॥ দশ ॥
বৈদ্যনাথ হাল ছাড়েনি, হার মানতে সে রাজী নয়। আরেকবার সে তার ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে দেখতে চায়। পরদিন থেকে সকালে সে বেরিয়ে যায়, ফেরে অনেক রাত্রে। কোথায় যায়, কোথায় ঘোরে, বাড়িতে সে কিছুই বলে না। যখন ফেরে শ্রান্ত ক্লান্ত অবসন্ন বৈদ্যনাথের তখন আর কথা বলবার মতো মনের অবস্থা নয়। এমনি করেই চাকরির ব্যর্থ চেষ্টায় তিন মাস কেটে গেল। মা আবার নীরবে চোখের জল ফেলেন, স্ত্রী দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সমবেদনা জানায়। সংসারের এই থমথমে ভাব ছেলেমেয়ে দুটিকেও মুহ্যমান করে ফেলেছে। এই তিন মাসেই বৈদ্যনাথের চেহারা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। সঞ্চয় সামান্য যা-কিছু ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। শখ করে যে পাখা রেডিও কিনেছিল, একে একে সেগুলি বিক্রী করে দিয়েছে, এবার টান পড়েছে বৌ-এর গয়নার উপর।
ডাঃ রায়ের কথা একদিনও বৈদ্যনাথ ভোলেনি। প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে সেদিন সে ডাঃ রায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। অভিমান এই জন্যে যে তার কথা ডাঃ রায় কিছুতেই শুনলেন না। অপরাধটাকেই বড় করে দেখলেন, অপরাধের কারণটা জানতে চাইলেন না। একটা ভুল ধারণার জন্য তার জীবনদাতা ডাঃ রায়ের কাছে সে চিরদিনের মতো ঘৃণার পাত্র হয়েই থাকবে, এই মানসিক যন্ত্রণা তাকে অস্থির করে তুলছিল। বৈদ্যনাথ এটুকু জানত যে একবার যদি ডাঃ রায়কে সে সব কিছু বলবার সুযোগ পেত তা হলে নিশ্চয় তিনি তাঁর মত পালটাতেন।
পরদিন খুব ভোরে বৈদ্যনাথ চলে গেল ওয়েলিংটন স্কোয়ারে ডাঃ রায়ের বাড়ি। সে জানতো, সকাল আটটার মধ্যেই ডাঃ রায় আজকাল রাইটার্স বিল্ডিং-এ চলে যান। ঘরে ঢোকবার অধিকার আজ আর তার নেই। এখন গেট-এ থাকে বন্দুকধারী সান্ত্রী, ছাড়পত্র ছাড়া তাকে ঢুকতে দেবেই বা কেন! বাড়ির দক্ষিণ দিকের যে গেটটায় পুলিস ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে এবং যে গেট দিয়ে ডাঃ রায় বাড়ি থেকে বেরোন সেই গেট-এর উল্টোদিকের ফুটপাথে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বৈদ্যনাথ।
আটটা বাজবার একটু আগেই ডাঃ রায়ের গাড়ি গেট-এর সামনে দাঁড়াল। মিনিট দশ বাদেই ডাঃ রায় বেরিয়ে এসে গাড়িতে ঢুকে বসলেন। বৈদ্যনাথের মনে হল গাড়িতে বসে ডাঃ রায় তার দিকে একবার বিস্ময়-ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলেন। গাড়ি চলে গেল।
বৈদ্যনাথ তার কর্তব্য স্থির করে ফেলেছে। যতদিন না ডাঃ রায় ওর প্রতি প্ৰসন্ন মুখ তুলে তাকাচ্ছেন ততদিন রোজ সকাল আটটায় সে বাড়ির দক্ষিণ গেট-এর উল্টো ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকবে। দ্বিতীয় দিনেও একই অবস্থা, তৃতীয় দিনেও তাই। ডাঃ রায় বৈদ্যনাথকে দেখেও যেন দেখতে পাননি।
চতুর্থ দিন সকাল সাড়ে সাতটায় ফুটপাথে সবে এসে দাঁড়িয়েছে, সামনের পুলিস ভ্যান থেকে এক বন্দুকধারী সেপাই এসে বললে—‘বাবুজী, কয়ী রোজ সে দেখতা হুঁ আপ ইসি বখ্ত্, ইধর খাড়ে রহ্তে হেঁ। আপকা মতলব?’
বৈদ্যনাথ ম্লান হেসে বললে—‘মতলব কিছু নেই সিপাহীজী, স্রিফ দর্শনকে লিয়ে।’
সেপাই মাথা দুলিয়ে বললে—‘হ্যাঁ, ওহ্, তো সহী বাত। তব ঠিক হ্যায়।’
আটটা বাজবার একটু পরেই ডাঃ রায় বেরিয়ে এলেন। অপর দিকের ফুটপাথে বৈদ্যনাথকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আজ আর উপেক্ষা করতে পারলেন না। তাছাড়া এই ক’মাসে বৈদ্যনাথের চেহারার যে হাল হয়েছে তা দেখে ডাঃ রায়ের মনেও বোধহয় আশংকা দেখা দিয়েছিল যে, আবার একটা শক্ত অসুখে পড়তে পারে।
ডাঃ রায় হাতের ইশারায় বৈদ্যনাথকে কাছে ডাকলেন। বৈদ্যনাথ সশংকিত চিত্তে এগিয়ে এল। ডাঃ রায় শুধু বললেন—‘গাড়িতে উঠে বোসো।’
নিঃশব্দে বৈদ্যনাথ সামনে ড্রাইভারের পাশে উঠে বসল। পুলিস ভ্যানের সিপাহীর দল ফ্যাল ফ্যাল করে বৈদ্যনাথের দিকে তাকিয়ে। গাড়িতে যেতে যেতে ডাঃ রায় কোনো কথা বললেন না, খুবই গম্ভীর। রাইটার্স বিল্ডিং-এ এসে গাড়ি থামতেই ডাঃ রায় আবার মুখ খুললেন— ‘আমার সঙ্গে এসে বৈদ্যনাথ।’
বৈদ্যনাথকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকবার সময় ডাঃ রায় তাঁর খাস বেয়ারাকে বলে দিলেন যেন ওঁর ঘরে এখন কেউ না ঢোকে। যে দরজা একদিন নিজের হাতে বন্ধ করে এই কামরা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বৈদ্যনাথ, এবার সে দরজার পর্দাটা ডাঃ রায় নিজের হাতে তুলে বৈদ্যনাথকে ভিতরে আসতে বললেন।
নিজের চেয়ারে বসে ডাঃ রায় প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন—‘তোমাকে আমি বলে দিয়েছিলাম যে আমার সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা করবে না।’
বুকভরা অভিমান জমিয়ে রেখেছে বৈদ্যনাথ এতদিন ধরে, এবার তা প্রকাশ হতে লাগল। সে বললে—‘আমি তো আপনার সঙ্গে দেখা করতে যাইনি।’
‘তাই যদি হবে, আমি রোজ বেরোবার সময় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকতে কেন?’
বৈদ্যনাথ আগের মতোই অভিমানী কণ্ঠে বললে—‘কলকাতা শহরের যে-কোনো ফুটপাথে যে-কোনো নাগরিকের দাঁড়াবার অধিকার আছে বলেই আমি জানি। অবশ্য যদি সেটা প্রোটেকটেড এরিয়া না হয়।’
ডাঃ রায় এবার হেসে বললেন—‘যাক, নাগরিক অধিকার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান দেখছি টনটনে! তাহলে আনলাইসেন্সড্, পিস্তল নিয়ে তোমার আপিসের লোককে ওভাবে মারতে গিয়েছিলে কেন? অবশ্য আমি শুনেছি যে পিস্তলে গুলি ভরা ছিল না। কিন্তু পিস্তলটাই বা তুমি পেলে কোথায়?’
বৈদ্যনাথ বললে—‘পিস্তল কোথায় পাওয়া যায় আপনি ভা ভালো করেই জানেন, তবু কেন আমায় জিজ্ঞাসা করছেন।’
ডঃ রায় গম্ভীর হয়ে বললেন—‘হুঁ বুঝেছি। তা কত টাকায় কিনেছিলে?’
‘দু’শো টাকায়।’
ডাঃ রায় অবাক হয়ে বললেন—‘তোমার সামান্য আয়, তুমি দু’শো টাকা দিয়ে পিস্তল কিনতে গেলে কেন?’
এবার বৈদ্যনাথ ডাঃ রায়কে আদ্যোপান্ত সব ঘটনা খুলে বলল। তারপর বলল—‘আমার মনে একটা সন্দেহ দেখা দিয়েছিল যে করনক্ আমাকে গুণ্ডা লাগিয়ে শায়েস্তা করবার মতলব করছে। বালীগঞ্জ সার্কুলার রোডের দোকানে কাজ সেরে অনেক রাত্রে নির্জন অন্ধকার রাস্তা দিয়ে প্রায়ই আমাকে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হত। আত্মরক্ষার জন্যই এই পিস্তলটি আমি সংগ্রহ করেছিলাম।’
সব শুনে ডাঃ রায় আবার বললেন—‘তোমার কি সত্যিই উদ্দেশ্য ছিল আপিসের লোকটাকে খুন করার? না কি শুধু ভয় দেখাতেই চেয়েছিলে!’
‘খুন করতেই চেয়েছিলাম স্যার। তখন রাগ মাথায় এত চড়ে গিয়েছিল যে, পোর্টফোলিও ব্যাগের অন্য খোপে যে গুলি আছে তা পিস্তলে ভরে নেবার খেয়ালই হয়নি।’
একথা শুনে ডাঃ রায় স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। বিস্মিত হয়ে বললেন— ‘তুমি খুন করতেই চেয়েছিলে? ছিঃ বৈদ্যনাথ, ছিঃ।’
বৈদ্যনাথ বললে—‘আপনি আমাকে ধিক্কার দিতে পারেন কিন্তু উত্তেজনার যথেষ্ট কারণ ছিল বলেই আমি তাকে খুন করতে গিয়েছিলাম।’
ডাঃ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন—‘কী এমন কারণ থাকতে পারে যে তুমি তোমার আপিসের একজন পদস্থ কর্মীকে খুন করবে।’
চুপ করে রইল বৈদ্যনাথ।
ডাঃ রায় আবার বললেন—‘চুপ করে রইলে যে, বলো।’
বৈদ্যনাথ গম্ভীর হয়ে বলল—‘সে জানে আপনার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। সে জানে আমি আপনার লোক, আপনার রেকমেণ্ডেশনে আমি ওখানে চাকরি পেয়েছি। তা সত্ত্বেও তার এতবড় দুঃসাহস, সে আমার মুখের উপর আপনার নামে জঘন্য কুৎসা বলে যাবে?’
বৈদ্যনাথের কথা শেষ হতে না হতেই ডাঃ রায় প্রচণ্ড শব্দে হেসে উঠলেন, সে-হাসি আর থামে না। বৈদ্যনাথ অবাক হয়ে গেছে ডাঃ রায়ের এই দমকা হাসি শুনে। তখনো ডাঃ রায় হাসছেন, হাসতে হাসতে বললেন—‘এইজন্যে তুমি মানুষ খুন করতে গেলে? এ-ব্যাপারে তুমি বাংলাদেশে খুন করার মতো হাজার হাজার লোক পাবে। বহুকাল ধরেই আমার নামে অনেক কুৎসাই লোকমুখে রটনা হচ্ছে। ইদানীং তোমাদের মুখ্যমন্ত্রী হবার পর সেটা বেড়েছে বই কমেনি।’
বৈদ্যনাথ বললে—‘আপনি কথাটা হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু আমি পারি না।’
ডাঃ রায় বললেন—‘থাক, তোমার আর খুনখারাপির মধ্যে গিয়ে দরকার নেই। বারবার তোমার হয়ে জামিন নিতে পারব না বাপু। কুৎসা রটনাকারীরা বলবে আমিই তোমাকে এ-কাজে লাগিয়েছি।’
বৈদ্যনাথ এতক্ষণে বুঝতে পারল যে ডাঃ রায়ের মন থেকে ওর প্রতি পুঞ্জীভূত ঘৃণার রেশ খানিকটা অপসারিত হয়েছে। এইটুকুই ওর কাম্য ছিল। হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে বৈদ্যনাথ বলল—‘আপনার কাজের অনেক ক্ষতি করলাম, এবার আমি যাই।’
ডাঃ রায় বললেন—‘কিন্তু একটা কথা তো কিছুই আমাকে বললে না, তুমি কী করছ এখন।’
‘কিছুই নয়। চেষ্টাচরিত্র করেছিলাম, মনের মতো কাজ পাইনি, আর পেলেও মাইনে দিতে চায় নিতান্ত কম।’
‘সংসার চলছে কি করে?’
‘শৌখিন জিনিস দু-চারটে করেছিলাম, তা বেচে দিয়েছি। তাছাড়া গয়না কিছু ছিল স্ত্রীর কাছে, এখন তাই বিক্রী করে চলছে।’
ডাঃ রায় কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন—‘ছেলেমেয়ে দুটির কী অবস্থা?’
বৈদ্যনাথ বললে—‘তাদের দিকে তাকানো যায় না। হাড়-জিরজিরে হয়ে গেছে। আজ তিন মাস চাকরি নেই, ওদেরই বা খাওয়াব কি।’
ডাঃ রায় আবার গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন—‘খুব অন্যায় করেছে বৈদ্যনাথ। আচ্ছা, তুমি আমার এখানে একটা কাজ নেবে? স্টেট ট্রান্সপোর্টে আমার একজন বিশ্বস্ত লোক দরকার। তুমি যদি এ-কাজটা নাও আমি নিশ্চিন্ত হই।’
বৈদ্যনাথ বললে—‘না। সরকারী চাকরি আমি নেব না। আপনার সঙ্গে আমার পিতাপুত্র সম্পর্ক। সে সম্পর্ক আমি নষ্ট হতে দিতে চাইনে।’
ডাঃ রায় চুপ করে রইলেন, কোনো কথা নেই। বৈদ্যনাথ বললে— ‘এবার আমি যেতে পারি স্যার?’
‘হ্যাঁ, তুমি যেতে পারো। তবে একটা কাজ তোমাকে করতে হবে। ওষুধের কোম্পানি সম্বন্ধে তোমার যা-কিছু অভিযোগ তা লিখিতভাবে আমাকে তুমি পাঠিয়ে দিও। আরেকটা কথা। যদি কখনো কোনো প্রয়োজন হয় অসংকোচে তা জানাবে।’
বৈদ্যনাথ বললে—‘আমার একটা শুধু অনুরোধ আছে আপনার কাছে। চাকরির চেষ্টা আমি নিজেই করব, তবে আপনার নাম করে যদি পরিচয় দিই আপনার আপত্তি হবে না তো?’
ডাঃ রায় বললেন—‘কোনো আপত্তি নেই। প্রয়োজন হলে কাউকে যদি কিছু বলে দিতে হয় আমায় জানিও।’
বৈদ্যনাথ আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, মনের সব গ্লানি ওর মুছে গেছে।
খবরের কাগজের ওয়ান্টেড কলম দেখে দেখে বৈদ্যনাথ গিয়ে হাজির হল এক বিলিতি তেল কোম্পানির আপিসে। বেয়ারার হাতে একটা চিরকুট লিখে জানালে যে সে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে এসেছে, বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চায়।
সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যনাথের ডাক পড়ল বড় সাহেবের ঘরে। কী ব্যাপার? বৈদ্যনাথও বললে যে সে কাগজে বিজ্ঞাপন পড়ে জেনেছে একজন অ্যাসিস্টেন্ট সেলস্ ম্যানেজার প্রয়োজন, সে সেই পদে চাকরিপ্রার্থী।
বড় সাহেব এই যুবকের দুঃসাহসিক অভিযানে বিরক্ত না হয়ে কৌতুক বোধ করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন—‘তোমার কোয়ালিফিকেশন?’
‘ম্যাট্রিক পাস।’
‘এ-কাজে যে গ্র্যাজুয়েট ছাড়া নেওয়া হবে না বিজ্ঞাপনে তা লেখা আছে দেখোনি?’
‘দেখেছি। তবু আমি সাহস করে এসেছি এই কারণে যে এ ধরনের কাজে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এবং আমার বিশ্বাস যোগ্যতার সঙ্গেই এ-কাজ আমি করতে পারব।’
বড় সাহেব ঘণ্টা বাজিয়ে আপিস ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়ে বৈদ্যনাথের নাম ঠিকানা সমেত একটা অ্যাপ্লিকেশন লিখিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। দিন সাতেক বাদেই বৈদ্যনাথের নামে তেল—কোম্পানির বড় সাহেবের চিঠি এসে হাজির। তাকে চাকরিতে নিয়োগ করা হল। মাইনে ৩০০ টাকা। অ্যাসিস্টেন্ট সেলস্ মানেজারের পোস্ট। চাকুরিস্থল আসানসোল। ফ্রি কোয়ার্টার। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পয়লা তারিখে আসানসোল আপিসে রিপোর্ট করতে হবে। সেখানেও এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হল।
চিঠি পেয়েই পরের রবিবার সকালে বৈদ্যনাথ ডাঃ রায়ের বাড়ি হাজির। চিঠি দেখে ডাঃ রায় হাসতে হাসতে বললেন—‘আমি জানি চিঠি তোমার কাছে যাবে। সাহেব টেলিফোন করে তোমার কথা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার যা বলবার বলে দিয়েছি। কাজটা পেয়ে খুশি তো?’
কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল বৈদ্যনাথের মন। বললে—‘এ আমার কল্পনার অতীত। কিন্তু—’
‘এর মধ্যে আবার কিন্তু কেন? লেগে যাও কাজে।’
‘কিন্তু স্যার, কলকাতা ছেড়ে আসানসোল যেতে মন চাইছিল না। তাছাড়া ওখানে গেলে আপনার সঙ্গে দেখা হবার সুযোগ কমে যাবে!’
ডাঃ রায় হেসে বললেন—‘কলকাতায় থেকেই বা আমার সঙ্গে ক’দিন তোমার দেখা হয়। ভুল কোরো না, আসানসোলেই যাও। ওখানে খরচ কম, ফ্রি কোয়ার্টার পাচ্ছ, ছেলেমেয়েদের এডুকেশন ফ্রি, জিনিসপত্রের দাম কলকাতার থেকে সস্তা। খোলামেলা জায়গায় স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আমার সঙ্গে দেখা করা? সে তো যে-কোনো ছুটির দিন এলেই দেখা হতে পারে।’
আসানসোল যাওয়া স্থির করে বৈদ্যনাথ ডাঃ রায়ের কাছ থেকে চলে এল। আসবার আগে শুধু একটি কথা তিনি বলে দিলেন—‘কাজে কখনো আলস্য প্রকাশ কোরো না। দেখো, এবার যেন আমার মুখে চুনকালি না পড়ে।’