রোগারোগ্যের পর – শুয়ে-বসে প্রায় দমাস কেটে গেলে কোন রকম চলা-ফেরার শক্তি হ’ল কিন্তু কৰ্মশক্তি হ’ল না। তখন ভাবতে ছিলাম – কি করব। সে সময় এদেশে স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলন এবং টাকু-মাকু পুরাদমে চলছে। অর্থাৎ তাত ও চরকা ঘরে ঘরে। স্থির করলাম যে, বসে বসে (অল্প শ্রমের কাজ) কাপড় বোনা শিক্ষা করব।
মোঙ্গল হাটা নিবাসী ওসমান খা নামক জনৈক তাতীর সহিত আমার পরিচয় ছিল। আশ্বিন মাসের শেষ ভাগে আমি তার বাড়ীতে গেলাম তাত ও কাপড় বোনা দেখবার জন্য। সেখানে বহু তাঁতীর বাস। আমি কয়েক বাড়ী ঘুরে ঘুরে খুব লক্ষ্য করে দেখলাম তাদের সূতা ভাতানো (মাড়দেওয়া), উঠানো, সুখানো, নাটাই ভরা, ননীভরা, তানানো, গোছানো, রাজভরা এবং ব-সুতা বাধা, মাকুচালানো (বোনা) ইত্যাদি সবই। অতঃপর কাগজে নক্সা আঁকলাম- তাত, চরকা, নাটাই, বাতাই, জাকী, নলী, রাজ, ব, মুঠা, পহ্নি ইত্যাদি যাবতীয় যন্ত্রপাতির এবং সঙ্গে সঙ্গে ওসবের প্#2509;রত্যেকটি অংশের মাপঝোক লিখে নিলাম। তবে কোন তাতে নিজ হাতে কাপড় বুনে দেখলাম না। কেননা ওঁদের বোনা দেখে মনে সাহস হল যে, উহা পারব। সব ঠিক মত বুঝে নিয়ে বাড়ীতে এলাম।
১৩৩৫ সালের ৭ই কার্তিক আমি নিজ হাতে তাত নির্মাণের কাজে লেগে গেলাম। সম্পূর্ণ তাত যন্ত্রটি ও তার আনুষঙ্গিক চরকা ইত্যাদি বাজে সরঞ্জাম (রাজ-মাকু বাদে) নির্মাণ করতে প্রায় তিন মাস কেটে গেল। ১৫ই মাঘ আমি কাপড় বোনা আরম্ভ করলাম।
জীবনে মাত্র একদিন কয়েক ঘন্টা কাপড় বোন দেখে তার স্মৃতির উপর নির্ভর করে বড় সাইজের কাপড়ের “টানা” নিতে সাহস পেলাম না, প্রথম “টানা” টি নিলাম- ৪ X ১ হাত সাইজের গামছা কাপড় ২৫ খানা (১০০হাত)। প্রথম খুব আস্তে আস্তে মাকু চালাতে শুরু করলাম। “টান”টি বুনে নামালাম বারো দিনে (দৈনিক ৮ ১/৩, হাত)।
দ্বিতীয় “টান”টি নিলাম ৬ X ২ হাত সাইজের পরনের গামছা কাপড় ২৫ খানা (১৫০ হাত)। এ “টান”টি বুনে নামালাম পনর দিনে (দৈনিক ১০ হাত)। এর পর লুঙ্গী ও তৎপর শাড়ী কাপড় বোনতে থাকি। বছর খানেকর মধ্যে আমার কাপড় বোনার ক্ষমতা হল দৈনিক ২৫ হাত (প্রায় দু বছর পর দুটি কারণে আমাকে কাপড় বোনা ত্যাগ করতে হয়। প্রথম কারণ হ’ল -স্বাস্থের উন্নতির সাথে সাথে আমি পল্লী উন্নয়ন ও স্কুলের শিক্ষকতা কাজে জড়িত হয়ে পড়ি এবং দ্বিতীয় কারণ হল-সূতার মূল্যবৃদ্ধি ও মিলের কাপড়ের তুলনায় তাঁতের কাপড়ের মূল্য হ্রাস।)