1 of 2

সজাগ হও, হে তারুণ্য!

সজাগ হও, হে তারুণ্য!

আমার রিসার্চ গ্রুপে চীন থেকে একটি ছেলে এসেছে। তার নাম জিপেং লু। বয়স ২২ বছর। ছেলেটা পড়ে সিচুয়ান ইউনিভার্সিটিতে (Sichuan University)। চীনের খ্যাতনামা ইউনিভার্সিটি সেটি। সে এসেছে আন্ডারগ্রেড রিসার্চ করতে। ছয় মাস কাজ করবে। ইউপেনের (UPenn) মতো একটি আইভিলিগ স্কুলে কাজ করে তার ভাবনার জগৎটাই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এখান থেকে ফিরে গিয়ে সে স্নাতক ডিগ্রি পাবে। তার লক্ষ্য, আমেরিকায় গ্র্যাজুয়েট স্টাডি করা। আসার আগেই সব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে সে। আমেরিকার ১০টা স্কুলে। আবেদন করেছিল, তন্মধ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির ডাক পেয়েছে।

এই ছেলেটি যখন পিএইচডি শেষ করবে, তখন তার বয়স হবে ২৬ কী ২৭। তার সামনে পড়ে থাকবে একটি সম্ভাবনাময় জীবন। সে তার কালকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তার দূরদর্শিতা এবং আগাম পরিকল্পনা আমাকে। বিস্মিত করেছে। ২২ বছরের একটি তরুণের যে পরিপক্কতা ও বোধগম্যতা, তাতে অভিভূত না হয়ে উপায় নেই। তার সঙ্গে আলোচনায় বুঝতে পারলাম, চীন দেশের লাখো ছেলেমেয়ে এমন দূরদর্শী। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সব প্রস্তুতি তারা শুরু করেন ইউনিভার্সিটির শুরু থেকেই। তাঁদের বয়স তখন ১৮ কী ১৯! তার কথামতে, চাইনিজরা পরীক্ষায় খুব ভালো স্কোর তুলতে পারেন। আমেরিকান ছেলেমেয়েরা যেখানে ৬০-৭০ ভাগ স্কোর পান, তাঁরা পান ৯০ থেকে ৯৫। তাই ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য যেসব টেস্ট প্রয়োজন হয়, সেগুলোতে তার ভালো স্কোর তুলতে পারেন।

আমাদের দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে ২০-২২ বছর বয়সে গবেষণার কথাই জানেন না। তাদের বলাও হয় না। বোঝানো হয় না। অনেকে জানেনই না, সারা দুনিয়ায় তরুণেরা গড়ে ২৬-২৭ এরমধ্যে পিএইচডি শেষ করেন। সে বয়সে আমাদের দেশের বহু শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করতে পারেন না। সেশনজট নামক এক জঘন্য বিষয় জীবনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়।

তরুণদের বলছি, বর্তমান পৃথিবীর প্রতিযোগিতাটা আন্তর্জাতিক। প্রস্তুতিটা তাই খুবই কঠিন। দেশের সীমানা পেরিয়ে বের হলেই বুঝবে, কত কত জাঁদরেল ছেলেমেয়ে আঁকে ঝকে সারা পৃথিবী থেকে জড়ো হয়। সেখানে টিকে থাকাটা অনেক বড় পরীক্ষা। ইউরোপ-আমেরিকার যে জায়গাটার জন্য তুমি লড়ছ, সেটার জন্য শুধু চীন দেশের ১০টি স্টুডেন্ট এবং ভারতের ৮ জন লড়ছে। কারণ তারা সংখ্যায় আমাদের চেয়ে যথাক্রমে ১০ ও ৮ গুণ বেশি। তাদের সঙ্গে আমাদের কিন্তু লড়তেই হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অর্থের জোর নেই। রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ নেই। কোটার সুবিধা নেই। শুধু মেধার জোরেই টিকে থাকতে হয়।

যে ছেলেমেয়েগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, তাদের বোধোদয় দরকার। তুচ্ছ মানুষের পেছনে স্লোগান দিয়ে। যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় নষ্ট না করে নিজের স্বপ্ন তাড়া করা অনেক উত্তম। শ্রেষ্ঠতম কাজ! দলবাজি, চাঁদাবাজি আর নেতার পদলেহনের রাজনীতি, মাদকাসক্তি এগুলো থেকে বেরিয়ে এলে জীবন নিয়ে প্রত্যয়ী হও। ইন্দ্রজিৎ হওয়ার স্বপনে বিভোর থাকো।

স্রোতের বাধা ঠেলে মাছ উজানের দিকেই যায়। ছুটে চলে সামনে। মানুষের জীবনেও বাধা চিরন্তন। দেশের অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও, তোমার থেমে থাকা চলবে না। সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে জীবনের সময়টুকু পার হবে না। মানুষ। শুধু বিজয়ীর কথা শুনতে চায়। তোমার কী নেই, সেটা শুনতে কেউ বসে নেই। যা নেই, তা নেই। যা আছে, তাই দিয়েই করো সংগ্রাম। পৃথিবীর প্রতিযোগিতায় লড়াইয়ের জন্য অবতীর্ণ হতেই হবে। যুদ্ধে জয়ী হতে হলে, প্রস্তুতিটা হতে হয় কঠিন। সুতরাং সজাগ হতে হবে সঠিক সময়ে।