১৩৩৩ সাল। একদা মোল্লা সাব এক বান্ডিল কাগজ আমার হাতে দিয়ে বল্লেন- “এইগুলি সারিয়া রাখিও”। ওর ভেতর ছিল- বন্দকী জমি ছাড়ানো কয়েকখানা ছেড়া দলিল, লামচরি মৌজার সি,এস ম্যাপ, পর্চা, দাখিলা, রশিদ ইত্যাদি ভূসম্পত্তি বিষয়ক কাগজপত্র। ওগুলো পড়ে দেখলাম, সব বোঝলাম না। তবে ম্যাপখানা নিয়ে বিশেষভাবে চেষ্টা করতে লাগলাম উহা ভালভাবে বোঝবার জন্য। কেননা আমার ভৌগলিক মানচিত্রগুলো আকবার ও দেখবার উৎসাহটা গড়ায়ে পড়ল এটার ওপর। ম্যাপখানা ছিল- ২০২৯ নং মৌজা চর বাড়ীয়া লামচরির ২ নং সিট। স্কেল ১৬”= ১ মাইল। এটাতে আমাদের বাড়ী, বাগান, পুকুরাদি ও নাল জমি অঙ্কিত আছে এবং খাল-নদীও । আমার পিতার নামের পর্চায় লিখিত দাগ-নম্বর সমূহ ম্যাপে মিলিয়ে দেখলাম যে, আমাদের জমি কোন কোনটা।
ভূগোলের মানচিত্রগুলোতে দেখেছি যে, এক ইঞ্জির সমান- ৫০, ৬০ কিংবা ৪০০, ৫০০ মাইল; আর সি.এস ম্যাপ খানা ষোল ইঞ্জির সমান এক মাইল। অর্থাৎ এক ইঞ্চির সমান মাত্র ১১০ গজ বা ২২০ হাত। অনেক সময় ভূগোলের মানচিত্র গুলোতে অঙ্কিত বিভিন্ন স্থানের দূরত্ব মেপে দেখার ইচ্ছে হত, কিন্তু সে মাপ বাস্তব ক্ষেত্রের সাথে একরূপ হল কি-না, তা যাচাই করবার উপায় ছিল না। যেমন-বরিশাল হতে কলকাতা অথবা ঢাকা হতে করাচীর দূরত্ব মানচিত্রে মাপা গেলেও ভূপৃষ্ঠ মেপে ওর সত্যতা প্রমান করা সম্ভব নয়। কোন গ্রাম বা ৬ মৌজার সি, এস মানচিত্রে ওরূপ অসুবিধা নেই। কেননা এর পরিধি তত বড় নয়। সি, এস ৩ মানচিত্রের দুটি স্থানের দূরত্ব মেপে, তা সরেজমিনে যাচাই করে দেখতে আমার কৌতুহল হল।
সি,এস ম্যাপ খানার এক জায়গায় একটা স্কেল অঙ্কিত দেখতে পেলাম। ওতে একটা ইঞ্চি ছিল পাঁচ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ প্রত্যেক ভাগের মান ছিল ২২ গজ বা ৪৪ হাত, অতি সাদা সিধে ধরনের স্থল স্কেল। দেখলাম যে, এতে মাপ চলে না। এক ইঞ্চিকে চল্লিশ ভাগে বিভক্ত করে আমি পীজ বোড কাগজ দ্বারা একখানা স্কেল বানালাম। এর প্রত্যেক ভাগের মান হ’ল ৫.৫ হাত। আর বানালাম -১৮” হাতের ৫.৫ হাত দৈর্ঘ্য একট নল। ডিভাইডার বা কাঁটা বানালাম টিন দিয়ে। প্রায় ৫” ইঞ্চি লম্বা দুখানা টিন- এক দিক স্থল ও একদিক সুক্ষ্ম করে কেটে, উভয়ের স্কুলাংশ একত্র করে একটা খিল মেরে এঁটে দিলাম। এতে কাজ চলার মত একটা ডিভাইডার তৈরী হ’ল। এভাবে জরিপী সরঞ্জাম সংগ্রহ করে একদিন ম্যাপ নিয়ে মাঠে নামলাম ।
মনে পড়ে তখন মাঘ মাস। আমার বাড়ীর পূর্ব পাশের জমিটা মাপতে শুরু করলাম। জমিটা আমার, সি, এস ম্যাপের ১৩৩১ নং দাগ। জমির একটা আলের উভয় প্রান্তে কাটা ধরে, উহা স্কেলে ফেলে দেখতে লাগলাম যে, ওতে স্কেলের কাটা পূরো ইঞ্চি বা কটা ক্ষুদ্রাংশ পড়ল। অতঃপর -প্রতি এক ইঞ্চির সমান ২২০ হাত এবং প্রতি এক ক্ষুদ্রাংশের সমান ৫.৫ হাত ধরে হিসেব কষে বের করতে লাগলাম যে, আলটি লম্বায় কত নল বা হাত হ’ল। তৎপর সরেজমীন পরিমাপ। এ ভাবে জমিটার সব ক’টি আ’লই জরিপ করা হল। কিন্তু ম্যাপের হিসাবও সরে জমিনের পরিমাপ একরূপ হ’ল না, কিছু বেশী বা কম দেখা গেল। আমি মনে করলাম যে, ওসব হয়ত আমার হিসাবের ভুল, নচেৎ কাঁটা ধরার দোষ। যা হোক, মাঠের কাজের ফাকে ফাঁকে জমি জরিপ করতে লাগলাম। কিন্তু কোন লোকজন সাথে নিয়ে নয়, একা একা।
তখন দক্ষিণ লামচরি তোরাপ আলী আকনজী ছিলেন একজন সুদক্ষ আমিন। আমি আমার জরিপ কাজের ইচ্ছা ও কায়দা সমূহ তাকে জানালে, তিনি বল্লেন যে, ওভাবে হিসেব কষে কষে জরিপ কাজ করা সম্ভব নয়, ওর জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে। সেটেলমেন্টের ম্যাপ-দ্বারা “হাত” এ জরিপ করতে হলে তার জন্য বিঘা-কাঠার স্কেল ও শিকল ব্যবহার করতে হয়। তিনি আরো বল্লেন যে, তার একটা বিঘা-কাঠার স্কেল আছে, তিনি এখন আর ওটা ব্যবহার করেন না। কাজেই ওটা আমাকে দিতে পারেন এবং তার শিকলটাও দিতে পারেন কিছু দিনের জন্য । আমি তার স্কেল ও শিকল নিয়ে এলাম। পরে বরিশাল হতে লোহার মোটা তার কিনে এনে আকনজী সাবের শিকল দেখে ও মেপে তার কেটে কেটে কড়ি ও আংটি বানিয়ে ২৪ বিঘা অর্থাৎ ২০ হাত দৈর্ঘ্য এক গাছা শিকল তৈরী করে আকনজী সাবের শিকল ফেরত দিলাম।
স্কেল ও শিকল ব্যবহারের ফলে জরিপ কাজে আমার কিছুটা আত্মবিশ্বাস জনিল। অনেক জমি জরিপ করে দেখতে পেলাম যে, কোন জমির-ম্যাপের মাপে ও দখলের মাপে যে ব্যতিক্রম দেখা যায়, তা অনেক ক্ষেত্রেই দখলের ভুলের জন্য। সে ভুল শোধরানোটাই হ’ল আমিনের কাজ।
“আমিন” হিসেবে আমার দ্বারা প্রথম জমি জরিপ করালেন আমার প্রতিবেশী ও জ্ঞাতি চাচা মহব্বত আলী মাতুব্বর সাব। জমিটা তার বাড়ীর পূর্ব পাশে- সি, এস ম্যাপের ১৩৩৪১৩৪০ নং দাগ। আমাকে বারবরদারী দিলেন এক টাকা।
এতদঞ্চলে জমি জরিপ কাজের দুটি প্রথা আছে-দেশী ও বিদেশী। দেশী প্রথায় জমি জরিপ করা হয়-হাত বা নলে ও পরিমাপকে বলা হয়-বিঘা, কাঠা বা কানি, কড়া ইত্যাদি এবং বিদেশী (ব্রিটিশীয়) প্রথায় জরিপ করা হয়-লিঙ্ক বা চেইনে আর পরিমানকে বলা হয়-একর বা শতাংশ বিদেশী প্রথায় জরিপ কাজে গান্টারের চেইন ও স্কেল ব্যবহার করতে হয়, প্রথম আমার তা ছিল না। এমন কি জানাও ছিল না | আমি অতি সহজ ভাবে দেশী প্রথায় জরিপ কাজ শুরু করি। কিন্তু এ প্রথায় নানাবিধ অসুবিধা ভোগ করতে হয়। তাই বিদেশী অর্থাৎ আধুনিকী জরিপ পদ্ধতি শিক্ষায় উদ্যোগী হই।
১৩৫৩ সালের পৌষ মাসে লাহারাজ স্টেটের সার্ভে সুপারভাইজার বাবু বিজয় গোপাল বসু মহাশয় আমাদের গ্রামের পূর্ব পার্শ্বস্থ প্রতাপপুর মৌজা জরিপ করতে আসেন এবং বহুদিন যাবত এখানে জরিপ কাজ করেন। সে সময় আমি তার সহকারী রূপে কাজ করি এবং জরিপ বিষয়ক নানাবিধ যন্ত্রপাতি যথা-নর্থ-কম্পাস, প্রিজমেটিক কম্পাস, সাইড ভ্যান, রাইট এ্যাঙ্গেল ইত্যাদির ব্যবহার পদ্ধতি শিক্ষা করে লই।
বরিশালের “ফরিয়া পট্টি” নিবাসী বাবু ললিত মোহন সাহা ১৩৫৪ সালে আমাকে একটি গাটারের চেইন উপহার দেন এবং স্থানীয় কাছেম আলী (পিং করিমদিন) প্রদান করেনপ্রতাপপুর মৌজায় পড়ে পাওয়া একটি (পিতলের) গান্টারের স্কেল। এ সময় হতেই আমি বিদেশীয় প্রথায় জরিপ কাজ শুরু করি। কিন্তু জরিপ কাজের অন্যান্য যন্ত্রপাতির অভাবে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারছিলাম না।
১৩৫৫ সালে স্থানীয় আমিন তোরাপ আলী আকনজী তার কর্মজীবনের শেষ মুহুর্তে তার ব্যবহার্য প্লেন টেবিল ও সাইড ভ্যানটি আমাকে দান করে যান। ১৩৫৬ সালে দক্ষিণ লামচরি নিবাসী নজর আলী (পিং বাছেরদিন) দক্ষিণের চরে পড়ে পাওয়া একটি (নিকেলের) ড্রাইভার প্রদান করেন। জমিদার উচ্ছেদ হলে ১৩৬৪ সালে লাখুটিয়ার জমিদার মিঃ পরেশ লাল রায়ের (ঘুঘুবাবুর) তৎকালীন ম্যানেজার বাবু অনন্ত কুমার বসু মহাশয় তাদের অনাবশ্যক বিধায়| আমাকে প্রদান করেন- একটি নর্থ কম্পাস, একটি প্রিজম্যাটিক কম্পাস, চারটি রাইট এ্যাঙ্গেল ও একটি অপটিক্যাল স্কোয়ার। এর পর হতে কোন যন্ত্রপাতির অভাব না থাকায় আমি সুষ্ঠুভাবে জরিপ কাজ করতে সক্ষম হচ্ছি।
জরিপের বেশীর ভাগ কাজই হ’ল জমির সীমানা নির্ধারণ ও বাটারা করা। কিন্তু আমাকে মানচিত্র অঙ্কনের কাজ করতে হচ্ছে যথেষ্ট। এর মধ্যে আমার প্রধান দুটি কাজ হ’ল- ১৩৬৯ সালে চর বাড়ীয়া ইউনিয়নের ম্যাপ অঙ্কন ও ১৩৭৪ সালে চর মোনাই ইউনিয়নের ম্যাপ অঙ্কন করা। এর পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হয়েছি যথাক্রমে- ২০০.০০ ও ১৮৭.০০ টাকা।
জরিপ কাজে শুরু হতে আমার বারবরদার (ভিজিট) ছিল নিম্নরূপঃ
১৩৩৩ সাল হতে ১৩৪৫ সাল পর্যন্ত (খোরাকী বাদ) দৈনিক ১.০০ টাকা
১৩৪৬ সাল হতে ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত (খোরাকী বাদ) দৈনিক ২.০০ টাকা
১৩৫৪ সাল হতে ১৩৫৫ সাল পর্যন্ত (খোরাকী বাদ) দৈনিক ৫.০০ টাকা।
১৩৫৬ সাল হতে ১৩৫৭ সাল পর্যন্ত (খোরাকী বাদ) দৈনিক ৬.০০ টাকা
১৩৫৮ সাল হতে ১৩৭৭ সাল পর্যন্ত (খোরাকী বাদ) দৈনিক ৮.০০ টাকা
১৩৭৮ সাল হতে (খোরাকী বাদ) দৈনিক ১০.০০ টাকা
১৩৭৯ সাল হতে (খোরাকী বাদ) দৈনিক ১৬.০০ টাকা
১৩৮০ সাল হতে (খোরাকী বাদ) দৈনিক ২০.০০ টাকা
১৩৮১ সাল হ’তে (খোরাকী বাদ) দৈনিক ৩০.০০ টাকা
(জরিপ শিক্ষা বিষয়ক কোন বই পুস্তক পাঠের সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি।)
আমার কর্ম-জীবনের চরম দুর্দিন হ’ল ১৩৩৪ ও ১৩৩৫ সাল। ১৩৩৪ সালের ২০শে অগ্রহায়ণ আমি জ্বর ও মেহ রোগে আক্রান্ত হই এবং আমার একমাত্র ভগ্নি কুলসুম বিবি (জং আঃ হামিদ মোল্লা) সূতীকা জুরে আক্রান্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। আমি আমার রুগ্ন শরীর নিয়ে সপ্তাহখানেক আহার নিদ্ৰা ছেড়ে ভগ্নির শীয়রে বসে থেকে ৫ই পৌষ দেখলাম তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ। আমি শোক সংবরণে অক্ষম হলাম, শুরু হল আমার হৎকম্প (প্যালুপিটেশন)। যদিও আমার হৎকম্প দুদিন পর কমে গেল, কিন্তু ২৭শে পৌষ ভগ্নির শ্রাদ্ধের দিন ভোজের সময় আবার হৎকম্প শুরু হল, আর কমল না। আমার চিকিৎসা চলুতে লাগল।
ফাগুন মাসে- মোল্লা সাবের হাতের সামান্য আঘাতে আমার হালের বড় গরুটা মারা গেল এবং চৈত্র মাসে গাছের সঙ্গে রশি জড়িয়ে পা ভেঙ্গে মারা গেল আমার একমাত্র গাভীটি। তহবিলে টাকা-পয়সা যা ছিল, তা এর আগেই নিঃশেষ হয়েছিল, হালের অপর গরুটি বিক্রি দিয়ে চালাতে লাগলাম আমার চিকিৎসা। কিছুদিন চিকিৎসা চল্লো গ্রামে, পরে জমি বন্ধক দিয়ে শহরে। চিকিৎসা চল্লো প্রায় ছয় মাস। আমার অবস্থা তখন এতই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, আমি যে কোন মুহুর্তে মারা যেতে পারি।
চিকিৎসা শাস্ত্রের বিধান মতে- একজন মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপ থাকে ৯৮ ৩/৫ ডিগ্ৰী এবং নাড়ীর স্পন্ন থাকে প্রতি মিনিটে ৭৫ বার। এক ডিগ্রী তাপ বৃদ্ধিতে নাড়ীর স্পন্দন দশবার বাড়ে। এ হিসাবে কোন রোগীর নাড়ীর স্পন্দন এক মিনিটে ১৪৫ বার হলে, তার দেহের তাপ হওয়া উচিত ১০৬ ডিগ্রী। কিন্তু আমার দেহের তাপ ছিল ৯৮ ৩/৫ ডিগ্রী বা তার চেয়েও কম। অথচ নাড়ী স্পন্দন অর্থাৎ হৃৎস্পন্দন ছিল মিনিটে ১৪৫ বার। আহার ছিল প্রায় বন্ধ, বাহ্য হত মাত্র সপ্তাহে একবার। মারাত্মক উপসর্গ ছিল “অনিদ্ৰা”। ডাঃ আনন্দ মোহন রায় ৩০ গ্রেন মাত্রায় ব্রোমাইড দিয়েও আমার নিদ্ৰা জনাতে পারেন নাই। তবে ডাঃ ক্যাপ্টেন হরবিলাস চ্যাটাজী “প্যারাল ডিহাইড” দিয়ে কয়েক দিন ঘুম পাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে উপকারের চেয়ে অপকার হয়েছে বেশী।
ডাঃ আনন্দ মোহন রায় ও ডাঃ হরবিলাস চ্যাটাজী তিন মাস চিকিৎসা করেও কোন সুফল না পেয়ে একদা আমাকে বল্লেন যে, এ্যালোপ্যার্থী শাস্ত্রে এ রোগের আর ওষুধ নেই। অর্থাৎ এ রোগ সারবার নয়। কবিরাজী খেতে শুরু করলাম। বরিশালের তৎকালীন প্রখ্যাত কবিরাজ – প্রসন্ন কুমার সেন গুপ্ত, গোপাল চন্দ্র সেন গুপ্ত ও মতিলাল সেন গুপ্ত আরো তিন মাস কাল চিকিৎসা করেও নিস্ফল হয়ে একদা আমাকে বল্লেন- “এখন বাড়ীতে গিয়ে ভগবানকে ডাকতে থাকুন, আয়ুর্বেদে এ রোগের আর ঔষধ নেই”।
মোল্লা সাব আমার ভগ্নির মৃত্যু দেখতে পান নাই। তখন তিনি ছিলেন বেতাগী থানায়। তবে তার শ্রাদ্ধের সময় ছুটি নিয়ে বাড়ীতে এসে আমাকে মরণাপন্ন ফেলে আর চাকুরীতে যাননি। তিনি আমার আরো এক কেৰ্ত্তী জমি বন্ধক রেখে ১৫০.০০ টাকা সংগ্রহ করে আমাকে নিয়ে ঢাকা যাত্রা করলেন (২৭শে আষাঢ় ১৩৩৫ সাল)। ঢাকা গিয়ে মিডফোর্ড হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করলেন। ওখানে ডাঃ চারু বাবু ও ডাঃ সাহাবুদিন সাব আমাকে দেখলেন, এক্সরে করলেন; ব্যবস্থা করলেন- কম্ফোলেছিথন, এ্যাফ্রোটোন ও এক দফে মিকচার।
২রা শ্রাবণ আমরা বাড়ীতে আসবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু দেখা গেল যে, দুজনের ষ্টিমার ভাড়া তহবিলে নেই। তখন ঢাকায় আমাদের পরিচিত এমন কোন লোক ছিল না, যার কাছে দুটাকা হাওলাত পাওয়া যেতে পারে। দায় পড়ে বাড়ীতে আসতে হচ্ছে মাত্র একজন। এখন সমস্যা হল – কে আগে আসবে। মোল্লা সাব আমাকে বল্লেন- “তুমি মুমুর্ষ রুগী, তুমি যদি ঢাকায় থাক আর মারা যাও; তবে সে সংবাদ পেয়ে বা না পেয়ে পুনঃ আমি ঢাকায় এসে হয়ত তোমার লাশও পাব না। আর তুমি আগে গিয়ে জাহাজে মার#2494; গেলেও অন্ততঃ তোমার লাশটা বরিশাল পর্যন্ত পুছবে। কাজেই তুমিই আগে যাও।” আমি একাই বাড়ীতে এলাম এবং পরের দিন টেলিগ্রাফ মনিঅৰ্ডার করে টাকা পাঠালাম। তিনি টাকা পেয়ে পরে বাড়ী আসলেন।
ঢাকার ব্যবস্থা মোতাবেক ওষুধ কিনে ১০ই শ্রাবণ হতে উহা সেবন শুরু করলাম এবং এক মাস ঔষুধ ব্যবহারে আরোগ্য লাভ করলাম (রোগারোগ্যের পরেও দুমাস ওষুধ সেবন করেছি।) কিন্তু দুর্বলতায় হলাম চল-শক্তি রহিত।