1 of 2

ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো

ফড়িংয়ের চোখ তৈরি করো

ফড়িংয়ের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। মাশরাফির যে বলটাকে আমাদের কাছে অনেক গতিশীল মনে হয়, একটা ফড়িংয়ের কাছে সেটা অন্তত তিন-চার ভাগ ধীরগতির। অর্থাৎ মানুষের যদি ফড়িংয়ের মতো দৃষ্টিশক্তি থাকত, তাহলে মাশরাফিকে আরও তিন-চার গুণ গতিতে বল করতে হতো। তা না হলে প্রতি বলে, দেখে শুনে চার-ছক্কা মারতে পারতেন। ব্যাটসম্যান। কী সাংঘাতিক কাণ্ড হতো তখন! মানুষ সেকেন্ডে। মাত্র ৬০টি মুভেবল ইমেজ ধারণ (Capture) করতে পারে। ফড়িং পারে প্রায় ২০০টি ইমেজ ক্যাপচার করতে। ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা ফড়িংয়ের এই ক্ষমতাটাকে ক্যামেরায় প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন।

ফড়িংয়ের চোখে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ল্যান্স বসানো থাকে, যেগুলোকে বলা হয় ওমাটিডিয়াম। একেকটা ওমাটিডিয়াম আমাদের একটা চোখের মতো। ফড়িংয়ের দৃষ্টিশক্তি তাই খুবই প্রখর ও উন্নত। মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফড়িংয়ের মতো প্রখর না। হলেও মানুষ তার ভাবনায় অনন্য। মানুষ তার চিন্তাশক্তিতে অসাধারণ। যে মানুষ যত বেশি কল্পনা করতে পারে, নতুন নতুন। বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে, জগতে তার দৃষ্টিশক্তি ততই প্রখর। দুনিয়াতে পথচলা তার জন্য ততই সহজ।

সম্প্রতি এক গবেষক এসে আমাকে বললেন, তিনি লজ্জাবতী নিয়ে গবেষণা করেন। শুনে আমি থ! লজ্জাবতী নিয়ে খেলেছি, কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা করা যায়, কস্মিনকালেও ভাবিনি। লজ্জাবতীর পাতা ছুঁলে চুপসে যায়। কেন চুপসে যায়? কারণ সে গাছে নির্দিষ্ট কোনো জিন (Gene) আছে, যেটা তার এই চুপসে যাওয়ার কাজটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। জীবজগতের প্রতিটি উদ্ভিদ এ প্রাণীর কোষে কোষে এমন নির্দিষ্ট জিন থাকে। এই জিনগুলো। জীবের যত বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলো হাজার হাজার বছর ধরে বহন করে। সারা ভারতবর্ষের মানুষ দেখতে প্রায় একই–কারণ। আমাদের যে জিন এই চেহারা ও গঠনের জন্যে দায়ী, সেটা হাজার হাজার বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সবই বদলেছে, জিন বদলায়নি।

সারা দুনিয়ায় এই জিন নিয়ে গবেষণা হয়। এগুলোকে কীভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করে পরিবর্তন করা যায়, নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা যায়, সেসব নিয়ে কাজ হচ্ছে। বায়োটেকনোলজি নামে একটা গবেষণা এরিয়া আগামী ৫০ বছরে দুনিয়ার শীর্ষে চলে যাবে। যা-ই হোক, গবেষকেরা চেষ্টা করছেন কী করে লজ্জাবতীর চুপসে যাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী জিনকে স্টাডি করে অন্য উদ্ভিদের শরীরে প্রবেশ করানো যায়! আমাদের দেশে ঝড়ের দিনে। আমগাছগুলোর কথাই চিন্তা করুন। ঝড়ের সময় সে গাছগুলোর ডালপালা ভাঙে, কারণ প্রচণ্ড ঝড়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে না। আমগাছের যদি লজ্জাবতীর মতো গুণ থাকত, তাহলে বৃষ্টি বা বাতাসের স্পর্শে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারত। ঝড়ের ধকল তাকে সইতে হতো না। ৫০ বছর পর যদি কোথাও এমন। আমগাছ দেখেন, যে গাছ স্পর্শ করলেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তাহলে অবাক হবেন না। ভাববেন না, এ কোনো জিন-পিরর। কাজ। এ আসলে জিনের ইঞ্জিনিয়ারিং। মানুষের মগজের কাজ। মানুষের ভাবনার ফসল

সারা দুনিয়ার তরুণেরা এমন সব অসাধারণ বিষয় নিয়ে ভাবছেন। সেই ভাবনাকে প্রখর করার জন্য ইন্টারনেটকে কাজে লাগাচ্ছেন। তরুণদের অনুরোধ করে বলব, সারা দিন শুধু কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়ে পড়ে থেকো না। তোতাপাখির মতো সারা দুনিয়ার রাজধানী আর মুদ্রার নাম মুখস্থ করে যৌবনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়টাকে ভোঁতা করে দিয়ো না। গণ্ডির বাইরে এসে ভাবো। দুনিয়ার চলমান সময় ও ভবিষ্যৎকে দেখার চেষ্টা করো। ভাবনাকে প্রখর করো। নতুন নতুন জগৎ নিয়ে জানো। প্রশ্ন। করো! একেকটা নতুন নতুন ভাবনা, একেকটা ওমাটিডিয়ামের। মতো। ফড়িং চাইলেই ওমাটিডিয়াম বাড়াতে পারে না। মানুষ। চাইলেই পারে। আর সেই ভাবনার চোখ বা ওমাটিডিয়াম দিয়ে পৃথিবীর চলার পথকে মসৃণ করো। মানুষ যে ভাবনার শক্তি নিয়ে। এসেছে, সেটা অদ্বিতীয়, অনন্য, অসাধারণ!