৭. রাত্রি

৭. রাত্রি

পাহাড়ের ওপারে সূর্য সবে ঢলে পড়ছে। হঠাৎ গাঙচিলের চিৎকার ছাপিয়ে কানে এলো একটা তীক্ষ্ণ আওয়াজ। 

‘জো! কোথায় তুমি?’ 

গলাটা ছিল চাচী হেলেনের। সে নিচে বাগানে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে পাহাড়ের উপরে তাকিয়ে দেখতে পারে। সে জানে আমি প্রায়ই পাহাড়ের উপরে বসে আপন মনে নানান জিনিস নিয়ে ভাবি। 

‘আমাকে এক্ষুনি বাড়ির ভিতর যেতে হবে,’ আমি বলি। ‘আমার শোবার সময় হয়ে গেছে।’ 

‘লাফিয়ে উঠেই লাগাই ছুট। দৌড়াতে দৌড়াতে পেছনে মিকার গলা কানে আসে।’ 

‘হয়তো আমি এখনি জেগে উঠব।’ 

বাগানের রাস্তায় চাচীর সাথে দেখা হয়। বাবা আবার ফোন করেছে, বলেছে ছোট্ট মণির আগমন এখনও ঘটেনি। আমাকে খাবার খেয়ে বিছানায় যেতে হবে। 

যেতে যেতে মিকার কথা ভাবতে থাকি। ওকে ছেড়েই আমি দৌড়ে চলে এসেছি। সে এখন কোথায় থাকতে পারে? 

সে কি নিজেকে সামলাতে পারবে? এখনি জেগে উঠবে কথাটা দিয়েই বা সে কী বোঝাতে চাইল? 

শীগগীরই আমি বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার প্রস্তুতি নিতে থাকি। চাচী হেলেন শুভরাত্রি জানিয়ে সুইচ অফ করে চলে যায়। নিচতলায় নেমে সে সোফার ওপর ঘুমাবে। 

‘ভাব তো জো, তুমি যখন জেগে উঠবে তখন তোমার ভাই না হয় বোন এসে হাজির হয়েছে।’ 

এরপর আমি আমার ছোট্ট ভাইটির কথা ভাবতে থাকি। 

ভালো কথা, আমার অন্তত পৃথিবী নিয়ে কিছু কিছু ভাবার অভ্যাস তো হলো। আমি এমন এক ব্যক্তি যে তাকে বলতে পেরেছে কি করে সবকিছু অস্তিত্ববান হলো। 

মনে হয় কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হটাৎ কানে এলো আমার জানালায় ঠুকঠুক আওয়াজ হচ্ছে। ওটা ছিল মিকার কাজ। সে বহু কষ্টে ছাদের ওপর চড়তে সক্ষম হয়েছে। বিছানা থেকে ধড়মড় করে উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিলাম 

‘শ্‌শ্‌শ্‌!’ সাবধান করি ওকে। 

‘তুমি আমার সাথে বাইরে এসে চাঁদ দেখতে চাও?’ ফিসফিস করে বলে সে। 

আমার চিন্তা হলো চাচী বুঝিবা আমার ঘরে চলে আসে, তবে আমি জামা কাপড় জড়িয়ে নিয়ে পায়ে স্যাণ্ডেল পরে, জানালা গলিয়ে মিকার সাথে ছাদে চলে এলাম। সোজা গিয়ে চড়ে বসলাম ছাদের রেলিংয়ের ওপর। বাতাস হিমশীতল। কাজেই আমরা জড়াজড়ি করে বসলাম। 

চমৎকার উজ্জ্বল তারকাখচিত এক রাত। অতিরিক্ত উজ্জ্বল এক তারার দিকে মিকা আঙুল তুলে দেখায়। 

‘ঐ দেখছ তারাটা, হয়তো ওটাই আমার সূর্য,’ গম্ভীরভাবে বলে মিকা। 

‘নয়তো ঐটাও হতে পারে,’ আর একটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি, ‘মোট কথা তুমি তোমার গ্রহ থেকে উপর ঐ দিকে যাত্রা করে অবশেষে আমাদের গ্রহে এসে আছড়ে পড়েছ।’ 

ভাবনাটা কিছুতেই মাথা থেকে তাড়াতে পারছিলাম না যে মিকা একদিন ডিম ফুটে বের হয়েছিল। 

‘মিকা, কতদিন আগে তুমি তোমার গ্রহ এলিওতে ডিম থেকে গুড়ি মেরে বেরিয়ে এসেছিলে?’ 

উত্তরে সে বাউ করে। 

‘ঠিক এক বছর আগে।’ 

‘হ্যাপি বার্থডে,’ উচ্ছ্বাসভরে বলে উঠি আমি, ‘তবে আমার জন্ম আট বছর আগে, কাজেই আমি তোমার থেকে বয়সে বড়।’ 

‘এলিওর বছর তোমাদের বছরের চাইতে অনেক লম্বা,’ মিকা বলে। ‘এটা নির্ভর করে, কোনো একটা গ্রহ তার সূর্যের চারদিকে কত দ্রুত বা ধীরে পরিক্রমণ করে।’ 

‘সূর্যের চার দিকে ঘুরতে পৃথিবী সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা,’ আমি বলি। ‘কাজেই হিসাব মেলাতে প্রতি চার বছর পর পর অতিরিক্ত একদিন যোগ করতে হয়। আমি জানতাম অন্য কোনো গ্রহে দিন অনেক দীর্ঘ বা হ্রস্ব হতে পারে।’ 

‘আমাদের দিন তোমাদের চাইতে অনেক লম্বা,’ মিকা বলে, মাত্র অল্পক্ষণ আগে, তোমাদের এখানে আমাদের নতুন দিনের সূর্যোদয় ঘটেছে, আর এখন আবার রাত।’ 

‘দিনরাত মিলে ২৪ ঘণ্টা, কারণ একবার পাক খেতে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে,’ আমি ব্যাখ্যা করে বোঝাই। 

‘ঘণ্টা কী জিনিস?’ মিকা জানতে চায়। 

হঠাৎ করেই মাথায় ঢোকে যে ঘণ্টা জিনিসটা আমাদের গ্রহে আমরা নিজেরাই আবিষ্কার করেছি। আমরা প্রত্যেকটা দিনকে ১০ ঘণ্টায় ধরতে পারতাম আর প্রত্যেক ঘণ্টাকে ১০০ ভাগে ভাগ করতে পারতাম। 

‘আমরা প্রতিটি দিনকে ২৪ ভাগে ভাগ করেছি,’ আমি বললাম, তারপর প্রত্যেক ঘণ্টায় রাখা হয়েছে ৬০ মিনিট, আবার প্রত্যেক মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়েছে। 

‘বুঝতে পারছি,’ মিকা জিজ্ঞেস করে, ও খুব মন দিয়ে আমার কথা শুনছিল। ‘আর এক একটা সেকেণ্ড কতটুকু লম্বা?’ 

এক… দুই… তিন…। আমি গননা করতে থাকি, এক একটা সংখ্যা গুনতে আমার সময় লাগছে এক সেকেণ্ড করে। 

মিকা তার আঙুল ছড়িয়ে দিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। বুঝতে পারি সে কী যেন হিসেব নিকেশ করছে। অবশেষে ও বলে। 

‘সেই হিসাবে আমাদের গ্রহে তোমার বয়স হবে এক বছর আট দিন।’ 

তাহলে মিকার চাইতে আমি মাত্র আট দিনের বড়। শেষের হিসাবটা আমার কাছে সোজা মনে হলো। রাতের আকাশে তারাগুলো সূচের মতো ঝিকমিক করছে। 

‘তুমি এখানে এলে কেন?’ এবার মিকাকে প্রশ্ন করি। 

‘তোমার সাথে দেখা করতে। তুমি নিশ্চয়ই বিশ্বাস কর না, যে সময় তুমি তোমার ছোট্ট ভাইয়ের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছ তখন হঠাৎ করেই তোমার বাগানে এসে পড়েছি?’ 

প্রশ্নটাকে বেশ মোক্ষম বলেই মনে হলো, তাই একটা লম্বা বাউ লাগালাম। তবু কি যেন একটা আছে যা ঠিক মতো খাপ খাচ্ছে না। 

‘তবু এর সবটাই একটা স্বপ্ন,’ মিকা বলে। 

‘কোনটা?’ 

সে বসে বসে আঙুল দোলাতে দোলাতে জবাব দেয় : 

‘আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমার মহাকাশ যান নিয়ে আমি শূন্যে উড়ে উঠলাম। দীর্ঘ সময় ধরে আমার চোখে পড়ল শুধু নক্ষত্র আব ছায়াপথ। মাঝে মাঝে দেখা মিলল দুএকটা ধূমকেতুর সঙ্গে। তারপর একদিন ঢুকে পড়লাম সৌরমণ্ডলে। প্রথমে উড়ে এলাম সৌরমণ্ডলের বাইরের কিনারায় এক ছোট্ট শীতল গ্রহের কাছে। তরপর একটা বড় গ্রহ যার রয়েছে অনেক উপগ্রহ আর বলয়, তার পাশ দিয়ে উড়ে এলাম। ঠিক তখনই চোখে পড়ল মুক্তার মতো ঝকঝকে সবুজ নীল এক গ্রহের দিকে। এটা আমাকে প্রবল আকর্ষণে টানল। অবাক হয়ে ভাবলাম এতে কি জীবন থাকতে পারে।’ 

 ‘এটাই আমাদের পৃথিবী,’ আমি বললাম। ‘আর এটা কোনো স্বপ্ন নয়।

এটা কোনো স্বপ্ন নয়। 

সে মাথা ঝাঁকায়। 

‘তা নয়, আমি ভাবলাম আমি স্বপ্ন দেখছি, কৌতূহলী হয়ে স্পেসশিপের হ্যাচ খুলে দিলাম। ‘বাঁচাও,’ রাতের অন্ধকারে চিৎকার করলাম, ‘কোথাও আছ কি কেউ, নাকি সবকিছু ফাঁকা, পরিত্যক্ত?’ 

দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করলাম আমি। ‘আর পরমুহূর্তেই হ্যাচ হোল দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে আছড়ে পড়লাম এক অদ্ভুত গ্রহের পৃষ্ঠে। ‘বাঁচাও’ চিৎকার করতে থাকি আমি। যদিও জানতাম আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই এখানে। ‘আমি পড়ে যাচ্ছি!’ 

‘নিশ্চয়ই দারুন ভয় পেয়ে গিয়েছিলে তুমি!’ আবেগ ভরা কণ্ঠে বলে উঠি আমি। 

সে মাথা দোলায়। 

‘আর অল্পক্ষণ পরেই মাটি থেকে বেশ উঁচুতে একটা আপেল গাছের ডালে লটকে আছি। আর অবশিষ্ট গল্পটা তোমার জানা।’ 

এ পর্যন্ত সে সঠিক কথাই বলেছে। এসব আমি নিজের চোখেই দেখেছি। 

‘আমি সব সময় জেনে এসেছি এটা একটা স্বপ্ন,’ মিকা বলে, ‘তবে স্বপ্নটা এখনও বহাল আছে।’

‘তুমি হয়তো এমন স্বপ্নও দেখেছ যে তুমি ডিম থেকে বেরিয়ে আসছ,’ আমি যোগ করি। 

সে মাথা ঝাঁকায়। 

এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ‘আমরা দুজনে এখানে বসে বসে তারা দেখছি, এটা যেমন নিশ্চিত।’ 

‘কিন্তু এই গ্রহে তোমার যাত্রাটা যদি একটা স্বপ্ন হয়ে থাকে, তাহলে আমরা এখানে একত্রে বসে বসে গল্প করছি, এটাও একটা স্বপ্ন।’ 

মিকা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। ‘প্রত্যেক গ্রহের দুটি পার্শ্ব আছে, উভয় পার্শ্বে একই সাথে সূর্যের আলো পড়ে না। স্বপ্নের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে। যে মানুষটি স্বপ্ন দেখে আর যে মানুষটাকে স্বপ্নে দেখা হয়, তারা একই সাথে ঘুমায় না বা জেগেও উঠে না।’ 

‘সেই ক্ষেত্রে আমার অবাক লাগছে আমাদের দুজনের মধ্যে কে স্বপ্ন দেখছি,’ আমি বললাম। 

‘এতে খুব একটা তফাৎ হয় না,’ সে বলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ঐ পাহাড়ের চূড়ায় আমাদের পরস্পরের মিলিত হওয়া। লোকে ওখানে হরহামেশা যাতায়াত করে না।’ 

‘কিন্তু আমি যদি তোমাকে স্বপ্নে দেখছি,’ আমি বললাম, ‘তাহলে আমার স্বপ্ন দেখার আগে তোমার অস্তিত্বই ছিল না। আর আমার জেগে ওঠার সাথে সাথে তুমি গায়েব হয়ে যাবে।’

‘তুমি কি করে বুঝলে যে তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যে আমাকে স্বপ্নে দেখছে?’ মিকা প্রশ্ন রাখে আর কি করেই বা নিশ্চিত হলে যে তুমি আবারো আমাকে স্বপ্নে দেখবে না?’ 

ওর প্রশ্নগুলি যেন গুলির মতো এসে আমার বুকে বিঁধল। শুধু মাথা ঝাঁকানো ছাড়া আমার আর কিছুই করার রইল না, এমনকি উত্তর দেয়ার কোনো চেষ্টাই করলাম না। আমরা যা কিছু বলছিলাম, মিকার প্রশ্ন যেন তাতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করল। 

কেবল এখনই বুঝতে পারলাম আমি শীতে কাঁপছি। হাই তুলতেও শুরু করেছি। তবে মিকার সঙ্গ ছাড়তেও ইচ্ছা হচ্ছে না। ‘আমার একটা পরিকল্পনা আছে,’ আমি বলি। 

‘তোমার আছে একটা গোটা গ্রহ,’ মিকা বলে, ওর মুখমণ্ডলে অদ্ভুত একটা শূন্য অভিব্যক্তি। 

‘আমি বলতে চাই আমার একটা ভালো পরিকল্পনা আছে,’ আমি ব্যাখ্যা করে বোঝাই। 

এবার আমারই আঙুল নাচাবার পালা- 

‘তুমি ভাগ্যবান। 

আমি উদ্বেগ বোধ করলাম, এবার না সে জেগে ওঠা শুরু করে। যদি তেমনটা হয় তাহলে সে তো আমার চোখের সামনেই মিশে যাবে। 

আমার ভাবনাটা ওর সাথে ভাগ করে নেয়ার তাগিদ বোধ করলাম। 

‘আজ রাতে তুমি আমার বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে পার,’ আমি বললাম। 

মনে হলো আমার প্রস্তাবে ও খুশী হয়েছে। দয়া সহমর্মিতা এগুলো মহাবিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তেই জনপ্রিয় ধারণা। 

তবে ওর উত্তরের মধ্যে কিছুটা বিষাদের সুরও ছিল। 

‘বেশ, অন্তত তোমার রুমে তোমার সাথে ঢুকতে তো পারব।’ ঝটপট আমরা জানালা গলিয়ে মেঝের ওপরে লাফিয়ে পড়লাম। 

‘এমন সুন্দর একটা বাড়িতে বাস করা নিশ্চয়ই দারুন আনন্দের,’ সে বলে। 

সে ঘরের চারপাশে এমনভাবে তাকায় যেন প্রথম আর শেষবারের মতো ঘরটা দেখে নিচ্ছে। তার পর মুখ খোলে : 

‘আমি নিশ্চিত একটা ছোট্ট ভাই পাওয়াটাও দারুন মজার।’ 

আমার বিছানার পায়ের দিকে একটা কম্বল ছিল, শীত বেশি হলে সেটা আমার পালকের লেপের উপর তুলে দিতাম। 

আমার বিছানার নিচে মেঝের ওপর ওটা বিছিয়ে দিলাম। 

‘তুমি এখানে ঘুমুতে পার,’ আমি বললাম, ‘তবে তোমাকে অবশ্যই প্রতিজ্ঞা করতে হবে চাচী ঘরে ঢুকলে ইঁদুরের মতো চুপটি করে পড়ে থাকবে।’ 

সে আমার গ্লোবটা ঘোরাতে শুরু করে। ঘূর্ণনটাকে সে দ্রুত থেকে দ্রুততর করতে থাকে। 

‘আমি কোনো শব্দ করব না,’ সে বলে। 

‘তুমি কি জান আমাদের দেখা হওয়ার ১২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, ‘ আমি বলি। 

‘মাত্র কয়েক মিনিট আগে,’ সে বলে। 

‘আমার কাছে মনে হয় ঘণ্টার পর ঘন্টা পার হয়ে গেছে,’ আমি বলি। কাল সকালে যখন জেগে উঠব, তখন পুরো একটা দিন। হঠাৎ একটা আঙুল ঠেকিয়ে সে গ্লোবটার ঘূর্ণন থামিয়ে দেয়। 

আমার দিকে তাকিয়ে আগ্রহভরে বলে : 

‘ভ্রমণ তোমাকে পৃথিবীতে দূর থেকে দূরে নিয়ে যায়। স্বপ্ন তোমাকে নিকটবর্তী করে দেয়, তবে হয়তো আমরা এক সময়ে একাধিক দিকে চলতে পারি না।’ 

কয়েকটা কথা আমি সময় সময় মনে রাখি। বহির্বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আমার বিস্ময় কখনও শেষ হয়ে যায় না। তবে আর একটা ব্যাপারেও আমার বিস্ময় এখনও শেষ হয় না যে আমাদের একটা মন আছে আর মস্তিষ্ক আছে যা আমাকে আপন ভুবনের মাঝে ধরে রাখে।

মিকা গুড়ি মেরে বিছানার নিচে ঢুকে কম্বলের ওপর শুয়ে পড়ে।

‘শুভরাত্রি,’ আমি বলি। 

‘অথবা সুপ্রভাত,’ সে উত্তর দেয়। ভুলে যেও না পৃথিবী ঘুরছে আর ঘুরছে। 

বালিশে মাথা রাখলাম। হঠাৎ শুনলাম আমার কানের কাছে একটা কণ্ঠস্বর ফিসফিস করছে। 

‘আমাদের মতো প্রাণীর সৃষ্টি হতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর পেরিয়ে গেছে, যারা ভাবতে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে, স্মরণ করতে পারে, ভুলে যেতে পারে, কণ্ঠস্বর বলে। গোটা পৃথিবী আমাদের জন্যই অপেক্ষা করে আছে।’ 

এ কথাগুলিই ছিল মিকার শেষ কথা। সে নিশ্চয়ই গুড়ি মেরে বিছানার নিচে চলে গিয়েছিল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গিয়েছিলাম। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *