আড়ালে, আড়ালে

আড়ালে, আড়ালে

পিঠের চামড়ায় একটু একটু করে কাঁপছে
ভয়
যেন পদশব্দের আড়ালে
অন্য শব্দ
যেন অজানা আশঙ্কা বাঁশি বাজাচ্ছে গাছের ডালে বসে
যেন কেউ থামতে বলছে
যেন কেউ বললো,
বড় দেরি হয়ে গেল
ফিরে তাকালেই ধূল্যবলুণ্ঠিত জ্যোৎস্নার নিস্তব্ধতা
কে ওখানে?
পাতার আড়ালে তুমি কে?
বনভূমি সাড়া দেয় না, যেমন রাত্রিও নির্নিমেষ!

বারুদের কারখানা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি
তবু দেখা গেল না বাল্য সঙ্গীদের
নদীর খাতের মধ্যে নদী
নেই
যেন মানুষ ঘুমোচ্ছে অথচ স্বপ্ন দেখছে
না
একটা শুকনো প্রান্তরে কাঁচা কাঠের আনমনা আগুন জ্বেলে
মনস্বীরা গোল হয়ে বসে পুড়িয়ে খাচ্ছেন ইতিহাস
আকাশে চতুর্বর্ণ মেঘ, তার নীচে রক্তিম সুতোর
ওড়াউড়ি
ঢেউয়ের মতন দুলতে দুলতে
ঢেউয়ের মতন মুখ বদলাতে বদলাতে
আসছে ঝড়, খেলতে এলো ঝড়
মাঠ পেরিয়ে বনের মধ্যে, বন পেরিয়ে পাহাড়ে
কে ওখানে?
গুহার আড়ালে তুমি কে?
পাহাড় মানুষের সঙ্গে কথা বলে না, ঝড়ও না!

যেখানে একটা রাস্তা ছিল, সেখানে কাগজের স্তূপ
অক্ষর অনেক মুছে গেছে, বৃষ্টিতে ধুয়েছে
অবশ্য নানা রকম সেলাইগুলি বেশ মজবুত
এই রাস্তায় একটি করমচা রঙের কিশোরী
একদিন
একটি গাছের কাছে মনের কথা বলতে গিয়ে
প্রথম স্তনস্পন্দন টের পেয়েছিল
গাছটি মিলিয়ে গেছে সভ্যতায়
কিশোরীটি টুকরো টুকরো হয়েছে ছাপাখানার জঠরে
তার ধবল হাঁসের মতন ঊরুতে মাথা রেখে
যে কেঁদেছিল
সে পরে মাথা ঘামিয়েছে অসংখ্য উপমায়
বজ্ৰ পতনের শব্দে পাথর ফাটে, কাগজের মণ্ড
নড়ে না
কে ওখানে?
বৃষ্টির মধ্যে কে যায়?
কেউ না, কাগজ হাসছে, ভাসছে কাগজের নৌকো!

বাউলের গায়ের নানা রকম রঙের জামার মতন
এই অরণ্য
দিনাবসানের আসন্ন বেলায় হাতছানি দিল
দিগন্ত এমন লাল
যেন বন্ধুকে ছুরি মেরেছে বন্ধু
যেন সমস্ত নিভৃত কথা ভুলে যাবার লজ্জা
মিহিন হয়ে খুঁড়িয়ে যাচ্ছে এই আকাশ থেকে
অন্য আকাশে
কেউ আসন পেতে রেখেছিল
আমি যাইনি
এখন আমি এসেছি, কেউ নেই
কেউ নেই, তবু কেন নিস্তব্ধতার এমন প্রবল শব্দ
কে ওখানে?
নিঃসঙ্গতার আড়ালে তুমি কে?
আকাশ লুটিয়ে পড়ে, গাছপালা কাঁপিয়ে দেয় হাওয়া!