৬
আপো পর্বতে পিসিডার হেড কোয়ার্টার। আহমদ মুসার কক্ষ। একটি সেক্রেটারিয়েট টেবিলের পাশে রিভলভিং চেয়ারে বসে আছে আহমদ মুসা। তাঁর ডান পাশে এক বৃদ্ধ। মাথায় শ্বেত-শুভ্র বাবরি, মেহেদিরঞ্জিত দাড়ি। সফেদ পোশাক পরিধানে। তাঁর মুখমন্ডল থেকে পবিত্র এক জ্যোতি যেন ঠিকরে পড়ছে। ইনি আবু আল্-মখদুম। সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে প্রাচীন পবিত্র কুঞ্জবন মসজিদের ইমাম। এই মসজিদের পাশেই এক সমাধিতে শুয়ে আছেন করিম আল-মাখদুম। আজ এগার শ’ বছর ধরে সোলো ও মিন্দানাওবাসীদের হৃদয় নিংড়ানো ভক্তি-শ্রদ্ধার কেন্দ্র এই মাজার-এই মসজিদ। সেই সুলতান আবুবকর থেকে সোলো ও মিন্দানাওয়ের সকল সুলতানের রাজ্যাভিষেকের কেন্দ্রও এই মসজিদ- এই মাজার।
আহমদ মুসার বাম পাশে বসেছিল মুর হামসার।
পাশের আপওয়ান উপত্যকা থেকে ভেসে আসছিল আজানের সুর। উপত্যকা অধিত্যকায় ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে কেঁপে কেঁপে আজানের শেষ সুরটুকুও মিলিয়ে গেল বাতাসে।
আলী আল-মখদুমের পাতলা ঠোট দু’টি নড়ে উঠল। অষ্ফুটে শ্রুত হলো তাঁর কণ্ঠ ‘‘আহ! আজ সে কত বছর আগে!! সোলো মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের মানুষ তখন পশুর মত পশুর সাথে উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াত। পূজা করত তারা জড়পদার্থের। স্রষ্টার কোন পরিচয় তারা জানত না। এমনি দিনে ১৩১১ খৃষ্টাব্দের এক সুবেহ সাদেক। সোলো সাগরের অথৈ জলে ভাসমান সোলো দ্বীপুঞ্জে ‘সীমনুল’ দ্বীপ। কাঠের উপরে লোহার পাত বসানো একটি নৌকা ঢেউয়ের তালে নাচতে নাচতে এসে ভিড়ল সেই দ্বীপে। জাহাজ থেকে প্রথমে নামলেন একজন আরব। পরে আরও কয়েকজন তাঁর চীনদেশী সাথী। সোলো সাগরের পানিতে অজু করলেন তাঁরা। তারপর সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে প্রথম বারের মত ধ্বনিত হলো আজানের সুর- আহ! এই সেই আজান! কিন্তুু যিনি সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আজান দিয়েছিলেন, প্রথম নামাজ পড়েছিলেন, সেই অলি আল্লাহ করিম আল-মখদুম আজ নেই। আমরা তারই অধস্তন। কিন্তু………
থামলেন আলী আল-মাখদুম। রুমালে চোখ মুছলেন তিনি। মোহমুগ্ধের মত আহমদ মুসা চেয়ে আছে তাঁর দিকে।
আবার মুখ খুললেন তিনি। তারপর গড়িয়ে গেছে কতদিন। সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের অন্ধকার বুককে আলোকিত করে তুলল ইসলাম। মানুষকে মানুষ বানাবার সাধনায় মগ্ন হলো মুসলমানরা। আরো পরে সুমাত্রা থেকে এলেন যুবরাজ রাজাহ বরগুইবা আলী এক বিরাট নেŠবহর নিয়ে। ইসলামের শিখা উজ্জ্বলতার হলো আরও। উল্টে চললো কালের পাতা। গত হলো একশ’ উনচলিস্নশ বছর। আরব ভূমি থেকে এলেন পাদুকা মহাসরি মওলানা আস সুলতান শরিফ আল হাসমি সুলতান আবু বকর। সোলো ও মিন্দানাওয়ে মুসলিম সালতানাতের সৃষ্টি হলো তাঁর হাতেই। আইনের বিধিবদ্ধকরণ, শরিয়তী ব্যবস্থা প্রবর্তন, আরবী বর্ণমালার প্রচার ও প্রসার সাধন এবং শাসন সুবিধার জন্য আঞ্চলিক বিভাগ গঠন তার হাতেই সম্পাদিত হলো। তারপর অতি নীরবে, অপরিসীম প্রশান্তিতে এগিয়ে চলল ইসলামের অগ্রযাত্রা ছ’ শ’ বছর ধরে।
থামলেন আলী আল্ মাখদুম। ভাবনার কোন অতল রাজ্যে তিনি হারিয়ে গেছেন। আহমদ মুসা বললেন, তারপর জনাব।
-তারপর শান্তির রাজ্যে ঘটে গেল বিপর্যয়। গলায় ক্রস দুলিয়ে আর হাতে বন্দুক নিয়ে এল খৃষ্টান পর্তুগীজ ও স্পেনীয়রা। তারপরের ইতিহাস অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে সংঘাত আর সংঘর্ষের ইতিহাস।
একটু থামলেন আলী আল্ মাখদুম। তারপর পরিপূর্ণভাবে আহমদ মুসার দিকে চেয়ে তিনি বললেন, সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্যায়ে তোমাকে আমরা পেয়েছি বাবা আল্লাহর মহাদান হিসেবে। আমি আশা করি, আমি দোয়া করি অলি আল্লাহ করিম আল মখদুমের দেশে আবার তুমি হাসি ফুটিয়ে তুলবে।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে কন্ঠ ভারী হয়ে উঠল আলী আল মখদুমের। চোখ দু’টি বুজে গেল তার।
সবাই নীরব। নীরবতা ভাঙলেন আহমদ মুসা নিজে। মুর হামসারের দিকে চেয়ে বললেন, ভাবতে বিস্ময় লাগে, এত সম্পদ এত প্রাচুর্য সত্ত্বেও সোলো ও মিন্দানাওবাসীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।
মুর হামসার বলল, ভাগ্যের পরিবর্তন তাদের হয়েছে, তাদের অনেকের গলায় ক্রস ঝুলছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর কিছু না হোক দেশে আপনি বহু মিশনারী স্কুল ও মিশনারী হাসপাতালের সাইন বোর্ড দেখতে পাবেন। ঐসব মানুষ ধরার ফাঁদে যারা পা দিচ্ছে, তাদেরকে ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না।
থামল মুর হামসার। আহমদ মুসা বললো, ঘৃণ্য কৌশল এটেছে ওরা। মিন্দানাওবাসীদের অন্ধকারে রেখে, অনুন্নত রেখে বিশ্ববাসীর অলক্ষ্যে তাদের হজম করে ফেলার পরিকল্পনা এটেছে ওরা।
-বিপদ শুধু একদিক থেকে নয় ভাইয়া। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণের জন্য কমিউনিষ্ট শক্তি তৎপর হয়ে উঠেছে। আলী কাওছারের ঘটনা তাদের ষড়যন্ত্রের একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। এছাড়া রয়েছে ‘ফিলিপাইন জাতীয়তা’ নামক সর্বগাসী ষড়যন্ত্রের আর এক বিষাক্ত থাবা। ত্রিমুখী সংগ্রাম আমাদরে সামনে।
থামল মুর হামসার। কিছু বলার জন্য আহমদ মুসা মুখ খুলেছিল। কিন্তু বলা হলো না। টেবিলের অয়ারলেস যন্ত্রে লাল সংকেত জ্বলে উঠল। একটানা বিচিত্র এক শব্দ উঠল যন্ত্র থেকে।
অয়ারলেস যন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ল আহমদ মুসা। কানে তুলে নিল অয়ারলেস রিসিভার।
-আহমদ মুসা স্পিকিং।
ওপার থেকে একটি স্পষ্ট কন্ঠ ভেসে এলো, আমি আবদুল্লাহ জাবের।
-কি খবর বল! উৎগ্রীব কন্ঠ বলল আহমদ মুসা।
আবদুল্লাহ জাবের লিলিয়েভের ঘটনা সমস্তটা আহমদ মুসাকে জানাল, তারপর বলল, আমি বলছি, লিলিয়েভের সে চিঠি লিখে নিন জনাব।
আহমদ মুসা বাম হাতে ওয়ারলেস রিসিভার ধরে রেখে ডান হাতে প্যাড ও কলম টেনে নিল। সাইমুমের পরিচিত কোডে প্রেরীত চিঠিটি লিখে চলল সে-
চেয়ারম্যান
ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান
দিভাও মিন্দানাও।
আমরা আপনাদের হারানো জাহাজ, রেডিয়েশন বম্ব এবং আহমদ মুসার সঠিক অবস্থানের পুর্ণ তথ্য অবগত রয়েছি। আমরা এসব তথ্য দিয়ে আপনাদের সাহায্য করতে পারি, যদি আপনারা আমাদের সাথে নিম্নলিখিত শর্তে রাজী হনঃ
এক, দক্ষিণ চীন সাগর ও সোলো উপসাগরের মধবর্তী পালওয়াং দ্বীপে সোভিয়েট নৌবহরের স্থায়ী ল্যান্ডিং সুযোগ থাকবে।
দুই, সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে যীশুর রাজত্ব কায়েম হোক আপত্তি নাই, কিন্তু সেখানে প্রগতিশীল আন্দোলনের পথ বন্ধ করা চলবে না। দিভাও কারাগার থেকে প্রগতিশীল কর্মী চার্লস হ্যামিলটনকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে।
তিন, উত্তর মিন্দানাওয়ের কাগায়ান বেজ সোভিয়েট ইয়ারফোর্সে মাত্র তিনদিনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি চায়।
উপরোক্ত শর্তগুলো যদি ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান ও তার পরিচালিত সেখানকার সরকার মেনে নেয় তাহলে আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব পথ অনুসরণ করব।
কাগনোয়াভিচ
চেয়ারম্যান,
সোভিয়েট ফার ইষ্ট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস
চিঠি নোট শেষ করা হলে আহমদ মুসা বলল, লিলিয়েভ মিশনের ব্যর্থতায় সোভিয়েট ইনটেলিজেন্স আরও পাগল হয়ে উঠবে। আবার আসবে তারা দিভাওয়ে। তা আসুক। তুমি আজই চলে এসো কাগায়ানে। শরিফ সেখানে আছে। তোমাদের কাজ হবে কাগায়ান বেজের কার্যধারার প্রতি নজর রাখা। আর শোন, লিলিয়েভের ব্যাগ-ব্যাগেজ এখন তোমার ১১ নং কেবিনেই তো রয়েছে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে, লিলিয়েভের ঐ চিঠি তুমি যেখানে পেয়েছিলে, সেখানেই রেখে দাও গিয়ে। কাল সকালে ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান নিশ্চয় সেখানে যাবে, পরে হয়তো আসবে সোভিয়েট ইনটেলিজেন্সেরও কেউ। চিঠি যেন তারা ওখানে পায়। নিরুদ্বেগে তারা তাদের প্লান নিয়ে এগোক সামনে। থামল আহমদ মুসা। একটু থেমে আবার বলল, আর কিছু বলবে জাবের।
-লিলিয়েভকে কি করব? হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দেব?
-না, এখানে স্মার্থা আছে। সবাইকে একখানে করা ঠিক হবে না। ওকে ওখানেই আটকে রাখবে।
-আচ্ছা।
-আচ্ছা রেখে দাও।
বলে লাইন কেটে দিল মুসা। তারপর ওয়্যারলেসের কাটা ঘুরিয়ে ভিন্ন এক ওয়েভলেংথে জাম্বোয়াঙ্গোতে এহসান সাবরীর সাথে যোগাযোগ করল।
ওপার থেকে এহসান সাবরীর কন্ঠ ভেসে এল- আমি এহসান সাবরী।
-আমি আহমদ মুসা।
-আদেশ করুন জনাব।
-শুধু আদেশ করার জন্যই কি তোমাদের খোঁজ নিয়ে থাকি এহসান?
-মাফ করুন জনাব। আপনি আমাদের নেতা। আদেশ তো আপনার কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।
-আমি যেটা দিয়ে থাকি, ওটা পথ নির্দেশনা মাত্র, আদেশ নয়। আদেশের অধিকার তো একমাত্র আল্লাহরই। ইনিল্ হুকমো ইলল্লা-লিলল্লাহ’- পড়নি?
ওপারে এহসান সাবরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। বলল সে, আপনার এ নির্দেশ আমার মনে থাকবে।
শুন এহসান, মিন্দানাওয়ে আমাদের অবস্থান ইরগুন জাই লিউমি, ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান ও সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্স-এর কাছে অজানা নেই। এখানে ব্যর্থ হবার পর সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্স কাগায়ানে বেজ করে কিছু করতে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটা হবে ঐ ত্রিপক্ষের কোন এক যৌথ পরিকল্পনা তুমি প্রস্তুত থেকো। ওদের ওদিকে ব্যস্ততার সুযোগে আমরা জাম্বুয়াঙ্গোতে আঘাত হানব। জাম্বুয়াঙ্গো বন্দর আমাদের হাতে এলে সমগ্র সোলো সাগর ও সেলেবিস সাগরের উপর নজর রাখতে পারবো-আমাদের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর উপকূল নিরাপদ হবে।
আর শোন, আমাদের ৫০ স্পিড বোটের সবগুলোকেই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র সজ্জিত করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে আমি পাঁচটিকে কাগায়ান উপসাগরে রেখে অবশিষ্টগুলোকে জাম্বুয়াঙ্গো ঘাঁটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি এর মধ্যে পাঁচটি তোমার জন্য রেখে অবশিষ্টগুলো ২টি করে সবগুলো উপকূলীয় ঘাঁটিতে পৌছে দেবে। রাতের অন্ধকারে অতি গোপনে সমাধা করবে একাজ।
-কিন্তু পেট্টোলের যে ষ্টক আছে, তা তো খুব অল্প।
-সে চিন্তা আমি করেছি। লিবিয়া থেকে ওয়েল ট্যাংকার এম,ভি, সেনুসি আসছে। ওটা এসে নোঙ্গর করবে নর্থ বোর্নিওর সান্দাকান বন্দরে। সেখান থেকে ইন্দোনেশীয় কোষ্টার পিপা ভর্তি তেল নিয়ে আসবে জাম্বুয়াঙ্গো থেকে ৭৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে জনমানবহীন জামুন দ্বীপে। সেখান থেকে তোমাকে তেল সংগ্রহ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি।
-আচ্ছা।
-আর কিছু বলার আছে?
-জি না।
-রেখে দিলাম।
অয়্যারলেস ছেড়ে দিয়ে আলী আল-মখদুমের দিকে চেয়ে আহমদ মুসা বলল, হুজুর, কষ্ট দিলাম আপনাকে, অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি।
-একি বলছ বাবা, আমার ১১০ বছরের জীবনে এমন আনন্দ আমি কোনদিন পাইনি। অপরিসীম কষ্ট করছ তোমরা এ দুঃখী জাতির জন্য। আজ অমি যদি যুবক হতাম………. কান্নায় বৃদ্ধের গলা বুঁজে এলো। থামল সে। ঢোক গিলে আবার সে বলল, আজ মনে হচ্ছে, আমার কর্ম-জীবনের দীর্ঘ ৮০টি বছর বৃথাই নষ্ট করেছি করিম আল-মখদুমের মাজারে বসে তসবি টিপে আর-হা-হুতাশ করে। জালল্লাজালালুহুর তসবি টিপেছি বটে মাজারে বসে, কিন্তু তাঁর প্রতাপে তোমাদেরকে যেমন জাতির মুক্তির জন্য আজ পাগল করে তুলেছে, তেমন তো কোনদিন হয়নি আমার।
বৃদ্ধের দু’গন্ড বেয়ে অবিরাম ধারায় নামছিল অশ্রু। হৃদয়ের বেদনা যেন তাঁর চোখ দু’টি দিয়ে ঠিকরে পড়ছে। সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসার হাত দু’টি ধরে বলল, তোমাদের কিছু কাজ আমাকে দাও বাবা। এ বৃদ্ধ কিছু করতে না পারলেও শত্রুদের একটি বুলেট, আর কিছু সময় তো নষ্ট করতে পারবে। আর এটাই হবে আমার জীবনের পরম সঞ্চয় তাঁর কাছে।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়িয়ে আলী আল-মখদুমকে ধীরে ধীরে বসিয়ে দিতে দিতে পরম শ্রদ্ধাভরে বললো, যুবকদের জন্য এ প্রেরণা সৃষ্টিই আপনার আজ সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জনাব। আহমদ মুসা বলল, তারপর আজ এই রাতে এই মুহূর্তে যে প্রেরণার উষ্ণ পরশ আপনার কাছ থেকে পেলাম, তা অক্ষয় হয়ে থাকবে আমার জীবনে। আপনার অশ্রু হয়ে নেমেছে আপনার চোখে। এ অশ্রুর মূল্য অপরিসীম। এ অশ্রুর জ্বালা যুবকদের পাগল করে। আর এ পাগল যুবকরাই পারে রক্তের সাগর পিছনে ফেলে লক্ষ্যে পৌছুতে।
বয়সের ভারে পীড়িত আলী আল মাখদুম অবসন্ন হয়ে পড়েছে চেয়ারের উপর। চোখ দু’টি তাঁর মুদ্রিত।
আহমদ মুসা মুর হামসারের দিকে চাইল। মুর হামসারের অশ্রুসিক্ত চোখে শপথের দীপ্ত শিখা। ধীর স্বরে আহমদ মুসা তাকে বলল, আজকেই জেদ্দার এমপিআই (মুসলিম প্রেস ইন্টারন্যাশনাল) হেড কোয়ার্টারে একটি চিঠি লিখ। লিখ- ইরগুন জাই লিউমি’ তাদের স্বীয় স্বার্থ সংশিস্নষ্ট একটি তথ্যের বিনিময়ে সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্সকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক জটিল মারণাস্ত্র ‘ঘুমন্ত টর্পেডো’ সম্পর্কিত গোপন তথ্য পাচার করছে। আরও বলতে হবে, এই ষড়যন্ত্রের সাথে পেন্টাগনের ইহুদী মারণাস্ত্র বিজ্ঞানীদের যোগ-সাজস রয়েছে। ব্যস এইটুকুই যথেষ্ট।
-কিন্তু এ থেকে আমরা কি বাস্তব ফল লাভ করব ভাইয়া।
-সর্বোচ্চ লাভের কথা বাদ দিলাম, সর্বনিম্ন লাভ হল, এর ফলে ইহুদী স্বার্থ ও মার্কিন স্বার্থের মধ্যে অলক্ষ্যে এক ভেদরেখার সৃষ্টি হবে। ইরগুণ জাই লিউমি ও ইহুদী বিজ্ঞানীদের উপর মার্কিন গোয়েন্দারা চোখ রাখবে যার ফলে ইরগুণ জাই লিউমির পক্ষে সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্সকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা কঠিন হবে।
হেসে উঠল মুর হামসার। বলল, ঠিক ভাইয়া, রেডিয়েশন বম্ব কেলেঙ্কারী হয়েছে, এবার ‘ঘুমন্ত টর্পেডো’ কেলেঙ্কারী প্রকাশ হয়ে পড়লে ইহুদী মার্কিন চীড় ধরা স্বার্থে ফাটল ষ্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং পরিনামে তা সংঘাতে রূপান্তর লাভ করতে পারে।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বললো, হুজুরকে শুইয়ে দেবার ব্যবস্থা কর মুর হামসার।