২. বাগানে

২. বাগানে 

আমার বেশ মনে আছে, আমার ঘরে গিয়ে জানালার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ি। দীর্ঘক্ষণ বসে বসে তারা দেখি। অবাক লাগে ওগুলোর মধ্যে কি এমন কোনো গ্রহ থাকতে পারে যাতে প্রাণ আছে, নাকি সমগ্র মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবীই এমন একমাত্র গ্রহ। যেমন বাড়িতে আমিই একমাত্র প্রাণী, যা অত্যন্ত বিষাদময়। বসে থাকতে থাকতে দূরে সমুদ্রের খাড়িতে যেখানে আমরা নৌকা বেঁধে রেখেছি, সেখান থেকে ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ভেসে আসছে। 

অন্ধকারকে আমি ভয় পাচ্ছিলাম না। আমার মাথায় মহাশূন্যের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, কারণ আমি মহাশূন্যযান বা চন্দ্রতরী বানাতাম। ঠিক তখনই এমন কিছু ঘটল, যাতে আমি চমকে লাফিয়ে উঠলাম। হঠাৎ একটা উল্কা ছুটে গেল আকাশের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। উল্কাটা এত কাছে যেন আমার সামনে বাগানেই ওটা পড়ে গেল, শুনেছি আকাশে যতবার উল্কাপাত হয়, ততবারই একটা সস্তান ভূমিষ্ঠ হয়। হয়তো এই উল্কাটা আমারই ক্ষুদে ভাইটির জন্য। 

এরপর ঠিক কী ঘটল আমার মনে নাই, তবে হঠাৎ মনে হলো বাগানে কীসের যেন নড়াচড়া। দুই এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো বাবা- মা হয়তো আমার ক্ষুদে ভাইটিকে নিয়ে ফিরে এসেছে। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অবাক হয়ে দেখলাম একটা ছোট্ট ছেলে আমাদের আপেল গাছের ডালে উল্টা হয়ে লটকে আছে। ও ছিল মিকা। 

অনেক পরে বুঝতে পারি কতটা ভাগ্যবান ছিল সে। শুধু যে আপেল গাছে পড়েছিল তাই না, ওর প্যান্টও গাছের ডালে আটকে গিয়েছিল আর উল্টা হয়ে ঝুলছিল ও। ও যদি মা’র গোলাপের বীজতলায় এসে পড়ত তাহলে নিশ্চয়ই দারুণ আঘাত পেত। 

আমি দ্রুত বেগে সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাগানের দিকে ছুটে গেলাম সোজা আপেল গাছটার দিকে, যেখানে ছেলেটা ঝুলে আছে। ‘নিশ্চয়ই এটা স্বপ্ন!’ ছেলেটা বলে। এটাই ছিল তার প্রথম কথা। কথাটা অদ্ভুত শোনাল, কারণ আমিও পুরোপুরি জেগে আছি। ‘ছেলেটা তোমার বা আমার মতো নয়, ক্যামিলা। তার চোখ, মুখ, কান দেখে মনে হলো, সে আশপাশের কেউ নয়। তবে তখনও জানতাম না সে মহাশূন্য থেকে এসেছে। সে ইংরেজি বলতে পারছে দেখে মোটেই অবাক হলাম না। যখন একটা জীবন্ত ছেলে আকাশ থেকে পড়ে তখন সে কোন্ ভাষায় কথা বলে তাতে কিছু এসে যায় না। মোটে সে কথা বলতে পারে এটাই আশ্চর্যের বিষয়। 

‘এটা অবশ্য স্বপ্ন,’ ছেলেটা আবারো বলে। ইতিমধ্যে আমার মাথায় নানান ধরনের ভাবনা দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে। 

গাছে ঝুলে থাকা ছেলেটা আসলে কে? আর পুরো ব্যাপারটা যদি স্বপ্নই হয়ে থাকে তাহলে স্বপ্নটা কার, ওটা কি তার না আমার? আর স্বপ্নটা যদি ওর হয়ে থাকে তাহলে আমি কীভাবে সম্পূর্ণ জেগে রয়েছি? সে এখনও গাছের ডালে ঝুলেই আছে, আর একটু একটু ঘুরছে, আর আমার মাথাও সেই সাথে পাক খাচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম না কী বলব, তবে মনে পড়ে জানালা দিয়ে আকাশের তারার দিকে চেয়ে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিলাম। ভাবছিলাম আমার বেলায় কেন যেন সবকিছু ম্যাড়মেড়ে আর পর মুহূর্তেই দেখলাম গাছের ডালে ঝুলছে একটা ছেলে। সব ইচ্ছা এত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নেয় না। 

‘তুমি কে?’ সে জিজ্ঞেস করে।

‘আমার নাম জো,’ আমি বলি। 

‘আর আমি মিকা। তুমি উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’

আমি না হেসে পারলাম না। হঠাৎ সে একটা বুড়ো আঙুল মুখে পুরে বাচ্চাদের মতো চুষতে থাকে। হয়তো সে বিব্রত বোধ করছে। 

‘আসলে তুমি নিজেই উল্টো হয়ে ঝুলে রয়েছ,’ আমি বলি। 

মিকা মুখ থেকে ওর আঙুল টেনে বের করে, ওর সবগুলো আঙুল ঢেউ খেলতে থাকে ‘যখন দুজন লোকের সাক্ষাৎ হয় আর তাদের একজন উল্টো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কে ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বোঝার একটা সহজ উপায় আছে।’ 

ওর কথায় এমন হতবুদ্ধি লাগে যে আমার মুখে কথা জোগায় না। 

মিকা আঙুল দিয়ে মাটির দিকে দেখায়। সে যাই হোক, ভালো হয়, যদি তুমি এই গ্রহের বুকে ঠিকভাবে দাঁড়াতে সাহায্য কর। 

‘নিচে নাম!’ আমি বলি। 

‘না, উপরে,’ মিকা বলে। 

‘আমি চালাঘরে গিয়ে মা যে বড় কাঁচিটা দিয়ে গোলাপ গাছ ছাটাই করে সেটা নিয়ে আসি আর দুধ বয়ে নিয়ে যাবার ঝুড়িটা নিচে পেতে দিয়ে তার ওপর চড়ে বসি, তারপর কাচি দিয়ে কেটে মিকাকে নিচে নামাই, কিছুক্ষণ সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হাতের সাহায্য ছাড়াই মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। ওর চোখ চারদিকে পাক খাচ্ছে, এপাশ ওপাশ করছে। আমার মনে হয় সে চেষ্টা করছে চারপাশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে। তারপর সে ওপরে আকাশ দেখতে পেল। আর তখনই কেবল ওর পাগুলো নিচে নামিয়ে আনল। হাঁটুতে ভর দিয়ে কিছুক্ষণ হামাগুড়ি দিয়ে রইল, তারপর আস্তে আস্তে পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। 

‘তুমি কোথা থেকে আসছ?’ আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম। 

‘আমি ছিলাম একটা মহাশূন্যযানে,’ মিকা বলে। ‘দেখলাম আমরা একটা গ্রহের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। যেখানে জীবন্ত প্রাণী রয়েছে, কৌতূহল বশত: একটা হ্যাচ খুলে নিচে তাকাতে গিয়ে যান থেকে পড়ে যাই,’ সে আঙুল তুলে ঘাসের দিকে দেখিয়ে দেয়। 

‘আমি ভাবলাম এটা ওপর দিক,’ ও বলে। তারপর আকাশের দিকে আঙুল তোলে। ‘আর ভাবলাম ওটা নিচের দিক।’ সে চারপাশে আঙুল ঘোরায়। ‘আমি জানতাম আমি আমার গ্রহ থেকে ওপর দিকে রওনা দিই, আর তার মাথা নিচ দিকে করে পর মাথা 

তোমাদের গ্রহে পড়ে যাই,’ সে বলে। শেষ পর্যন্ত ও চাঁদের দিকে আঙুল তোলে, ‘দেখছ, তোমাদের গ্রহের একটা চাঁদও আছে, ‘তুমি যখন ওখানে যাও, তখন তুমি উপর দিকে যাও না নিচ থেকে যাও?’ 

‘উপর দিকে,’ আমি বলি। 

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে চাঁদে প্রথম মানুষ অবতরণ করেছে, কাজেই আমার জানা আছে আমি কী নিয়ে কথা বলছি। 

মিকা আবার ওর বুড়ো আঙুল মুখে পুরে। আঙুলটা মুখ থেকে বের করে নিয়ে আর একটা প্রশ্ন করে। 

‘কিন্তু তোমরা যখন চাঁদে অবতরণ কর তখন কি চাঁদের দিকে নাম না?’ 

আমাকে এবার সতর্ক হয়ে ভাবতে হলো। আমি মাথা দোলাই। ‘হ্যাঁ, তাই বটে।’ 

‘আর সেখান থেকে তোমাদের গ্রহের দিকে যখন দেখ, তখন কি ওপর দিকে দেখ না।’ আমি নিজে কখনও চাঁদে যাই নাই, তবে টেলিভিশনে চাঁদে অবতরণের ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। আবারো মাথা দোলাই। তাহলে এই গ্রহ আর চাঁদে অবতরণের ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। আবারো মাথা দোলাই। ‘তাহলে এই গ্রহ আর চাঁদের মাঝামাঝি কোনো এক জায়গায় নিচ হয়ে যায় উপর আর উপর হয়ে যায় নিচ?’ 

এ নিয়ে আমি অনেক ভাবলাম। কথাটা ঠিক বলেই মনে হলো।

‘হ্যাঁ বটেই তো,’ আমারও ধারণা এমনটাই তো হওয়ার কথা’ আমি মেনে নেই। 

‘আমার মনে হয় আমি সঠিক জায়গাটা জানি, যেখানে এই পরিবর্তন ঘটে,’ বেশ গম্ভীর হয়ে বলে মিকা। 

সহসা সে বাগানের মধ্যে ক্যাঙারুর মতো লাফাতে শুরু করে। প্রথমে হালকাভাবে লাফায়, তারপর তার লম্ফঝম্ফ উঁচুতে উঠতে থাকে।

‘তোমাদের গ্রহটা আমাদেরটার মতো তত বড় হতে পারে না,’ সে বলে। এর মাধ্যাকর্ষণ তত শক্তিশালী নয়।’ 

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। 

‘মাধ্যাকর্ষণ কী তা কি তুমি জান না?’ মিকা বলে চলে, ‘এটা এক অদৃশ্য শক্তি যা তোমাকে আর সবকিছুকে গ্রহের পৃষ্ঠের দিকে টানে, সে তুমি যেখানেই থাক না কেন। যদি মাধ্যাকর্ষণ না থাকত, তাহলে সবকিছু গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে খসে পড়ে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ত। তোমাদের গ্রহে আমি আমাদের গ্রহের তুলনায় দ্বিগুণ উচ্চতায় লাফাতে পারছি, কারণ এখানে মাধ্যাকর্ষণ তুলনামূলকভাবে কম। তুমি যদি আমার গ্রহে যেতে তাহলে একদম লাফাতেই পারতে না।’ 

শুধু আর এক গ্রহ থেকে এসেছে বলেই সে আমার চাইতে বেশি উঁচুতে লাফাবে, এটা আমার ভালো লাগল না। তবে ব্যাপারটা আমার চিন্তার খোরাক যোগাল। আমি চাঁদে মানুষদের লাফাতে দেখেছি। এমন কি ভারি স্পেস স্যুট পরেও তারা আমাদের চাইতে অনেক বেশি দূর লাফিয়েছে। এর অর্থ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর চাইতে অনেক কম, আর মিকার গ্রহের চাইতে তো অনেক অনেক কম। মাধ্যাকর্ষণ শেষ করেই মিকা হামাগুড়ি দিয়ে বসে ঘাস পরীক্ষা করতে থাকে। সে ঘাসের গন্ধ শোঁকে, কয়েক গাছা তুলে নিয়ে মুখে পোরে। আবার তাড়াতাড়ি থুতু করে ফেলে দেয়। 

‘তোমার ঘাস খাওয়া উচিত নয়। এর স্বাদ ভালো নয়,’ আমি বলি।

সে আরো কয়েকবার থুতু ছিটায়। ওর জন্য আমার একটু দুঃখ হয়। অন্য গ্রহ থেকে এত দূরের পথ অতিক্রম করে আসার ফলে নিশ্চয়ই ওর দারুণ ক্ষুধা পেয়েছে। কাজেই আমি আপেল গাছটার দিকে ছুটে গিয়ে তলা থেকে একটা আপেল কুড়িয়ে আনি। আমি ভাবলাম আমার গ্রহের পক্ষ থেকে ওকে একটু স্বাগত জানান দরকার। 

সবুজ ফলটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম, ‘একটু আপেল খেয়ে দেখতে পার। আমি নিশ্চয় করে বলতে পারি, জীবনে সে প্রথমবারের মতো আপেল দেখতে পাচ্ছে। প্রথমে সে শুধু শুঁকে দেখল, তারপর সাহস করে ছোট্ট এক কামড় লাগায়। 

‘ইয়াম, ইয়াম,’ শব্দ করে ও। তার পর আরো বড় এক কামড়। 

‘তোমার ভালো লাগছে?’ আমি জিজ্ঞেস করি। 

সে লম্বা কুর্নিশ করে। 

‘এটার স্বাদ কেমন লাগল!’ জিজ্ঞেস করি, জানতে চেয়েছি প্রথম বার আপেল খেয়ে কি মনে হলো। 

সে বেশ কবার কুর্নিশ করে, ‘তুমি কুর্নিশ করছ কেন?’ আমি জিজ্ঞেস করি। 

‘আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানকার নিয়ম হলো কেউ মজাদার প্রশ্ন করলে কুর্নিশ করা,’ মিকা ব্যাখ্যা করে। প্রশ্নটা যত ওজনদার, কুর্নিশও তেমন গভীর। এরচেয়ে বোকার মতো কথা আমি জীবনে শুনিনি। আমি বুঝতে পারি না কোন্ প্রশ্নের উত্তর কিভাবে কুর্নিশ হতে পারে। ‘তাহলে প্রথম দেখায় তোমরা পরস্পরকে কিভাবে সম্ভাষণ কর?’ আমি জিজ্ঞেস করি। 

‘আমরা একটা সুচতুর প্রশ্ন ভাবি,’ সে উত্তর করে। 

‘কেন?’ 

আমি আর একটা প্রশ্ন করেছি, তাই সে চট করে আর একটা কুর্নিশ করে। তারপর বলে, ‘আমরা একটা বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন করি যাতে অন্য পক্ষও কুর্নিশ করে।’ 

উত্তরটা আমার বেশ মনে ধরে যে আমি বেশ নিচু হয়ে কুর্নিশ করি। এর পর মুখ তুলে তাকাতেই দেখি মিকা ওর বুড়ো আঙুল চুষছে। আঙুলটা মুখ থেকে বের করতে ওর অনেকটা সময় কেটে গেল। ‘তুমি কেন কুর্নিশ করলে?’ ও একটু আহত কণ্ঠে প্রশ্ন করে। 

‘কারণ তুমি আমার প্রশ্নের এত সুচতুর উত্তর দিয়েছ, তাই,’ আমি জবাব দেই। 

‘কিন্তু উত্তর তো, কুর্নিশ পাবার যোগ্য নয়।’ মিকা বলল, ‘এমনকি সেটা যদি চতুর আর নির্ভুলও হয়, তাহলে তুমি কুর্নিশ করতে পার না।’ 

আমি মাথা দুলিয়ে সায় দেই, তবে তৎক্ষণাৎ একটু সংকোচবোধ ও হয়, কারণ মিকা এটাকে আবার কুর্নিশ মনে করে কিনা। ‘যখন তুমি কুর্নিশ করছ, তখন তুমি হার মেনে নিচ্ছ,’ মিকা বলে চলে, প্রশ্নের উত্তরের কাছে তুমি হার স্বীকার করতে পার না।’ 

‘কেন নয়?’ 

‘কারণ উত্তর হলো তোমার পেছনে ফেলে আসা পায়ের নিশানা। একমাত্র প্রশ্নই হলো সামনে এগিয়ে যাবার ইঙ্গিত,’ তার উত্তরটা এতই বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ছিল যে আমি কুর্নিশ করা কোনোমতে সামলে নিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন দিনের সূর্যোদয় হলো। মিকা আমার জাম্পার ধরে টান দিয়ে গোলাকার সূর্যটার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়। 

‘ঐ নক্ষত্রটার নাম কি?’ সে জিজ্ঞেস করে। 

‘ওটা সূর্য,’ আমি উত্তর দেই। 

মিকা ওর আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে সূর্যের দিকে ঝাঁকাতে থাকে। 

‘তবে এটা তো একটা তারাই,’ সে বলে। 

‘প্রত্যেক সূর্যই একটা তারা, আর সব তারাই এক একটা সূর্য। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে প্রত্যেক তারার চারপাশে প্রদক্ষিণরত গ্রহ নাই, আর গ্রহ থাকলেও হয়তো সেই তারার দিকে চোখ মেলে তাকাবার মতো প্রাণী নাই, অথবা সেই তারাকে সূর্য বলে অভিহিত করার মত বুদ্ধিমান প্রানী নাই। 

আমি বুঝতে পারি মিকা ঠিক কথাই বলেছে, আমিও চাইলাম কোনো সুচতুর কথা বলতে, ‘কোনো তারার যদি গ্রহ না থাকে, তাহলে সেই নক্ষত্র নিশ্চয়ই নিঃসঙ্গ। কারণ যদি কোনো গ্রহই না থাকল তাহলে প্রতি প্রভাতে সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য দেখারও কেউ থাকবে না।

‘তুমি অবশ্য তাকিয়ে দেখতে পার,’ মিকা বলে। 

‘আমি!’ 

‘হ্যাঁ, একটা নতুন রাতে যখন আকাশে একটা নিঃসঙ্গ তারার উদয় হয়, তখন তুমিও তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পার। রাতের আঁধার যত গাঢ়, তারার সংখ্যাও তত বেশি, দিনের বেলা শুধু আমাদের নিজেরটাই নজরে আসে।’ 

এমনটাই ছিল মিকার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। গভীর চিন্তায় পড়লে সে আঙুল চোষে, আর কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে চাইলে হাতের আঙুল ছড়িয়ে হাত ঝাঁকায় যেন পাখার বাতাস করছে। 

ভালো কোনো প্রশ্ন করলেই সে মাথা নত করে কুর্নিশ করেছে। আর আমি উত্তর দেয়ার সময় মনোযোগ সহকারে শুনেছে, যাতে সেও প্রশ্ন করতে পারে। 

একটা টেলিফোন বাজার আগ পর্যন্ত ওকে মুখ ভার করতে দেখিনি… 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *