তাদের সম্পদ চুরি করতে হয়?”

মানুষ দুটি কোনো কথা বলল না, ঠিক তখন আমাদের সামনে মেঝেতে রাখা একটা টেলিফোন শব্দ করে বেজে উঠল।

মামা জিজ্ঞেস করে উঠল, “এটা কার টেলিফোন।

 নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার বলল, “আমার।”

মামা টেলিফোনটা হাত দিয়ে ঠেলে মানুষটার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কে টেলিফোন করেছে?”

মানুষটা উবু হয়ে দেখে বলল, “আমাদের টিম ম্যানেজার।”

 “কোথা থেকে ফোন করছে?”

“উপরের বার থেকে।”

“মদ খাচ্ছে?”

মানুষটা এবারে কোনো উত্তর দিল না। মামা বলল, “তুমি ফোনটা ধরবে। ধরে কী বলবে সেটা আমি বলে দিব। যদি এর বাইরে একটা শব্দ বল আমি তোমার হাঁটুতে গুলি করব। মনে রেখো, মাথায় না, হাঁটুতে। বুঝেছ?”

মানুষটা মাথা নেড়ে জানাল সে বুঝেছে। মামা বলল, “তুমি বলবে, আমরা যে ছোট ছেলেটাকে ধরে এনে বুকে লাথি দিয়েছি তার অবস্থা খুব খারাপ। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। কি করা যায় তার ডিসিশন নিতে হবে সবাই নিচে আস। এক্ষুণি। বুঝেছ?”

মানুষটা কোনো কথা বলল না। মামা ধমক দিয়ে বলল, “বুঝেছ?”

নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার মানুষটা বলল, “বুঝেছি।”

 মামা বলল, “ফোনটা ধরো।”

ফোনটা ধরা গেল না, কারণ বেজে বেজে থেমে গেছে। মামা বলল, “এক্ষুণি আবার ফোন আসার কথা, যদি না আসে তুমি ফোন করবে।”

মানুষটা মাথা নাড়ল। মামা বলল, “যদি আমার কথামতো কথা না বল আমি হাঁটুতে গুলি করব। ডান হাঁটু না বাম হাঁটু সেটা নিয়ে তোমার কোনো পছন্দ আছে? পছন্দ থাকলে এখনই জানিয়ে রাখ।”

মানুষটা চাপা গলায় বলল, “তার প্রয়োজন হবে না।”

মামা বলল, “ফ্যান্টাস্টিক। আমার রক্ত দেখতে ভালো লাগে না।”

সত্যি সত্যি মানুষটার ফোনটা আবার বাজল, এবারে সে ফোনটা তুলে নিয়ে কথা বলতে শুরু করল। মামা যেভাবে বলেছে ঠিক সেভাবে। কথা শেষ করে সে টেলিফোনটা নিচে রাখল। মামা তাকে ফোনটা নিজের দিকে ঠেলে দিতে বলল, মানুষটা ঠেলে দিল। মামা দেখে নিশ্চিত হলো যে লাইন কাটা হয়েছে তখন আবার কথা শুরু করল। বলল, “তোমরা দুইজন এখন দেওয়ালের সাথে গিয়ে দাঁড়াও, আর টোপন, তুই ঘরের মাঝখানে দুই হাত পিছনে রেখে উপরের দিকে মুখ করে শুয়ে থাক। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এরকম অ্যাকটিং করতে পারবি?”

আমি বললাম, “পারব মামা।”

 “গুড। শুরু করে দে।”

আমি দুই হাত বাঁধা সেরকম ভান করে ঘরের মাঝখানে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না সেরকম একটা অনবদ্য অভিনয় শুরু করে দিলাম।

কিছুক্ষণের মাঝেই ঘরের বাইরে অনেকগুলি মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। আমার বুকটা ধ্বক ধ্বক করতে লাগল, মামা কী সত্যিই পারবে এগুলো মানুষকে আটকাতে? যদি না পারে তখন কী হবে? আমি জোর করে ভেতর থেকে চিন্তাটাকে ঠেলে দূর করে দিলাম।

হঠাৎ দরজাটা খুলে গেল। একসাথে বেশ কয়েকজন মানুষ ভিতরে ঢুকল, আমার দিকে তাকাল, একজন নিচু হয়ে আমার বুকের ওপর হাত রাখল, তারপর কী যেন একটা বলল। আমি চোখের কোণা দিয়ে দেখলাম, মামা হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। পিস্তলটা তাক করে চিৎকার করে বলল, “হ্যান্ডস আপ। এভরিবডি।”

মানুষগুলো পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে গেল। সবাই মাথা ঘুরিয়ে মামার দিকে তাকাল। আমিও তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দুই লাফে মামার পাশে এসে দাঁড়ালাম। আমার বুকটা ঢাকের মতো শব্দ করছে। কী হবে? এখন কী হবে?

মামা পরিষ্কার ইংরেজিতে বলল, “আমাকে কেউ খাটো করে দেখ না। আমার পিস্তলে আটটা গুলি আছে, আমি আটজনকে ফেলে দিতে পারব। একটা গুলিও মিস হবে না।”

মানুষগুলো যে যেখানে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। মামা বলল, “কেউ যদি আমার কথা বিশ্বাস না কর তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পার। তোমাদের কারো কাছে যদি কোনো অস্ত্র থাকে সেটা নিয়ে আমাকে আক্রমণ করতে পার।”

আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস হলো না, সত্যি সত্যি মোষের মতো একজন কোথা থেকে একটা বিশাল চাকু বের করে সেটা হাতে নিয়ে বিকট চিৎকার করে মামার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি ভয়ে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করলাম।

আমি একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলাম, সাথে সাথে মানুষের আর্ত চিৎকার। চোখ খুলে দেখি মোষের মতো মানুষটা নিজের হাত ধরে মেঝেতে পড়ে আছে। হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ভয়ংকর চাকুটা তার পাশে পড়ে আছে।

মামা খুবই শান্ত গলায় বলল, “আর কেউ?”

আর কেউ চেষ্টা করল না। মামা বলল, “চমৎকার। এবার তাহলে তোমরা সবাই ঘুরে দেওয়ালের দিকে তাকাও। তারপর দেওয়ালের কাছে গিয়ে দুই হাত ওপরে তুলে দেওয়াল ধরে দাঁড়াও।”

মানুষগুলো যন্ত্রের মতো দেওয়ালের দিকে গিয়ে হাত উঁচু করে দেওয়াল ধরে দাঁড়াল।

মামা বলল, “তোমরা সংখ্যায় সাতজন, যার মাঝে একজন এখন অচল। আমরা দুইজন, তার মাঝে একজন শিশু। তার মাথা ভর্তি পিছলে বুদ্ধি কিন্তু ফুঁ দিলে সে বাতাস উড়ে যাবে। কাজেই আমার ঝুঁকি নেবার উপায় নেই। আমাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। সেজন্য তোমাদের বলছি তোমরা কেউ পিছন দিকে তাকাবে না। যদি কেউ তাকাও আমি সাথে সাথে তার পায়ে গুলি করব। আমার এই ম্যাগাজিনে আটটা বুলেট ছিল। তার মাঝে একটা খরচ হয়েছে, এখনো সাতটা আছে। সবাই কী বুঝেছ?”

কেউ কোনো শব্দ করল না। মামা বলল, “যদি আমার কথা বুঝে থাক মাথা নাড়াও।”

এবারে সবাই মাথা নাড়ল। মামা বলল, “চমৎকার। আমরা আমাদের প্রোগ্রামের একেবারে শেষের দিকে চলে এসেছি।” তারপর হঠাৎ ইংরেজি বন্ধ করে একেবারে পরিষ্কার বাংলায় বলল, “আমাদের মাঝে একজন একেবারে খাঁটি রাজাকার আছে যে বিদেশিদের পা চেটে নিজের দেশের সর্বনাশ করতে রাজি আছে।”

দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি মানুষটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “মাপ করে দেন স্যার। ভুল হয়ে গেছে স্যার।”

মামা বলল, “আমার পিস্তলে সবার জন্য একটা করে গুলি রেখেছি শুধু তোমার জন্য রাখি নাই। আমার ধারণা আমি খালি হাতে তোমার কল্লা ছিঁড়ে নিতে পারব। ঠিক বলেছি কি?”

মানুষটা এবারে ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিল, কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আপনার পায়ে পড়ি স্যার। মাপ করে দেন স্যার।”

“মাপ করার কথা পরে। তোমাকে আমি একটা কাজ দেই।”

“বলেন স্যার। আপনি যেটা বলবেন সেইটাই করব স্যার। খোদার কসম স্যার।”

 “খোদাকে টানাটানি করো না, তোমার মতন রাজাকারদের জন্য খোদার কোনো সময় নাই।”

“কী করতে হবে বলেন স্যার।”

এইখানে যতগুলো মানুষ হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে তাদের সবার হাত এই দড়ি দিয়ে বাঁধবে। একসাথে কোরবানী ঈদের সময় গরু যেভাবে নেয় সেইভাবে।”

মানুষটা মনে হয় বুঝতে পারল না, মামা ধমক দিল, “বুঝেছ?”

 “বুঝেছি।”

“নাও শুরু কর। টোপন তুই সাহায্য কর। শুধু গুলি খাওয়া মানুষটাকে বাধার দরকার নাই। তাকে বাইরে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে।”

মামা দড়িটা ছুঁড়ে দিল, মানুষটা তখন দড়িটা নিয়ে বাঁধা শুরু করল। দড়ি দিয়ে একজনের বাম হাত তারপর ডান হাত তারপর পরের জনের বাম হাত তারপর পরেরজনের ডান হাত এইভাবে। সবাইকে এক দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হলো। এরা ইচ্ছা করলেই এই বাঁধন খুলে ফেলতে পারবে, কিন্তু এটা করতে একটু সময় লাগবে, ওই বাড়তি সময়টা পাওয়াই মামার উদ্দেশ্য।

দড়ি দিয়ে বাঁধা শেষ হবার পর মামা বলল, “এবারে সবার ট্রাউজার খুলে নাও।”

বাঙালি মানুষটা থতমত খেয়ে বলল, “কী খুলে নেব?”

 “ট্রাউজার। মানে প্যান্ট।”

 “প্যান্ট?”

 “হ্যাঁ।”

“মানে ন্যাংটা করে ফেলব?”

“পুরোপুরি ন্যাংটা না, ভেতরে নিশ্চয়ই আন্ডার প্যান্ট জাঙ্গিয়া এইসব আছে।”

“কেন খুলে নিতে চাচ্ছেন স্যার?”

“তাহলে ওরা আমার পিছু পিছু আসতে একটু সংকোচ বোধ করবে। এটা খুবই স্ট্যান্ডার্ড টেকনিক। জাঙ্গিয়া পরে মানুষজন পাবলিক জায়গায় যেতে চায় না।”

“এরা একটু বেহায়া কিসিমের স্যার।”

 “তবুও চেষ্টা করে দেখি।”

কাজেই বাঙালি মানুষটা সবার ট্রাউজার খুলে নিল। দেখা গেল একজনের জাঙ্গিয়া খুবই রঙিন, লাল নীল ফুল আঁকা। এরকম জাঙ্গিয়া হয় আমি তাই জানতাম না। মামা জাঙ্গিয়াটার খুব প্রশংসা করল কিন্তু সেই প্রশংসা শুনে মানুষটা খুব খুশি হয়েছে বলে মনে হলো না। মামা তারপর সবার প্যান্টের পকেট থেকে সব কিছু বের করে একত্র করল। সেখানে অনেক কিছু পাওয়া গেল, সিগারেটের লাইটার, সিগারেটের প্যাকেট, বিদেশি–যেটার গোড়া আমি বাঁচিয়ে রেখেছি। একজনের পকেটে একটা চ্যাপ্টা বোতল পাওয়া গেল, মামা বলল সেটা নাকি মদের বোতল। মামা ~ শুধু সিগারেটের লাইটারটা নিজের পকেটে ভরে নিল। তারপর সবাইকে ইংরেজিতে বলল, “আমি তোমাদের পকেটের ভিতর যা আছে সেগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যাব। তবে তোমাদের ট্রাউজারগুলোর মায়া ছেড়ে দাও। সেগুলো তোমরা ফেরত পাবে না।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “প্যান্টগুলো কী করবে মামা।”

 মামা বলল, “একটু পরেই দেখবি।”

মামা ঘরটা ভালো করে দেখে সন্তুষ্টির মতো একটা শব্দ করল। তারপর বাঙালি মানুষটাকে বলল, “এই গুলি খাওয়া মানুষটাকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে যাও। আমরা এখন যাব।”

আমি বললাম, “মামা।”

“কী হলো?”

“যে মানুষটা আমাকে লাথি দিয়েছে তাকে আমি একটা লাথি দিয়ে যেতে পারি?”

মামা মাথা নাড়ল, বলল, “উঁহু সেলফ ডিফেন্সের জন্য ঠিক আছে কিন্তু বন্দী মানুষের গায়ে হাত তোলা যাবে না। তাছাড়া আমাদের কালচারে ছোটরা বড় মানুষের গায়ে হাত তুলে না।”

“তাহলে তুমি তোমার পিস্তলটা দিয়ে মানুষটাকে একটু ভয় দেখাবে? প্লিজ।”

“ঠিক আছে সেটা করা যেতে পারে।” বলে মামা ইংরেজিতে বলল, “এই যে লাল মুখের মানুষ, তুমি এই ছোট ছেলেটাকে লাথি দিয়েছিলে, কাজটা ঠিক কর নাই।”

লাল মুখের মানুষটা বলল, “আমি দুঃখিত। কাজটা আসলেই ঠিক হয় নাই।”

“আমার গায়ে যে হাত তুলেছে সে নিজের দোষে শাস্তি পেয়ে গেছে, গুলি খেয়ে পড়ে আছে। তোমার কোনো শাস্তি হয় নাই। তোমাকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার।”

লাল মুখের মানুষটা আবার বলল, “প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

“ছোট একটা এক্সপেরিমেন্ট করি তোমাকে দিয়ে। আমার হাতের নিশানা খুব ভালো। মনে হয় এখনো ভালোই আছে, তোমার উপর একটু প্র্যাকটিস করি?”

মানুষটা বলল, “না, প্লিজ না।”

মামা আমাকে চ্যাপ্টা মদের বোতলটা দিয়ে বলল, “যা এই বোতলটা এই মানুষটার মাথায় বসিয়ে আয়।”

আমি গিয়ে বোতলটা মাথার উপর বসিয়ে দিলাম। মামা মানুষটাকে বলল, “তুমি নড়বে না। একেবারেই নড়বে না। আমি গুলি করে এই বোতলটা ফুটো করে দেব।”

মানুষটা থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “না, প্লিজ না। এটা খুব বিপদজনক।”

“সেজন্যই করছি। তুমি একদম নড়বে না। রেডি! ওয়ান টু–”

আমি বললাম, “মামা থাক, থাক, ছেড়ে দাও। প্লিজ।”

 “ছেড়ে দেব?”

 “হ্যাঁ।”

 “কেন? তুই না বললি শাস্তি দিতে।”

 “শাস্তি হয়ে গেছে মামা। দেখ, সে ভয়ে হিস্যু করে দিয়েছে।”

সত্যি সত্যি তার পায়ের নিচে ঝরঝর করে হিস্যু পড়ছে। মামা মাথা নেড়ে বলল, “যা মদের বোতলটা নিয়ে আয়, আমাদের অন্য কাজে লাগবে।”

“কী কাজে লাগবে?”

 “দেখবি একটু পরেই।”

আমরা ঠিক যখন বের হয়ে আসছি তখন ছয়জন মানুষের একজন ভারী গলায় বলল, “আমি কী একটা বিষয় জানতে পারি?”

“কী বিষয়?”

“তুমি এখানে এই পিস্তলটা কোথায় পেয়েছ?”

মামা হা হা করে হাসল, তারপর বলল, “আমার এই পুচকে ভাগ্নে এটা আমার জন্য নিয়ে এসেছে। তার শরীরে বিশেষ কিছু নাই কিন্তু মাথার ভিতরে ডাবল সাইজের মগজ।”

তারপর আমরা বের হয়ে এলাম। প্রথমে গুলি খাওয়া মানুষটাকে নিয়ে বাঙালি মানুষটা। তারপর মামা, হাতে পিস্তল নিয়ে খুবই সতর্ক। সবার পিছনে আমি। আমার ঘাড়ে ছয়টা বিদেশির ছয়টা প্যান্ট।

বের হয়েই মামা বাঙালি মানুষটাকে বলল, “এই গুলি খাওয়া মানুষটাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এক্ষুণি নিয়ে যাও।”

বাঙালি মানুষটা বলল, “জ্বি স্যার। নিয়ে যাচ্ছি স্যার।”

মামা বলল, “খবরদার আর কোনো দুই নম্বুরী কাজ করতে যেও না।”

মানুষটা বলল, “না স্যার। করব না স্যার। খোদার কসম।”

মামা বিরক্ত হয়ে বলল, “খবরদার খোদাকে নিয়ে টানাটানি করো না। যাও বের হও।” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কোনদিকে বের হতে হবে তুই জানিস?”

“হ্যাঁ মামা। খুঁজে বের করে ফেলব।” বলে আমি সামনে হাঁটতে থাকি।”

মামা হাঁটতে হাঁটতে একটু পরপর উপরে ছাদের দিকে তাকাচ্ছিল। হঠাৎ উপরে কিছু একটা দেখে মামা দাঁড়িয়ে গেল। আমি উপরে তাকালাম, সেখানে গোল প্লাস্টিকের কিছু একটা লাগানো। আমি জিজ্ঞেস করলাম “এখানে এটা কী?”

মামা বলল, ‘স্মোক ডিটেক্টর।”

স্মোক ডিটেক্টরের ঠিক নিচে প্যান্টগুলো রেখে মামা সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিল। মদের বোতল থেকে সেখানে একটু মদ ঢেলে দেবার পর সেটা দপ করে জ্বলে উঠল।

আগুনটা খুব ভালো করে ধরানো গেল না কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হলো না। প্রচুর ধোয়া হলো এবং সেই ধোঁয়াতে স্মোক ডিটেক্টরটা থেকে বিকট স্বরে এলার্ম বাজতে থাকে। শুধু যে এই স্মোকে ডিটেক্টর থেকে এলার্ম বাজছে তা নয়, বিকট একটা এলার্ম পুরো মনি কাঞ্চনে বাজতে শুরু করেছে।

মামা দাঁত বের করে হেসে বলল, “পুরো রিসোর্টের সবাই এখন জেগে উঠবে। শুধু আমরা কেন মজা দেখব, সবাই দেখুক।”

মামা ঠিক কোন জিনিসটাকে মজা ভাবছে আমি জানি না, কিন্তু আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।

আমি যখন গোপন সিঁড়িটা খুঁজে বেড়াচ্ছি তখন হঠাৎ একটা মেয়ের গলার চিৎকার শুনতে পেলাম, “টোপন!”

তাকিয়ে দেখি করিডোরের শেষ মাথায় ডোরিন দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনে মাহবুব, টনি, ডোরিনের বাবা এবং অনেকগুলো পুলিশ। এরা আগের পুলিশ না, অন্য পুলিশ! কারণ এই পুলিশের পিছনে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা একজন মানুষ যাকে আমরা একসিডেন্ট থেকে বাঁচিয়েছিলাম। তার মানে মাহবুব ফোন করে তাকে সত্যি খবর দিতে পেরেছে।

কী চমৎকার!

.

শেষ কথা

এরপর যা হওয়ার কথা এবং যেভাবে হওয়ার কথা সবকিছু সেভাবে হলো। মামা গোপন ল্যাবরেটরির করিডোরে বিদেশিগুলোর প্যান্টগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর পুরো রিসোর্টে এলার্ম বাজতে লাগল এবং প্রায় ভোর রাতে সবাই লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে এলো, চারিদিকে বিশাল হই চই এবং মনে হলো একটা মেলা বসেছে। সবাই জানতে চাইছিল কী হয়েছে এবং কীভাবে কীভাবে জানি খবর রটে গেল যে বিদেশি ডাকাত ধরা পড়েছে। তখন আর কেউ নিজেদের রুমে ফিরে যায় না, বিদেশি ডাকাত দেখার জন্য দাঁড়িয়ে রইল। শেষ পর্যন্ত যখন হাত বাঁধা অবস্থায় ছয়জন বিদেশিকে আমাদের গোপন সিঁড়ি দিয়ে বের করে আনা হলো তখন পাবলিকের ভেতর হুলুস্থুল পরে গেল। এই বেহায়া মানুষগুলো কেন জাঙিয়া পরে ঘুরে বেড়ায় সেটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা শুরু হয়ে গেল। সবাই তাদের সাথে সেলফি তুলতে চায়, পাবলিকদের কন্ট্রোল করতে পুলিশের অনেক কষ্ট করতে হলো।

যে বাঙালি মানুষটা গুলি খাওয়া মাথা মোটা মানুষটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সে বিদেশিটাকে লবিতে পৌঁছে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তাকে আর কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যায় নি। গুলি খাওয়া মানুষটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

আমাকে আর মামাকেও পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে নিতে চেয়েছিল আমরা দুজনের কেউই রাজি হই নাই। ডাক্তার তখন রিসোর্টের লবিতে পরীক্ষা করে জানিয়ে দিল আঘাত সেরকম গুরুতর নয়, দুই চারদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

খবর পেয়ে মিঠুন আর আপুকে নিয়ে আব্বু আম্মু তখনই রওনা দিয়ে দিয়েছিল, পরের দিন সকালে যখন আমাদের সাথে দেখা হলো আমাকে ধরে আম্মু যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল যে দেখে মনে হতে লাগল যে আমি আসলে মারা গেছি। যে আপু সারা জীবন আমাকে জ্বালাতন করে গিয়েছে সে পর্যন্ত মামার কাছে, মাহবুব, ডোরিন আর টনির কাছে আমার গল্প শুনে প্রায় কান্না কান্না হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখল। মিঠুন বার বার আমার মুখে পুরো গল্পটা শুনতে চাইল এবং বানিয়ে বানিয়ে আমাকে আরো অনেক কিছু যোগ করে পুরো গল্পটা বলতে হলো। পাহাড়ের মতো মানুষটার অসুবিধা জায়গায় লাথি দেওয়ার পর সে কীভাবে কোঁক করে শব্দ করে উঠেছিল এবং তার চোখ উল্টে গিয়েছিল মিঠুনকে অনেকবার অভিনয় করে দেখাতে হয়েছিল। তবে শুধু মিঠুন না অন্য সবাইকে যে অংশটা বারবার বলতে হয়েছে সেটা হচ্ছে ভয়ংকর বিদেশিটা যখন মারাত্মক একটা ছোরা নিয়ে মামার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আর মামা বিদ্যুৎবেগে তার হাতে গুলি করে তাকে নিচে ফেলে দিয়েছিল। পুরো সময়টাতে ভয়ে আমার পেটের ভাত চাউল হয়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল কিন্তু আমি সেটা একবারও কাউকে বুঝতে দিলাম না। যখনই কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি ভয় পেয়েছিলাম কিনা তখনই আমি হা হা করে হেসে বললাম, ভয়? ভয় পাব কেন? ভয় পাওয়ার কী আছে? শরীরে যখন এড্রেনেলিন এসে যায় তখন বুকে ভয় ডর থাকে না। (এড্রেনেলিন কী জিনিস আমি জানি না, মামাকে একবার শব্দটা ব্যবহার করতে শুনেছি এরপর থেকে আমি যখন তখন এই শব্দটা ব্যবহার করি!)

তবে মামা সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করেছেন আমাদের দুর্ধর্ষ টিমটার। আমি, মাহবুব, ডোরিন আর টনি। টনি প্রথম দিকে আমাদের ধারে কাছে আসতে চাইত না সেটা সে এখন আর ভুলেও কাউকে বলে না। (আমরা সেইজন্য কিছু মনে করি না)। থ্রি স্টার সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যে অনেক বড় ইউরিনেয়াম রিজার্ভ আছে সেই খবরটা খুব যত্ন করে গোপন রাখা হলো। তবে মামার কাছে শুনেছি সরকার থ্রি স্টার সিমেন্ট কোম্পানির লিজ বাতিল করে পুরো জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। মামার মতে আমাদের কাজকর্মের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছিল একসিডেন্টে আহত পুলিশের এসপিকে ফোন করে দেওয়া। হাসপাতাল থেকে মাত্র বাসায় গিয়েছিলেন কিন্তু আমাদের ফোন পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ নিয়ে চলে আসার কারণে সব রকম ঝামেলা সামলে নেয়া হয়েছে। বিদেশি মানুষগুলো পরেরদিনই ছাড়া পেয়ে নিজের দেশে চলে গিয়েছে (তা না হলে নাকি যুদ্ধ লেগে যেত!) কিন্তু পুরো ষড়যন্ত্রটা থেমে গিয়েছে।

.

কেউ যেন মনে না করে পুরো ঘটনাটার মাঝে সবই ভালো। এই ঘটনার মাঝে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বেইজ্জতীটা ঘটেছে, যদিও সেটা জানি শুধু আমি আর মাত্র একজন মানুষ! জিনিসটা ঘটেছে এভাবে।

আমি যখন গোপন সিঁড়ি দিয়ে মনি কাঞ্চনের নিচে গোপনে ল্যাবরেটরিতে যাচ্ছি তখন আমি মাহবুবের হাতে আমার ব্যাকপেকটা দিয়ে বলেছিলাম সেখানে আমার ডাইরির শেষ পৃষ্ঠার পুলিশ অফিসারের কার্ডটা স্কচটেপ দিয়ে লাগানো ছিল। আমি যদি ফিরে না আসি সে যেন এই মানুষটাকে ফোন করে। কিন্তু আমি মাহবুবকে দিয়ে খোদার নামে কসম খাইয়ে রেখেছিলাম সে যেন কোনোভাবেই আমার ডাইরিটা না পড়ে।

মাহবুব নিজে ফোনটা করে নাই, ডাইরিটা দিয়েছিল ডোরিনকে ফোন করার জন্য। কিন্তু আমি যেরকম মাহবুবকে কসম খাইয়ে রেখেছিলাম যে ডাইরিটা না পড়ে ডোরিনকে সেরকম কসম খাওয়ানো হয় নাই তাই ডোরিন পুরো ডাইরিটা পড়ে ফেলেছে। (শুরুতে নানানরকম ভয় দেখানো হয়েছে। অভিশাপ দেয়া আছে কিন্তু ডোরিন সেগুলোকে কোনো পাত্তা দেয় নাই, কি আশ্চর্য!)।

যাই হোক এমনিতে একজনের ডাইরি পড়ে ফেললে সেরকম ভয়ংকর কিছু হওয়ার কথা না কিন্তু আমার কেসটা অন্যরকম। মাত্র সেদিন রাত জেগে আমি এখানকার সব ঘটনা লিখেছি তখন ডোরিনকে নিয়েও একটা প্যারাগ্রাফ লিখে ফেলেছিলাম। ডোরিন সেইটাও পড়ে ফেলেছে, কী সর্বনাশ!

আমি কি লিখেছিলাম সেটা যদি বলি তাহলে সবাই বুঝতে পারবে কেন সেটা সর্বনাশ। আমি লিখেছিলাম: ‘আমি এতোদিন ধরে ঠিক করে রেখেছিলাম জীবনেও বিয়ে করব না। কিন্তু কয়দিন থেকে মনে হচ্ছে বড় হলে বিয়ে করেও ফেলতে পারি। তবে যে কোনো নেকু টাইপের ঘ্যানঘ্যানে মেয়েকে বিয়ে করব না, শুধু যদি ডোরিন রাজি থাকে তাহলে। ডোরিন মোটেও নেকু টাইপের না, খুবই হাসিখুশি এবং মাথায় বুদ্ধিও আছে। তবে বড় হলে কী অবস্থা হবে কে জানে। মানুষ ছোট থাকতে একরকম থাকে বড় হলে হয়ে যায় অন্যরকম।…

আমার এই ভয়ংকর লেখাটা ডোরিন পড়ে ফেলেছে। আমি আর মামা যখন গোপন ল্যাবরেটরি জ্বালিয়ে দিয়ে বের হয়ে এসেছি, ভিতরে কী হয়েছে সবকিছু সবাইকে বলছি তখন এক সময় ডোরিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “টোপন তুমি আমাকে একটা গিফট দেবে?”

আমি বললাম, “কী গিফট?”

 ডোরিন বলল, “তোমার ডাইরিটা।”

 আমি বললাম, “কেন?”

ডোরিন বলল, “আমি পড়েছি। খুবই ইন্টারেস্টিং!” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। এর আগে আমি কোনোদিন কোনো মেয়েকে চোখ টিপতে দেখি নাই। কী ভয়ংকর।

যখন আশেপাশে কেউ নাই তখন গলা নামিয়ে বলল, “আমি তোমার থেকে এক ক্লাস উপরে পড়ি, তার মানে তুমি আমার থেকে এক বছর ছোট।”

আমি বললাম, “ইয়ে মানে কিন্তু

“আমার থেকে এক বছরের ছোট একজনকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু–”

আমি কোনোমতে বললাম, “কিন্তু—“

“বিয়ের পর যদি তুমি কোনোদিন শব্দ করে হাঁচি দাও সাথে সাথে ডিভোর্স।”

আমি বললাম, “অ্যাঁ অ্যাঁ–”

ডোরিন তখন–

.

থাক, ডোরিন তখন কী করেছে সেটা আর না বললাম। আমার জন্য খুবই বেইজ্জতী। চরম বেইজ্জতী!

5 Comments
Collapse Comments

So good….

Onek bhalo.

Oh what a book.Thank you Mohammod jafor Iqbal sir.

Ending Ta Onek Valo Lagce!

দারুণ লেগেছে! পুরোটা adventure. আমি এটা পড়ে খুব হেসেছি। দারুণ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *