৭
অবশেষে সন্ধির একটি চুক্তিনামা তৈরি হলো। লিখিত এ চুক্তিটিই হুদাইবিয়ার চুক্তি নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। এই চুক্তিপত্রে মুসলমানদের পক্ষে প্রিয়নবি মুহাম্মাদ (সাঃ) এক্স এবং কাফিরদের পক্ষে সাহিল বিন উমরু স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিপত্রে লেখা ছিল—’কুরাইশ সম্প্রদায় এবং মুসলমানরা আগামী দশ বছর এই চুক্তিবলে যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়বে না। এ বছর মুসলমানরা ওমরাহ না করেই ফিরে যাবে, আগামী বছর তারা উমরাহ হজ করার জন্য আসতে পারবে, তবে তিন দিনের বেশি মক্কায় অবস্থান করতে পারবে না।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সাথে খালিদও উপস্থিত ছিল। সে অপলক চোখে তাকিয়েছিল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চেহারা মুবারকের দিকে। কী অনিন্দ্যসুন্দর চেহারা, কী প্রশান্ত অবয়ব, কী মায়াময় চোখ! খালিদের মনে হচ্ছিল, মুহাম্মাদের কণ্ঠ থেকে যেন ঝরে পড়ছে মধুমাখা বাণী। চকিতে তাঁর মনে উদয় হয়েছিল, এই লোক তো জগতের ভালোবাসা কাড়তেই দুনিয়ায় এসেছে। এমন মিষ্টি চেহারা আর মধুমাখা বাণী যার কণ্ঠে, তাকেই কিনা তারা হত্যা করতে চায়! খালিদ অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিল নিজের বংশগৌরবের কথা চিন্তা করে।
খালিদ আবার তাকাল নবির চেহারা মুবারকে। এ দৃষ্টি একজন সৈনিকের দৃষ্টি, সেনাপতির দৃষ্টি। যে চেহারাজুড়ে মায়া-মমতার প্রলেপ, সেখানেই খেলা করছে সাহস ও দৃঢ়তার এক অনন্য প্রচ্ছদ। খালিদের মনে হলো—তাঁর চেহারা মুবারক থেকে ছিটকে পড়ছে প্রদীপ্ত পৌরুষ; যাকে দেখলে আপনাতেই শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে মস্তক অবনত হয়ে যেতে চায়। খালিদ জোর করেই সেখান থেকে তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাইল। তাঁর মনে পড়ে গেল মহানবি (সাঃ)-এর অনন্য রণকৌশল ও যুদ্ধনীতির কথা। একজন দক্ষ সেনাপতির যা যা গুণ দরকার, তার সবটাই যেন জমা হয়ে আছে এ লোকের অঙ্গে। হুদাইবিয়ার মজলিশে বসেই খালিদ হিসাব করল, মুসলমানদের সঙ্গে তাদের কয়টা যুদ্ধ হয়েছে। হিসাব করে দেখল, মুহাম্মাদের নেতৃত্বে এ পর্যন্ত মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে আটাশটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। আর কী আশ্চর্য, প্রতিটি যুদ্ধেই বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে সে! অথচ যুদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনাই সে করেনি। আমরাই আমাদের পছন্দমতো সময়ে, পছন্দমতো জায়গায় তাঁকে যুদ্ধে টেনে এনেছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনামতো যতবার তাঁকে যুদ্ধে জড়িয়েছি, ততবারই সে আমাদের পরাজিত করেছে। আমরা যতই তাঁকে দুর্বল করতে চেয়েছি, ততই দুর্বল না হয়ে সে আরও সবল হয়েছে।
হুদাইবিয়ার সন্ধির ঘটনা খালিদের মনে খুব বড়ো রকমের একটি দাগ এঁকে যায়। এতদিন ধর্ম সম্পর্কে কোনোকিছু ভেবে দেখেনি খালিদ। সন্ধির পর উমরা না করেই মুসলমানরা ফিরে গেলে সে ভাবতে থাকে, ধর্ম কী? মানুষের জীবনে ধর্মের প্রয়োজন কী?
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর দুই মাস কেটে গেছে। এই দুই মাসে খালিদ নীরবে অনেক ভেবেছে, অনেক কিছু চিন্তা করেছে। চিন্তা করতে গিয়েই সে নিজের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন অনুভব করতে শুরু করে। ধর্মের ব্যাপারে খালিদের কোনোদিন কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ইদানীং তাঁর ধ্যানধারণায় সারাক্ষণ ধর্ম বিষয়টা কাজ করতে থাকে। সে এই চিন্তায় হারিয়ে যায়, মানুষের জীবনে ধর্মের কাজ কী? ধর্মের প্রয়োজনই-বা কী? এই যে নানা ধর্মমত–এর মধ্যে কোনটি সত্যধর্ম?
একদিন খালিদ তাঁর বন্ধু সেনাপতি আকরামাকে বলল—’আকরামা, আমি বুঝতে পেরেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি…’
‘কী বুঝতে পেরেছ?’ আকরামা জানতে চায়।
খালিদ বলল—’মুহাম্মাদ (সাঃ) কোনো জাদুকর নয়। আর সে কোনো কবিও নয়। সে সত্যি সত্যি আল্লাহর রাসূল। আমি তাঁকে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় ভালোভাবে লক্ষ করেছি। তখনই মনে হয়েছে, তাঁকে শত্রু মনে করাটা ঠিক নয়। তাঁকে যতই দেখেছি, ততই মনে হয়েছে—সে এক মহামানব। তাঁর প্রতি আমার এক ধরনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আপনাতেই তৈরি হয়ে গেছে। সে যা বলে, যা করে, তা কোনো মহামানবের পক্ষেই সম্ভব।’
আকরামা বলল—’হোবল ও উজ্জার কসম! তুমি ঠাট্টা করছ। কেউ বিশ্বাস করবে না, ওয়ালিদের বেটা নিজ ধর্ম ত্যাগ করেছে।’
‘না, প্রকাশ্যে আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করিনি বটে, তবে আমার অন্তর মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর ধর্মকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।’ বলল খালিদ আকরামা বলল—’তুমি কি ভুলে গেছ, মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের কত লোককে হত্যা করেছে? যাকে তোমার অন্তর ভালোবাসতে শুরু করেছে, তাঁর কাছে আমাদের বহু রক্ত পাওনা। আমাদের যেসব মায়ের বুক সে খালি করেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়ার দায়িত্ব এ জাতি আমাদের কাঁধেই অর্পণ করেছে। তুমি কি তোমার দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও?’
‘কেন সে আমাদের রক্ত নিয়েছে? সে কি কখনো রক্ত নিতে চেয়েছে? আমরাই তাঁকে রক্ত নিতে বাধ্য করেছি। আমরা তাঁকে বারবার হত্যা করতে চেয়েছি, আর সে আত্মরক্ষার জন্য আমাদের রক্ত নিয়েছে। তুমিই বলো, সে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, নাকি আমরা তাঁর ওপর যুদ্ধ চাপিয়েছি? সে কি আত্মরক্ষার চেষ্টাও করতে পারবে না?’
‘দেখ খালিদ, আমরা তাঁকে যথেষ্ট মান্য করতাম। আমরাই তাঁকে আল আমিন উপাধি দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাদের বাপ-দাদাদের ধর্ম অস্বীকার করে নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে গিয়ে নিজেই আমাদের শত্রুতা ক্রয় করে নিয়েছে।’
‘কোন ধর্মের কথা বলছ তুমি? যে ধর্ম দুর্বলের প্রতি অত্যাচার করতে বাধা দেয় না, যে ধর্ম মায়ের জাতকে মানুষ মনে করে না, পরের সম্পদ লুণ্ঠন করার মাঝে কোনো অন্যায় দেখতে পায় না, প্রতিহিংসা উসকে দেয়, তা কি কোনো ধর্ম হতে পারে? মানুষে মানুষে ঘৃণা ও হিংসা যে প্রতিরোধ করতে পারে না, তা মানবধর্ম হতে পারে না। মুহাম্মাদ (সাঃ) তো শুধু এটুকুই দাবি করেছে-এক আল্লাহর ইবাদত করো আর মানুষকে শত্রু না ভেবে তাকে ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরো। তাঁকে তো কখনো অন্যায্য কথা বলতে শুনিনি।’ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বলল খালিদ।
আকরামা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকে খালিদের দিকে। বলল –’খালিদ, তুমি কি বলছ বুঝতে পারছ? গরিব ও অসহায় মানুষজন তাদের আশ্রয় ভেবে মুহাম্মাদের দলে যোগ দিচ্ছে। তোমার কীসের অভাব? তুমি কেন মুহাম্মাদের দলে যোগ দেবে?’
‘আমি কী বলছি তা আমি জানি। আকরামা, আমি খুব ভেবে-চিন্তেই এ কথা বলছি। জাতি আমাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছে। সে অস্ত্র দিয়ে আমরা কী করছি? আমরা ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করছি। যার ক্ষমতা নেই, যে অসহায়, তাকে রক্ষার কথা আমরা ভাবি না-এটা অন্যায়। আমরা লড়ছি অন্যায়ের পক্ষে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের এ অন্যায় পথ পরিহার করতে বলছে। আমরা হৃদয়হীন। মুহাম্মাদ (সাঃ) নির্দয়তা ছেড়ে ভালোবাসার কথা বলছে। আমরা দুর্বলের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করি। মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের পাশবিকতা ছেড়ে মানবিকতার পথে চলতে বলছে। বলো, ডাক পাওয়ার পরও কি আমি মানবিকতার পথে পা বাড়াব না?’
সেদিনই সন্ধ্যায় আবু সুফিয়ান ডেকে পাঠাল খালিদকে। খালিদ দেখল, সেখানে আকরামাও বসা। খালিদ কামরায় ঢুকেই টের পেল আবু সুফিয়ানের চেহারা রাগে ও গোস্সায় ভরা। বলল—’আপনি আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন?’
আবু সুফিয়ান বলল—’হ্যাঁ। খালিদ! শেষে তুমিও কি মুহাম্মাদের জাদুর খপ্পরে পড়ে গেলে?’
খালিদ বসতে বসতে বলল—’আপনি ঠিকই শুনেছেন। মুহাম্মাদের জাদু আমার আত্মাকে বশ করে ফেলেছে। অসহায় মানুষের ক্রন্দনধ্বনি আমার আত্মাকে বলছে—’হে ওয়ালিদের বেটা! তোমার অস্ত্র কি আমাদের শাহরগ কাটার জন্য, নাকি আমাদের রক্ষার জন্য?’ আমি অসহায় মানুষের কান্নায় সাড়া দিতে চাই।’
আবু সুফিয়ানের চেহারা রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করল। সে খালিদকে বলল— ‘ওয়ালিদের বেটা! তোমাকে আমরা সেনাপতি বানিয়েছি। তোমার দায়িত্ব আমাদের হেফাজত করা এবং আমাদের শত্রুদের নিধন করা। যদি তুমি শত্রু নিধনের পরিবর্তে তাদের সাহায্যকারী হয়ে যাও, তবে তোমাকে সেনাপতির পদ থেকে বরখাস্ত করা ছাড়া আমার আর উপায় থাকবে না।’
খালিদ বলল—’আবু সুফিয়ান, তুমি আমাকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ো না। আমি তোমার হুমকি-ধামকির তোয়াক্কা করি না। হুমকি-ধামকি দিয়ে তুমি আমার চিত্তের আকাঙ্ক্ষা বন্ধ করতে পারবে না।’
প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক আল ওয়াকিদি লিখেছেন—’তাদের আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, আবু সুফিয়ান খালিদকে হত্যার হুমকি দেয়। খালিদ এ হুমকির জবাবে রাগ না করে হেসে ওঠে। এ হাসিতে ছিল ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্য। আকরামা যদিও খালিদের মুসলমান হওয়ার বিপক্ষে ছিল, কিন্তু খালিদের সাথে আবু সুফিয়ানের ব্যবহার ও হত্যার হুমকি সে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। সে আবু সুফিয়ানকে বলে—’আবু সুফিয়ান, আমি তোমাকে কবিলার সরদার বলে মান্য করি। কিন্তু খালিদকে তুমি যে ধমক দিয়েছ, তা আমি সহ্য করতে পারি না। তুমি খালিদের ধর্ম ত্যাগে বাধা দিতে পারো না।
আমি তোমাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, তুমি যদি খালিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাও, তবে আমি তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াব। প্রয়োজনে খালিদের সঙ্গী হয়ে আমিও মদিনায় চলে যাব।
পরের দিনই মক্কার সর্বত্র এ কথা চাউর হয়ে গেল। সবার মুখে একই প্রশ্ন, একই জিজ্ঞাসা, ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ নাকি মদিনায় মুহাম্মাদের কাছে চলে যাচ্ছে?’
এ ঘটনা মক্কার জনগণের মধ্যে বড়ো রকমের আলোড়ন সৃষ্টি করল। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়ল। কিন্তু খালিদকে বারণ করার হিম্মত কারও ছিল না। সত্যি সত্যি দেখা গেল, খালিদ মদিনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে।
মদিনার পথে রওয়ানা হয়েছে আরবের শ্রেষ্ঠ বীর ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ। তাঁর বুকে বাজছে হাজারো স্মৃতির দামামা। যতই সে মদিনার নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই অতীত দিনের স্মৃতিরা এসে তাঁর মনের পর্দায় ভিড় জমাচ্ছে। খালিদ হেঁটে নাকি ঘোড়ায় চড়ে এগোচ্ছে সে খেয়ালও তাঁর নেই। সে তাঁর শৈশব ও কৈশোরে দেখা মুহাম্মাদ (সাঃ) আর হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ে দেখা মুহাম্মাদকে মেলানোর চেষ্টা করছিল। সে পথ চলছিল আর মনে মনে আওড়াচ্ছিল—’আমি মানুষ নয়—এক মহামানবের কাছে যাচ্ছি। তিনি যদি আল্লাহর নবি না হন, তবে কে আর এমন আছে, যিনি আল্লাহর নবি হবেন? নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর কাছে আল্লাহর ওহি না এলে এমন মধুর বাণী তিনি কোথায় পান? তাঁর সাহায্যকারী আল্লাহ না হলে কী করে তিনি মোকাবিলা করছেন সমগ্র আরবের বিরোধিতা? শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও যার ঠোঁটে লেগে থাকে অম্লান হাসি, যার চোখ থেকে ঝরে পড়ে স্নেহ আর প্রেম, তিনি আর কেউ নন, তিনিই মানবতার বন্ধু, আল্লাহর নবি।
দূর থেকেই খালিদের সামনে মদিনার মিনার ভেসে উঠল। স্বপ্নের জগৎ থেকে যেন বাস্তবে ফিরে এলো খালিদ। হ্যাঁ, ওই তো মদিনা। ওখানেই আছেন দ্বীনের নবি। সে তাঁর ঘোড়া দ্রুত চালানোর জন্য লাগাম টেনে ধরল। ঘোড়ার পিঠে চাবুক কষতে যাবে এ সময় কেউ যেন দূর থেকে প্রলম্বিত সুরে ডাকল ‘খা-লি-দ।’ খালিদ ডানে বায়ে সামনে তাকাল। না নেই, কেউ কোথাও নেই। তবে ডাকল কে? খালিদ ভাবল মনের বিভ্রম। সে ঘোড়ার পিঠে চাবুক হানল।
এ সময় সে আবার শুনতে পেল সেই ডাক—’খা-লি-দ!’ মনে হলো ডাকটা পেছন থেকে আসছে। সে আবার থেমে গেল এবং ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। দেখল দুই অশ্বারোহী তীব্র গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে তাঁরই দিকে আসছে। এবার পুরোপুরি থেমে গেল খালিদ। আগন্তুকরা না পৌছা পর্যন্ত ওখানেই অপেক্ষা করল। আগন্তুকরা ঘোড়া এনে দাঁড় করাল খালিদের পাশে।
‘তোমরা দুইজন কি আমাকে মক্কা ফিরিয়ে নিতে এসেছ?’ জিজ্ঞাসু চোখে ওদের দিকে তাকাল খালিদ।
‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ জানতে চাইল আমর বিন আস।
‘তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ আমি কোথায় যাচ্ছি, কিন্তু তোমরা কোথায় যাচ্ছ?’ বলল খালিদ।
‘খোদার কসম! আমরা কোথায় যাচ্ছি বললে তুমি আবার রেগে যাবে না তো?’ বলল উসমান বিন তালহা।
‘কেন, আমি রাগলে তোমরা সত্য প্রকাশ করবে না? কোথায় যাচ্ছ এটা বলার মতো সাহসও কি তোমাদের নেই?’
‘অবশ্যই আছে, আমরা দুজন মদিনা যাচ্ছি। আমরা ঠিক করেছি, আমরা ইসলাম গ্রহণ করব।’ উসমান বিন তালহা নিৰ্ভীক কণ্ঠে জবাব দিলো।
আমর বিন আস বলল—’হ্যাঁ খালিদ, আমরা দুজনই মুহাম্মাদের দ্বীন গ্রহণ করতে চলেছি।’ বলল আমর বিন আস।
খালিদ হাত বড়িয়ে দিয়ে বলল—’তবে তো আমরা একই পথের যাত্রী। চলো একসঙ্গেই যাই।’
আমর ও উসমান দুজনই তাঁর হাত নিজেদের মুঠোয় নিয়ে বলল—’চলো।’
৬২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মে। আরবের দুই প্রসিদ্ধ জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আমর বিন আস একই সঙ্গে রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে গিয়ে হাজির হলো; তাঁদের সঙ্গে উসমান বিন তালহা। প্রথমেই কামরায় ঢুকলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ, তাঁর পেছনে আমর বিন আস এবং সবার শেষে উসমান বিন তালহা।
তিনজনই রাসূলকে জানালেন তাঁদের ইচ্ছার কথা। রাসূল (সাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং একে একে সবার সাথে কোলাকুলি করলেন। এরপর ঘটল সেই অবিস্মরণীয় ঘটনা। রাসূল (সাঃ)-এর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই পড়লেন, ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’-আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত নবি ও রাসূল।