1 of 2

মৃত্যুচিন্তা

মৃত্যুচিন্তা

বয়সটা তাঁর বড়ো খারাপ প্রিয়তোষ বোঝেন। এই বয়সে একা থাকলেই তাঁর যত মৃত্যুচিন্তা মাথায় ঢুকে যায়।

কেবল ভাবেন আর কত দিন!

প্রশ্নটা নানাভাবে তাঁকে তাড়া করে। মৃত্যুচিন্তা তাঁকে বড়োই পীড়া দেয়। মায়ের মৃত্যুর পরই এটা তাঁর বেশি হয়েছে। মৃত্যুকষ্ট কী যে সাংঘাতিক, তাঁর মনে হত মা ঘোরে পড়ে আছেন, হুঁশ নেই, মাঝে মাঝে হাত-পা নাড়ছেন, হাত কাঁপছে, বুক প্রচণ্ড ওঠানামা করছে—মুখ লালা গড়াচ্ছে, কাউকে চিনতে পারছেন না, চোখে জল, তিনি মৃত্যুকষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। আত্মীয়স্বজনেরও ভিড়, হঠাৎ এটা যে কী হল! ভালোই তো ছিলেন, স্বপাকে খেতেন, অসুখ-বিসুখ ছিল না, সহসা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে সে যে ঘোরের মধ্যে গিয়ে ঢুকলেন—আর সাড়া নেই। স্যালাইন অক্সিজেন চলছে। নার্সিংহোমে ঢুকতে একটা ঝাউগাছের ছায়ায় প্রিয়তোষ দাঁড়িয়ে থাকেন। মা-র কষ্ট দেখতে হবে ভেবেই তাঁর আর সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে ইচ্ছে হত না। কাছে থাকলে কষ্ট বাড়ে। আত্মীয়-স্বজনরাও চাইত না, মায়ের পাশে তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর তো বয়স হয়েছে।

আর কী যে হয়, কিছুটা তিনি পলাতকের মতোই প্রায় তখন দেশের বাড়িতে ফিরতেন। সুনন্দা বলত মা ভালো হয়ে যাবে, তুমি এত ভাবছ কেন। ভালো যে হবে না তিনি জানেন। তবু সুনন্দা কিংবা ভাইরা তাঁকে কিছুটা আগলে রাখত। দৌড়-ঝাঁপ তারাই করছে। শুধু টাকা-পয়সার বন্দোবস্ত রাখা ছাড়া তাঁর আর কোনো দায়ই ছিল না। মৃত্যুর সঙ্গে মা-র লড়ালড়িটা ছিল মাসাধিককাল।

তাঁর মাঝে মাঝে মনে হত, মা এই ঘোরের মধ্যে মৃত্যুকষ্ট কি টের পাচ্ছেন না টের পাচ্ছেন না। এক সাবলীল নৌকা যদি ঝড়ে নদীর কিনারায় উলটে পড়ে থাকে, তার দিকে আর কে তাকায়! ঝড় অথবা অতি নিবিড় স্নেহ কি এই ঘোরের মধ্যেও জীবনকে জড়িয়ে রাখে।

মা কি বলতে চান, বড়ো কষ্ট, আমি আর পারছি না রে। এই শরীর কিছুতেই মুক্তি দিচ্ছে না রে। গলায় ফাঁসের দড়ি ঝুলিয়ে আমাকে তোরা দোলাচ্ছিস কেন? ফাঁসটা আলগা করে দে। আমাকে মুক্তি দে।

এই মাসাধিককাল তার মনে হত, বড়োই ভয়ংকর দুঃসময়, কষ্ট, অতি কষ্ট, এবং গলা টিপে হত্যা করার চেয়েও প্রবল এক কষ্ট অথবা কি কোনো সুখ, জড়তার সুখ মাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে! মা হয়তো কোনোই মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করছেন না। অকারণ সবাই মায়ের কষ্ট দেখে চোখের জল ফেলছে।

মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে ঢুকে না গেলে কেউ বোঝেই না মৃত্যুর ভাষা কী হয়, কীভাবে বদলায়।

মৃত্যুর মধ্যেও কি সুখ থাকে?

জীবনে যে সুখ নিত্যবহ, মৃত্যুযন্ত্রণাও কি শরীরে অন্য সুখ এনে দেয়। তিনি জানেন না, জীবিতরা কেউ জানে না, মৃত্যুর এই অবচেতন অন্ধকারে কোনো নীল ভূখণ্ডের স্বপ্নে মা বিভোর হয়ে গেছেন কি না।

তারপর যা হয় সাদা চাদরে মুখ ঢেকে দেওয়া হয়।

সুনন্দা ডাকছিল, তিনি কোথায় গেলেন।

কেউ বলল ঝাউ গাছটার নীচে বসে আছেন।

আসতে বল। তিনি তাঁর বড়ো পুত্র। গঙ্গাজল দিক।

জেঠু শিগগির উপরে যাও। ঠাকুরমার মুখে জল দিতে হবে। প্রিয়তোষ সাড়া দিতে পারনেনি। কিছুতেই তিনি মায়ের মরা মুখ দেখতে রাজি না। কেউ তাকে নিয়ে যেতে পারেনি। কখন সবার অলক্ষে তিনি তাঁর দেশের বাড়ির দিকে চলে গেছিলেন নিজেও টের পাননি।

রিকশায় যেতে হয়।

দেড় ক্রোশ পথ যেতে হয়।

গাছপালা, ধানের মাঠ এবং পাকা সড়ক পড়ে বাড়ি যেতে। রিকশায় বসে কেমন একাকিত্বে ডুবে যাচ্ছিলেন এই নয়, মা নেই বলে, বয়েস হলে সবাইকে যেতে হয়, এক জীবন থেকে অন্য জীবনে, অথবা কোনও জীবনেই হয়তো নয় মৃত্যু শেষ কথা বলে, জন্মের আগেও কিছু নেই, মৃত্যুর পরও কিছু থাকে না, সময়ের এক মধ্যবর্তী সময় জীবন নামক এক অস্তিত্বে ক্ষণিক লড়লড়ি, আসলে মৃত্যুকষ্টই তাঁকে বেশি পীড় দিচ্ছে।

কখনো নদীর মতো প্রবহমান আর্তির কথা— অথবা জীবন তো শেষ হবেই, জীবনের শেষ কথা বলেও কিছু নেই–অথচ কী সুন্দর এই গ্রহ, কত পাখপাখালি উড়ে যাচ্ছে, চাষিরা মাঠে যাচ্ছে, কয়েদবেল গাছ থেকে এক বালক ফল চুরি করে পালাচ্ছে কিংবা জীবনের নিত্য ম্রিয়মাণ অস্তিত্ব এই আকাশ এবং নক্ষত্রের আলোতে ভেসে যায়। কুয়াশায় ডুবে থাকে ঘাস, ওড়ে প্রজাপতি, দূরে কোনো বনাঞ্চলে শোনা যায় হরিণের পায়ের শব্দ, অতি দ্রুত গতি তার, সৌরমণ্ডলে এই গ্রহে আছে শুধু প্রাণ। এবং যৌনতাই তার জন্মের কারণ, যৌনতার নির্যাসই প্রাণ এবং প্রাণের নির্যাসই মৃত্যু।

তিনি রিকশায় চড়ে যাবার সময় এমন সব যাবতীয় চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাচ্ছিলেন। মা এবং তাঁর শৈশব অথবা বালিকা বয়সের চাঞ্চল্য এবং বড়ো হয়ে ওঠার মধ্যে ছিল, এক অতীব আশ্চর্য ধারাবিবরণী, স্বামী, শ্বশুর এবং পুত্ররা, কন্যারা তারপর ধীর প্রবাহে এক বংশাবলি তৈরি হয়ে গেল।

২.

সেদিন প্রিয়তোষ ফিরছিলেন, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, খালপাড় ধরে কিছুটা হেঁটে বড়ো রাস্তায় উঠে, বাস স্ট্যান্ড পার হয়ে, এক সরু চিলতে বস্তির রাস্তা পার হয়ে আবার বড়ো রাস্তায় পড়ে এবং কিছুটা গেলে তার বাড়ির রাস্তা, বেশ হন হন করেই হেঁটে যান, বয়সের ভারে তাঁর হৃদযন্ত্রটি দুর্বল না হয় তাই ডাক্তারের পরামর্শে এই সান্ধ্যভ্রমণ এবং সরু চিলতে রাস্তায় হঠাৎ কে যেন তখন ডাকল, বাবু-আবছা অন্ধকারেও চিনে ফেলতে তার কষ্ট হল না। মেনকা।

তুই মেনকা না?

হ্যাঁ। আজ্ঞে …

তিনি কিছুটা থমকে গেলেন।

কতকাল পর দেখা। বয়স হয়েছে, তবু মেনকা যুবতী। তাঁর বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যাবার পর মাঝে মাঝে বাস স্ট্যান্ডে মেনকার সঙ্গে দেখা যে না হয়েছে তা নয়, মেনকা ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছে, কোনো পুরুষ—যুবকই হবে, সঙ্গে থাকতে পারে, এই পাঁচ-সাত বছর পরে দেখা হলে যা হয়, প্রিয়তোষ ইচ্ছে করেই না দেখার ভান করে হেঁটে যেতেন, ধরা পড়ে গেলে মেনকা লজ্জায় পড়ে যেতে পারে, এমন সাত-পাঁচ ভেবেই তিনি ভিড়ের মধ্যে বলতেন না এই মেনকা, তুই এখানে দাঁড়িয়ে, এখানে কী করছিস! মেনকা বলে ডাকলেই যেন মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে যাবে–

এভাবেই একদিন দেখেছিলেন, বাইকের পেছনে মেনকা, তার পুরুষ বন্ধুটি খুবই সাবলীল, মাথায় হেলমেট, প্রায় মেনকাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ভাবতেন, জীবন, জীবন রে। ছুটছে।

এভাবেই মাঝে মাঝে আরও দু-একবার দেখা গেছে তাকে, প্রিয়তোষ শেষের দিকে খুব সেজেগুঁজে তাকে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখেছেন। শ্যামলা রঙের মেয়ে, চোখে আশ্চর্য ধার, আর মুখখানি ভারি সুন্দর, প্রিয়তোষের কষ্ট হত দেখলে।

তার স্মৃতি তাঁকে পীড়া দিত। সুনন্দাকে এসে বলতেন, জানো মেনকাকে দেখলাম?

কোথায়?

কিছু বললে না?

না।

মেনকা তোমাকে কিছু বলল না?

না।

তুমি ডাকলে না কেন?

আমাকে না দেখার ভান করলে ডাকি কী করে!

ও তো ওরকমেরই। যা জ্বালিয়েছে!

কী জ্বালিয়েছে বল। ছেলেমানুষ, মা নেই, বাবা নেই, স্নেহময়ী তোমাকে দিয়ে গেল, মাসিমা আমার দশবাড়ি কাজ, এটুকুন মেয়েকে রাখবেই বা কে বলুন। আপনার কথা মনে পড়ল। এটুকুন মেয়ে হলে কী হবে খুব চালাক। মুখের কথা না খসতেই দেখবেন সব কাজ সারা।

আর প্রিয়তোষের তো সায় ছিল না। সত্যি তো সাত-আট বছরের মেয়েটা কতটা আর সংসারের কাজে আসতে পারে!

সুনন্দা বলেছিল, থাকুক না। কী সুন্দর মিষ্টি মুখখানি দেখ। দেখে তোমার মায়া হয় না!

সত্যি ভারি মিষ্টিমুখ। একখানা পুঁটুলি সম্বল করে এসে উঠেছিল।

আবছা মতো অন্ধকারে মেনকা তাঁর দিকে তাকিয়েই আছে। এই রাস্তায় কিছু পাকা বাড়ি, পাট্টা পাবার পর কেউ কেউ পাকা বাড়ি তুলেছে। বস্তি এলাকাটা খালপাড় ধরে একেবারে মহিষবাথানের কাছাকাছি চলে গেছে। অধিকাংশের জীবিকা রাজমিস্ত্রির, জোগানেরও কাজ করে কেউ। প্লাম্বার মিস্ত্রির থেকে ফুটপাথে হকারি সবই চলে। কেউ কেউ বড়ো রাস্তার নাগালে বাড়ি বলে ঝুপড়ির মধ্যেই মিঠাইমন্ডার দোকানও করেছে। চাউমিনের দোকানও আছে। এলাকার বিস্তার এত বড়ো যে কেউ কাউকে সঠিকভাবে চেনে বলেও মনে হয় না। বাড়ির কাজের মেয়েরাও এই এলাকার। স্বামী রাজমিস্ত্রি না হয় জোগানের কাজ করে। ফ্ল্যাটবাড়িরও অন্ত নেই। প্রায় সারাদিন রাস্তায়, মোড়ে, বাসস্ট্যাণ্ডে মেলার মতো ভিড়।

প্রিয়তোষ বললেন, তুই কোথায় থাকিস এখন?

মেনকা মাথা নীচু করে কী বলল, ঠিক শুনতে পেলেন না। আজকাল তিনি কানেও খাটো। মেনকা যে ভালো আছে, এটা তিনি অন্তত বুঝতে পারছেন। কপালে সিঁদুরের টিপ বড়ো করে। ওর পেছনেও কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে। মেনকার হাতে বালা, গলায় হার, চুলের প্রজাপতি ক্লিপ আবছা অন্ধকারেও স্পষ্ট। দামি সেন্টেরও গন্ধ পাচ্ছিলেন। যাক মেয়েটার একটা হিল্লে হয়েছে। পাঁচ-সাত বছর কেউ একই ছাদের তলায় থাকলে মায়া না পড়ে যায় না। মেনকা উধাও হয়ে গেলে প্রিয়তোষ আতান্তরেই পড়ে গেছিলেন। খোঁজাখুঁছি, থানা কিছুই বাদ দেননি।

স্নেহময়ীর এক কথা, না আসেনি। ওকে তো জানেন বাবু, দু-মাস টাকা দিলেন, ওর মাস মাইনে। আপনাকে সোজা বলে দিল, বাবু দেবেন না। আমার টাকা, আমার হাতে দেবেন। তিনি আবার মেনকাকে টাকা দিলে তার এক কথা। আমি টাকা দিয়ে কী করব! রেখে দিন, পরে নেব। আমি তো খাই পরি, দরকার পড়লে নেব। এমনও যে পাসবই করে দেবেন, একটা বাচ্চা মেয়ের পাসবই করাও যে কঠিন। মেয়েটি থাকে ভালো, খায় ভালো, এত বড়ো তিনতলা বাড়ি, ফুলের বাগান, রান্নাঘর সবই প্রায় বলতে গেলে তার হেফাজতে। প্রিয়তোষের সময় নেই, অফিস আড্ডা, সুনন্দার সময় নেই, সকালে স্কুল, টিউশান, বিকেলে রাতে বাড়িতে ঠিকা ঝি ঠিকা রান্নার লোক, তাঁর দুই পুত্র হোস্টেলে থাকে—একজন আই. আই. টি. আর একজন মেডিক্যাল কলেজে, সময়ে উদয় হয়, সময়ে আবার বিদায়ও নেয়। কন্যে বিয়ে হয়ে মার্কিন মুলুকে। সুনন্দাই স্নেহময়ীকে বলেছিলেন, দ্যাখ তো একটা মেয়ে যদি পাও, থাকবে, খাবে, ফুটফরমাস খাটবে, আমি তো একদণ্ড সময় পাই না।

আর মেনকা দু’-পাঁচদিন যেতে না যেতেই সুনন্দার ন্যাওটা হয়ে গেল। প্রিয়তোষের বসার ঘরে ও উঁকি দিতে থাকল, মিষ্টি মুখখানা দেখলে প্রিয়তোষের কী যে মনে হত, হতচ্ছাড়ি মেয়েটা এ বয়সেই সব খুইয়েছে, কাজেই আবদার করলে এটা ওটা তিনিও কিনে দেন। তাকে বইখাতাও কিনে দিয়েছেন—রোজ সকালে তাঁর কাছে এসে বসতেও বললেন, তার পরেই শুরু হল উৎপাত। ডাকলে আর সহজে সাড়া পাওয়া যায় না।

এই মেনকা, তুই কোথায়?

রান্নার মেয়েটা বলল, ডাকলে সাড়া পাবেন না বাবু। সে কি আর এখানে আছে! পাঁচিলে উঠে ঘোরাঘুরি করছে।

প্রিয়তোষ খুবই ক্ষুব্ধ হতেন।

আয়, পড়েটড়ে হাত-পা যে ভাঙবে! বইখাতার কথা বললেই কোথায় যে গা ঢাকা দেয়। ডাক! আর ডাক।

তাকে তখন খুঁজেই পাওয়া যেত না।

সুনন্দা বাড়ি নেই, সকালে তাঁর স্কুল। তাঁর নিজের কাজ কাগজের অফিসে। দুটোয় বের হতে হয়, সুনন্দা স্কুল করে বারোটার মধ্যে ফিরে আসে। সুনন্দা বাড়ি এলেই মেয়েটার উৎপাত তত থাকত না। কিন্তু বই-খাতার কথা বললে, সুনন্দার কাছেও পালিয়ে বেড়াত।

আর সবই ভালো, কেবল পড়ার কথা বললে নানা উৎপাত। এসে বসবে ঠিক, তারপর রাজ্যের গল্প, জানো বাবু আমার বাবা তো মাহিন্দারের কাজ করত। আমার মা দশবাড়ি খেটে খেত। আমাদের একটা টালির ঘর ছিল জানো! বৃষ্টি হলে, উঠোন জলে ভেসে যেত। মা আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতাম। মা আমি বারান্দায় বসে কাঁঠাল বিচি ভাজা খেতাম। বৃষ্টি ভিজে মাঠে বাপের ভাত দিয়ে আসতাম। বড়ই সুদিন ছিল গো বাবু। প্রিয়তোষ ধমক দিতেন, পড় অ আ। পড় ক খ। খাতায় রুল টেনে নে।

তখনই একদিন মেনকা বলে ফেলল, তুমি বাবু ভালো না।

বলে কি পুচকে মেয়েটা। এত সাহস! তার পরই মনে হয় ছেলেমানুষ, ছেলেমানুষ ভাবলেই রাগ কম হয়ে যায় প্রিয়তোষের।

আমি ভালো না?

না।

কেন! আমার মুখে কী দেখ বল তো? আমার লজ্জা হয়।

ওরে বাপ রে, তোর এত পাকা কথা। আমি তোকে দেখি—আমার কেন যে তখন নিজের ছেলেবেলার কথা মনে হয়। আমিও যে তোর মতো ছোটো ছিলাম। আমি তাকালে তোর লজ্জা হবে কেন?

হবে না! তুমি পুরুষ মানুষ না!

প্রিয়তোষ আচ্ছা বিপাকে পড়ে গেলেন।–ঠিক আছে তাকাব না। রুল টেনে অ আ ক খ লেখ।

বাবু!

আবার বাবু! রুল টান বলছি।

আমাকে বাবু আলতা কিনে দেবে?

সে দেব। একদম আর কথা না।

প্রিয়তোষ সকালবেলাটায় সব কাগজগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। সকালবেলায় এটাই তাঁর বড়ো কাজ। কোনো খবর মিস করলেন কি না, খবর মিস করলে কীভাবে খাওয়ানো যাবে খবরটা, এমন নানা চিন্তা তো থাকেই, আর পায়ের কাছে দু-পা ছড়িয়ে মেনকা, সে তার নখ দেখে, পা দেখে, সামনেই বড়ো আয়না, নিজের মুখ দেখে।

আমায় নেলপালিশ কিনে দেবে বাবু?

দেব। পড়ার সময় তোর নেলপালিশের কথা মনে হল!

কী করব মনে হলে, দত্তবাবুর মেয়ে জানো, রোজ নখে নেলপালিশ লাগায়, কী সুন্দর লাগে দেখতে।

আচ্ছা ফ্যাসাদ, তোর নেলপালিশ চাই, আলতা চাই, সেফটিপিন চাই, মাথার প্রজাপতি ক্লিপ চাই, মাসিকে বলতে পারিস না? পড়ার সময় তোর যত আবদার।

মাসিকে বলব কেন? মাসি দেবে কেন! তুমি এনে দেবে। তুমি না আনলে নেলপালিশে কোনো মজা থাকে না। আমার বাবা থাকলে ঠিক কিনে দিত জানো জানো, আমাদের বাড়িতে বাবা পরি নামাতে পারত! পরি দেখতে খুব সুন্দর হয়, তাদের পাখা থাকে। যেখানে সেখানে খুসিমতো উড়ে যেতে পারে। আমার খুব উড়তে ইচ্ছে করে।

মারব এক থাপ্পড়। পড়তে বসলেই তোর দেখছি ওড়ার কথা মনে হয়।

তুমি আমাকে মারবে?

হ্যাঁ মারব।

সেদিনই সুনন্দা স্কুল থেকে ফিরলে বলেছিল, তুমি নিয়ে বসাও। আমাকে দিয়ে হবে না। এ মেয়েকে পড়ানো আমার কম নয়।

একবার ভেবেছিলেন স্নেহময়ীকে ডেকে পাঠাবেন। না হয়ে না, পড়তে বসালে ওর উড়তে ইচ্ছে করে, নিয়ে যাও, কিন্তু ওই এক ল্যাঠা, মেয়েটার ওপর কেমন মায়া পড়ে গেছে। বাড়িটায় এখন তাঁরা দুজন, মেয়েটা আসায় তিনজন, পুত্ররাও বাড়িতে এলে যাই করে, বেঁচে থাকতে মাকে তোষামোদ করে কতবার নিয়ে এসেছেন। মাসখানেক থাকলেই হাঁপিয়ে উঠত। ভাইরাও যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত, অথচ তাঁর যে সবাইকে নিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। এসব কারণেই, আর স্নেহময়ীকে ডেকে পাঠাননি। আছে, থাকুক, বয়স হলে একটি পাত্র দেখে বিয়েও দিয়ে দিতে পারেন তাঁর সে ক্ষমতা আছে। পুত্ররা ক্যামপাসেই চাকরি পেয়ে যাবে। কেউ আর তাঁর ওপর নির্ভরশীল নয়—এবং এসব কারণেই মেনকা তাঁর দুর্বলতা টের পেয়ে একদিন বলেই ফেলল, আমি যাত্রা দেখতে যাব।

ইদানীং যে বায়নার বহর বেড়েছে, সুনন্দাও টের পাচ্ছিলেন। প্রিয়তোষকেও হুমকি দিয়েছে, তুমি আর তার মাথাটি খাবে না। লিপস্টিক কিনে দিলে। রুপোর চেলি বানিয়ে দিলে–

বলল যে।

বললেই দিতে হবে।

তুমি সুনন্দা নিজেই তো তাকে আলতা কিনে দিয়েছ? দোকানে নিয়ে গিয়ে ফ্রক, জুতো, যখন যা চায়। চাইলেই দিতে হবে। এখন বোঝ ঠ্যালা, বলছে যাত্রা দেখতে যাবে। কার সঙ্গে যাবে তাও জানি না।

সুনন্দা এমন কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলনা যাবে না। বাবু যায় না, আমি যাই না। তেনার এখন যাত্রা দেখায় বায়না।

তোমরা যাও না বলে, আমিও যাব না, সে আবার কেমন কথা।

প্রিয়তোষ কেন যে খেপে গেছিল, পা খোঁড়া করে রেখে দেব। গিয়ে দেখ না! টিকিটের পয়সা কে দিল! কোথায় কার পায়ের তলায় চেপ্টে থাকবি, কে খুঁজবে?

ভজা।

ভজা!

ভজাকে চেন না।

প্রিয়তোষ সুনন্দার দিকে তাকাল, সুনন্দা প্রিয়তোষের দিকে। মেনকা বড় হয়ে যাচ্ছে। তবু চোখ গরম করলে ভয় পায় এখনও। প্রিয়তোষ অফিসে বের হওয়ার আগে মেনকাকে ডেকে বলে গেলেন, তুই যাবি না। বারণ করে গেলাম। মনে থাকে যেন। ভজাটা কে শুনি!

তুমি কি সবাইকে চেন? ভজা জোগানের কাজ করে! খু

বই উত্তপ্ত হয়ে যান প্রিয়তোষ। সুনন্দাকে ডেকে বললেন, তোমার ঘরে নিয়ে শোবে। এ মেয়ে সব পারে।

দরজার কাছ থেকে আবার ফিরে এলেন, এই মেনকা! সাড়া নেই।

আবার ডাকলেন।

হঠাৎ দরজার আড়াল থেকে মুখ বার করে বলেছিল, ডাকছ কেন?

বইখাতা আন।

সে খুবই বাধ্য মেয়ের মতো ছুটে বইখাতা নিয়ে এসেছিল। কতকালের যেন যুগ্ম চেষ্টায়, কোনো রকমে বাংলা পড়তে পারে। লিখতে পারে। যোগ বিয়োগ করতে পারে। ইংরেজি এক বর্ণ শেখানো যায়নি। হাই ওঠে তার।

হাই তুলছিস!

কী করব হাই উঠলে বল!

নে, এই টাস্ক থাকল। দশটা যোগ, দশটা বিয়োগ অঙ্ক থাকল। বিকেলে ঘুম থেকে উঠেই পড়তে বসবি। তারপর মাসিকে দেখাবি?

আমি যাত্রা দেখতে যাব না?

না। যাবি না।

মেয়েটা আজকাল তার পছন্দমতো কাজ না হলে অবাধ্য হয় প্রিয়তোষ জানেন। আর পড়ার ব্যাপারে তো তার সাত খুন মাপ। তিনি বললেন, বাড়ির বার হবি তো হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখব। ভেবেছিস কি। অফিস যাওয়ার সময় সুনন্দাকেও সতর্ক করে দিয়ে গেলেন।

সুনন্দা ডাকছেন, এই মেনকা তোর হল?

মেনকা অন্য ঘরে পড়ছে। হাতের লেখা লিখছে, যোগ-বিয়োগ করছে! তেনারও হয়েছে, পড়তেই চায় না, তাকে রাজ্যের যোগ-বিয়োগ দিয়ে গেছে। দেরি তো হবেই।

সুরা ফের ডাকলেন, তোর হল?

হচ্ছে মাসিমা।

সুনন্দা বুঝতে পারছিলেন এত সময় লাগার কথা না। সাঁজ লেগে যাবে। ধূপধুনো দিতে হয়। সুনন্দা তাঁর ছাত্রীদের বললেন, তোমরা জেরক্স নিয়ে যাবে, নোট লিখে জেরক্স ফেরত দিয়ে যাবে। আমি আসছি।

ঘরে চুপি দিয়ে সুনন্দার মাথায় হাত।

কীসের অঙ্ক, কীসের পড়া! মেনকা বইয়ের ওপর বসে অঙ্কের খাতায় পা রেখে আলতা পরছে পায়ে। নখে নেলপালিশ লাগানো হয়ে গেছে। পাউডার স্নো একটা বইয়ের ওপর সাজানো। ঘরে ঘরে আয়না। সে আলো জ্বেলে আয়নার সামনে সাজছে। বাবু শখ করে রুপোর চেলি করে দিয়েছিল পায়ের, তাও পরেছে। পা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।

এই তোর পড়া! আসুক তোর বাবু! তুই কী করে যাত্রা দেখতে যাস দেখি। কোথাকার ভজা, সেই বেশি হয়ে গেল। বড়ো হচ্ছিস, নিজের ভালোমন্দ বুঝবি না?

কোথায় বড়ো হলাম! তোমাদের যে কী অলুক্ষুণে কথা বাপু!

মেয়েটার সঙ্গে কথায় পারা মুসকিল। ছাত্রীরা চলে গেলে নীচের দরজার তালা লাগিয়ে দিলেন। তিনি মেনকার সঙ্গে আর একটা কথা বললেন না। মেনকা তার নিজের ঘরে থম মেরে বসে আছে। তারপর চিৎকার, আমি যাব না, কোথাও যাব। আমার কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই। কেবল দাসী-বাঁদির মতো খেটে মরব। তোমরা পেয়েছ কি। আর তারপরই সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেলেন, কোথায় যাচ্ছে! সুনন্দা দ্রুত নীচে নেমে অবাক। নতুন ফ্রক গা থেকে খুলে পুরোনো ফ্রক গায়ে একটা মাদুরে শুয়ে আছে। ঠোঁটের লিপস্টিক ঘষে তুলতে গিয়ে সারা মুখ তার লাল-নীল চিত্র-বিচিত্র হয়ে আছে। মাদুরে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

প্রিয়তোষের ফিরতে বেশ রাত হয়। কাগজের অফিস। কোন খবর যাবে, কোন খবর যাবে না, মোটামুটি কাগজের লে-আউট সেরে বাড়ি ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায়। কলাপসিবল গেটের তালার ডুপ্লিকেট চাবি থাকে তাঁর কাছে। বাইরে থেকে তিনি নিজেই খুলে ভেতরে ঢোকেন। আর তখনই প্রিয়তোষের মাথা খারাপ। গেট খোলা। এত রাতে গেট খোলা! যাত্রা ভাঙতে রাত দুটো, মেয়েটা কি সত্যি যাত্রার নাম করে ভজার সঙ্গে পালাল। এতটুকুন মেয়ের শরীরে গরম ধরে গেছে।

সেই অন্ধকার আবছা মতো জায়গা থেকে মেনকা একটু এগিয়ে এল, বাবু আমায় বড়ো ছেলে। প্রণাম কর। কিশোর ছেলেটি তাকে প্রণাম করলে তিনি বললেন, তুই কোথায় থাকিস?

আমার দু-ছেলে বাবু। ছেলেরা মাসির কাছেই থাকে। আমি টাকা পাঠাই।

কেন তোর বর কিছু করে না!

কিছুই বলল না মেনকা, মাথা নীচু করে রাখল।

কোথায় থাকিস, কী কাজ করিস।

দরিয়াগঞ্জে আছি বাবু।

প্রিয়তোষ আর একটা কথা বলতে পারলেন না। হন হন করে হাঁটার চেষ্টা করলেন, তিনি মেনকার কাছ থেকে সত্যি যেন নিষ্কৃতি চাইছেন। দরিয়াগ তো খুবই খারাপ জায়গা। নরম একটা শরীরে গরম ধরে গেলে এই হয়—শেষে তুই পতিতালয়ে।

৩.

প্রিয়তোষের আরও বয়স বাড়ে। মেনকাকে দেখার পর তাঁর বয়স যেন এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেল। সেই মৃত্যুর দিকে ধাবমান সবাই। ঘর সংসার প্রিয়জন—এবং ধাবমান অশ্বের মতো জীবন পরিক্রমা। এমনিতেই বয়স যত বাড়ছে তত অনিদ্রার শিকার হচ্ছেন। ঘুমের বড়ি খেলে ঘুম হয় ঠিক তবে গভীর নিদ্রা হয় না। হালকা চালের নিদ্রায় তিনি অদ্ভুত বিদঘুটে স্বপ্নও দেখেন। মেনকার খোঁজ এভাবে শেষ পর্যন্ত পাবেন, এবং যৌনতা, মানুষজন, গোরু, ভেড়া সবাইকে তাড়া করছে–সারা রাত মায়ের মৃত্যুদৃশ্যও চোখে ভেসে গেল। কখনো মায়ের মুখ, কখনো মেনকার মুখ, কখনও সুনন্দার মুখ। সবাই যেন যৌনতার ঘোরে যে যার বংশাবলি তৈরি করে যাচ্ছে।

এভাবে তাঁর দিন যায়, বছর যায় এবং এভাবে বছরের পর বছর এক নিদ্রাহীন জগতে ঢুকে যান। রাতে বিছানায় যেতেই তাঁর আজকাল কেমন আতঙ্ক হয়। দেশবাড়ির সঙ্গেও সম্পর্ক আলগা হয়ে গেছে। শুধু শৈশবের কথা মনে হলে তাঁর অন্নকষ্টের দিনগুলির কথা মনে পড়ে। বর্ষায় কিংবা বৃষ্টির দিনে টালির ঘরের বারান্দায় বসে কাঁঠাল বিচি ভাজা খাওয়ার কথা মনে পড়ে। মা তাঁর আঁচলে কাঁঠাল বিচি ভাজা নিয়ে বসে আছেন। তাঁরা ভাইবোনেরা বৃষ্টিঝরা বিকেলে মার আাঁচল থেকে খুঁটে খুঁটে তুলে নিচ্ছে ভাজা বিচি। নিখোঁজ বাবা মাঝে মাঝে আসেন, আবার চলেও যান। কাকা, জ্যাঠারাও ভালো নেই। ছিন্নমূল হলে যা হয়। অদৃষ্টের ওপর ছেড়ে দিয়ে তাঁরা অন্ন সংস্থানের অথবা বলা যায় অর্থ সংস্থানের খোঁজে বের হয়ে পড়েছেন। মেনকা যখন দু-পা ছড়িয়ে কাঁঠাল বিচি ভাজা খাওয়া কী যে মজা, এমন বলত, তখন কেন জানি মেয়েটা তাঁর নাড়ি ধরে টান দিত।

সুনন্দাও অসুস্থ সেই কবে থেকে। অসুস্থ বলে পাঁচ-সাত বছর একসঙ্গে শোওয়াও হয় না। বাড়ির দোতলার বারান্দা কাচ দিয়ে মুড়ে নিয়েছেন। সেখানেই তিন বাই ছয় একটি খাট পাতা। পরদা ঝুলিয়ে আলাদা শোওয়ার ব্যবস্থা করে সেখানেই রাত যাপনের ক্লান্তি দূর করতে হয়।

বারান্দার ঠিক মুখের ঘরটায় সুনন্দা শোয়। দরজা খোলা থাকে। জিরো পাওয়ারের আলো জ্বেলে রাখা হয়। সুনন্দার মাঝে শ্বাসকষ্ট প্রবল হলে, পুত্ররা, পুত্রবধূরা আসে, বাড়িটা আবার ভরে যায়—এবং এভাবে নার্সিংহোমে অথবা বছরে দু-বছরে একবার হাসপাতালেও রেখে আসতে হয়।

এই করে দিন যত যায় তত প্রিয়তোষ একা হয়ে যান। তাঁর কিছু আর ভালো লাগে না। সুনন্দার হতাশ মুখ এত কাতর করে রাখে, তাঁর মনে হয় তিনি নিজেও কখনো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তখনই কেন জানি মায়ের মৃত্যুযন্ত্রণার ছবিটা পর্দার মতো ভেসে ওঠে। সুনন্দার বেশি বাড়াবাড়ি হলে আয়াও রাখা হয়।

বাড়িটা তাঁর বড়ো, বেশ বড়ো। তিনতলা বাড়িটা দুই পুত্র এবং সুনন্দার থাকার জন্য নিজে তদারকি করে নির্মাণ করেছিলেন। সেগুন কাঠের দরজা জানলা। দোতলার ঘরগুলিতে, এমনকী তিনতলার ঘরগুলিতে পাথরও বসিয়েছিলন। বাবার তখন বড়ো আক্ষেপ, প্রিয়তোষ বাড়িটা করলে, দেশের বাড়িতে করলে কি ক্ষতি হত! সুনন্দা নারাজ। এমন গজাগায় মানুষ থাকে! তুমি কী খেপেছ! আমার ছেলেমেয়েরা ওখানে থাকতেই পারবে না। আর দশরথের পুত্র সেজে বাহবা না নিলেও চলবে। অনেক তো করেছ।

বছর ছয় হয়ে গেল, বাড়ির বাইরে স্নোসেম, ভিতরে ডিসটেম্পার— তারপর ধীরে ধীরে তিনি কী করে যে বাড়িটার কথাও যেন ভুলে গেছেন। এই বাড়ির প্রতিটি ইটকাঠের সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্ক। সুনন্দা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সব কেমন তাঁর অর্থহীন হয়ে গেল। একতলার ঘরগুলি কোনোটা বসার, কোনওটা ডাইনিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হয়, দোতলার ঘরগুলি এখন ফাঁকা, তিনতলার ঘরগুলিও। পুত্ররা, পুত্রবধূরা থাকত, নাতি-নাতনিরা থাকত এখনও এলে থাকে, তারা কিছুই নিয়ে যায়নি। খাট, আলমারি, বুক সেলফ, টিভি সবই পড়ে আছে। বছরে ছুটিছাটায় আসতেই হয়, তখন সবই ঠিকঠাক না থাকলে তারা শোবে কোথায়, থাকবে কোথায়। ওরা যে আসে ওতেই খুশি প্রিয়তোষ। খোঁজখবর যথেষ্টই নেয়। প্রিয়তোষের কাজ ঠিকা মেয়েটা এলে পরিত্যক্ত ঘরগুলির দরজা খুলে দেওয়া, ঘর মোছার কাজ হয়ে গেলে ফের দরজা বন্ধ করে দেওয়া। পুত্ররা, পুত্রবধূরা এলে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয় তিনি সেজন্য প্রায় সব সময় তটস্থ হয়ে থাকেন। বড়ো কন্যা সহ দুই পুত্র, দুই বউমা। নাতি-নাতনি গোনাগুনতি। তখন কাজের লোকই বেশি। কাজের লোকরা সকাল থেকে ব্যস্ত। তাদেরও থাকা-খাওয়া তখন এ বাড়িতে।

পুত্রদের যার যার আলাদা ঘর-দোতলা তিনতলার সব ঘরই সুনন্দা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। এইসব করে যখন একটা ঘর এবং সামনের ব্যালকনি সম্বল করে সুনন্দার সঙ্গে প্রিয়তোষের দিন কাটছিল, তখনই অসুখটার ছোটোখাটো উপসর্গ দেখা দিতে থাকল। তিনি পাশ ফিরলে সুনন্দার ঘুম ভেঙে যায়, ঘরে হাঁটাহাঁটি করলে সুনন্দার ঘুম ভেঙে যায়। অসুস্থ মানুষের অনিদ্রা হলে আরও খিচখিচে স্বভাব হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আবার মশার উৎপাত থাকায় রাতে মশারি তুলে বের হলে, মশা ঢুকলে তখন আর এক অশান্তি। আলো জ্বানিয়েও মশাটাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর যা হয় কুপিত হয়ে পড়েন সুনন্দা। তাঁর আসকারাতেই পুত্ররা এত স্বাধীন, বউমারা খুশিমতো আসে থাকে, চলেও যায়, তিনি কিছু বলেন না, এমন ম্যাদামারা মানুষের এমনই পরিণতি হবে, বেশি কি! এসব কারণেই এই বারান্দায় শেষে তিনি তাঁর শেষ নির্বাসনে এসেছেন। অন্য ঘরে থাকাও যায় না। রাতে কখন শ্বাসকষ্ট শুরু হবে ঘুমের মধ্যে, শ্বাসকষ্ট আর কাশি, কাছাকাছি না থাকলে ওষুধ কিংবা পাফের ব্যাগ কে এগিয়ে দেয়।

সুনন্দার কাছ থেকে সরে এসেছেন ঠিক, তবে ঘুম হয় না।

এই বুঝি কাশি শুরু হল।

এই বুঝি টান উঠে গেল। যথাসময়ে সব হাতের কাছে দিলে একেবারে নিরাময়। ইচ্ছে করলেই প্রিয়তোষ আলাদা ঘরে শুতে পারেন না।

পুত্ররা সবাই কৃতী। বউমাদেরও ভালো উপার্জন। এসব সত্ত্বেও তাঁর কেন যে মনে হত বাড়ির বাইরে কেউ চলে গেলে বাড়িটা তার আরও খালি হয়ে যাবে। সুনন্দা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন, তিনিও। কাউকে আটকাতে পারেননি। মেনকাকেও না।

সুনন্দা আর তিনি সংসার তৈরি করেছেন ঠিক-বংশাবলিও, সবাইকে নিয়ে জড়িয়েও ছিলেন এবং সবার গতি হয়ে গেলে, তাঁর কেন যে মনে হয় রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। মায়ের মৃত্যুদৃশ্যও তাঁকে তাড়া করে, এত কিছু করা, ফুল ফোঁটানো, বাগান আগলে রাখা, গোরু বাছুর ঢুকে না যায়, সতর্ক পাহারা—শেষে যে কী হয়, বাগানের এক কোনার মালির ঘরটিতে তিনি যেন বসে আছেন। সবাইকে তাঁর অপরিচিত মনে হয়, কোনো বীজ বপনের সাক্ষ্য নেই, সবই যেন নিজস্ব গতিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

মাঝে মাঝে মায়ের মৃত্যুদৃশ্য তাড়া করলে, তিনি দম বন্ধ করে বোঝার চেষ্টা করেন, কতটা মৃত্যুকষ্ট। শ্বাস বন্ধ করে একবার আয়নার সামনে বসেছিলেন, চোখ যে ফেটে বের হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছেড়ে দিলে, কী আরাম, বেঁচে থাকার আনন্দ টের পান। আজকাল এই খেলাটাও তার জমে উঠেছে। এই আছি, এই নেই। সেকেন্ড মিনিটের তফাত। বেঁচে থাকতে হলে একটা কিছু তো চাই।

একদিন সুনন্দা হাউহাউ করে চিৎকার করছিল, তোমার কী হয়েছে! স্থির হয়ে বসে আছ, নিশ্বাস বন্ধ করে—এই কী করছ, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে। এভাবে শ্বাসবন্ধ করে কেউ বসে থাকে!

দেখছি।

কী দেখছ?

মানে দেখছি।

মানে। মানে তোমার বের করছি। সঙ্গে সঙ্গে পুত্র-কন্যাদের ফোন করতে গেলে তিনি হেসে ওঠেন। আরে যোগাভ্যাস করছি।

যোগ্যভ্যাস।

হ্যাঁ, যোগাভ্যাস বোঝ। মৃত্যুকে বোকা বানাতে চাই।

সুনন্দা কেঁদে ফেলে।–তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছ।

ধুস! প্রিয়তোষ তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে থেকে সরে যান। এই আয়নার সামনে মেনকা সেজেছে, সুনন্দা সেজেছে। পুত্র পুত্রবধূরা, নাতি নাতনিরাও। তারা উড়ে যাবার পর, আয়নাটার কাজও যেন ফুরিয়ে গেছে। আয়নার সামনে এখন তিনি নতুন সাজে দাঁড়িয়ে থাকতে চান। আয়নায় তো আর কেউ মুখ দেখে না। আয়নাটাই বা কী ভাবে?

রাস্তায় বের হলেও, তাঁর সমবয়সিদের সঙ্গে দেখা হয়।

কী খবর দাদা?

তুমি কেমন আছ প্রিয়তোষ বল।

ভালো, খুব ভালো।

 আমি তো তোমার মতো ভাল নেই।

শরীর গোলমাল করছে?

করলে তো বাঁচা যেত।

তবে! আপনার পুত্র-পুত্রবধূ তো সঙ্গেই থাকে। নাতি-নাতনিরাও। খুব জমিয়ে আছেন। বাজার করছেন, নাতিকে স্কুলে দিয়ে আসছেন, বংশাবলি ঠিক রাখার জন্য সব দায়ই পালন করছেন।

প্রিয়তোষের সামনে গলা নীচু করে বললেন, শান্তিরক্ষা করছি। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলে এ বয়সে যাবটা কোথায়।

কেন, আপনার বউমা তো দেখলেই বলবে, কাকা ভালো আছেন! কী মিষ্টি কথাবার্তা। আপনার কথাও খুব বলে।

প্রিয়তোষের সময়বয়সি মানুষটি হাসলেন। তারপর আরও গলা নামিয়ে বললেন, পাহারাদার। এত কষ্টের বাড়ি, পুত্র কৃতী, পুত্রবধু কৃতী, আমি ভাই গোলাম।

গোলাম ভাবলেই গোলাম। বংশাবলি ঠিকঠাক রেখে যেতে হলে এটা শেষ বয়সের বোনাস ভেবে নিন দাদা।

তিনি কেমন বিরস বদনে বললেন, তোমার বউদি গত হয়েছেন। এখন বাড়িতে সারাদিনই একা। কে কী খাবে সবই ঠিক রাখতে হয়। নাতিরাও অর্ডার করবে, আমার যে কি খারাপ লাগে প্রিয়তোষ! খাওয়ার টেবিলে কেউ থাকে না। থালা বাটিতে সব পড়ে থাকে খেলে খাও, না খেলে ফেলে দাও।

বউমা কী করে?

টিভি দেখে।

খাই, আর চোখের জল ফেলি। কোথায় এসে উঠলাম প্রিয়তোষ। তুমি তো ভালোই আছ দেখছি প্রিয়তোষ।

যোগাভ্যাসের ফল।

বউমা কেমন আছে?

ওর শরীরটা জুতের নেই দাদা। ওকে বলেছিলাম, যোগাভ্যাস করতে। আমাকে দাদা তেড়ে এল। বলে কি না তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছ।

প্রিয়তোষ বুঝতে পারেন এই বয়সটাই খারাপ। কিছু করার থাকে না। তবু সুনন্দা আছে বলে, তিনি সারারাত তন্দ্রার মতো বিছানায় পড়ে থাকতে পারেন। সুনন্দাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। হাতের এই কাজটা এখনও আছে বলে তিনি একেবারে একা হয়ে যাননি।

সুনন্দা অসুখে ভুগে ভুগে খিটখিটে স্বভাবের হয়ে গেছে। সুনন্দার জরাব্যাধির জন্য তিনিই যেন দায়ী। সারাজীবন আঠার মতো লেগে থাকা, আর এখন আঠা আলগা হয়ে যেতেই যত নষ্টের মূলে নাকি তিনি।

পুত্রকন্যাদের দোষ দিয়েই বা কী লাভ!

এই যে একা হয়ে যাওয়া, কারও সময়ই হয় না একবার উঁকি দিয়ে দেখার, তারাও যে অসহায়, সারাদিন কাজের মধ্যে লড়ালড়ি চলছে, তাদেরও যে চাই বংশাবলি, কেউ সঁতার শিখছে, কেউ গান, কেউ নাচ, স্কুলের পড়াশোনার চাপও তো কম না—একেবারে ল্যাজেগোবরে অবস্থা, তাদের উঁকি দিয়ে দেখার সময় নাই থাকতে পারে। এই উঁকি দিয়ে না দেখার ক্লেশ সুনন্দার থাকতেই পারে! পুত্রদের মানুষ করতে গিয়ে তারও কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি—তিনি বোঝেন। কাজের লোকেরা তো খটাখটি লাগিয়ে দিয়ে মজা দেখত। এখন তারাই বাড়িটায় প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। নিজের মানুষ দূরে সরে গেছে, দূরের মানুষ কাছে এসে গেছে। মেনকা চলে না গেলে, সেও তার মাসির জন্য প্রাণপাত করতে পারত—এসব ভাবলেই তিনি শুনতে পান।

এমন মেরুদণ্ডহীন লোক আমি আর কোথাও দেখিনি বাপু। কাউকে কিছু বলবে না।

তিনি খাটে চোখ বুজে পড়ে যাচ্ছেন।

সারাদিন, সুনন্দার অভিযোগ।

 সংসার অসার তোমার জন্য। এমনিতেই অনিদ্রায় ভোগেন, তারপর সুনন্দার অভিযোগ শুনলে, ঘুম আর। আসেই না।

এই যে মেনকা রাস্তায় মেরে হয়ে গেল। এবার দেখা হল, বলবে তো, তোর মাসিমা তোকে যেতে বলেছে। মেয়েটা আমাকে কি ভালোবাসত।

তিনি শুয়েই আছেন।

তোমার আয়া ফ্লাক্সে একটু গরম জল পর্যন্ত রেখে যায়নি। কতক্ষণে যাবে।

তিনি শোনেন, তারপর উঠে নীচ থেকে গ্যাস জ্বালিয়ে গরম জল করে আনেন।

ফের, চোখ লেগে আসে। তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হন।

আরে ঘুমোচ্ছে নাকি! রাতের ওষুধ কোথায়?

ফের আরে ঘুমোচ্ছে নাকি, মশা ঢুকে গেছে মশারিতে।

এই করে তাঁর তন্দ্রা লেগে আসে। আবার ভেঙেও যায়।

শেষে তিনি চোখ বুজে ব্যালকনির খাটে পড়ে থাকেন, আর ভাবেন—এত কষ্টের সংসার, সব ফাঁকা–শেষে সত্যি তিনিও যে কোথায় এসে উঠলেন। যোগাভ্যাস ফের শুরু করবেন নাকি। যোগাভ্যাসে শরীর এবং মনের উন্নতি হয়।

সুনন্দার মশারি খুলে, মশারি ফের টানিয়ে বারান্দা অন্ধকার করে যোগাভ্যাস শুরু করে দিলেন। সেই পালতোলা নৌকার মতো মায়ের মৃত্যুদৃশ্য ভেসে যাচ্ছে। অশেষ যন্ত্রণায় অস্থির। ঘোরের মধ্যে থাকা মানুষ হাওয়ায় যেন ভেসে যাচ্ছে। সাদা চাদরে মুখ ঢাকা–দূরে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে সেই দৃশ্য। এক দুই পাঁচ সাত এবং এভাবে যোগাভ্যাস শুরু করলে সেই কষ্ট এবং যা নিদারুণ এবং অশেষ। দমবন্ধ করে বসে থাকা, অর্থাৎ মৃত্যুর সময় শ্বাস খাটো হয়ে আসে, মগজের আলো নির্বাপিত হয়। হৃদযন্ত্রটিও বিকল হয়ে যায়, মৃত্যুর এইসব আবদার রক্ষা করা যে কত বড়ো কঠিন, যোগাভ্যাসে টের পান।

এভাবে এক রাতে সম্ভবত কৃষ্ণপক্ষই হবে, শেষ রাতে পুবের আকাশে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দেখতে পেলেন তিনি। ভাঙা চাঁদ, নীল আকাশ, কখনো মেঘের ওড়াউড়ি, আর অজস্র নক্ষত্রের ভিতর চাঁদ, ভাঙা চাঁদ টুকরো হয়ে গেছে, কিংবা ক্ষয় পেতে পেতে অমাবস্যার অন্ধকারে তাঁর জানলায় উঁকি দিয়ে গেল–

কি হে প্রিয়তোষ যোগাভ্যাসে বসেছ।

আজ্ঞে না, শুয়ে আছি।

মিছে কথা বলছ, পদ্মাসনে বসে আছ, আর বলছ কি না শুয়ে আছ? তোমার কি সত্যি মাথা খারাপ হয়ে গেল?

কী করব, ঘুম আসে না, গোপনে যোগাভ্যাস, কেউ দেখে ফেললেই হা হা করে ছুটে আসে। ভোররাতের দিকটা সুবিধা, কেউ জেগে থাকে না। জোরে কথা বলে না। সুনন্দার ঘুম ভেঙে যাবে। তিনি টের পেলে আমার মাথা চিবিয়ে খাবেন। তাকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সাহস হয় কী করে? তোমার আর গোয়েন্দাগিরি না করলেও চলবে চাঁদু।

দম বন্ধ অবস্থায় বেশি কথা বলা যায় না। কতক্ষণ আর নিশ্বাস আটকে রাখা যায়! মৃত্যুকষ্টকে সহজ করে নেবার এই প্রক্রিয়াটুকু পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলে তাঁর রাগ হয়। ভোস করে নাকে মুখে শ্বাস বের হয়ে এলে তিনি টের পান খুবই ঘেমে গেছেন।

তবু যেন কত দিনের সখা, সেই শৈশব থেকে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদেরই বা দোষ কি?

বলল, কেমন আছ প্রিয়তোষ?

ভালো না। তোমার মতোই পরিণতি।

সেই ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হলে যা হয়, ফের প্রিয়তোষ বললেন, আর তো মেরে কেটে পাঁচ-দশ বছর। পূর্বপ্রস্তুতি বলতে পার।

পাঁচ-দশ বছর ভাবছ কেন প্রিয়তোষ? আজ এই মুহূর্তে যদি হয়।

প্রিয়তোষ বললেন, না না সে হবে কেন?

চাঁদের মুখে অস্তমেদুর হাসি।

কেউ যেতে চায় না হে প্রিয়তোষ—যতই ঘুম হোক না হোক বিছানায় পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। তোমার বয়সে কেউ আর ভালো থাকে না। তোমার ভরা কোটাল শেষ। জীবনের শেষ কোটালের জন্য অপেক্ষা করছ—অথচ যেতে ইচ্ছে হয় না, আবার যোগাভ্যাসেও বসতে ইচ্ছে হয়। আরে এই এই করছ কি, আবার নিশ্বাস বন্ধ করে মেরুদণ্ড সোজা করে নিশ্বাস আটকে রেখেছ! তুমি কি সত্যি মরতে চাও। আরে, ইস প্রিয়তোষ প্রিয়তোষ।

আমাকে ডাকছ!

হ্যাঁ ডাকছি শুনতে পাও না।

তারপরই এই হালকা মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। সামনের বাড়িঘর হাইরাইজ দালানকোঠা কোনো এক স্বপ্নবৎ দৃশ্য তৈরি করে ফেলে। শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় শরীর সতেজ হয়ে যায়। আরাম। ভারি আরাম—বেঁচে থাকায় অনন্ত ইচ্ছেরাও প্রবল ঝাঁকুনি দেয়। গাছপালায় জোনাকি ওড়ে। কুকুরের ডাক শুনতে পান, দূরে রেলের ঝুমঝুম শব্দ ভেসে আসে। তিনি কেমন হাবাগোবার মতো বিছানায় চুপচাপ বসে থাকেন। আকাশ এবং এই ব্যাপ্ত চরাচরের মুগ্ধতা তখনও শেষ হয়ে যায়নি তবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *