চ্যাপ্টার ১০ : টু মাই ওয়ান অ্যান্ড ওয়ানলি চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড
আমাদের পুনর্মিলনীতে আমার এবং হিমেনোর মাঝে কী কথা হয়েছিল সেটা অল্পই মনে আছে আমার। সত্যি বলতে, হিমেনো দেখতে কী রকম কিংবা ও কী রকম আচরণ করেছিল, আমি এমনকি সেটাও মনে করতে পারছিলাম না।
কিন্তু আমাদের মাঝে কী কথা হয়েছিল সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমার জন্য, হিমেনোকে কিছু বলা এবং তার উত্তর দেওয়াটাই ছিল আমার একমাত্র চাওয়া।
দেখে মনে হয়নি ও ফেস্টিভ্যাল দেখতে এসেছে। ও সেখানে কাজ সংক্রান্ত প্রয়োজনে এসেছিল। আর ওর গাড়ি মন্দিরের পাশের স্টলের পার্ক করা ছিল। ও শুধু এখান দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল।
কী ধরনের কাজ করে সেটা ও এড়িয়ে গেল। হিমেনো আমাকে শুধু বলেছে ও “দুজনের মাধ্যম” হয়ে কাজ করে।
“আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু আমাকে একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে” ও বলল। চলে যাওয়ার জন্য উশখুশ করতে লাগল ও। সুতরাং আমি ওকে ড্রিঙ্কের অথবা এরকম কিছু একটার নিমন্ত্রণ করলাম।
অ্যালকোহল ভালো না, কিন্তু আমরা একসাথে খাবার খেতে পারি। হিমেনো রাজি হলো।
দু’দিন পরে ডিনারে দেখা করার প্রতিজ্ঞা করে আমরা বিদায় নিলাম।
আমি খুশিতে এতই আত্মহারা হয়ে ছিলাম যে কিছুক্ষণের জন্য মিয়াগির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
“তো, বেশ ভালোই ছিল” মিয়াগি বলল। “আমার নিজের সাথেও এরকমটা ঘটার আশা করি না আমি।”
“আমিও না। সত্যি হওয়ার পক্ষে একটু বেশিই ভালো।”
“হ্যাঁ… আমার মনে হয় মাঝে মাঝে এটাই সত্যি।”
দু’দিন পরে আমার সাথে হিমেনোর সাথে আবার দেখা হবে। সত্যি বলতে, আমার উচিত ওটাকে আসল ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা। এর আগে আমার কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন।
অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে গিয়ে ‘মৃত্যুর আগে করতে হবে’ লিস্টের হিমেনোর লাইনটা ক্রস দিয়ে কেটে দিলাম। বিছনায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে মিয়াগিকে বললাম, “তোমার কাছে আমার একটা অদ্ভুত আবেদন আছে।”
“আমি ড্রিংকস করি না। “
“আরে সেটা না। আগামীকালের একটা বিষয় নিয়ে। হিমেনোর সাথে দেখা করার ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে চাই আমি। সৌভাগ্যবসত, হাতে দু’দিন সময় পেয়েছি। আগামীকাল নিজেকে প্রস্তুতের কাজে ব্যয় করতে পারি। আমি চাই তুমি আমাকে প্রস্তুতির ব্যাপারে সাহায্য করো।”
“আপনাকে প্রস্তুত করা?”
“তোমার কাছে কোনোকিছু লুকিয়ে রাখা অর্থহীন। আমি তোমার সাথে সত্যি কথাই বলবো। এই বিশ বছরের মধ্যে আমার সত্যিই কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল না। কখনই না। আমি যদি এখন হিমেনোর সাথে দেখা করতে যাই, সম্ভবত ওকে অনেক বেশি বিরক্ত করে ফেলবো এবং সবকিছু ভজকট পাকিয়ে ফেলবো। এটা দূর করার জন্য, আমি আগামীকাল শহরে গিয়ে রিহার্সেল করতে চাই।”
মিয়াগির মুখটা কয়েক মুহূর্তের জন্য শূন্য দেখাল।
“যদি আমি ভুল না করে না থাকি, আপনি আমাকে মিসেস হিমেনোর ভূমিকায় অভিনয় করতে বলছেন?”
“ঠিক ধরেছ। তুমি কি অংশগ্রহণ করবে?”
“…আসলে, আমি নিজেও খুব একটা বেশি কিছু জানি না। আর আমার মনে হয় এতে অনেক সমস্যা হবে…”
“ওহ, আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে দেখে না। তুমি কি সেটা বুঝাতে চাচ্ছ?”
“হ্যাঁ, সেটাই।” মিয়াগি নিশ্চিত করল।
“সেটা কোনো সমস্যা না। মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাবে; তা নিয়ে আমি কেন চিন্তা করবো? বরং হিমেনো আমার সম্পর্কে কী ভাববে; আমি সেটা নিয়ে ব্রিত হবো। যতক্ষণ পর্যন্ত হিমেনো আমাকে একটু হলেও পছন্দ করবে, আমি তাতেই সন্তুষ্ট।”
মিয়াগিকে স্তম্ভিত দেখাল। “মিস, হিমেনোর যে-কোনো ব্যাপারে আপনি চোখের পলকে বদলে যান। তাই না? কিন্তু অন্য একটা ঝামেলা আছে। আপনার জানা থাকার কথা, এই প্রজন্মের মেয়েরা কিভাবে চিন্তা করে সেটা সম্পর্কে আমি খুব কমই জানি। যেমন ধরুন, আমার মনে হয় না আপনি আমাকে উপযুক্ত বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন। মিস. হিমেনোর কাছে যা ভালো লাগতে পারে; আমার কাছে তা ভালো নাও লাগতে পারে। মিস. হিমেনোর কাছে যা বিরক্তিকর আমার কাছে তা রোমাঞ্চকরও লাগতে পারে। মিস, হিমেনোর কাছে যা কঠোর লাগতে পারে; আমার কাছে তা শালীন অমায়িক লাগতে পারে। এরকম অনেক অমিল থাকতে পারে। এভাবে, বিশ বছর বয়সের কাউকে নমুনা হিসাবে দেখলে…”
“তোমার কোনো বিষয়ে আসলে তুমি নিরহংকার হয়ে যাও, তাই না!” আমি মাঝখানে বাধা দিয়ে বললাম। “এটা কোনো সমস্যা না। আমি যতদূর দেখতে পাচ্ছি, বাহির থেকে তুমি অন্য কোনো মেয়ের চেয়ে ব্যতিক্রম নও। শুধুমাত্র একটা জায়গা ছাড়া। তুমি অন্যদের চেয়ে একটু বেশি কিউট।”
“…ঠিক আছে, যদি এটা আপনার কাছে তেমন কোনো সমস্যা মনে না হয়, তাহলে আমারও কোনো সমস্যা নেই।” মিয়াগি ঘাবড়ে গিয়ে উত্তর দিলো।
পরেরদিন সকালে, আমি একটা স্যালুনে রিজার্ভেশন রাখলাম এবং শহরে গেলাম জুতা আর কাপড় কেনার জন্য। জীর্ণ ব্লু জিন্স আর ছেঁড়াফাড়া স্নিকার পরে তো হিমেনোর সাথে দেখা করতে যেতে পারবো না।
আমার টেস্টের সাথে মিলে যায় এমন একটা দোকান খুঁজে বের করলাম। তারপরে মিয়াগির উপদেশ অনুসরণ করে একটা ফ্রেড পেটি পোলো টি-শার্ট, চিনো প্যান্ট, ম্যাচ করা বেল্ট কিনলাম। তারপরে জুতার দোকান থেকে চকোলেট কালারের ডেজার্ট বুট কিনলাম।
“আমার মনে হয় না আপনার জাঁকজমকপূর্ণ কিছু পরতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পরিষ্কার কিছু পরছেন, সেটাই যথেষ্ট।”
“আমি কি এটাকে ‘সঠিক উপদেশ’ বলে ধরে নিবো?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“যা খুশি ভেবে নিতে পারেন আপনি।”
“বুঝতে পেরেছি। আমি তাই করবো। যদিও, মনে হচ্ছে আমার সমালোচনা করা হচ্ছে।“
“আমাকে আপনার ছোটো-ছোটো বিষয়ে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।”
কেনাকাটা শেষ হয়ে গেলে, আমার অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময়ের চেয়ে একটু আগেই গেলাম আমরা।
মিয়াগির পরামর্শ মতো, আমি ব্যাখা করে বললাম। “আগামীকাল আমি গুরুত্বপূর্ণ কারো সাথে দেখা করতে যাবো।” মহিলাটি আমাকে একটা প্রসন্ন হাসি উপহার দিয়ে প্যাশনের সাথে চুল কাটতে লাগল। সেইসাথে আমাকে আগামীকালকের বিশেষ দিনের জন্য কিছু প্র্যাক্টিক্যাল টিপস দিলো। নতুন কাপড়ে এবং নতুন হেয়ার স্ট্যাইলে, আমাকে অন্যরকম মানুষের মতো লাগছিল বললেও ভুল হবে না। আউলা-ঝাউলা চুল এবং জীর্ণ শার্ট আমার চেহারায়, আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশ ভালো রকমের ছাপ রেখেছিল।
এখন ওসব ছুড়ে ফেলার পরে পপ মিউজিকের যুবক ছেলেদের মতো তরুণ লাগছে আমাকে।
“আপনাকে গতকালকের আগের ব্যক্তি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নরকম লাগছে” মিয়াগি আমাকে বলল।
“হ্যাঁ। আমাকে সত্যিই বছরে ১০,০০০ ইয়েন মূল্যের লোকের মতো লাগছে, তাই না?”
“একদম। মনে হচ্ছে আপনার সামনে একটা প্রতিশ্রুতিশীল সুখী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।”
“ধন্যবাদ। হাসলে তোমাকে পরীর মতো লাগে।”
“আপনি আজকে অনেক সস্তা ধরনের কথা বলছেন, মি. কুসুনোকি।”
“তাই তো মনে হচ্ছে।”
“তো এই ‘পরীর’ কাহিনিটা কী?”
“মানে হচ্ছে মিষ্টি দেখতে বুদ্ধিমান মেয়ে।”
“দয়া করে এটা মিস. হিমেনোর জন্য তুলে রাখুন।”
“কিন্তু ওর গুণাবলি সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমি তোমার কথা বলছি, মিয়াগি। ওর প্রতিক্রিয়া তখনো সম্পূর্ণ অটুট। ও মাথাটা সামান্য ঝুকাল। “ধন্যবাদ। আপনার এবং আমার মূল্য; মানুষের মূল্যের তুলনায় কিছুই না। অন্তত আমাদের রিপোর্ট অনুসারে।”
“সত্যি খুব অদ্ভুত” আমি বললাম।
আমরা রাস্তার পাশের একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছিল আমি নিজের সাথে নিজেই কথা বলছি।
পাশে বসা মাঝবয়সি এক দম্পতি আমার দিকে চোরা-চোখে তাকাচ্ছিল এবং নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করতে লাগল।
খাওয়া শেষ হলে, আমরা প্রধান সড়ক ছেড়ে ব্রিজের পাশের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে, নদীর পাশ ঘেঁষে হাঁটতে লাগলাম।
ততক্ষণে আমি সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গিয়েছি। আমরা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমি মিয়াগির হাত ধরে সামনে পিছনে দোল দিতে লাগলাম। মিয়াগিকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাল। আমি বলতে গেলে ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম।
অন্যরা কেবল আমাকে অদ্ভুতভাবে হাঁটতে দেখছে। আমি এসব পাত্তা দেই না। আমি এমনিতেই সৎ মানুষের কাতারে পড়ি না। তাই নিজেকে আমি অদ্ভুত লোক হিসাবেই উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এটা খুবই সহজ।
একবার মিয়াগি আমার হাত ধরাতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরে, ও ঝলমলে চেহারায় বলল, “এখন, মাতাল কুসুনোকি, আমাকে হিমেনো ভাবতে চেষ্টা করে পটাতে চেষ্টা করুন।
আমি থেমে গিয়ে মিয়াগির চোখে চোখ রেখে বললাম, “আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা যা ঘটেছে তা হচ্ছে তুমি আমার জীবনে আসাটা। সবচেয়ে খারাপ জিনিস ছিল তোমার চলে যাওয়াটা। এখন তোমার উত্তরের উপর নির্ভর করছে আমি কি আমার জীবনের সেরাটা ফিরে পাবো নাকি খারাপটা।”
“বাহ। চটকদার কথা হিসাবে খুবই মধুর উপস্থাপন বলা যায়। আমি সত্যিই মুগ্ধ।”
“তো হিমেনো কিভাবে উত্তর দিবে বলে তোমার মনে হয়?”
“ওহ, যদি এটা মিস. হিমেনো হতো” মিয়াগি মুখে হাত রেখে চিন্তা করল। “…সম্ভবত উনি বললেন, ‘হঠাৎ করে কী সব আজেবাজে কথা বলছ?’ এবং হেসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো।”
“ওহহ। যদি মিয়াগি হতো?”
“…আপনার কথার মানে বুঝলাম না।”
“মজা করছিলাম। এই নিয়ে চিন্তা করো না” আমি নিজে নিজে মুখ টিপে হাসলাম।
“আপনি সত্যি কি এমন ধরনের লোক, মি. কুসুনোকি? অর্থাৎ এই ধরনের রসিকতা করেন।”
“আমি নিজেও জানি না। আমি “ব্যক্তিত্ব” কিংবা “স্বভাব” অথবা “চরিত্র” এসব শব্দের উপর খুব একটা বিশ্বাস রাখি না। এসব জিনিস অবস্থার উপর নির্ভর করে সম্পূর্ণ বদলে যায়। লম্বা সময়ের জন্য দেখলে দেখা যাবে, মানুষ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের পছন্দের বিষয়ও পরিবর্তন করে নেয়। মানুষ ধারাবাহিকতায় অনেক বিশ্বাস রাখে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ যা ভাবে এটা এর চেয়েও অনেক বেশি বাহ্যিক।”
“আপনি এরকম কিছু বলবেন এমনটা আশা করিনি আমি।”
“পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে যার চিন্তা করতে পছন্দ করে; তারা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম।”
মিয়াগি মৃদুভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “আমার মনে হয় কথাটা সত্যি” মিয়াগি একমত হলো।
হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে, আমরা একটা বাসে উঠে পড়লাম। বাসে বেশ অনেকজন প্যাসেঞ্জার ছিল। আমি মিয়াগির সাথে হিমেনোর আর আমার স্মৃতির কথা বলতে লাগলাম।
আমরা বেশ কয়েকটা বাস পরিবর্তন করলাম এবং শেষ পর্যন্ত ডেটের জন্য শহরের বিখ্যাত একটা পর্যবেক্ষণ প্লাটফর্মে এসে নামলাম। সেখানে অন্ততপক্ষে দশ জন যুগল ছিল যারা একে অন্যের হাত ধরে চুমু খাচ্ছিল। আমি মিয়াগির সাথে কথা বলা চালিয়ে গেলাম।
অদ্ভুতভাবে, আমার ওপর মানুষের নজর অনুভব করলাম না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
“প্রথমবার যখন আমি এখানে আসি সেসময় হিমেনো ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। প্যাচানো সিঁড়ি বেয়ে একটি বাচ্চা ওপরের রেলিংয়ে ওঠার জন্য একদম সঠিক উচ্চতায় ছিল। সুতরাং হিমেনো সেটা বেয়ে উঠতে চেষ্টা করল। কিন্তু যখনই হিমেনো মেঝেতে নামতে নিলো, ঠিক তখনই আমি রেলিংয়ে একটা গ্যাপ লক্ষ করলাম। যদি আমি ওকে থামানোর জন্য সেখানে উপস্থিত না থাকতাম, ও নিশ্চিতভাবেই পড়ে যেত। ও বেশ বুদ্ধিমানের মতো ভাব ধরে। কিন্তু মাঝে মাঝে ও খুবই বোকামি করে। ওকে তুমি একা ছেড়ে দিতে পারবে না। ওর দিকে দ্রুত যাওয়ার কারণে আমার গায়ে আঁচড় লেগেছিল। শুধুমাত্র সেদিন, ও অস্বাভাবিকভাবে ভালো ব্যবহার করেছিল…”
আমি যতই কথা বলতে লাগলাম মিয়াগি আমার দিকে ঠিক ততটাই চিন্তিত নজরে তাকাতে লাগল। সম্ভবত ওর অস্বস্তি লাগছে।
ও আমার চেয়ে বেশি কিছু জানতো। তখনো পর্যন্ত ওর আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বলা বাকি ছিল।
পর্যবেক্ষণ প্লাটফর্ম ছিল সেটা ব্যাখ্যা করার সবচেয়ে সঠিক জায়গা। কিন্তু ও সে ব্যাপারে কথা বলেনি।
হয়তো ও ভেবেছিল; যতক্ষণ পর্যন্ত আমি পারি, আমাকে স্বপ্ন দেখতে দেওয়া উচিত।
******
অবশেষে দিনটা এলো। এটা ছিল বৃষ্টিস্নাত বিকেল। স্টেশনটা ছাতা বহন করা মানুষে পরিপূর্ণ।
দ্বিতীয়তলা থেকে প্লাজার উপর নজর বুলাতেই, হরেক রকমের ছাতার নড়াচড়া দেখা গেল।
আমি বইয়ের দোকানের সামনে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু পাঁচটা বাজার দশ মিনিট পরেও হিমেনোর দেখা পাওয়া গেল না।
তাড়াহুড়োর কিছু নেই, নিজেকে বললাম। বৃষ্টির জন্য সব জায়গায় প্রচুর ভিড়। ও সম্ভবত ব্যস্ত। তবুও আমি অধৈর্য হয়ে প্রতি মিনিটে অন্তত তিনবার করে আমার হাতের ঘড়িটি দেখতে লাগলাম।
বিশ মিনিট পার হতেই মনে হলো এক কিংবা দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। আমি কি তবে ভুল জায়গায় অপেক্ষা করছি? নাকি হিমেনো? ও বলেছিল আমাকে বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়াতে। আর এটাই হচ্ছে এই এলাকার একমাত্র বইয়ের দোকান। তাহলে আমার ভুল হওয়া কীভাবে সম্ভব?
সাতাশ মিনিট পরে, আমি কেবলই মাত্র হিমেনোর খোঁজে নামতে যাব, আর সেই মুহূর্তে ওকে হাত নেড়ে আমার দিকে আসতে দেখলাম। গতকালকে দেওয়া ওর প্রতিশ্রুতি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেছিলাম আমি। ভেবেছিলাম ওটা ছিল পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বাহানা। সুতরাং আমি সেটা বিশ্বাস করেই হাঁফ ছেড়েছিলাম।
এমনকি হিমেনো যদি এমন কেউ না হতো; যাকে দেখার জন্য আমি দশ বছর ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। তবুও তাকে দেখা মাত্র স্বীকার করতে বাধ্য হলাম, সেদিন হিমেনোকে সত্যি সুন্দর লেগেছিল।
ওর শরীরের প্রতিটি বাঁক যেন খুব যত্নসহকারে বানানো হয়েছে। কে নোকিছুই খুব বেশি অতিরিক্ত ছিল না; মনে হয় ওর প্রতিটি অঙ্গ নিজ নিজ কাজে ভীষণ সতর্ক।
আমি যদি ওর পরিচিত কেউ না হতাম, হয়তো এক দেখাতেই আমার বুকে ব্যথা অনুভব হতো। ওর দেওয়া সেই ব্যথা আমার বুকে হয়তো একটা গর্ত রেখে যেত, যা পূরণ করার জন্য আমি মরতেও রাজি ছিলাম।
“ও কখনো আমার হবে না, হবে কি…যদি নাহয় তবে আমার জীবন কি বৃথা না?” আমি হয়তো এমনটাই ভাবতাম তখন।
সুতরাং স্টেশনের এত এত মানুষের মাঝে আমি ওর একমাত্র কাছের লোক চিন্তা করে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতে লাগল। আমি এই ব্যাপারে খুবই খুশি ছিলাম।
“বৃষ্টির কারণে বাস দেরি করেছে” হিমেনো ব্যাখ্যা করল। “তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত। আমি তোমাকে ট্রিট দিবো।”
“না, আমাকে অনুমতি দাও। আমি তোমাকে এবারে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। তোমার ট্রিটের কথা আজকের দিনের জন্য ভুলে যাও।”
আমি বুঝতে পারলাম যে শুধু আমার হাবভাবই বদলে যায়নি, আমার কণ্ঠও বদলে গিয়েছে।
“হুমম। তাহলে তুমি ‘পরবর্তী সময়’-এরও আশা করছো?” সে নির্লিপ্ত কণ্ঠে, সতর্ক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ। এবং পরবর্তী সময়ে, আমি হয়তো আরেকবারের আশা করবো।”
“সত্যি বলছে দেখে খুশি হলাম” হিমেনো মুখ চেপে হাসল।
হিমেনো নিশ্চিতভাবেই এমন কিছুই বলবে, আমি নিজেকে ফিসফিস করে বললাম। দশ বছরেও ও একটুও বদলায়নি। ও এখনো ব্যঙ্গাত্মক কিন্তু আন্তরিকতার সাথে কথা বলে।
আমরা সুড়ঙ্গ দিয়ে গেলাম। এবং শেষ প্রান্তে পৌঁছানোর পরে, আমি আমার ছাতা মেলে ধরলাম। হিমেনোসেটা দ্রুত গতিতে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের দুজনের মাঝে ধরল।
“তুমি সবসময় তোমার ছাতা আনতে ভুলে যেতে, কুসুনোকি, সুতরাং অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমারটা তোমার সাথে ভাগাভাগি করতে হতো।”
“ঠিক বলেছ,” আমি ছাতাটা ফিরিয়ে ওর দিকে ধরে রেখে বললাম।
“তাহলে এখন থেকে উল্টোটা হলে ভালো হয় না?”
“আহ…..”
আমরা এক ছাতার নিচে হাঁটতে লাগলাম।
“আচ্ছা, সেদিন তুমি ওখানে কী করছিলে?” হিমেনো জিজ্ঞেস করল।
“তোমাকে খুঁজছিলাম, হিমেনো।” আমি উত্তর দিলাম।
“মিথ্যুক” হিমেনো বলল, আমার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে।
“এটাই সত্যি’ আমি বললাম হাসতে হাসতে।
আমি ভাবছিলাম সবকিছু দুর্দান্ত চলছে।
আমি হিমেনোকে ওর প্রতি আমার অনুরাগের কথা বলছি। এবং ও আমার প্রতি ওর অনুরাগ দেখাচ্ছে।
এটাই আমি বিশ্বাস করেছিলাম, এ-নিয়ে কোনো সন্দেহ করিনি।
হিমেনোর অন্তরের গভীরে ঠিক কী চিন্তা চলছে, সেটা আমি সত্যিই জানতে চাইনি।
****
এখন, দুজনের উত্তরগুলোর তুলনা করলে কেমন হয়।
যখন রেস্টুরেন্টে হিমেনোর বিপরীতে বসে কথা বলতে লাগলাম, আমি একটা অবিশ্বাস্যভুল করে বসলাম।
ঠিক করে বললে, হয়তো ওটা কোনো ভুল নয়। ওই দৃশ্যটা পুনরায় দৃশ্যায়ন করার জন্য আমাকে যদি অসংখ্যাবার সুযোগ দেওয়াও হয়, আমি সম্ভবত প্রতিবারই একই উত্তর বেছে নিতাম। আর কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না।
তার উপরে, আমার “ভুল” করার কারণটা ওই মিটিং-এ উৎপত্তি হয়নি। এটা অনেক আগে থেকে আস্তে আস্তে উৎপন্ন হয়েছিল।
তবুও যথাসময়ে, আমি নিশ্চিতভাবেই ভুল করেছিলাম।
কিন্তু ঘটনাক্রমে, “ভুল”-এর ফলাফলই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
কেন মিয়াগি, হিমেনোর সাথে আমার দেখা হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিল সেটাও জানতে পারলাম।
অর্ডার করার পরে, ওর প্রতি আমার অনুরাগ দেখানোর জন্য আমি হিমেনোর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ও হাসি দিয়ে উত্তর দিলো।
হিমেনো গ্লাস থেকে এক চুমুক পানি পান করে বলল, “এত বছর ধরে তুমি কী করেছিলে, কুসুনোকি।“
“আমি তোমার সম্পর্কে আগে জানতে চাই” আমি বললাম। কিন্তু ও জোর করল, “তোমাকে দিয়েই শুরু করা যাক। “
আমি ভূমিকাস্বরূপ “এটা শোনার মতো খুব একটা আকর্ষণীয় কিছু না” কথাটা দিয়ে শুরু করলাম। তারপরে আমার মিডেল স্কুল এবং হাই স্কুল নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। এটা সত্যিই তেমন কোনো আকর্ষণীয় কিছু না।
কিভাবে মিডেল স্কুলের সেকেন্ড ইয়ার থেকে আস্তে-আস্তে লেখাপড়ায় ঢিল দেওয়া শুরু করলাম। কিভাবে প্রতি বছর দশ বছর বয়স্ক আমার নিখুঁত স্মৃতি দ্রুত খারাপ হতে লাগল।
কিভাবে আমি ওই অঞ্চলের সেরা হাই স্কুলে গেলাম, কিন্তু কিভাবে মাঝ দিয়ে পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমি সাধারণ মানের একটা কলেজে পড়ছি।
কিভাবে আমি আমার বাবা-মাকে কলেজের ফিস দেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছি; যখন উনারা মনে করতেন বিখ্যাত কোনো কলেজ না হলে কলেজে যাওয়ার কোনো মানেই নেই।
কিভাবে ক্লাস এবং নিজের খরচপাতি আমি নিজেই বহন করছি।
এবং কিভাবে আমার সতেরো বছরের শীতের সময় থেকে আমি পেইন্টব্রাশ ছুঁইনি।
পাঁচ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে আমার বলা শেষ হয়ে গেল। আমার জীবন সম্পর্কে বলার মতো খুব কমই কথা জমানো ছিল।
“হাহ, তো তুমি আঁকাআঁকি ছেড়ে দিয়েছ… এটা খুবই খারাপ হলো। আমি তোমার ছবিগুলো পছন্দ করতাম, কুসুনোকি” হিমেনো বলল। আমি যাকে চিনতাম তার সাথে এই মানুষটির অনেক পার্থক্য, আমি ভাবলাম।
“তুমি সবসময় দারুণ আঁকতে। আর এত সুন্দর, শ্বাসরুদ্ধকর ছবি আঁকতে যেন এসব আঁকা কোনো ব্যাপারই ছিল না। জানো, আমি সেভাবে জীবনযাপন করতে পারিনি বলে, তখন সবসময়ই ঈর্ষান্বিত ছিলাম।”
“সেসময়ে তুমি আমাকে এরকম কিছুই বলনি।”
“কারণ, সেসময়ে আমি সত্যি তোমার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলাম। আমার সমস্ত প্রতিভা ছিল পড়াশোনাকেন্দ্রিক। আমি সেসময়ে তোমার প্রতিভা মেনে নিতে চাইনি। তুমি সম্ভবত কখনই খেয়াল করোনি, মাঝেমধ্যে আমি তোমার আঁকা ছবি বাসায় নিয়ে যেতাম এবং ওগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম, কুসুনোকি” হিমেনো বলল। ওর চোখ বহুদূরে তাকিয়ে আছে।
“হ্যাঁ, আমি তখন শত্রুর মতো ছিলাম। আমাদের একাডেমিক রেজাল্ট প্রায় একই ছিল, কিন্তু বড়দের প্রশংসা শুধুমাত্র সুন্দরী হিমেনোর ক্ষেত্রেই হতো। আমি তখন ভাবতাম কেউ একই সাথে সুন্দরী এবং ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার যোগ্য হওয়া সম্পূর্ণ অন্যায্য।”
“ওর মতো কেউ হাই স্কুল থেকে ড্রপ আউট হবে এমনটাও কেউ আশা করেনি” হিমেনো আকস্মিকভাবে মুখ ফস্কে বলল।
“ড্রপ আউট?” আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“তাহলে তুমি জানতে না।” ও ভ্রু নিচে নামিয়ে হাসল। “আমি ভেবেছিলাম রিইউনিয়ন বা এরকম কিছুতে গুজব ছড়িয়ে থাকবে।”
“কোনো ক্লাস রিইউনিয়নে যাইনি। যেহেতু আমি ভেবেছিলাম তুমিও থাকবে না, হিমেনো।“
“হুমম। …উম, এটা খুব আকর্ষণীয় আমি তা বলবো না, কিন্তু…”
হিমেনো তখন শুরু থেকে ড্রপ আউট পর্যন্ত সবকিছু ব্যাখ্যা করল। যাহোক, ও ওর প্রেগনেন্সির অংশটা সম্পূর্ণ বাদ দিলো যা কিনা মিয়াগি হিমেনোর জীবনের সারসংক্ষেপ বলার সময় বলেছিল।
হিমেনো শুধু বলল, “আমি একজন গ্র্যাজুয়েট করা সিনিয়রকে বিয়ে করেছিলাম এবং ড্রপ আউট হয়েছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল, তাই আমরা ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছি।”
“আমার মনে হয় আমি শিশুসুলভ ছিলাম” হিমেনো জোর করে হাসি দিয়ে বলল। “সবকিছু যেভাবে আছে আমি সেগুলো ওভাবে গ্রহণ করে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারিনি। আমার ধারণা, একেবারে প্রথম থেকেই হওয়া ছোটো ছোটো খুঁত এবং জগাখিচুড়ি সহ্য করতে পারিনি আমি। যখন স্কুল পরিবর্তন করে তোমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম, দশ বছর আগের গ্রীষ্মের সেদিনের পর থেকে আমার মাথায় কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আমি নিশ্চিত আমি তখন বুদ্ধিমান ছিলাম। কিন্তু সেটা আমাকে চিন্তা করাতে বাধ্য করল, আমার আর পরিপক্ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। যখন সবাই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছে, আমার মাঝে এখনো দশ বছর আগের সেই স্বপ্ন দেখা মানুষটির চেয়ে খুব একটা পার্থক্য নেই।“
হিমেনো আহত ছোট্ট মেয়ের মতো টেবিলের উপরে ওর হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে রইল।
“তাহলে এবার বলো, তোমার কী অবস্থা, কুসুনোকি? আমি নিশ্চিত তুমি এই দশ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছ, হওনি?”
এই জায়গায় এসে, আমি আমার স্থিরতা হারাতে শুরু করলাম।
“একমাত্র তুমিই পরিবর্তন হওনি ব্যাপারটা তা নয়, হিমেনো” আমি বললাম। “আমাদের আলাদা হওয়ার পর থেকে আমিও একইরকম আছি। বছরের পর বছর বেঁচে থাকার জন্য কোনো প্রেরণা ছিল না। একাকী সময়গুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে কেটে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল পৃথিবীটার অস্তিত্ব রয়েছে শুধু আমাকে হতাশ করার জন্য। হয়তো আমি ইতোমধ্যে মরে গিয়েছি, সেকারণে কয়েকদিন আগে…”
আমি জানি আমি কী বলছি। হিমেনোর কাছে শুনতে কেমন লাগবে সেটা ধারণা করতে পারছি আমি। এবং আমি এও বুঝতে পারছিলাম এটা করা কতটা বোকামি।
কিন্তু কিছুই আমাকে থামাতে পারল না।
“…আমি আমার আয়ুষ্কাল বিক্রি করে দিয়েছি। বছরে মাত্র ১০,০০০ ইয়েনের বিনিময়ে।”
হিমেনোর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ওকে হতভম্ব দেখাতে লাগল। কিন্তু কথার তোড় বন্ধ করা এক কথায় অসম্ভব। আমার ভিতরে যে তালগোল পাকানো অবস্থার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাকে বের হতে দিলাম।
আমি একটার পর একটা বলেই যেতে লাগলাম। যে দোকানটা আয়ুষ্কাল কেনে তার কথা। ভেবেছিলাম কয়েক মিলিয়ন ইয়েন পাবো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বনিম্ন দাম দশ হাজার ইয়েন পেলাম। ভবিষ্যতের প্রতি নিরাশ হয়ে, তিন মাস বাদে বাকিটা বিক্রি করে দেওয়ার কথা। এবং এরপর থেকে এক অদৃশ্য পর্যবেক্ষক অনুসরণ করছে সেই কথা।
আমি এমনভাবে কথা বলে গেলাম যেন তার কাছ থেকে সহানুভূতি আশা করছিলাম।
“তুমি ওকে দেখতে পারবে না, হিমেনো। কিন্তু আমার পর্যবেক্ষক ঠিক এখানেই আছে” আমি বললাম, মিয়াগির দিকে ইঙ্গিত করে। “এখানে, ঠিক এখানে। ওর নাম হচ্ছে মিয়াগি। ও খুব স্পষ্টভাবে কথা বলে, কিন্তু তুমি যদি ওর সাথে কথা বলো আসলে ও খুব…”
“আচ্ছা, কুসুনোকি? আমি অপমান করার জন্য বলছি না, কিন্তু… তুমি যা বলছ সেটা যে কতটা অযোক্তিক বুঝতে পারছ?” হিমেনো ক্ষমা চাওয়ার সুরে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ, ব্যাপারটা কিরকম হাস্যকর শোনাচ্ছে আমি সেটা জানি।”
“হ্যাঁ, এটা হাস্যকর… কিন্তু জানো কুসুনোকি, তা সত্ত্বেও, আমি এটাকে মিথ্যা বলে চিন্তা করতে পারছি না। হাতে খুব বেশি সময় নেই কথাটাও না, আবার তোমার পাশে বসে একটা মেয়ে তোমাকে পর্যবেক্ষণ করছে সেটাও না। আমরা দুজন দুজনকে এতদিন ধরে চিনি যে, তুমি যদি আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টা করো আমি সাথে-সাথেই ধরে ফেলতে পারবো। যদিও এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর, তুমি তোমার আয়ুষ্কাল বিক্রির ব্যাপারে মিথ্যা বলছ না। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি।”
কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না কী রকম খুশি হয়েছিলাম আমি সেমুহূর্তে।
“…আমি দুঃখিত, আমিও একটা জিনিস তোমার কাছ থেকে লুকিয়েছি…” হিমেনো কাশতে কাশতে মুখে একটা রুমাল দিলো। তারপরে উঠে দাঁড়াল।
“এক্সিউজ মি। বাকি কথা আমরা ডিনারের পরে চালিয়ে যাবো” হিমেনো বলল, তারপরে হাঁটা ধরল।
ও বাথরুমের দিকে যেতে লাগল। তাই আমি চিন্তা করলাম না।
আমাদের খাবার চলে এলো, এবং আমি আশা করছি হিমেনো জলদি ফিরে আসবে। ওর বাকি কথাটা শুনতে হবে আমার।
কিন্তু হিমেনো আর ফিরে এলো না।
যেহেতু ও অনেক দেরি করছিল, ওকে নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম। ভাবলাম হিমেনো রক্তশূন্যতায় মাথা ঘুরে পড়ে গেল কি-না অথবা এরকম কিছু একটা হলো কি-না। তাই আমি মিয়াগিকে অনুরোধ করলাম।
“মাফ করবে, তুমি কি লেডিস রুমে গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবে হয়তোবা হিমেনোর কিছু একটা হয়েছে।”
মিয়াগি নীরবে সম্মতির মাথা ঝাঁকাল। কয়েক মিনিট পরে ফিরে এসে জানালো হিমেনো চলে গিয়েছে।
আমি সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট খুঁজে দেখলাম। কিন্তু কোথাও ওকে খুঁজে পেলাম না।
পরাজিত হয়ে সিটে ফিরে এসে ঠান্ডা গোশতের সামনে বসলাম। আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। পেটের মধ্যে ভারী এবং অস্বস্তিকর কিছু একটার উপস্থিতি টের পেলাম আমি
গলা শুকিয়ে জ্বালা করতে লাগল। আমি গ্লাস ধরলে গেলাম, কিন্তু আমার দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে এলো এবং পানি টেবিলে পড়ে গেল।
আমি ধীরে ধীরে ঠান্ডা পাস্তা খেতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পরে, মিয়াগি আমার বিপরীতে বসল এবং হিমেনোর পাস্তাটা খেতে লাগল।
“ঠান্ডা হলেও বেশ মজাদার” ও বলল।
আমি কিছুই বললাম না।
আমার খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও, তখনো নিশ্চিত ছিলাম না কী রকম স্বাদ ছিল। আমি মিয়াগিকে প্রশ্ন করলাম।
“আচ্ছা, মিয়াগি। সত্যি করে বলো। তোমার কী মনে হয়, হিমেনো কেন চলে গেল?”
মিয়াগি উত্তর দিলো, “সম্ভবত উনি ভেবেছিলেন আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন।”
কথাটা এক দৃষ্টিতে সত্যিই।
কিন্তু সত্যিটা আরও একটু বেশিই জটিল, এবং মিয়াগিও সেটা জানে।
ও আমার খাতিরে, সেটা গোপন রেখেছিল।
রেজিস্টারে দাম চুকিয়ে বেরিয়ে আসার সময়, কেউ একজনকে পিছন থেকে আমাকে ডাকতে শুনলাম। ঘুরে দেখলাম ওয়েটার হাতে কিছু একটা নিয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসছে।
“আপনি যে মহিলার সাথে এসেছিলেন উনি আমাকে অনুরোধ করেছেন আপনাকে এটা দেওয়ার জন্য।”
এটা ছিল একটা চিঠি। চিঠিটা নোটবুকের ছেঁড়া পাতায় লেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আমি সময় নিয়ে সেটা পড়লাম।
যখন পড়া শেষ হলো, আমি জানতে পারলাম প্রথম থেকেই মিয়াগি আমাকে মিথ্যা বলে এসেছে।
“তুমি এটা জানা সত্ত্বেও আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলে?”
মিয়াগি মাথা নেড়ে উত্তর দিলো।
“হ্যাঁ। এজন্য আমি দুঃখিত।”
“ক্ষমা চাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুমি আমাকে সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দিয়েছ।”
আসলে আমার উচিত ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ার মতো আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই আমার।
“আর আমার আসল জীবনে, হিমেনো ওর লক্ষ্যে সফল হয়েছিল, তাই না?”
“ঠিক” মিয়াগি বলল। “মিস. হিমেনো… সেটা ঠিক আপনার সামনেই করেছিল, মি. কুসুনোকি।
আমাকে দেখানোর জন্য। বছরের পর বছরের অপমান শোধ করার জন্য। আমি চিঠিটা আবারো পড়লাম।
সেটাতে ঠিক এটাই লেখা আছে।
আমার এক এবং একমাত্র ছোটবেলার বন্ধু।
আমার লক্ষ্য ছিল ঠিক তোমার সামনেই মরে যাওয়া।
আমার ইচ্ছে ছিল তোমাকে অবজার্ভেশন প্লাটফর্মের নিচে অপেক্ষা করানো এবং ঠিক তোমার পাশেই লাফ দিয়ে পড়ার
হয়তো তুমি কখনই খেয়াল করোনি, আমি সবসময়ই তোমাকে ঘৃণা করে এসেছি।
আমার সাহায্যের আবেদনে কখনই সাড়া দাওনি তুমি। তারপরেও স্বাভাবিকভাবে আমার সামনে উদয় হয়েছ। আমি তোমাকে এর চেয়ে বেশি ঘৃণা করতে পারতাম না।
আমি যেহেতু এখন তোমার কাছে প্রয়োজনহীন হয়ে পড়েছি, আমি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছি।
কিন্তু মনে হচ্ছে গত দশ বছরে তুমি আমার চেয়েও বেশি পাগল হয়ে হয়ে গিয়েছ।
এখন তোমার উপর প্রতিশোধ নিয়ে কোনো লাভ নেই।
সুতরাং আমি নীরবে গায়েব হয়ে যাচ্ছি।
বিদায়।
আমি শুধু এইটুকু আশা করতে পারি অল্প সময় বাকি থাকার যে কথা তুমি বলেছিলে; সেটা যেন সত্যি হয়।
কী বোকা আমি।
আমার সারাজীবন আমি একা থেকেছি শুধুমাত্র এরকম অনুভূতি এড়িয়ে চলার জন্য।
আমার উচিত ছিল শেষ পর্যন্ত নিজেকে বিশ্বাস করে যাওয়া।
*******
আমি স্টেশনের পাশের ব্রিজে গেলাম। হিমেনোর চিঠি দিয়ে সাবধানে কাগজের প্লেন বানিয়ে নদীতে ছুড়ে দিলাম। নদীতে বিল্ডিংয়ের আলো প্রতিফলিত হচ্ছিল। প্লেনটা কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে রইল। অবশেষে পানি স্পর্শ করে সেটা ডুবে গেল।
অতঃপর আমি হিমেনোকে দিতে চাওয়া টাকার এনভেলাপটা বের করে, পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রত্যেকের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করে দিলাম।
মানুষজনের প্রতিক্রিয়া ছিল নানানরকম। কেউ কেউ আমাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে লাগল; আবার কেউ কেউ খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে টাকাটা নিলো।
কেউ কেউ টাকাটা ফিরিয়ে দিলো, আবার কেউ কেউ আরও বেশি চাইলো। “আপনার এখন থামা উচিত” মিয়াগি বলল নির্বিকারভাবে আমার জামার হাতা টেনে ধরে।
“আমি কাউকে বিরক্ত করছি না, করছি নাকি?” আমি উত্তর দিলাম, ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে।
টাকাটা মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। আমি এমনকি আমার নিজের ওয়ালেট থেকে টাকা বের করলাম। আমি ১০,০০০ ইয়েনের বিল থেকে নিয়ে শুরু করে সবকিছুই দিয়ে দিলাম।
যখন দেওয়ার মতো আর কিছুই রইল না, আমি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে রইলাম।
মানুষজন আমার দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকাতে লাগল।
ট্যাক্সি ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও আমার কাছে রইল না। সুতরাং আমি বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। মিয়াগি ওর ব্যাগ থেকে একটা নীল ছাতা বের করে মেলে ধরল।
আমি বুঝতে পারলাম আমার ছাতাটা ভুলে রেস্টুরেন্টে ফেলে এসেছি। কিন্তু আমি ভিজে যাই নাকি ঠান্ডা বাধাই; তাতে কিছুতেই কিছু যায় আসে না।
“আপনি ভিজে যাবেন” মিয়াগি বলল, ছাতাটা উপরে তুলে ধরে। ও আমাকে ওর ছাতার নিচে যেতে বলছে।
“দেখতেই পাচ্ছো,আমি এখন বৃষ্টিতে ভেজার মুডে আছি“ আমি ওকে বললাম।
“তাই নাকি” ও বলল, ছাতাটা বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে। মিয়াগি আমার পিছন পিছন হাঁটতে লাগল। আমরা দুজনেই কাক-ভেজা হয়ে গেলাম।
“তোমার ভেজার কোনো প্রয়োজন নেই।”
“দেখতেই পাচ্ছেন, আমি ভেজার মুডে আছি” মিয়াগি হেসে উত্তর দিলো। তোমার যা মনে চায় করো, ও দিকে পিছন ফিরে আমি ভাবতে লাগলাম। আমি একটা বাসস্টপ খুঁজে পেলাম যেখানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিতে পারি। মাথার উপরে একটা স্ট্রিটলাইট। যেটা মাঝেমধ্যে জ্বলছে আর নিভছে যেন সে নিজেকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, জ্বলতে হবে।
বসার সাথে-সাথেই, আমার প্রচণ্ড ঘুম পেলো। শরীর থেকে আমার মন বেশি পরিমাণে বিশ্রাম চাচ্ছে। মনে হয় আমি কয়েক মিনিটের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলামও। ভেজা শরীরের শিরশিরে ভাব আমাকে আবারো জাগিয়ে তুলল।
মিয়াগি আমার পাশে ঘুমাচ্ছিল। ও ওর হাঁটু চেপে ধরে আছে। নিজেকে উষ্ণ রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় রত।
আমার মতো একজন গর্দভ এবং স্বার্থপরের কাজকর্মের সাক্ষী হতে হচ্ছে বলে ওর প্রতি আমি করুণাবোধ করতে লাগলাম।
আমি ধীরে-ধীরে উঠে বসলাম যেন মিয়াগি জেগে না যায় ঠিক সেইভাবে। তারপরে চারপাশে ঘুরেফিরে একটা পরিত্যক্ত কমিউনিটি সেন্টার খুঁজে পেলাম।
আমি বলবো না এটা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু ওটাতে এখনো বিদ্যুৎ আছে। সামনের দরজা এবং রুমগুলোতে তালা দেওয়া নয়।
বেঞ্চে ফিরে এসে, মিয়াগিকে কোলে তুলে নিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলাম। আমার চেয়ে কম ঘুমকাতুরে কোনো মেয়ে হলে নিশ্চিতভাবেই উঠে যেত। কিন্তু মিয়াগি হঠাৎ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
রুম থেকে তাতামি ম্যাটের গন্ধ আসছে। এক পাশে কুশনের স্তূপ রাখা। পোকামাকড় আছে কি-না দেখে নিয়ে, সেখান থেকে আমি কয়েকটা মেঝেতে ফেলে মিয়াগিকে সেগুলোর উপরে রাখলাম। নিজের বেডিংয়ের জন্য একই কাজ করলাম আমি। জানালার পাশে মশার কয়েল পড়ে থাকতে দেখলাম যেগুলো কিনা কয়েক দশক ধরে রয়েছে। আমার লাইটার দিয়ে একটা জ্বালালাম।
বৃষ্টির ফোঁটা ঘুমপাড়ানি গানের মতো কাজ করছিল।
আমি তাই করা শুরু করলাম; যা আমি ঘুমানোর আগে সচরাচর করি। আমি সেরা প্রাকৃতিক দৃশ্যের কল্পনা করতে লাগলাম।
আমি যেসব জায়গায় থাকতে চাই সেসব জায়গার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খুঁটিনাটি নিয়ে চিন্তা করতে ব্যয় করলাম।
আমি মুক্তভাবে সেসব “স্মৃতি” কল্পনা করতে লাগলাম, যা কখনোই আমার ছিল না। এবং “এমন কোথাও” যেখানে আমি কখনো যাইনি। হতে পারে অতীত কিংবা ভবিষ্যতের “কোনো একদিন”।
সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে এটাই আমার অভ্যাস।
হয়তো এই ছেলেমানুষি অভ্যাসের কারণেই আমি বাস্তব জগতের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি।
কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আপস করার এটাই একমাত্র উপায়।
********
সম্ভবত আমি যা ভাবছিলাম সেটাই আমাকে মাঝরাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল। একটা স্বপ্নের মাঝে আশা খুঁজে পেলাম। হতাশার সময়ে যা খুবই সাধারণ।
এটা যদি স্বপ্ন হয়, তাহলে বলতে হবে এটা খুবই লজ্জাজনক স্বপ্ন।
যদি এটা বাস্তবতা হয়; সত্যি বলতে, আর কিছুই আমাকে এরচেয়ে বেশি খুশি করতে পারবে না।
ম্যাটে কারো পায়ের শব্দে শুনতে পেলাম। ঘ্রাণ শুনে বুঝলাম এটা মিয়াগি। ও আমার বালিশের পাশে বসল। এমনকি গ্রীষ্মেও, মিয়াগির শরীর থেকে শীতের পরিষ্কার সকালের মতো ঘ্রাণ আসছে।
আমি চোখ বন্ধ রাখলাম। আমি জানি না কেন, কিন্তু মনে হলো এটা করাই সবচেয়ে ভালো হবে।
ও আমার মাথায় হাত ছোঁয়াল। তারপরে আস্তে-আস্তে হাত বুলাতে লাগল। সম্ভবত এক মিনিটের বেশি এটা করেনি।
মিয়াগি মনে হলো ফিসফিস করে কিছু একটা বলল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমি ঠিকমতো শুনতে পেলাম না।
তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়, আমি ভাবতে লাগলাম: মিয়াগি আমাকে ঠিক কতটুকু সাহায্য করেছে? মিয়াগি যদি আমার পাশে না থাকতো তাহলে কী রকম কোণঠাসা অনুভব করতাম আমি।
একারণেই আমার উচিত ওকে আর বেশি উদ্বিগ্ন না করা।
ও এখানে চাকরির খাতিরে এসেছে। ও আমার প্রতি দয়ালু কারণ, খুব শীঘ্রই আমি মারা যাবো। এর মানে এই না আমার প্রতি ওর আকর্ষণ আছে।
আমার কোনো অমূলক আশা করা উচিত না। এগুলো শুধু আমাকেই অসুখী করবে না, ওকেও অসুখী করবে। আমি ওর কাঁধে অতিরিক্ত অপরাধবোধ চাপিয়ে দিচ্ছি। যা আমার মৃত্যুর পরে তিক্ততায় পরিণত হবে।
আমি নীরবে মারা যাবো। আমি আমার প্রতিদিনকার স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিনয়ী জীবনে ফিরে যাবো যেখানে কেউ আমাকে গোণায় ধরে না। ঠিক বিড়ালের মতো। আমি নীরবে এবং গোপনে নিঃশেষ হয়ে যাবো।
আমি গোপনে এই প্রতিজ্ঞা করলাম।
পরেরদিন সকালে তীব্র গরমে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। বাইরে গ্রেড স্কুলের বাচ্চাদের শারীরিক কসরত করতে শুনলাম।
মিয়াগি ইতোমধ্যে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। নিনা সিমনের “আই উইশ আই নিউ” গুনগুন করছে এবং কুশনগুলো পরিপাটি করছে।
আমি তখনো তন্দ্রালুভাব অনুভব করছিলাম। আমরা এখানে আর থাকতে পারবো না।
“চলুন, বাসায় যাওয়া যাক” মিয়াগি বলল।
“চলো।” আমি উত্তর দিলাম।