১৯৪৯। বয়স ৫০ বছর

১৯৪৯। বয়স ৫০ বছর 

জীবনানন্দের বেকারজীবন অব্যাহত। এ সময় বরিশালের স্মৃতি তাঁর মনকে উদ্বেলিত করছে— আনন্দে, বিভোরতায়। বন্ধু অচিন্ত্যকে এ সময় তিনি লেখেন- 

‘তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে আমার বরিশালের সেইসব দিনের কথা মনে পড়ছে, যখন তোমাদের একটার পর একটা চিঠি হাতে আসত; উত্তর দিতাম, প্রত্যাশা করতাম। তখনকার দিনের বরিশাল আজকের চেয়ে প্রায় সব দিক থেকে ভালো ছিল। — আমি বিশেষ কোনো কাজ করছি না আজকাল। লিখে, পড়িয়ে, অল্পসল্প রোজগারে চলে যাচ্ছে। একটা চাকরীর জন্যে দরখাস্ত করেছিলাম, reference চেয়েছিল – তার ভেতর তোমার নামও দিয়েছি, ও-সব চাকরী হবে না। সব ছেড়ে শুধু লিখে যেতে পারলে ভালো হত। সেটা অনেক দিন থেকেই সম্ভব হচ্ছে না।’ [‘জীবনানন্দের একটি জরুরি চিঠি’, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, ‘পূৰ্ব্বাশা’ ফাল্গুন ১৩৭২]। 

১৯৪৮ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার হিন্দু-প্রধান কলেজ মানিকগঞ্জ কলেজ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হয়। এই কলেজেরই অধ্যাপকগণ ইতিহাসবিদ হিমাংশুভূষণ সরকারের নেতৃত্বে খড়গপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে। এখানে ইংরেজি বিভাগে একজন মাত্র অধ্যাপক ছিলেন-সরোজকুমার ভট্টাচার্য। আর একজন অধ্যাপকের প্রয়োজন হলে জীবনানন্দ আবেদন করেন। জীবনানন্দের আবেদনে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাড়া দেন। কলেজে যোগদানের আগে একদিন এসে কলেজের পরিবেশ দেখেও যান জীবনানন্দ। তখন নিজের থাকার জন্যে আলাদা একটি ঘরের আবেদনও করেন। 

এ বছর নিম্নোক্ত পত্রিকায় ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যের আলোচনা বেরোয় 

ক) ‘কবিতা’, পৌষ ১৩৫৬। লেখক : অশোক মিত্র। 

খ) ‘দৈনিক যুগান্তর’, ৩ এপ্রিল ১৯৪৯। 

৭ ফেব্রুয়ারি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় টালিগঞ্জের বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার দুদিন আগেই পরিবারসহ বরানগরের গোপাললাল ঠাকুর রোডের এক ছোট ভাড়াবাড়িতে উঠে যান এবং বাকি জীবন সেখানেই কাটান। বাড়ি বিক্রির টাকা পুত্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে পিতা ধনাঢ্য পুত্রদের গলগ্রহ হয়ে পড়লে ডিসেম্বর মাসে মানিক তাঁর পিতাকে নিজের দু’কামরার অপরিসর ভাড়াগৃহে নিয়ে যান। এই গৃহেই তাঁর পিতা অসহায়ভাবে প্ৰত্যক্ষ করেন মানিকের অকালমৃত্যু। মানিকের মৃত্যুর দু’বছর পরে আটাশি বছর বয়সে হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন। 

‘দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার-এর প্রকাশ। পূর্ব পাকিস্তানের নানা কারাগারে কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের অনশন ধর্মঘট। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট মওলানা ভাসানী গ্রেপ্তার। 

জাতিসংঘের প্রতিনিধি র‍্যালফ্ বুশে আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদনে কৃতকার্য হন। 

লিবিয়া নামক এক স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। 

১৯৪৯-এ পরলোক গমন করলেন কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজিনী নাইডু, ১৯১১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী মরিস মেতারলিঙ্ক ও ১৯২৮ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী এস. উন্দসেৎ। 

জন্মালেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, তুষার চৌধুরী, প্রত্যুষপ্রসূন ঘোষ, মুহম্মদ নূরুল হুদা। 

এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭–১৯৬২)। ঔপন্যাসিক। আমেরিকান। 

পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে নোবেল কমিটি ফার সম্পর্কে লেখেন 

‘For his powerful and artistically unique contribution to the modern American Novel .’

ফকনারের উল্লেখযোগ্য বই ‘The Marble Faun. 

প্রকাশিত গ্রন্থ : এ বছর প্রকাশিত হয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘চিত্রকুট’, নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাঙালীর ইতিহাস আদিপর্ব, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইছামতী’, বুদ্ধদেব বসুর ‘তিথিডোর’, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢেঁাড়াই চরিতমানস-১ম খণ্ড’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’। জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্রন্থ ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *