শেষ – ২০

২০

শিহাব তার পাণ্ডুলিপি রফিক সাহেবকে দেয়। পাণ্ডুলিপি হাতে পাবার দুই সপ্তাহ পর রফিক সাহেব একদিন মাথার ভেতরে আশ্চর্য রকমের কৌতূহল নিয়ে নিতুদের বনানীর বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। বনানীর বাসার ঠিকানা তিনি পেয়েছেন হাসানের কাছ থেকে।

কারো কথা অনেক শুনলে কল্পনায় তার একটা ছবি তৈরি হয়। রফিক সাহেব সেই ছবির সাথে নিতুকে মিলিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন। তাকে দেখে মনে হলো, সে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি।

ঠিক এমন সময় একজন পোস্টম্যান কাঁধের থলে থেকে একটা চিঠি বের করে বললেন, “এখানটায় স্বাক্ষর করুন।”

নিতু প্রাপকের ঠিকানায় চোখ আওড়ে কেমন যেন অস্থির চিত্তে এক নিমিষে খাম ছিঁড়ে পড়তে শুরু করে। চিঠি এসেছে বৃদ্ধাশ্রম থেকে। কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন, রুদ্রের মা।

রফিক সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, “আপনি নিতু?”

“জি।”

“আপনার সাথে একটু আলাপ ছিল।”

নিতু চোখ সরু করে তাকায়। তীক্ষ্ণ ফোঁটার মতো সেই চাহনি থেকে আলাপের এক পর্যায়ে রফিক সাহেব ভেতরে এসে বসলেন। দুজন অচেনা মানুষের শব্দ তরঙ্গ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে এমন একটা মুহূর্তের জন্ম হয়; নষ্ট দেয়াল ঘড়ির মতো, ঈথারে মিলিয়ে যায় বস্তুগত জীবন।

একটা দলছুট পাখি ডানায় আগুন নিয়ে উড়ে বেড়ায় রোদে। আবার যখন মেঘ জমবে আকাশে, ফসলের উপর পাখির মরদেহ, দুটো পা আকাশের দিকে উঁচিয়ে সাক্ষী দেবে, ধ্বংস হয়ে গেছে বেঁচে থাকার মলাট, তবু শেষ হয়ে যায়নি কিছু

“রুদ্রের শেষ চিঠিতে কী লেখা ছিল?” জিজ্ঞাসা করলেন রফিক সাহেব।

.

নিতু কথার জবাব না দিয়ে তাকিয়ে থাকে অপলক। টেবিলে চা দেয়া হয়েছে। আধমরা যে পিঁপড়া কাপের ভেতর থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে, শেষমেশ সেও ডুবে গেল অতল জলের গভীরে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *