অনির্বাণ অমিতাভ – অতিরিক্ত সংযোজন

অতিরিক্ত সংযোজন

গৌতম প্রয়াণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরএবার চলিনু তবে।
 সময় হয়েছে নিকট, এখন
বাঁধন ছিঁড়িতে হবে।
 উচ্ছল জল করে ছলছল,
জাগিয়া উঠেছে কল—কোলাহল,
 তরণী—পতাকা চল—চঞ্চল
কাঁপিছে অধীর রবে।
 
সময় হয়েছে নিকট, এখন
 বাঁধন ছিঁড়িতে হবে।
আমি নিষ্ঠুর কঠিন কঠোর,
 নির্মম আমি আজি।
আর নাই দেরী ভৈরব—ভেরী
 বাহিরে উঠেছে বাজি।

তুমি ঘুমাইছ নিলীম নয়নে,
 কাঁপিয়া উঠিছে বিরহ—স্বপনে,
প্রভাতে জাগিয়া শূন্য নয়নে
 কাঁদিয়া চাহিয়া রবে।
সময় হয়েছে নিকট এখন
 বাঁধন ছিঁড়িতে হবে।
 
অরুণ তোমার তরুণ অধর
 করুণ তোমার আঁখি
অমিয়—রচন সোহাগ—বচন
 অনেক রয়েছে বাকি।
পাখি উড়ে যাবে সাগরের পার,
 সুখময় নীড় পড়ে রবে তার,
মহাকাশ হতে ওই বারেবার
 আমারে ডাকিছে সবে।
সময় হয়েছে নিকট, এখন
 বাঁধন ছিঁড়িতে হবে।
 
বিশ্বজগৎ আমারে মাগিলে
 কে মোর আত্ম পর
আমার বিধাতা আমাতে জাগিলে
 কোথায় আমার ঘর।
কিসেরি বা সুখ, ক’দিনের প্রাণ?
 ওই উঠিয়াছে সংগ্রাম—গান,
 অমর মরণ রক্তচরণ
 নাচিছে সগৌরবে।
 সময়ে হয়েছে নিকট, এখন
 বাঁধন ছিঁড়িতে হবে।

.
পারমিতা

পারমিতা একটি সংস্কৃত শব্দ। এই অর্থ হল আমরা যা করতে চাই তা পরিপূর্ণ করা। দশটি (মতান্তরে বারোটি) গুণের মাধ্যমে পরমজ্ঞান লাভ করা যায়। প্যালিতে এই দশটি গুণকেই বলা হয় পারমিতা। একজন বোধিসত্ত্ব এই দশটি গুণ বা পারমিতা অনুশীলন করেই বুদ্ধত্ব লাভ করতে পারেন। পারমিতাগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

এগুলি সর্বোচ্চ, নিস্পৃহ, অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং অক্ষয়। এগুলির অনুশীলন করে আমরা মঙ্গল, সুখদ পুনর্জন্ম, শান্তি, আধ্যাত্মিক উন্নতি, সফল মনঃসংযোগ এবং সর্বোচ্চ জ্ঞান পেতে পারি। পারমিতার দশটি গুণ হল:

১। দান (উদারতা)

২। শীল (নৈতিকতা)

৩। ক্ষান্তি (ধৈর্য)

৪। বীরিয় (মানসিক শক্তি)

৫। ধ্যান (গভীর মনঃসংযোগ)

৬। প্রজ্ঞা (গভীর জ্ঞান, তত্ত্ব জ্ঞান)

৭। উপায় কৌশল্য (দক্ষতা)

৮। প্রণিধান (উচ্চচাকাঙ্ক্ষা) একাগ্রভাবে মনোনিবেশ)

৯। বল (শক্তি)

১০। জ্ঞান (বোধ, বুদ্ধি)

এগুলির প্রথম ছয়টি হল প্রধান পারমিতা এবং পরবর্তী চারটি হল অপ্রধান পারমিতা।

একটি জাতক কাহিনী উল্লেখ করে এই পারমিতাগুলির উদাহরণ দেওয়া যায়।

সেই জন্মে বোধিসত্ত্ব একটি বনমানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একজন ব্রাহ্মণ তাঁর হারিয়ে যাওয়া একটি গরুর অনুসন্ধান করতে করতে জঙ্গলে প্রবেশ করেন এবং পথ হারিয়ে একটি গভীর গর্তে পড়ে যান। বন মানুষরূপী বোধিসত্ত্ব এটি লক্ষ্য করেন এবং সেই গর্ত হতে ব্রাহ্মণকে উদ্ধার করেন।

(১) বন মানুষ রূপী বোধিসত্ত্ব ব্রাহ্মণের কষ্ট দেখে সহমর্মিতা অনুভব করেছিলেন। এই ব্রাহ্মণই কিন্তু পরবর্তী কালে দেবদত্ত হয়ে জন্মেছিলেন।

(২) নিজ জীবন বিপন্ন করেও তিনি ব্রাহ্মণকে রক্ষা করবেন শপথ নিয়েছিলেন এবং নিজ প্রাণ বিপন্ন করে ব্রাহ্মণকে রক্ষাও করেছিলেন।

(৩) কীভাবে ব্রাহ্মণকে রক্ষা করবেন এই উপায় ও পদ্ধতির কথাও তিনি ভেবে নিয়েছিলেন। এবং স্থির করেছিলেন ব্রাহ্মণকে পিঠে নিয়ে তিনি উপরে লাফ দিয়ে উঠে আসবেন।

(৪) এই উদ্দেশ্যে তিনি আন্দাজ মতো ব্রাহ্মণের ওজন অনুযায়ী একটি প্রস্তর খণ্ড পিঠে নিয়ে বেশ কয়েকবার উপরে লাফ দেওয়া অভ্যাস করেছিলেন।

(৫) গর্ত হতে উদ্ধার পাওয়ার পর সেই অকৃতজ্ঞব্রাহ্মণ কিন্তু বোধিসত্ত্বকে মাথায় একটি পাথর দিয়ে আঘাত করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বোধিসত্ত্বকে হত্যা করে তাঁর মাংস স্বগৃহ নিয়ে যাওয়া। বোধিসত্ত্ব কোনও মতে রক্ষা পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর মনে কোনও প্রতিহিংসাস্পৃহা জাগেনি।

(৬) তিনি ব্রাহ্মণটির প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি।

(৭) হিংস্র ব্রাহ্মণের আচরণ তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছিলেন।

(৮) তিনি ব্রাহ্মণকে আবার গৃহে প্রত্যাবর্তনের পথও দেখিয়ে দিয়েছিলেন না হলে ব্রাহ্মণ পথ হারিয়ে ফেলতেন এবং এ ভাবে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন।

(৯) এই কাজ করে তাঁর কোনও পার্থিব লাভ বা আধ্যাত্মিক পুণ্য অর্জন হবে এরূপ প্রত্যাশা তিনি করেননি।

এই কাহিনীতে পারমীর উদাহরণগুলি হল—

১। দান— বোধিসত্ত্ব নিজ প্রাণ বিপন্ন করে ব্রাহ্মণকে উদ্ধার করেছিলেন।

২। শীল—বোধিসত্ত্ব ব্রাহ্মণের চরম অকৃতজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতেও তাঁকে রক্ষা করার সংকল্প হতে বিচ্যুত হননি।

৩। নেক ধম্ম—তিনি কোনও রূপ লাভের প্রত্যাশা না করেই স্বীয় কর্তব্যপালন করেছিলেন। এটি নেক ধম্ম পারমীর উদাহরণ।

৪। প্রজ্ঞা—ব্রাহ্মণটিকে রক্ষা করার জন্য যে উপায় চিন্তা করেছিলেন সেটি উপায় প্রজ্ঞা পারমীর উদাহরণ।

৫। বীরিয়—বারবার লাফ দেওয়ার প্রচেষ্টাটি বীরিয় পারমীর লক্ষণ।

৬। ক্ষান্তি—অকৃতজ্ঞ ব্রাহ্মণের আঘাত সত্ত্বেও যে তিনি তার প্রতি ক্রোধ অনুভব করেননি। এটি ক্ষান্তি পারামীর উদাহরণ।

৭। সচ্চ—প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও তিনি ব্রাহ্মণকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা করছিলেন। সেটি সত্য পারমীর লক্ষণ।

৮। অধিটধান—তাঁর চরম ক্ষতি করতে পারে জেনেও তিনি তাঁর সংকল্প শেষ পর্যন্ত বজায় রেখেছিলেন এটি সচ্চ বা সত্য পারমীর লক্ষণ।

৯। মেত্তা—গর্তে পড়ে যাওয়া ব্রাহ্মণের প্রতি বোধিসত্ত্ব যে করুণা অনুভব করেছিলেন সেটি মেত্তা পারমীর লক্ষণ।

১০। ব্রাহ্মণ হত্যা করতে পারে এটা জেনেও বোধিসত্ত্ব তা উপেক্ষা করেছিলেন। এটি উপকা ও দান পারমীর উদাহরণ।

পারমী—মহান মানুষেরা যে মহৎ কাজ ও মহৎ চিন্তা দ্বারা নিঃস্বার্থভাবে অপরের হিতসাধন করেন এগুলিকেই বলে পারমী।

প্রতিবাদী আন্দোলন—সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক জটিলতা, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সর্বোপরি ব্যয়বহুল যজ্ঞ কেন্দ্রিক ধর্মমতের বিরুদ্ধে উদ্ভূত আন্দোলনকে প্রতিবাদী আন্দোলন বলা হয়।

আজীবিক—খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠশতকে প্রতিবাদী শূদ্র সন্ন্যাসীদের এই নাম।

ত্রিপিটক—সুত্ত পিটক, বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক—এই তিনটি পেটিকায় বিভক্ত বুদ্ধদেবের ধর্মমত ও উপদেশাবলী

আর্যসত্য—(১) দুঃখ (২) দুঃখের কারণ (৩) দুঃখকষ্ট নিবারণ সম্ভব (৪) দুঃখ নিবারণের পথ এই চারটি আর্যসত্য

ধর্মচক্র প্রবর্তন—বোধি (দিব্যজ্ঞান) লাভের পর সারনাথের নিকট মৃগদাভ জঙ্গলে পাঁচজন শিষ্যের নিকট বুদ্ধের প্রথম ধর্মপ্রচারকে ধর্মচক্র বলা হয়।

মহাভিনিষ্ক্রমণ—রোগ, শোক, জরা এবং মৃত্যুর কারণে সংঘটিত জাগতিক দুঃখকষ্ট হতে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সিদ্ধার্থ, সংসার ত্যাগ করে যাওয়ার ঘটনাকে মহাভিনিষ্ক্রমণ বলা হয়।

অষ্টাঙ্গিক মার্গ—মানুষের মুক্তিলাভের জন্য বুদ্ধ যে আটটি পথের সন্ধান দিয়েছিলেন সেটি অষ্টাঙ্গিক মার্গ নামে অভিহিত।

এগুলি হল—

১। সৎ বাক্য ৫। সৎ দৃষ্টি

২। সৎ কার্য ৩। সৎ সংকল্প

৩। সৎ জীবিকা ৭। সৎ প্রচেষ্টা

৪। সৎ চিন্তা ৮। সম্যক সমাধি

মধ্যপন্থা—বুদ্ধদেব চরম ভোগবিলাস এবং কঠোরতম শারীরিক কৃচ্ছ্রসাধন এই দুই পন্থার মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করে নির্বাণ লাভের কথা বলেছেন। এটি মধ্যপন্থা নামে পরিচিত।

হীনযান ও মহাযান—বৌদ্ধধর্মের দুটি সম্প্রদায়। হীনযানিরা নিরাকার উপাসনা এবং মহাযানিরা বুদ্ধের মূর্তিপূজায় বিশ্বাসী।

বৌদ্ধধর্মের মূলকথা—কর্মফল এবং জন্মান্তরবাদ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য চারটি আর্যসত্য উপলব্ধি করা এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করে নির্বাণ লাভ করা এগুলিই হল বৌদ্ধধর্মের মূলকথা।

মহাপরিনির্বাণ—এক বৈশাখী পূর্ণিমায় সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করেন এবং আশি বছর বয়সে আর এক বৈশাখী পূর্ণিমায় বুদ্ধের দেহান্তর ঘটে। এই দেহত্যাগের দিনটিই মহাপরিনির্বাণ নামে পরিচিত।

.

বুদ্ধের প্রথম ধর্মোপদেশ

পরমজ্ঞান বা দিব্যজ্ঞান লাভ করার পর গৌতম বুদ্ধ সর্বসাধারণের মধ্যে এই জ্ঞান প্রচার করতেন কি না এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মানব কল্যাণের জন্য তিনি তাঁর ধর্মমত প্রচারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ধর্মচক্র প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে তিনি কাশীর নিকটে সারনাথে উপস্থিত হন। পূর্বে পাঁচজন তপস্বী মতভেদের কারণে তাঁকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। মতভেদের কারণ ছিল পদ্ধতিগত। ইতিমধ্যে তাঁরা বুদ্ধের কাছে আবার ফিরেও এসেছিলেন। এই পাঁচজনই ছিলেন তাঁর প্রথম শিষ্য। এই ঘটনা ইতিহাসে ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে পরিচিত। এই পাঁচজনকে বুদ্ধ বললেন, ‘ভিক্ষুগণ গৃহী হতে সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য আগত জনগণকে দুটি চরম পথ ত্যাগ করতে হবে। এই দুটি চরম পথ কি? প্রথমটি হচ্ছে ইন্দ্রিয় সুখ আকর্ষণে গাঢ়ভাবে জড়িত হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হল ধর্মের কারণে সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট সহ্য করা এবং কৃচ্ছ্রসাধন করা। এগুলি হল শারীরিক ক্লেশ, কষ্ট, কষ্টসাধ্য ব্রতাদি পালন ইত্যাদি। এই দুই পথই মানুষকে যন্ত্রণা, কষ্ট দেয় এবং এগুলি মানুষের পক্ষে কোনও মতেই লাভজনক বা পুণ্য অর্জনে সহায়ক নয়। ধর্ম অনুরাগী সকল মানুষকেই এই দুটি চরম পন্থা ত্যাগ করতে হবে। পরিবর্তে তাদের গ্রহণ করতে হবে মধ্য পন্থা। এই মধ্য পন্থা গ্রহণের ফলে মানুষ যেমন দূরদৃষ্টি লাভ করবে তেমনি লাভ করবে জ্ঞান, শান্তি, প্রজ্ঞা এবং সবশেষে নির্বাণ।’ এই মধ্যম পন্থা আসলে কী? বুদ্ধ মধ্য পন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চরম বিলাসী জীবন এবং মহাবীর নির্দেশিত চরম কঠোর তপশ্চর্যা পদ্ধতি পরিত্যাগ করে এই দুই পথের মাঝামাঝি পথকে গ্রহণযোগ্য বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই পথটিই হল মধ্য পন্থা।

এই পন্থাকে বলা হয় অষ্টাঙ্গিক মার্গ। আর অষ্টাঙ্গিক মার্গগুলি হল:

১। সম্যক দৃষ্টি ৫। সৎ জীবন

২। সৎ সংকল্প ৬। সৎ প্রচেষ্টা

৩। সত্য কথন ৭। সৎ স্মৃতি

৪। সৎ কর্ম ৮। সম্যক সমাধি

1. Right Understanding 5. Right Livelihood

2. Right Thought 6. Right Effort

3. Right Speech 7. Right Mindfulness

4. Right Action  8. Right Concentration

ধম্মপদ হতে সঙ্কলিত কয়েকটি বুদ্ধবাণী

১। সকল মানসিক অবস্থার অগ্রদূত, স্রষ্টা এবং প্রধান হল মন। কলুষিত মন নিয়ে কাজ করা এবং কথা বলা মানুষের জীবনে বিপর্যয় এনে দেয়। যেমন গোরুর গাড়ির চাকা গোরুর পায়ের খুরকে অনুসরণ করে ঠিক তেমনি দুঃখ ক্লেশ কলুষিত মনকে অনুসরণ করে।

২। ‘সে আমাকে প্রহার করেছে, সে আমাকে পরাজিত করেছে, সে আমাকে লুণ্ঠন করেছে’—যে এই সব চিন্তা করে নিজ মনে ঘৃণা নিয়ে আসে তার অন্তরের ঘৃণা ও ক্ষোভ কখনও অপনীত হয় না।

৩। এই পৃথিবীতে ঘৃণা দ্বারা ঘৃণাকে দূর করা যায় না। একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই ঘৃণাকে জয় করা যায়। এটিই শাশ্বত সঙ্গত বিধি।

৪। যে উদ্যমী, সতর্ক ও মনোযোগী, আচরণে পবিত্র, বিচারক্ষম, আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম, সৎ এবং নীতিসম্মত জীবনযাপক তার খ্যাতি ও শ্রী ক্রমবর্ধমান।

৫। যে ব্যক্তি মর্যাদা, কামনা, বাসনা পরবশ হয়ে কাল কাটায় মৃত্যু তাকে দ্রুত ধ্বংসের পথে আকর্ষণ করে নেয় ঠিক যেমন প্রবল বন্যা কোনও নিদ্রিত গ্রামকে হঠাৎই ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

৬। যেমন সুগন্ধহীন সুন্দর পুষ্প কারও সমাদর লাভ করে না ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি সদুপদেশ দেয় অথচ স্বয়ং তা পালন করে না তার সদুপদেশ কারও মনে কোনও রেখাপাত করে না।

৭। ‘আমার সন্তান আছে, আমার আছে সম্পদ’—এ কথা মূর্খরাই চিন্তা করে এবং আত্মপ্রসাদ লাভ করে। প্রকৃত পক্ষে সে নিজেই তো নিজের নয় তাহলে পুত্র এবং ধন তার কীভাবে হতে পারে?

৮। এক মাত্র মূর্খরাই চিন্তা করে তার কৃত অসৎ কাজ মধুর মতো মিষ্ট ততক্ষণই যতক্ষণ না এই কাজ পরিপক্বতা লাভ করছে। কিন্তু যখন এই অসৎ কাজ ফলবতী হয় তখন রোদনই তার পরিণতি হয়ে ওঠে।

বুদ্ধের শেষ উপদেশ

মৃত্যুর পূর্বে মহানুভব গৌতম বুদ্ধ মাননীয় আনন্দকে ডেকে বললেন, ‘আনন্দ তোমরা হয়তো ভাবতে পারো আমাদের সঙ্গে আমাদের মহান গুরু আর নেই। কিন্তু এই ভাবে ভেবো না। আমি তোমাদের যা শিখিয়েছি, যা তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি তা হল ধম্ম এবং বিনয়। আমার মৃত্যুর পর এই দুটিই যথাক্রমে নীতি এবং শৃঙ্খলা তোমাদের শিক্ষাগুরু হবে। চন্নকে* তোমরা শাস্তি দিতে চাইছ। ও নাকি আমার সারথি হওয়ার কারণে আমার কাছে কাছে থাকত আর এ জন্যই ও নাকি অহঙ্কারী ও একগুঁয়ে হয়ে উঠেছে। আনন্দ, চন্ন যা করতে চায় কারুক অন্য ভিক্ষুরা যেন কেউ তার সঙ্গে কথা না বলে। তাকে যেন কেউ আঘাত না দেয়।’ ভিক্ষুরা এই কথা শুনে সকলে নীরবে রইল। এই রকম তিনবার এই ভাবেই বুদ্ধ বললেন আর ভিক্ষুরা সকলে চুপ করে থাকল। শুধু আনন্দ বললেন ”হে মহানুভব আমরা আপনার ধম্ম, সঙ্ঘ, পথ এবং অন্যান্য সম্পর্কে কোনও সন্দেহ করি না। আপনার উপর আমাদের সকলের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। বুদ্ধ তখন বললেন হে আমার প্রিয় ভিক্ষুগণ সকল বন্ধন হতে মুক্তি পাওয়া (নির্বাণ) শর্তাধীন বস্তু। কঠোর শ্রম করে তোমরা তা লাভ করার চেষ্টা করো।”

___

* চন্নের নিকট পরবর্তী কালে আনন্দ গিয়েছিলেন এবং তার উপর সামাজিক বহিষ্কার নির্দেশ শুনিয়েছিলেন। চন্ন অবসন্ন হয়ে সম্পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। নম্র এবং অকপট চিত্তে তিনি একজন প্রকৃত অর্হন্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার সামাজিক বহিষ্কার শাস্তিও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সহায়ক গ্রন্থ

1. A Pictorial Biography of Sakyamuni Buddha- Gunapayuta

(Thai)

 2. What in Buddha Taught— Walpola Rahula

 3. যুক্তিবাদী গৌতম বুদ্ধ, অশোক ও ভারতবর্ষ—পীযুষ গায়েন

 4. Buddhism

 5. The Budhha’s Ancient Path—Thera Piyadassi

 6. Basic of Buddhism

 7. The Secret

 8. বৌদ্ধ ভারত—বিমলচন্দ্র দত্ত

 9. মহানুভব গৌতম বুদ্ধ—ডঃ সুকোমল চৌধুরী

10. ভারতের ইতিহাস—ডঃ বন্ধন চক্রবর্তী

11. ভারতের ইতিহাস ও বিশ্ব—অধ্যাপক ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক চক্রবর্তী

12. রবীন্দ্র রচনাবলী

13. Total History and Civics— Morning Star

14. The Light of Peace— Budhha Priya Mahathera

15. পালিভাষা—সাহিত্য বৌদ্ধদর্শন ও রবীন্দ্রনাথ— ডঃ রাধারমন জানা

16. Oxford Certificate History & Civics—Manjistha Bose

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *