শ্যামলকান্তি ও সুভদ্র

শ্যামলকান্তি ও সুভদ্র

কর্নেল যেখানে-সেখানে নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে পারেন–সে জঙ্গলে হোক, কী কুঁড়েঘরে। এমন কী বিপদ-আপদের আশঙ্কার মধ্যেও তাঁর তাক লাগানো ঘুম সম্পর্কে খ্যাতি আছে। অথচ হাথিয়াগড় হোটেলে এ রাতে তিনি ঘুমুতে পারছিলেন ন। বারবার মনে একটা দুঃখ চিমটি কাটছিল, জীবনে এই প্রথম তিনি একজন মানুষের মৃত্যুর একান্ত কারণ হয়ে উঠলেন!

শেষ রাতে যদি বা একটু তন্দ্রামতে এল, তাও কেটে গেল। যুবকটির কাছে একটা পিস্তল ছিল! তার মানে যে সে নিজে একজন খুনী, আপাতত প্রমাণ নেই তার। তাছাড়া খুনী কাউকে খুন করে তার রক্তমাখা জামাকাপড় সঙ্গে নিয়ে বেড়ায় না। অথচ সে সঙ্গে পিস্তল রাখত। হু, এ থেকে সিদ্ধান্ত করা চলে, অস্ত্রটা তার আত্মরক্ষার জন্য দরকার ছিল।

আর ওই প্রিন্টেড ম্যাটার লেখা খামে দশ হাজার টাকা পাঠানো! হুঁ, টাকা সে সঙ্গে রাখতে সাহস পায়নি। কিন্তু টাকাগুলো কি সে মোতিগঞ্জে পেয়েছিল? কার কাছে পেয়েছিল? কেন পেয়েছিল?

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন : পঁচাত্তর টাকা ভাড়ার ঘর বুক করল এই হোটেলে। অথচ পকেটে মাত্র ১৫ টাকা ৫০ পয়সা সম্বল! তাহলে এ হোটেল ভাড়ার টাকা কী করে মেটাত সে?

হুঁ, এই হাথিয়াগড়েও কি কারুর কাছে টাকা পেত? কার কাছে? হাথিয়াগড়ে পারিজাত ট্রান্সপোর্টের কোনো শাখা নেই। বিহার রাজ্যেই এই কোম্পানির কোনো শাখা নেই। অবশ্য দিল্লি যাওয়ার পথে এখানকার কোন ব্যবসায়ীর মাল পারিজাত কোম্পানির ট্রাকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তা যদি হত, তাহলে তার কাগজপত্রও থাকত। কাজেই হাথিয়াগড়ে কোম্পানির পাওনাকড়ির ভরসায় সে হোটেল ভাড়া করেনি। অন্য কারুর কাছেই টাকা পাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা, ছিল। নিশ্চিত নয়–সুনিশ্চিত বলা উচিত।

আর ঘুম এল না কর্নেলের। ভোরে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে, চিরদিনের অভ্যাস মতো, টুপি-ওভারকোট-মাফলার চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। গঙ্গার ধারে ঘুরতে গেলেন। ঘাটের মুখে ঘিঞ্জি বাজার। গরিবগুরবো লোকেরা আগুন জ্বেলে বসে আছে। একটা চায়ের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে তাগিদ দিয়ে এক ভড় চা আদায় করলেন চৌগুণ দামে। তারপর গঙ্গার ধারে পিচরাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকলেন। এখন তিনি প্রকৃতি-অভিমুখী।

শহরের বাইরে বৌদ্ধযুগের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে সূর্য উঠল। তখনও ঘন কুয়াশা। পাখি দেখার চেষ্টা করছিলেন বাইনোকুলারে। এত শীতে পাখিরাও বড় কাতর। খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বেলে বসে রইলেন বৃদ্ধ প্রকৃতিবিদ।

ফেরার পথে রিকশা পেয়ে গেলেন। বললেন, হাসপাতাল।

আটটা বাজে। মর্গের কাছে পুলিশ ইন্সপেক্টর মোহন শর্মা এবং ডিটেকটিভ অফিসার সুরেশ চতুর্বেদীর সঙ্গে দেখা হলো। শর্মা বলেন, সাতটায় এসেছি। আপনার পাত্তা নেই।

চতুর্বেদীকে বিরক্ত দেখাচ্ছিল। বললেন, মর্গে নতুন কিছু কি জানার আছে কর্নেল?

কর্নেল বললেন, কিছু বলা যায় না। বাই দা বাই, ডাঃ মুখার্জি কখন আসছেন?

শর্মা ঘড়ি দেখে বললেন, আটটার মধ্যেই আসতে বলেছি। সচরাচর নটায় আসেন উনি।

চতুর্বেদী বললেন, পোস্টমর্টেম হবে–সেটা তো নিয়মই। কিন্তু পোস্টমর্টেমে নতুন কী জানা যাবে, ভাবছেন কর্নেল?

কর্নেল জবাব দিলেন না। টানা বারান্দা ধরে এগিয়ে গেলেন। পুলিশ অফিসারদ্বয় পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হতাশা ও বিরক্তির ভাব মুখে ফুটিয়ে। তাকে অনুসরণ করলেন। কর্নেল যেখানে দাঁড়ালেন, সেখানে বড় বড় হরফে মর্গ লেখা আছে। একটা কটু গন্ধ ছড়াচ্ছে। শর্মা নাকে রুমাল চেপে বললেন, বরং নিচে ওই বটতলায় গিয়ে বসা যাক, আসুন।

তিনজনে প্রাঙ্গণের প্রকাণ্ড বটতলায় গেলেন। এদিকটা হাসপাতালের শেষ প্রান্ত। দেয়াল ও ঘন ঝোঁপঝাড় আছে। কয়েক মিনিট পরে একটা মোটরগাড়ি এসে মর্গের নিচে থামল। ডাঃ মুখার্জি বেরিয়ে এলেন। এঁদের দেখে হাসিমুখে নমস্কার করে বললেন, একটু দেরি হয়ে গেল।

কর্নেল বললেন, পোস্টমর্টেমটা শিগগির করে ফেলা দরকার ডাঃ মুখার্জি।

ওক্কে! আই অ্যাম রেডি। বলে ডাঃ মুখার্জি বারান্দায় উঠলেন। তাঁর গাড়িটা পিছিয়ে গিয়ে কিছুদূরে গ্যারেজের কাছে থামল। সেই ডোম দুজনকে দেখা গেল পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে। ডাঃ মুখার্জি সদলবলে মর্গের তালা খুলে ভেতরে ঢুকলেন।

এর মিনিট পাঁচেক পরে টানা বারান্দার শেষ প্রান্তে এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে দেখা গেল। তার পরনে স্যুট, মাথায় হনুমান টুপি, হাতে অ্যাটাচি কেস। তিনি এদিকে এলেন না। বাইরে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে পড়লেন। সিগারেট ধরালেন।

আরও একজন লোক এসে একটু তফাতে বসল। সাধারণ চেহারা ও পোশাকের মানুষ। তারপর এক বৃদ্ধা, সঙ্গে একটি যুবক এবং একটি বালক।

শর্মা হাসলেন।…ভিড় শুরু হলো। আজকাল যত খুনোখুনি বেড়েছে, তত. বেড়েছে নিরুদ্দিষ্ট লোকজন। কাজেই বুঝতে পারছেন কর্নেল, প্রতিদিন মর্গের কাছে এই ভিড়। কেউ খুঁজে পায়, কেউ পায় না। আসলে বেশির ভাগ বডি গলাপচা অবস্থায় পাওয়া যায়। সনাক্ত করার উপায় থাকে না।

ভিড় সত্যিই বাড়ছিল। দুজন কনস্টেবল, একজন এস আই সেখানে এসে গেলেন। চতুর্বেদী মন্তব্য করলেন, আজকাল পুলিশের কাজের ঝামেলা বড্ড বেশি বেড়ে গেছে।

শর্মা হাসতে হাসতে বললেন, দেশের যা অবস্থা হচ্ছে, এরপর পুলিশের আর কোনো ভূমিকা থাকবে না। মাঝে মাঝে চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

চতুর্বেদী বললেন, আসলে রাজনৈতিক চাপটা ভীষণ বেশি। দে ইন্টারভেন ইন ইচ অ্যান্ড এভরি কেস। দ্যাটস্ দা রিয়্যাল প্রব্লেম।

কর্নেল বললেন, এক পেয়ালা কফি পেলে ভাল হত!

শর্মা বললেন, কফি! হাসপাতালের ক্যান্টিনের যা অবস্থা, সেখানে কফি পাওয়া গেলেও এক চুমুকেই বমি আসবে। বরং বাইরে গেটের পাশে রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়।

কর্নেল বললেন, আপনারা প্লিজ এখানে অপেক্ষা করুন। যদি আমি না ফিরি, হোটেলে যোগাযোগ করবেন। আপনাদের থাকার দরকার আছে।

দুই অফিসার অবাক। শর্মা বললেন, কী ব্যাপার?

শরীরটা খারাপ বোধ হচ্ছে। কর্নেল আস্তে বললেন। আপনারা শুধু নজর রাখবেন, তপেশবাবুর বডি সনাক্ত করতে বা তার বডি দেখতে কে কে আসছে। তাদের নাম-ঠিকানা জেনে নেবেন। চলি!

দুই অফিসারকে আরও অবাক করে কর্নেল হনহন করে এগিয়ে গেলেন। মোহন শর্মা চাপা স্বরে বললেন, এক পাগলের পাল্লায় পড়া গেল দেখছি! সুরেশ, এই বুড়ো লোকটার সংসর্গ আমার আর সুবিধের ঠেকছে না। লেট আস প্রসিড ইন আওয়ার ওন ওয়ে।

ইয়া। চতুর্বেদী সায় দিলেন। লিভ হিম। হি ইজ আ ম্যাড ফেলা।…

কর্নেল বারান্দায় উঠেছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে ভিড়ের ভেতর দিয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছলেন। তারপর প্রাঙ্গণ পেরিয়ে গেটের দিকে চললেন।

একটু পরে হাসপাতালের গেটের বাইরে একটা রেস্তোরাঁ দেখতে পেলেন। সাইন বোর্ডে লেখা আছে আজাদ রেস্তোরাঁ। হাথিয়াগড়ে লোকের সাচ্ছল্য বেড়েছে। একটু দূরে খনি অঞ্চল। তাই এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় একেবারে মড পুলিশ। ছিমছাম, সুদৃশ্য, মহার্ঘ।

রেস্তোরাঁর ভেতরে তত ভিড় নেই। মড পোশাক ও চেহারার যুবকেরা, জনাকতক বয়স্কচেহারায় বিত্ত ও আভিজাত্যের ছাপ, চা বা কফি খেয়ে শীত দূর করছেন। কোনার দিকে একটি টেবিল খালি ছিল। কর্নেল সেখানে বসে কফি ও পকৌড়ার অর্ডার দিলেন। খিদে পেয়েছিল।

পরপর দু কাপ কফি খেতে আধঘণ্টা কাটল। তারপর ঢুকলেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। ফো। মাথায় হনুমান টুপি। পরনে দামী স্যুট। হাতে অ্যাটাচি কেস।

ভেতরে ঢুকেই তিনি এদিক-ওদিক তাকিয়ে খালি আসন খুঁজছিলেন যেন। ভিড় কিছুটা বেড়েছে। কর্নেলের চোখে চোখ পড়লে একটু ইতস্তত করলেন। তারপর সোজা এগিয়ে এলেন। এ টেবিলে তিনটে চেয়ার খালি। একটু হেসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, বসতে পারি?

কর্নেল বললেন, নিশ্চয়!

ধন্যবাদ। বলে ভদ্রলোক মুখোমুখি বসলেন। বেয়ারা এসে সেলাম দিয়ে দাঁড়াল। কর্নেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আরেক কাপ কফি হোক, কর্নেল?

কর্নেল চমকে উঠলেন না। স্থির দৃষ্টে তাকিয়ে বললেন, ধন্যবাদ। দু পেয়ালা হয়ে গেছে।

বেয়ারাকে কফি, স্যান্ডউইচ ও ডবল ওমলেটের অর্ডার দিয়ে ভদ্রলোক একটু হাসলেন।…আমার নাম শ্যামলকান্তি মজুমদার। ইলেকট্রনিক গুডসের ব্যবসা করি। কলকাতায় থাকি।

আমাকে আপনি চেনেন?

 চিনি। শ্যামলকান্তি বললেন, আপনি প্রখ্যাত মানুষ। আপনাকে চেনে না কে?

কর্নেল চুরুট ধরালেন এতক্ষণে। বললেন, অসংখ্য লোক চেনে না। যাই হোক, কাল সন্ধ্যায় মোতিগঞ্জ স্টেশনে চায়ের স্টলে আপনি বসে ছিলেন। মোতিগুঞ্জে কি ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন?

ঠিক ধরেছেন। হাথিয়াগড়েও একই উদ্দেশ্যে এসেছি। বিহারের শিল্পাঞ্চলে ভাল মার্কেট আছে। একটু যোগাযোগ করার দরকার ছিল।

করলেন?

করছি। বাই দা বাই, আপনি এই সুইসাইড কেসের নিষ্পত্তি না করে কলকাতা ফিরবেন না?

কর্নেল আস্তে বললেন, আপনি অনেক খবর রাখেন!

শ্যামলকান্তি জোরে হাসলেন।… আপনি গোয়েন্দা মানুষ। সবকিছুতেই সন্দেহজনক গন্ধ পান। না কর্নেল! আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব প্রাঞ্জল। কোন রহস্য-টহস্য নেই। আপনার চেহারার বর্ণনা আমি খবরের কাগজ এবং জয়ন্ত চৌধুরির লেখা বইতে পড়েছি, তবে কাল মোতিগঞ্জ স্টেশনে আপনাকে দেখে চিনতে পারিনি। চিনলুম কিছুক্ষণ আগে, যখন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে মর্গের ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন। মানে, দুইয়ে দুইয়ে যোগ দিয়ে চার করলুম আর কী!

কর্নেল একটু ঝুঁকে টেবিলের ওপর। বললেন, আপনি মর্গে গিয়েছিলেন কেন মিঃ মজুমদার?

শ্যামলকান্তি এবার একটু দুঃখিত মুখে বললেন, এতেও কোনো রহস্য নেই। আমার এক ভাই অমলকান্তি প্রায় সাত বছর নিরুদ্দেশ। রাত্রে এক বন্ধুর বাসায় ছিলুম। সে বলল, কে এক বাঙালি যুবক আত্মহত্যা করেছে প্রিয়দর্শী হোটেলে। আসলে এ আমার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে, কর্নেল! কলকাতার সমস্ত মর্গে প্রতিদিন একবার করে যাওয়া চাই-ই। বাইরে যেখানেই যাই, কোথাও কেউ খুন হলে বা আত্মহত্যা করলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন ধরুন, হোটেলে এক বাঙালি যুবকের আত্মহত্যা, আমি তার খোঁজ না নিয়ে থাকতে পারি না। অমল আমার বুকের একখানা পাঁজর ভেঙে দিয়েছে, কর্নেল!

শ্যামলকান্তি শ্বাস ছেড়ে রুমালে নাক মুছলেন। বেয়ারা খাবার দিয়ে গেল। চুপচাপ খেতে শুরু করলেন। কর্নেল চোখ বুজে চুরুট টানছিলেন। হঠাৎ কেউ আস্তে বলল, জেরা লেট কিয়া হাম!

কর্নেল দেখলেন এক শক্তসমর্থ গড়নের জ্যাকেট-জিনস পরা যুবক। বয়স তিরিশ-বত্তিরিশের মধ্যেই–তপেশের প্রায় সমবয়সী। কিন্তু মুখে উজ্জ্বলতা আছে। স্মার্টনেস ঝলমল করছে।

শ্যামলকান্তি পরিচয় করিয়ে দিলেন কর্নেলের সঙ্গে। যুবকটির নাম সুভদ্র সিং। এখানকার এক অভিজাত পরিবারের সন্তান। বাবা একসময়ে বড় জমিদার ছিলেন। মারা যাওয়ার পর সুভদ্র ব্যবসা করছে। পেট্রলপাম্প, গ্যারেজ এসব আছে। মোটামুটি বাংলা বলতে পারে। কর্নেলের দিকে তাকিয়ে বলল, সো ইউ আর আ ডিটেকটিভ অফিসার?

কর্নেল হাসলেন। মোটেও না! জাস্ট এ ন্যাচারালিস্ট। তবে ক্রিমিনলজি সম্পর্কে একটু কৌতূহল আছে মাত্র।

শ্যামলকান্তি বললেন, কফি অর টি সুভদ্র?

সুভদ্র বলল, নাথিং শ্যামলদা! এইমাত্র খেয়ে বেরিয়েছি। তো গিয়েছিলেন মর্গে? আমি তো গিয়ে আপনাকে খুঁজেই পেলাম না।

শ্যামলকান্তি গম্ভীর ও বিষণ্ণ মুখে বললেন, গিয়েছিলুম।

বডি দেখলেন?

হ্যাঁ। অমল নয়, অন্য কেউ।

কর্নেল বললেন, আচ্ছা, চলি শ্যামলবাবু!

 শ্যামলকান্তি বললেন, থাকছেন, নাকি ফিরে যাচ্ছেন কলকাতা?

 থাকছি না। ওবেলা ফিরছি।

ট্রেনে?

 কর্নেল হাসলেন।…বাসে বড্ড ভিড় হয়। এ বয়সে ট্রেনেই আরামদায়ক।

শ্যামলকান্তি একটু ভেবে বললেন, ওবেলা সুভদ্র জিপে কলকাতা যাচ্ছে। ওর সঙ্গে আমিও যাচ্ছি। চলুন না আমাদের সঙ্গে। আপনার মতো স্বনামধন্য মানুষকে সঙ্গী পেলে আমরা খুশি হব।

কর্নেল সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেন।…ভাল হয়। ট্রেন বড্ড দেরি করে এ লাইনে। আমার একটু তাড়াতাড়ি ফেরাও দরকার। আপনারা কখন রওনা দিচ্ছেন?

সুভদ্র বলল, জাস্ট তিনটেতে। বড় জোর ঘণ্টা সাত লাগবে জিপে। রাস্তা খুব ভাল।

ঠিক আছে। আমাকে তাহলে প্রিয়দর্শী থেকে তুলে নেবেন।

কর্নেল বিদায় নিয়ে বেরুলেন রেস্তোরাঁ থেকে। হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের দিকে চললেন। হুঁ, শ্যামলকান্তির কৈফিয়তে সন্দেহজনক কিছু দেখা যাচ্ছে না। যদি তপেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ বা পরিচয় থাকত, মোতিগঞ্জ স্টেশনেই সেটা বোঝা যেত। ওরা পরস্পর অপরিচিত বলেই মনে হয়েছিল। পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা হতে দেখেননি। এমন কী, চোখে-চোখেও কোনো যোগাযোগ হয়নি।

হোটেলে পৌঁছুনোর কিছুক্ষণ পরে মোহন শর্মা এলেন। বললেন, দুজন ঢুকেছিল বডি দেখতে। একজন–

মাথায় হনুমান টুপি, পরনে স্যুট, হাতে অ্যাটাচি কেস?

অবাক শর্মা বললেন, দ্যাটস রাইট। বাট—

দ্বিতীয় জন কে?

 লেট কুমার অমর সিং-এর ছেলে সুভদ্র সিং! তাকে চতুর্বেদী জিগ্যেস করেছে, মর্গে কেন? সে বলেছে, তার পরিচিত এক বাঙালি ভদ্রলোকের এখানে আসার কথা। তার এক ভাই নিরুদ্দিষ্ট।

সুভদ্র সিং সম্পর্কে পুলিশ রেকর্ডে কিছু উল্লেখযোগ্য আছে!

মোহন শর্মা হাসলেন।…অতীতে থাকলেও আমার জানার কথা নয়। তবে এটুকু বলতে পারি দুবছর এখানে এসেছি। তার বিরুদ্ধে কোনো রেকর্ড এই দুবছরে পাইনি। আমার পূর্ববর্তী অফিসারও কিছু উল্লেখ করে যাননি। তবে সুভদ্র কলকাতার কলেজে লেখাপড়া করেছে, এটুকু জানি। হি ইজ আ নাইস। চ্যাপ!

কর্নেল বললেন, মিঃ শর্মা, শুধু একটা অনুরোধ, তপেশের আইডেন্টিটি কার্ডটা কলকাতার ডিটেকটিভ ডিপার্টে অনুগ্রহ করে পাঠিয়ে দেবেন।

শর্মা হাসতে হাসতে বললেন, ঠিক আছে। তবে দ্যাটস মাই জব অলসো।…