২. ষষ্ঠীপুজোর দিন হাওড়া স্টেশনে

০২.

ষষ্ঠীপুজোর দিন হাওড়া স্টেশনে পা দেয়, কার সাধ্য। ভিড়ে-ভিড়াক্কার, থিকথিক করছে মানুষ। রাশি রাশি মালপত্র। পায়ে-পায়ে কুলি। হাজার কয়েক লোক একই সঙ্গে কথা বলছে, চেঁচাচ্ছে, দৌড়ঝাঁপ করছে। দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়।

কিকিরা বুদ্ধি করে প্যাসেঞ্জারের টিকিট কিনেছিলেন। রাত্রের দিকে প্রায় শেষ ট্রেন। যারা যাবার তারা মেলে, এক্সপ্রেসে, পূজা স্পেশ্যালে চলে যাবার পর ঝড়তি-পড়তি ভিড়টা পড়ে ছিল মোগলসরাই প্যাসেঞ্জারের জন্যে। মামুলি যাত্রী ছাড়া এ-গাড়িতে কেউ চড়ে না। তবু ভিড় কম হল না।

একেবারে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কিনেছিলেন কিকিরা। একটু আরামে যেতে চান আর কী! বললেন, “ক ঘণ্টার নবাবি করে নিচ্ছি, বুঝলে তো, তারাপদ। প্যাসেঞ্জারের ফার্স্ট ক্লাস–তাও কালীপাহাড়ি পর্যন্ত। আমাদের মতন বাবুর এইটুকুই দৌড়।”

চার বার্থের কামরা। কিকিরা আর তারাপদ ছাড়া অন্য দুজনই অবাঙালি। একজন হলেন, বিশাল চেহারার এক পঞ্জাবি ভদ্রলোক, যাবেন বর্ধমান পর্যন্ত। অন্যজন বোধহয় আসানসোলের কোনো ব্যবসাদার, প্রচুর লটবহর নিয়ে উঠেছেন গাড়িতে, মারোয়াড়ি। কিকিরার সঙ্গে মালপত্র তেমন বেশি না হলেও একটা বড়সড় ট্রাংক রয়েছে।

গাড়ি ছাড়ার পর বিশাল চেহারার পঞ্জাবি ভদ্রলোক সটান শুয়ে পড়লেন, সঙ্গে একটা অ্যাটাচি ছাড়া কিছু নেই। মারোয়াড়ি ভদ্রলোক গন্ধমাদন নিচে রেখে, ওপরে বসলেন, পা ঝুলিয়ে। সামান্য আলাপ-পরিচয়ের চেষ্টাও করলেন, কিকিরা তেমন উৎসাহ দেখালেন না।

ঘেমে প্রায় নেয়ে উঠেছিল তারাপদ। হাতমুখে জল দিয়ে এসে রুমাল ঘাড় গলা মুছে জলের বোতল খুলে জল খেল।

কিকিরা বসে ছিলেন নিচের বার্থে।

গাড়ি চলতে শুরু করার পর বাতাস আসছিল। রাত হয়েছে। বাতাস ঠাণ্ডা।

কিছুক্ষণ দুজনেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে শরীরটা জুড়িয়ে নিলেন।

 কিকিরাই কথা বললেন প্রথমে। বললেন, “চন্দন বলেছে, বাড়ি থেকে ফিরে এসে দিন-দুই হাসপাতাল করবে। তারপর ডুব দিতে পারবে।”

তারাপদ বলল, “জানি। ওর ডাক্তারির আপনিই বারোটা বাজাবেন’।”

“কে বলল! চাঁদুবাবুর হাসপাতাল তো আর মাস-দুই পরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তারপর বাবুকে চরে বেড়াতে হবে।”

ঠাট্টা করে তারাপদ বলল, “আপনার সঙ্গে চরবার প্ল্যান করেছে নাকি?”

হাসলেন কিকিরা।

কিছুক্ষণ হাসিঠাট্টার কথা হল। গাড়ির ভেতরে গুমোটভাব ছিল, সেটাও কেটে গিয়েছে বাইরের ঠাণ্ডা বাতাসে। লিলুয়ায় গাড়ি থেমে আবার চলতে শুরু করেছে।

তারাপদ বলল, “কালীপাহাড়িতে তো নিয়ে চললেন কিকিরাস্যার; কিন্তু কেন নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা এবার বলুন।”

“বলছি, বলছি” কিকিরা পা তুলে আরাম করে বসলেন।” তোমাদের কোথাও নিয়ে গেলেই রহস্যের গন্ধ পাও, তাই না?”

ঠাট্টার গলায় তারাপদ বলল, “তা পাই। কেন পাব না, বলুন। আপনি কিকিরা দি ওয়ান্ডার! মিস্টিরিয়াস ম্যাজিশিয়ান।”

কিকিরা বললেন, “তা হলে শোনো। একটু গৌরচন্দ্রিকা গেয়ে শুরু করি?”

“করুন।”

সামান্য চুপ করে থেকে কিকিরা শুরু করলেন, “আমার এক বন্ধু আছে ছেলেবেলার। আগেই তো বলেছি, একেবারে অল্প বয়েসের বন্ধু। তার নাম ফকিরচন্দ্র রায়। আমরা বলতাম ফকির। ফকিররা দু-তিন পুরুষ ধরে কালীপাহাড়িতে থাকে। নামে ফকির হলেও ওরা মোটামুটি ধনী লোক। এক সময়ে জমিজমাই ছিল ওদের সব, সে ওর ঠাকুরদার আমলে। বাবার আমলে জমি-জায়গা ছাড়াও কোলিয়ারিতে নানা রকমের কনট্রাকটারি ধরেছিল। তাতে আরও ফেঁপে ফুলে ওঠে। বিস্তর পয়সা এলে যা হয়–শবাবিতে ধরে যায়, ফকিরদেরও তাই হল, নবাবিতে ধরল। পয়সা ওড়াতে লাগল চোখ বুজে। কিন্তু ওই যে বলে, চিরদিন সমান যায় না। ফকিরদেরও হল তাই অবস্থা। অবস্থা পড়তে শুরু করল, রবরবা কমতে লাগল।”

তারাপদ বলল, “কেন?”

কিকিরা বললেন, “ঠাকুরদার আমলে ছিল এক। বাবা কাকার আমলে হল তিন। ফকিরের বাবার আরও দুই ভাই ছিল। ফকিরদের আমলে সেটা আরও ভাগ হয়ে গেল। তার মানে এই নয় যে, সে ফকির হয়ে গিয়েছে, এখনো যা আছে, তাতে তোমার আমার মতন মানুষের বরাতে থাকলে বর্তে যেতুম।”

“মানে এখনো বেশ আছে?”

“ওদের কাছে বেশ নয়, তোমার আমার কাছে যথেষ্ট।”

“গোলমালটা কেথায়?”

“মুখে শুনলে গোলমালটা ভাল বুঝতে পারবে না। চোখে দেখলে আঁচ করতে পারবে খানিকটা। তা হলেও ঘটনাটা ছোট করে শুনে রাখো।” কিকিরা একবার মুখ ফিরিয়ে বাইরেটা দেখে নিলেন। আবার স্টেশন এসে গেল। বললেন, “ফকিরদের বিষয়-সম্পত্তি এখন একরকম ভাগ-বাঁটরা হয়ে গিয়েছে। যে-সব সম্পত্তি কেউ কাউকে ছাড়তে রাজি নয়, তাই নিয়ে কোর্ট কাছারি চলছে। এইরকম এক সম্পত্তি ঘোড়া-সাহেবের কুঠি।”

“ঘোড়া-সাহেবের কুঠি? সেটা আবার কী?”

“একটা বাড়ি। যেমন-তেমন বাড়ি অবশ্য নয়; দুর্গ বলতে পারো। পাথরের তৈরি। এক-একটা পাথর হাতখানেকের বেশি লম্বা। চওড়াও আধ হাত।“

“কী পাথর?”

“এমনি পাথর, সাধারণ। পাথরের বাড়ি দেখোনি?”

 তারাপদ ঘাড় হেলাল। দেখেছে।

 গাড়ি থামল। সামান্য থেমে আবার চলতে শুরু করল।

তারাপদ বলল, “বলুন তারপর। ঘোড়া-সাহেবটা কে?”

 কিকিরা বললেন, “অনেকদিন আগেকার কথা বলছি। তা ধরো বছর পঞ্চাশ তো বটেই। তখন ব্রিটিশ রাজত্ব। এ-দিককার অনেক কোলিয়ারির মালিকানা ছিল সাহেবদের। ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়ার বেশির ভাগই ছিল সাহেব। ওয়েলকাম কোলিয়ারিজ বলে একটা কোম্পানি ছিল সাহেবদের। এদিকে তাদের ছোট-বড় অনেকগুলো কয়লাকুঠি ছিল। ফারকোয়ার সাহেব বলে এক সাহেব ছিল। সে-ই কয়লাকুঠিগুলোর সর্বেসর্বা। এজেন্ট অ্যান্ড জেনারেল ম্যানেজার। ঘোড়া-সাহেবের কুঠি ছিল তাঁর বাংলো আর অফিস দুই-ই।”

“তা ঘোড়া-সাহেব নাম হল কেন?” তারাপদ জিজ্ঞেস করল।

 “সাহেবের ঘোড়া বাকি ছিল। আস্তাবল ছিল বাংলোয়, ঘোড়া রাখতেন, ঘোড়ার তদ্বির করার জন্যে লোজন থাকত। সাহেব নিজে প্রায়ই ঘোড়ায় চড়ে সকাল-বিকেল টহল মারতেন। তাই লোকে নাম দিয়েছিল ঘোড়া-সাহেব।”

তারাপদ মাথা নাড়ল। ব্যাপারটা যেন সহজ হল এতক্ষণে। বলল, “ঘোড়া-সাহেবের বাড়ি আপনি দেখেছেন?”

“দেখেছি বই কি! আমাদের ছেলেবেলায় ওটা দেখার মতন জিনিস ছিল। ধরো, কলকাতায় যেমন মনুমেন্ট। সবাই অন্তত একবার তাকিয়ে দেখে। ঘোড়া-সাহেবের কুঠি দেখা ছিল সেইরকম। ওখানকার মানুষ, গাঁ-গ্রামের লোক, কোলিয়ারির লোকজন, সবাই দেখত। বাইরে থেকেই। বিঘে আট-দশ জমি, মস্ত পাঁচিল, নানা রকম গাছগাছালি, ফুলের বাগান, মধ্যিখানে দোতলা বাংলো ঘোড়া-সাহেবের। পাশেই ছিল নালার মতন এক নদী, নুনিয়া। বর্ষায় জল থাকত, অন্য সময় শুকনো।…তা আমাদের যখন বাচ্চা বয়েস, তখন ঘোড়া-সাহেব বুড়ো হয়ে পড়েছেন। তিনি আর বেশিদিন থাকেননি, নিজের দেশে ফিরে গেলেন। অন্য কে একজন এল, তার নাম মনে নেই।”

“আপনিও কি কালীপাহাড়ির লোক?”

“না না, লোক নই। আমার মামা কাজ করত একটা কোলিয়ারিতে। মাঝে মাঝে মামার বাড়ি গিয়ে থাকতাম। আর ফকিরের সঙ্গে আমার ভাব স্কুলে। আমি শহরের স্কুল-বোর্ডিংয়ে থেকে পড়তাম, ফকির আসত বাড়ি থেকে।”

তারাপদ এবার একটা সিগারেট ধরাল।”তারপর বলুন, কী হল?”

কিকিরা বললেন, “ওয়েলকাম কোম্পানির সুদিন ফুরলো। ঘুষিকের দিকের একটা কোলিয়ারিতে বিরাট এক অ্যাকসিডেন্ট হল। আরও পাঁচরকম গোলমাল। ওয়েলকাম কোম্পানি তাদের কোলিয়ারি বেচে দিতে লাগল। দু-একটা করে। ঘোড়াসাহেবের কুঠি ফাঁকা হয়ে গেল। মারোয়াড়ি, কচ্ছিরা কোলিয়ারি কিনে নিতে লাগল। এক বাঙালি ভদ্রলোকও কিনলেন একটা। তিনিই ওই ঘোড়াসাহেবের কুঠিটা কিনেছিলেন। বাগান-টাগানের বেশির ভাগই তখন নষ্ট। কিন্তু সেই ভদ্রলোক বেশিদিন বাঁচেননি। অ্যাকসিডেন্টে মারা গেলেন। তখন ফকিরদের উঠতি সময়, টাকা আসছে বস্তা বস্তা। ফকিরের বাবা আর কাকা বেশ সস্তায় ওই কুঠি সেই ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছ থেকে কিনে ফেললেন। কেন যে কিনলেন নিজেরাও জানেন না। পয়সা আছে, লোকের কাছে চাল দেখাতে হবে বলেই বোধ হয়। ওই কুঠিতে কেউ কিন্তু থাকতে যায়নি। খানিকটা ভয়ে, খানিকটা দরকার পড়েনি বলে। ঘোড়া-সাহেবের কুঠি ধীরে ধীরে জঙ্গল হয়ে আসতে লাগল। ফকিরের বাবা কাকা একসময়। এক একরকম প্ল্যান করতেন বাড়িটাকে নিয়ে। কাজে কিছুই করতেন না। শেষে ফকিরদের মন্দ দিন এল। মারা গেলেন ফকিরের বাবা। বছর কয় পরে মেজকাকা। ফকিররা সব সেয়ানা হয়ে উঠেছে ততদিনে, জমিজমা ব্যবসাপত্র দেখছে। শরিকের ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। সেটা আর থামল না। পরিবার আলাদা হল, ভাঙল, বিষয়সম্পত্তি ভাগাভাগি হতে লাগল, মামলা ঝুলতে থাকল মাথায়।” কিকিরা একটু থামলেন। আবার বললেন, “ফকিরের নিজের ছোট ভাই তার সব বেচেবুচে বিদেশে চলে গেছে। কাকার ছেলেদের মধ্যে ছোটজন পুরীতে থাকে। ব্যবসা করে হোটেলের।”

প্যাসেঞ্জার গাড়িটা আপন খেয়ালে চলছে। থামছে, চলছে, আবার থামছে। লোকও উঠছে নামছে কম নয়।

তারাপদ বার দুই হাত তুলল। বলল, “ঘোড়া-সাহেব কুঠির ইতিহাস তো শুনলাম। কিন্তু গণ্ডগোলটা কী নিয়ে?”

কিকিরা বললেন, “গণ্ডগোল বাড়িটা নিয়ে। ফকিররা বাড়িটা তাদের বলে দাবি করছে, আবার তার খুড়তুতো ভাই বলছে, বাড়ি তাদের।”

“এটা তো মামলা-মকদ্দমা করে ঠিক করতে হবে। বাড়িটা কাদের! তাই না?”

“হ্যাঁ, সেই রকমই। কিন্তু এর মধ্যে একটা কাণ্ড ঘটে গিয়েছে।”

“কী কাণ্ড?”

“ওই বাড়ির দোতলায় একজন খুন হয়েছে।”

“খুন হয়েছে?” তারাপদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কিকিরার দিকে। কিকিরা বললেন, “খুন হয়েছে, কিন্তু যে-খুন হয়েছে, তাকে ঘরে কিংবা নিচে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খুন হবার পর সে বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছে।”

তারাপদ বলল, “তা আবার হয় নাকি?”

“হয় না,” মাথা নাড়লেন কিকিরা।”তুমিও জানো হয় না, আমিও জানি হয় না। কিন্তু ফকিরের বড় ছেলে বলছে, সে স্বচক্ষে খুন দেখেছে।”

তারাপদ বিশ্বাস করল না। বলল, “সে কেমন করে বলছে? খুনের সময় সে ছিল সামনে?”

“হ্যাঁ, ছিল।”

“বয়েস কত ছেলেটির?”

“বছর কুড়ি-একুশ। ফকিরদের সব অল্পবয়সে বিয়ে-থা হত। কাজেই, তার বড় ছেলে এখন সাবালক।”

তারাপদর সন্দেহ হল। বলল, “ছেলেটার মাথায় গোলমাল নেই তো?”

“আগে ছিল না। এই ঘটনার পর হয়েছে। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। ভূতে পেলে যেমন হয়।”

তারাপদ ঠিক ধরতে পারল না।”কেন?”

“ভয়ে।” বলে একটু থেমে কিকিরা বললেন, “ওর মাথায় ঢুকেছে, পুলিস ওকে ধরবে। এটা ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ।”

“উদ্দেশ্য?”

“উদ্দেশ্য নানা রকম হতে পারে। তবে একটা উদ্দেশ্য, ফকিররা যেন আর ঘোড়া-সাহেবের কুঠির দিকে নজর না দেয়।”

“তার মানে–” তারাপদ বলল, “ফকিরের খুড়তুতো ভাইরা প্যাঁচ মেরে কুঠিটা বাগাবার চেষ্টা করছে?”

“ভাইরা নয়, ভাই। খুড়তুতো এক ভাইকে নিয়েই গোলমাল। ফকির তাই বলে।”

তারাপদ কিছুক্ষণ যেন কিছু ভাবল, তারপর বলল, “একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না। খুনই যদি হবে, তবে তো সেটা পুলিশকে জানানো হয়েছে। আর পুলিশ যদি জানে, তারা তো মুখ বুজে থাকবে না। ফকিরের ছেলেকেই বা ধরবে কেন?”

কিকিরা পকেট থেকে নস্যির ডিবে বার করলেন। বাহারি চৌকোনো ডিবে। তারাপদ আগে কখনো কিকিরাকে নস্যি নিতে দেখেনি। অবাক হল। কিছু অবশ্য বলল না।

নস্যির টিপ নাকের কাছে ধরে আস্তে আস্তে টানলেন কিকিরা। বললেন, “মজাটা তো সেইখানে, তারাপদবাবু! যে খুন হয়েছে তাকে যদি জলে-স্থলে খুঁজে না পাওয়া যায়–তবে পুলিসের কাছে কে প্রমাণ করবে, অমুক লোক খুন হয়েছে। বড় জোর বলতে পারে–আমাদের অমুক লোক বেপাত্তা হয়েছে। ফকিরের খুড়তুতো ভাই পুলিসে যায়নি, যেতে পারছে না–শুধু এই কারণেই। প্রমাণ কী খুনের? কিন্তু থানায় না গিয়ে আড়ালে থেকে ফকিরকে চাপ দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে, আর তার ছেলেটাকে তো আধ পাগলা করে তুলেছে। বুঝলে?”

“কিন্তু ফকিরের ছেলে তো খুনি নয়।” তারাপদ বলল।”

“সে বলছে, নয়। কিন্তু অন্যপক্ষ যদি প্রমাণ করতে পারে, ফকিরের ছেলে খুনি-তা হলে!”

তারাপদ কিছু বুঝল, কিছু বুঝল না। বলল, “ভাল বুঝলাম না।”

“মুখে শুনে এর বেশি কিছু বুঝবে না। জায়গায় চলো; থাকো কয়েকদিন। ওদের সবাইকে চোখে দেখো–তখন বুঝতে পারবে।”

কিকিরা জল খাবার জন্যে উঠলেন। ওয়াটার বটল ঝুলছিল একপাশে।

 জল খেয়ে আরামের শব্দ করলেন কিকিরা। “একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক, কী বলো?”

তারাপদ বলল, “নিন।”

“একেবারে ভোরের মুখে কালীপাহাড়ি পৌঁছব। তুমিও শুয়ে পড়ো।”

তারাপদর আবার হাই উঠল। সারাটা দিন কম হুড়োহুড়ি যায়নি। একবার চন্দনের কাছে, তারপর অফিস, অফিস থেকে ফিরে কিছু কেনাকাটা, সেখান থেকে কিকিরার বাড়ি। চরকিবাজি চলছে আজ।

হাই-জড়ানো গলায় তারাপদ বলল, “আমি কিন্তু মড়ার ঘুম ঘুমোব। আপনি সময়-মতন ডাকবেন।”

কিকিরা বললেন, “তুমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোও।”