অনির্বাণ অমিতাভ – ৪

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

সিদ্ধার্থের মনে বড় আনন্দ। বোধি লাভ করেছেন বলে নয়। তিনি সব কামনাবাসনার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন। সব পার্থিব যন্ত্রণা আর তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না। মৃত্যু ভয় থাকবে না। এ অবস্থাই তো নির্বাণলাভের পূর্ব অবস্থা। এই আনন্দ তাঁকে আপ্লুত করে তুলেছে। এই সময় একজন ব্রাহ্মণ এসে তাঁর কাছে দাঁড়ালেন। প্রশ্ন করলেন, ”গৌতম প্রকৃত মহান এবং ব্রাহ্মণ হতে হলে তাঁর কী কী গুণ থাকা আবশ্যক। আর কী রকম নৈতিক গুণ তার মধ্যে থাকতে হবে?” গৌতম নামে ডাক শুনে বুদ্ধ কিন্তু অভিমান বা রাগ করলেন না। সবিনয়ে বললেন, ”যিনি প্রকৃত ব্রাহ্মণ হবেন তিনি সব মন্দ, নীচতা, অহংকার আর ক্রোধ ত্যাগ করবেন। তিনি হবেন বিচক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন। তিনি জ্ঞান অর্জনে তৎপর হবেন এবং সৎ জীবন যাপন করবেন। অন্য লোকের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য দেখেই বোঝা যাবে তিনি সত্যিই ব্রাহ্মণ।”

স্থান ত্যাগের আগে সেই ব্রাহ্মণ বিড় বিড় করে বকতে চললেন, ‘এই গৌতম দেখছি আমার মনের ভিতরটা পর্যন্ত দেখে নিয়েছে।’

অনেকদিন পর একবার বুদ্ধ এক অশ্বত্থ গাছের নীচে বসেছিলেন। দুজন বণিক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা দেখলেন বুদ্ধদেবের প্রশান্ত মূর্তি। মনে হচ্ছে তিনি বিশাল যুদ্ধে জয়লাভের পর খানিক বিশ্রাম করছেন। যুদ্ধ জয়ের আনন্দ যেন তাঁর সমগ্র অবয়বে ফুটে উঠেছে। তাঁরা দাঁড়ালেন এবং সঙ্গের আনীত সুন্দর খাদ্যসামগ্রী বুদ্ধকে দিলেন। বুদ্ধের ব্যবহার এবং সুন্দর কথাবার্তায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে চাইলেন। এই দুই বণিকের নাম তপুস্যা এবং ভল্লিকা। এঁদের আত্মসমর্পণে খুশি হয়ে বুদ্ধ তাঁদের শিষ্য করে নিলেন।

বুদ্ধ অনেক সময় ধরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এই সময় তিনি ভাবছিলেন। কী করা উচিত। এর কারণ তিনি যে ধর্মের কথা ভাবছেন তা যেমন কঠিন তেমনি দুর্বোধ্য। তা ছাড়া মানুষ কামনা বাসনার দাস। তারা ইন্দ্রিয় পরবশও বটে। অনেকেই হয়তো তাঁর অভিমত মেনে নিতে চাইবে না। তাঁর ধর্মমত গ্রহণ করতে চাইবে না। তবে কোনও কোনও ব্যক্তি এমনও আছেন যাঁদের বাসনা বা কামনা অনেক কম। পদ্মমৃণাল যেমন আস্তে আস্তে সূর্যের আলো পাওয়ার জন্য ওপরে ওঠে তারাও হয়তো তাঁর উপদেশ গ্রহণ করার জন্য ধীরে ধীরে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করবার জন্য অগ্রসর হয়ে আসতে পারেন। তিনি তাই পরম সত্যকে আড়াল করে রাখবেন না। বরং তাঁর উপলব্ধি সর্বজন গোচরে আনবেন যাতে সকলে তাঁর মতো সমানভাবে শুনতে পারে। তাই তিনি স্থির করলেন তাঁর ধর্মমত প্রচার করবেন।

এই ভাবে মনস্থির করে তিনি চিন্তা করলেন, ‘যাকে প্রথম আমার ধর্মে দীক্ষিত করব তাকে অবশ্যই বুদ্ধিমান হতে হবে আর ধার্মিক মনোভাবাপন্ন হতে হবে। প্রথমে তিনি তাঁর নিজের প্রথম গুরু আরাদা কালামের কথা চিন্তা করলেন। এঁর ধর্মের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষণ আছে আর আছে তীক্ষ্ন মেধা। তিনি নিশ্চয়ই আমার ধর্ম গ্রহণ করবেন। কিন্তু তখনই তাঁর মনে পড়ল আরাদা কালাম ইতিমধ্যেই গত হয়েছেন। এরপর তিনি তাঁর দ্বিতীয় গুরু উদ্রাক রামপুত্রের কথা চিন্তা করলেন। কিন্তু তিনিও তো আর বেঁচে নেই। এই সময় তাঁর হঠাৎই মনে পড়ল সেই পাঁচজন শ্রমণের কথা যাঁরা তাঁর সঙ্গে প্রথম জ্ঞান অর্জনের জন্য বেরিয়েছিলেন। এঁরা একত্র গিয়েছিলেন উরুবিল্বে। তাঁরা এখন আছেন বারাণসীর কাছে মৃগদাভে। তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য তিনি উরুবিল্ব ত্যাগ করে মৃগদাভের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।

মৃগদাভতে সেই পাঁচজন শ্রমণ যখন শুনলেন বুদ্ধ তাঁদের কাছে আসছেন তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বললেন। কথাবার্তার মধ্যে এটাই প্রকাশ পেল যেহেতু বুদ্ধ সাধুপথ ত্যাগ করে অজানা এক পথের উদ্দেশ্যে যেতে চাইছেন তাই তাঁর সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগই তাঁরা রাখবেন না। তাঁকে তাঁরা স্বীকার করবেন না এবং কোনও বাক্যালাপ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে করবেন না। শুধু একটা আসন তাঁকে দেওয়া হবে যেখানে তিনি বসতে পারেন। বসতে না চান দাঁড়িয়েই থাকবেন। তাঁর মতো একজন পথ পরিবর্তনশীল মানুষের সঙ্গে কে যোগাযোগ রাখতে চাইবে। কিন্তু যখন সেই পাঁচজন শ্রমণ বুদ্ধকে তাঁদের কাছে আসতে দেখলেন তখন তাঁরা বুঝলেন তাঁরা যা ভেবেছিলেন সেটা সত্য নয়। তাঁরা দেখলেন বুদ্ধের সর্ব শরীর হতে যেন একটা জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এরকম জ্যোতি তাঁরা আগে আর মানুষের মধ্যে দেখেননি। তাঁরা খুবই অবাক হয়ে গেলেন। তাঁদের একটু আগের মনোভাবের কথা তাঁরা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন দ্রুত এগিয়ে বুদ্ধকে নত হয়ে অভিবাদন জানালেন। অন্যরা বুদ্ধদেবের বসার আসন স্থির করতে লাগলেন। একজন ছুটে গিয়ে বুদ্ধের জন্য জল নিয়ে এলেন।

বুদ্ধ আসন গ্রহণ করার পর বলতে শুরু করলেন, ”শ্রমণগণ আমি অজত্ব এবং অমরত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি। আমি নির্বাণের কথা জেনেছি। আমার এই জ্ঞান আমি আপনাদের দিতে চাই। যদি এগুলি গ্রহণ করেন এবং প্রচার করেন তবে আপনারা নিজেরাই যে শুধু আলোকিত হবেন তা নয় বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে সকল দুঃখ হতে, সকল জ্বালা যন্ত্রণা হতে, জন্মমৃত্যুর চক্র হতে চিরতরে মুক্তি লাভ করবেন। আমি আপনাদের সত্য বলতে এসেছি, আপনারা জন্ম ও মৃত্যুর যন্ত্রণা হতে নিজেদেরকে বিমুক্ত করতে পারবেন।”

এই পাঁচজন শ্রমণ কিন্তু তবুও সন্দেহমুক্ত হতে পারছিলেন না। কারণ ইতিমধ্যেই তাঁরা দেখেছিলেন যে বুদ্ধ স্বয়ং প্রকৃত জ্ঞান লাভের জন্য উপবাস সাধন করে যে ভয়ংকর তপস্যা করছিলেন তা হতে নিজেকে সরিয়ে এনেছিলেন। এখন তিনি বলছেন তিনি নাকি প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেছেন। সুতরাং এইরূপ একজন ব্যক্তিকে বিশ্বাস করা চলে অথবা চলে না এ নিয়ে তারা দিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এই চিন্তা হতে তাঁরা বুদ্ধের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ শুরু করলেন। অবশেষে বুদ্ধ বললেন, ”আমরা যখন একসঙ্গে থাকতাম তখন কি আমার প্রকৃত জ্ঞান লাভের কথা কখনও আপনাদের বলেছি? তখন কি আমি বলেছি আমি দিব্যজ্ঞান লাভ করেছি?” সেই পাঁচজন শ্রমণ স্বীকার করে নিলেন যে এরকম তিনি আগে করেননি। সুতরাং তাঁরা পাঁচজন অবশেষে বুদ্ধের শিষত্ব গ্রহণ করলেন।

এইভাবে বুদ্ধের প্রথম দীক্ষাদান সম্পন্ন হল। এই ঘটনা ঘটল মৃগদাভতে। এই ঘটনার নামকরণ হল ‘ধর্মচক্রপ্রবর্তনসূত্র’। প্রথম দীক্ষা শেষে কৌনদিন্য সবকিছই পরিষ্কার বুঝতে পারলেন। ধর্ম সম্বন্ধে তাঁর সব সমস্যার, সব প্রশ্নের সমাধান সূত্রও তিনি বুঝতে পারলেন। তিনি বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন বুদ্ধ স্বয়ং যেন তাঁর মস্তকমুণ্ডন করে দেন; এইভাবে কৌনদিন্য হয়ে উঠলেন প্রথম বৌদ্ধভিক্ষুক। এরপর হতে বুদ্ধ ওই পাঁচজন ভিক্ষুর সঙ্গে মৃগদাভতে বসবাস করতে শুরু করলেন। পালা করে তাঁরা ভিক্ষার জন্য বাইরে বেরোতেন। দুজনে যখন বাইরে যেতেন অন্য তিনজন তখন বুদ্ধের সঙ্গে ধর্ম আলোচনা করতেন আবার এই তিনজন যখন বাইরে যেতেন তখন অন্য দুজন ধর্ম আলোচনা করতেন। এইরূপ শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা সকলেই সকল শিক্ষা সম্পূর্ণ করলেন কারণ বুদ্ধ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ একজন শিক্ষক। এই পাঁচজন পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অর্হৎ (জৈন বা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী) হলেন। এরপরে বুদ্ধ তাঁদের অনন্তলক্ষণ সূত্র শিক্ষাদান করলেন। এই সূত্রের তথ্য হল অনস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা।

বুদ্ধ মৃগদাভতে থাকাকালীন যশস নামে একজন তরুণ তাঁর কাছে এলেন। এই যশস ছিলেন একজন লক্ষপতি ধনীর পুত্র। তিনি অনেক সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে প্রণয়ে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়াও তাঁর পারিবারিক জীবনে তিনি অতৃপ্ত ছিলেন। তিনি এই জীবন হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য বুদ্ধের শরণ নিলেন, বুদ্ধের জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে তিনি বুদ্ধকে নিবেদন করলেন যে এই ব্যভিচারী জীবন তিনি ছেড়ে আসতে চান এবং এরপর হতে তিনি বুদ্ধের সঙ্গেই তাঁর আশ্রমে বসবাস করতে চান। ইতিমধ্যে যশসের বাবা তার পুত্রের সন্ধানে বুদ্ধের কাছে এসে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর পুত্রের সংবাদ জানতে চাইলেন। বুদ্ধের সঙ্গে তাঁর কিছু কথাবার্তার পর তিনি বুদ্ধের বক্তব্যের সারবত্তা বুঝতে পারলেন। বুদ্ধ তাঁকে ধর্ম সম্পর্কে কিছু কথা বললেন যা শুনে ওই ব্যক্তি সন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁর পুত্রকে বুদ্ধানুরাগী হওয়ার অনুমতি দিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি স্বয়ং বুদ্ধের অনুগত শিষ্যরূপে দিন কাটাতে চাইলেন। তবে তিনি সাংসারিক দায়দায়িত্ব হতে বেরিয়ে আসতে পারবেন না এক্ষুনি এটাও জানালেন। তিনি হলেন একজন বুদ্ধের গৃহী শিষ্য। এরপর তিনি বুদ্ধকে এবং যশসকে নিজ গৃহে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে যশসের আরও চারজন বন্ধু বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে বুদ্ধের দীক্ষা গ্রহণ করলেন। এদের দেখাদেখি আরও পঞ্চাশজন বৌদ্ধভিক্ষুতে পরিণত হলেন। তাঁরা সকলেই বুদ্ধের উপদেশ নিয়মিতভাবে পালন করে চলবেন এই রূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরাও ‘অর্হৎ’ রূপে স্বীকৃত হলেন।

এইভাবে যখন বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ষাটজন ভিক্ষুকে পেলেন তখন তিনি একটি সভার আয়োজন করলেন। সেই সভাতে তিনি সকলকেই ধর্ম প্রচারের জন্য আহ্বান জানালেন। তিনি বললেন আমার এবং তোমাদেরও সমাজ বন্ধন থেকে মুক্তি হয়েছে। আমরা সকলে সুখী এবং মুক্ত। কিন্তু আমরা স্বার্থপর নই, আরও অনেককে আমরা আমাদেরই মতো সংসার বন্ধন হতে মুক্তি দিতে চাই। আমি জানি আমাদের মতো আরও অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা সংসার বন্ধন হতে মুক্তি পেতে চান। জাগতিক দুঃখ যন্ত্রণা হতে তাঁরা ছাড়া পেতে চান। আমরা তাঁদের সেই অভিপ্রায়কে অবশ্যই সাহায্য করব। ধর্মের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। আমরা ধর্ম নিয়ে তাঁদের কাছে যাব। তাঁদের বোঝাব। তাঁরা মূর্খ নন বুঝবেন এবং আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। আর তাঁরা আমাদের কাছ হতে শুনে অবশ্যই সব পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। আমি স্বয়ং উরুবিল্বে ধর্ম প্রচারের কাজে যাব।”

মৃগদাভ ছেড়ে দক্ষিণে মগধ পার হয়ে তিনি অবশেষে উরুবিল্বে উপস্থিত হলেন। প্রায় এক হাজার জন ব্যক্তি এই গ্রামে বাস করতেন। এঁদের নায়ক ছিলেন তিনজন কাশ্যপ ভাই। এই তিনজনের সঙ্গে বুদ্ধ প্রথম আলোচনা করলেন। ধর্ম সম্বন্ধে তাঁদের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলিকে দূর করার চেষ্টা করলেন। তাঁর সদ্যপ্রাপ্ত সত্যজ্ঞান তাঁদেরকে বোঝানোর প্রচেষ্টা করলেন। বুদ্ধের মধুর এবং সদয় মত তাঁদের মনকে পূর্ণ করল। তাঁরা সংসার ত্যাগ করে তাঁর অনুগামী হতে চাইল। এই তিনজন কাশ্যপ এবং সেই গ্রামের এক হাজার জন অধিবাসী সকলেই পরবর্তী সময়ে অর্হৎ—এ পরিণত হলেন।

এর পরের এঁদের সকলকে নিয়ে বুদ্ধ গেলেন রাজগৃহে। এর কারণ তিনি রাজা বিম্বিসারের কাছে প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ ছিলেন যে তিনি একদিন মগধে এসে সেখানকার অধিবাসীদের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানালোক দেবেন। বুদ্ধ এক তাল কুঞ্জে আশ্রয় নিলেন। তাঁর সুন্দর সুষমা ও মধুর কণ্ঠস্বরে সকলেই তার অনুগত শিষ্যতে পরিণত হল। বিম্বিসার বললেন তিনি একদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন অদূর ভবিষ্যতে তিনি বুদ্ধের শিষ্য হবেন। এতদিনে তাঁর অভিপ্রায় সিদ্ধ হল। তিনি বুদ্ধ এবং তাঁর শিষ্যদের বেণুবন নামক একস্থানে বসবাস করার অনুরোধ জানালেন। এই বেণুবনই হল বৌদ্ধদের প্রথম (মঠ) সংঘারাম।

একদিন ভিক্ষা সংগ্রহ করার পথে বুদ্ধ একজন তরুণকে দেখতে পেলেন। এই যুবককে দেখে মনে হল সে এখুনি স্নান সেরে এসেছে তার সর্বাঙ্গ ছিল জলে ভেজা। এই ব্যক্তি সকল দিককে উদ্দেশ্য করে নত হয়ে প্রণাম করছিল। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঊর্ধ্ব এবং অধঃ—এই সব কটি দিকেই সে প্রণাম জানাচ্ছিল। সবশেষে সে মাটিতে শুয়ে পড়ে পৃথিবী তলকে প্রণতি জানাচ্ছিল। এর পর সে চারদিকে শস্য ছড়িয়ে দিচ্ছিল। এই ভাবে সে তাঁর প্রণতি জানিয়ে চলছিল। বুদ্ধ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন সে এ ধরনের অদ্ভুত আচরণ কেন করছে। সে উত্তর দিল তার বাবা মৃত্যুর আগে তাকে এই উপদেশ দিয়ে গেছেন। সে তার বাবার আদেশ পালন করছে মাত্র। এই আচরণের কারণ কিন্তু তার অজানা। তবে তার ধারণা এই ধরনের অনুষ্ঠানের ফলে তার জীবনে কোনওদিন কোনও অমঙ্গল আসবে না।

বুদ্ধ বললেন, ”তুমি যেটা ভাবছ সেটা ঠিক নয়। এটার ব্যাখ্যা হল—তোমার বাবা তোমাকে পূর্ব দিকে নমস্কার করতে বলেছেন কারণ এর দ্বারা তুমি তোমার পিতামাতাকে সম্মান জানাচ্ছ। দক্ষিণ দিকে অভিবাদন জানিয়ে তুমি তোমার শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছ। পশ্চিমদিকে অভিবাদন করে তুমি তোমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের রক্ষা করবার সংকল্প নিচ্ছ। উত্তর দিকে অভিবাদন করে তুমি তোমার বন্ধু ও স্বজনদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছ। ওপরের দিকে এ রকম করে তুমি সম্মান জানাচ্ছ সাধুসন্ন্যাসী রাক্ষস আর শ্রমণদের। নীচে অভিবাদন করে তুমি বাকি সকলকে শ্রদ্ধা করছ। একারণেই তোমার বাবা তোমাকে এ ভাবে নমস্কার জানাতে বলেছেন যাতে কোনও দিক হতে বিপদ এসে তোমাকে আক্রমণ করতে না পারে। বুদ্ধ এর পর সেই যুবককে দেখে বললেন তুমি চুরি করবে না, কাউকে হত্যা করবে না, কোনওরকম পাপ কাজ করবে না, কোনও নেশা করবে না এবং কখনও মিথ্যার আশ্রয় নেবে না। সেই যুবকের নাম সুজাত। তিনি তাকে আরও বললেন সৎভাবে জীবন কাটাও, সৎ উপায় উপার্জন করো এবং কোনও অন্যায় কাজ করা হতে বিরত থাকো। উপার্জনের জন্য কোনও অসৎ পথ গ্রহণ করবে না। উপার্জনের একটা অংশ দরিদ্র ও অনাথদের জন্য ব্যবহার করবে। একটা অংশ ভবিষ্যতের কোনও দৈব দুর্বিপাকের জন্য সঞ্চয় করবে এবং তৃতীয় অংশে সংসার প্রতিপালন করবে। সুজাত তার পরবর্তী জীবনে বুদ্ধের এই ছয়টি উপদেশ পালন করে চলেছিল। বুদ্ধ যখন রাজগৃহে ছিলেন তখন সেখানে একজন বিরুদ্ধতাবাদী ধর্মমতের গুরু সেখানে বাস করতেন। তাঁর নাম ছিল সঞ্জায়ন. স্রবতীপুত্র। তাঁর দুইশত জন শিষ্য ছিল। এদের মধ্যে দুজনের নাম ছিল উপাতিস্য এবং কলিতা। এই দুই জন ছিল বুদ্ধিমান এবং সুশিক্ষিত। এরা দুজন তাদের গুরুদেবের কাছ হতে প্রাপ্ত শিক্ষায় সন্তুষ্ট ছিল না। তারা আরও জ্ঞানলাভের জন্য ব্যগ্র ছিল। এ দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। জ্ঞানের নিরিখে তারা দুজনে ছিল সমকক্ষ। তারা সহমত হয়েছিল তারা আরও জ্ঞান অর্জনের প্রয়াসী হবে এবং কোনও একজন যদি সেরকম উচ্চমার্গের জ্ঞানীর সন্ধান পায় তাহলে তা অবশ্যই অপরজনকে জানাবে।

একদিন উপাতিস্য একজন শ্রমণকে দেখতে পেল। এই শ্রমণ ভিক্ষাপাত্র হাতে ভিক্ষা করছিল। এই শ্রমণের দেহ হতে এক অদ্ভুত সুন্দর জ্যোতিপুঞ্জ বেরিয়ে আসছিল। এই জ্যোতির মধ্যে সুনিবিড় এক শান্তির আভাস দেখে উপাতিস্য অবাক হয়ে গেলেন। উপাতিস্যের কী যেন মনে হল, তাঁর মনে হল যে, তিনি যা যা খুঁজছেন এই ব্যক্তির কাছ থেকে হয়তো তা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সঙ্কোচ বশে উপাতিস্য এই শ্রমণকে জিজ্ঞাসা করতে পারলেন না কেন এই শ্রমণ ভিখারির মতো এই ভাবে ভিক্ষা করছেন। দূর হতে তিনি সেই শ্রমণকে অনুসরণ করে চললেন। দিনের শেষে ভিক্ষা সমাপ্ত করে সেই ভিক্ষু যখন তাঁর আশ্রমে ফিরলেন তখন উপাতিস্য তাঁর কাছে এলেন। বললেন, ”মহাশয় কী জানি কেন আপনার প্রশান্ত মূর্তি দেখে আমি বড়ই প্রীতিলাভ করেছি। আপনি কি দয়া করে আমাকে বলবেন আপনার গুরু কে? নিশ্চয়ই তিনি একজন মহান ব্যক্তি তা না হলে আপনি এত সুন্দর হলেন কী করে? দয়া করে আমাকে আপনার গুরুর কাছে নিয়ে চলুন। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য খুবই উৎসুক হয়ে উঠেছি।”

এই শ্রমণ জানালেন, ”শাক্যবংশের রাজকুমার রাজ্য ঐশ্বর্য সব ত্যাগ করে এখানে আশ্রমে বসবাস করছেন। আমি তাঁর প্রদর্শিত পথে জীবন কাটাই।” উপাতিস্য জিজ্ঞাসা করলেন, ”এই ব্যক্তি যাঁর কথা আপনি এই মাত্র বললেন তিনি কীভাবে আপনাদের শিক্ষা দেন আমাকে দয়া করে বলুন। তাঁর এবং তাঁর মতাদর্শ সম্পর্কে আমি কিছু জানতে চাই।”

সেই শ্রমণ উত্তর দিলেন তিনি অল্প কদিন হল এই গুরুর দর্শন পেয়েছেন আর তিনি এখনও সে রকম উল্লেখযোগ্য কিছু শিখে উঠতে পারেননি। ”তাই আপনাকে তাঁর ধর্মমত সম্পর্কে অথবা তার উপদেশ সম্পর্কে আমি বিস্তারিতভাবে কিছু জানাতে পারব না।” উপাতিস্য বললেন, ”আপনি যেটুকু শুনেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন সেটুকুই আমাকে বলুন। আমি আগ্রহ ভরে সেটুকুই শুনতে চাই।” সেই শ্রমণ বললেন, ”আমাদের মহান গুরু বলেছেন পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে কার্যকারণ সম্পর্কে ঘটে। আবার যা ঘটে না সেটাও কোনও কারণবশতই ঘটে না।”

এই কথা শুনে উপাতিস্যের মনে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল। তিনি বুঝলেন জগতের তাবৎ ঘটনার পিছনে একটা না একটা কারণ নিহিত থাকে। অকারণে কিছু ঘটে না। তিনি শ্রমণকে আবার প্রশ্ন করলেন, ”আপনি নিশ্চয়ই তাহলে মৃত্যুভয়কে জয় করেছেন। আর মৃত্যুভয় হীন হওয়া তো খুবই কঠিন একটি ঘটনা।” তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ”এই মহান ব্যক্তির দর্শন কীভাবে পাওয়া যেতে পারে।” সব কিছু জেনে উপাতিস্য কলিতাকে সব কিছু জানানোর জন্য ফিরলেন। এটা একটা বড় সুসংবাদ এবং তাঁর প্রিয় বন্ধু এই সংবাদ পেয়ে অবশ্যই সুখী হবে। জন্মমৃত্যুর আঘাত হতে মুক্তির পথ অবশ্যই কলিতা পছন্দ করবেন এবং এই জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবেন।

উপাতিস্যের মুখেও নতুন জ্ঞান জাত একটি প্রভা বিকীর্ণ হচ্ছিল। তিনি যখন কলিতার কাছে উপস্থিত হলেন কলিতা এই আলোকচ্ছটা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বুঝলেন উপাতিস্য নিশ্চয়ই কিছু জ্ঞান লাভ করেছেন। তিনি তাই উপাতিস্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি অবশ্যই কোনও নতুন পথের দিশা পেয়েছ, তোমার চেহারার একটা পরিবর্তন হয়েছে আমি দেখতে পাচ্ছি।’ আনন্দ ভরে উপাতিস্য বললেন, ”হ্যাঁ কলিতা। আমি এক অলৌকিক পথের সন্ধান পেয়েছি। মৃত্যুহীন, জন্মহীন, দুঃখকষ্টহীন নতুন এক পথ।” কলিতা প্রশ্ন করলেন, ”এটা কীভাবে সম্ভব হল?” উপাতিস্য তখন সব কথা তাঁকে খুলে বললেন। বললেন সেই শ্রমণের কথা এবং তাঁর গুরুর কথা।

কলিতার যেন নিদ্রাভঙ্গ হল। তিনি বুঝলেন পঞ্চ ইন্দ্রিয় জাত দুঃখময় অভিজ্ঞতাগুলির অবসান হতে চলেছে। জগতে জন্ম, ব্যাধি, জরা, মৃত্যু জনিত শোকের অবসান ঘটাতে এসেছেন সেই শ্রমণের গুরু যিনি বুদ্ধ নামে পরিচিত। বুদ্ধ তাঁদের দুজনকে ভিক্ষু হিসাবে দীক্ষা দিলেন। পূর্বোক্ত শ্রমণের নাম ছিল অশ্বজিৎ। আর যে স্তোত্র তিনি দিয়েছিলেন এই স্তোত্রটির নাম হল ‘ভিক্ষু অশ্বজিতের স্তোত্র’। উপাতিস্য এবং কলিতা বুদ্ধের প্রধান শিষ্যদের মধ্যে স্থান পেলেন।

তৃতীয় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বেণুবনে একটি সভার আয়োজন করা হল। এই সভায় উপস্থিত হলেন এক হাজার পঞ্চাশজন ভিক্ষু। এঁরা আপন আপন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে রত ছিলেন। তাঁরা পরস্পর যোগাযোগ রাখতে পারেননি এর আগে। এই সভা আয়োজিত হয়েছে দেখে বুদ্ধ খুব খুশি হলেন। তিনি তাদের বিভিন্ন কাজের বিষয়ে জানার জন্য খুবই উৎসুক ছিলেন।

বুদ্ধদেব এই সভায় সমবেত সকল অরহন্তের পুনরায় তাঁর সকল নীতিগুলি স্মরণ করিয়ে দিলেন: (১) অসৎ কাজ করবে না। (২) সকল প্রকার সুস্থ কাজ করবে; (৩) পাপ ও অন্যায় হতে নিজেদের মনকে পবিত্র রাখবে। চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই স্মরণে রাখবে এই চারটি হল: (১) সমবেত শিষ্যদের সকলেই অরহন্ত (২) বুদ্ধ স্বয়ং এদের অরহন্ত ভিক্ষু করে তুলেছেন যাঁরা এসেছিলেন (৩) তাঁরা কিন্তু পূর্ণ নির্দিষ্ট কোনও তারিখে আসবেন এরূপ স্থির ছিল না। র্(৪) এই দিন প্রদত্ত বুদ্ধের উপদেশগুলির নাম হল ‘প্রতিমোক্ষ শিক্ষা’। এই দিনটি প্রতি তৃতীয় মাসের পূর্ণিমায় উদযাপিত হয়। এই উৎসবের নাম হয় ‘ধর্মকে সম্মানদান উৎসব’।

রাজা শুদ্ধোদন এসব সংবাদই পাচ্ছিলেন। সব কিছু আরও ভালোভাবে জানার জন্য তিনি তাঁর একজন তরুণ কর্মচারীকে বেণুবনে পাঠালেন। বুদ্ধ এই দূতকে জানালেন তিনি ভবিষ্যতে স্বয়ং একদিন কপিলাবস্তুতে যাবেন এবং তাঁর পিতা শুদ্ধোদনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

একদিন সন্ধ্যায় বুদ্ধ তাঁর সকল শিষ্যদের নিয়ে সত্যি সত্যিই কপিলাবস্তুতে এলেন। সেখানে তাঁরা থাকলেন ন্যগ্রোধ উদ্যানে। পরদিন শিষ্যদের সমভিব্যাহারে বুদ্ধ ভিক্ষার উদ্দেশ্যে নগরে বেরোলেন। রাজ্যের লোকেরা এই সংবাদ শুদ্ধোদনকে পৌঁছে দিল। এই সংবাদে রাজা শুদ্ধোদন ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত হলেন। তাঁর মহান পুত্র যিনি নাকি এত বড় রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী দরজায় দরজায় ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন!

রাজা শুদ্ধোদন নিজে রথে চড়ে যেখানে বুদ্ধ ভিক্ষা করছেন সেখানে হাজির হলেন। দেখলেন তাঁর পুত্র সশিষ্য ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের ভিক্ষাপাত্রগুলি ভিক্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভিড়ের মধ্যে পথ করে এই ভিক্ষুকেরা এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এদেখে রাজা শুদ্ধোদন ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁর পুত্র এভাবে তাঁরই প্রজাদের নিকট হতে ভিক্ষা করছেন। এ দৃশ্য তাঁর কাছে যেন অসহ্য বলে মনে হল। তিনি পুত্রের সম্মুখে হাজির হলেন। দুঃখ এবং ক্ষোভের সঙ্গে বুদ্ধকে ভর্ৎসনা করতে শুরু করলেন। বললেন, ‘বৎস আমি রাজা আর তুমি আমার পুত্র এই রাজ্যের তুমি ভাবী রাজা। এই ভাবে প্রজাদের কাছ হতে ভিক্ষা নিতে তোমার একটু সংকোচও হচ্ছে না। এ ভাবে তুমি তোমার পরিবারকে আর আমাকেও অপমান করে চলেছ। আমাদের রাজবংশের আগে কেউ তো কখনও এ ভাবে ভিক্ষা করে বেড়ায়নি। এ তুমি কী করছ পুত্র আমার?”

বুদ্ধ শান্তভাবে পিতাকে ক্রুদ্ধ না হওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। বললেন, ‘আমার পূর্বপুরুষেরা যা করতেন আমিও তাই করছি। আমি আপনার বংশের কথা বলছি না। আমি একজন বুদ্ধ। আগের বুদ্ধরা যা করতেন আমিও তাই করেছি। অতীতে সব বুদ্ধরা এই ভাবেই তাঁদের অন্ন খাদ্য সংগ্রহ করতেন।’ এর পর বুদ্ধ রাজা শুদ্ধোদনকে বুদ্ধের এবং বৌদ্ধ ধর্মের সূত্রগুলি ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন। পরে রাজা শুদ্ধোদন বুদ্ধ এবং তাঁর শিষ্যদের হাত হতে ভিক্ষা পাত্রগুলি সংগ্রহ করে নিলেন। তাঁদের সকলকে রাজপ্রাসাদে আসবার আমন্ত্রণ জানালেন।

রাজপ্রাসাদে বুদ্ধ এবং তাঁর শিষ্যবর্গ পরিতৃপ্তির সঙ্গে সুস্বাদু আহার গ্রহণ করলেন। এর পর তিনি রাজা, রাজ কর্মচারী এবং রাজপ্রাসাদের সকল কর্মচারীকে তাঁর প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার কথা সবিস্তারে বললেন। বুদ্ধের অমিয় বচন শুনে তাঁরা সকলেই বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিলেন। তাঁরা বুদ্ধের মত সানন্দে গ্রহণ করলেন।

এরপর বুদ্ধ তাঁর দুজন শিষ্যকে নিয়ে গেলেন যশোধরার শয়নকক্ষে। তিনি অভিমান ও দুঃখে এতই কাতর ছিলেন যে বুদ্ধের সঙ্গে তিনি দেখা করতেও আসেননি। বুদ্ধ যে সব উপদেশ আর সবাইকে দিতেন সে সব উপদেশ শুনবারও তাঁর কোনও ইচ্ছা হত না। কিন্তু বুদ্ধের সহৃদয় কথাবার্তায় শেষ পর্যন্ত তিনিও মুগ্ধ হলেন, তাঁর অভিমান দূর হল। পুত্র রাহুলের তখন সাত বছর বয়স। রাহুল সর্ব প্রথম বুদ্ধের শিষ্য শ্রমণ পেরা হলেন। রাহুল ছাড়াও বুদ্ধ তাঁর সৎ ভাই নন্দ এবং শাক্য বংশের আরও অনেক রাজপুত্রকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দিলেন। আরও ছয়জন শাক্য বংশীয় রাজপুত্রও বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হলেন এঁদের নাম ভদ্রিক, অনিরুদ্ধ, ভগু, কিম্বিল এবং আনন্দ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *