আকাশ পাতাল – ৬

তখনও ভালো করে ভোর হয়নি, আমার ঘুম ভেঙে গেল। কাল রাত্রে শুয়ে-শুয়ে বুকের ওপর একটা বই নিয়ে পড়তে-পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বইটা ঘুমের ঘোরে খসে পড়ে খাটের নিচে। আজ সকালে আমার বুকের ওপর সেই বইয়ের সাইজেরই খানিকটা রোদ্দুর!

আমার ঘুম ভাঙা দুরকম। এক-একদিন ঘুম ভেঙেও যেন ভাঙতেই চায়না! আলস্যে চোখ টেনে থাকে, সারা শরীরে ঘুমের মাদকতা লেগে থাকে, কেউ ওঠার জন্য তাড়া দিলেও এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে শুই, পাশে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়–এক চুমুক দিয়েও আবার তন্দ্রাকে প্রশ্রয় দিই। মাঝে-মাঝে এক-একদিন, ঘুম ভাঙলেই অর্থাৎ সকালবেলা প্রথম চোখ মেলে তাকাবার পরই মনে হয় সম্পূর্ণ জেগে গেছি, আর একমুহূর্তও বিছানায় থাকার ইচ্ছে হয়না, স্থির হয়ে যায় যে জাগরণ সেদিনের মতন চূড়ান্ত। কেউ ডাকেনা, তবু ধড়মড় করে উঠে বসি।

আজ এইরকম দ্বিতীয়ভাবে আমার ঘুম ভাঙল। ভালো করে ভোর হয়নি, ঈষৎ শীতের উপভোগ্য হাওয়া, ডাকবাংলোয় নিশ্চিন্ত ছুটির সপ্তাহান্ত, চাদরটা আবার গায়ে টেনে নিয়ে আজ আট-ন’টা পর্যন্ত ঘুমোলেও কেউ বাধা দেবার ছিলনা। তবু যেন আমার বিশেষ কোন কাজ আছে, যেন অ্যালার্ম ঘড়ি আমাকে জাগিয়ে তুলেছে, এইভাবে অতিদ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে চটিতে পা গলালাম।

অথচ, আমার কোন কাজই নেই। আমার সঙ্গী-সঙ্গীনীরা—তিনজন পুরুষ ও দুই নারী,—এপাশে-ওপাশের ঘরে প্রগাঢ় ঘুমে মগ্ন। জায়গাটার নাম হেসাডি— চক্রধরপুর ছাড়িয়ে টিলা ও জঙ্গলের মধ্যে একটা ছিমছাম ডাকবাংলো, কাল বিকেলেই এখানে এসে পৌঁছেচি, আজ হাতে কোন কাজ তো দূরে থাক দিন কাটাবার কোন পরিকল্পনাও নেই। তবু আমাকে এত ভোরে জেগে উঠতেই হল।

ঘুমন্ত সঙ্গী-সঙ্গিনীদের ডাকলামনা, মাঝখানের দরজা দিয়ে ঘুরে-ঘুরে তাদের ঘুমন্ত, ব্যক্তিত্বহীন ও সরল নিভাজ সুন্দর মুখগুলি দেখলাম। কারুর গায়ের ভ্রষ্ট চাদর সরিয়ে ঠিকঠাক করে ঢেকে দিলাম, কারুর ঝুলন্ত হাত তুলে দিলাম খাটে, কোন রমণীর শাড়ির প্রান্ত প্রায় হাঁটুর কাছাকাছি উঠে যাওয়ায়— নামিয়ে দিলাম পায়ের কাছে। কেউ জাগলনা। বেশির ভাগ দিন আমিই দেরি করে উঠি, তাই বহুদিন সকালের আলোয় এতগুলি ঘুমন্ত মুখ আমার দেখা হয়নি।

ডাকবাংলার চৌকিদার কি উঠেছে? টুথব্রাস ও পেস্ট হাতে নিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম চৌকিদারের ঘরে দিকে। একটু চা কিংবা কফি পেলে খুব ভালো লাগত। সেটা শুধু চা বা কফির জন্য নয়। দিনের প্রথম সিগারেটটা আমি কোন গরম পানীয়ে ঠোঁট ভেজাবার আগে কিছুতেই টানতে পারিনা। অনেককে ঘুম থেকে উঠেই সিগারেট ধরাতে দেখেছি, আমি পারিনা, আমার কাশি হয়। অভ্যেসগুলো পরপর বাঁধা। টুথপেস্টের স্বাদ আমার এত বিশ্রী লাগে যে দাঁত মাজার পরই ভোঁতা মুখে চা কিংবা সিগারেট না-টেনে আমি থাকতে পারিনা। এ ব্যাপারে আমি এতই খুঁতখুঁতে যে চায়ের কাপ চোখের সামনে না-দেখলে আমি দাঁত মাজতেই যাইনা কখনো। সুতরাং পেস্ট ও টুথব্রাস হাতে নিয়ে আমি চৌকিদারের ঘরের দিকে এগোলাম।

অরণ্যের মাঝখানে এমন উন্মুক্ত পরিবেশে বাংলো, তবু চৌকিদারের ঘরখানি এমন করে বানানো হয়েছে যে দিনেরবেলায়ও সেটাতে আলো ঢোকেনা। সপরিবারে চৌকিদার বারান্দায় খাটিয়া পেতে শুয়ে আছে। ওরা কেউ জাগেনি। একটি খাটিয়ায় চৌকিদার—ঘুমের মধ্যে তার হাত-পা এমনভাবে ছড়ানো যেন মনে হয় গত রাত্রে কেউ তাকে বেদম প্রহার দিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় খাটিয়ার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে। অথচ জানি, সেরকম কিছুই ঘটেনি, কাল রাত সাড়ে এগারোটায় আমাদের কাজ শেষ করে চৌকিদার সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে শুতে গেছে। তবে, তার ঈষৎ ব্যাদিত মুখের কাছে একটা নীল ডুমো মাছি ভন্‌-ভন শব্দে উড়ছে দেখে সন্দেহ হয়, শোবার আগে চৌকিদার নিভৃতে কিছু মহুয়ার আরক পান করেছে, সেই মিষ্টি গন্ধই মাছির আকর্ষণ। পাশের খাটিয়ায় চৌকিদারের ঈষৎ স্থূলাঙ্গী যুবতী পত্নী দুটি শিশুকে নিয়ে শয়ান। ঐটুকু খাটিয়ায় সারারাত ওরা তিনজন কী কৌশলে যে শুয়ে আছে—সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। রাতে একটি বাচ্চাও কী ঢিপ করে পড়ে যায়নি? চৌকিদার পত্নীও খানিকটা হাঁ করে ঘুমোচ্ছে। এইসব অশিক্ষিত নিচু জাতীয় লোকরা সবাই ঘুমের মধ্যে মুখ খুলে থাকে—এটা আমি লক্ষ করে দেখেছি। সভ্য লোকেরা মুখ বুজে ঘুমোতে শিখে নিয়েছে। হয়তো দিনেরবেলা সারাক্ষণই তাদের মুখসর্বস্ব জীবন কাটাতে হয় বলেই, ঘুমের মধ্যে অন্তত।

সবাই ঘুমন্ত, শুধু আমি একা জেগে আছি, আশেপাশে কোথাও জাগ্ৰত মানুষের সাড়া নেই। অরণ্য ভেদ করে জেগে উঠেছে ডিমের কুসুম-রঙা সূর্য, এই লাল রং কী করে এবং কেন বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে বদলে যায়—আমি জানিনা, না-গেলেই ভালো হত। একরাশ পাখির কোলাহল শোনা যাচ্ছে—কিন্তু এ তল্লাটে আমি এখন একমাত্র জাগ্রত মানুষ। ঘুমন্ত চৌকিদার দম্পতিকে ডাকতে হঠাৎ আমার কী জন্য যেন মায়া উপজিল। নিঃশব্দে সেখান থেকে সরে এলাম রান্নাঘরে। খুব প্রয়োজনে সামান্য চা কিংবা কফি আমি নিজেই বানিয়ে নিতে পারি, যদি সব ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু এ যে কাঠের উনুন। কাঠ সাজিয়ে উনুন ধরানো আমার অসাধ্য। তাহলে থাক চা-কফি। তাহলে এখন দাঁত মাজা মুখ ধোওয়াও মুলতুবি থাক, সিগারেট খাওয়া বন্ধ।

ঠিক যে বেড়াবার উদ্দেশ্য নিয়েই তখন আমি একা-একা অরণ্যের মধ্যে অনেকখানি চলে এসেছিলাম, তা মনে হয়না। এত ভোরের আলোয় জঙ্গলে বেড়াবার মতন ভাবুক প্রকৃতির মানুষ আমি নই। নিশ্চয়ই আমার প্রবৃত্তিবেগ জঙ্গলের মধ্যে আমাকে টেনে এনেছিল এই গোপন ইচ্ছায়–হয়তো কিছুটা জঙ্গল পেরুলেই কোন পাহাড়ি গ্রাম চোখে পড়বে, হয়তো সেখানকার দোকানে আমি পায়জামা ও চাদর জড়ানো মূর্তিতে গ্রাম্য মানুষদের সঙ্গে সোঁদা গন্ধযুক্ত ভাঁড়ের চায়ে চুমুক দিতে-দিতে একপ্রকার আনন্দ পাব। হয়তো কোন ওঁরাও বৃদ্ধের কাছ থেকে বিড়ি চেয়ে আমি ওদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হবার আত্মপ্রসাদ লাভ করব। নিশ্চিত এইরকমই অভিপ্রায় ছিল আমার। কেননা, মিনিট পনেরো সেই অরণ্যের পায়ে —চলা পথ দিয়ে হাঁটার সময়েও আমি কী কী নিয়ে যেন অন্যমনস্ক ছিলাম, অরণ্যের রূপ ও সৌন্দর্যের দিকে আমার চোখ পড়েনি। তাছাড়া আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে এলোমেলো হাঁটিনি, একটা পথের নিশানা ঠিক রেখেছিলাম। হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হলে, একটা গাছ বেয়ে সরসর করে নেমে আসছে একটা হলুদ সাপ।

সাপটা বেশ বড়, অন্তত চারহাত লম্বা, সেই তুলনায় বেশ স্বাস্থ্যবান। সাপদের সমাজে হয়তো ওকে মোটা-মোটা বলে রাগায়। সাপটার গতি খুব অলস-সেটা সদ্য ঘুম ভাঙার জন্য নয়, সাপেরা রাত্রে ঘুমোয়না আমি জানি—সামনেই শীত —তখন ও বহুদিনের জন্য ঘুমোতে যাবে—সেই আলস্য। সাপটাকে দেখে আমি খুব যে বেশি ভয় পেয়েছিলাম, তা বলা যায়না। বরং সাপ সম্পর্কে আমার যে অস্বাভাবিক আতঙ্ক, তার তুলনায় তখন আমি অনেকটাই হাল্কা ও উদাসীনবোধ করেছিলাম। জানি, সাপ দেখে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা হাস্যকর, আমার হাতে কোনপ্রকার অস্ত্র ছিলনা। তবু রহস্যময়ভাবে আমার মনের মধ্যে স্পষ্ট বোধ হতে লাগল, আজ সকালবেলা আমার কোন বিপদ হবেনা।

সাপটা আমাকে দেখতে পেয়েছিল। দুজনের দূরত্ব প্রায় দশহাত। গাছ থেকে সরসর শব্দ করে নেমে এসে, তখন আমি সদ্য শুকনো পাতায় শব্দ করে থমকে দাঁড়িয়েছি, সাপটা আমার দিকে তাকাল। তাকাল তো তাকিয়েই রইল অনেকক্ষণ। আমিও চেয়ে আছি। হঠাৎ আমার মনে হল, সাপটা যেন আমাকে কিছু বলতে চাইল। মহাভারত-বাইবেল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সাপদের সম্পর্কে যে হাজার—হাজার উপকথা পড়েছি, হয়তো তার প্রভাবেই সাপের এই কথা বলার প্রবৃত্তির কথা আমার মনে হয়। কিন্তু কোন অলৌকিক ব্যাপার ঘটলনা, সাপ সেই ভোরবেলার নির্জন অরণ্যে মানুষের ভাষায় কথা বলে উঠলনা, শুধু চেয়েই রইল। কিন্তু আমি তো সাপদের ভাষা জানিনা-ওদের আদৌ কোন ভাষা আছে কি না তাই জানিনা। অনেকক্ষণ চেয়ে থাকার পর সাপটা একবার ফোঁস করল। সেটাকে দীর্ঘশ্বাসও মনে করা যেতে পারে।

এবার সাপটা নড়ে উঠে বাঁদিকে বেঁকল, একটা পাতাহীন সাদা ফুলগাছের মধ্য দিয়ে গলে গিয়ে বেশ কিছুটা পরিষ্কার জায়গা দিয়ে সোজা এগিয়ে যেতে লাগল, আমার দিকে আর চেয়েও দেখল না। সাপটার গতিপথ আমি চোখ দিয়ে অনুসরণ করছি, এবং সে একটু দূরে যাওয়ার পরই আমি একখণ্ড পাথর তুলে নিয়ে সশস্ত্র হইনি। কিন্তু সাপটা ক্রমশই দূরে যেতে লাগল, আমি তাকে ভালো করে দেখবার জন্য একটু এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। এই প্রথম আমি লক্ষ করলুম, ভোরবেলাকার অরুণবর্ণ রোদে সেই অপসৃয়মাণ হলুদ প্রাণীটিকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। মাঝে-মাঝে খসে-পড়া পাতার রাশির মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে ও আবার বেরিয়ে আসছে তকতকে জমিতে, ও যাতে আমার চোখ থেকে হারিয়ে না-যায় — আমি বেশ উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম। পাথরগুলো এবার একটু ঢালু হয়ে এসেছে, খানিক পরেই একটা মরা ঝর্না কিংবা ছোট নদীর খাত, লাল টুকটুকে পর্টুলেকা ফুল ফুটে আছে অনেক, কী এক অনির্দিষ্ট কারণে একঝাঁক ফড়িং ওড়াউড়ি করছে সেখানে—ও জায়গাটা ছেড়ে ফড়িংগুলো নড়ছেনা। সাপটা সেই ঝর্নার খাতে নেমে আমার চোখের আড়ালে চলে গেল।

হয়তো আশেপাশে আরো সাপ আছে কিনা এই দেখার জন্যই আমি এদিক—ওদিক তাকিয়েছিলাম। তখন সেই অরণ্যের বিশাল সৌন্দর্য আমাকে চেপে ধরল। আমি প্রকৃতিপ্রেমিক নই, পৃথিবীতে কেইবা আর—আমি অন্যমনস্কভাবেই জঙ্গল দিয়ে হাঁটছিলাম—কিন্তু সেই হিংস্র সাপের আকস্মিক উপস্থিতি যেন আমার নাকে একটা ঘুষি মেরে বলল, এবার দ্যাখ!

চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে আমার মনে হল, ভোরের অস্পষ্ট আলোয় সেই অরণ্যযেন এক রহস্যময় সৌন্দর্যের খনি। প্রথমেই আমার চোখে পড়ল, একটা ভেলভেটের মতন কালো রঙের রোমশ মাকড়শা। এই জীবটিকে আমি বরাবর ঘৃণা করি। কিন্তু এই পাহাড়ি মাকড়শা—এর চেহারা একেবারে অন্যরকম—একে বলতেই হয় তুমি সুন্দরী। বিশেষত সাদারঙের যে একঝাঁক পরগাছা ফুলের পাশে ও বসে আছে, তাতে ওকে ভারী সুন্দর মানিয়েছে। গাছগুলোর মাথার দিকে রোদ্দুর, নিচে এলোমেলো ঝাপসা রং ফাঁক দিয়ে, ফাঁক দিয়ে এসে পড়েছে লাল—লাল শিখা, একটা ভাঙা পাথরের টুকরো জ্বলছে হীরের মতন, একদল বুনো পাখি কুচিটাং-কুচিটাং বলে চেঁচিয়ে উঠতেই দূরের গাছ থেকে একটা অদেখা-পাখি সাড়া দিল টুটি-টু-টি-টু। অরণ্যে এসে কেউ প্রতিটি গাছকে দেখেনা—কিন্তু তাঁদের গম্ভীর অস্তিত্ব দেখে মনে হয়—তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব পৃথক—অমন কঠিন শালগাছ —কিন্তু তাদের সদ্যফোটা বল্লরী দেখলে মনে হয়—পৃথিবীতে এরই নাম পবিত্রতা। গাছ থেকে ঘুরতে-ঘুরতে পড়ল একটা সবুজ রঙের পালক-ওপরে তাকিয়ে দেখি একটা হৃষ্টপুষ্ট টিয়াপাখি ব্যগ্রভাবে আমাকে দেখছে। গলায় বহুরঙা একটা গিরগিটি তার থেকে মাত্র আধহাত দূরে—কিন্তু পরস্পর শিকার-শিকারী নয়।

আরো কিছুক্ষণ সেই জঙ্গলে আমি ছিলাম। বস্তুত সেই নিভৃত সৌন্দর্য আমাকে অভিভূত বা মুগ্ধ করেনি, আমার মনকে শান্ত প্রসন্ন করেনি। সেই সৌন্দর্যের মধ্যে একটা নিঃসঙ্গতা আছে। একটু দূর হেঁটে, বাঁধানো পথের পাশে একটা কালভার্টে বসে দুহাতের মধ্যে মুখ গুঁজে আমার মনে হল, বহুদিন আমি এত নিঃসঙ্গ থাকিনি। জল যেমন জলকে চায়—মানুষও মানুষ চায়। বাইরে বেড়াতে এলেও আমরা বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনের মধ্যেই তো থাকি। একা এলেও প্রবাসে কারুর সঙ্গে পরিচয় করার জন্য ব্যগ্রতার শেষ থাকেনা। নিরালা ঘরেও শুধু মানুষের কথাই ভাবি। একা-একা কোন বিখ্যাত সৌন্দর্য দেখলেও মন ভারী হয়ে আসে। মানুষ বাঁচেনা—আমি বাঁচতে পারিনা। এই যে এই অরণ্যের মধ্যে আমি কিছুক্ষণ মগ্ন হয়ে ছিলাম, ঘাসফুলের অপূর্ব বর্ণলীলা আর প্রতিটি গাছের পাতায় বিভিন্ন সবুজ আভা দেখে আমি রূপের জগতে ঢুকে গিয়েছিলাম—তার ফলেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমার আজ, এই মুহূর্তে কোন অভাব নেই, মন খারাপের কোন কারণই নেই, কিন্তু ঐ নিভৃত সৌন্দর্য মনকে ভার করে দেবেই। জঙ্গলে এসে কখনো আমি রূপ খুঁজিনা, কিন্তু আজ এই ঘুমন্ত পৃথিবীতে আমাকে একা পেয়ে অরণ্য যেন নির্লজ্জার মতন তার ফ্যাশান প্যারেড দেখিয়ে নিল।

অদূরে কলশব্দ শুনে চমকে তাকালাম। কয়েকটি পাহাড়ি নারী-পুরুষ মাথায় বোঝা চাপিয়ে কোথায় যেন চলেছে। জীবন্ত মানুষের সাড়া পেয়ে হঠাৎ আমার খুবই ভালো লাগল। মনে হল, ওদের মধ্যে একটি পাহাড়ি যুবতীর গ্রীবায় যে লাবণ্য, তার তুলনায় একটু আগে দেখা শ্বেত ফুলের স্তবক কিছুইনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *