এক
‘ভীষণ বিরক্তি লাগছে,’ চাচা-চাচীকে বলতে চাইছিলাম আমি। বৃহস্পতিবার। সন্ধেবেলা। আমাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে চড়ে মেইন স্ট্রীটের চেম্বার অভ কমার্স বিল্ডিঙের উদ্দেশে চলেছি আমরা।
তার বদলে বললাম, ‘ডন বাসায় থাকবে আর আমাকে নিলামে যেতে হচ্ছে। কেন?’
চাচী সামনে বসা ছিল। ঘুরে আমার দিকে চাইল।
‘সন্ধেবেলা ডনের বন্ধু-বান্ধবরা আসবে, কিশোর। আর তা ছাড়া তোর চাচা আর আমি চেয়েছি তুই আর্ট-কালচারের চমৎকার নিদর্শনগুলো দেখ।’
ধুত্তোরি! এসব নিলাম আর গ্যারেজ সেলে গিয়ে আমার ভাল লাগে না। কিন্তু চাচা-চাচীর অ্যান্টিকের প্রতি খুব ঝোঁক।
আমি এখন মুসা কিংবা রবিনের বাসায় বসে বলগেম দেখতে পারতাম। ডন চালাকি করে বন্ধুদেরকে ডেকেছে। যে কারণে না যাওয়ার অজুহাত পেয়ে গেছে। আমার কোন ছুতো তৈরি ছিল না।
‘ওদের নিলামে হয়তো পুরানো ফুটবল কিংবা বেসবল থাকবে, চাচা বলল। পার্কিং লটে গাড়ি দাঁড় করাল।
ভাল। ফুটোওয়ালা কোন নোংরা ফুটবল কিংবা সুতো-ওঠা বেসবল।
‘আমার জন্যে চিন্তা কোরো না, চাচা,’ বললাম। ‘আমার কোন কিছু দরকার নেই।’
একটু পরেই বিশাল এক রূমে অন্যদের সঙ্গে বসলাম আমরা। আমাদের সামনে মাইক্রোফোন নিয়ে এক লোক দাঁড়িয়ে। তার হাতে নানা ধরনের জিনিস। লোকে দাম হাঁকবে। যার দাম সবচাইতে বেশি হবে সে জিনিসটা পেয়ে যাবে।
কিছু কিছু জিনিস একদম বাজে। বেঁটে মত এক বুড়ো বসে ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি পাঁচশো ডলার দিয়ে গাছে বসা এক পেঁচার অয়েলপেন্টিং কিনলেন। তরুণ এক দম্পতি জিরাফের ছোট্ট এক মূর্তি কিনল তিনশো ডলারে। তিনশো ডলার দিয়ে আমি সারা বছরের বেসবল কার্ডের সাপ্লাই কিনতে পারতাম!
‘চাচী, আমরা কখন যাব?’ ফিসফিস করে বললাম। আমি তার পাশে বসা। সে বসেছে আমার আর চাচার মাঝখানে।
‘একটু পরেই,’ বলল চাচী। ‘কেন, তোর ভাল লাগছে না?’
‘উঁহুঁ।’
চারধারে চোখ বুলালাম। আমার বয়সী কাউকে দেখলাম না এ কামরায়। কথা বলার মতও কেউ নেই!
চারপাশে নজর বুলিয়ে দর্শকদের দেখছি, এসময় কানে এল শব্দটা। জোরাল, তীক্ষ্ণ, চড়া এক আর্তনাদ। শব্দটা এতটাই তীক্ষ্ণ, কানে হাত চাপা দিলাম। মনে হলো জ্ঞান হারাব!
দুই
হঠাৎই আর্তনাদটা থেমে গেল। চারপাশে দৃষ্টি বুলালাম।
‘চাচী, কীসের শব্দ ওটা?’ ককিয়ে উঠে প্রশ্ন করলাম।
‘খুব সুন্দর না শব্দটা?’ চাচী পাল্টা জিজ্ঞেস করল। মুখে হাসি, চোখের তারা জ্বলছে। তার নজর আমার দিকে নয়। মাইক্রোফোনে দাঁড়ানো লোকটার প্রতি দৃষ্টি স্থির।
আমি সামনের দিকে চাইলাম। লোকটা বাঁশির মত দেখতে কিছু একটা ধরে রয়েছে। মুখের কাছ থেকে এই মাত্র সরিয়ে নিল। সে নিঃসন্দেহে বাঁশিটা বাজিয়েছে।
‘এই ঐতিহাসিক যন্ত্রটার জন্যে কত হাঁকব?’ নিলামদার গলা চড়িয়ে বলল। ‘একশো ডলার দিয়ে শুরু হচ্ছে।’
চাচার দিকে চাইল চাচী।
‘ওই বাঁশিটা আমার চাই,’ বলল। চাচা স্বপ্নাবিষ্টের মত চেয়ে ছিল বাঁশিটার দিকে, মাথা ঝাঁকাল। চাচা হাত তুলল।
‘একশো ডলার,’ বলল।
‘নিলাম শুরু হলো,’ বলল লোকটা। ‘আর কেউ বলবেন?’
সামনে থেকে একজন দুশো ডলার হাঁকল। চাচা হাত তুলে তিনশো বলল। কী হচ্ছে এখানে?
‘চাচা, চাচী, কী করছ তোমরা?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করলাম। ‘একটা পুরানো বাঁশির জন্যে তিনশো ডলার?’
‘আমাদের অ্যান্টিক কালেকশনে ওটা যোগ হলে দারুণ হবে,’ চাচী বলল।
‘ডন ক্লাব ব্যাণ্ডের অডিশনে ওটা ব্যবহার করতে পারবে,’ বলল চাচা। হ্যাঁ, ডন মিউজিক লেসন নিচ্ছে। আমাদের ফুটবল গেমে যে ব্যাণ্ড বাজনা বাজায় তাতে যোগ দিতে চায় ও। আমি দলের রানিং ব্যাক। হাফটাইমে ডন মাঠে মার্চ করবে আর বাঁশিটা বাজিয়ে আমার কান ঝালাপালা করে দেবে।
‘চাচা, আওয়াজটা শুনেছ?’ প্রশ্ন করলাম। ‘মনে হচ্ছিল ডাইনীর চিৎকার!’
কিন্তু চাচা আমার কথায় কান দিল না। এইমাত্র সে পাঁচশো ডলার হাঁকল।
‘আর কেউ ডাকেনি,’ বলল নিলামদার। ‘যিনি পাঁচশো ডলার বলেছেন এটা তাঁর কাছে বিক্রি করা হলো।’
সবাই হাততালি দিল। শুধু আমি বাদে। বাঁশিটা একটা বাক্সে ভরে, রিবন দিয়ে বেঁধে, চাচা-চাচীর হাতে তুলে দেওয়া হলো।
এর একটু পরেই নিলাম শেষ হলো। বাড়ি ফেরার পুরোটা পথে চাচা-চাচী বাঁশিটার কথাই বলল। মহা উত্তেজিত তারা। আমি স্রেফ পিছনে বসে চুপ করে থাকলাম, জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলাম। হয়তো বাড়ি ফিরে খেলার শেষাংশটুকু দেখতে পাব।
বাড়ির ড্রাইভওয়েতে ঢুকলাম আমরা। চাচা গাড়ি পার্ক করল। আমি ভিতরে গেলাম। ডন ডেনে বসে বন্ধুদের নিয়ে কার্টুন ভিডিও দেখছিল।
আমার দিকে মুখ তুলে চেয়ে হাসল ও।
‘নিলাম কেমন হলো, কিশোর ভাই?’ প্রশ্ন করল।
‘দারুণ,’ জবাব দিলাম। ‘এই পচা কার্টুনটার চাইতে ভাল কিছু পাওয়া গেল না?’
এসময় চাচা-চাচী ঘরে ঢুকল। চাচী টিভিটা তখুনি বন্ধ করে দিল।
‘একটা ঘোষণা আছে,’ বলল চাচী। বাক্স থেকে বাঁশিটা বের করল। ‘ডন, এই যন্ত্রটা তোকে রকি বীচ ক্লাবের এবছরের স্টার বানিয়ে দেবে!’
ডন ও তার বন্ধুরা চাচা আর বাঁশিটাকে ঘিরে দাঁড়াল। ওদেরকে আগ্রহী দেখাল। আমার কাছে ওটাকে স্রেফ বাতিল এক টুকরো লোহা বই অন্য কিছু মনে হলো না।
তা ছাড়া, ক্লাব ব্যাণ্ড এমনিতেই খেলার সময় যথেষ্ট উৎকট শব্দ করে, যে কারণে মাঝে মাঝে আমরা কোচের কথা শুনতে পাই না। এই বাঁশিটা যোগ হলে মনে মনেও কিছু ভাবা যাবে কিনা সন্দেহ!
চাচা আমার কাছে হেঁটে এল, ওদিকে ডন বাঁশিটা হাতে নিয়ে ফুঁ দিল, পরখ করছে। এখন অন্তত ওটা সেই তীক্ষ্ণ শব্দটা ছাড়ল না।
‘কালকে ফুটবল প্র্যাকটিসের প্রথম দিন,’ বলল চাচা, আমার কাঁধে মৃদু চাপড় দিল।
‘হ্যাঁ, চাচা,’ বললাম। ‘আর প্রথম খেলাটা দু’সপ্তাহের মধ্যে।’
‘প্র্যাকটিসের জন্যে তোর প্রচুর বিশ্রাম দরকার,’ যোগ করল চাচা। ‘রাতে ভাল ঘুমও দরকার।’
চাচার কথাটা বুঝতে পারলাম। আজ রাতে একটু সকাল-সকাল ঘুমানো, কালকে যাতে স্কুলের পর প্র্যাকটিসের জন্যে তৈরি থাকা যায়। সায় জানালাম আমি। সবাইকে শুভ রাত্রি জানিয়ে কিচেনের দিকে এগোলাম। আমাদের বিড়াল মাফিনকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলাম। বিড়ালটা ভাল। কখনও কোন দুষ্টুমি করে না। কোলে এসে বসে, চিবুকের নীচে আদর করতে দেয়। ওকেও শুভরাত্রি বলে উপরতলায় আমার ঘরের উদ্দেশে চললাম।
একটু পরেই শুয়ে পড়লাম বিছানায়। বাতি নিভানো। শীঘ্রি তন্দ্ৰা এসে গেল। স্বপ্ন দেখলাম হাতে ফুটবল নিয়ে লম্বা এক মাঠে দৌড়চ্ছি আমি। একটা টাচডাউন স্কোর করতে যাচ্ছি। হঠাৎই জোরাল, তীক্ষ্ণ বাঁশির শব্দে কানের পোকা নড়ে উঠল। বলটা ফেলে দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম!
তিন
আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। হাপরের মত ওঠা-নামা করছে বুক। জানি এটা নিছক একটা স্বপ্ন। কিন্তু বাঁশির শব্দটা ভীষণ বাস্তব মনে হয়েছিল। কভার টেনে নিয়ে, চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। এসময়, বাইরে থেকে, কিংবা বাড়ির ভিতরেই শোনা গেল শব্দটা। বাঁশি বাজছে!
এবার জোরাল কিংবা তীক্ষ্ণ নয়। নরম, নিচু, প্রায় শ্রুতিমধুর। উঠে বসলাম। আমি কি এখনও স্বপ্ন দেখছি? কান পাতলাম। শব্দ শুনে মনে হলো নীচে থেকে আসছে। নীচে নেমে গিয়ে দেখব নাকি?
বিছানা ছেড়ে উঠতে যাব এসময় হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল বাজনাটা। প্রায় ত্রিশ সেকেণ্ড অপেক্ষা করলাম। কিছুই ঘটল না। নিশ্ছিদ্র নীরবতা। আমি মনে হয় এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।
ঘড়ি দেখলাম। প্রায় ছটা বাজে। বিছানায় ফের শুয়ে পড়লাম। বিছানা ছাড়তে এখনও ঘণ্টা দুয়েক বাকি আছে। একটু পরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এরপর আর কিছু মনে নেই। নীচতলা থেকে জোরাল কথা-বার্তার শব্দে ঘুম ভাঙল। উঠে বসে ঘড়ি দেখলাম। সাড়ে সাতটা। বিছানা ছাড়ার সময় হয়েছে।
ঝটপট হাত-মুখ ধুয়ে, কিচেনে নেমে এলাম। চাচা-চাচী এসময় সাধারণত টেবিলে বসে নাস্তা করে।
কিন্তু টেবিল এখন পর্যন্ত সাজানো হয়নি। কিচেন ফাঁকা। ব্যাপারটা অদ্ভুত। এবার তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, লিভিং রূম থেকে আসছে।
ভিতরে গেলাম। মাফিন চেয়ারে বসে আছে, তার পাশে দাঁড়িয়ে চাচা-চাচী।
‘মাফিন, তুই এমন কাজ করলি কীভাবে?’ চাচী তিরস্কারের সুরে বলল। ‘তুই তো আগে এরকম ছিলি না।’
‘কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করলাম।
‘মাফিন কাল রাতে দুটো চেয়ার ছিঁড়ে দিয়েছে,’ বলল চাচা। কোনায় রাখা চেয়ার দুটোর দিকে ইশারা করল। পায়াতে আঁচড়, গদি ফালা ফালা।
মাফিন, তুই যদি রাতেরবেলা এসব কাণ্ড করিস তা হলে তোকে এখন থেকে বেসমেন্টে থাকতে হবে,’ চাচী বলল। জোরে মিয়াও শব্দ করে জবাব দিল মাফিন। এবার এক লাফে চেয়ার থেকে নেমে কিচেনে গিয়ে ঢুকল।
‘কাজটা রাতে যে ও-ই করেছে বুঝলে কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘কারণ কাল ঘুমোতে যাওয়ার আগে যখন লিভিং রূমের বাতি নিভাই তখন চেয়ারগুলো ঠিক ছিল,’ জবাব দিল চাচা। ‘আজ সকালে নীচে নেমে দেখি এই অবস্থা।’
হয়তো বাঁশির শব্দ ওর মাথা আউলে দিয়েছে,’ বললাম।
চাচা-চাচী আমার দিকে চাইল।
‘কীসের বাঁশির শব্দ?
আমি সামান্য দ্বিধার পর মুখ খুললাম।
‘আজ ভোর ছটার দিকে কোত্থেকে যেন বাঁশির শব্দ পেয়েছি। ওতে হয়তো মাফিন আপসেট হয়ে এসব অনর্থ ঘটিয়েছে।’
‘আমি কোন বাঁশি-টাঁশি শুনিনি,’ চাচী বলল।
‘আমিও না,’ চাচা বলল।
‘তুই নিশ্চয়ই কল্পনায় শুনেছিস,’ চাচী বলল। ‘তা ছাড়া শুধু ডনই বাঁশিটা বাজাবে, কিন্তু ও তো ছটার সময় ওঠেনি।’
চাচা-চাচী নাস্তা তৈরি করতে রান্নাঘরে ঢুকল। আমি ছেঁড়া চেয়ারগুলোর দিকে চাইলাম। আমি হয়তো কল্পনাতেই বাঁশির শব্দ শুনেছি, যেহেতু আর কেউ শোনেনি। কিন্তু অপকর্মটা নিঃসন্দেহে মাফিনের। কেন? ও তো পূর্ণবয়স্ক, ভদ্র মাদী বিড়াল-বুনো স্বভাবের বিড়ালছানা নয়।
আচমকা আবার বাঁশির শব্দ পেলাম! বোঁ করে ঘুরে দাঁড়ালাম।
ডন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। দু’হাতে বাঁশিটা ধরে এক ধরনের কুচকাওয়াজের সুর বাজাচ্ছে। বরং বলা ভাল, চেষ্টা করছে।
‘ডন, তুমি কখন ঘুম থেকে উঠেছ?’ জবাব চেয়ে, ওকে অনুসরণ করে কিচেনে ঢুকলাম।
‘এই পনেরো মিনিট আগে,’ উত্তর দিল ও। ‘কেন?’
‘ছটার সময় তুমি বাঁশি বাজাচ্ছিলে?’ প্রশ্ন করলাম।
ডন ঘুরে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন আমি মঙ্গলগ্রহের জীব।
‘প্রশ্নই ওঠে না,’ বলল। আবার প্র্যাকটিস করতে শুরু করল।
নাস্তার পর, স্কুলের দিকে রওনা হলাম। দিনটা যেন ফুরোতেই চাইছে না। তিনটার ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে উঠলাম। তিনটার সময় স্কুল ছুটি হবে এবং ফুটবল খেলার সময় হবে। শেষমেশ, তিনটার ঘণ্টা বাজল। সোজা জিমের উদ্দেশে এগোলাম, এবং প্যাড আর ইউনিফর্ম পরে নিলাম। সোয়া তিনটা নাগাদ টিমমেটদের সঙ্গে মাঠে নেমে পড়লাম। কোচ এলিসন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে।
‘আমাদের এবারের লক্ষ্য গতবারের চাইতে ভাল করা। শুধু একা ভাল খেললেই হবে না, দলগতভাবে ভাল খেলার চেষ্টা করতে হবে।’
কোচ এলিসন আর কিছু বলতে পারার আগেই আমাদের পিছন থেকে জোরাল এক বাজনার শব্দ ভেসে এল। আমরা সবাই ঘুরে দাঁড়ালাম। ক্লাব ব্যাণ্ড অন্য মাঠটায় প্র্যাকটিস শুরু করেছে। ওই যে ডন, দ্বিতীয় সারিতে মার্চ করছে-আর বাঁশি বাজাচ্ছে!
‘আমাকে মনে হয় আরেকটু জোরে কথা বলতে হবে,’ বললেন কোচ। ব্যাণ্ডটা মার্চ করছে স্কুলের মিউজিক টিচার মিসেস পিয়ার্সের নির্দেশে।
ডন আমাকে দেখে হাসল। আমি মাথা ঝাঁকালাম। হঠাৎই কানে এল শুধু ডনের বাঁশির শব্দ!
চারধারে দৃষ্টি বুলালাম। একমাত্র কি আমিই টের পাচ্ছি, অন্য বাজনাগুলো থেমে গিয়ে শুধু বাঁশিটাই বাজছে?
কিছু একটা বলতে যাব এসময় আমাদের সেন্টার মুসা হঠাৎই হেলমেট খুলে ফেলল। তারপর আর্তচিৎকার ছেড়ে মাঠের পাশের রাস্তাটার দিকে ছুট দিল। সবেগে দৌড়চ্ছে ও, সোজা আগুয়ান গাড়ি- ঘোড়ার দিকে!
চার
‘মুসা, কোথায় যাচ্ছ?’ চেঁচিয়ে উঠলেন কোচ এলিসন। মুসা ঘুরে দাঁড়াল না কিংবা হাতও নাড়ল না। সোজা রাস্তার দিকে ছুটে চলেছে। বাতি ওর বিপরীতে, আগুয়ান গাড়ি-ঘোড়া কখনোই সময়মত থামতে পারবে না। আমি দৌড় দিলাম ওর পিছন পিছন।
‘কিশোর, তুমি চললে কোথায়?’ কোচ চেঁচালেন। ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় নেই, যা বলার পরে বলব। যদি এখানে যথাসময়ে পৌঁছতে পারি আরকী।
আগেই বলেছি, আমি রানিং ব্যাক। মুসা লাইনম্যান। কাজেই আমার গতি বেশি। কিন্তু ও তো আমার চাইতে এগিয়ে, রাস্তা থেকে এখন মাত্র বিশ গজ দূরে। ওকে থামাতে হলে ফ্লাইং ট্যাকল করতে হবে আমার।
‘মুসা!’ চেঁচালাম। ক্রমেই কাছিয়ে আসছি। ‘থামো, গাড়ি চাপা পড়বে!’ কিন্তু কোন কাজ হলো না। মুসার কানে মনে হয় আমার কথাগুলো ঢুকল না।
ও আর মাত্র গজ পাঁচেক দূরে। গাড়িগুলো সাঁ সাঁ করে যাওয়া- আসা করছে। ওকে এখনই থামানো না গেলে আর থামানো যাবে না। টাচডাউন স্কোর করার মত করে মুসার পিঠের উদ্দেশে ঝাঁপালাম। ওর জার্সির পিছনদিকটা চেপে ধরে, একটানে মাটিতে শুইয়ে দিলাম। এখন রাস্তা থেকে আমাদের মাত্র গজ খানেক দূরত্ব।
মুসাকে চিত করে দিলাম। জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। চোখ জোড়া ঘোর লাগা।
ওর কাঁধের প্যাড ধরে ঝাঁকুনি দিলাম।
‘মুসা, ঘোর থেকে বেরিয়ে এসো। এখুনি!’
‘বাঁশিটা। বাঁশিটাকে মেনে চলতে হবে,’ মনে হলো বিড়বিড় করে আওড়াল।
ইতোমধ্যে কোচ এলিসন, সহ খেলোয়াড়রা আর ব্যাণ্ডের সবাই পৌঁছে গেছে। চকিতে মুখ তুলে চাইলাম। প্রথমটায় ডনকে দেখতে পেলাম না। এবার দেখলাম। তখনও অপর মাঠটায় রয়েছে ও। একমাত্র ও-ই দৌড়ে আসেনি। চেয়ে চেয়ে দেখছে। মুখে হাসি।
‘কী হয়েছে?’ সবাই একসঙ্গে জানতে চাইল। এসময় মুসা মাথা ঝাঁকাল এবং ওর চোখজোড়া স্বাভাবিক রং ফিরে পেল। উঠে বসে চারধারে নজর বুলাল ও।
‘কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করল মুসা। ‘আমরা সবাই এখানে কী করছি?’ সটান উঠে দাঁড়াল ও, ইউনিফর্ম ঝেড়ে সহখেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে লাগল।
‘ছোটখাট একটা ব্রেকডাউন হয়ে গেছিল,’ বললেন কোচ। ‘স্কুলের ডাক্তারকে দিয়ে ফুল মেডিকেল চেক-আপ করাতে হবে ওর। মুসা, তোমাকে আজ আর প্র্যাকটিস করতে হবে না।’
বাদবাকি সবাই প্র্যাকটিস শুরু করল-দল আর ব্যাণ্ড দুটোই। মুসা লকার রূমের দিকে এগোল। সবাই শীঘ্রি ব্যাপারটা ভুলে গেল। কিন্তু আমি জানি আমি ভুলতে পারব না। মুসা কি বাঁশিটার কথা উল্লেখ করেছিল? নাকি আমার কল্পনা? ঘুরে দাঁড়িয়ে ডনের দিকে চাইলাম। ওর ডান হাতে বাঁশিটা ধরা। আমার দিকে চেয়ে আবারও হাসল। আমি স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম পুরানো বাঁশিটার দিকে।
এরপরে আর প্র্যাকটিসে কোন সমস্যা হলো না। প্র্যাকটিসের পর শাওয়ার নিয়ে, বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বাড়ি ফেরার পথে মাথায় ঘুরতে লাগল কাল রাতে মাফিন কীরকম উদ্ভট আচরণ করেছে সেকথা। আর এখন মুসার অদ্ভুত কাণ্ড।
আমি জানি জন্তু-জানোয়ারেরা কখনও কখনও তীক্ষ্ণ শব্দ শুনতে পায়, মানুষ যেটা শোনে না-এবং এর ফলে উল্টোপাল্টা কাজ করে বসে তারা। কিন্তু তা হলে মুসার অমন কাজ-কারবারের ব্যাখ্যা কী?
বাড়ির কাছে আসতেই, দেখতে পেলাম ডনের কামরায় আলো জ্বলছে। আমার আগে বাসায় পৌঁছেছে ও। ওর ঘর থেকে বাঁশির শব্দ ভেসে আসছে। মৃদু, স্থির, প্রায় ভুতুড়ে ধরনের আওয়াজ।
আরও লক্ষ করলাম আমাদের ড্রাইভওয়েতে এক গার্ডেনারের ট্রাক পার্ক করা। চাচী নিশ্চয়ই ডেকেছে গাছ-পালার ডাল-পালা ছেঁটে দিতে। মুখ তুলে চাইলাম। গার্ডেনার আলফ্রেড সামনের লনের এক ওক গাছে উঠে বসে আছে। হাতে ইলেকট্রিক করাত, ট্রাকের পিছনে জেনারেটরে যুক্ত হয়েছে তারের প্লাগ। ও আমাকে দেখতে পেল।
‘হাই, আলফ্রেড, কেমন চলছে?’ প্রশ্ন করলাম। পাল্টা হাসল ও। এবার হঠাৎই ওর হাসি মুছে গেল। জ্বলন্ত চোখে চেয়ে রয়েছে। এসময় বাঁশির শব্দ জোরাল হলো।
‘আমাকে নির্দেশ মানতে হবে!’ চেঁচিয়ে উঠল আলফ্রেড। গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল ও। ইলেকট্রিক করাত হাতে সোজা আমার দিকে তেড়ে আসছে!
পাঁচ
আলফ্রেড আমার উদ্দেশে ধেয়ে এল। ও আমার চুল কাটবে নাকি স্রেফ আমার পাশ দিয়ে চলে যাবে জানার জন্য দাঁড়ালাম না আমি।
ড্রাইভওয়ের দিকে দৌড় দিলাম ক্লান্ত শরীর নিয়ে। আলফ্রেড আমার নাগাল প্রায় ধরে ফেলেছে। এখন বুঝতে পারছি ও আমাকেই তাড়া করছে। ওর ট্রাকের কাছে যখন পৌঁছেছি তখন করাতটা মাথার উপর তুলে ফেলেছে ও। ইলেকট্রিক তারটা চেপে ধরে জেনারেটরের প্লাগ থেকে টেনে বের করলাম।
তখুনি ইলেকট্রিক করাতটা থেমে গেল। ওপরতলা থেকে আসা বাঁশির শব্দও থেমে গেছে। আলফ্রেড থমকে দাঁড়াল। চোখ পিটপিট করল। আমার দিকে চাইল। এবার চারধারে চোখ বুলাল।
‘কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করল। ‘আমি তো গাছে ছিলাম, মরা ডাল-পালা ছাঁটছিলাম।’
‘আপনি হয়তো কিছু চেক করতে চাইছিলেন,’ বললাম। কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই বিপদ কেটে গেছে বলে খুশি আমি।
‘হ্যাঁ,’ বলল আলফ্রেড, কিন্তু হতবিহ্বল দেখাল ওকে। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে গাছটার দিকে ফিরে চলল। আমি পা বাড়ালাম বাসার উদ্দেশে।
ডনের কামরায় গেলাম। বাঁশি বাজানো আবারও শুরু হয়েছে। ও এখন পুরানো এক ইংরেজি লোকসঙ্গীতের সুর বাজাচ্ছে। নব ঘুরালাম ওর ঘরে ঢোকার জন্য। বন্ধ! আমরা বাড়িতে কখনোই দরজা বন্ধ করি না।
‘ডন,’ দরজায় টোকা দিয়ে বললাম। ‘আমাকে ঢুকতে দাও।’
বাঁশি বন্ধ হয়ে গেল। এবার সম্পূর্ণ অচেনা এক কণ্ঠে ডন প্রশ্ন
‘কে?’
করল,
‘আমি কিশোর, তুমি আমাকে ঢুকতে দাও!’ বললাম। এক মুহূর্ত পরে চাবি মুচড়ে দরজা খোলা হলো। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ডন। ওর চোখজোড়া স্বচ্ছ, কিন্তু আমার কেন জানি অস্বস্তি লেগে উঠল।
‘নক না করে কারও ঘরে ঢোকা ঠিক নয়,’ ডন বলল। আমি একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম। কী? আমাদের বাসায় যে এ নিয়ম চালু নেই শুধু তা-ই নয়, ওর কণ্ঠস্বরও বিজাতীয় ঠেকল। মনে হলো এইমাত্র ও ইংল্যাণ্ড থেকে এসেছে।
‘ডন, কথা আছে,’ বলে ভিতরে ঢুকলাম।
‘বলো,’ বলে টেবিলের কাছে গিয়ে বাঁশিটা তুলে নিল ও। হাতে ধরে রেখে আমার দিকে চেয়ে স্মিত হাসল।
‘ডন, এই ব্রিটিশ উচ্চারণ কোত্থেকে পেলে?’ জবাব চাইলাম।
ডন আমার দিকে জ্বলন্ত চোখে চাইল।
‘আমরা ক্লাসে এখন ব্রিটেনের ইতিহাস পড়ছি,’ বলল ও। ‘অবশ্য তুমি তো ফুটবল নিয়েই আছ, তোমার কাছে আর্ট-কালচারের কোন দাম নেই।’
বলে কী? ডন তো এভাবে কথা বলত না!
‘ডন, ব্রিটিশ উচ্চারণের ব্যাপারটা কী?’ আবারও প্রশ্ন করলাম।
‘তোমার ব্যবহার ভাল না, কিশোর ভাই,’ ডন বলল, এবং আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে ইংলিশ সুরটা বাজাতে লাগল। এসময় ফোন বেজে উঠল। মুহূর্ত পরে চাচী ঘরে মাথা গলাল।
‘ডন, ভিভ রিচার্ডস,’ চাচী বলল। ভিভ ডনের প্রিয় বন্ধু। কাল রাতে এসেছিল।
‘আণ্টি, বলে দাও আমি নেই,’ ডন বলল। চাচী আমার দিকে চাইল। আমরা দু’জনই হতভম্ব। চাচী শ্রাগ করে চলে গেল।
‘ডন, ভিভ তোমার প্রিয় বন্ধু,’ বললাম। ‘তুমি নেই মানে?’
ডন ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার মুখোমুখি হলো। মুখের হাসি মুছে গেছে। কড়া চোখে আমার দিকে চেয়ে ও।
‘মানে কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে। বাঁশি প্র্যাকটিসের সময় আমি কাউকে চাই না। সে তুমি, আণ্টি, আঙ্কল, ভিভ যে-ই হোক না কেন। বোঝা গেছে? এখন বিদায় হও। আর দরজাটা ভিড়িয়ে যেয়ো!’
ছয়
দরজা লাগিয়ে দিয়ে হলওয়েতে দাঁড়িয়ে রইলাম। ডনের ঘরে বাঁশির সুর শুরু হয়েছে আবারও। ধীর, ভুতুড়ে সেই শব্দটা।
ওর দরজার দিকে চেয়ে রইলাম। বিশ্বাস হচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত ডন ডনের মতই ছিল। হাসি-খুশি, ছটফটে, কখনও কখনও বিরক্তিকর, তারপরও আমার ভক্ত। হঠাৎ করেই রাতরাতি ও পরিণত হয়েছে শীতল স্বভাবের, অসামাজিক এক বাঁশিবাদকে, ইংলিশ উচ্চারণে কথা বলে যে!
নীচে নেমে এলাম। চাচী ডিনারের জন্য টেবিল সাজাচ্ছে আর চাচা বাইরে বার্গার সেঁকছে প্যাটিও বার্বিকিউতে।
‘চাচী, ডন কেমন জানি অদ্ভুত আচরণ করছে,’ চাচীকে বললাম।
চাচী মৃদু হেসে আমার দিকে চোখ তুলে চাইল।
‘তাই বুঝি?’ বলল। ‘তুই ওকে ঈর্ষা করছিস না তো?’
‘ঈর্ষা! ঈর্ষা করবে কেন?’
‘কারণ ডন ক্লাব ব্যাণ্ডের নামকরা স্টার হতে চলেছে,’ চাচা বলল। প্লেটে বার্গার নিয়ে কিচেনে ঢুকল।
‘ডন যদি স্টার হয় তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ করছে। পুরানো বাঁশিটা কিনে দেয়ার পর থেকে ওর ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে ও রকি বীচের প্রিন্স!’
এসময় ফোন বেজে উঠল।
‘নিশ্চয়ই ডনের ফোন, মানা করে দাও। বাঁশি প্র্যাকটিসের সময় ওকে বিরক্ত করা যাবে না।’ বললাম আমি।
‘একেই বলে নিবেদিতপ্রাণ,’ চাচী বলল। টেবিলে সালাদ, কেচাপ আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সঙ্গে বার্গার রাখল।
চাচা ফোনের জবাব দিয়েছে। ওদিকে চাইলাম।
‘ধন্যবাদ,’ বলে রেখে দিল রিসিভার। ‘কে?’ প্রশ্ন করল চাচী।
‘মিসেস পিয়ার্স, মিউজিক টিচার এবং ক্লাব ব্যাণ্ডের লিডার। উনি বললেন এবছর ডন নাকি দারুণ উন্নতি করেছে, আর এত সুন্দর বাঁশি তিনি নাকি আর শোনেননি!’
হায় খোদা! বার্গার মুখে দিতে পারলাম না আমি। চাচা-চাচী ডনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেল পুরোটা সময়। ডন বেশি কিছু বলল না। প্রচুর হাসল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার উদ্দেশে, এবং মাথা ঝাঁকাল। লক্ষ করলাম ওর খাওয়ার ধরনও পাল্টে গেছে। ও সাধারণত খুদে নেকড়ের মত গোগ্রাসে খাবার গেলে, আর দুধ পান করে চোঁ-চোঁ করে।
কিন্তু আজ রাতে হঠাৎই পরিপাটী হয়ে উঠেছে ও, ছুরি-কাঁটা চামচ ধরে, এমনভাবে ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছছে যেন খুদে এক রাজকুমার।
কিচেনের ঘড়িটা চকিতে দেখে নিলাম। প্রায় সাড়ে ছটা। বন্ধুদের সঙ্গে সিটি মাল্টিপ্লেক্স মুভি থিয়েটারে দেখা করার কথা, আমরা প্রায়ই শুক্রবার রাতে ওখানে যাই। আজকের ছবিটা, সায়েন্স ফিকশন। মঙ্গলগ্রহবাসীদের পৃথিবী আক্রমণের কাহিনি।
চাচা-চাচী আর রাজপুত্র ডনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম। তিন ব্লক দূরেই থিয়েটার।
রবিন, মুসাসহ কজন বন্ধু আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
‘এখন কেমন আছ, মুসা?’ প্রশ্ন করলাম। টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকেছি আমরা।
‘ভাল,’ জানাল মুসা। ‘ওখানে কী ঘটেছিল জানি না আমি। ডাক্তার চেক করে বলেছে কোন সমস্যা নেই। ব্যাপারটা সম্ভবত আর ঘটবে না। তার ধারণা আমি বোধহয় কোন কিছুতে অ্যালার্জিক।’
অ্যালার্জিক? হ্যাঁ, মনে হয় অদ্ভুত বাঁশির শব্দে। আমরা সবাই বসে পড়লাম। থিয়েটার আঁধার হয়ে এল। ছবি এখুনি শুরু হবে। থিয়েটার দর্শকে ঠাসা। আজ যেহেতু শুক্রবার এবং ছবিটা জনপ্রিয়
এসময় শুনতে পেলাম ওটা। পর্দা উঠে যাচ্ছে, স্ক্রীন বেরিয়ে পড়ছে, থিয়েটারের পিছনদিক থেকে বাঁশির সন্দেহাতীত সুর ভেসে এল। সেই ইংলিশ সুরটা বাজছে!
এবার হঠাৎই বাজনার শব্দটা জোরাল হলো। এবং সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা উন্মাদ হয়ে উঠল। উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে, পর্দা লক্ষ্য করে পপকর্ন ছুঁড়ছে, লাফালাফি করছে-একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে!
মুহূর্তের মধ্যে বাতি জ্বলে উঠল। বাজনা থেমে গেল। দর্শকরা হতচকিত, ধীরে ধীরে যার যার আসনে বসে পড়ল। আমি আইল ধরে দৌড় দিলাম।
ডন বাঁশি হাতে এক্সিট ডোরের কাছে দাঁড়িয়ে। আমার উদ্দেশে মৃদু হেসে, ঘুরেই এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল ও। আমি ওর পিছু ধাওয়া করলাম।
কিন্তু বাইরে বেরনোর পর আঁধারে ঠাহর করতে পারলাম না ও কোথায় গেছে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। ভিতরে ছবি শুরু হওয়ার শব্দ পেলাম। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে থিয়েটারে ফিরে গেলাম। বসার পর, বন্ধুদেরকে ব্যাখ্যা করে বললাম পরিচিত একজনকে পিছনে দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া বলার মত আর কিছু পেলাম না।
ছবিটা যথেষ্ট ভীতিকর ঠেকল দর্শকদের কাছে। কিন্তু আমার কাছে ডন ও তার বাঁশি নিয়ে যা ঘটছে তার চাইতে ভয়ঙ্কর আর কিছু না।
সাত
সিনেমা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তার ওপাশে সোডা পান করতে গেলাম। ওরা তর্ক করছে ছবিটার বিভিন্ন অংশ নিয়ে, কেউ কেউ বলছে এটাই ওদের দেখা সেরা সায়েন্স ফিকশন ছবি। কিন্তু আমার মাথায় শুধু ঘুরছে ডনের চিন্তা।
কী করব আমি? বড়দের ধারণা ও দারুণ উন্নতি করছে। কেউ উপলব্ধি করছে না বাঁশিটা বাজালে মানুষ উন্মত্ত আচরণ করে। ডন যেন ইচ্ছে করেই ঘটনাগুলো আমাকে দেখাচ্ছে, খোঁচাচ্ছে, চাইছে আমি কিছু একটা করি।
তখুনি সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাপারটার ফয়সালা করতে হবে। কাল সকাল অবধি অপেক্ষা করব না। যা করার আজ রাতেই করতে হবে।
‘তোমার কী মনে হয়, কিশোর?’ রবিন প্রশ্ন করল।
‘আজ রাতেই মিটিয়ে ফেলতে হবে,’ বলে উঠে দাঁড়ালাম। বন্ধুরা সবাই হেসে উঠল। ওদের দিকে চাইলাম।
‘আমরা জিজ্ঞেস করেছি প্রথম ম্যাচে আমরা কেমন করব বলে তোমার ধারণা?’ মুসা বলল। ‘কিন্তু তুমি অদ্ভুত জবাব দিলে।’
‘সরি,’ বলে শ্রাগ করলাম। ‘আমার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে, আমি শুনিনি। সোমবার দেখা হবে।’
বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়ি পৌছে দেখি বাতি জ্বলছে। চাচা-চাচী ডেন-এ টিভি দেখছে। ডনের ঘরের বাতি নিভানো। ও হয়তো এখনও ফেরেনি, ভাবলাম।
কিন্তু ডেনে গিয়ে দেখি চাচা-চাচী-ডন মিলে ব্রিটিশ ইতিহাস বিষয়ে এক পাবলিক টিভি শো দেখছে।
‘তাড়াতাড়ি ফিরেছিস,’ চাচী বলল। ‘অন্যান্য দিন তো আরও আধ ঘণ্টা দেরি হয়।’
গভীর শ্বাস টানলাম।
‘চাচা, চাচী, তোমাদের সাথে কথা আছে। ডন এখানে থাকায় ভালই হলো। ব্যাপারটা ওকে নিয়েই।’
‘সিরিয়াস কথা মনে হচ্ছে,’ বলল চাচী। উঠে দাঁড়িয়ে টিভি অফ করে দিল।
‘আঙ্কল, আমরা একটা ভাল শো মিস করছি,’ বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ডন। আমার দিকে একবারও তাকায়নি ও।
‘কিশোর কী বলে শোনা যাক,’ চাচী বলল। সে আর চাচা দু’জনেই মুখ তুলে আমার দিকে চাইল। ডন একদৃষ্টে চেয়ে শূন্য টিভি পর্দার উদ্দেশে।
‘ডন, তুমি বলবে নাকি আমারই বলতে হবে?’ প্রশ্ন করলাম।
‘কী বলব, কিশোর ভাই?’ জবাব দিল ও, কৃত্রিম ব্রিটিশ উচ্চারণে। চাচা-চাচী কি বুঝতে পারছে না ওর সুর বদলে গেছে?
‘আজ রাতে মুভি থিয়েটারে কী করেছ বলো। তোমার বাঁশি নিয়ে, ‘ বললাম।
ডন হাসতে শুরু করল। জোরাল, আন্তরিক হাসি।
‘এত হাসির কী হলো?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘আরেকটু হলেই তো দাঙ্গা বাধতে যাচ্ছিল। তারপরও তুমি বলবে বাঁশিটা ভুতুড়ে না?’
‘আমি মুভি থিয়েটারে দাঙ্গা বাধাতে গেছিলাম? তুমি মনে হয় বাসি পপকর্ন খেয়েছ,’ জবাবে বলল ডন।
‘ও মনে হয় ঠিকই বলছে, কিশোর,’ চাচী বলল।
‘তার মানে?’ জবাব চাইলাম।
‘তার মানে ডন আজ সারা সন্ধে আমাদের সাথে টিভি দেখেছে, চাচা বলল। ‘একবারের জন্যও বাড়ি ছেড়ে বেরোয়নি।’
চাচা-চাচীর দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। তারা কি সিরিয়াস?
‘চাচা, চাচী, আমি ওকে মুভি থিয়েটারে দেখেছি। ও বাঁশিটা বাজাচ্ছিল। ও প্রায় মিনিট খানেকের জন্য পাগল করে দিয়েছিল দর্শকদের!’
পরস্পর মুখ তাকাতাকি করে নিল চাচা-চাচী। এবার চাচী এগিয়ে এসে আমার কাঁধে একটা হাত রাখল।
‘কিশোর, তুই গরম পানি দিয়ে গোসল করে নে। তা হলে রাতে ভাল ঘুম হবে। তোর ওপর দিয়ে আসলে খুব ধকল যাচ্ছে।’
‘আর উদ্ভট সিনেমাও বেশি বেশি দেখছিস,’ যোগ করল চাচা, টিভি অন করল। ডনের দিকে চাইলাম। মুচকি হাসল ও। শপথ করে বলতে পারি কোথায় যেন বাঁশি বেজে উঠল। নাকি হাসল ওটা?
আট
পরদিন রোদ ঝলমলে সকালে ঘুম ভাঙল। শনিবার। তারমানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলো, ভিডিও দেখা—এসব।
কিন্তু এই শনিবার নয়। আজ আমার মনে অন্য চিন্তা। আর কোন ঘটনা ঘটার আগেই বাঁশির ব্যাপারটা তলিয়ে দেখব আমি। আমার স্বার্থে। শহরের মানুষের স্বার্থে। এবং সর্বোপরি ডনের স্বার্থে।
বাঁশিটা সম্পর্কে কিছু জানতে হলে সেখানে যেতে হবে ওটা যেখান থেকে এসেছে। কাজেই নাস্তার পর বাইকে চেপে বসলাম।
‘বন্ধুদের কাছে যাচ্ছিস?’ চাচার প্রশ্ন। বাইরে ছিল সে, রেকিং করছিল। শরৎ আসছে, গাছের পাতা ঝরছে।
‘না, চাচা, একটা প্রজেক্টের জন্যে কিছু জিনিস দেখতে যাচ্ছি, ‘ বললাম। চাচা মাথা ঝাঁকিয়ে রেকিং করে চলল। হঠাৎই তীক্ষ্ণ এক সুর কানে বাজল।
ওপরতলার দিকে মুখ তুলে চাইলাম। ‘জানালায় ডন দাঁড়িয়ে। দু’হাতে বাঁশি। মৃত্যু মার্চের মত এক সুর বাজাতে লাগল ও। ওর চোখজোড়া যেন ভেদ করে গেল আমার চোখজোড়াকে।
আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। ব্যাক রোড দিয়ে প্যাডেল মেরে চেম্বার অভ কমার্স বিল্ডিঙের কাছে চলে এলাম। বাইক পার্ক করে, ভিতরে ঢুকলাম।
বিল্ডিংটা নির্জন আর অন্ধকারাচ্ছন্ন। মেইন ফ্লোরে ছোট্ট এক অফিস, আমরা যেখানে নিলামে এসেছিলাম। দরজায় টোকা দিলাম।
‘কাম ইন,’ গম্ভীর এক কণ্ঠস্বর বলল।
‘বিশাল ডেস্কের পিছনে ধূসর সোয়েটার আর নীল জিন্স পরা এক ভদ্রলোক বসা। বয়স প্রায় চাচার মত। কোঁকড়া গোঁফ। স্বল্পকেশ।
‘তোমার জন্যে আমি কী করতে পারি, বাছা?’ বলে লেখা থামিয়ে হাত থেকে কলমটা নামিয়ে রাখলেন।
‘আমি চাচা-চাচীর সাথে এখানে নিলামে এসেছিলাম,’ বললাম। ‘আমরা একটা বাঁশি কিনি। আপনি যদি ওটা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতেন।’
‘এক সেকেণ্ড,’ বললেন ভদ্রলোক। উঠে দাঁড়িয়ে এক ফাইল ক্যাবিনেটের কাছে হেঁটে গেলেন। একটা ফোল্ডার বের করে ফের ডেস্কে এসে বসলেন। ‘এতে সব আইটেমের লিস্ট আছে,’ জানালেন। ওটা পরখ করলেন। এবার ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে চাইলেন। ‘তুমি কি বাঁশির কথা বললে?’
‘জি, স্যর,’ বললাম, বুকের ভিতরে ধড়াস করে উঠল।
মাথা নাড়লেন ভদ্রলোক।
‘এখানে নেই। এখানে বিক্রি হওয়া জিনিসের কথাই শুধু লেখা আছে। কোন বাঁশির নিলাম হওয়ার কথা এতে নেই।’
নয়
এখন অবধি আমার ধারণা ছিল ব্যাপারটা স্রেফ আমার কল্পনা। মাফিন হয়তো কোন ইঁদুরকে তাড়া করেছিল। মুসা হয়তো ছুটে যাওয়ার আগে মাথায় আঘাত পেয়েছিল। গার্ডেনার আলফ্রেড হয়তো তার করাতের বিদ্যুতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। থিয়েটারের দর্শকরা অমন আচরণ করেছে হয়তো ভয়ের ছবি শুরু হবে বলে। আর ডনের মত বয়সে হয়তো সব ছেলে-মেয়েই ওর মত অদ্ভুত কথা বলে, অমন আচরণ করে।
আমি যখন এসব ভাবছিলাম তখন ডনের বাঁশি বাজানোটা ছিল নিছক কাকতালীয়।
কিন্তু এখন না। আমি চাচা-চাচীকে নিজ চোখে হল থেকে বাঁশিটা কিনতে দেখেছি। কাজেই এর যদি কোন রেকর্ড না থেকে থাকে তারমানে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। আর এর ফলে আরও বদ্ধপরিকর হলাম আমি, বাঁশিটা কোথা থেকে এসেছে জানতে হবে।
ভদ্রলোক জানালেন ডাউনটাউনে এক দোকান আছে। সেখান থেকে নিলামের অনেক জিনিস সরবরাহ করা হয়। দোকানের নামটা নিয়ে, বাইকে চেপে ডাউনটাউনের উদ্দেশে চললাম।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে রনসন’স অ্যান্টিকের সামনে পৌঁছে গেলাম। মেইন স্ট্রীটের পাশে ছোট এক দোকান। আগে কখনও চোখে পড়েনি, অথচ রকি বীচে এতদিন ধরে আছি।
দরজায় টোকা দিলাম। চারধারে দৃষ্টি বুলালাম। শনিবারের শান্ত এক সকাল। কাউকে চোখে পড়ছে না। খানিকটা নার্ভাস বোধ করছি। আচমকা দরজাটা খুলে গেল।
‘কী ব্যাপার বলো,’ নীল সুট পরা লম্বা, পাতলা এক ভদ্রলোক বললেন। চোখে তারের রিমের চশমা। মুখের চেহারা গম্ভীর।
‘আপনি কি মিস্টার রনসন?’
‘হ্যাঁ, তোমার নাম?’
‘কিশোর।’
‘তোমার জন্যে কী করতে পারি, কিশোর?’
‘আমি, মানে, ভিতরে আসতে পারি? একটু ঘুরে দেখতাম আরকী।’
ভদ্রলোক একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। আমার কথাকে গুরুত্ব দেবেন কিনা বুঝে উঠতে পারছেন না। অনুমান করলাম ছোটরা এখানে একাকী খুব একটা আসে না। দ্রুত চিন্তা করতে হবে আমার।
‘আমরা ক্লাসে আর্ট আর অ্যান্টিক নিয়ে পড়াশোনা করছি তো, তাই ভাবলাম আপনার এখানে একবার ঢুঁ মেরে যাই,’ ঝটপট বলে ফেললাম।
‘আমি আর্ট আর অ্যান্টিকে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হেল্প করতে পছন্দ করি,’ মি. রনসন বললেন। ‘ভেতরে এসো।’
স্টোরে ঢুকে চারপাশে চোখ বুলালাম। অদ্ভুতদর্শন সব জিনিসে ঠাসা দোকানটা। পেইণ্টিং। মূর্তি। প্রদীপ। অলঙ্কার। সব ধরনের বাক্স। মডেল ট্রেইন। এবং আমি চিনি না এমন অনেক কিছু।
‘তুমি কি বিশেষ কিছু দেখতে বা সে সম্পর্কে জানতে চাও?’ প্রশ্ন করে, দরজা লাগিয়ে দিলেন মি. রনসন। দরজা লেগে যেতেই ঘরটা আরও অন্ধকার আর ভুতুড়ে ঠেকল।
গলা খাঁকরে নিলাম।
‘আপনার কাছে কোন বাঁশি আছে?’ নিচু কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম। চোখ সরিয়ে নিলাম, যাতে উনি না বোঝেন আমি নার্ভাস। জবাবের জন্য অপেক্ষা করলাম। সাড়া মিলল না। উনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেদিকে চাইলাম। নেই!
দশ
‘তুমি যেতে পারো।’ মি. রনসনের গলা শোনা গেল। চরকির মত ঘুরে দাঁড়ালাম। সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি, পাল্লা খুলে ধরে আছেন। সূর্যের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো আমার।
‘কী?’ বললাম। ‘কেন?’
‘তুমি এখানে ঝামেলা করতে এসেছ। আমি ঝামেলা পছন্দ করি না। তুমি এখন যাও!’
‘ঠিক আছে, মানছি আমি সত্যি কথা বলিনি,’ স্বীকার করলাম। ‘আমি স্কুল প্রজেক্টের জন্যে এখানে আসিনি। এসেছি কিছু তথ্যের জন্যে। কিন্তু আমি ঝামেলা পাকাতে আসিনি। সত্যি বলছি।’
দ্বিধা করলেন মি. রনসন। এবার ধীরে ধীরে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। ঘরটা আবারও অন্ধকার হয়ে এল।
‘তা হলে বাঁশির কথা জানতে চাইলে কেন?’ আমাকে প্রশ্ন করলেন। তারপর কাউন্টারের পিছনে গিয়ে উঁচু এক সুইভেল চেয়ারে বসলেন।
‘কারণ আমার চাচা-চাচী চেম্বার অভ কমার্স থেকে একটা বাঁশি কিনেছে। আমার ধারণা ওটা এখান থেকেই গেছে।’
‘বাঁশিটার সমস্যা কী?’ প্রশ্ন এল। ভদ্রলোকের মুখের চেহারা এখন গম্ভীর আর কঠোর। চোখে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি।
‘প্রথম কথা বাঁশিটা কি আপনি নিলামে পাঠিয়েছিলেন? কারণ তাদের কাছে কোন রেকর্ড নেই।’
‘রেকর্ড নেই কারণ এটা বোঝাপড়ার ব্যাপার।’
‘মানে?’ জিজ্ঞেস করলাম। বুকের ভিতরে আবারও ধড়াস করে উঠল হৃৎপিণ্ড।
‘বাঁশির মালিকের আদেশ ছিল বাঁশিটা সম্পর্কে একশো বছর কোন কাগজ-পত্র মানুষকে দেখানো যাবে না। ফার্স্ট রকি বীচ ব্যাঙ্কের গোপন এক ভল্টে রাখা আছে কাগজগুলো। এবং পুরো একশো বছর থাকবে। বোঝা গেছে?’
একশো বছর! কী আছে ওসব কাগজপত্রে যেজন্য ওটার মালিক চায়নি একশো বছর মানুষ কিছু জানুক?
‘মনে হয় বুঝেছি। আপনার সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ।’
মি. রনসন কিছু বললেন না। সদর দরজার কাছে গিয়ে পাল্লা মেলে ধরলেন। আমি পা রাখলাম উজ্জ্বল দিনের আলোয়। এবার তিনি দরজা বন্ধ করলেন। লকের শব্দ শুনলাম।
মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটা দিলাম। মনের মধ্যে ঝড় বইছে। ফার্স্ট রকিবীচ ব্যাঙ্কের সামনে এ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমি। এত কাছে তবু কত দূর!
আজ শনিবার, কাজেই ব্যাঙ্ক বন্ধ। এত বিশাল ব্যাঙ্ক, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কারও পক্ষে ওখানে ঢোকা সম্ভব নয় যদি না… এবার মনে পড়ল মুসার কথা। ওর বাবা এই ব্যাঙ্কে চাকরি করেন!