1 of 2

দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়

দাঁড়াতে হলে শিখতে হয়

মোনা হোসাইনি হলেন ইরানের শিরাজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। তিনি রসায়নের গবেষক। আমার ল্যাবে এসেছেন খণ্ডকালীন গবেষণা করতে। ইরানের সার্বিক শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা হয় মাঝেমধ্যে। আমি যখনই কোনো দেশের গবেষকের সঙ্গে গল্প করি, তখনই তাদের দেশের শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে গভীরভাবে জানতে চাই। সাত-আট বছর ধরে এই কাজটিই করেছি।

শিরাজ ইউনিভার্সিটি ইরানের প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান। ইরান ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল। তবে সে দেশ ইউরোপ-আমেরিকার শিক্ষা ও গবেষণার সংস্কৃতি ঠিকই ধার করে নিয়েছে। আমরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে বার্গার নিই, পোশাক-সংস্কৃতি নিই, প্রযুক্তি নিই কিন্তু শিক্ষার সংস্কৃতি নিই না। পশ্চিমের মানুষ যে পরিশ্রমী, নীতিপরায়ণ ও কর্মতৎপর, সেটা অনুসরণ করি না। পশ্চিমের মানুষ যে কর্মজীবনে সততা নিয়ে চলে, সেটা ধার। করতে জানি না।

প্রফেসর মোনা বললেন, তার বিভাগে তার চেয়ে কম বয়সের প্রফেসর আছেন। আবার তার চেয়ে বয়সে সিনিয়র লোকও আছেন, যিনি প্রফেসর হতে পারেননি। পদোন্নতির জন্য তাদের তিনটি বিষয় বেঁধে দেওয়া হয়েছে—গবেষণাপত্রের (Publications) সংখ্যা, অর্জিত ফান্ড/গ্রান্টের পরিমাণ এবং শিক্ষকতায় সাফল্য। শুধু পাবলিকেশন করলে সেগুলোর মান, মৌলিকত্ব ইত্যাদি বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য আছে শক্ত কমিটি। একজন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানলাম। সবকিছু মিলিয়ে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পুরোপুরি আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসরণ করে চলে। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, ইরানের শিক্ষাব্যবস্থাও দিনে দিনে কত দূর চলে যাচ্ছে! দশম-দ্বাদ শতকের বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে ওরা কী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ!

জেনে রাখুন, ইরানের ভূখণ্ডে আমেরিকার কোনো এম্বাসি নেই। ইরান-আমেরিকার সম্পর্ক হলো দা-কুমড়া। তবুও ইরান থেকে হাজার হাজার তরুণ গবেষক আমেরিকায় আসেন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের আমেরিকান এম্বাসিতে গিয়ে ওরা। আবেদন করে। ইরান সরকারও তার দেশের গবেষকদের পাঠায়। আমেরিকার সঙ্গে তাদের শত্রুতা হলেও, ভালো বিষয়গুলো ধার করতে ওরা কার্পণ্য করেনি। ওরা জানে, শত্রুর কাছ থেকেও ভালো কিছু শিখতে হয়!

আমার দেশের ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে মোনা জানতে চাইল। খুব দুঃখ নিয়ে আমাকে কিছু উত্তর দিতে হয়েছে। আমার কথা শুনে সে শুধু সো স্যাড, ভেরি আনফরচুনেট ইত্যাদি উচ্চারণ করছিল! বাস্তবতা এড়ানোর সাধ্য ছিল না আমার।

দূর পশ্চিম থেকে যদি শিখতে না চাই, প্রাচ্যের চীন, ইরান, ভারত এদের কাছ থেকেও কি শেখা যায় না! আমরা ভারত থেকে চাল-ডাল, গরু আমদানি করি। ভারত নিয়ে কত রাজনীতি করি। অথচ ভারতের শিক্ষা-গবেষণার অগ্রগতি যদি আমাদের ভেতর একটু নাড়া দিত! ভারতের শিক্ষা ও গবেষণার সার্বিক মান আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে–যদি আমাদের একটু হুশ হতো!