১৩২৩ সালে আমার জ্ঞাতি চাচা মহব্বত আলী মাতুব্বর সা’ব আহাম্মদ আলী দেওয়ান নামক ভাসান চর নিবাসী এক জন মুন্সি রেখে তার বাড়ীতে একটি মক্তব খোলেন। আমি ঐ মক্তবে ভর্তি হলাম। এখানে আমার পাঠ্য ছিল “মক্তব প্রাইমারি” নামক একখানা বই এবং গণিতে করণীয় ছিল মিশ্র চার নিয়মের অঙ্ক। কিন্তু আমার পাঠ্যপুস্তক খানার মাত্র “আট পৃষ্ঠা” পড়া এবং “মিশ্র যোগ” অঙ্ক কয়েকটি কষা হলে মক্তব বন্ধ করে দেওয়ান সাব দেশে গিয়ে আর ফিরে এলেন না। কিছুদিন পর খবর পাওয়া গেল যে, তিনি ইহধামে নেই। মক্তবটি উঠে গেল।
আমাদের পাড়ায় তখন ঘুড়ি উড়াবার প্রচলন ছিল খুব বেশী। মায়ের কাছে নগদ পয়সা চেয়ে পাবার আশা ছিল না। তাই ঘর হতে কিছু চাল চুরি করে বিক্রি দিয়ে, সেই পয়সা দ্বারা “চীন কাগজ” কিনে ঘুড়ি তৈরী করে তা পাড়ার ছেলেদের কাছে বিক্রি দিতে লাগলাম এবং এতে বেশ কিছু মুনাফা হতে লাগল। এর দ্বারা আমি কয়েকখানা “চিত্রাঙ্কন” শিক্ষার বই ও কাগজ কিনে নানাবিধ ছবি এঁকে একে দিন কাটাতে লাগলাম। আমার মা ছিলেন অত্যন্ত নামাজী মানুষ। তিনি আমার এ সব আনাড়ী কাজ আদৌ পছন্দ করতেন না, পাড়ার লোকেও না। সবাই মাকে বলত-ছবি দেখা, রাখা, আঁকা, এ সবই হারাম। এসব গোনাহর কাজে ছেলেকে আস্কারা দেবেন না, ছেলেটি আপনার “গোষ্ঠীছাড়া”। মা আপসোস করে বলতেন-“আল্লাহ্ ! তুমি সকলেরে দেলা পূত আর আমারে দেলা ভূত”।