এক খেয়ালি চিত্রকর

এক খেয়ালি চিত্রকর

লাল ল্যান্ডরোভার গাড়িটার গতি এবার দক্ষিণে। সন্ধ্যা সাড়ে ছটা বাজে। আবার। মাঝেমাঝে জ্যাম। গে ক্লাবের কাছে পৌঁছাতে একঘণ্টা লেগে গেল। গেটের সামনে দুদিকে পার্ক করা উজ্জ্বল গাড়ির ঝক। বোঝা যায়, ক্লাবটি বিত্তবানদের সান্ধ্য আড্ডার ডেরা। আরও কিছু ক্লাব লেকের আনাচে-কানাচেয় ইংরেজ আমল থেকেই আছে। তবে গে ক্লাবের বয়স বেশি নয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, এমন সব লোকের অবসর বিনোদনের ব্যবস্থা। কর্নেলকে গাড়ি পার্ক করতে একটু ঝামেলা পোহাতেই হলো। শীতের সন্ধ্যায়, ক্লাবের সব মেম্বারই আজ এসে জুটেছেন, তার প্রমাণ পার্ক করা ঝকঝকে গাড়ির সার ক্লাবের ভেতরকার অনেকটা ফাঁকা জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে।  

বিশাল টেন্টের গড়ন ক্লাবঘরের ভেতর ভিড়, চাপা কোলাহল, টেবিল ঘিরে স্ত্রী-পুরুষের আঁক। হাতে-হাতে রঙিন পানীয় ভরা গেলাস। নানাবয়সী : স্ত্রীলোকগুলিকে রঙকরা প্রতিমা দেখাচ্ছিল। ইতস্তত কিছু সায়েব-মেমসায়েবও চোখে পড়ল। সম্ভবত এ শহরে তারা নবাগত এবং এখনও এটাই রেওয়াজ যে ইউরোপীয়রা এলেই ঝাঁকে ঝাঁকে বন্ধু ও খিদমতগার জুটে যায়। কর্নেল শ্যামলকান্তিকে খুঁজছিলেন। ঠোঁটের কোনায় একটু হাসি। কলোনিয়াল হ্যাংওভার’ একেই বলে। এইসব ইউরোপীয় হয়তো স্বদেশে নিতান্ত সাধারণ জন, কিন্তু এদেশে তারা ভি আই পি!

বাইরে বাগানে মৃদু আলোয় ইতস্তত রঙিন ছাতার তলাতেও ঝক ঝক মানুষ। সবাই নিশ্চয় মেম্বার নন। অতিথি-অভ্যাগতের সংখ্যাই বেশি। নিজেদের হাই সোসাইটি’ কালচার, দেখাতে মেম্বাররা ডেকে এনেছেন। এটাই নিয়ম। নিজের সুখস্বাচ্ছন্দ্য অন্যকে না দেখালে জীবন ও রোজগার নিরর্থক ঠেকে।

কিন্তু কোথায় শ্যামলকান্তি? তন্নতন্ন খুঁজে তার পাত্তা পেলেন না কর্নেল। তাকে কেউ লক্ষ্য করছিল না। করার কথাও নয়। অগত্যা একজন পরিচারককে জিজ্ঞেস করলেন শ্যামলকান্তির কথা। সে কর্নেলকে দেখেই সসম্ভ্রমে সেলাম ঠুকেছিল। তাগড়াই, স্মার্ট, এই দাড়িওয়ালা ও টুপিপরা বৃদ্ধের চেহারায় ইউরোপীয় আদল এবং ভঙ্গি আছে। সে বলল, মজুমদারসাব সামকো আয়া। লেকিন থোড়াসা বাদ চলা গেয়া, স্যার! ঠারিয়ে, হাম পুছকে আতা!

একটু পরে সে কাউন্টারের দিক থেকে ফিরে এসে বলল, মজুমদারসাব বোলকে গেয়া, কৈ মেরে লিয়ে আয়ে নে উনিকো বোল দেনা চৌদ্দ নাম্বার গোখেল পার্কমে মুখুর্জি সাবকা কোঠি চলা যাইয়ে।

চোদ্দ নম্বর গোখেল পার্ক। মুখার্জিসায়েব। নিশ্চয় গে ক্লাবের মেম্বার। পরিচারকটির বলার ভঙ্গি দেখে সেটা বোঝা গেছে। রাস্তাটা এখান থেকে তত দূরে নয়। পৌঁছুতে মিনিট পাঁচেক লাগল। বাড়িটা নতুন। গেটে দারোয়ান আছে, ভেতরে লন, বাগিচা ও গাড়ি পার্ক করার জায়গা আছে। গেটের পাশে লেখা। আছে ‘প্রিয়তমা’। নামটা সুন্দর। কিন্তু চারতলা ছিমছাম আধুনিক স্থাপত্যের আদলে তৈরি বাড়িটা একজনের নয় বলে মনে হলো কর্নেলের। অনেকগুলি ফ্ল্যাট আছে।

ভেতরে গাড়ি পার্ক করে এগিয়ে গেলেন কর্নেল। এক ভদ্রমহিলা সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন। থমকে দাঁড়ালেন। কর্নেল বললেন, মিঃ মুখার্জি

ভদ্রমহিলা নিঃশব্দে পাশের দেয়ালে লেটারবক্সের দিকে আঙুল তুলে কর্নেলকে দেখতে দেখতে বেরিয়ে গেলেন। মনে হলো, মুখার্জি ভদ্রলোককে তিনি পছন্দ করেন না যেন। শুধু তাই নয়, এ বাড়ির সব আগন্তুক সম্পর্কে ওঁর ভুরুকোঁচকানো প্রশ্ন আছে। কর্নেল সিদ্ধান্ত করলেন, মুখার্জি’ এ বাড়িতে সম্ভবত অবাঞ্ছিত ব্যক্তি এবং প্রচুর অবাঞ্ছিত লোকজন তার কাছে আসেন!

লেটার বক্সে বিচিত্র ও ছন্দোবদ্ধ রেখায় লেখা আছে : বিমলকুমার মুখোপাধ্যায়। তিনতলা, ৪। তলায় একটা খুদে রঙিন ছবি। মুখের ছবি বলে মনে হয়। বিমূর্ত। ভদ্রলোক কি চিত্রকর?

চিত্রকর। বয়স পঁয়ত্রিশের বেশি নয়। বেঁটে, রোগাটে গড়ন। চোখে পুরু লেন্সের চশমা। মাথায় এলোমেলো একরাশ চুল। গোঁফ-দাড়ি আছে। পাজামা পাঞ্জাবি পরনে। একটা দিশি চিত্রিত কথার মতো চাদর গায়ে কোনোমতে জড়ানো। কর্নেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, বলুন! কী সেবা করতে পারি।

কর্নেল বললেন, আপনি পেইন্টার?

চিত্রকর।

কর্নেল হাসলেন। হ্যাঁ, চিত্রকর। তো শ্যামলকান্তি মজুমদার নামে এক ভদ্রলোক–

ও একটা হারামজাদা! বিমলবাবু ক্রুদ্ধস্বরে বললেন। কথা দিয়ে কথা রাখে না। ওকে বিশ্বাস করবেন না।

কর্নেল বুঝলেন, শ্যামলকান্তি এখানে নেই। বললেন, আমি নিজের একটা পোর্ট্রেট আঁকাতে চাই। তো শ্যামলবাবু–

ঠোঁটে আঙুল লম্বালম্বি রেখে বিমলবাবু বললেন, শ-শ-শ! ও একটা শুওরের বাচ্চা।

আপনি কি ভেতরে যেতে দেবেন না আমাকে?

 বিমলবাবু হাসলেন। ওরে বাবা! আপনি খদ্দের, মা লক্ষ্মী! আসুন আসুন! তবে শ্যামলের কথা নয়। ও এক বিপজ্জনক প্রাণী।

ঘরটি বড়ো। স্টুডিও। এখানে-ওখানে উঁই করা ক্যানভাস–ফ্রেমে বাঁধানো। দেয়াল, মেঝে সবখানে শুধু ছবি। অসংখ্য ছবি।–বিমূর্ত। একপাশে সোফাসেট। সেখানেও ছবির গাদা। বিমলবাবু ছবি সরিয়ে বললেন, বসুন। তারপর কথা হচ্ছে।

হুঁ, বিমলকুমার নেশাগ্রস্ত। এককোণে উঁচু টুলের ওপর মদের গেলাস। গিয়ে এক চুমুক টেনে কর্নেলের দিকে ঘুরে হঠাৎ খি খি করে হাসলেন।…আপনি আমার বাপের বয়সী। কিছু মনে করবেন না মশাই! ওই যে কিসব বলে লোকে-সামাজিক নীতিবোধ, মূল্যবোধ-টোধ–ওসব আমার সয় না। ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি–স্বাধীন হয়ে জন্মায়। কিন্তু স্বাধীন হয়ে বাঁচতে বা মরতে পারে না। তাকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে এবং মরতে দেওয়া উচিত নয় কি?

অবশ্যই। বলে কর্নেল টুপি খুলে ফেললেন। চুরুট ধরালেন। অ্যাশট্রে আছে। নিচু টেবিলটাতে।

বিমলকুমার খুশি হয়ে আরেক চুমুক গিলে কাছে এলেন।.. আপনাকে দাদা বলি বরং!

বলুন না!

বিমলকুমার পাশে বসে পড়লেন।..দাদা, আপনার চেহারা ক্রিসমাসের সান্তা ক্লজের মতো। শুধু একটাই গণ্ডগোল সান্তা ক্লজের টাক নেই। আপনার আছে। সো হোয়াট? টাক নেই তো নেই। যাদের টাক নেই, তারা কি কষ্টে আছে? আমারও টাক নেই। আমি কি কষ্টে আছি? কক্ষনো না। আ হ্যাপি লাইফ!

কর্নেলের দৃষ্টি ছবিগুলোর দিকে। একটা ছবি দেখে চমকে উঠলেন। ছবিটা প্রকাণ্ড ক্যানভাসে আঁকা এবং তেলরঙা। বিমূর্ত আকার। কিন্তু একজন মানুষই বটে। একটু লক্ষ্য করার পর শিউরে উঠলেন। পিঠের ওপর ওটা কি ছোরার বাঁট? হুঁ-বিমূর্ত আকৃতির মানুষটি ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে। পুতুলের মতো দুটো প্ৰকাণ্ড চোখের আদল–তাতে বিস্ময়ের ঝলক রঙের তীব্রতায় ছড়িয়ে পড়েছে।

বিমলকুমার অনর্গল অসম্বদ্ধ কথা বলছেন। কর্নেল ছবিটা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে যাচ্ছেন, কলিং বেল বাজল। অমনি বিমলকুমার মদের গেলাসটা সোফার তলায় রেখে ঠোঁটে আঙুল লম্বালম্বি তুলে কর্নেলকে আগের মতো বললেন, শ-শ-শ! তারপর গিয়ে দরজা খুললেন।

তার পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকলেন শ্যামলকান্তি মজুমদার আর সুভদ্র সিং!

ঢুকেই দুজনে কর্নেলকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর শ্যামলকান্তি সহাস্যে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, হ্যাল্লো কর্নেল!

কর্নেল কিছু বলার আগে বিমলকুমার জড়ানো গলায় বললেন, কর্নেল! ওরে বাবা! মিলিটারির নোক আমার ঘরে। বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা! কেন বাবা? এখানে আবার মিলিটারি কেন?

শ্যামলকান্তি তাঁকে ধমক দিলেন, শাট আপ! উনি কে জানিস ব্যাটা?

তারপর জানালার পাশে টেবিলে সারবন্দি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি ঠেলে সেখানে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসলেন। সুভদ্র একটু ইতস্তত করে সোফায় বসল। বিমলকুমার দাঁড়িয়ে আছেন। রাগী দৃষ্টি শ্যামলকান্তির দিকে বললেন, কটায় আসার কথা ছিল তোর? রাস্কেল!

শ্যামলকান্তি জিভ কেটে কর্নেলের দিকে তাকিয়ে নিয়ে বললেন, ছিঃ বিমল! কী হচ্ছে? উনি কে—

উনি আমার দাদা! সান্তা ক্লজদা! বিমলকুমার সোফার তলা থেকে সেই গেলাসটা বের করে চুমুক দিলেন। তারপর ফের বললেন, তোদের জন্য কষ্ট করে খাঁটি ভোদকা সংগ্রহ করলুম। আর তোরা আসতে আসতে রাত পুইয়ে দিলি! তবে হ্যাঁ–আমি এককথার লোক। ছিপি খুলিনি। এটা কী খাচ্ছি বল তো? মহুয়া! ঘাটশিলা থেকে পাঁচ বোতল এনে রেখেছি। আমি বাবা রুশপন্থী নই। তোদকাতে নেই। আমি বরাবর লিন পিয়াওপন্থী। তোরা তো জানিস

সুভদ্র রেগে গেল…বিমল! ইউ আর ড্রাংক! ডোন্ট টক।

 বিমলকুমার হাসতে হাসতে পাশের ঘরে ঢুকলেন পর্দা তুলে। শ্যামলকান্তিকে এবার গম্ভীর দেখাচ্ছিল। বললেন, কর্নেল সায়েবকে এখানে দেখে একটু অবাক হয়েছি।

কর্নেল বললেন, গে ক্লাবে আপনার খোঁজে গিয়েছিলুম। শুনলুম, আপনি এখানে আছেন।

আমার খোঁজে কেন জানতে পারি?

কিছু প্রশ্ন ছিল।

 বেশ তো! বলুন।

 কর্নেল লক্ষ্য করলেন শ্যামলকান্তির চেহারার সেই আমায়িকতা ক্রমশ মুছে যাচ্ছে। আর সুভদ্রেরও চেহারায় অনুরূপ একটা বৈপরীত্য ফুটে উঠছে। হিংস্র ও খাঁচায় ভরা চিতাবাঘের চাঞ্চল্য যেমন। সে কর্নেলের বাঁদিকে এক মিটার দূরে বসে আছে। কর্নেল জ্যাকেটের ভেতর পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা চুরুট বের করলেন। আগেরটা অ্যাসট্রেতে দুমড়ে নিভিয়ে গুঁজে দিলেন। পকেটে হাত ঢোকানোর সময় তার চোখ দুজনকে লক্ষ্য করছিল। ওরা পরস্পর তাকিয়ে যেন কিছু বলল নাকি দৃষ্টির ভুল কর্নেলের?

চুরুট জ্বেলে বললেন, শ্যামলবাবু! আপনি কি সুশোভন রায় নামে কাউকে চেনেন–আই মিন, চিনতেন?

হু ইজ হি?

 বিডন স্ট্রিট এলাকায় গোবিন্দ নস্কর লেনে থাকত।

শ্যামলকান্তি মাথা দুলিয়ে বললেন, না। ও নামে কাউকে চিনতুম না বা এখনও চিনি না।

কেয়া রায়কে?

শ্যামলকান্তি হেসে উঠলেন। অ্যাবসার্ড প্রশ্ন! আপনি গোয়েন্দাগিরি করেন। আমি জানি। কিন্তু এক্ষেত্রে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি ভুল রাস্তায় হাঁটছেন। আপনার বয়সই এজন্য দায়ী, কর্নেল! আপনার মধ্যে সেনিলিটি এসে গেছে। সর্বত্র দুইয়ে-দুইয়ে চার হয় না। তাছাড়া

বিমলকুমার বেরিয়ে এলেন পাশের ঘর থেকে। হাতে তোদকার সাদা বোতল, বগলে একটা জলের বোতল এবং অন্য হাতে কয়েকটা গ্লাস। নিচু টেবিলে রেখে বললেন, আয় শ্যামলদা! সান্তা ক্লজদার স্বাস্থ্যপান করা যাক।

শ্যামলকান্তি জের টেনে বললেন, তাছাড়া রিয়েলিটিও দ্রুত বদলাচ্ছে। আপনার বোধবুদ্ধি–প্লিজ এক্সকিউজ মি ফর দা কমেন্ট আপনার বোধবুদ্ধি আটকে আছে পুরনো রিয়েলিটিজে। রিয়েলিটি বদলাচ্ছে বলেই সিচুয়েশন বদলাচ্ছে। দশ বছর আগে যা সত্য ছিল, এখন তা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে।

বিমলকুমার খাপ্পা হয়ে বললেন, কী সারগর্ভ তত্ত্ব আওড়াচ্ছিস শ্যামলদা?—শ-শ-শ। আয়, ছিপি খুলে খা। হ্যাঁ–সান্তা ক্লজদা, আপনি কি যেন আঁকার বলছিলেন?

কর্নেল বললেন, পোর্ট্রেট।

বিমল! হি ইজ আ ডিটেকটিভ! শ্যামলকান্তি এগিয়ে এলেন।

বিমলকুমার ভুরু কুঁচকে বললেন, ডিটেকটিভ! সে তো বইয়ে থাকে, বাবা! বইয়ের পাতা থেকে পোকা বেরুতে দেখেছি। কিন্তু ডিটেকটিভ ইমপসি!

শ্যামলকান্তি মুখোমুখি সোফায় বসে বোতলটির ছিপি খুললেন। একটা গ্লাসে খানিকটা ঢেলে কর্নেলের দিকে এগিয়ে দিলেন। কর্নেল বললেন, থ্যাংকস!

শ্যামলকান্তি গেলাসটাতে জল মিশিয়ে সুভদ্রকে দিলেন। আর একটা গেলাসে ঢেলে নিয়ে জলের বোতল থেকে জল মেশালেন। সুভদ্রের গেলাসে নিজের গেলাস ঠেকিয়ে বললেন, চিয়ার্স!

এইসময় পাশের ঘরে ফোন বাজল। বিমলকুমার টলতে টলতে ফোন ধরতে ঘরে ঢুকলেন। শ্যামলকান্তি ভোদকায় চুমুক দিয়ে বললেন, বাস! ডেঞ্জারাস জিনিস! গলায় ড্যাগার ঢুকে গেল যেন।

কর্নেল বললেন, মোতিগঞ্জে কেন গিয়েছিলেন শ্যামলবাবু?

বিজনেসের জন্য।

তপেশের সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল কি?

 হু ইজ হি?

 হাথিয়াগড়ের প্রিয়দর্শী হোটেলে যে স্যুইসাইড করেছে।

 শ্যামলকান্তি হাসলেন…চেইজিং আফটার আ রেড হেরিং!

 সুভদ্র ক্ষুদ্ধ স্বরে বলল, ইউ ওল্ডম্যান! ডোন্ট স্পয়েল দা প্লেজার!

 কিসের প্লেজার, সুভদ্রবাবু?

সুভদ্রকে থামিয়ে শ্যামলকান্তি বললেন, এসব ব্যাপারে নাক নাই বা গলালেন, কর্নেল? এনাফ অফ ইট। আমার মনে হয়, আপনার আর এখানে না থাকাই উচিত। তবে অফ কোর্স, কিসের প্লেজার জেনে যান। অনেকদিন পরে বন্ধুরা একত্র হলে যা হয়, ঠিক তাই। সুভদ্রের অনারে–স্পেশ্যালি। ডু ইয়ু। আন্ডারস্ট্যান্ড?

বিমলকুমার পর্দা তুলে উঁকি দিয়ে বলল, সৌম্য তোর সঙ্গে কথা বলবে শ্যামলদা! ও আসতে পারছে না। বড় আটকেছে মনে হলো! শালা! মানুষ কেন যে বউ পোযে! পয়সা দিয়ে যা কেনা যায়, তার জন্য–সরি কান্তা ক্লজদা! শ-শ-শ!

শ্যামলকান্তি গেলাস রেখে উঠে গেলেন। সুভদ্র আস্তে কর্নেলের উদ্দেশে বলল, নাও–ইউ গো!

কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। বিমলকুমার জড়ানো গলায় বললেন, হ্যাঁগো করুন সান্তা ক্লজদা। দিনে আসুন। তখন আমি চিত্রকর থাকি। এখন আমি সত্যিই ড্রাংক। রাত যতই বাড়ব, আরও ড্রাংক হব।..