ঝিঁঝিঁ – ৩৫

৩৫

হলঘরে অস্ত্র জমা হয়েছে। একের পর এক লাইট মেশিনগান সহ অসংখ্য অস্ত্র স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তার পাশে গুলি।

উসমান, আসাদ শেখ আর লতিফ কথা বলছিল।

শুভ্রদের খেতে দেওয়া হয়েছে হলঘরের অন্যকোণে। বিরাট খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হয়েছে। সবাই হামলে পড়ে খাচ্ছে।

শুভ্র খেতে পারছিল না। তার বমি পাচ্ছিল।

মাথায় ঝিঁঝিঁটা ডেকে উঠল, “শুভ্র, এই শুভ্র। শুনতে পাচ্ছিস?”

শুভ্র “হু” বলল। বাকি ছেলেগুলো তার দিকে অবাক হয়ে তাকাল।

শুভ্র হেসে মেক আপ দিল।

বাকিরা আবার খেতে শুরু করল।

ঝিঁঝিঁটা বলল “শুভ্র বলতে পারবি এই মুহূর্তে ওখানে কে কে আছে? আই এস আই এস থেকে কেউ এসছে?”

শুভ্র খাবার জায়গা থেকে উঠে সরে গিয়ে বলল “জানি না। আসাদ শেখ আছে, আর বাইরে থেকে কয়েক জন এসেছে। এরা কে, কেন এসেছে আমি কিছুই জানি না। আজ রাতে গৌহাটি যেতে হবে”।

ওপাশে সামান্য নীরবতার পরে ঝিঁঝিঁটা বলল “তুই ভাল আছিস?”

শুভ্র বলল “কে আপনি?”

“তোর বাবা”।

শুভ্র রেগে গেল। প্রায় চেঁচিয়ে ফেলল “বাবা তুলে কথা বলবেন না। অনেক জ্বালিয়েছেন, আমার বাবাকে আনবেন না এর মধ্যে দয়া করে”।

একজন পাকিস্তানি ছেলে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। শুভ্রর চেঁচিয়ে ওঠা দেখে দাঁড়িয়ে শুভ্রর দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।

শুভ্র ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে খেতে বসে পড়ল আবার।

ঝিঁঝিঁটা বলল “আরে আমি তোর বাবা। অন্য কেউ না। যে মিশনে তোকে পাঠানো হয়েছে, সেটা আমিই পাঠিয়েছি”।

শুভ্রর মাথাটা ঘুরে গেল। বাবা! মিশন! মানেটা কী? একগাদা প্রশ্ন মাথার মধ্যে আসতে শুরু করল।

ঝিঁঝিঁটা বলল “শোন শুভ্র, তোকে এখনই এত কথা খুলে বলতে পারব না। শুধু বলি, আমি সারাজীবন যে রাজ্যসরকারের ক্লারিক্যাল পোস্টে কাজ করে গেছি, সেটা নিতান্তই আই ওয়াশ ছিল। আমি ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্টের ডিফেন্স রিসার্চ উইংএর সঙ্গে যুক্ত আছি। তোকে সব বলা যাবেও না, শুধু জেনে রাখ, তোর মাথায় একটা চিপ বসানো হয়েছে যার মাধ্যমে এতদিন তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। তোর লতিফকে ইমেলগুলো সমস্তটাই তোর অ্যাকাউন্ট থেকে আমি করেছিলাম। আমার প্ল্যান ছিল তোকে লতিফের বিশ্বাসভাজন করে ওদের ক্যাম্পে পাঠানো যে প্ল্যানটা সফল হয়েছিল। হয়ত চোদ্দ তারিখের আগে ক্যাম্পে অ্যাটাক করে তোকে উদ্ধার করাও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ওরা যদি আজকেই তোদের নিয়ে ইন্ডিয়ায় ঢোকার প্ল্যান করে তাহলে আমাকে একটা টাফ ডিসিশন নিতে হবে”।

ঝিঁঝিঁটা থেমে গেল।

বাকিরা হই হই করে খাচ্ছিল। শুভ্রর বাবার কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছিল না। বাবা তাকে এইখানে পাঠিয়েছে?

বাবা? এও কি সম্ভব? আর বাবা যে কথাগুলো বলে গেল তার মানেটা কী? টাফ ডিসিশন? কী টাফ ডিসিশন নিতে হবে?

শুভ্র ফিসফিস করে বলল “কী টাফ ডিসিশন? বলবে?”

ঝিঁঝিঁটা ডেকে উঠল “শুভ্র, আমি প্রফেসর শর্মা বলছি। তোমার বাবার কলিগ। একটা আনফরচুনেট সিচুয়েশনে তোমাকে আমরা ফেলে দিয়েছি সেটা বুঝতে পারছি। শুভ্র, তোমাকে জানাই, তুমি যাদের ক্যাম্পে আছো তারা মানুষের শত্রু, এই পৃথিবীর শত্রু। ধর্মকে আড়াল করে এরা পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। কোথাও মেয়েদের ধর্ষণ করছে, কোথাও বা অবলীলায় নিরীহ মানুষদের মেরে ফেলছে নিজেদের স্বার্থ মেটাতে। তুমি নিজেও সেটা বুঝেছো বোধ হয়। এরা আমাদের সভ্যতাকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। এই লোকগুলো আমাদের দেশে যে অ্যাটাকটা করতে চাইছে সেটা হলে তুমি আশা করি বুঝতে পারছো কী হতে পারে! দেশের প্রতিটা শহরে এরা আত্মঘাতী হামলার প্ল্যান করেছে। তোমার মাথায় চিপটা আমিই বসিয়েছিলাম। গোটা পৃথিবীতে কেউ এই জিনিস আবিস্কার করতে পারি নি। আমেরিকা চেষ্টা করছে, কিন্তু সফল হয় নি এখনও। আমি সফল হয়েছি। তোমার বাবা তোমাকে সিলেক্ট করেছিলেন এই মিশনের জন্য। শুভ্র, তুমি নিজেও জানো না তুমি এ দেশের জন্য কী করেছো”।

শুভ্রর অধৈর্য লাগছিল। সে চেঁচিয়ে ফেলল “কী চাইছেন, কী করবেন বলবেন?বাবা কোথায়? আমি বাবার সঙ্গে কথা বলব।”

হলের সবাই তার দিকে তাকাল।

লতিফ তার গলা পেয়েছিল। এগিয়ে এল “কী হল আতিক?”

শুভ্রর মাথা কাজ করছিল না।

হঠাৎ বমি এল। সে হলের মধ্যে বসে বমি করতে শুরু করল।

(ক্রমশ)

ঝিঁঝিঁ

৩৬

“শুভ্র নার্ভাস হয়ে গেছে স্যার”।

সত্যজিত কপালের ঘাম মুছে কথাগুলো বললেন।

রজত প্রফেসর শর্মার দিকে তাকালেন “এমেচার হবার লক্ষণ প্রফেসর। আপনি বলুন কী করা যায়”?

প্রফেসর শর্মা কিছু বলার আগে সত্যজিত বললেন “আমি আবারও বলছি স্যার। ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্টকে স্টেপ নিতে দিন। আপনি যদি নিজের ছেলেকেই…”

রজত বললেন “এই মিশনে শুভ্রকে পাঠানোর সময় থেকেই আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম সত্যজিত। কিছুতেই এই সব র‍্যাডিকাল অরগানাইজেশনগুলোকে আমরা বাড়তে দিতে পারি না। জাস্ট ভাবো তুমি, কাল ওরা গুয়াহাটিতে একটা ব্লাস্ট করবে, দেশের নিরীহ কিছু মানুষ মরবে, পরশু দেশের এক শ্রেণীর মানুষ আবার আম মুসলমানদের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করবে। গোটা পৃথিবীটা এদের জন্য একটা নোংরা ভূ খণ্ডে পরিণত হয়েছে। আই এস আই এসের মত সংগঠন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, এর ভয়াবহতা কত সেটা বুঝতে পারছ?”

সত্যজিত বললেন “দেখুন স্যার, আমি সবটাই বুঝতে পারছি। বিশ্বাস করুন। কিন্তু আমি শুভ্রর এই পরিণতি মানতে পারছি না”।

রজত বললেন “মহাকাশে যখন লাইকাকে পাঠানো হয়েছিল, তখন এটা জেনেই পাঠানো হয়েছিল লাইকা ফিরবে না। আমি এতগুলো ব্রেইনওয়াশড রিলিজিয়াস বাস্টার্ডকে ছেড়ে দেওয়ার লাক্সারি করতে পারব না সত্যজিত। প্রফেসর শর্মা, প্লিজ প্রসিড”।

সত্যজিত মাথায় হাত দিলেন। দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন।

প্রফেসর শর্মা সত্যজিতকে বললেন “সত্যজিত, আমায় শুভ্রর সঙ্গে কথা বলাও”।

সত্যজিত রিসিভার কানে নিয়ে বললেন “শুভ্র, শুভ্র, শুনতে পাচ্ছ”?

ওপাশ থেকে ভেসে এল “হ্যাঁ”।

প্রফেসর শর্মা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। রজত প্রফেসর শর্মার আগেই বললেন “শুভ্র আমি বাবা বলছি। তোর বাবা। আমি তোকে খুব ভালবাসি শুভ্র”।

শুভ্রর যন্ত্রণাক্লিষ্ট গলা ভেসে এল “এসব কী হচ্ছে বাবা?”

রজত বললেন “তোকে সমগ্র মানবজাতির হয়ে একটা কাজ করতে হবে শুভ্র। ওদের প্রতিটা মাথা যাতে মরে, তোকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে”।

ও প্রান্তে খানিকটা নীরবতা। তারপর শুভ্র বলল “মার সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভাল হত”।

রজত বললেন “তোর মা যেদিন জানবে তার ছেলে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কত বড় কাজ করে গেছে, গর্বিত হবে নাকি জানি না, তবে কষ্ট পাবে। খুব কষ্ট পাবে শুভ্র। কিন্তু আমি গর্বিত হব। আমার ছেলে তুই, এই সিদ্ধান্ত নিতে সব থেকে বেশি কষ্ট আমার হয়েছে”।

শুভ্র বলল “জানি বাবা। ওরা এখন কাছে নেই। মেডিকাল রুমে নিয়ে এসেছে আমাকে। তোমাকে বলি, ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে জানো তো? সেই যে তুমি মেলায় নিয়ে যেতে। আমি কত বায়না করতাম। নাগরদোলা চড়তাম। আজ এত কিছুর মধ্যে শুধু এটাই মনে পড়ছে। তোমার মনে পড়ছে বাবা?”

রজতের দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

প্রফেসর শর্মা বললেন “শুভ্র, আমি শর্মা বলছি। তোমরা আর কতক্ষণ পর রওনা দেবে আন্দাজ?”

শুভ্র বলল “যা প্রিপারেশন দেখছি আর বেশিক্ষণ লাগবে না”।

প্রফেসর বললেন “ওরা একটা অ্যাসেম্বলী করবে নিশ্চয়ই বেরনোর আগে। সম্মিলিত প্রার্থনা টাইপ। তোমার কাজ হবে সেই সময়টা ওদের কাছে যাওয়া। উসমান, আসাদ শেখ, লতিফ সহ যে ক’টা এসেছে, সবার যত কাছে যেতে পারো যাবে। তারপর শুধু একবার আমাদের চেঁচিয়ে কোন সিগনাল দেবে। কী সিগনাল দেবে?”

শুভ্র বলল “জয় হিন্দ?”

প্রফেসর রজতের হাত শক্ত করে ধরে বললেন “তোমার ছেলে একজন ট্রু প্যাট্রিয়ট রজত”।

রজত বললেন “আই নো। লেট হিম ডু হিজ জব। ওকে বলে দিন, আমি জানি, মাই সান ইজ দ্য বেস্ট”।

প্রফেসর বললেন “শুভ্র, তোমার বাবা শুধু না, আমরা গোটা টিম তোমার ওপর গর্বিত। তোমাকে জানাই, এই তোমার মাথায় যে যন্ত্রটি লাগিয়েছি, এই গোটা প্রজেক্টে আমরা মাত্র চারজন ছিলাম। তোমাকে বাছা হয়েছিল এই জন্যই যে তোমার বা তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে এমন কোন রিপোর্ট ছিল না যাতে ওরা তোমাকে সন্দেহ করতে পারে। ইউ হ্যাভ ডান ইট মাই বয়। উই আর সো প্রাউড অফ ইউ”।

শুভ্র বলল “মাকে বলে দেবেন প্লিজ, আমি মাকে খুব ভালবাসতাম”।

সত্যজিত চেঁচিয়ে উঠলেন “স্যার প্লিজ। ক্যান্সেল দিস প্ল্যান”।

রজত কাঁদতে কাঁদতে বললেন “প্রফেসর, লেটস ডু ইট”।

৩৭

সম্মেলন শুরুর আগে হলঘরে শুভ্র ধুঁকতে ধুঁকতে ঢুকল।

রহমান তার দিকে উদ্বিগ্ন মুখে এগিয়ে এসে বলল “আতিক। আর ইউ ওকে?”

শুভ্র বলল “জি জনাব”।

রহমান বলল “নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল বুঝতে পারছি। আল্লাহকে ডাকো। তুমি পারবে আমি জানি”।

শুভ্র বলল “জি জনাব”। রহমান শুভ্রর কাঁধ চাপড়ে খুশি খুশি গলায় বলল “গোটা জাতি তোমার উপর গর্বিত হল আজ”।

শুভ্র কিছু বলল না।

সম্মেলন শুরু হল। সবাই হাঁটু গেড়ে বসল।

আসাদ দাঁড়িয়ে উঠে বলতে শুরু করল “আল্লাহর রক্ষাকর্তাগণ, তোমাদের অভিনন্দন জানাই। তোমরা আল্লাহর সেই খাস বান্দা যারা আমাদের বিপদে পড়া ধর্মকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছো। তোমরাই সেই মানুষ, যারা তবাহি করে দিতে যাচ্ছ গোটা হিন্দুস্তানে। সেই দেশ, যারা আমাদের এত কষ্ট দিয়েছে। আমরা তাদের শেষ দেখব তোমাদের মাধ্যমে। আমি তোমাদের জন্য দোয়া করব। ইন্ডিয়ায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে যেন তোমাদের চোখে আগুন জ্বলে, প্রতিশোধের আগুন। গুজরাটে আমাদের মেরেছিল কাফের হিন্দুরা যেভাবে, আমরা যেন সেই আগুনে তাদের শেষ করে দিতে পারি। উপরওয়ালার রহমতে তোমরা জন্নতে যাবে। জন্নতে হুর পরীরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে আমার সন্তানেরা”।

আসাদের গলার স্বরে আবেগ ভর করেছে। আবেগ মথিত হয়ে সে তার গলার স্বর বাড়িয়ে যেতে শুরু করল। মাঝখানে উসমান থেকে শুরু লতিফ সবাই এসে দাঁড়িয়েছে। আসাদ সেখ বক্তৃতা শেষ করা মাত্র সবাই জোরে নারায়ে তাকদির স্লোগান দিয়ে উঠল। শুভ্র ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।

ঝিঁঝিঁটা ডেকে উঠল “শুভ্র? এবার?”

শুভ্র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, দেখল আফরোজাকে নিয়ে আসা হয়েছে আসাদ সেখের কাছে। আসাদ সেখ তাদের দিকে তাকিয়ে বলল “এই যে মেয়েটাকে দেখছ, সুন্দর লাগছে না? এরকম শয়ে শয়ে সুন্দর মেয়ে জন্নতে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। ভাবো। এই মেয়ে। কাপড় খোল”।

আফরোজা যন্ত্রের মত কাপড় খুলতে শুরু করল। সমাবেশের সবাই হই হই করতে শুরু করল।

আসাদ সেখ তাদের দিকে তাকিয়ে বলল “ওকে ছুঁতে ইচ্ছা করছে, ছিড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছা করছে না? ইচ্ছাটা বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখো সবাই। জন্নতে তোমাদের জন্য এরকম মেয়েরাই থাকবে।

আসাদ আফরোজার গায়ে কাপড় তুলে দিয়ে কঠিন গলায় বলল “চল। তুই আমার কাছে চল”।

শুভ্র দেখল আফরোজা অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আসাদ সেটা দেখল। আফরোজাকে ধমকাল “ওর দিকে কী দেখছিস? এই ছেমরি? ওর দিকে কী দেখছিস?”

আসাদ আফরোজার হাত ধরে টান মারল।

ঝিঁঝিঁ ডেকে উঠল শুভ্রর মাথায় “এই শুভ্র, এবার?”

শুভ্র উঠে দাঁড়াল। এক দৌড়ে আসাদের কাছে পৌঁছতে গেল। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। শুভ্র চেঁচিয়ে উঠল “জয় হিন্দ”।

সবাই কিছু বুঝে ওঠার আগে শুভ্র আসাদ সেখকে জড়িয়ে ধরল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটল। মারাত্মক বিস্ফোরণ। অন্তত একশো জন মুজাহিদ আর একজন শুভ্রর শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

৩৮

প্রধানমন্ত্রী তার ঘরে গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন।

স্বরাষ্ট্রসচিব এসে দাঁড়ালেন।

প্রধানমন্ত্রী বললেন “এসব কী শুনছি মিস্টার দীক্ষিত?”

দীক্ষিত বললেন “ইয়েস স্যার। দে হ্যাভ পুলড দ্য ট্রিগার। ওয়ান অফ দ্য বিগেস্ট অপারেশন্স উই হ্যাভ এভার ডান। দে আর ডেস্ট্রয়েড লাইক হেল”।

প্রধানমন্ত্রী দীক্ষিতের দিকে তাকিয়ে বললেন “আর ছেলেটি?”

দীক্ষিত মাথা নিচু করলেন।

প্রধানমন্ত্রী বললেন “দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট। ওরা আমায় বলেছিল, ওরা একজন ইনফরমার প্ল্যান্ট করেছে। এই ঘটনা ঘটবে জানলে আমি অনেক আগেই স্টেপ নিতাম”।

দীক্ষিত বললেন “স্যার, এই ঘটনাটা না ঘটলে আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছিল”।

প্রধানমন্ত্রী মাথা নিচু করে বললেন “নিজের দেশের সন্তানকে বলি দিয়ে এরকম জয় কোন ভারতবাসী চায় নি। আমরা শুভ্রকে দেশের সর্বোচ্চ মরণোত্তর সম্মানে সম্মানিত করব দীক্ষিত। ইনফর্ম হিজ ড্যাড। ওহ… হোয়াট আ পিটি ফর হিস ফ্যামিলি”।

দীক্ষিত বললেন “স্যার শুভ্রকে কোন রকম সম্মান দিতে গেলে প্রেস জানবে। আমরা কি প্রেসকে কিছু আদৌ জানাব?”

প্রধানমন্ত্রী চিন্তিত মুখে দীক্ষিতকে বললেন “ওহ… তবে?”

দীক্ষিত নিরুত্তর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

ফোন বাজছিল।

দীক্ষিত বললেন “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফোন করছেন স্যার। উই নিড টু প্রেশারাইজ দেম ইন অর্ডার টু টেক ড্রাস্টিক একশনস এগেইন্সট দোজ টেররিস্ট ব্লকস”।

প্রধানমন্ত্রী অন্যমনস্ক মুখে বললেন “হু”।

#

কন্ট্রোল রুমে শর্মা ক্লান্ত গলায় রজতকে বললেন “কনগ্রাচুলেশনস রজত। অপারেশন সাকসেসফুল”।

সত্যজিত রজতের দিকে তাকিয়ে বললেন “খুশি স্যার?”

রজত চেয়ারে বসে সত্যজিতকে বললেন “কনগ্রাচুলেশন্স সত্যজিত। এই অপারেশনটা সি আই আই করতে পারলে গর্বিত হত। ইউ হ্যাভ ডান ইট। উই হ্যাভ ডান ইট”।

সত্যজিত কয়েক সেকেন্ড রজতের দিকে তাকিয়ে বললেন “কীসের বিনিময়ে স্যার? নিজের মানুষের রক্তের বিনিময়ে? একটা ছেলের অমতে তাকে দিয়ে এত বড় একটা কাজ করানোর বিনিময়ে? এ তো প্রায় বিনা অপরাধে ফাঁসীর সাজা হল! আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারব না। নিজেকে একজন খুনী মনে হচ্ছে বিশ্বাস করুন। আই কুইট স্যার। আমি এই কাজ আর কোন দিন করব না। আই অ্যাম সরি স্যার”।

রজত শূন্য চোখে সত্যজিতের দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন “বেস্ট অফ লাক সত্যজিত। জয় হিন্দ”।

(শেষ)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *